স্বপ্নীল ৪৯,৫০

0
1334

স্বপ্নীল
৪৯,৫০
-” অনেকদিন তো হয়েছে এবাড়িতে এসেছিস।তোর প্রান প্রিয় বর যে একবার আসেনি তোকে দেখতে।”
রোদ মোবাইল স্ক্রল করছিল।রেহানের কথা শুনে চোখ তুলে তাকায়।বিরক্তি নিয়ে বলল,
-” তোকে কী কৈফিয়ত দিতে হবে।”
-” আমার মনে হচ্ছে সমুদ্র মধু পেয়ে গেছে।নতুন করে মধু সংগ্রহ করতে ব্যস্ত! তাই বোধ হয় তোর কথা ভুলে গেছে।”
-” অসহ্য!”
এটা বলে সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।সিঁড়িতে পা রাখবে তখনই ডোরবেল বেজে উঠে।এত রাতে কে আসবে? বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলে রোদ।সমুদ্রকে দেখে দরজা আটকে নিতে গেলেই সমুদ্র হাত দিয়ে বাধা দেয়।তাতে রোদ দরজা আটকাতে পারে না।
-” সরুন দরজা আটকাবো।”
-” শ্বশুর বাড়িতে পা না দিতে না দিতে বের করে দিচ্ছিস।”
-” কার শ্বশুড় বাড়ি? ”
-” আমার! ”
এটা বলে রোদের পাশ কেটে রুমে ঢুকে যায়।সোফা থেকে রেহান মাথা উঁচু করে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।তা দেখে রোদকে পাঁজাকোলা করে তুলে নেয় সমুদ্র।রোদ হতভম্ব! চুড়ান্ত অবাক!সমুদ্র গলা ঝাপটে ধরে বলতে থাকে তাকে নামানো জন্য।কিন্তু সমুদ্র কানে সেই কথা কর্ণপাত হয়নি।সোজা গিয়ে রোদকে বিছানায় নামিয়ে দেয়।দরজা আটকিয়ে রোদের কাছে আসে।রোদ চিল্লিয়ে বলল,
-” আপনার বাড়িতে আমাকে ঢুকতে দেন নি।এখন কোন সাহসে আমার বাড়িতে এসেছেন?”
-” যে সাহসে তুমি আমার নামে মিথ্যে বদনাম দিয়েছো সেই সাহসে।”
রোদ বলল,
-” ওয়েট! ওয়েট!কি বললেন আপনি?”
হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে সমুদ্র বলল,
-” কি বললাম?”
-” তুই থেকে তুমিতে!ব্যাপার কি? ”
রোদের কথা শুনে সমুদ্র শুধু একটু হাসে!

সেদিন স্বপ্ন নীলকে নিয়ে শপিং যায়।অনেক গুলো শাড়ি কিনে দেয়।স্বপ্ন’র দেওয়া শাড়ি থেকে সোনালী পাড়ের লাল শাড়িটা তুলে নেয়।শাড়ির সাথে মিলিয়ে লাল ব্লাউজ পড়ে।হাতে রেশমি চুড়ি পড়ে।খোপায় চারটা লাল গোলাপ দেয়।ঠোঁটে রেড কালারে লিপস্টিক দেয়।আয়না নিজেকে ভালো করে দেখে নেয়।তখনই নীলের কানে কলিংবেলের শব্দ আসে।সিঁড়ি দিয়ে দৌড়িয়ে যায়।দরজা খুলে দেয়।স্বপ্ন দাঁড়িয়ে আছে।স্বপ্ন চোখে সরছে না।মাতাল হয়ে যাচ্ছে।যেন কোনো অপ্সরী দাঁড়িয়ে আছে।নীল লজ্জায় তাকাতে পাচ্ছে না।খুব লজ্জা লাগছে। আড়চোখ তাকায় সে।স্বপ্ন নিজেকে সামলিয়ে বলল,
-” সুন্দর লাগছে।”
এটা বলে উপরে উঠে যায়।নীলের মনটা খারাপ হয়ে যায়।যার জন্য সেজেছে সেই একটু দেখল না।সে তো ভেবেছে স্বপ্ন আর কিছু বলবে।এখন আর ‘ভালোবাসি’ বলে না স্বপ্ন।কেন বলে না তাকে ভালো বাসে? দরজা লাগিয়ে উপরে আসে।
নিজের রুমে না যেয়ে স্বপ্ন রুমে যায়।স্বপ্ন ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল।চুপি চুপি হেঁটে যায় নীল।দরজা আটকিয়ে স্বপ্ন কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।নীলের স্পর্শ পেয়ে স্বপ্ন বলল,
-” নীল ছাড়ো!”
স্বপ্ন ঘুরে দাঁড়ায়।নীলের হাত টেনে পিছন থেকে সামনে এনে বলল,
-” এত রাতে তুমি এখানে!”
নীল স্বপ্নকে জড়িয়ে ধরে।বুকে মুখ লুকিয়ে অভিমান করে বলল,
-” আপনি এখন আর আমায় ভালোবাসেন না।”
স্বপ্ন কি বলবে বুঝতে পাচ্ছে না। নীল তাকে ভালোবেসে ফেলেছে বুঝে গেছে। স্বপ্ন নীলের থুতনি ধরে বলল,
-” তুমি সুর ওয়ালা কে ভালোবাসো।আমাকে তো নয়।”
নীল কি বলবে বুঝতে পাচ্ছে না।সত্যি তো সে সুর ওয়ালাকে ভালো বাসত।কিন্তু সেই জায়গা যে এখন স্বপ্ন আছে।এই কয়দিন স্বপ্ন সাথে থাকতে থাকতে সুর ওয়ালা কথা ভুলে গেছে।সে এখানে এসেছে সুর ওয়ালা জন্য।কিন্তু এখন স্বপ্ন তার শয়নে স্বপ্নে বিরাজ করছে।
নীলের চোখে যায় স্বপ্নের ঠোঁটের দিকে।সে কাতর কন্ঠে বলল,
-” আমায় একটু আদর করেন প্লিজ।”
স্বপ্ন চোখ উঠে যায় চড়ক গাছে।এই মেয়ে কি বলছে? মাথা ঠিক আছে তো।একদিন কিস করার জন্য তাকে কি মাইর টায় দিল।আর এখন নিজে থেকে আবদার করছে।মনে হচ্ছে সে কল্পনায় আছে।নীলের কথা তার হুস ফিরে।
-” একটা কিস করেন প্লিজ!”
স্বপ্ন মাথা নাড়া দেয়।সে বলল,
-” তুমি ঠিক আছো?”
-” আমি ঠিক নেই।একদম ঠিক নেই।”
স্বপ্ন’র ঠোঁটে হাত দিয়ে বলল নীল।স্বপ্ন হাত সরিয়ে বলল,
-” রুমে গিয়ে ঘুমাও।”
-” না! আমাকে আদর না দিলে যাবো না।”
-” উফঃ!”
নীল স্বপ্নকে ধাক্কা দিয়ে খাটে ফেলে দিয়ে।তার উপরে চড়ে বসে।স্বপ্ন উঠতে গেলে চেপে ধরে।স্বপ্ন খুব কষ্টে নিজেকে সংযত করছে।এই মেয়ে কেন বুঝছে না? এভাবে কোনো ছেলে কাছে আসলে কন্ট্রোল করা কষ্টকর হয়ে পড়ে।নীল তার তর্জনী আঙুল রাখে স্বপ্ন’র কপালে,কপাল থেকে নাকে! নাক থেকে ঠোঁটে এসে থামে নীলের আঙুল। ঝুকে পড়ে! নীলের উষ্ণ নিশ্বাস স্বপ্ন মুখে পড়ছে।মাতাল করে দিচ্ছে।ঘোর লেগে যাচ্ছে তার।ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয় নীলকে।বিছানার সাথে দুইহাত চেপে ধরে।দুজন দুজনের চোখ অনেক্ষন তাকিয়ে মাতাল হয়।নীলের চোখে ভাষা বুঝতে স্বপ্ন দেরী হয়নি।এই চোখের ভাষা কি বলছে তাকে।চোখ সরিয়ে ফেলে।নীলের ঘাড়ে ঠোঁট ছোঁয়া।নীলের সবাঙ্গ কেঁপে উঠে।চোখ বন্ধ করে ফেলে।স্বপ্ন নিজের পা দিয়ে নীলের পা প্যাঁচিয়ে ধরে।চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছে।নীলের কমলার কোয়ার মত ঠোঁট দুটো আঁকড়ে ধরে।নীল স্বপ্নকে চুল খামচে ধরে।

পেট থেকে শাড়ি সরিয়ে ফেলে নাভিতে মুখ ডুবায়।চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছে।শাড়ির কুচি গুলো খুলে ফেলে।তখনই স্বপ্ন হুস ফেরে।কি করতে যাচ্ছিল সে।নীল না হয় কাছে এসেছে !তাই বলে সে!কিন্তু সে নিজেকে কেন কন্ট্রোল করতে পারিনি।এভাবে বিয়ের আগে তার ভালোবাসাকে কিভাবে অপবিত্র করতে গেছিল।রাগে নিজের চুল ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছা করে।উঠে বাহিরে চলে যায়।নীল স্বপ্ন স্পর্শ না পেয়ে সে চোখ খুলে।স্বপ্নকে দেখতে না পেয়ে মন খারাপ হয়ে যায়।অনেক্ষণ স্বপ্ন জন্য অপেক্ষা করে। স্বপ্নকে আসতে না দেখে উঠে বসে।শাড়ি গায়ে প্যাঁচিয়ে কান্না করতে থাকে।কেন স্বপ্ন চলে গেছে।

নীল সকালে ঘুম থেকে উঠে নিচে যায়।স্বপ্ন দিকে তাকায়! স্বপ্ন তার দিকে একবার ও তাকায়নি।স্বপ্ন নীলকে বলল,
-” নাস্তা খেয়ে ব্যাগপ্যাক গুজিয়ে নাও।”
নীল স্বাভাবিক ভাবে বলল,
-” কেন? ”
-” তুমি বাড়িতে যাবে ১০ টার ট্রেনে।”
-” মানে কি? আপনি বলছেন সাতদিন যেন আপনার সাথে থাকি।এখনও দুদিন বাকি আছে।”
-” থাকুক।তুমি আজকে বাড়ি চলে যাবে এটাই আমার শেষ কথা।”
নীল জেদ ধরে বলল,
” আমি যাবো না।”
” যাবে মানে কি? প্রাচ্য’র সাথে কথা হয়েছে।প্রাচ্য তোমার দাদুকে জানিয়ে দিয়েছে তুমি আজকে বাড়ি ফিরবে?”
নীল রাগ দেখিয়ে বলল,
-” আমি যাবো না।”
স্বপ্ন রাগ দেখিয়ে সামনে রাখা নাস্তা ফেলে দিয়ে বলল,
-” তুমি যাবে।এক্ষুনি গিয়ে রেডি হও।”
এটা বলে উঠে যায়।নীল কান্না করতে থাকে।কেন স্বপ্ন এমন করছে? সুর ওয়ালাকে ভালোবাসে বলেই।
দুজন গাড়িতে বসে আছে।কেউ কারো সাথে কথা বলছে না।নীল জানালার দিকে তাকিয়ে চোখের জল আটকানোর চেষ্টা করছে। প্লাটফর্ম এসে গাড়ি থামে।লাগেজ স্বপ্ন হাত থেকে নীল নিয়ে যায়। বলল,
-” নিজের বোঝা নিজে টানতে পারি।”
স্বপ্ন আর কিছু বলল না।প্লাটফর্ম প্রাচ্য ছিল।বোন কে জড়িয়ে ধরে ট্রেনে উঠে যায়।ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।যদি স্বপ্নকে একবার তাকে ডাক দেয়।যদি বলে ফিরে আসতে কিন্তু স্বপ্ন বলেনি।দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের কেবিনে যায়।স্বপ্ন প্রাচ্যকে নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে যায়।
নীল বাড়িতে গিয়ে মন মরা হয়ে থাকে।কারো সাথে কোনো কথা বলছে না।৫ দিনের স্মৃতিকে যেন তার কাছে পাঁঁচ বছরে জমানো স্মৃতি মনে হচ্ছে। নীল একটা বিষয় খুব আশ্চর্য হয়।বাড়িতে আসার পর থেকে সুর ওয়ালার কথা এবারও মনে পড়েনি। মিনিট মিনিট শুধু স্বপ্ন কথাই মনে পড়েছে।তার মানে কি সুর ওয়ালার সুর ছিল একটা মোহ, ভালোলাগা।আর স্বপ্ন তার ভালোবাসা।হ্যাঁ স্বপ্ন তার ভালোবাসা।কিন্তু এত দেরী হয়ে গেলো কেন? নিজের মনে কথা বুঝতে।
বাড়িতে এসেছে ১৫ দিন হয়েছে। একবার ও স্বপ্ন তাকে ফোন দেয়নি।তাই বাধ্য হয়ে স্বপ্নকে সে ফোন দেয়।কেটে দেয়।আবার দিলে বন্ধ বলে।মোবাইল বিছানায় ফেলে হাউ মাউ করে কান্না করতে থাকে।

সোহার কেন জানি খুব অশান্তি লাগে? কিছু খেতে পারে না।বমি আসে তার।বুঝতে পাচ্ছে না তার কেন এমন হচ্ছে।মাথাটা ঘুরাচ্ছে।তামিম বাড়িতে থাকলে হয়তো তার সমস্যা গুলোর কথা বলতে পারত।কিন্তু তামিম এখন ঢাকায় আছে।

রান্না ঘর থেকে বের হতে মাথায় ভিতরে চক্কর দিয়ে উঠে। মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যায়।নীল পানি খাওয়ার জন্য আসলেই দেখে সোহা নিচে পড়ে আছে।চিৎকার দিয়ে বাড়ি সবাইকে ঢেকে আনে।আমেনা মেয়ে অবস্থা দেখে কান্না করতে থাকে। সোলোমান মির্জা তাদের ফ্যামিলি ডক্টর কে ফোন করে আনে।সোহাকে দেখে আমেনাকে বলল,
-” আপনার মেয়ে মা হতে চলেছে।”
উপস্থিত সবার মাথায় যেন ঠাডা পড়েছে।এমন মনে হচ্ছে তাদের।কারো মুখে কোনো কথা নেই।পরিবেশটা থমথমে হয়ে উঠেছে।

কাউছার স্বর্ণা
স্বপ্নীল
৫০
বার বার সমুদ্র রোদকে জড়িয়ে ধরছে।রোদ বার বার ঝামটা মেরে ফেলে দেয় সমুদ্র দুহাত দিয়ে।সমুদ্র এবার শক্ত করে রোদকে জড়িয়ে ধরে।
-” এবার দেখি কি করো!”
কিছুক্ষণ টানা হিঁচড়া করতে থাকে।পা দিয়ে সমুদ্র’র পায়ে আঘাত করে।সমুদ্র রোদকে পাঁজাকোলা করে বিছানায় শুয়ে দেয়।আজ খুব আলতো করে রোদকে স্পর্শ করছে।রোদ ইচ্ছা মত সমুদ্র পিঠে কিল ঘুষি দিতে থাকে।সমুদ্র মুখ উঠিয়ে বলল,
-” এমন করছো কেন? ”
রোদ রাগ দেখিয়ে বলল,
-” চাহিদার মিঠানোর প্রয়োজন হয়েছিল বলে আমার কাছে এসেছেন?”
-” তুমি যদি তাই মনে করো।তাহলে তাই!
-” কিন্তু আপনার চাহিদা মিঠানোর ইচ্ছুক আমার নেই।ছাড়ুন! কি পেয়েছেন আমায়? ”
সমুদ্র ছাড়ার বদলে আরো ঝাপটে ধরে।আজ খুব আলতো করে স্পর্শ করছে।সমুদ্র ছোঁয়া আজ কোনো হিংস্রতা নেই।আছে শুধু ভালো বাসা।তারপর এখন আর রোদের এই ভালোবাসাময় স্পর্শ গুলো নিতে খারাপ লাগছে।নিতে পাচ্ছে না!

সোহার মা হতে চলেছে! কি করে? বিয়ের আগে মা অসম্ভব! তার মানে কি সোহার সাথে কেউ জোর করেছে? কে এমন খারাপ কাজ করবে? সোহার এই কথা ভাইয়া জানলে কিভাবে রিয়েক্ট করবে।বার বার নীলের মনে এসব প্রশ্ন আসছে।এসব ভাবতে ভাবতে সারারাত নির্ঘুম কেটে যায়।

সকাল গোসল করে রোদ রুম থেকে বের হয়।বারান্দ দিয়ে নিচে নামতে নিলেই রেহান তার হাত ধরে দেওয়ালে সাথে চেপে ধরে।রোদ বলল,
-” রেহান, তোকে কয়বার বলছি আমার আশে পাশে আসবি না।এখন যদি হাত না ছাড়ছ।সবাই ডেকে এনে তোর লুচ্চা মার্কা চরিত্রটা দেখাবো।”
রেহান বাঁকা হেসে রোদের কোমরে হাত দেয়।রেহানের স্পর্শ রোদের পুরো শরীর ঘিনঘিন করে উঠে। চোখ বন্ধ করে মোচড়ামুচড়ি করছে।রেহান তাকে ঝাপটে ধরে।তার কোমরে স্লাইড করতে থাকে।নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে।বার বার আল্লাহকে ডাকে।যেন এই লুচ্ছা ব্যাটার থেকে ছাড়া পেতে পারে।রেহান কিছু বুঝে উঠার আগে কেউ তার পিছন থেকে টি-শার্ট টেনে ধরে।মুখ ঘুরালেই তার নাক বরাবর ঘুষি পড়ে।মুখ থেঁতলে ফ্লোরে পড়ে।ক্রোধান্বিত গলায় বলল,
-” তোর এত বড় সাহস আমার বউকে স্পর্শ করিস।তোর ভাগ্য ভালো বলেই আজ এর চেয়ে বেশি কিছু করলাম না।নেক্সট টাইম রোদের আগে পিছে তোকে যেন না দেখি।”
এটা বলে রোদের হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে আসে।ধাক্কা মেরে খাটে ফেলে দেয়।রোদ উঠতে গেলেই সমুদ্র ধমক দেয়।শুয়ে তাকে তাই।টিস্যু বক্স নিয়ে রোদের পাশে বসে।পেট থেকে শাড়ি সরিয়ে রেহানে যে জায়গা স্পর্শ করছে সেই জায়গা বার বার টিস্যু দিয়ে মুচতে থাকে।রোদ হেসে দেয় সমুদ্র কান্ড কারখানা।তার মুখটাকে শক্ত করে ফেলে শাড়ি ঠিক করে কঠিন করে কথা বলে,
-” এত প্রেম দেখানোর প্রয়োজন নেই! ”
-” আমার জন্য কি মেয়ের অভাব পড়ছে নাকি! তোকেই প্রেম দেখাতে যাবো।”
সমুদ্র কথা রোদের মেজাজ চটে যায়।সে বলল,
-” এক্ষুনি এই মুহূর্ত আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবেন!”
রোদ কে কাছে টেনে বলল,
-তুই চল আমার সাথে।তাহলে আর এই বাড়িতে আসব না।”
সমুদ্রকে ধাক্কা মেরে রোদ বলল,
-” বাড়িতে যখন ঢুকতে দেন নাই।তখনই মনে ছিল না।”
-” রাগে বশে করিছি আমি এগুলো।”
-” এখন আমি খুব ঠান্ডা মেজাজে বলছি।আপনার সাথে আমি কখনো ফিরব না।”
সমুদ্র রোদকে কাঁধ তুলে নিয়ে বাড়িতে থেকে বের হয়ে যায়।

তৃণ পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়।অফিসে যাওয়ার জন্য বের হয়।আজও রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে শিহাব,কানে ফোন।তৃণ চোখ তুলে তাকায়।প্রাচ্য বারান্দা দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে।তৃণ আবার দুজনকে জহুরী চোখে দেখে।যা বোঝার সে বুঝে গেছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের কাছে যায়।
তৃণকে চলে যেতে দেখে শিহাব কান থেকে ফোন সরিয়ে রহস্যময়ী একটা হাসি দেয়।প্রাচ্যকে ফোনে কথা বলতে দেখে।তৃণ কে দেখানোর জন্য নিজের কানে ফোন ধরে।যাতে প্রাচ্যকে নিয়ে তৃণ’র মনে সন্দেহ ঢুকে।

এতদিন সমুদ্র পিছনে একটু ভালোবাসার জন্য অনেক ঘুরেছে।সমুদ্র ভালোবাসার বদলে তাকে অনেককটু কথা বলেছে।নানা ভাবে তাকে অপমান, অপদস্থ করেছে।এখন আসছে ভালোবাসা দেখাতে।বউ বউ বলে মাথা খেতে।এত সহজে সমুদ্র ভালোবাসা সে গ্রহণ করবে না।তাকে যেমন ভাবে ঘুরিয়েছে, কষ্ট দিয়েছে, সমুদ্রকে তাই ফেরত দেবে।সমান সমান হয়ে গেলে।তারপর সমুদ্র ভালোবাসা গ্রহণ করবে।সুখে সংসার করবে।রোদ রুমের দরজা আটকিয়ে এসব ভাবতে আছে।সমুদ্র বাইরে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে দরজা খোলার জন্য।সমুদ্র নিরুপায় হয়ে বের হয়ে যায়।বিকালে ৪ টায় একটা মিটিং আছে।তামিম আর সে যাবে মিটিং।

সমুদ্র সহ ডিনার করেছে এসেছে তামিম।শুয়ে বিছানায় চটপট করতে থাকে।বাড়িতে থাকলে তার বুকে গুটিসুটি মেরে সোহারানি শুয়ে থাকত।এই কয়দিন তার বুকটা খুব খালি খালি লাগে।তাই ঘুম আসে না।সারা রাত সোহার স্মৃতি নিয়ে কাটিয়ে দেয়।পরশু বাড়িয়ে চলে যাবে।তারপর সবাইকে জানিয়ে দিবে তাদের বিয়ে কথা।সেদিন হয়তো অনেক বড় ঝড়ের মুখে পড়তে হবে তাকে।মাঝরাতে রোদের ঘুম ভেঙে যায়।একটা দড়ি এনে খাটের সাথে সমুদ্র হাত পা বেঁধে দেয়।
বাথরুম থেকে পানি এনে সমুদ্র গায়ে ঢালে।পানি পড়াতে সমুদ্র আতঁকে উঠে।উঠে বসতে গেলে বাঁধা পায়।হাত,পা তার বাঁধা। ।নিজেকে ছাড়ানোর জন্য হাত, পা নাড়াতে থাকে। কার এত বড় সাহস তার সাথে এমন করছে।চোখ পড়ে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা একটা অবয়ব উপরে।সে অবয়ব মুখে হাসি।যেন সে বিশ্বজয়ী করেছে,এরকম কান্ড করে।সে অবয়ব আর কেউ নয়।সে হলো রোদ।
কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
-” রোদ, বৃষ্টি ঝড় কি এখন রুমের ভিতরে হয় নাকি!”
রোদ হাতে রাখা বালতি রেখে লাইট অন করে।সে বলল,
-” শুধু ঝড় নয়।।এখন সুনামি হবে রুমে ভিতরে।”
এটা বলে পাশে রাখা বালতি হাতে নেয়।যথা দ্রুত বাথরুমে যায়।আরেক বালতি পানি এনে ঢেলে দেয়।সমুদ্র লম্বা চুল গুলো চোখে এসে পড়ে।
-” কি হচ্ছে রোদ!”
-” তুই আমায় শারীরিক নির্যাতন করেছিস।এখন থেকে তার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তোকে মানুষিক নির্যাতন করব।”
-” রোদ তোর এত বড় সাহস তুই আমাকে ‘ তুই ‘ করে কথা বলিস।খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু। ”
সমুদ্র ভেজা চুলগুলো মুঠো করে ধরে বলল,
-” এক বার কেন একশো বার তোকে ‘ তুই ‘ বলল।তুই, তুই, তুই….!”
-” একবার ছাড়া পাই শুধু, তোর ‘তুই ‘ বলার বার করব।”
-” আগে তো ছাড়া পায়।তারপর পারলে যা পারিস তাই করিস।কিচ্ছু টি বলব না তোকে।”
সমুদ্র ধমক দিয়ে বলল,
-” রোদ!”
সমুদ্র চিবুক ধরে বলল,
-” এই তুই নিজেকে কি মনে করিস! তোর ধমকে রোদ ভয়ে চুপসে যাবে।নো ওয়ে! তোকে এক টানা চারদিন গৃহবন্দী করে রাখব।”
এটা বলে রোদ চলে যায়।সমুদ্র নিজেকে গালাগাল করতে থাকে।কেন সে রোদের প্রতি দরদ দেখাতে গেছে।এই মেয়েদের কে যদি ছেলেরা একটু পাত্তা দেয় তাহলে তারা মাথা চড়ে বসে।যেমন এখন রোদ সমুদ্র মাথা বসে নাচতেছে।রাগ হচ্ছে! খুব রাগ হচ্ছে।ইচ্ছা করছে আস্তো চিবিয়ে খেতে রোদকে
এখন এই স্যাঁতস্যাঁতে বিছানায় দেখে তার গা গুলিয়ে আসছে। একমুহূর্ত থাকা দুষ্কর হয়ে যাচ্ছে।তাহলে চারদিন কিভাবে থাকবে।

# কাউছার স্বর্ণা
গঠনমূলক মন্তব্য চাই।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে