#হৃদয়ের_আঙ্গিনায়_তুমি
#ইশা_আহমেদ
#সূচনা_পর্ব
১.
লম্বা ঘোমটা দিয়ে বউ সেজে বসে আছে ওইফা বাসর ঘরে।ফুলের ছিটেফোটা ও নেই আশেপাশে।ভয় হচ্ছে প্রচন্ড ওইফার!ভয় পাওয়ার কারণ হচ্ছে যার সাথে ওইফার বিয়ে হয়েছে সে। দ্যা গ্রেট পলিটিশিয়ান ইনহাজ জুহাইন খান সবার কাছে মহান কিন্তু আসলে একজন বদ অসভ্য লোক।লোকটার আসল চেহারা ওইফা জানে।মেয়েদের থেকে নাকি একশো হাত দূরে থাকে।আসলে এইটা সবার সামনে আর ভেতরে ভেতরে একটা অসভ্য মেয়েবাজ লোক।
দরজা আটকানোর শব্দে কল্পনা থেকে বের হয়ে আসলো ওইফা।ওইফা আপন মনে বিড়বিড় করে বলছে,উফ আল্লাহ বাঁচিয়ে দাও।এই অসভ্যলোকের সাথে থাকবো কি করে আমি।মনে মনে দোয়া দুরুদ সব পরতেছে সে।ইনহাজ এসেই ওইফাকে টান মেরে বিছানা থেকে নামালো।টান মারার জন্য ঘোমটা খুলে গিয়েছে।ওইফা হা করে তাকিয়ে আছি ইনহাজের দিকে।
ইনহাজ ওইফার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলে,
-“welcome to hell mrs inhaz juhain khan.”
তার পর ইনহাজ ওইফাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে দাঁতেদাঁত চেপে বলে,,,
-“এবার তুমি বুঝবে মজা আমার সাথে লাগতে এসেছিলে না।তোমাকে কি আমি এমনি এমনি বিয়ে করেছি মিস ইশরাত ওইফা উফ সরি মিসেস ইশরাত ওইফা খান।”
ওইফা চোখ-মুখ খিচে বন্ধ করে আছে।তাকাতেই ভয় লাগছে।এই ছেলেকে দিয়ে বিশ্বাস নেই কখন কি করে বসে।ওইফা পিটপিট করে চোখ খুলে দেখে ইনহাজ রাগি চোখে ওইফার দিকে তাকিয়ে আছে।হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললো,,,
– “হা…তটা ছা..ড়ুন লাগছে আমার”
উনি আরো জোড়ে হাত চেপে ধরে বলে,,,,
-“লাগুক তোমার বোঝা উচিত ছিলো তুমি কার সাথে লাগতে এসেছো”
দাঁতেদাঁত চেপে ওইফা বললো,,,
-“আমি জেনে শুনেই সব করেছি।আর আপনি কে যে যার সাথে লাগতে আসার জন্য আমায় ভাবতে হবে!”
ইনহাজ ঝাড়া মেরে ওইফার হাতটা ছেড়ে দিলেন।তারপর বলল,,,,
-“আমি কে!ওহ হো ওইফা বেবি ইউ নো আই আম ইনহাজ জুহাইন খান।তোমার সাহস অনেক বেড়েছে বুঝলে তো”
-“আমার সাহস আগে থেকেই ছিলো”
ইনহাজ হুট করে ওইফার কাছে এসে কোমড় জড়িয়ে ধরে বাঁকা হেসে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,,,,
-“আমি জানি বেবি তোমার সাহস কিভাবে ভাঙ্গতে হয়”
ইনহাজের স্পর্শে সর্বাঙ্গে যেন বিদুৎ খেলে গেলো ওইফার । ইনহাজের এভাবে কোমড় জড়িয়ে ধরাতে এমনিতে একটা ঝটকা খেয়েছে সে উপর এইভাবে বলা।ধাক্কা মেরে দূরে সরালো ইনহাজকে নিজের কাছ থেকে ওইফা।এই অসভ্য লোক যখন যা খুশি তাই করতে পারে।
ইনহাজ বাঁকা হেসে ওইফাকে কিছু না বলে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে যান।ওইফা বসে বসে ভাবতে থাকে কি করবে সে।এই অসভ্য লোকটা ওইফাকে তুলে নিয়ে জোড় করে বিয়ে করেছে আজকে।সে ভাবতে থাকে সকালের কথা।
২.
ওইফা আজকে একটু লেট হয়ে গিয়েছে ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য বের হতে।বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছিলো।রিকশা না পাওয়ায় হাঁটা শুরু করে।কিছুদূর আসতেই একটা গাড়ি এসে থাকে ওর সামনে থামে।ওইফা হকচকিয়ে কয়েক কদম পিছনে যায়।গাড়ি থেকে কয়েক জন কালো পোশাক পরা লোক বেরিয়ে এসে ওইফার মুখে রুমাল চেপে ধরে।তারপর আর মনে নেই ওইফার।
চোখ খুলে নিজেকে একটা অচেনা রুমে আবিষ্কার করে ওইফা।মাথা চেপে ধরে উঠে বসে।তখনকার কথা মাথায় আসতেই ওইফা বেড থেকে নেমে দরজার সামনে গিয়ে দরজা ধাক্কাতে থাকে আর চিল্লিয়ে বলতে থাকে,
-“কেউ আছে হেল্প!দরজাটা খুলে দিন”
ওইফা অনেক সময় চিল্লালেও দরজা খোলে না কেউ।সে ক্লান্ত হয়ে বেডে বসে থাকে।কিছুক্ষণ পর কয়েকটা মেয়ে রুমে ঢোকে।সাথে একটা লোক যাকে সে খুব ভালো করেই চেনে ওইফা।ওইফা লোকটাকে দেখে তার দিকে তেড়ে গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
-“সমস্যা কি আমাকে এখানে কেনো নিয়ে আসা হয়েছে”
লোকটা ভয়ে ভয়ে বলে,
-“ম্যাম আপনি শান্ত হন।স্যার আপনাকে এখানে নিয়ে আসতে বলেছেন এবং এই জিনিসপত্র দিয়ে সাজতে বলেছেন”
ওইফা চেঁচিয়ে বলে,
-“মিস্টার খান আমাকে এখানে তুলে নিয়ে এসেছে?”
লোকটা মাথা নাড়ায়।ওইফা রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে বলে,
-“আমাকে এইখানে কেনো আনা হয়েছে।”
-“ম্যাম আপনি স্যারের কাছ থেকেই জেনে নিয়েন আমি কিছু বলতে পারবো না।আপনি প্লিজ রেডি হয়ে নিন।”
ওইফা ভ্রু কুঁচকে বলে,
-“রেডি!রেডি কেনো হবো আমি।আমি রেডি আছি আপনি আমায় মিস্টার খানের কাছে নিয়ে চলুন।”
-“ম্যাম আপনাকে নিয়ে যাওয়া অবশ্যই হবে আগে আপনি রেডি হন”
ওইফা ওইসব পরতে নারাজ।ইনহাজের অ্যাসিস্ট্যান্ট রাফিন না পেরে বেলকনিতে এসে ইনহাজকে ফোন করে।ইনহাজ রিসিভ করতেই রাফিন বলে,
-“স্যার ম্যাম কিছুতেই রেডি হতে চাইছে না আপনি না আসা পর্যন্ত।”
ইনহাজ গম্ভীর কন্ঠে বলে,
-“আমি আসছি”
রাফিন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে রুমে আসে।ইনহাজও রুমে চলে আসে কিছুক্ষণের ভেতরে।ইনহাজের পরনে একটা সাদা পাঞ্জাবি।দেখতে বেশ স্নিগ্ধ লাগছে ইনহাজকে।ওইফার জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে হলে হয়তো নির্ঘাত প্রেমে পরে যেতে।পার্লারের মেয়েগুলো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।ওইফা বিরক্ত হয় তা দেখে।সে ইনহাজকে উদ্দেশ্য করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
-“আপনি আমায় এখানে কেনো তুলে নিয়ে এসেছেন মিস্টার খান”
-“কারণ আমি বিয়ে করবো”
-“তো করুন মানা কে করেছে কিন্তু আমায় কেনো তুলে এনেছেন”
ইনহাজ স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দেয়,
-“কারণ বিয়েটা আমি তোমাকেই করবো তাই”
ওইফা কথাটা শুনে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকায় ইনহাজের দিকে।সে চিল্লিয়ে বলে,
-“আপনার সাহস কি করে হলো ফালতু কথা বলার।আমি কখনোই আপনার মতো লোককে বিয়ে করবো না”
ইনহাজ রাফিনকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-“ওদের নিয়ে রুম থেকে যাও কিছুক্ষণ পর আমি বের হলে নিয়ে এসো”
রাফিন ওদের নিয়ে বের হয়ে যায়।রাফিন প্রচুর ভয় পায় ইনহাজকে কখন ধমক দিয়ে বসে।বেচারা সারাটা সময় ভয়ে ভয়ে থাকে।ওরা বেরিয়ে যেতেই ইনহাজ দরজা লক করে দিয়ে ওইফার দিকে এগোতে থাকে।ওইফা ভয় পেলেও মুখের ভাব স্বাভাবিক রাখে।ওইফা ঠাই দাঁড়িয়ে রয়।
ইনহাজ ওইফার কাছে এসে ওর মুখে ফু দিয়ে বলে,
-” বিয়েটা না করলে কি হতে পারো জানো!তোমার পরিবার আর তোমার বেস্টফ্রেন্ডদের কি অবস্থা হবে”
ওইফা রেগে যায়।সে আগুন চোখে ইনহাজের কলার চেপে ধরে বলে,
-“শত্রুতা আপনার আমার সাথে ওদের কেনো টানছেন আপনি”
ইনহাজের নিজের কলার ধরলে রাগ উঠে সে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ওইফার গাল চেপে ধরে বলে,
-“রেডি হয়ে নাও বিয়ের জন্য নাহলে, ইউ নো আমি কি করতে পারি”
ওইফার কিছুই করার থাকে না।সে চায় না তার জন্য তার পরিবার আর বেস্টফ্রেন্ডের ক্ষতি হোক।তাই তাকে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়েটা করতে হয়।
৩.
ফোনের নোটিফিকেশন আসার শব্দে ওইফা ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে আসে।কালকেই এখান থেকে পালাতে হবে ওর। এই অসভ্য লোকের সাথে থাকা সম্ভব না ওইফার পক্ষে।
ওইফা ঠিক করে আজকে রাত সে না ঘুমিয়েই কাটাবে। যদি এই লোকটা ঘুমের ভেতর তার সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করে।
ইনহাজ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করে বেড সাইডের ল্যাম্প জ্বালিয়ে শুয়ে পরে।ওইফা বসে থাকে আগের মতো।কি করবে ভেবে পায় না সে।জীবনেও সে এই লোকের সাথে এক বিছানায় ঘুমাবে না।সোফাতেই বসে থাকে।অন্ধকারে ভয় ও করছে ভীষণ।ওইফা ইনহাজের কাছে যায়।ইনহাজ শান্তিতে গভীর ঘুম দিচ্ছে।
ওইফা ইনাহজের মুখের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,,
-“আমার ঘুম কেড়ে নিয়ে নিজে শান্তিতে ঘুমাচ্ছে।অসভ্য লোক”
ওইফা ইনহাজের কাছ থেকে সরে এসে বেলকনিতে চলে যায়।বেলকনিতে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ভয়ে আবার রুমে ফিরে আসে।সে আবারও সোফায় বসে পরে।ঘুমে চোখ ভেঙে যাচ্ছে।তাও ঘুমাচ্ছে না ওইফা।ক্ষণে ক্ষণে চোখ লেগে আসছে।ওইফা আর না পেরে সোফায় শুয়ে পরে।
৪.
-“ইনহাজ তুমি এই ছোটলোক মেয়েটাকে কেনো বিয়ে করেছো”
ইনহাজের বাবা ইশতিয়াক খান কথাটা বললেন।ওইফা দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে আছে।নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে সে।ইনহাজ স্বাভাবিক ভাবেই বলল,,,
-“কেনো ওকে বিয়ে করা যাবে না।আমার ইচ্ছা হয়েছে তাই বিয়ে করেছি ওকে।আর আমি কাকে বিয়ে করেছি তা দেখার প্রয়োজন নেই আপনার মিস্টার ইশতিয়াক খান।”
-“কি বলতে চাচ্ছো তুমি?এখন কি আমি আমার ছেলের ব্যাপারেও কথা বলতে পারবো না নাকি!”
ইনহাজ ওনার কথায় পাত্তা না দিয়ে বলে,,
-“আপনি হঠাৎ এইবাড়িতে এসেছেন কেনো?”
-“আমি কি এখন আমার নিজের ছেলের বাড়িতেও আসতে পারবো না”
ইনহাজ তাচ্ছিল্য হেসে বলল,,,
-“আপনার ছেলে!হাউ ফানি।আগে কখনো আসেননি আজকে হঠাৎ করে আমি কাকে বিয়ে করেছি দেখতে এসেছেন।নাকি যাকে বিয়ে করেছি তাকে অপমান করতে”
-“ইনহাজজজ”
ইনহাজ উনার কোনো কথা কানে তুলল না।নিজের মতো কফি খেতে লাগলো।ইশতিয়াক খান রেগে হনহন করে চলে গেলো।ওইফা ইনহাজের সামনে গিয়ে ওর কলার চেপে ধরে বলে,,,
-“কি শুরু করেছেন আপনি নিজেকে কি ভাবেন”
ইনহাজের্র চোখ লাল হতে লাগলো।ভয় পেলে তা প্রকাশ করলো না ওইফা।ইনহাজ ওইফার থেকে নিজের কলার ছাড়িয়ে তার গাল চেপে ধরে বলল,,,,
-“এমনিতেও তুমি অনেক বেশি সাহস দেখিয়ে ফেলেছ তার উপর কলার ধরেছ আমার।এখন তোমায় কি করি বলো তো”
-“লা….গ..ছে আ..মা.র ছা.ড়ুন”
-“লাগার জন্যই ধরেছি।আর পালানোর চেষ্টা মোটেও করো না মিসেস ইনহাজ জুহাইন খান”
-“কেনো করছেন এমন!কি ক্ষতি করেছি আমি আপনার”
– “তোমার সব থেকে বড় অপরাধ তুমি আমার পাবলিসিটি নষ্ট করতে চেয়েছিলে”
-“আপনি যা আমি সবাইকে তাই জানাতে চেয়েছি।আর আমি জানিয়ে ও ছাড়বো মিস্টার খান”
ইনহাজ ওইফার হাত ধরে কফির মগে চুবিয়ে দিলো।ব্যাথা করছে তার হাতে!হাত সরিয়ে নিতে চাইলো ওইফা।ইনহাজ এতে চেপে ধরলেন আরো।চোখ থেকে পানি টপটপ করে পরতে লাগলো।ইনহাজ ওইফার দিকে তাকিয়ে হাত ছেড়ে দিলো।দৌড়ে বেসিনে গিয়ে ট্যাব ছেড়ে হাতে পানি দিতে থাকে ওইফা।ইনহাজ নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে।ওইফা দৌড়ে রুমে গিয়ে দরজা লক করে কাঁদতে থাকে।
ইনহাজ নিজের কাজে জন্য প্রচন্ড রাগ হয় নিজের উপর।একটু রাগ কন্ট্রোল করতে পারলে তো আর এমন হতো না।সে মলম নিয়ে রুমের লক খুলে ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে।ওইফা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরেছে।ইনহাজের অনেক গিল্টি ফিল হয় এতে।সে প্রথমে ওইফাকে ঠিকমতো শুইয়ে দিয়ে ওর হাতে মলম লাগিয়ে দেয়।তারপর কিছুক্ষণ ওইফার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বের হয়ে যায়।
চলবে~