হৃদয়ে তুমি পর্ব-১৯+২০

0
1365

#হৃদয়ে_তুমি
#লেখিকাঃতানিমা_আক্তার_মিরা
#পার্টঃ১৯

তরী তরুনের সাথে থাকা মেয়েটাকে দেখে চরম থেকে চরমতম অবাক হয়। তরুণের প্রেমিকা এ কিভাবে তরীর মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো তরী মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো।ওর সবটা গন্ডগোল হয়ে যাচ্ছে সব অঙ্ক মিলতে গিয়েও মেলাতে পারছেনা কোথা একটা কিন্তুর প্রাচীর দাঁড়িয়ে আছে।

তরী আর দেরি না করে ডাইরিটা নিয়ে সোজা বাড়ি চলে যায় অফিসে আর ফেরত যায় না। তরীকে এমন সময় বাড়ি আসতে দেখে ওর মা অবাক হয়।

মা- কিরে চলে আসলি।
তরী- মা আমার কিছু কাজ আছে তাই। আমি রুমে যাচ্ছি কেউ যেন আমাকে বিরক্ত না করে।

তরী তাড়াতাড়ি করে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে ডাইরির পাতা খুলতে থাকে….

একটা পাতায় লেখা….

আই লাভ ইউ মিতালি।

হুম মিতালি তরী আর রিতার বন্ধু মিতালী হলো তরুনের প্রেমিকা।

তরী- মিতালির সাথে তরুনের সম্পর্ক ছিলো এটা মিতালি আমাদের বলেনি কেন??

ডাইরির পাতায় তরুন আর মিতালির দেখা হওয়া মনের কথা বলা এগুলো লেখা ছিলো তরী আরো কৌতূহলী হয়ে পড়ের পাতা গুলো পড়তে লাগলো,ওর একটা পাতার লেখাতে চোখ আটকে গেলো….

(১)
আজকে আমি অনেক বড় সত্যি জানতে পারলাম আমার মায়ের মৃত্যুটা স্বাভাবিক নয়।আমার মাকে খুন করা হয়েছে আর সেটা করেছে আমার নিজের বাবা। বাবা তুমি এতো খারাপ ছিঃ।

(২)
আমার মাকে প্রান দিতে হয়েছিলো কারন আমার মা আমার বাবার বেআইনি কাজ সবার সামনে প্রকাশ করে দেবে বলেছিলো বলে।

(৩)
বাবার সাথে আজ আমার তর্ক বিতর্ক হয়।বাবা আমাকে হুমকি দেয় আমি যদি কাউকে কিছু বলি তাহলে উনি আমার মিতালি আর আমার কাছের বন্ধুদের মেরে ফেলবে।

(৪)
আজকে আমি আমার প্রানের বন্ধু দের কাছ থেকে সবটা লুকিয়ে গেলাম আর ওদের কে এভয়েড করলাম।জানি আর্দ্রর আর আরুশ তোরা খুব কস্ট পেয়েছিস কিন্তু আমার যে কিছু করার নেয় আমি যে নিরুপায়।

(৫)
আজকে বাবাকে জেলে নিয়ে যায়,আর কাজটা করেছে আরুশ।আমি জানি আরুশের ক্ষতি করবে আমার বাবা কিন্তু আমি থাকতে সেটা হতে দেবো না।

(৬)
প্রমান না থাকাই বাবা ছাড়া পেয়ে যায়। আমি আজকে বাবাকে বলেছি তার বিরুদ্ধে সমস্ত প্রমান আমি দেবো আরুশকে।বাবা আমার উপর রাগ করেছে।

(৭)
আমি আরুশকে অনেক কিছু প্রমানের কাছাকাছি এগিয়ে দিয়েছি আমি জানি আরুশ সবটা খুঁজে বের করতে পারবে।

(৮)
আজকে আবার ওহ বাবাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেলো আমি জানি এবার আর বাবা ছাড়া পাবে না আর না যেন ছাড়া পাই তার ব্যবস্থা আমি করবো আমি সাক্ষি দেবো বাবার বিরুদ্ধে।

আর কিছু লেখা নেয় বাকি পাতা গুলো সাদা। তরী ডাইরিকে তুলে রাখলো।

বিকাল ৫ টাই…..

তরী ওর কথা মতো ঠিক ৫ টাই উপস্থিত হয়েছে ঠিকানা মতো এখনো সোহাগ এসে পৌঁছায় নি।

কিছুক্ষণ পর…

সোহাগ- সরি রে দেরি হয়ে গেলো।
তরী- চল।

সোহাগ আর তরী বাড়ির দরজায় নক করেন।দরজা খোলে একজন বয়স্ক লোক দেখে মনে হচ্ছে এই বাড়িতে কাজ করেন বহু দিন ধরে।

লোকটি- কাকে চাই।
সোহাগ- আমরা মি. দত্তের সঙ্গে দেখা করতে পারি।
লোকটা- আচ্ছা আসুন আমি সাহেবকে ডেকে দিচ্ছি।

লোকটা ওদেরকে ভেতরে বসতে দিয়ে মি. দত্তকে ডাকতে চলে যায়।

কিছুক্ষণ পর মি দত্ত আসেন।

মি.দত্ত- আপনারা কে আপনাদের তো ঠিক চিনলাম না।
সোহাগ- আমি একজন ইন্সপেক্টর সোহাগ আহমেদ আর ওহ আমার বান্ধবী তরীতা জাহান।আমরা আপনার কাছে একটা সাহায্যের জন্য এসেছি।
মি.দত্ত- কি সাহায্য।
তরী- আপনার হসপিটালের পুরানো ডকুমেন্টস আমরা দেখতে চাই।
মি.দত্ত- কত বছর আগের
তরী- প্রায় ২৬-২৭ বছর আগের।

তরীর কথায় সোহাগ ওহ মি. দত্ত দুজনেই চমকে উঠলো।সোহাগ ওহ জানতো না তরী ঠিক কি খুঁজে বের করতে চাইছে।

মি. দত্ত- এতবছর আগের ডকুমেন্টস নিয়ে আপনারা কি করবেন।
তরী- প্লিজ আমাদের এটা জানা খুব জরুরী।
মি .দত্ত – ২৭বছর আগে আমি ওই হসপিটালের মালিক ছিলাম না।

তরী হতাশ হয়ে ওনার দিকে তাকালেন তিনি তরীর হতাশ হওয়া মুখটার দিকে তাকিয়ে হাসলেন।

মি. দত্ত- আমি জানি না তোমরা কে তবে এটা বুঝতে পারছি তোমরা কোন একটা সত্যি জানবার জন্য আমার কাছে এসেছো। হয়তো আমি একাজে তোমাদের সাহায্য ওহ করতে পারি কারন তখন আমি হসপিটালের মালিক না হতে পারি একজন ডাক্তার হিসাবে আমি ওই হসপিটালেই ছিলাম।

তরী মুখে একটা খুশির ঝলক দেখে গেলো যাক তীরে এসে তরীটা ডুবলো না তাহলে।

মি. দত্ত- বলো কি জানতে চাও।
তরী- ২৭ বছর আগে ৬ মে বুধবার সন্ধ্যা ছয়টা নাগাদ ( কাল্পনিক) একটা ভেলিভারি কেস এসেছিলো আপনাদের হসপিটালে প্রেসেন্ট ছিলেন মিসেস মিলি চৌধুরী বিখ্যাত বিজনেস ম্যান আসফাক চৌধুরীর স্ত্রী। একটু মনে করে বলুন তো ওনার ভেলিভারি কোন ডাক্তার করিয়েছিলেন।
মি. দত্ত- এতগুলো বছর আগের কথা মনে পড়াটা একটু কস্ট কর কিন্তু আমার যতদুর মনে পড়ে ডেলিভারিটা ড. হাসান করিয়েছিলেন।
তরী- আপনি এতগুলো ড. থাকতে ওনার নাম কেন বললেন।
মি. দত্ত- কারন নাদিম একজন অভিজ্ঞ ডাক্তার ছিলেন আর বুধবার সন্ধ্যায় ডিউটি আমার, আর কয়েকটা ডাক্তারের ছিলো। তাদের মধ্যে ছিলো ড. হাসান ছিলেন মহিলা বিশেষজ্ঞ।
তরী- ওহ আপনার কাছে কি ড. হাসানের কোনো ঠিকানা বা ওনার কোনো ছবি আছে।
মি. দও- হুম ঠিকানা আছে।

তরী কে মি. দত্ত ঠিকানাটা লিখে দেয় ।তারপর তরীর মাথায় হাত রেখে বলেন- মা তোমার আত্মবিশ্বাস দেখে আমি মুগ্ধ। তুমি এতটাই আত্মবিশ্বাসী যে এতগুলো বছর এর পুরানো সত্যি জানবার জন্য আমার কাছে এসেছো।আমি জানিনা তুমি ঠিক কোন সত্যি খুঁজে বের করতে চাইছো কিন্তু তোমাকে আমি দোয়া করি তুমি যেন তোমার মনের সব উওর পেয়ে যাও ।
তরী- হুম দোয়া করবেন এটা আমার ভালোবাসার মানুষটার সাথে জড়িত। আমাকে যে সবটা প্রমান করতেই হবে নাহলে আমি যে তাকে হারিয়ে ফেলবো ( মনে মনে)

তরী মি. দত্তকে বিদায় জানিয়ে চলে যায়।যাবার আগে ওনাকে তরী নিজের নম্বরটা দিয়ে যায় আর বলে কোনোরকম কিছু মনে পড়লে তরী কে ফোন করে জানাতে।

সোহাগ আর তরী একসাথে যাচ্ছে তরী গাড়ি নিয়ে আসিনি।

গাড়িতে তরীকে চুপচাপ আনমনা হয়ে থাকতে দেখে সোহাগ জিজ্ঞাসা করলো- কি হয়েছে চুপচাপ কেন।
তরী- কিছু না।
সোহাগ- কিছু তো একটা হয়েছে বল।
তরী- মিতালির কথা ভাবছি।
সোহাগ- মিতালি??
তরী- হুম মিতালি।
সোহাগ- সত্যি আমার ওহ মনে আসেনি ওর কথা কি খবর ওর, কেমন আছে, কি করছে, এখন বিয়ে হয়ে গেছে।
তরী- কিছু জানি না।

সোহাগ তরীর দিকে তাকায়, তরীর চোখে পানি চিকচিক করছে। সোহাগ কিছু বুঝতে পারে না ।

সোহাগ- কি রে কি হয়েছে।
তরী- জানিনা এর হঠাৎ করেই একদিন মিতালি উধাও হয়ে যায় অনেক খুঁজেছি কিন্তু ওকে আর পাইনি।কোথায় গেলো কিছু জানি না।
সোহাগ- কিভাবে এসব হলো।
তরী- আসলে দোষটা আমারই।
সোহাগ- মানে।
তরী- আমি জোর করে রিতা কে নিয়ে মামার বাড়ি চলে গিয়েছিলাম,মিতালি কেও অনেক বার বলেছিলাম কিন্তু ওহ যাইনি।আমরা ঘুরে এসে মিতালির বাড়ি গিয়ে দেখি একটা তালা ঝুলিয়ে দেওয়া আছে। সবাইকে জিজ্ঞেস করেও কোনো উওর পাইনি।
সোহাগ- তারপর
তরী- তার কিছুদিন পর খবর পাই মিতালির মা-বাবা মারা গেছে অ্যাক্সিডেন্টে ( তরী কাঁদতে লাগলো)
সোহাগ- আর মিতালি??
তরী- জানিনা মিতিলির কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
সোহাগ- ওহ।

তরী কাঁদছে খুব করে কাঁদছে‌ আজ ওর মনের ক্ষতগুলো আবার তাজা হয়ে উঠেছে।সোহাগ তরী কে কি বলে সান্তনা দেবে ভেবে পাচ্ছে না।

#চলবে

#হৃদয়ে_তুমি
#লেখিকাঃতানিমা_আক্তার_মিরা
#পার্টঃ২০

তরীর কান্নার শব্দ সোহাগের বুককে কাঁপিয়ে দিচ্ছে। আজ তরীর কান্না করার সমস্ত কারন গুলো যেন একজায়গায় হয়ে গেছে সমস্ত কস্ট গুলো একসাথে তাজা হয়ে উঠেছে।তরীর মনের ঘন মেঘগুলো আজ মনের সুখে বৃস্টি হয়ে নামছে । সোহাগ তরীর দিকে তাকিয়ে আছে করুন চোখে একসময় সবথেকে হাসি খুশি থাকা মেয়েটার মনে আজ শুধু কস্টই কস্ট।

কিছুক্ষণ পর তরী নিজেকে সামলাতে শুরু করে। সোহাগ তরীর কান্না দেখে রাস্তার একপাশে গাড়িটা দাড় করিয়ে দিয়েছিলো। তরী নিজেকে সামলে নিয়ে সোহাগ কে গাড়ি চালাতে বললো।সোহাগ তরীর কথা মতো গাড়ি চলাতে শুরু করলো।

সোহাগের মনে অনেক গুলো প্রশ্ন ঘোরাঘুরি করছে কিন্তু বলতে পারছে না।

তরী- সোহাগ আমাকে বাড়ি দিয়ে আসবি।
সোহাগ- ওকে।

তরী নিজের মাথাটা সিটের সাথে ঠেকিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। গাড়ির সাথে গাছপালা গুলো যেনো ছুটে চলেছে বলে মনে হচ্ছে ঠিক সেভাবেই তার জীবন থেকে সুখ গুলো ছুটে তার সীমানার বাইরে চলে যাচ্ছে।

সোহাগ তরীকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে চলে যায়।

তরী বাড়ি ফিরে এসে চুপচাপ বসে আছে।ওর মা ওকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে ওর পাশে গিয়ে বসলেন।

মা- তরী
তরী- হুম মা বলো।
মা- কি হয়েছে মন খারাপ কেন
তরী- মা আমার মন খারাপের কারন টা তো তুমি জানো।
মা- হুম
তরী- তাহলে জিজ্ঞাসা করছো কেন
মা- মানুষ কাউযখনযখন নিজের মনের কথা বলে তখন তার মনটা হালকা হয়ে যায়,ভেতরের কস্ট গুলো কমে যায়।

তরী নিশ্চুপ হয়ে ওর মায়ের কথা গুলো শুনছিলো ওর মা কথা গুলো বলে হতাশ হয়ে উঠে চলে যেতে গেলে তরী বলে উঠলো- মা আমাদের জীবনটা এমন কেন??আমরা যখন যেটা চাই তখন সেটা পাইনা আর যখন যেটা চাইনা তখন সেটা পাই।

তরীর মা নিজের মেয়ের দিকে তাকালেন করুন চোখে তরী আবার বলতে চালু করলো- আমি তো চেয়েছিলাম আরুশের সাথে সুখে সংসার করতে কিন্তু কি হলো আরুশকেই আমি হারিয়ে ফেললাম।আবার আরুশের মতো একটা মানুষ আবার আমার জীবনে এলো সে নাকি নিরব অন্য একটা মানুষ সে কিন্তু আমার আরুশ নয়। আরুশ আরুশ আমার জীবনে তো ওই একটাই মানুষ ছিলো যাকে আমি পাগলের মতো ভালোবাসতাম কিন্তু কি হলো আমার কি লাভ হলো ওকে ভালোবেসে সে তো আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেলো।আমি আর কাউকে ভালোবাসবো না কাউকে না।

তরী চিৎকার করে কেঁদে উঠলো।ওর কান্নায় গোটা বাড়ি কেঁপে উঠছে। তরী সবার চোখের মনি তরী দের বাড়ির কাজের লোকগুলো ওহ তরী কে খুব ভালোবাসে। তরীর কান্নায় তারাও কাঁদছে তরীর মা নিজের মেয়ের কস্ট দেখতে পারছে না তিনি তরী কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন।

পরেরদিন…

দিনগুলো নদীর স্রোতের মতো চলে যাচ্ছে কিন্তু কস্ট গুলো??

বারবার পুরানো ক্ষত গুলো নাড়া দিয়ে উঠছে। আর্দ্র রিতার সম্পর্ক অনেকটা ভালো হয়ে উঠেছে।তরী যথেস্ট চেস্টা করছে সব সত্যি জানার জন্য।ওদিকে চাঁদনী তরীর সাথে দেখা করার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে।

তরী অফিস যাবে বলে রেডি হয়ে নিচে নামতেই চমকে উঠলো।

তরী- তুমি।
চাঁদনী- হুম আমি তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
তরী- কি কথা??
চাঁদনী- তুমি আমাকে সত্যিই চেনো?
তরী- হ্যা।
চাঁদনী- কিভাবে চেনো আমাকে।
তরী- তুমি তো ….. ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করতে। সেখানেই একটা অনুষ্ঠানে আমি তোমাকে দেখেছিলাম।
চাঁদনী- ওহ।এর থেকে আমাকে আর ভালো করে চেনো না।
তরী- না।
চাঁদনী- আর সে হিসাবে আমি তোমাকে চিনবো না সেটাই কি স্বাভাবিক নয়।
তরী- হুম ।
চাঁদনী- তাহলে সেদিন কেন বলছিলে আমি তোমাকে চিনি একপলকের দেখাই কাউকে মনে রাখা খুবই কস্ট কর তাইনা‌
তরী- আচ্ছা বলো আর কি জানতে চাও।
চাঁদনী- আচ্ছা তুমি যে বলেছিলে আমার সাথে নিরবের বিয়ে হয়ে গেছে এটা তুমি কিভাবে জানলে।
তরী- আমি তো এটা কোর্ট ম্যারেজ সার্টিফিকেট থেকে জেনেছি।
চাঁদনী- ডেটটা কত লেখা ছিলো।
তরী- মেবি …..
চাঁদনী- …. তারিখ( চমকে উঠে)
তরী- কি হলো।
চাঁদনী- ওই দিন তো আমাদের গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল।

তরী চমকে উঠলো।

তরী- কীভাবে??
চাঁদনি- ওই দিন আমাকে নিরব ওর মনের কথা বলে আর আমাকে একটা কাগজে সাইন করিয়ে নেয়।
তরী- মনে হয় ওটা রেজেস্টি পেপার ছিলো।
চাঁদনী- হবে হয় তো।
তরী- কিন্তু অ্যাক্সিডেন্ট হলো কিভাবে?
চাঁদনী- আমরা ঠিক করি ঘুরতে বের হবো দুজন দুজনকে সময় দেবো।প্ল্যান মতো আমরা বের হলাম খুব ভালোই যাচ্ছিলাম কিন্তু হঠাৎ গাড়ির ব্রেক ফেল হয়ে যায়।নিরব আমাকে ধাক্কা দিয়ে বাইরে ফেলে দেয়।আমার মাথায় আঘাত লাগে আর আমি অজ্ঞান হয়ে যায় তারপর কি হয়েছে না হয়েছে সবটা আমার অজানা।
তরী- তোমার যখন জ্ঞান ফেরে তুমি কি দেখো।
চাঁদনী- আমি ওই অ্যাক্সিডেন্ট এর পর কোমায় চলে যায় আমার জ্ঞান ফেরে প্রায় ৬ মাস পড়ে।

তরী চমকে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে আছে।

চাঁদনী- আমি হয়তো প্রান ফিরে পেয়েছিলাম কিন্তু ভালোবাসা হারিয়ে ফেলি।
তরী- মানে।
চাঁদনী- আমার জ্ঞান ফেরার পর আমি জানতে পারি নিরব একটা কাজের জন্য বিদেশে গেছে।আমি সুস্থ হবার ৩ মাস পড়ে নিরব ফিরে আসে কিন্তু ওর মধ্যে অনেক পার্থক্য দেখতে পাই।যে নিরব চাঁদনী বলতে পাগল ছিল সে আমাকে বোনের চোখে দেখতে লাগলো।আমাকে এভয়েড করতে লাগলো।আমার মাঝে মধ্যে মনে হয় ওহ আমার নিরব নয় অন্য কেউ।( অশ্রুসিক্ত নয়নে)

তরী চমকে উঠলো,চাঁদনির কথা শুনে ওর খারাপ লাগছে ওর জীবনের সাথে চাঁদনীর জীবনের অনেকটাই মিল।

তরী- তোমার উপর দিয়ে অনেক ঝড় গেছে জানি তোমাকে অনেক ধন্যবাদ আমাকে এগুলো বলার জন্য।
চাঁদনী- আমি ওহ চাই সত্যিটা কি সেটা জানতে।
তরী- হুম।

তরী চাঁদনী কে জড়িয়ে ধরলো ওর নিজেকে হালকা লাগছে। অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর ওহ পেয়ে গেছে এবার সবগুলো একসাথে করতে হবে।

তরী চাঁদনীর থেকে আরো কিছু ইনফরমেশন নিতে লাগলো।

তরী- তোমার চেকাপ কোন হসপিটালে কোন ডক্টর করেছিলেন।
চাঁদনী- আমার চেকাপ তো মামা করেছিলো।
তরী- মানে।
চাঁদনী- নিরবের বাবা তো একজন ডাক্তার।
তরী- নাম কি ওনার ??
চাঁদনী- নাদিম।
তরী- ওহ।

আরো কিছু কথা বলে চাঁদনি চলে যায়। তরী সবগুলো কথা মেলাতে গিয়ে ওহ মেলাতে পারছে না। কোথাও একটা জিনিস মিস করে ফেলছে তবে আর নয় এবার সবটা সামনে আনতেই হবে।

তরী অফিসে যাবার পথে রাস্তাই ট্রাফিক জ্যামে আটকে পড়ে যায়। বিরক্ত হয়ে তরী জানালা দিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগল। হঠাৎ ওর চোখ পড়ে একটা গাড়ির দিকে।গাড়ির ভেতরে থাকা মেয়েটাকে দেখে ওহ চমকে উঠলো।

তরী- মিতালি???

ট্রাফিক জ্যাম ছেড়ে দেওয়ায় তরী মিতালির দেখা পাইনা,হারিয়ে যায় মিতালি।

তরী- তারমানে মিতালি এই শহরেই আছে।

তরী তাড়াতাড়ি কিছু জনকে ফোন করে মিতালির চোখ করতে লাগিয়ে দেয়।

কয়েকদিন পর……..

তরী বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফোন ঘাটচ্ছিলো হঠাৎ ওর ফোনে একটা নোটিফিকেশন আসে ওহ জিনিসটা দেখে বাঁকা হাসে,ওর কাছে সবটা পরিস্কার।আর ২ দিন পর তরীর জন্মদিন আর সেদিনই হবে বাজিমাত।

২ দিন পর….

গোটা বাড়িটা আজকে তরীর মনের মতো করে সাজানো হচ্ছে।তরীর হঠাৎ এমন ইচ্ছায় সকলে অবাক। কিন্তু তরীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু বলেনি কেউ তরীর ইচ্ছা অনুযায়ী আজকে ওর জন্মদিন পালন করা হবে ধুমধাম করে…

সন্ধ্যা বেলা-

সমস্ত গেস্ট চলে এসেছে গোটা চৌধুরী পরিবার, নিরবের পরিবার,রিতার মা,অদ্রির পরিবার সকলে উপস্থিত আছেন। শুধু বার্থডে গার্ল আস্তে বাকি।সোহাগের উপর আমাদের আরুশী ক্রাশ খেয়ে গেছে ওলরেডি।

সোহাগ নিরবকে দেখে খুব অবাক হয় ওহ বুঝতে পারছেনা আরুশ তো মারা গেছে তাহলে ওটা কে?

সোহাগ- রিতা একবার এদিকে আয়।
রিতা- বল।
সোহাগ- ওটা কে আরুশের মতো দেখতে।
রিতা- ওহ নিরব।
সোহাগ- মানে কি।
রিতা- একটু ওয়েট কর সবটা জানতে পারবি আমার মন হচ্ছে তরী এমনি এমনি আজকে পার্টিটা দেয় নি এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো কারন আছে।

রিতা কথাটা বলে চলে যায় সোহাগ ভাবে- আবার যদি তরীর জীবনে আরুশ ফিরে আসে তাহলে তো আমি আর কখনো তরী কে পাবো না।

আর্দ্র-কি বললো?
রিতা- নিরবের কথা জিজ্ঞেস করছিল
আর্দ্র- আমি বুঝতে পারছি না এখানে নিরবকে তরী ডাকলো কেন সবাই তো ওকে দেখে কস্ট পাবে।
রিতা- জানিনা আমি তরী কেন এসব করছে।
আর্দ্র- তরী কোথায়?
রিতা- একটু ওয়েট করো এখুনি চলে আসবে।
আরু- ওই তো।

সবাই আরুর কথা শুনে ওদিকে তাকায় তরী একটা বেবি পিংক কালারের গাউন পড়েছে, তরীকে পুরো বার্বি ডল লাগছে।

নিরব তরীর দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে,আর সোহাগ ওহ‌।

তরী আসতেই সকলে ওকে শুভেচ্ছা জানায়,সবাই তরী কে ঘিরে ধরলো,সবার সাথে তরী কথা বলছে।

হঠাৎ একজন হ্যাপি বার্থডে বলে চেঁচিয়ে উঠলো সবাই দরজার দিকে তাকায় তাকিয়ে দেখে চৌধুরী পরিবার আর নিরবের পরিবার চমকে উঠলো……

#চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে