স্বপ্নীল
১২
তামিম সোহার হাত মোচড় দিয়ে ধরে ।সোহা ব্যথায় আহঃ করে চিৎকার দেয়।ব্যথাতুর কাতর হয়ে অনুনয় সুরে বলে,
-“আমি ব্যথা পাচ্ছি,প্লিজ ছেড়ে দিন!
-“ছেড়ে দিব! ছেড়ে দেওয়ার জন্য কি তোকে ধরেছি।তুই আমার কথা শুনলি না কেন?কালকে রাতে! কেন বল?
-“এবার ধরে সব সময় শুনবো।
তামিম ধমকের সুরে বলে,
-“আগে বল কালকে কেন? শুনলিনা আমার কথা?তার উত্তর দে।
-“আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম!
তামিম আর কিছু না বলে আর জোরে সোহার হাত মোচড় দিয়ে ধরে।সোহা ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠে।তাতে তামিমের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই,
-আহঃ,উহু করছিস কেন??একে তো আমার কথা শুনিস নেই।তার উপরে ডাহা মিথ্যে কথা বলছিস।তুই কি মনে করিস ঘুমে নামে মিথ্যে বানোয়াট কথা বললে আমি বিশ্বাস করে নিবো।
সোহার এবার মেজাজ সপ্তম আকাশে উঠে যায়,
-“আমি কেন আপনার কথা শুনতে যাবো মাঝরাতে,আমি কি আপনার ঘরের বউ, যে আপনি যা বলবেন আমায় তা শুনতে হবে মানতে হবে।
তামিম সোহার হাত ছেড়ে দিয়ে তার দিকে ঘুরিয়ে বলে,
-“আমার ঘরের বউ আজ না বা কাল তোকে হতে হবে।তাই আগে থেকে আমার কথা তোকে শুনতে হবে।
সোহার হাত লাল হয়ে গেছে।সে ভালো করে নিজের হাত দেখছে।কি সুন্দর হাত এভাবে চেপে ধরে লালা বানিয়ে ফেলেছে।আর কিছুক্ষন এভাবে ধরলে হয়তো তার হাত ভেঙে যেত।তাহলে কি হত,এই জানোয়ারের মায়াদয়া বলতে কিছু নেই, কিছুর থেকে কিছু হলে অমনি হাত মোচড়ে ধরে,ইচ্ছা করে তার হাত এভাবে মোচড়ে ধরে ভেঙে দিতে।কিন্তু আফসোস তার সাথে যে সে ফেরে উঠবে না,গণ্ডারের মত যে তার শরীর শক্তি।
সে বললো,
-“যখন বঊ হবো তখন অধিকার দেখাতে আসিয়েন। এখন অযথা বিরক্তি করিয়েবেন না।
এটা বলে চলে যেতে নিলে।তার বেণী ধরে টান মেরে।সোহা ব্যথায় আহঃ বলে দাঁড়িয়ে যায়।তামিম তার বেনুনী ধরে টানতে টানতে তার কাছে নিয়ে আসে।
-“আমি অযথা বিরক্ত করি,,,,,
আর বলতে না দিয়ে সোহা বলে উঠে,
-“তা নয় তো কি? নিচে আমার অনেক কাজ আছে। আর আপনি এখানে অযথা আমায় ধরে রেখে আমার সময় নষ্ট করছেন!ছাড়েন বলছি।
-“ছাড়ব না।
-“ঠিক আছে! আমি বড় মা আর ছোট মাকে এখন চিৎকার করে ডাক দিবো।তখন…
বাকি কথা শেষ করার আগে তামিম ছেড়ে দেয় বেনুণী। সোহা দুষ্টু হেসে বের হয়ে যায় রুম থেকে।
____________________________
ট্রেকিং করেই পৌঁছে গেলো সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া কংলাক পাহাড়।স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে লাগলো সবাই।এখানে দাঁড়িয়ে বকুটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবীটাই দেখছে ওরা।এত বিশাল প্রান্তের সামনে।বিশাল মহাশূন্য আর রাশি রাশি মেঘ।আসার পথেই কুয়াশার মত মেঘেরা গা ভিজিয়ে দিচ্ছিলো।নীল কেবলই উৎফুল্ল হয়ে উঠছে।চূড়ায় উঠতে উঠতে তারা দেখতে পায় মিজোরাম সিমান্তের পাহাড় সবুজের মিতালি।কংলাকের চূড়ায় উঠে চার পাশে তাকালো রোদ।এত সুন্দর চারপাশের ভিউ দেখে দেখে তার মনে হচ্ছে কোন যান্ত্রিক নগরের দূষিত বাতাস, দূষিত শব্দ এবং কর্কট সমাজে জন্ম নেয়া মানুষ সে।তার মন-প্রান পুলকিত হবে এক বিশুদ্ধ চিন্তা এবং অনুভুতি।
চোখে পলকেই নীলের চার পাশটা ঢেকে গেছে সাদাকালো মেঘে।এ যেন মেঘের উপত্যকা। নিজেকে মনে হবে মেঘের রাজ্যের বাসিন্দা।।হয়তো মনের অজান্তেই খুজতে থাকবে মেঘের মধ্যে পঙ্খীরাজ ঘোড়া চড়ে আসবে রাজ পুত্র,আর সেই রাজ পুত্র যদি হয় সেই সুরওয়ালা।তাহলে তো কথা না,,,ইস! একবার যদি তাকে সে দেখতে পেতো।
তৃণ খেয়াল করে দেখলো একরাশি তুলোর মতো মেঘ উড়ে আসছে।ও ছুটে এসে প্রাচ্যর হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে সেখানে গিয়ে দাঁড় করালো।প্রাচ্য মুগ্ধতার চোটে কথাই বলতে পাচ্ছে না।এমন মেঘ ও কক্ষনো দেখেনি।মেঘেরা উড়ে আসছে ওদের দিকে।।প্রাচ্য উত্তেজেনা কাঁপছে।।প্রাচ্য তৃণের বুকে পিঠ ঠেকে দাঁড়ালো।তৃণ ওর পিছনে দাঁড়িয়ে হাত দুটো প্রাচ্যর হাতে তুলে নিয়ে সামনে বাঁড়িয়ে দিলো।।প্রাচ্য উত্তেজনা কাঁপতে কাঁপতে তৃণের বুকের উপরে সমস্ত ভর ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়েছে।বিশাল আকাশ আর এই মহাশূন্য মাঝে উড়ে আসা মেঘ দেখে ওর মনে হচ্ছে নিজেই বোধহয় আকাশে উড়ছে।তৃণের হাতের উপর আলতো করে হাত রেখে আবেশে চোখ বুজে ফেললো প্রাচ্য।গুচ্ছ গুচ্ছ সাদা মেঘ এসে শরীর ফুড়ে ঢুকে যেতে লাগলো।দুজনকে একসাথে আলিঙ্গন করছে মেঘ।মেঘ স্পর্শ করার অনুভূতি এত সুন্দর হতে পারে প্রাচ্য কখনো কল্পনাও করেনি।অজান্তেই ওর দুচোখে বেয়ে পানি টপটপ করে পড়ছে।বহু প্রতিক্ষীত সেই অনুভূতি। তৃনের স্পর্শে চোখ বুঝে ফেলেছে ও।চোখ মেলেই আবার মিটমিট করে বন্ধ করে ফেললো।মনে হচ্ছে একটু গাঢ় কুয়াশা।শীতল এক অনুভূতি! ভেতরে কাঁপন ধরে গেছে একে বাঁরে।মেঘেদের দল উড়ে চলে যাওয়ার পর প্রাচ্য পিছন ফিরে তৃনকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।ধূসর ওদের মেঘের ভিতরে ছবি তুলে নিয়েছে।তৃণ ফ্যাসফ্যাস করে প্রাচ্যের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
“তোমার কানে পরিয়ে দেবো অগ্নিজবা,পাহাড়িফুল।
একটু তোমায় দেখবো ছুয়ে নাইবা আমার হলো -ই ভুল।
তোমার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে হাতটি আমি ধরবো হাতে
তোমায় পাওয়া পূন হলে ভিজবো দু’জন জলপ্রপাত।
এদিক চেয়ে মিষ্টি হাসে পাহাড়-নদী সকল কিছু।
নরম ঘাসের আলতো ছোঁয়ায় নুঁয়ে আছে জমিন-নিচু।
ফেরার পথে আবার তোমায় গুঁজে দিবো পাহাড়ি ফুল।
আলতো ছোঁয়ায় জড়িয়ে দিবো তোমার পিঠে সোনালি চুল।
-“ইস!!”লজ্জা পেয়ে প্রাচ্য নিজে ছাড়িয়ে নিয়ে দূরে সরে যায়।তা দেখে তৃণ মুচকি হাসে।ধূসর এসে তার পিঠে চাপল মেড়ে বলে,”বাহ রোমান্স তো ভালোই করলি”
এটা বলে ক্যামেরা বাড়িয়ে দিয়ে তার তোলা ছবিটা দেখায়।
নীলের পরনে নীল টপস সাদা প্যান্ট,স্বপ্নর কাছে মনে হচ্ছে নীল আকাশের সাদা মেঘের মধ্যে নীল সাদা পরি এসে দাঁড়িয়ে আছে। স্বপ্নের বার বার মনে হচ্ছে মেঘেরা পথ ভুলে এসেছে তার শুভ্র পরী জন্য।রাজকন্যাকে দেখতেই এসেছে মেঘেরা।নয়ত মেঘগুলো কত নিচে,এত উপড়ে আসে না সব সময় ওরা।তবে উপড়ে সব জায়গায় কুয়াশার মতন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তার ইচ্ছা করছে তার নীল সাদা পরী কে চিৎকার করে বলতে “ভালোবাসি, ভালোবাসি”
কংলাক পাহাড়ে পাহাড়িদের দোকান রয়েছে।সেখান থেকে স্বপ্ন সবার জন্য চা নিয়ে আসে। এক কাপ চা ১০ টাকা এখানে।কংলাক পাহাড়ে বেঞ্চে বসে চা খাওয়ার অনুভূতি অন্য রকম।সবাই মিলে চা, পাহাড়িদের কলা, কমলা খেয়ে গলা ভিজায়।
পাহাড়ের চূড়ো তখন হালকা কুয়াশা আচ্ছন্ন,শীতের শেষ বিকেল পেরিয়ে পশ্চিমের আকাশ বিদায়ী সিংহ-সূর্যদেবতা তখন পাহাড়ের কোলে হেলে পড়ছে মাত্র।সূর্যের সোনালি রঙে মোড়ানো সবুজ পাহাড়,দিন শেষে আর শুরুতে এরঙ যেন পুরো পাহাড় কে সোনায় মুড়িয়ে রাখে।অদূর সীমান্তে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে ভারতের মিজোরাম রাজ্যের ব্লু মাউনন্টেগুলো।
এত সুন্দর ভাবে সূর্যাস্ত এখানে হয় তা নীলের কল্পনার বাহিরে ছিলো। সুর্যের সোনালি কিরণ যেন তার গায়ে উপছে পড়ছে।সোনালি কিরণ যেন তাকে বরণ করছে।তার এখন সবুজ পাহাড়,নীল আকাশের সাদা মেঘে। এসব নিয়ে কবিতা আবৃতি করতে মন চাচ্ছে।যেই বলায় সেই কাজ। খুব জোরে জোরে সে কবিতা আবৃতি করছে,
পাহাড় ভাবে
আর একটু হলেই আকাঁশ ছোঁবো,
আকাশ ভাবে
ঐতো পাহাড়,দৃষ্টির সীমায়।
সবুজ ভাবে
বৃষ্ট এলো বলে,ঐ তো মেঘ।
হাত বাড়ালেই
আসবে নেমে অঝোর ধারায়
মেঘ আসে না
পাহাড় হাসে না,
নিশ্চল নিশ্চুপ পাহাড়ের
আকাশ ছোঁয়া হয় না।
সাগর ভাবে
ঐ তো বালিয়াডি
পা ছুয়ে দিলাম বলে,
পা আসে না।
পাহাড় কে কষ্ট দিয়ে পুষ্ট হওয়া
এযেন নির্জনতায় মেঘেদের
মস্ত এক লণ্ডভণ্ড খেলা।
বন হরিনীর বেশে।
সবাই করতালি শব্দে নীল পিছনে ফিরে।ধূসর হাত তালিয়ে দিয়ে দিয়ে এসে বলে
-“বাহ্! তুমি খুব ভালো কবিতা আবৃতি করতে পারো।
★★★
সবাই মিলে হোটেলে যায় রাতের খাবার খাওয়ার জন্য।রাতের খাবার ছিলো বাঁশ কুড়ুল সবজি,ব্যাম্বো চিকেন,লইট্রা ফ্রাই,হাসের মাংস ইত্যাদি। খাবার খাওয়ার পর সবাই মিলে সাজেকের সুনশান রাস্তা হেঁটে যায়।।চাঁদের আলো মুগ্ধতা ছড়িয়ে আছে সাজেকে। তাকিয়ে আছে তারা চাঁদের দিকে।কত টা শান্ত করে দিয়েছে তাদের মন,এই মুগ্ধতা তাদের চোখের কোণে ভিজিয়ে দিবে।
#চলবে
কাউছার স্বর্ণা
বিঃদ্রঃ এই গল্পে response কম। তাই ঠিক করেছি।আর এই গল্প লিখবো।