স্বপ্নীল ২৭

0
1250

স্বপ্নীল
২৭
-“তৃণ তোমার গালে কি হয়েছে! ”
শায়লা বেগমের কথায় তৃণ কিছুটা ঘাপড়ে যায়। কি বলবে এখন সে।গালে হাত দিয়ে ভাবতে থাকে কি বললে সবাই বিশ্বাস করবে তার কথা।শায়লা আবার বলল,
-“দেখে মনে হয়েছে চড় মেরেছে কেউ তোমায়! আঙ্গুলের চাপ বসে লাল হয়ে গেছে!”
এবার তৃণ আরো বেশি ঘাপড়ে যায়।কি উত্তর দিবে সে।আমতা আমতা করে বলল,
– আ – আ -আন্টি!এখানে প্রচুর মশা।মশাকে মারতে যেয়ে ঠাস করে নিজের গালে চড় মেরে ফেলেছি।তাই হয়তো লাল হয়ে গেছে!”
মুখে কৃত্রিম হাসি জুলিয়ে বলল।শায়লা তৃণের কথা মৃদু হেসে বলল,
-” বাচ্চাদদের মত কেউ এমন করে। স্বপ্ন আর ধূসর কোথায়?
তখনই তারা রুমে ঢুকে!ধূসর বলল,
-“এই তো আন্টি আমরা! ”
শায়লা পিছন ঘুরে তাদের দেখে বলল,
-” এই বৃষ্টির দিনে তোমাদের জন্য গরম গরম পাখোড়া আর চা বানিয়েছি! নিচে এসো সবাই।”
এটা বলে তিনি চলে যায়।তখনই সমুদ্র এসে রুমে ঢুকে বলল,
– ” বৃষ্টি কমে গেছে বিকালে আমরা সবাই বের হবো! ”
ধূসর বলল,
– ” কোথায় যাবি? ”
– “ডেটে যাবো! যাবি তোরা আমার সাথে!
স্বপ্ন বলল,
-” তুই ডেটে যাবি তাও আমাদের বিশ্বাস করতে হবে। ”
– ” তাও ঠিক বলেছি! এসব ডেটিং পেটিং ভালো লাগে না আমার! তাই প্রেম ভালোবসা তুলে রেখেছি বউয়ের জন্য! একে বারে সব ভালোবাসা বঊ কে দিবো!
ধূসর আর স্বপ্ন চাপা হাসে।সমুদ্র খেয়াল করলো তৃণ চুপচাপ ভাবে বসে আছে! কোনো কথা নেই।তৃণ গালের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“তোর গালে কি হয়েছে? ”
– ” ও কিছু হয়নি! ”
ধূসর এসে বলল,
-“দেখে তো মনে হয় চড় মেরেছে কেউ!ভাই কোনো মেয়ে মারিনি তো চড় তোকে।”
তৃণ রাগী চোখে তাকায়।ধূসর ভয়ে ঢোক গিলে কথা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিতে বলল,
-“আমি বলছিলাম কি………
তার আগেই তৃণ বলল,
– “মশা কে মারতে গিয়ে নিজের হাতের চড় নিজের গালে পড়েছে তাই এই অবস্থা।”
তার কথায় সবাই হু হু করে ঘর কাঁপিয়ে হাসতে থাকে।ধূসর বলল,
-” মশা তোর গালে বসেছে তোকে চুমু খাওয়ার জন্য।আর তুই তাকে শাস্তি দিতে গিয়ে নিজের গালের এই হাল করেছিস! ”
সমুদ্র সন্দেহজনক ভাবে বলল,
– ” তুই যাই বলিস, আমার কিন্তু বিশ্বাস হচ্ছে না তোর কথায়। ”
স্বপ্ন’র কেন জানি সমুদ্রের সাথে একমত! তার ও কেন জানি বিশ্বাস হচ্ছে না তৃণ কথায়।কিছু একটা হয়েছে! হয়ত প্রাচ্য সাথে কিছু হয়েছে বলেই সমুদ্রের সামনে আমাদের কাছে মিথ্যে বলেছে! তৃণ বলল,
-” মিথ্যে বলতে যাবো কেন তোদের কাছে? ”
– “সেটা তুই ভালো করে জানিস।হয়তো আমাদের কাছ থেকে কিছু লুকানোর জন্য।এখানে আমরা একজন আরেক জনের বন্ধু।কেউ কারো কাছ থেকে কোনো কিছু লুকাইনি আজ পর্যন্ত। কারো সাথে খারাপ কিছু ঘটলে শেয়ার করতাম!তা সবাই মিলে সেটা ঠিক করার চেষ্টা করতাম।”
তৃণ সমুদ্রের কাঁধে হাত রেখে বলল,
-” কিচ্ছু লুকাচ্ছি না আমি তোদের কাজ থেকে! ”
-” তাই যেন হয়।এখন চল নিচে! ”
সমুদ্র বলে যায়।স্বপ্ন তৃণ কাঁধে হাত রেখে বলল,
– ” কি হয়েছে প্রাচ্য’র সাথে তোর?
কাঁধ থেকে স্বপ্ন’র হাত সরিয়ে বলল,
– ” কিছু হয়নি আমার! ”
-“আমি জানি কি হয়েছে! ”
-” রোদ তুই?
স্বপ্ন বলল।রোদ দরজা দাঁড়িয়ে বলছিল কথাটা।তাদের কাছে এসে বৃষ্টিতে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খুলে বলল।ধূসর বলল,
-” ওই ভিডিও দেখে ও প্রাচ্য তৃণকে থাপ্পড় মেরেছে বিশ্বাসে হচ্ছে না।”

– “ভিডিও টা দেখানোর জন্য সুযোগ পেয়েছি নাকি আমি! ”
স্বপ্ন বলল,
-” মানে?
– ” মানে খুব সোজা। প্রাচ্য কে বলতে যেয়ে পারিনি কিছু বলতে।আজকে এই ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর জোর করে একটু আগে ভিডিও টা দেখিয়েছি।”
– ” ও! ”
তৃণ এতক্ষণ দাঁড়িয়ে বন্ধুদের কথা শুনছিল।কি ভিডিও কথা বলছে তার বন্ধুরা মাথায় কিছু ঢুকছে না ।তৃণ বলল,
-“কিসের ভিডিও কথা বলছিস তোরা? ”
রোদ সব খুলে বলে তৃণ কে।তৃণ ধমকিয়ে বলল,
– ” কে বলেছে তোকে পণ্ডিত করতে? কে বলেছে ওকে ভিডিও দেখাতে?আমি বলছি ওর ভুল ভাঙাতে।ওর ভুল নিতে ও থাকতো।পণ্ডিত করতে গেলি কেন তুই? আর তোদের সবাইকে বলি প্রাচ্য’র কথা কোনোদিন কেউ আমাকে বলবি না! ”
তৃণ হনহনিয়ে বেরিয়ে চলে যায়।তৃণ এহেম আচরণ করে যখন সে রেগে থাকে।তার বন্ধুরা খুব ভালো করে জানে।রোদ মুখ ভেঙচি কেটে বলল,
– ” উপকার নামে চড়! যা বলে আর কি? ”
এটা বলে চলে যায় সে।স্বপ্ন কিছু বুঝতে পাচ্ছে কি থেকে কি হয়ে গেছে।স্বপ্ন ভালো করে বুঝতে পাচ্ছে তৃণ প্রাচ্যর উপরে রেগে আছে। তৃণ যদি একবার কারো উপরে রেগে যায় তাহলে খুব সহজ হতে পারে না তার উপরে। এখন প্রাচ্য’র হয়তো ভুল ভেঙে গেছে।কিন্তু তৃণ…..স্বপ্ন মাথা আউলাজাউলা হয়ে যাচ্ছে!তৃণকে এখন আর বুঝাতে কেউ পারবে না সেটা খুব ভালো করেই জানে।।এখন তাকে কিছু একটা করতে হবে সবার অগোচরে।

★★★
প্রাচ্য’র বিয়ের ফুলের অর্ডার দিয়ে বাড়ি আসার পথে স্বপ্ন’র সাথে নীলের দেখা হয়।স্বপ্ন তার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।তা দেখে ভ্রু দুটো যোগ করে কপাল কুঁচকে তাকায় নীল।স্বপ্ন বলল,
-” কালকের জন্য সরি! আসলে তুমি যেমন আমায় ভাবছো আমি কিন্তু তেমন নই।
নীল মুখ বাঁকিয়ে বলল,
– ” হুম!তুমি যেমন ভাবছো আমি কিন্তু তেমন নই!তাহলে আপনি কেমন গো একটু শুনি আমি ! ”
– ” আসলে,,,,
-” আসলে কি? কালকে তো বিস্তারিত বলে দিয়েছি এখন আবার পথ আঁটকিয়ে রাখছেন কেন? ”
– “তুমি কিন্ত এখন আমায় ভুল বুঝছো!”
নীল এবার স্বপ্ন’র দিকে তাকিয়ে কটমট করে নিজের মনে মনে বলল,তোকে আমি শাস্তি দিবো বজ্জাত ব্যাটা, তুই আমায় কিস করতে এসেছিস।এত বড় স্পর্ধা তোর!
এটা বলে তার পাশে রাস্তার সাইডে একটা গোবরের স্তুব দেখে!তখন নীলের মাথা দুষ্টুবুদ্ধি খেলে।নীল স্বপ্ন’র কাছে এসে বলল,
-” বিশ্বাস করুন আমি ভুল বুঝিনি।আমি বুঝেছি ইচ্ছা করে আপনি আমার কাছে আসেনি। ”
এটা বলে একধাক্কা মারে স্বপ্নকে গোবরের দিকে।স্বপ্ন বুঝতে পারেনি নীল এমন কিছু একটা করবে! নীল এখন দাঁড়িয়ে আছে মুখবর্তী গোবর মাখামাখি স্বপ্ন’র মুখ খানা দেখার জন্য।নীল স্বপ্ন’র কাঁধে হাত রেখে তার মুখ ঘুরায়। একটু দূরে সরে গিয়ে হু হু হু করে ভুবন কাঁপিয়ে হাসতে থাকে নীল।চোখ গুলো ছাড়া স্বপ্ন’র কিছু দেখা যায় না। মুখে,শার্টে গোবরে মাখামাখি কি এক অবস্থা।নীল হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যায়।লাস্ট পর্যায় রাস্তা বসে পড়ে হাসতে হাসতে।স্বপ্ন তার দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে।নীল খুব কষ্ট করে নিজের হাসি দমিয়ে রেখে আদুরের গলায় বলল,

-” আমার বাবুটা খুব শখ ছিল আমাকে কিস করার।তাই গরু গোবর খাইয়ে সাধ মিটিয়ে দিলাম। মুখ মিষ্টি একটা জিনিস খাইলা বাবু! কেমন হইছে? বাবু টা বললা না তো!”
অট্রহাসিতে ফেটে পড়ে নীল এটা বলে।স্বপ্ন ও সুযোগে সদ ব্যবহার করবে।কিছু না বলে উঠে দাঁড়ায় সে।মুখের গোবর সরিয়ে বলল,
– “অন্যায় যখন করিছি শাস্তি ত পেতে হতো!বাই ওয়ে আমাকে একটা পুকুর দেখিয়ে দিতে পারবে।”
– “কেন?
– “এগুলো নিয়ে ত বাসায় যেতে পারবো না তাই ধুয়ে নিতাম আর কি? ”
পুকুর কথা শুনে নীলের মাথায় আরেকটা দুষ্টুবুদ্ধি আঁটে!স্বপ্ন তো ঢাকা থাকে! ঢাকার ছেলেরা তো আর সাঁতার জানে না। তাহলে এই স্বপ্ন ব্যাটাকে এবার পুকুরে পানিতে চুবিয়ে আরেকটা শিক্ষা দেওয়া যাবে।স্বপ্ন দিকে তাকিয়ে বলল,
– ” আমার পিছন পিছন চলুন! ”
নীল ইচ্ছা করে তাদের গ্রামের সব চেয়ে বড় দিঘিটার কাছে আনে স্বপ্নকে যাতে ভালো করে ডুবিয়ে মারতে পারে! দিঘির শানবাঁধানো ঘাটে সামনে এসে বলল,
– ” যান ধুয়ে আসুন! ”
স্বপ্ন কোনো কথা না বলে সিঁড়ির একধাপ একধাপ করে এগিয়ে যায়।একটু উবু হয়ে হাত দুটো এক করে আঁজলা ভরতে পানি নিয়ে মুখে ছিঁটাতে থাকে।উপর থেকে নীল দেখতে থাকে। এই হ্যান্ডসাম ছেলেটাকে আজকে সে গোবর খাইয়েছে ভাবতেই তার খুশি খুশি লাগছে,খুশিতে এখানে ডান্স করতে ইচ্ছা করছে।এখব আবার চুবানি খাবে! খুশিতে নীলের মন গদগদ করছে।পা টিপে টিপে স্বপ্ন’র দিকে এগিয়ে যায়। যাতে স্বপ্ন কিছু টের না পায়।স্বপ্ন পিছন দাঁড়িয়ে তার দুইহাত দিয়ে স্বপ্নকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়।ঝাঁপ করে একটা শব্দ হয়।আর নীল তো সেই খুশি।মনে মনে রাজ্য’র গালি দিতে থাকে।স্বপ্ন হাঁত উঠিয়ে বঁাচার অনেক টাই করতে থাকে।কিন্তু পারে না সে কিছু ক্ষণ পর হাত দুটো ডুবে যায়।নীলের বুঝতে বাকি রইল না স্বপ্ন ডুবে যাচ্ছে। ডুবে গেলে মরে যাবে! আর মরে গেলে তার ফাঁসি হবে।তার ফাঁসি হলে সুরওয়ালা কি হবে। বজ্জাত ব্যাটাকে শায়েস্তা করতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেছে!
তাই হাতের পার্স আর মোবাইল রেখে দিঘিতে সে ঝাঁপ দেয়।সাঁতার কেটে স্বপ্নর কাছে যায়! সাঁতরিয়ে সাঁতরিয়ে অনেক কষ্ট করে ঘাটে আনে স্বপ্নকে।পানিতে ভারি কিছু হালকা ওজন হয় তাই হয়তো ৯০ কেজি ওয়ালা ব্যাটাকে আনতে পেড়েছে।না হলে মরে কিছুক্ষণ পর ভাসা দিত।সাঁতার কাঁটায় সে হাঁফিয়ে যায়।জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে। ঘাড় ঘুড়িয়ে স্বপ্ন’র দিকে তাকায়। অজানা ভয় আঁকড়ে ধরে তার মনে।অনেক বার স্বপ্ন’র শরীর ঝাঁকাতে থাকে।কিন্তু স্বপ্ন হুস নেই।সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে। কি করবে ভেবেছে পাচ্ছে না নীল।স্বপ্ন হয় তো পানি খেয়েছে সেগুলো তো বের করতে হবে।দুইহাত দিয়ে স্বপ্ন’র পেটে চাপ দেয়। কিন্তু হালকা একটি বেড়িয়েছে আসে ।স্বপ্ন’র মুখের সামনে আসে।নিশ্বাস চেক করে দেখে নিশ্বাস আছে।কিন্তু জ্ঞান ফিরাবে কি করে।মাথা কিছু আসছে তার। নিজেকে সে গালি দিচ্ছে কেন এই আপদ কে পানিতে ফেলাতে গেলো।হঠাৎ মনে পড়ে যায়।প্রাইমারী থাকতে বইয়েতে পড়েছে।কেউ পানি পড়ে গেলে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া লাগে। পানি খেলে পেটে চাপ দিয়ে বের করতে সেটা করে ফেলেছে।আর বাকি রইল মুখে মুখ লাগিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস দেওয়া। অনেক সিনেমায় সেটাই দেখেছে।ছিঃ এখন কে লাগাবে এই বজ্জাতে মুখে মুখ।চারদিকে তাকিয়ে কাউকে খুজতে থাকে।কিন্তু পায় না। অনেক সময় ফেরিয়ে যায় তাতে স্বপ্ন’র হুস ফিরে না।তাই বাধ্য হয় সে ঠিক করে নিজেই এই কাজ করবে।কেন করলি নীল এটা তুই।এখন ঠ্যালা সামলা। এটা বলে স্বপ্ন মুখের উপরে ঝুকে পড়ে।নীলের চোখ যায় স্বপ্ন ঠোঁটের দিকে।এবার নিজের হাতে নিজের ঠোঁট ধরে সে বলল,খুব করে চেয়েছিলাম এই ঠোঁটে সবার আগে সুর ওয়ালা ঠোঁটে মিশাবো।কিন্তু এখন একে বাঁচাতে হলে,,,,একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এগিয়ে যায় স্বপ্ন’র দিকে।ঝুকে পড়ে সে।কান্না করতে ইচ্ছা করছে।নিজের দোষে এই শাস্তি পাচ্ছে। নিজের ঠোঁট গুলো দিয়ে স্বপ্ন’র ঠোঁট আকঁড়ে ধরে।

#চলবে
কাউছার

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে