হিজিবিজি (৩য় পর্ব)

0
1021

গল্পঃ #হিজিবিজি (৩য় পর্ব)
লেখায়ঃ #তাজরীন_খন্দকার

জাবেরের প্রেমিকার সাথে আহানের বিয়েটা সম্ভব না,কারণ আহান এই মেয়েকে ভালো করে চিনেনা।
তবে আমার বিয়ে…মাথা ঘুরছে,বেহুশ হয়ে যাবো এবার!

ঠিক সেসময় বউ সাজে জাবেরের ২য় প্রেমিকা এসে আমাকে জড়িয়ে বলে উঠলো..
__ অওও কি সুন্দর লাগছে তোমায়!

মেয়েটা এভাবে ধরাতে আমি হচকচিয়ে গেলাম। আশ্চর্য তাকে আমি জাস্ট জাবেরের সাথে ছবিতে দেখেছি। বাস্তবে চিনিও না৷ সে আমাকে এভাবে বলছে কেন! আমি মাথা তুলে কিছু বলতে যাবো তখনই মেয়েটা বলে উঠলো..
___ আমার দেরি হয়ে গেলো! আসলে পার্লারে সাজতে গিয়ে লেইট হয়ে গেছে। এখন তো বিয়ে হবে নাকি!

ভাবছিলাম এই মেয়েকে কিছু জিজ্ঞাসা করবো,কিন্তু ওর পাগলাটে কথাবার্তা মেজাজ আরো খারাপ করে দিলো। তখন বাবা আমাদের এখানে এসে জিজ্ঞাসা করলো সব ঠিকঠাক আছে কিনা। কবুল পড়ানোর জন্য হুজুর আসছে এখানে। তখন আমি সাহস করে বাবাকে ডাকলাম।
বাবা এগিয়ে এসে বললো..
___কোনো সমস্যা? কিছু বলবি!

আমি বাবার হাতে হাত রেখে কেঁদে ওঠলাম। কাঁদতে কাঁদতে বললাম..
___তুমি আমাকে একটা রিকশাওয়ালা ডেকে বিয়ে দিয়ে দাও। তাও এই দুইজনের কারো কাছে দিও না। প্লিজ বাবা। আমার মাথা এলোমেলো হয়ে গেছে। আমি বুঝতে পারছি না এই বাড়িতে আসলে কি হচ্ছে! প্লিজ বাবা! এসব বন্ধ করো।

আমার এমন কথায় বাবা হেসে উঠলো। আমি কান্না করছি আর উনি আমার বাবা হয়ে হাসছে। প্রথমত ভেবেছি বাবা রেগে যাবে আমার কথা শুনে। কিন্তু রাগলেন না,আবার কিছু বললেনও না। আমার হাত ছাড়িয়ে বাবা চলে গেলেন।
সত্যি আমার ইচ্ছে করছে নিজের সব চুল টেনে ছিড়ে ফেলি। মাথা ধরে গেছে আমার! পেছনে তাকিয়ে দেখি সবাই হাসছে আমার দিকে তাকিয়ে।
এতটা অসহায় জীবনেও হতে হয়নি।
ধপাস করে নিচে বসে পড়লাম!

কিছুক্ষণের মধ্যে সামনে পর্দা ফেলে দেওয়া হলো কাজী সাহেব এসে গলা ঝাড়লেন। তারপর শুরু হলো বিয়ের কার্যক্রম। বিয়েটা যেহেতু ফেরানো সম্ভব না,তাই দু’আ করছিলাম অন্তত জাবেরের সাথে যেন আমার বিয়ে না হয়৷ কারণ আহানের সাথে আমার তেমন ঝামেলা নেই, যেটুকু হয়েছে বিয়ের পরে ম্যনেজ করতে পারবো। কিন্তু জাবেরের সাথে আমি সারাজীবনেও কোনোকিছুর সমাধান করতে পারবোনা। আমার মন বলছিল আহানের সাথে আমার বিয়ে হবে। কারণ জাবের কখনোই আমাকে বিয়ে করবেনা। তার উপর তার গার্ল ফ্রেন্ড
চলে আসছে।

এসব ভাবার মাঝেই হুট করে আমাকে কেউ ঝাকালো, তাকিয়ে দেখলাম আমাকে কবুল বলতে ইশারা করছে। আমি বাস্তবে ফিরে এলাম। কাজী সাহেব আবারো সকল পরিচয় দিয়ে দ্বিতীয়বার বলতে যাবেন তখনই আমার সারা শরীর শিউরে ওঠলো। জালাল উদ্দীনের পুত্র জাহিদুল জাবেরের সাথে আমার বিয়ে!
স্তব্ধ-নিস্তব্ধ আর স্টিল হয়ে রোবটের মতো বসে রইলাম। চোখের পলক পড়ছেনা,শুধু অনবরত পানি পড়ছে! এটা কি হলো?
মা এসে ফিসফিস করে আমাকে ধমকাচ্ছে। আমাকে ঠেলছে কবুল বলতে! অস্পষ্ট সুরে বলেছি কিনা মনে নেই, তবে সেখানেই পড়ে গেছি।

যখন জ্ঞান ফিরে আসলো তখন নিজেকে আবিষ্কার করলাম পুষ্প সজ্জিত কোনো একটা আলোকিত বিছানায়! লাফিয়ে উঠে বসলাম। এটা তো আমারই রুম। কিন্তু রুমের ভেতর কেউ নাই। সামনের দরজাটা বন্ধ কিন্তু আমার এদিকের বারান্দার দরজাটা খোলা। খুব ভয় করছে আমার!

বাইরে বৃষ্টি পড়ছে। বারান্দায় হয়তো জাবের আছে। ভাবছি দৌড়ে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিবো। তাকে রুমে আসতেই দিবোনা। কিন্তু হাত পা কাঁপছে। উঠে দাঁড়ানোর সাহস পাচ্ছিনা। আমাদের মধ্যে হাজার হাজার অভিযোগ আছে হাজারো প্রতিশোধের পর্ব বাকি আছে।
মোটকথা তার উপরে কোনো ভালোলাগার অনূভুতি অবশিষ্ট নেই। যা আছে সবটুকুই ঘৃণা!
তাকে দেখলেই মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।
একসময়ের প্রিয় মানুষটা এতো অপ্রিয় হবে সেটার অংক এখনো মিলাতে পারিনা।

আমাদের সম্পর্ক যখন গভীর ছিল তাকে নিয়ে আমার কতোই না পরিকল্পনা ছিল। সে সবসময় বলতো আমাকে বিয়ে করার সময় দামী গাড়িতে করে আনবেনা, একটা রিকশা ভাড়া করবে। যেটার পুরোটাই থাকবে ফুলে মুড়ানো! বলতো আমরা আষাঢ় মাসে বিয়ে করবো। বিয়ের রাতে বৃষ্টি থাকবে! আর আমরা দুজন বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখবো। সেদিন জীবনের সবরকম পরিপূর্ণতার সূচনা হবে, আর সকল গ্লানি বৃষ্টিতে ধুয়েমুছে একটা সুখী জীবন হবে আমাদের!

কিন্তু এসব যে অতীত। তবে এমন নয় আমরা সেই স্বপ্নগুলো ভুলে গেছি। সবকিছুই মনে আছে তবে আমরা মনে করতে চাইনা৷ কারণ আমাদের বর্তমান যে বদলে গেছে।
আচ্ছা সবকিছু আবার নতুন করে শুরু হওয়া সম্ভব?
আমরা কি সেটা পারবো?
জাবের আমাকে আর মন থেকে মানতে পারবে?

হঠাৎ আমার মাথায় আসলো আহানের কি হল, সে কাকে বিয়ে করেছে। তার সাথে জাবেরের কি সম্পর্ক? এখন কোথায় আছে ওরা?
বাইরে এখন গিয়ে দেখবো?
কিন্তু রাত ১ টা বেজে চলেছে। দরজা খোলা যাবেনা।
খেয়াল করলাম বারান্দায় জাবেরের কণ্ঠস্বর শুনা যাচ্ছে। আমি আস্তে আস্তে একটু এগিয়ে শোনার চেষ্টা করলাম। কারো সাথে ফোনে কথা বলছে।
স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিলো না বলে আমি আরেকটু দরজার কাছে গিয়ে কান পাতলাম।
তখনই শুনলাম জাবের বলতেছে..
___ বাবু তুমি কান্না করো না৷ আমি বললাম তো সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি ইচ্ছে করে এমন একটা পেইনকে বিয়ে করতে চাইনি৷ আমাকে বাধ্য করেছে।
খুব শীগ্রই সবকিছুর সমাধান হবে, আর আমি তোমাকে আমার ঘরের বউ করে আনবো!

এএ আল্লাহ জাবের এসব কি বলছে! সে আমাকে নিয়ে সংসার না করলে বিয়ে করলো কেন! এটা কেমন চক্রান্ত? আমার উপর কিসের এতো জগণ্য প্রতিশোধ! একটা মেয়ের একবার বিয়ে হয়ে যাওয়া মানে তার গায়ে একটা দাগ লেগে যাওয়া, যাকে বলে ডিভোর্সী নারী !
বাবা-মা আমার সাথে এমনটা কিভাবে করলো!
দোষ আমি যেমন করেছি জাবেরও তো করেছে।
কলিজা ফেটে কান্না আসছে আমার। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে এসব বন্ধ করো তোমরা। আমার আর সহ্য হচ্ছেনা! তারপর নিজেকে কন্ট্রোল করলাম,নাহ আমাকে শক্ত হতে হবে। জাবের একা আমার সাথে প্রতিশোধের খেলা খেলবে সেটা তো হতে পারেনা! তাকে এর ফল পেতে হবে। সকাল হোক আগে।

তারপর সেখান থেকে আসার জন্য পা বাড়াতেই কেউ আমার হাত চেপে ধরলো। একজোড়া ভয়ানক চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কাঁপা গলায় মিনমিন করে উচ্চারণ করলাম..
___ আআপনি

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে