হৃদয় গহীনে তুমি আছো পর্ব-১৮

0
470

#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ১৮

সকাল-সকাল রাজবাড়ির দুয়ারে পুলিশের পদধূলি পরার কারন খুঁজে পেলেন না আজাদ সাহেব। রুবেলের দিকে এক পলক তাকিয়ে ধীর চাহনিতে মোস্তফা সাহেবের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন।
—মোস্তফা তুই পুলিশ আসতে বলেছিস নাকি বাড়িতে? তোর তো আবার উঠতে-বসতে পুলিশের সাথে মেলামেশা আছে।
মোস্তফা সাহেব না জানার সহিত আজাদ সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন।
— নাতো আব্বা। আমি তো নিজেই বের হতাম আজকে বাহিরে। দাঁড়াও দেখি। রুবেল ওনাদের বসার ঘরে বসানোর ব্যাবস্থা করো।
—একজনই আছেন সাহেব।
—আচ্ছা যাইহোক, আমেনা খাবার পাঠিয়ো তো ওখানে।(আমেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে মোস্তফা সাহেব কথাগুলো বলে হাত ধুয়ে উঠতে নিতে আমেনা বেগম বাঁ’ধ সেধে বললেন।)
— আহা, খাওয়া ছেড়ে উঠছো কেন?
— তোমরা বসো আমি যাচ্ছি ড্যাড।
সাফিন কথাটা বলে চলে গেলে মোস্তফা সাহেবও যেতে নিতে আজাদ সাহেব লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে পরলে মোস্তফা সাহেব তাঁকেও হাত ধরে নিয়ে গেলেন তাঁরসাথে। সিরাত সাফিনের যাওয়ার পানে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছারল যেন।
— সারাক্ষণ শুধু এই খু’ন খা’রা’পি, মা’রা>মা’রি, পুলিশ এসব ছাড়া কি আর কোনে কাজ নেই আপনার সাফিন? আপনার সাথে আমার তেমন কোনো রিলেশন নেই আমি জানি,কিন্তু আপনার প্রত্যেকটা ছোঁয়া, কথা, এগুলো কিভাবে ভু’লে যাই বলতে পারেন? আমার ব্যা’কুল হৃদয় তো না চাইতেও এই কনট্রাক্টের বাহিরের জগৎ ছুঁয়ে যাচ্ছে সাফিন। যদি আবেগগুলো ভাসিয়ে দেওয়া যেত না, তাহলে হয়তো আমিই পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী মানুষ হতাম৷ (মনে-মনে কথাগুলো বলে চোখদ্বয় নিচু করে ফেললে পাশ থেকে আমেনা বেগম সিরাতের কাঁধে হাত রেখে ধীর কন্ঠে বললেন।)
— তোর মনের অবস্থাটা বুঝতে পারছি আমি। আমিও কখনো চাইনি তোর আব্বার মতন সাফিনও রাজনীতিতে নামুক। কিন্তু র’ক্তের টান কি আর সে কথা শুনে? আমার বিশ্বাস একমাএ তুইই পারবি সাফিনকে এই ভ’য়ান’ক পথ থেকে সুস্থ পরিবেশে আনতে।
আমেনা বেগম হসলে সিরাতের চোখদ্বয় ছলছল করে উঠলো যেন।
— আপনি হয়তো বেশি আশা করে ফেলছেন আম্মা আমাকে নিয়ে। আপনি কিভাবে জানবেন যে, এই বিয়েটা বিয়েই নয়। শুধু এবং শুধুমাত্রই একটা কনট্রাক্ট। ( মনে-মনে বলা কথাগুলো যেন দ’লা পাকিয়ে যাচ্ছে সিরাতের।)
— ওই ছেমড়া তুই খাইতে বস না কেন? কই যাবি নাকি আবার হুনলাম?
রাহেলা বেগমের কথা শুনে সরোয়ার সাহেব মৃদু হাসলেন। হাতে থাকা ট্রলিটা সিঁড়ির কাছে রেখে ডাইনিং এ বসতে নিলে আবারও রুবেল এসে সরোয়ার সাহেবকে তলপ করে গেলে সরোয়ার সাহেব ভ্রু জাগিয়ে ফেললেন যেন।
— কি যে হচ্ছে এই বাড়িতে? আমার ডাক পরলো কেন আবার! আচ্ছা তুমি যাও আমি আসছি।
সরোয়ার সাহেবের কথা শুনে রুবেল চলে গেলে আমেনা বেগম বললেন।
— এক দন্ড শান্তিতে খেতেও দিবে না আপনার ভাই। নিজে তো গেছে গেছেই আমার সাফিনরেও হাত করছে।
সরোয়ার সাহেব হেসে চলে গেলে আমেনা বেগম রান্নাঘরে গিয়ে খাবার সাজাতে থাকলে সকিনা আর বাকি মেডরাও হাতে হাত লাগালে সিরাত ভাবনার জগতে চলে গেল যেন। না চাইতেও বসার ঘরে কি কথা হচ্ছে সেটা জানার তী’ব্র আকাঙ্খা জাগছে যেন তাঁর মনে।
—কি এমন রাজাকার্য করছে ওখানে ব’জ্জা’তটা? ব্যাপারটা তো দেখতে হচ্ছে।
(মনে-মনে কথাগুলো বলে রাহেলা বেগমের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো।)
—বুড়ো আম্মা আরেকটু তরকারি দেই আপনাকে?
— না লাগত না ছেমরি। কালকে রাইতে দুধ খাইছিলি তো নাকি? ওই সকিনা সকালে দুধ দিছোতো মনে কইরা ওরে?
রাহেলা বেগমের কথা শুনে চোখমুখ কুঁ’চকে ফেলল সিরাত। সকিনা আমেনা বেগমের দেওয়া খাবারের ট্রেটা নিয়ে বসার ঘরে যাওয়ার সময় রাহেলা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললেন৷
— না খালাম্মা এইডা দিয়া আহি তাঁরপর দিতাছি। সিরাত সকিনার পথ আঁ’টকে সুযোগটা লুফে নিয়ে বললো।
— আমি দিয়ে আসছি। তুমি এদিকটা দেখো।
— ওই ছেমরি,কোনো দরকার নাই তোর নাচতে-নাচতে ব্যাডা মানুষগো সামনে যাইবার! ঘরের বউগো আবার ব্যাডাগো সামনে কামকি আয়? চু’লকা’নি কম করো মনু। আমি যতদিন বাইচা আছি, এগুলান ঘুনাক্ষরেও চলবে না। যা নিজের ঘরে যা তাত্তারি।
রাহেলা বেগমের কথাগুলো কানের কাছে যেন বি’ষের মতো এসে বা’ড়ি খেয়ে খেল সিরাতের।
এতটা অ’শা’লীন কথা কেউ কিভাবে বলতে পারে কাউকে? তাও নিজে একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের চরিত্রে আ’ঘাত করে কথা শোনাচ্ছেন?
আমেনা বেগম রাহেলা বেগমের চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতেও পারছেন না। এদিকে সিরাতের চোখের পানি ছলছল করে উঠলে একরকম ভাবে মুখে কাঁপড় গুঁ’জে দৌঁড়েই সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলে সেদিকে অসহায় ভাবে তাকালেন শুধু তিনি।
—কিছু মনে করিস না আম্মাজান। আমি তোকে আগেই ওনার সম্মন্ধে জানিয়ে রেখেছি। আমি জানি তুই বুঝদার মেয়ে আমার। ভু’ল বুঝিনসনা আর তোর আম্মাকে।
(মনে-মনে কথাগুলো বলে নিশ্বাস ছেড়ে কাজে হাত লাগালেন আমেনা বেগম। ঘোর দোরের কাজ যতই হাজারটা মেড থাকুক না কেন? নিজ হাতে না করলে মনের মতন ঠিক হয়না।)
.
চায়ের কাপে চুমুক দিতে-দিতে আজাদ সাহেব সামনে বরাবর বসে থাকা ইন্সপেক্টর জাবেরের দিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন।
—হঠাৎ এমুখো হলে যে জাবের? জরুরি কিছু ব্যাপার আছে নাকি?
— বুঝলাম না।আমাকে কেন ডাকা হলো? আমি তো রাজনীতির ধারেকাছেই তেমন একটা ঘেঁ’ষি না। তাহলে?
সরোয়ার সাহেবের কথা শুনে মোস্তফা সাহেব জাবেরের দিকে তাকিয়ে বললেন।
—আরে কোন কাজের কথা আছে কিনা বলো। আমার আবার আজকে একটা আশ্রমে যাওয়ার কথা ছিল। কিছু টাকা আর জামাকাপড় দেওয়ার জন্য। তেরানের জন্য মাল পাঠাইছিস তো সাফিন? জুবায়ের কই? ওরে খবর দিসনি?(সাফিনের দিকে তাকিয়ে।)
মোস্তফা সাহেবের কথা শুনে সাফিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো।
—১ টার আগে মাল পৌঁছে যাবে৷ জুবায়েরকে জানিয়ে দিচ্ছি কিছুক্ষণ পরে।
“সামনে বসে থাকা সবার কথা শুনে জাবের কেমন থ’ম মেরে গেল।” গ’লা শুকিয়ে আসলে সামনে থাকা টি টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে ঢকঢক করে একঢোকে পানিটুকু শেষ করে গলা ভিজিয়ে নিল সে। যতই হোক, মন্ত্রীর বাড়ি বলে কথা।কথা বলতেও কেমন তোতলাতে হচ্ছে তাঁর। এদিকে যে ইনফরমেশনটা সম্পর্কে জানতে আসছে? সেটা না জানলেও হচ্ছে না।
কিছুক্ষণ পর জ’রতা কাঁ’টিয়ে হাতে থাকা ফাইলটা আজাদ সাহেবের হাতে দিলে আজাদ সাহেব হেসে বললেন।
— এইসব দেখার বয়স কি আর আমার আছেনি জাবের। মোস্তফা দেখতো কি আছে এই ফাইলে।
মোস্তফা সাহেব ফাইলটাতে চোখ বো’লাতে থাকলে সরোয়ার সাহেব ভ্রু জাগিয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলে জাবের বলে উঠলো।
— কিছুদিন আগে যে একটা গোটা আস্ত কাঁ’টা লা’শ পাওয়া গেছে সমুদ্রে? অনেক তদন্তের পর জানা গেছে লোকটা আর কেউনা,স্যার আপনার বিদেশ ফেরত ওয়াশম্যান দুলাল। মিডিয়ায় এখনও জানাজানি হয়নি ব্যাপারটা। তাহলে হয়তো এতক্ষণে হেডলাইন পরে যেত শহরে। (সরোয়ার সাহেবের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললে মোস্তফা সাহেব ভ’রকে গেলেন পুরো। জাবেরের বলা কথাগুলো ফেলে দেওয়ার মতোও শোনাল না মোস্তফা সাহেবের কাছে। কারন তিনি নিজেই কদিন ধরে নোটিশ করেছেন দুলাল বাড়িতে আসেনি পার্টির দিন থেকে। সরোয়ার সাহেবের দিকে তাকিয়ে ধীর কণ্ঠে বললেন। )
— দুলাল খু’ন হয়েছে? কিন্তু কে করবে এমন কাজ? ওতো বিদেশের লোক তাই নয় কি? ভাই তুই কিছু জানিস এ ব্যাপারে?
সরোয়ার সাহেব ভ্রু কুঁ’চকে ফেললেন যেন। বললেন৷
— কে বলেছে দুলাল খু’ন হয়েছে? আমি নিজে কিছুক্ষণ আগে ওর সাথে কথা বলেছি৷ এবং আমার বিদেশ ফেরার টিকিটটা পর্যন্ত ওকে দিয়ে কাঁ’টিয়েছি৷ ও আমার জন্য এয়ারপোর্টে ওয়েট করছে। বিলিভ না করলে ফোন দিচ্ছি কথা বলে দেখ।
সাফিন এতক্ষণ ধরে সবার কথা শুনছিল৷ এখন দুলাল নামটা শুনে কেমন মাথাচাড়া দিয়ে গেল তাঁর।
— তাঁরমানে এই দুলাল সেই লোকটা। আর ক্যামেরার লোকটা, মিরাজ চৌধুরী খু’ন। দুলাল নামটা তখনই কেমন শোনা-শোনা লাগছিল। দুয়ে-দুয়ে চার মনে হচ্ছে? কিন্তু চাচ্চুর লোক হয় কিভাবে? ব্যাপারটা যতটা ক্লিয়ার ভাবে খুঁজে বের করতে যাই, একটা না একটা প্যাঁ’চ লাগবেই৷ ডিজগাস্টিং।
“সরোয়ার সাহেবের কথা শুনে জাবের পুরো বোকা বনে গেল যেন।” সরোয়ার সাহেব ফোনকল লাগালে বসার ঘরের সবাই সেদিকে ধীর চাহনিতে তাকিয়ে থাকলেন শুধু। আজাদ সাহেব দুইহাত ভা’জ করে মুখে ঠেস ধরে আছেন। দুশ্চি’নায় মাথা হেট হয়ে আছে যেন তাঁর।
—ব্যাপারটা কেমন অদ্ভুত লাগছে না স্যার? ফাইল আর টেস্টের রিপোর্ট কিন্তু অন্য কথা বলছে।
জাবেরের কথা শুনে চটে গেলেন সরোয়ার সাহেব। বললেন।
— তো আপনি কি বলতে চাইছেন, আমি মি’থ্যা কথা বলছি? আর দুলাল যদি খু’নও হয়,তাহলে সেটার সঙ্গে আমার সম্পর্ক কি বুঝতে পারছি না আমি।
সরোয়ার সাহেবের উত্তেজিত মুখদ্বয় দেখে সাফিন শান্ত স্বরে বললো।
— দেখো চাচ্চু বিপ’দের কথা শুনলে মানুষের মাথা কাজ করে না আমি জানি। তাই শান্ত হও দেখো দুলাল ফোন ধরে কিনা।
জাবেরের চোয়াল বেয়ে ঘাম বয়ে গেল যেন সরোয়ার সাহেবের দিকে তাকিয়ে।
— বিষয়টা এভাবে নিচ্ছেন কেন স্যার। দেখুন আপনার কাছে আসার কারন হলো আপনার সাথেই তিনি বিদেশ থেকে দেশে এসেছেন। আর এখানে এসে খু’ন হয়েছেন, তো খবরটা আপনাকে জানালাম। আর মিডিয়া কেমন সেটা তো জানেনই। তিলকে তাল করতে ওস্তাদ যাকে বলে। আর এখানে একটা নয় এই লা’শের সূত্রধরে আরও একটা খু’ন হয়েছে থানায়। এখন আমাদের চাকরি নিয়ে টা’না>টা’নি। মন্ত্রী সাহেব তো সবকিছু জানেনই এই ব্যাপারে। সেটাই… (পুরো কথাটা শেষ করার আগেই সাফিন বাঁধ সেধে বললো।)
—আহ, এসব ছোটখাটো বিষয়। এগুলো নিয়ে এতটা মাথা না ঘামানোই ভালো।
সাফিনের কথা শেষ হতে যতক্ষণ তৎক্ষনাৎ ওপাস থেকে দুলাল ফোন রিসিভ করতে সরোয়ার সাহেব ফোনটা লাউডে দিয়ে রাখলো।
—জ্বী সাহেব৷ ফ্লাইট আর কিছুক্ষণ পরই ছেড়ে দিবে আপনি দ্রুত আসুন।
—দুলাল তুমি কোথায় আছো?
— আমিতো এই এয়ারপোর্টেই আছি।
— ওখান থেকে বাড়ি ব্যাগ করো এখনই। আজকে আমরা যাচ্ছি না কোথাও।
— আচ্ছা সাহেব।
সরোয়ার সাহেব ফোনটা কেঁ’টে দিলে দুলাল মুখের ভাবভঙ্গি পাল্টে বললো।
—সাহেবের আবার কি হলো?
কথাগুলো ভাবতে-ভাবতে গাড়ি স্টার্ট দিল দুলাল।
“কিছুক্ষণের মধ্যে দুলালের গাড়ি শাহনেওয়াজ ভিলায় প্রবেশ করে গেলে গাড়ি থেকে নামার সঙ্গে- সঙ্গে সরোয়ার সাহেব গেটের কাছে এসে হাজির হলেন। “সঙ্গে মোস্তফা সাহেব সাফিন এবং জাবের। আজাদ সাহেবকে এক রকম জোর করেই সাফিন তাঁকে তাঁর রুমে দিয়ে এসেছেন। এমনিতেই বয়স হয়েছে তাঁর। এত ধকল তাঁর পোশাবে না ঠিক।
“গাড়ি থেকে নেমে পরে হুট করেই তাঁদের সমনে পরবে আশা করেনি দুলাল।” সরোয়ার সাহেব জাবেরের দিকে তাকিয়ে দুলালের উদ্দেশ্য বললেন।
— দুলাল তোমার চরনখানা এনাকে একটু ভালোভাবে দেখিয়ে দেও তো।
সরোয়ার সাহেবের কথা শুনে দুলাল কিছু না বুঝতে পারলেও জাবের চোখ-মুখ কালো করে নিচু করে রাখলে সাফিন বিষয়টা ভালো দেখায়না ভেবে মাথা চুলকে বললো।
—যাইহোক, অনেক হয়েছে এসব। এখন সবাই ভিতরে চলো। ড্যাড, চাচ্চু চলো। জাবের চলো খেয়ে-দেয়ে একসাথে যাবেনে তুমিও।
জাবের মাথা নিচু করে রাখলে সাফিন হেসে বললো।
—আরে জাবের। এসব বাদ দেও এখন। তোমার প্রফেশনটাই তো এটা৷ আর তুমি আমাদের অনেক পুরোনো দিনের লোক।
মোস্তফা সাহেব জাবেরের পিঠ চা’পরে বললেন।
— এসব নিয়ে ভাবলে আর রাজনীতি করা লাগত না তোমাদের। যাও কাজে যাও। সবাই পা’গলের দলবল একেকটা। আর হ্যা, তোমার চাকরি নিয়ে টেনশনের কারন নেই। ব্যাপারটা মিডিয়া ছড়িয়ে গেছে বলে এতদূর ঘনিয়েছে। খোঁজ চালিয়ে যাও ঠিক পেয়ে যাবে৷ বেস্ট অফ লাক মাই সের৷
জাবের হেসে বললো।
—ইনশাআল্লাহ আপনাদের দোয়া আর আল্লাহর রহমত থাকলে ঠিক হবে।
—ভেতরে আসো এখন।
— না আজ নয়৷ অন্য দিন এসে পাত পেরে খেয়ে যাব।
হাসলেন মোস্তফা সাহেব।
.
—জুবায়ের ড্যাডের তেরান দেওয়ার ব্যাপারটা খেয়াল রেখো৷ দ্রুত যাও। আর হ্যা, রাজবাড়ীর পেছনে পাওয়া লা’শটার কি খবর?চেনো লোকটাকে?
—না স্যার। হেলাল-মোহন কেউ চিনে না। বায়োডাটা কালকে পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ।
—হুম যাও তাহলে এখন। আমি দেখি আমার বউ কি করছে।
জুবায়ের হেসে চলে গেলে সাফিন সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে নিতে হুট করে তাঁর তিরিক্ষি চোখদ্বয় নিচের দিকে চলে গেলে দুলালের পায়ের দিকে তাকাল।
— নাহ,লেকটা তো ঠিক ভাবেই হাঁটছেন! কিন্তু, দুলালের একটা পা তো ঠিক ছিল না! এটাকি শুধুই আমার চোখের ভু’ল নাকি এর মধ্যেও কোনো রহস্য আছে?
কথাগুলো ভাবতে-ভাবতে উপরে এসে দরজা চা’পানো দেখে মৃদু ঠেলে ভিতরে ঢুকতে অন্ধকার রুমটা দেখে চমকে গেল সাফিন।
— এই দিনের বেলা কেউ দরজা-জানালা, লাইট বন্ধ করে রাখে! আমার বউটা একেবারে যাচ্ছে তাই।
কথাগুলো বলে লাইটের সুইচ চে’পে লাইট অন করে দিলে চারিপাশে চোখ বু’লিয়ে সিরাতকে দেখতে না পেলে ভ্রূদ্বয় ভা’জ হয়ে এলো সাফিনের। হুট করেই বুকের ভিতরটা কেমন যেন মো’চর দিয়ে উঠলো তাঁর। দ্রুতগতিতে ওয়াশরুম, বারান্দা সবকিছু দেখা হয়ে গেলেও সিরাতকে দেখতে না পেয়ে নিজেকে কেমন পা’গল-পা’গল মনে হলো তাঁর।
—সিরাত, এই সিরাত, সোনা তুমি কোথায়? এই সিরাত? আমি আর পাঁচ গুনব, বেড়িয়ে আসো জান প্লিজ।
কিছুক্ষণ ডাকা>ডাকির পরও যখন সিরাতের সাড়াশব্দও পেল না সাফিন। তখন দ্রুত পায়ে দরজা ঠেলে নিচে যেতে নিলে কিছু একটা আঁ’চ করতে পেরে একপা পিছিয়ে আসলো সে। ক্লান্ত শরীরে ধীর পায়ে এসে খাটের পাশ ঘেঁষে ফ্লোলে বসে থাকা সিরাতের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ সময় একটা শ্বাস ছাড়লো সাফিন। নিজেও সিরাতের পাশ ঘেঁষে ফ্লোরে বসে পরলো।
সিরাত দুই হাত দিয়ে তাঁর হাঁটুদ্বয় জাপ্টে ধরে হাঁটুতে মুখ লুকিয়ে খাটের এক কোনে ঘাপটি মেরে বসে ছিল।
— কি হয়েছে ? এমন ভাবে বসে আছো তুমি যেন তোমার জামাই ম’রে গেছে এমন?
সাফিনের কথাগুলো কানের কাছ ঘেঁষে অন্তর্নিহিত হলেও সিরাত কোনো প্রতিত্তোর করলো না।
সিরাতকে নিশ্চুপ ভাবে বসে থাকতে দেখে রাগ রাগলো সাফিনের। আগের থেকে কন্ঠে একটু গাম্ভীর্যের সহিত বললো।
—কি হয়েছে বলবে তো নাকি? দেখো সিরাত, সকাল থেকে মাথা এমনিতেই প্রচন্ড তারাকের গর’ম হয়ে আছে৷ তাঁর উপর এখন আবার তোমার ন্যাকামো! আর এক সেকেন্ড স’য্য করবো দেন তুমি রেসপন্স না করলে আই সয়ার, আজকেই বাসর করে ফেলব৷
সিরাত আগের মতোই বসে থাকলে সাফিনের এবার মাথায় র’ক্ত উঠে গেল যেন। শক্ত হাতে সিরাতের দুইহাত দেয়ালের সাথে চে’পে ধরলে সিরাতের কান্নাভেজা মুখদ্বয়ের দিকে তাকিয়ে ভ’রকে গেল সাফিন। হৃদয়ের মাঝে যেন প্রবল ঝড় বয়ে যাচ্ছে তাঁর। সিরাতের কান্না ভেজা ফো’লা চোখদ্বয় আর অতিরিক্ত হেঁ’চকি উঠে যাওয়ায় গোলাপি রাঙা মুখশ্রী কেমন লাল হয়ে উঠেছে।
সাফিনের হাতের বাঁধন আপনা-আপনি আলগা হয়ে এলে সিরাত সাফিনের হাত ছাড়িয়ে দিয়ে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে থাকলে সাফিনের হৃদয় ব্যা’থিত হলো। কয়েকটা ঢোক গি’লে শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করলো।
—কেঁদেছো কেন? কি হয়েছে হুম?কেউ কিছু বলেছে তোমায়? একটাবার শুধু নামটা বলো, আজকের মধ্যে তাঁর লা’শ নদীতে ভা’সিয়ে দেব।
— বুড়ো আম্মা।
সিরাতের কান্নার কন্ঠে সহজ প্রতিত্তর পেয়ে চুপ হয়ে গেল সাফিন। খানিক বাদে নিশ্বাস টে’নে সিরাতের কপালে গাঢ় ভাবে চুমু খেয়ে সিরাতের কান্নার নোনাজল ঠোঁটের স্পর্শ ছুয়িয়ে সরিয়ে দিতে থাকলে চোখ বন্ধ করে নিল সিরাত।সাফিনের ঘন-ঘন নিশ্বাস সিরাতের চোখেমুখে আছরে পরতে থাকলে দুই জনের নিশ্বাস যেন একসূত্রে ওঠানামা করতে থাকলো। সাফিনের প্রতিটা স্পর্শ খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করতে পারছে সিরাত। কান্নাগুলো যেন আরও হা’মলে পরছে তাঁর চোখে।
— এই বাঁ’ধাহীন স্পর্শের কোনো নাম কি দিবেন সাফিন? হয়তো আমি যখন থাকব না তখন আমি না হয়েও আপনার মাঝে রয়ে যাব।
(মনে-মনে কথাগুলো বললেও মুখ ফ’সকে ভু’লেও কথাগুলো সাফিনের কাছে প্রকাশ করলো না সিরাত)
— চলো একটা জায়গায় যাওয়া যাক।
— নাহ, যেতে ইচ্ছে করছে না।
—চুমু খাই তাহলে? আপনা-আপনি যেতে ইচ্ছে করবে তখন।
—পা’জি ছেলে যেন কোথাকার।
হেসে উঠলো সাফিন। সিরাতের ঠোঁটে মৃদু কাঁ’মরে দিয়ে বললো।
— তোমার আমাকে দেওয়া গা’লি গুলো শুনে আগে ইচ্ছে করতো তোমার গ’লাটা টি’পে দেই। কিন্তু আশ্চর্য, এখন এগুলোই ভালো লাগে।
— আমি যেটা ফিল করতে করতে পারি।আপনিও কি আমার জন্য সেটাই ফিল করতে পারেন সাফিন? সিরাতের অস্পষ্ট স্বরে বিরবির করে বলা কথাগুলো সাফিনের কানের কাছে না পৌঁছাতে সাফিন বললো।
—কিছু বললে?
— নাহ। চলুন কোথায় যাবেন নাকি?
—হুম চলো। কথাটা বলেই যেতে নিয়েও আবার ফিরে তাকাল। সিরাতের লাল হয়ে ওঠা মুখশ্রীর দিকে শীতল চাহনিতে তাকিয়ে পাঁ’জাকোলা করে নিল সিরাতকে। হুট করে সাফিনের এমনধারা কান্ডে ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসির রেখা ফুটে উঠলেও প্রকাশ না করে বিরক্তি দেখিয়ে সাফিনের নীল রাঙা শার্ট হাতের মুঠোয় আঁ’কড়ে রাখলো সিরাত।
—ভালোবাসা কিনা জানিনা। তবে আমার লাইফের ফার্স্ট পুরুষ আপনি। যাকে আমি আমার গন্ডির বাহিরে গিয়ে তী’ব্র ভাবে চোখে হারাচ্ছি।
কি পা’প করেছিলাম আমি? যে আমার জীবনটা এমনভাবে এলোমেলো হয়ে গেল। কি অদ্ভুত তাইনা, হ্যা মি’থ্যা হলেও সত্যি এটাই মানতে হবে যে আপনি ঠিক একবছর পর বা তাঁর আগেই আমাকে ছুুঁ’ড়ে ফেলে দিবেন। ভালোবাসা সত্যি ভয়ংকর। (হৃদয়ের মাঝে কথাগুলো ছন্দের হারে বাজতে থাকলে চোখের কোন বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলো সিরাতের।)
.
নীলছে রাঙা গগনের বুকে আজ এক রাশ বিষন্নতার দেখা মিলছে। কখন হয়তো দেখা গেল ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি হবে। রাজবাড়ীর প্রশস্ত ছাঁদে পা দুলিয়ে বসে আছে দুজন৷ সিরাত ভয়ে একেবারে গু’টিশু’টি দিয়ে গেছে। এই না সে আবার পরে গিয়ে পৃথিবীর মা’য়া ত্যা’গ করে ফেলে। সাফিন তাঁর দিকে তাকিয়ে হাসছে শুধু।
প্রায় পুরো ছাঁদজুড়েই রংবেরঙের ফুলগাছের সমারোহ।বোঝাই যাচ্ছে কেউ প্রতিনিয়ত একটু-একটু করে যত্ন নিয়ে এই বাগান গড়ে তুলেছে। নিচে রয়েছে উত্তরের ঘন জঙ্গল আর দীর্ঘ জায়গা নিয়ে পদ্ম দিঘি। সিরাত চোখ খিঁ’চে বন্ধ করে বিভিন্ন ফুলের মা’তো’য়ারা সুগন্ধি উপলব্ধি করছে।
সাফিন সিরাতের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে হাতটা সিরাতের কোমর স্পর্শ করে গেলে কেঁ’পে উঠলো সিরাত। সঙ্গে- সঙ্গে বন্ধ চোখদ্বয় খুলে ফেললে সাফিনের ধীর কন্ঠের রেশ মন ছুঁয়ে গেল তাঁর।
— তুমি সেই মা’য়াবীনি মোহিনী সিরাত। যাঁর অন্তরের ধুকপুক শব্দ ধ্বনিতেও এই শাহনেওয়াজ সাফিনের হৃদয়ে অবেলার মেঘে ছেঁয়ে যায় বর্ষনে।
অদ্ভুত ভালোলাগা,খা’রাপ লাগাগুলোও যেন ঠিক প্রকশ করতে পারছে না সিরাত। শুধু চোখ বন্ধ করে সাফিনের বলা প্রতিটা কথাগুলো উপলব্ধি করতে থাকলো সে।
.
ভরসন্ধ্যা বেলা আজাদ সাহেবের রুমে সাফিনের তলপ পরাতে ধীর পায়ে আজাদ সাহেবের রুমের সামনে এসে দরজায় নক দিতে আজাদ সাহেব বলে উঠলেন।
—ভিতরে আয় সাফিন। তুই আবার কবে থেকে নক করে আশা শুরু করলি?
সাফিন হেসে দরজা লক করে ভিতরে আসলে আজাদ সাহেব বিছানার উপর বেশ কয়েকটা ফাইল নিয়ে ঘাটাঘাটি করছেন দেখে সাফিন এক পলক সেদিকে তাকিয়ে বললো।
— এগুলো কি ইয়াংম্যান?
—এখানে বোস আগে।
আজাদ সাহেবের কথা শুনে সাফিন পাশ থেকে মরা টেনে বসে ঘাঁ’ড়ের পেছনটাতে হাত বোলাতে- বোলাতে বললো।
—হুম এবার বলো দেখি এগুলো কি?
আজাদ সাহেব কিছু একটা ভেবে ফাইগুলোতে ঝটপট সাইন করে দিয়ে সাফিনের দিকে তুলে দিয়ে বললেন।
— আমার জাবতীয় যা বিষয়সম্পত্তি আছে, এই ধর গ্রাম, শহর মিলিয়ে-মিশিয়ে যেগুলো আছে, সেগুলো সবকিছু তোর আর আমার নাতিবৌ সিরাতের যে সন্তান এই পৃথিবীতে আসবে? তাঁর নামে করে দিয়েছি। আমি ম’রে যাওয়ার পর বা সে আশার সঙ্গে- সঙ্গে এই বুড়োর সবকিছু তাঁর নামে হবে। শুধু রাজবাড়ীটা তোর থাকবে। আমি উকিলের সঙ্গে কথা বলে সবকিছু ফিক্সড করে ফেলেছি। তোকে কিছু করতে হবে না।
আজাদ সাহেবের কথা শুনে থ’মকে গেল সাফিন।
—এটা কি করলে তুমি নানু? তোমার মাথার ঠিক আছে তো? যে এখনও আসেইনি এই পৃথিবীতে তাঁকে সবকিছু লিখে দিলে?
—তুই চুপ থাক ব্যাটা। আমি যা করেছি একদম ঠিকঠাক এবং বুঝেশুনেই ঠিক ডিসিশন নিয়েছি।
সাফিনের মাথা কেমন ঘুরপাক খেয়ে গেল যেন।
— তুমি কিভাবে জানবে নানু,এই বিয়েটা তো কোনো বিয়েই নয়। উফ, কি করলে এটা তুমি।
(কথাগুলো মনের মাঝে উথাল-পাতাল ঢেউয়ের সৃষ্টি করতে থাকলে ফাইলগুলো হাতে নিয়ে প্রত্যেকটা পৃষ্ঠা উল্টেপাল্টে দেখে নেওয়ার পর নিজের মাথার চুল নিজেরই ছিঁ’ড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে সাফিনের।
হুট করে জুবায়েরের ফোনকল আসাতে ফাইলগুলো হাতে নিয়ে আজাদ সাহেবের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করতে হাসলেন তিনি। বললেন।)
—হইছে-হইছে যা তুই যেথায় যাওয়ার।
সাফিন দরজা খুলে বের হতে নিতে ফ্লোরে কারো কালো রাঙা কোনো মানুষের অবয়ব লাইটারের আলোয় স্পষ্ট চোখে পরতে দ্রুত সেদিকে তাকালে দক্ষিণা উত্রা হাওয়ায় দক্ষিণ দিকে টানানো সাদারাঙা পর্দাগুলো নড়তে থাকলে সাফিনের তিরিক্ষি চোখদ্বয় যেন সেদিকে বেশ কিছুক্ষণ ধরে তাকিয়ে রইলো।
—কেউ তো আছে যে, আমার গতিবিধি সবকিছু পরখ করে। কিন্তু, পেছন থেকে গুটি যতই সাজাও না কেন? পাশা খেলায় হাড় মানতে কখনোই রাজি নয় এই শাহনেওয়াজ সাফিন…..

চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে