#হৃদমাঝারে – [১০+১১]
#মাহফুজা_আফরিন_শিখা
০৮,
মেহরিমা এখন আর ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরে না। জিন্স কুর্তি চুড়িদার এগুলো পরেই কলেজে আসে। ফারহানের সাথে ওর বেশ ভাব হয়েছে। ফারহান তো মেহরিমার প্রেমে রিতিমত হাবুডুবু খাচ্ছে। তবে এখনো সে মেহরিমাকে নিজের মনের কথা বলতে পারে নি। বলতে চেয়েছে কয়েকবার কিন্তু পেরে উঠে নি। মেহরিমার সামনে গেলেই ওর সব কথা গুলিয়ে যায়।
ক্যাম্পাসে বাস্কেটবল বল খেলছে রনি ও তার দলবল। ক্যাম্পাসের পাশ দিয়েই যাচ্ছিলো মেহরিমা ও সুবর্ণা। খেলার মাঝে হঠাৎ রনির চোখ যায় মেহরিমার দিকে। রনি খেলা থামিয়ে চলে আসে মেহরিমার কাছে।
– হেই মুন। ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলল রনি।
মেহরিমা দাঁড়িয়ে পরে। কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,
– তোমাকে কতবার বলেছি কলেজে আমাকে মুন বলে ডাকবে না। কলেজে আমি মেহরিমা। এই নামেই ডাকো আমায়।
– ঠিক আছে। তারপর মেহরিমার হাত ধরে বলল, চল। সামনের দিলে পা বাড়াতেই মেহরিমা ওর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
– কোথায়?
– বাস্কেটবল খেলবো।
বাস্কেটবলের নাম শুনেই মেহরিমার চোখ গোল হয়ে যায়। আর উত্তেজিত হয়ে বলে,বাস্কেটবল, আর আমি? না!! সামনের দিকে পা বাড়ায় মেহরিমা। তখন সুবর্ণা ওর হাত ধরে বলল,
– তুই এখনো বাস্কেটবল খেলতে ভয় পাস মেহু। আমিও খেলবো বাস্কেটবল চল।
– বর্ণা। আমার কথা শোন। তুই খেল আমি খেলবো না। প্লিজ বোন আমার আমাকে জোড় করিস না। মেহরিমার করুন চোখ।
মেহরিমার কথা শুনে সুবর্ণা আর রনি দুইজনেই অট্টহাসিতে ভেঙে পরে। আর মেহরিমা সেদিকে তাকিয়ে করুন সূরে বলে,
– তোরা হাসছিস!
– বাহ্ মুন। তোর এখনো সেই ভয়টা আছে। ইশ কি অবস্থা হয়েছে রে তোর। আমার তো হেড স্যারের কথা মনে পড়লেই হাসি পায়। বেচারার কি অবস্থা না হয়েছিলো।
– তুমি একদম ঠিক বলেছো রনি। হেড স্যার একটু বেশীই রুড ব্যাবহার করেছিলো।
মেহরিমা ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বড় করে শ্বাস নেয়। ওর এখনো মনে আছে সেদিনের কথা। স্কুলে বাস্কেটবল কম্পিটিশনের ফাইনালের দিনের কথা। ওদের টিমের ক্যাপ্টেন ছিলো মেহরিমা। মেহরিমা ছিলো বাস্কেটবলের চ্যাম্পিয়ন। সেদিন ছিলো ওদের ফাইনাল খেলা। যেহেতু রনির বাবা স্কুলের ট্রাস্টিজ তাই রনি ও রনির বাবা সেদিন উপস্থিত ছিলেন অতিথি হিসাবে। খেলা চলছে তার নিয়মে। বিপক্ষ দলের চেয়ে চার পয়েন্ট এগিয়ে ছিলো মেহরিমার টিম। মেহরিমা লোনাকে বল পাছ করছে তখন কেউ ওর চোখে ঝাল জাতীয় কিছু ছুড়ে মারে। মুহূর্তের মধ্যে চোখের সামনে সব কিছু অস্পষ্ট হয়ে আসে। দু-হাতে চোখ চেপে ধরে বসে পরে মেহরিমা আর বল গিয়ে লাগে হেড স্যারের মাথায়। এমনিতেই স্যারের ছিলো টাক মাথা তার উপর বলটা স্পিডে গিয়ে লাগছিলো। স্যার সাথে সাথে মাটিতে লুটে পরে।
সেই ঘটনার পর স্যার ওকে দলের ক্যাপ্টেন পদ থেকে বহিষ্কার করে। মেহরিমা স্যারকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছে কোন লাভ হয়নি তাতে। স্যারের একটাই কথা, ভরা মাঠে সেদিন স্যারের মাথায় বলটা লেগেছিলো। স্যারের ইগোতে লেগেছিলো ওটা। সেই ঘটনার পর মেহরিমা বাস্কেটবল খেলাই ছেড়ে দেয়। যদিও রনির কথা শুনে স্যার ওকে ওর পদ দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু মেহরিমা আর ফিরে যায়নি। আসলে ছোট থেকে মেহরিমা ওভর স্মার্ট কিনা।
সূবর্না ও রনি দুজনেই জোড় করে মেহরিমাকে ক্যাম্পাসে নিয়ে যায়। তারপর মেহরিমা আবার খেলতে শুরু করে। দুই বছর পর খেললেও মেহরিমা আগের মতোই খেলেছে। উপর থেকে এই দৃশ্য দেখছে আর রাগে ফুঁসছে ফারহান। মেহেরিমাকে রনির সাথে ও একেবারে সহ্য করতে পারে না। খেলা শেষে মেহরিমা পা বাড়ায় ক্লাসের দিকে।
ক্লাসের সামনে আসতেই কেউ ওকে টেনে একটা ফাকা রুমের ভিতরে নিয়ে যায়। ঘটনার আকস্মিক ফ্যালফ্যাল নয়য়ে সে তাকিয়ে থাকে সামনের মানুষটার দিকে।
– আপনি, আমাকে এখানে নিয়ে আসলেন কেন? মেহরিমার কন্ঠ বেশ কঠিন।
– রনিকে কি করে চিনো তুমি? কি সম্পর্ক তোমার ওর সাথে? পাল্টা প্রশ্ন করলো ফারহান।
– এখন আমি কার সাথে মিশবো না মিশবো সেটাই কি আপনি ঠিক করে দিবেন নাকি?
– হ্যাঁ দিবো। রনির থেকে দূরে থাকবে। ও কিন্তু ভালো ছেলে নয়। আর যেন ওর সাথে তোমাকে মিশতে না দেখি। মাইন্ড ইট। রাগে গটগট করতে করতে চলে যায় ফারহান।
– রনির থেকে দূরে তাকবে? আমি কেন তোমার কথা শুনবো। এখন তো আরো বেশী করে মিশবো। স্মিত হাসে মেহরিমা।
সেদিন রাতে মেহেরিমা রনিকে কল করে, তারপর ওকে সাথে করে নিয়ে নাইট ক্লাবে যায়। আর সেদিন মেহরিমার পরনে ছিল ওয়েস্টার্ন ড্রেস। ক্লাবের একপাশে দাঁড়িয়ে আছে মেহেরিমা। আর রনি সেই ড্রিঙ্কস করে হেলেদুলে নাচে। মেহেরিমা আজকে ভালো লাগছে না বেশ বিরক্ত লাগছে নিজের মনে মনে বলে উঠলো,
-কেন যে রাক্ষসটার উপরে রাগ করে ক্লাবে চলে আসলাম। এখন কিছু ভালো লাগছেনা। রেড ওয়াইনের গ্লাস হাতে নিয়ে সেটাতো চুমুক দিবে মাত্র আর অমনি কেউ এসে মেহরিমার হাত ধরে ফেলে। সামনে তাকাতেই ভ্রু কুঁচকে ফেলে মেহেরিমা। অস্ফুটভাবে বলে,
– ফারহান, আপনি এখানে ?
স্মিথ হেসে মাথা নাড়ায় ফারহান। তারপর মেহরিমার হাত থেকে ওয়াইনের গ্লাস নিয়ে সেটা পাশে রেখে দেয়। আর ওর হাতটা শক্ত করে ধরে বলে’ চলো’ আমার সাথে। মেহেরিমা কিছু বলে না শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ফারহানের দিকে। ফারহান মেহেরিমা হাতটা ধরে ওকে নিয়ে বেরিয়ে যায়। বেশ কিছুক্ষণ পর ফারহানের গাড়ি এসে থামে একটা বাংলোর সামনে। ফারহান আগের মতোই মেহরিমার হাত ধরে ওকে বাংলোর ভিতরে নিয়ে যায়। এই বাংলোতে আছে দুটো বেড রুম একটা গেস্ট রুম। আর একটা কিচেন। ফারহান মেহরিমাকে নিজের রুমে নিয়ে আসে। তারপর বলে,
– এটা আমার বাংলো। বার্থডে তে বাবা আমাকে এটা গিফ্ট করেছে।
মেহরিমা কিছু বলে না। সৈজন্যসূচক মাথা নাড়িয়ে স্মিত হাসে। তারপর ফারহান ওকে নিয়ে বারান্দায় চলে যায়। বারান্দায় বেশ অন্ধকার, তাই ও একটা মোম জ্বালিয়ে দিলো। মোমের নিভু নিভু আলোতে মেহরিমার মুখটা বেশ মায়াবী লাগছে। ফারহান সেদিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর নিজেকে যতটা সম্ভব সংযোত করে বলে,
– কোন আলোটা ভালো লাগছে তোমার কাছে। অন্ধকারের বুকে এক পালি নিভু নিভু আলো নাকি ক্লাবের ওই লাল নীল আলো টা।
– এটা ভিষন ভালো লাগছে।মৃদু হাসলো মেহরিমা। তারপর সেও তাকালো ফারহানের মুখ পানে। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। দুজনেরই হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে। ওরা যেন একে অপরের চোখে হারিয়ে যাচ্ছে। দুইজনের অনুভূতিগুলো কি এক। দুজনের মধ্যেই নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। এভাবে কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ফারহান তার চোখ নামিয়ে নিল। একটু এদিক ওদিক তাকিয়ে ইতঃস্তত বোধ করলো। তারপর বললো,
– কিছু খাবে তো তাইনা। অনেক খিদে পেয়েছে। রাতে কিছু খাওয়া হয়নি। তারপর সে নিজেই চলে গেলো কিচেনে। ফারহানের পিছন পিছন মেহরিমাও গেলো। ফারহান এখানে মাঝে মাঝেই আসে। তাই প্রয়োজনীয় সকল দ্রব্যাদি এখানে থাকে। তাছাড়া কেয়ার টেকার সব দেখেশুনে রাখে। একমাত্র নুডলুস ছাড়া আর কিছু রাধতে জানে না ফারহান। তাই সে নুডলুস রান্না করার কাজে লেগে পড়লো। সমস্য হলো পেয়াজ কাটতে গিয়ে। পেয়াজটা টেবিলের উপর রেখে ওটার উপর ছুড়ি চালাতে গেলে মেহরিমা চিৎকার বলে,
– এই আপনি পেয়াজটা কাটছেন নাকি খুন করছেন?
ফারহান করুন চোখে ওর দিকে তাকায়। মেহরিমা স্মিত হেসে বলে,
– সরুন আমি দেখছি।
নুডুলস রান্না শেষ হলে একটা প্লেটে নুডলুস নিয়ে আবার বারান্দায় চলে যায় ফারহান আর মেহরিমা।বারান্দায় বসে দুজনে কথা বলছে আর কথা বলার ফাকে ফারহান মেহরিমাকে খাইয়ে দিচ্ছে। মেহরিমা একমনে খেয়ে যাচ্ছে। ক্ষিদে পেয়েছে খুব সেই কোন দুপুরে খেয়েছিলো তারপর আর কিছু খাওয়া হয়নি। মেহরিমা আর ফারহান কথা বলায় এতটাই ব্যাস্ত যে ফারহান খাচ্ছে কি না সেটা খেয়ালই করে নি। খাওয়া শেষ হলে ফারহান মেহরিমার দিকে তাকিয়ে হাসলো। মেহরিমা সেটা খেয়াল করতেই স্তব্ধ হয়ে যায়। কিছু না বলে শুধু তাকিয়ে থাকে ফারহানের দিকে। ফারহানের বুঝতে বাকি থাকে না মেহরিমা ইতস্তত বোধ করছে। তাই প্রসঙ্গ বদলাতে ফারহান বলে উঠলো,
– কোন জায়গাটা বেশী ভালো লাগছে, নাইট ক্লাব নাকি এই নিরিবিলি বাংলোটা।
মেহরিমা কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো ফারহানের দিকে। কিছুক্ষণ আগের ঘটনা মনে হতেই লজ্জামখা হাসি হাসলো। তবে এটা মেহরিমার ঠোঁটে ফুটে উঠলো না। মৃদু হেসে জবাব দিলো,
– এই মুহূর্তটা আমার কাছে সত্যিই স্পেশাল। উঠে দাঁড়ালো মেহরিমা। আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। ওর চোখের কোন জ্বলজ্বল করে অশ্রু। ফারহান মেহরিমার পাশে এসে দাঁড়ায়। তারপর বলে,
– আমি ঠিক এমন রুপেই দেখতে চাই তোমাকে। ওয়েস্টার্ন ড্রেস, নাইট ক্লাব, ড্রিংক এসব তোমাকে মানায় না মেহরিমা। মেয়েদের ঘরেই মানায়। তোমরা এই লাইফটা ছেড়ে দাও মেহরিমা। তুমি তো এমন স্ট্রোং নও।
– আমি এমনি। আর আপনি আমায় নিয়ে কেন এত ভাবছেন বলুন তো। রাগী কন্ঠ মেহরিমার।
– কারন আমি তোমাকে,,
– আমাকে কি?
– ভা-ভালোবাসি। কারন আমি তোমাকে ভালোবাসি।
ফারহানের কথা শুনে চুপ হয়ে যায় মেহরিমা। কিছুক্ষণ পর বলে,
– আমি আপনাকে ভালোবাসি না।
– আমার কোন প্রবলেম নেই। এখন ভালোবাসো না তবে খুব শীঘ্রই তুমিও আমাকে ভালবাসবে।
– আমি বাড়ি যাবো। মেহরিমা বারান্দা থেকে চলে আসে।
#হৃদমাঝারে – [১১]
৯,
এনআর নার্সিংহোমের একটা কেবিনে বসে আছে মেহরিমা। ওর সামনেই বেডে শুয়ে আছে ওর নানুভাই। তার অপর পাশে বসে আছে অর্ণা। সকালে কলেজে যাওয়ার সময় অর্ণার কল আসে। ওর নানুভাই আবার অসুস্থ হয়ে পরেছে, কথাটা শুনার সাথে সাথে মেহরিমা সোজা চলে আসে ওর মামার বাসায়। তারপর ওর নানুভাইকে নিয়ে এনআর নার্সিংহোমে চলে আসে। ডক্টর ওনাকে দেখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। হাতে থাকা প্রেশকিপশন আর ঔষুদের দিকে চুপ করে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। মেহরিমা লক্ষ করতেই বলে উঠে,
– আংকেল, কি হয়েছে? কোন গুরুতর সমস্যা।
ডক্টর মেহরিমার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর প্রেশকিপশন আর ঔষুদগুলো বেডের উপর রেখে দেয়। মেহরিমার প্রশ্ন সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে বলে উঠে,
– কবে ফিরলে?
– এইতো আজ সকালে।
ডক্টর আর কিছু বলে না।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তাড়াতাড়ি করে সেখান থেকে চলে আসে। ডক্টরের মতিগতি মেহরিমার সন্ধেহ হলো। ইনি তো কখনো এমন করেন না। তাহলে আজ কি হলো? কেন সে মেহরিমার প্রশ্ন উপেক্ষা করলো। নাকি ওর নানুভাইয়ের বড় কোন প্রবলেম হলো। মেহরিমা অর্ণার দিকে একপলক তাকিয়ে দেখলে মেয়েটা কেঁদেকেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলছে। অর্ণাকে চোখের ইশারায় শান্ত হতে বলে।মেহরিমা সেখান থেকে বেড়িয়ে যায়। ডক্টরের পিছু যায় সে। কিছুপথ যাওয়ার পর মেহরিমার পা থেমে যায়। ডক্টর তার নিজের কেবিনে না গিয়ে সে যাচ্ছে ডক্টর ইমরান খানের কেবিনে। ব্যাপারটা ভালো লাগে না মেহরিমার। ডক্টর চলে যায়। মেহরিমা সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। ইমরান খানের কেবিনে তার যাওয়াটা কি ঠিক হবে। মেহরিমাকে দেখতে পেয়ে ডক্টর ইমরান খান যদি আবার রেগে যায়। তিনি তো মেহরিমাকে একদম সহ্য করতে পারে না। মনের মাঝে হাজারো দ্বিধা ধন্ধ কাটিয়ে সে পা বাড়ায় ডক্টর ইমরান খানের কেবিনের উদ্দেশ্যে। দরজার নক করবে এমন সময় ডক্টর ইমরান খানের কথায় থমকে যায় মেহরিমা।
– আপনি কি বলতে চাইছেন ডক্টর বিশ্বাস। উনি আমার শ্বাশুড়ি বলেই কি আমার হসপিটালের নিয়ম ভেঙে দিবো নাকি। এটা আমার হসপিটাল, এবং আমার নিয়মেই চলবে। বাহির থেকে কোন ঔষুদ ভিতরে আনা হবে না।
– আপনি কেন বুঝতে পারছেন না ডক্টর খান। আপনার শ্বাশুড়ির অবস্থা দিন দিন ক্রিটিক্যাল হয়ে পরছে। এখন যদি ওনাকে সঠিক ঔষুদ না দেওয়া হয় তাহলে কিছু দিনের মধ্যে ওনিও পরলোকগমন করবেন।
– ওসব নিয়ে আমি ভাবি না। আমার কোম্পানির ঔষুদ-ই চলবে এখানে। কে বাচলো আর কে মরলো তাতে আমার কিছু যা আসে না।
– কিন্তু আমার যায় আসে ডক্টর খান। আমি একজন ডক্টর কসাই নই যে মানুষের প্রান নিবো।
– সেটা এনআর জয়েন করার আগে ভাবা উচিৎ ছিলো আপনার ডক্টর বিশ্বাস। এখন আমি যা বলবো আপনাকে সেটাই করতে হবে। শয়তানি হাসি হাসে ডক্টর ইমরান খান। তারপর আবার বলে, আরে ওনি তো আমার শ্বাশুড়ি! আমি আমার নিজের মা-কে পর্যন্ত ছাড়িনি। নিজের হাতে খুন করেছি ওনাকে। আমার কথা যে অমান্য করবে তাদের সকলের একটাই শাস্তুি, মৃত্যু।
ডক্টর বিশ্বাস ইমরান খানের কথা শুনে চমকে উঠে। একটা মানুষ কতটা খারাপ হয়ে সে নিজের মা-কে মারতে পারে। বাহিরে দাঁড়িয়ে সব কথাই শুনছিলো মেহরিমা। তার চোখ দিয়ে জল পরছে। এতদিন ভাবতো তার বাবা একজন রাগী মানুষ তবে একটা ভালো ডক্টর। ছোট থেকেই সে তার বাবার মতো একজন ডক্টর হতে চেয়েছে। মেহরিমার চোখের জল যেন আজ ভাধ মানছে না। অঝড় ধারায় বয়ে চলেছে। আবার ওর নানুভাইয়ের কেবিনের দিকে পা বাড়ায় মেহরিমা।
মেহরিমার নানুভাই অচেতন অবস্থায় বিছানায় শুয়ে আছে। তার একটা হাত ধরে অর্ণা পাশে বসেই ঘুমিয়ে পরেছে। মেহরিমা এখান থেকে এক ঔষুদের প্যাকেট নিয়ে চলে গেলো বাহিরে। বাহিরে ফার্মেসী থেকে একই ঔষুদ কিনে নিলো। তারপর দুটো ঔষুদ খুলে সেগুলো মিলাতে লাগলো। কিন্তু কোন পার্থক্য পেলো না। দুটো ঔষুদ-ই আলাদা আলাদা করে নাকের কাছে ধরে গন্ধটা শুকে নিলো। এবার বেশ অবাক হয় মেহরিমা। দুটো ঔষুদের আলাদা আলাদা স্মেল। মেহরিমা ঔষুদগুলো নিয়ে একটা দোকানে যায়। তারপর দুটো পাত্র কিনে নেয়। পাত্র দুটিতে পানি দিয়ে সেখানে দুটো ওষুদ ছেড়ে দেয়। একটা ঔষুদ পানিতে দেওয়ার সাথে সাথে পানির রং বদলে যায় আর ঔষদটা গলে যায়। অপরটা পানিতে মিশতে বেশ কিছুক্ষণ সময় নেয় তবে দুগন্ধটা আর নেই। মাথায় হাত রেখে চিন্তা করতে থাকে মেহরিমা। তার বাবা ডক্টরের মুখোশের আড়ালে একজন ক্রিমিনাল। যে সবাই জাল ঔষুদ
দেয়। কিছুই ভাবতে পারছে না সে। মানুষকে সেবা করার নামে যে তার বাবা সবাইকে আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মাথায় হাত রেখে ভাবছে এখন কি করা যায়। তার দৃষ্টি স্থির সামনের দুটো পাত্রের দিকে। তখনি কেউ এসে মেহরিমার কাধে হাত রাখে। নিজের কাধে কারো উষ্ণ হাতের স্পর্শ পেতেই কেপে উঠে মেহরিমা। তাড়াতাড়ি পিছন দিকে তাকায়। পিছনে তাকাতেই ওর চোখমুখ খুশিতে ভরে উঠে। আকাশ, কথাটা বলেই উঠে দাঁড়ায় মেহরিমা আর সামনে থাকা ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে।
আকাশ আর মেহরিমা দুজনেই পাশাপাশি বসে আছে। দুজনের মুখে হাসি লেগে আছে। আকাশের চোখ পরে সামনে তাকা পাত্র দুটির উপর। তারপর পাত্র দুটোকে ভালো করে দেখে বলে,
– এগুলো কি মুন। ডাক্তারি পড়ার চিন্তা বাদ দিয়ে এখন কি গবেষক হতে মন চাইছে নাকি?
– না রে। আসলে আমি ঔষুদ দুটো দেখছিলাম।
– মানে!
– তোকে পরে সবটা বলবো। এখন বল আংকেল আন্টি কেমন আছে? আর তোরা দেশে ফিরলি কবে?
-সবাই খুব খুব ভালো আছে। বেশ কিছুূদিন আগেই দেশে ফেরা হয়েছে।
– ওহ। মেহরিমা আরো কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলো না। ওকে যে এখন যেতে হবে। আকাশকে শুধু বলল, সরি আকাশ। আমাকে এখন যেতে হবে। আসলে আমার একটু তাড়া আছে। তুই বাসায় আসিস তারপর আমরা সারাদিন গল্প করবো কেমন? ইনোসেন্ট মুখ মেহরিমার। আকাশ মৃদু হেসে জবাব দেয়, ঠিক আছে। আর শোন সাবধানে যাবি কেমন। মাথা নাড়ি হ্যাঁ সুচক জবাব দেয় মেহরিমা। তারপর আকাশকে বিদায় জানিয়ে সেখান থেকে চলে আসে সোজা নার্সিংহোমে। নার্সিংহোমে ডুকতেই ডক্টর ইমরান খানের সামনে পরে মেহরিমা। ডক্টর ইমরান খান একটা স্টাফের সাথে কিছু কথা বলছিলো। মেহরিমা সেদিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে সেখান থেকে প্রস্থান করে। কিছুটা দূরে আসার পর মেহরিমা ভাবতে থাকে, সাধারণ একটা স্টাফের সাথে বাবার এত কিসের কথা থাকতে পারে। এই লোকটা কে? মেহরিমা আবার পিছনের দিকে ঘুরে ওদের কাছে আসে। ডক্টর ইমরান খান লোকটাকে কিছু বলে চলে গেলেন। আর লোকটা এদিক ওদিক তাকিয়ে চলে গেলে নার্সিংহোমের পশ্চিম প্রান্তে। মেহরিমা বেশ অবাক হলো। কারন এদিকে সচরাচর কেউ আসে না। এখানে সাধারণ এমআরআই করানো হয়। তবে সেটাও একটা কেবিনে। বাকি রুম গুলাতো বন্ধ,তাহলে কোথায় যায় লোকটা? মেহরিমা লোকটার পিছু করতে থাকে।
নার্সিংহোমের একদম পশ্চিম প্রান্তে একটা দেয়ালের কাছে এসে লোকটা এদিক ওদিক তাকায়। মেহরিমা তখন পর্দার আড়ালে লুকিয়ে পরে। দেয়ালের সামনে ঝুলে থাকা পর্দাটা সড়িয়ে ভিতরে ডুকে লোকটা। লোকটা ভিতরে যেতেই মেহরিমা পর্দার আড়ালে থেকে বেড়িয়ে আসে। তারপর সেও চলে যায় ভিতরে। ভিতরে ডুকতেই সামনে আরো একটা দরজা পরে। ভাগ্যিস এখন দরজার কাছে কেউ নেই তাই অনায়াসে ভিতরে যেতে পারে মেহরিমা। ভিতরে ডুকতেই অবাক হয় সে। বড় বড় পার্সেল সাজানো এখানে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে এগুলোর ভিতরে ঔষুদ। মেহরিমা কিছু বুঝতে পারছে না। ঔষুদের পার্সেল এখানে কেন? এগুলো রাখার জন্যে ফার্মেসী আছে। সামনের দিকে এগিয়ে সবটা দেখতে থাকে সে। হঠাৎ সে এমন কিছু দেখতে পায় যেটা থেকে মেহরিমা বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর পকেট থেকে মোবাইল বের করে সবটা ভিডিও করতে থাকে।
চলবে,,,,,,