#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ১৬
( ভিতরে কিছু-কিছু জায়গায় অশা’লীন ওয়ার্ড ইউস করা হয়েছে গল্পের প্রয়োজনে। তাঁর জন্য ক্ষ’মাপ্রার্থী। )
সিরাত চলে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পরই দরজার কাছে কিছু ভে’ঙে যাওয়ার আওয়াজ কানের খুব কাছ থেকে অন্তর্নিহিত হতে সাফিনের তিরিক্ষি চোখদ্বয় হুঁশি’য়ারি ভাবে দরজার কাছে এসে গম্ভীর চোখে তাকিয়ে ভ্রু কুঁ’চকে ফেলল নিমিষেই। গাম্ভীর্যের সহিত বললো।
—তুমি এখানে?
সাফিনের গম্ভীর কন্ঠের রেশ শুনে সকিনার হাতে থাকা দুধের গ্লাসটা কেমন কেঁ’পে উঠলো যেন৷ অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে হাতে থাকা দুধের গ্লাসটা সাফিনের দিকে এগিয়ে দিয়ে মৃদু হেসে বললো।
—খালাম্মায় ভাবিজানের জন্য পাঠাইছেন। এইটাই দিবার জন্য আসলাম আরকি।
সাফিন তাঁর কুঁ’চকে ফেলা ভ্রুদ্বয় নিচে নামালো। গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
— সিরাত তো বুড়ো আম্মার কাছেই গেল মাএ। যাইহোক তুমি এখানে দাঁড়াও আমি কফির মগটা এনে দিচ্ছি নিয়ে যাও আর দুধটা তুমি বুড়ো আম্মার রুমেই নিয়ে যাও।
সকিনা কয়েকটা ঢোক গি’লে মৃদু হেসে কোমরে আঁচল গুঁ’জে বললো।
—আইচ্ছা সাহেব।
সাফিন কফির মগটা সকিনার হাতে ধরিয়ে দিলে সকিনা চলে যেতে সাফিন রুমের ভিতরে চলে গিয়ে দরজা লক করে দিল ভিতর থেকে।
.
— ওই ছেমরি, ভালোভাবে তেলতা মালিশ করে দে তাত্তারি৷ গাঁ-গোত্ত’রে রাজ্যের বে’তারে আমার। ভালো কইরা মালিশ কর। তোর শরীরে তো হাঁ’ড় ছাড়া মাং’স দেহাই যায় না ছেমরি। ভাতা’রের কি প্রেম মোহব্বত কম পইরা গেল নি আয়। স্বামী হইলো গিয়া বিয়ার পরে একখান মাথা গোঁ’জার জায়গা বুঝছোত ছেমরি৷ হগ্গ’ল সময় ভালোবাসা দিয়া আগলা’ইয়া রাখবা যাতে অন্য মাইয়া ফাঁ’দে না ফালা’ইতে পারে। ব্যা’ডা মানুষগো মন বোঝা দায় বুঝলা মাইয়া৷ কোন সময় না আবার আঁচলের ফাঁক দিয়া ফাঁকি দিয়া চইয়া যায়গা টেরও পাইবা না।
রাহেলা বেগম বিছানায় শুয়ে কোমরের পিছনে হাত ঠেকিয়ে অনবরত কথাগুলো বলতে থাকলে সিরাতের শরীরে কেমন গি’জগি’জ করতে থাকলো যেন। কান থেকে যেন ধোঁয়া বের হচ্ছে তাঁর। এ রকম কথাবার্তা আগে কখনো শুনেনি সিরাত। ইচ্ছে না থাকা সর্তেও তবুও গাঁ’ট হয়ে বসে-বসে রাহেলা বেগমের কথাগুলো শুনতে হলো তাঁকে। মাঝখানে সকিনা দুধের গ্লাস দিয়ে গেলে নাক-মুখ কুঁ’চকে ফেললেও রাহেলা বেগমের তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে আঁচল দিয়ে নাক চে’পে ধরে ঢকঢক করে দুধটুকু শেষ করলো সিরাত।
রাহেলা বেগম তখন হেসে কু’টিকু’টি হয়ে বলেছিলেন।
— ছেমরি খাবি বেশি-বেশি। নাইলে স্বামি ধরার লগে-লগেই তো হাঁ’ড়’গো’র ভাই’ঙ্গা বইসা থাকবি মাইয়া৷ আমি যে কয়দিন এহিনতে আছি শ্বাসও ছাড়তে পারবা মনু শান্তিতে কই’য়া রাখলাম আগেত্তে।
সিরাতের চোখ-মুখ বিরক্তিতে ছেঁয়ে গেলেও মুখ থেকে টু শব্দও করতে পারলো না সে। শাশুড়ী বার>বার হলপ করে বলে দিয়েছেন রাহেলা বেগমের সবকথা শুনতে। তাই একেবারে বাধ্য হয়েই রাহেলা বেগমের অশা’লীন কথাগুলো গি’লতে হলো বসে-বসে।
.
সকালের দিকে বৃষ্টি থেমে গেলে জানালা ভেদ করে হিমশীতল হাওয়া ভিতরে ঠেলে আসতে থাকলে শীতের কারনে কাঁ’পা-কাঁ’পা চোখদ্বয় খুলে এলো সিরাতের। পিটপিট করে চারপাশে চোখ বো’লাতে রাহেলা বেগমের পায়ের কাছে নিজেকে ঘুমিয়ে গেছিল দেখে শাড়ি ঠিক করে দ্রুত উঠে বসলো সে। রাহেলা বেগম আরামে ঘুমোচ্ছেন। সিরাত রাহেলা বেগমের পায়ের কাছে থাকা কাঁথাটা ভালোভাবে তাঁর গাঁয়ে জড়িয়ে দিয়ে হাত দিয়ে চোখ ক’চলে নিজের রুমের দিকে রহনা হলো।
—ইশরে, সারাটা রাত এখানেই ঘুমিয়ে পরেছিলাম আমি। মাথাটাও কেমন ভাড়-ভাড় লাগছে। মিস্টার ব’জ্জা’ত তো রাত ১ টার আগেই রুমে যেতে বলেছিলেন আমাকে। আর এখন সকাল হয়ে গেল। যাকগে, ওনার কথার ধার ধারে কে আবার।
কথাগুলো বলতে-বলতে মাথাটা হালকা চে’পে ধরে ড্রয়িং রুমে হালকা উঁকিঝুঁ’কি দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেল সিরাত৷
.
সাফিনের রুমের সামনে এসে দরজাটা লাগানো দেখে কলিং বেল আর বাঁজাল না। সকাল-সকাল আবার আশেপাশের রুমের লোকনা জেগে যায়। মৃদু ধা’ক্কা দিতেই দরজাটা খুলে গেলে অবাক হলো সিরাত।
—একিরে বাবা! এ লোক আবার কবে থেকে দরজা লক না করেই কুম্ভ’কর্ণের মতো পরে-পরে ঘুমোয়? কথাগুলো মনে-মনে বলতে থাকলে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢু’কে গেলে চারদিক দিয়ে ঘেরা অন্ধকার রুমটা চোখে পরছে শুধু। বিরক্তি নিয়ে চোখ বড়-বড় করে তাকিয়ে কারেন্টের সুইচ খুঁজতে থাকলে হুট করেই কারো শক্ত হাতের বাঁ’ধনে বাঁ’ধা পরে গেল সিরাত। জোড়া’লো হাতের স্পর্শে নড়তেও পারছে না যেন। কারো ঘন হয়ে আশা নিশ্বাসের গরম উষ্ণ’তা ঘাঁ’ড়ের কাছে খুব কাছ থেকে অনুভব করলে কেঁ’পে উঠলো সিরাত। শরীরের ভিতরে প্রবল বেগে ঝর বয়ে যাচ্ছে যেন। চোখ খিঁ’চে খানিক বন্ধ রেখে ম’স্তিষ্কে বা’রি খেয়ে গেলে রাগে ফুঁ’সতে থাকলো সে। সাফিন ছাড়া এ আর কেউ হবে না ভেবে রাগ নিয়ে বলতে লাগলো সিরাত।
—ব’জ্জা’ত লোক একটা, ছাড়ুন আমাকে। আপনার ওই ত’ক্তা মার্কা হাত দিয়ে ছুঁবেন না আমাকে। উফ রে আমার নরম হাতটা ভে’ঙেই গেল বলে আজ। ছড়ুন বলছি আমাকে?
সিরাতের অনবরত কথাগুলো শুনে রাগে সাফিন সিরাতের মুখ চে’পে ধরে দাঁতে দাঁত চে’পে ধরে চি’বিয়ে-চি’বিয়ে বললো।
—চুপ, একদম চুপ থাকো তুমি। আর একটা বা’জে বকলে আই সয়ার তোমাকে এক্ষুনি গু’লি করে বস্তুা বেঁধে নদীতে ভাসিয়ে দেব সিরাত৷
সাফিনের মাত্রাতিরিক্ত রাগান্বিত কন্ঠ শুনে আপনা-আপনি চুপ হয়ে গেল সিরাত। ভয়ে কয়েকটা ঢোক গি’লে নিল সে। অন্ধকারে আবছা আলোয় সাফিনের যেটুকু চেহারা বোঝা যাচ্ছে তাতেই সে ভয়ে গাঁ’ট হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। আলোয় রাঙা রুমে সাফিনের চেহারাটা দেখলে বোধহয় বেহু’শই হয়ে যেত আজ। সাফিনকে দেখে মনেও হচ্ছে না সারারাত ঘুমিয়েছে বলে। নয়তো রুমে ঢোকা মাএই এ্যাটা’কটা ঠিক যাচ্ছে না সময়ের সাথে।
— মিস্টার ব’জ্জা’ত কি রাতে ঘুমাননি নাকি?
কথাটা মাথার মধ্যে ঘোরপাক খেয়ে গেলে
সাফিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে গম্ভীর কণ্ঠে রাগ নিয়ে বলে উঠলো।
— এখন কয়টা বাজে হুম। আমি তোমাকে কয়টায় রুমে আসতে বলেছি? তুমি জানো আমি টাইমের কাজ টাইমে করতে পছন্দ করি সিরাত৷ তোমাকে আমি কি বলেছিলাম? আর তুমি আমার কথা কানে কেন নেওনি হ্যা! তোমার রাগ, তোমার অভিমান, এগুলো তো আমি মুখ বুঁজে সবটা স’য্য করি। এগুলো কি তোমার চোখে পরেনা সিরাত? তুমি জানো শাহনেওয়াজ সাফিন কখনো কারো কথা শুনতে অভ্যস্ত ছিল না। আর সেখানে তুমি প্রতিটাখন, প্রতিটাদিন আমাকে যা খুশি কথা শোনাও তারপরও,তারপরও আমি মুখ বুঁজে সবটা স’য্য করে যাই৷ আর একটা রাত,মাএ একটা রাত তোমার কাছে চেয়েছি সেটাও টাইমে আসতে পারলে না তুমি!
— বিয়েটাতো একটা ডিল তাইনা? তাহলে?
সিরাতের ভ্যা’বলা সহিন শীতল কন্ঠের রেশ শুনে রাগ রাগলো সাফিনের। বিরক্তি নিয়ে সিরাতকে গাঁয়ের জো’রে ধা’ক্কা দিতে দেয়ালের সাথে বা’ড়ি খেয়ে গেল সিরাত। ব্যা’থায় কুক’রে উঠলেও নিশ্বব্দে চোখের পানি ফেলতে থাকলে সাফিন গম্ভীর কন্ঠে বললো।
— গাঁ’ধি একটা। যা খুশি করো তুমি। সামান্য কমান্সেস পর্যন্ত নেই মাথায়। তোমাকে কি বাসর করার জন্য ডাকছিলাম নাকি? গ্রামের বাড়িতে বুড়ো আম্মার দুইটা গরু আছে বুঝলে, বুড়ো আম্মার সঙ্গে- সঙ্গে ওদেরও সেবা করে আসো যাও। (কথাগুলো বলেই সাফিন লাইট জ্বা’লিয়ে দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলে ব্যা’থার জায়গাটাতে হাতে হাত ঘ’ষতে থাকলো সিরাত।)
—নিজে গিয়ে গাঁ’ধার সাথে থাক শ’য়’তা’ন। আ’জা’ই’রা কোথাকার। হাতটা ভে’ঙে গেল মনে হয় আমার। সাধে ব’জ্জা’ত ডাকি। পারফেক্ট নাম৷ তোর সাথেই যায় এটা। (মনে- মনে কথাগুলো বলে রাগে ফুঁস’তে থাকলো সিরাত।)
.
সকাল-সকাল সকিনা তিন-চারটে সুটকেস নিয়ে নিচে নামতে আমেনা বেগম রান্নাঘর থেকে ধীর চাহনিতে সেদিকে তাকিয়ে ভ্রুটা কি’ঞ্চিৎ ভাজ করে সকিনার উদ্দেশ্যে বললো।
—আরে এগুলোতো দাদির সুটকেস!এগুলো নিয়ে কোথায় যাচ্ছো তুমি সকিনা?
—খালাম্মায় কই’লো কইত্তে নাকি যাইব, তো আমারে এগুলান নামাইতে কই’লো।
সাফিন কালো রাঙা শার্ট পরে পরিপাটি ভাবে তৈরি হয়ে ভা’জ করা চুলগুলোতে সাই দিয়ে গাড়ির চাবিটা ঘোরাতে-ঘোরাতে নিচে নামতে সকিনার হাতে সুটকেস গুলো দেখে ভ্রু জাগিয়ে ফেলল সে। বললো।
—এগুলো আবার কি?
— এগুলান আমার কাপর-চো’পর ছেমরা। হুনলাম আজাদ নাহি তোর নামে রাজবাড়ী লিইখ্যা দিল, রং-ঢং করাইলো। তো আমি আইসি যহন রাজবাড়ী তো যাইমই যাইম৷ তোরা হগ্য’লে আমারে না জানাইয়াই কাম কাইজ করো। মনে করবার পারছো তোরা না কই’লে আমি জানবারই পারুম না।
রাহেলা বেগম লাঠিতে ভর দিয়ে এগিয়ে আসলে সাফিন মৃদু হাসলো শুধু।
—বুড়ো আম্মার কানে খবরটা আবার কে দিল? অবশ্য দেওয়ার লোকেরও অভাব নেই।
মনে-মনে কথাটা ভাবতে থাকলে, উপর থেকে সরোয়ার সাহেব আর মোস্তফা সাহেব নিচে নামলে সাফিন হেসে উঠলো। বললো।
— আরে তোমরা কখন এলে?
— কালকে রাতে এসে দরজা ধা’ক্কিয়ে উঠিয়েছে তোর বাপ আমাকে। সারাক্ষণ শুধু রাজনীতি ফা’জনীতি নিয়াই তালে আছে। রাদ আর দুপুর নেই ফাইফরমাশ খাঁ’টি আমি আরকি। কি আর করার আমার। কপালটাই তো এই বুড়োর কাছে এসে ঠেকেছে।
আমেনা বেগমের কথা শুনে হেসে উঠলো সাফিন। মোস্তফা সাহেব হেসে বললেন।
— যতই আফ’সোস করো না কেন আমেনা। এই বুড়োর মুখ দেখেই ম’রতে হবে তোমাকে। (কথাটা বলতে-বলতে ডাইনিং টেবিলে বসলেন মোস্তফা সাহেব।) আমেনা বেগম মুখ বাঁ’কিয়ে বললেন।
—তবেই হলো আমার।
সরোয়ার সাহেব রাহেলা বেগমকে হেসে মৃদুভাবে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলেন।
—ওহ দাদিজান আপনাকে কত বছর পরে সামনাসামনি দেখলাম আমি।
—ওই ছেমরা ছাড় আমারে। এত্তর ডাঙ্গর পোলায় আমারে জড়াই ধরে। তোর মায় ম’রছে কম দিনতো হইলো না, বুদ্ধি জ্ঞান কি লোপ পাইছে তোর? গেল রে গেল তোর দাদার পরে আমি আর কা’উরে আমারে জড়াই ধরবার দেইনায়। আর তুই কিনা আইজকে আমার এতদিনের ধরে রাখা পর্দা শ্যাষ কইরা দিলি। হতচ্ছা’ড়া আইজকে তোর হইব আমার হাতে। কথাগুলো বলতে যতক্ষণ রাহেলা বেগমের শক্ত হাতের লাঠির বা’ড়ি নিচে পরলো না একটাও সরোয়ার সাহেবের পিঠ থেকে।
“সদ্য ফ্রেশ হয়ে শাড়ি পাল্টে নিচে নামছিল সিরাত।” রাহেলা বেগমের চেচামেচি দেখে নিচে নামা থেকে আরেকধাপ উপরেই চলে গেল সে।
রাহেলা বেগমের এমনধারা কান্ড আর নতুন নয়। আগেও করেছেন এমন পা’গলামো। আজাদ সাহেবের আব্বা জাফর সাহেব গ’ত হওয়ার পর থেকেই তাঁর মাথার গন্ড’গো’ল বলে সবাই জানেন। তবে ভদ্রমহিলার ম’স্তিষ্ক খুব বিচক্ষণ। মোস্তফা সাহেব সহ আমেনা বেগম সাফিন মিলে সরোয়ার সাহেবকে সরিয়ে দিলে আজাদ সাহেব নিচে আসতে নিতে সিরাতকে সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মৃদু হেসে বললেন।
— আরে নাতিবউ ভয় পাইস না তুই। চল আমার সাথে নিচে চল। আমার আম্মাজান কিন্তু মানুষটা খা’রাপ না বুঝলি। আব্বারে অনেক মোহাব্বত করে তো তারজন্য এমন। তোর আম্মায় কিছু বলেনায় আমেনা?
সিরাত আজাদ সাহেবের কথা শুনে মৃদু হাসলে আজাদ সাহেব সিরাতের মাথায় হাত রাখলেন শুধু।
.
— তুমি কি পা’গল? আমি মাএ কয়েকদিন শহরে ছিলাম না তাতেই এত গন্ড’গোল পা’কিয়ে রেখেছো আমার জন্য? কে বলেছিল আইডেন্টিটি কার্ড লা’শের সাথে দিয়ে দিতে? আমি বলেছি? আনসার মি? ভাবতেই অবাক লাগছে কতগুলো ছা’গ’ল মাইনে দিয়ে পুষতেছি আমি।
অন্ধকারে থাকা লোকটা দেয়ালের সাথে নিজের হাতটা সজোরে ঘু’ষি দিতে সামনে কাচুমাচু মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা ভয়ে কেঁ’পে উঠলো যেন। কাঁ’পা>কাঁ’পা কন্ঠে বললো।
—সাহেব আমি নিজেতো যাইনি। লোক লাগিয়েছিলাম। মন্দাকে দিয়ে কাজটা করিয়েছি। আমার ভায়রাভাই হয়। ওযে এমন কান্ড বাঁধাবে ভাবিনি।
অন্ধকারের লোকটা যেন আরও রেগে গেলেন তাঁর কথা শুনে৷ রাগান্বিত কন্ঠে বললেন।
—এর নামটাই যখন মন্দা তাহলে তুমি ভাবলে কিভাবে কাজেকর্মে মন্দামি ছাড়া ভালো কিছু হবে? আমার এতদিনের প্লান সব এক নিমিষেই ভেস্তে দিতে চাইছো তুমি? ভুলে যেওনা আমি আমার বহুদিনের চ্যা’লা দুলালকেও পর্যন্ত মে’রে দিয়েছি। সেখানে তুমি তো কোন খেতের মূলা।
সামনে থাকা লোকটা মাথা নিচু করে ফেলল। ধীর কন্ঠে বললো।
—রাজবাড়ীর ওখানে একটা লা’শ ফেলে এসেছি বস্তুা বেঁ’ধে। একটা বার মিডিয়ায় হৈচৈ পরে গেলেই শাহনেওয়াজ সাফিনের রাজবাড়ী পুলিশের রেটে চলে যাবে সাহেব। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
লোকটা হেসে উঠলে অন্ধকারের লোকটা পকেট থেকে বন্দু’কটা বের করে সামনে থাকা লোকটার দিকে নিচু ভাবে ছুঁড়ে দিয়ে মৃদু হেসে উঠলেন। শীতল কন্ঠে বললেন।
—গু’লি করো।
—কাকে করতে হবে সাহেব। একবার বলুন শুধু এক্ষুনি করে দিচ্ছি।
—আপাদত নিজের মাথায় নিজে গু’লিটা করে আ’হাম্মকের যে একটা লিস্ট আছে না? ওই লিস্ট থেকে নিজের নামটা কাঁ’টিয়ে পৃথিবীর মা’য়া ত্যা’গ করে আমার সামনে থেকে দূর হও।
ভয়ে কেঁপে উঠলো যেন লোকটা। নিজের দ্রুতগতির নিশ্বাস নিজে খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করতে পারলে অনুনয়-বিনয় করে অন্ধকারের লোকটার উদ্দেশ্যে বললো।
—ভু’ল হয়ে গেছে সাহেব৷ এবারের মতো মা’ফ করে দিন আমাকে?
অন্ধকারের লোকটা বাঁকা হাসি হেসে সামনে থাকা চেয়ারটা পা দিয়ে সোজা করে বসে পরলে সামনে থাকা লোকটা তাঁর পা জড়িয়ে বসে পরলে হেসে উঠলেন যেন তিনি। রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বললেন।
— মাএ পাঁচ গুনব আমি। তাঁর মধ্যে নিজেকে নিজে গু’লি না করলে যেটুকু শান্তিতে ম’রতে পারতে না তুমি? তাঁর থেকেও ভয়াবহ ভাবে ম’রতে হবে তোমায়।
সামনে থাকা লোকটা ফু’পিয়ে কেঁদে উঠলো যেন।
—সাহেব আমার পাঁচ বছরের একটা ছেলে আর বয়স্কা মা রয়েছে বাড়িতে সাহেব। মা ম’রা ছেলেটা সাহেব এতিম হয়ে যাবে সাহেব৷ দোহাই লাগে আপনার।
অন্ধকারের লোকটা সামনে থাকা লোকটাকে পা দিয়ে লা’থি দিয়ে সরিয়ে দিলে লোকটা দুই হাঁটু ভা’জ করে কান্নারত ভাবে বসে পরলো ফ্লোরে৷ ফ্লোর থেকে বন্দু’কটা হাতে নিলে তাঁর পাঁচ বছরের ছেলের হাস্যজ্বল মা’য়াময় চেহারাটা ভেসে উঠলে চোখ বন্ধ করে ফেললে অঝোরে কান্না ঝরে পরলো তাঁর চোখ বেয়ে।
—আব্বা তোর বাপরে পারলে মা’ফ কইরা দিস আব্বজান৷ তোর বাপ না চাইলেও সামান্য টাকার জন্য, খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার জন্য, তোরে মানুষ করবার জন্য এই মৃ’ত্যুর পথে নাম লিখিয়েছিল৷ আমি ভালা না আব্বা৷ তুই ভালা থাকিস তোর দাদিরে নিয়া।
লোকটা কেঁদে উঠলে বিক’ট শব্দে বন্দু’কটা লোকটার মাথা ফুঁ’টো করে এফোর-ওফোর হয়ে গেলে পা ঢলে লুটি’য়ে পরলো ফ্লোরে সে। তৎক্ষনাৎ ফ্লো’র র’ক্তে লাল হয়ে গেলে অন্ধকারের লোকটা তৃপ্তির হাসি হাসলো৷ তাঁর হাসির রেশে পুরো রুমটা কেঁ’পে উঠলো যেন।
—তোমাকেও ঠিক এভাবে শেষ হতে হবে শাহনেওয়াজ সাফিন। সেদিন আমিও হাসব। জাস্ট সময়ের অপেক্ষা। এখন নাহয় তোমার মুখের হাসিটাই বরাদ্দ থাকুক……
চলবে…….