#স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায়
#পর্ব ৭
#লেখিকা সাদিয়া জান্নাত সর্মি
তা তোমার অভিমান হয়েছে আমার এই কথার জন্য বুঝি? আচ্ছা ঠিক আছে আমি সরি বলছি ওকে। এবার বলো কেমন আছো তুমি?
হৃদান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বলল,, এতোক্ষণ ভালো ছিলাম না কিন্তু এখন তোকে দেখে আমি ভালো আছি। তুই এখানে একা একা বসে কি করছিলি, কেউই তো নেই এখানে।
আমি হৃদান ভাইয়ের কথার কোন উত্তর দিলাম না, ভাবছি হৃদান ভাই কে কথা টা বলা ঠিক হবে কি না।যদি ওনাকে বলি আমার আর ভাইয়ার ব্যাপারে সব কিছু তাহলে তো হৃদান ভাই নিশ্চয়ই আমাকে সাহায্য করবে। আমাকে কিছু বলতে না দেখে হৃদান ভাই আবার জিজ্ঞাসা করল কিরে স্নিগ্ধ কিছু বলছিস না কেন?
আমি একটু আমতা আমতা করে বললাম,,
আসলে হৃদান ভাই তোমাকে আমি একটা কথা বলতে চাইছিলাম, বলবো কি।
হ্যা বল, এতে এতো আমতা আমতা করার কি আছে? তুই আমাকে বলবি না তো কাকে বলবি।
হৃদান ভাইয়ের সম্মতি পেয়ে আমি আমার সাথে আয়াশ আর নেহা যা যা করেছে তার সব কিছু বললাম সাথে ভাইয়াকে ও কিভাবে ঠকিয়েছে ওরা সেটাও বললাম।তার পর বললাম,,
প্লিজ হৃদান ভাই তুমি আমাকে সাহায্য করবে? ওই দুই বেইমান কে উপযুক্ত শাস্তি দিতে তুমি আমাকে সাহায্য করো। নাহলে ওরা যেই অন্যায় টা আমার আর ভাইয়ার সাথে করেছে সেটা তো অন্য কারো সাথেও করতে পারে টাকার জন্য।ওরা যা করেছে তার শাস্তি তো ওদের পেতেই হবে, দুটি নির্দোষ মানুষকে ঠকিয়েছে ওরা সেটা তো ঠিক নয় বলো।
এতক্ষণ ধরে হৃদান ভাই চুপ চাপ আমার কথা শুনছিলো। সেদিন হৃদান বুঝতে পেরেছিল যে আয়াশ ছেলে টা সুবিধার নয় কিন্তু ও যে এতো টা নিচ এটা মাথায় আসে নি তার। কিছুক্ষণ চুপ থেকে হৃদান ভাই বললো,,
ঠিক আছে তুই কোন চিন্তা করিস না। ওদের কে কিভাবে শিক্ষা দিতে হয় সেটা আমি দেবো ওদের, এতো বড় সাহস ওদের যে আমার স্নিগ্ধ কে কাঁদায়।এর শাস্তি তো ওদের পেতেই হবে নাহলে আমি শান্তি পাবো না। তুই কিছু চিন্তা করিস না আর, just wait and see আমি কি করি ওদের সাথে।
আমি মুচকি হাসলাম শুধু, আমাকে আর কিছু করতে হবে না,ওদের কে যা শাস্তি দেওয়ার সেটা হৃদান ভাই নিজেই দেবে।
রাত দশটার দিকে রুমে জানালার পাশে চুপচাপ বসে আছি আমি, আপাতত কিছু ভালো লাগছে না আমার। একটু আগে হৃদান ভাই মামনির সাথে দেখা করে চলে গেছে, মামনি ওনাকে থাকতে বলেছিল কিন্তু ওনার নাকি কি এক আর্জেন্ট কাজ আছে সেজন্য থাকতে পারবে না। সবকিছু কেমন যেন ঘোলাটে লাগছে এখন,মন না চাইলেও হৃদান ভাইয়ের কথা মাথায় আসছে। ওকে ছাড়া আর কিছু ভাবতে ভালো লাগছে না, কি কারণ সেটা নিজেও বুঝতে পারছি না। আচ্ছা আমি কি ওনার প্রেমে পড়ে গেছি না কি ওইরকম কথাবার্তা শুনে,নাহ এটা কি করে সম্ভব। আমি তো কখনো ওনাকে নিয়ে এইসব কিছুই ভাবিনি তাহলে প্রেমে কি করে পড়বো আর প্রেমে পড়া ভালো কথা নয় এতে পা ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।কি জানি এক টানে ওনাকে নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে হচ্ছে আজ, ভাবতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব, মনের মধ্যে একটা সুক্ষ্ম অনুভূতি কাজ করছে তার জন্য। উনি চলে যাওয়ায় হালকা খারাপ লাগছে জানি না কেন,কই আয়াশ কে নিয়ে তো এরকম কোন অনুভূতি হয় নি আমার কোনো খারাপ লাগা কাজ করে নি ওর জন্য। আজকাল কি যে হচ্ছে আমার কিছুই বুঝতে পারি না।
এইসব ভাবতে ভাবতে জানালার পাশে বসেই ঘুমিয়ে পড়লাম আমি।
সকাল বেলা ঘুম ভাঙল আমার,আড়মোড়া ভেঙ্গে পাশ ফিরে শোয়ার সময় ধপ করে চেয়ার থেকে মেঝেতে পড়ে গেলাম।আউচ কোমর টা গেল রে, ভালো করে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি আমি মেঝেতে বসে।তার মানে সারারাত এই ভয়ানক জানালার পাশে ঘুমিয়েছি। এটা ভাবতেই শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠলো আমার,বাপস্ ভাগ্যিস আমার রাতে ঘুম ভাঙেনি নাহলে চিৎকার শুরু করে দিতাম। একটু কষ্ট করে উঠে দাঁড়িয়ে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে গেলাম, কোমরে ভালই ব্যাথা পাইছি আজ।ফ্রেশ হয়ে এসে রুমের বাইরে গেলাম। বুড়ির মতো কোমর ধরে ধরে নিচে নামতে দেখে ভাইয়া মামনি কে বললো,,,
মামনি বাসায় কি নতুন বুড়ির আমদানি হয়েছে না কি?এই সকালে বুড়ির দেখা পেলাম যে।
ভাইয়ার কথা আমার উপরে জাদুর মতো কাজ করলো, কোমরের ব্যাথা সব উধাও হয়ে গেছে। ভাইয়ার কাছে গিয়ে ইচ্ছে মতো কিছুক্ষণ মারলাম, আমাকে বুড়ি বলা হুহ। মামনি এসে আমাকে থামিয়ে বললো,,কি ব্যাপার স্নিগ্ধা এই সকাল বেলা তোমরা ঝগড়া শুরু করেছো কেন?
আমি চোখ কপালে তুলে বললাম,, ঝগড়া কোথায় করলাম মামনি? আমি তো তোমার ছেলে কে মারছিলাম ঝগড়া করিনি তো।
সেটাই করছিলে কেন?
ও আমাকে বুড়ি বলেছে কেন? তোমার মেয়ে কি এই বয়সেই বুড়ি হয়ে গেছে।
ভাইয়া আমাদের কথার মাঝখানে বললো,, তোকে বুড়ি বলবো না তো কি বলবো? বুড়ির মতো কোমর ধরে হাটছিলিস তাই বুড়ি বলেছি।
আমি আর মুখ খুললাম না, মুখ খুললে বিপদ আছে আমার কপালে।যদি ভাইয়া শোনে যে আমি চেয়ার থেকে পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছি তাহলে সারাদিন আমাকে এই ব্যাপার নিয়ে পঁচাবে সেটা আমি চাই না। চুপ চাপ গিয়ে ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে মামনি কে ব্রেকফাস্ট দিতে বললাম। ভাইয়া আমার পাশে বসে বললো,,কি রে কাল কে হৃদানের সাথে এতোক্ষণ ধরে কি গল্প করলি?
আমি ভাইয়ার দিকে চোখ পাকিয়ে বললাম,, বোনের প্রেম কাহিনী শোনার এতো সখ কেন?
ভাইয়া একটু থতমত খেয়ে বললো,, না মানে তুই তো সব কিছু বলিস আমাকে তাই এইটাও বলবি ভাবলাম।
আমি একটু মুখ কালো করে বললাম,,
ওনার সাথে কোনো গল্প করিনি আমি, ঝগড়া করছি।
কি বললি তুই? আমার হবু বোনের বরের সাথে তুই ঝগড়া করছিস কেন।
কি আর করবো বলো? দুই দিন যেতে না যেতেই আবার বাসায় এসে হাজির হয়েছে তাই।
ভাইয়া কিছু টা রাগি গলায় বলল,,
নাহ তোর সাথে আর পারা যাবে না, তুই বদমাইশের হাড্ডি ওই হাড্ডিই থাকবি।
আমি দাঁত বের করে হাসলাম, মিথ্যা কথা বলেছি ভাইয়া কে তার পরেও ধরতে পারে নি এটা ভেবে মজা লাগছে আমার। একটু পরে ব্রেকফাস্ট শেষ করে বাগানের দিকে এলাম। গোলাপ গাছ গুলোতে অনেক গোলাপ ফুল ফুটেছে সুন্দর লাগছে খুব গাছ গুলো। গাছের পাশে একটা বেঞ্চে বসে একটা গোলাপ ফুল হাতে নিলাম। হালকা লাল রঙের ফুল, অদ্ভুত মিষ্টি একটা ঘ্রাণ আসছে ফুল থেকে।ফুলটার দিকে তাকিয়ে ভাবছি আচ্ছা এই ফুলের মতোই যদি মিষ্টি হয় হৃদান ভাই তাহলে কেমন হয়। কিন্তু উনি তো আমাকে তুই ছাড়া আর কিছু বলেনই না, যেখানে একটু ভালো করে কথাও বলতে পারেন না সেখানে এই এতো সুন্দর একটা ফুলের মতো মিষ্টি হওয়া দূরে থাক। আমার সব ধ্যান ধারণা এখন হৃদান ভাই জুরে, উনাকে নিয়ে এখন যত খুশি ভাবতে হবে নাহলে বিয়ে টা করবো কি করে। আস্তে আস্তে ভাই ডাকা বন্ধ করে দিতে হবে, কিন্তু ভাই না ডাকলে কি বলে ডাকবো নাম ধরে? নাম ধরে ডাকলে তো বয়স্ক মহিলারা আমাকে বেয়াদব মেয়ে বলবেন। এই বলবেন যে আমি স্বামীর নাম ধরে কেন ডাকছি, ওনারা যদি কোন ভুল ধরে তাহলে আমি ওদের কে বলবো যেন আমাকে বলে দেয় আমি উনাকে কি বলে ডাকবো?
চলবে…………. ইনশাআল্লাহ