#স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায়
#পর্ব ৫
#লেখিকা – সাদিয়া জান্নাত সর্মি
আটচল্লিশ ঘন্টা আগেও যদি মামনি আমাকে বলতো হৃদান ভাই কে বিয়ে করার কথা তাহলে আমি মুখের উপর না করে দিতাম মামনি কে কিন্তু এখন আর না বলার কোনো কারণ নেই আমার।আয়াশ আমাকে ঠকিয়েছে, আমাকে ছেড়ে চলে গেছে এক পৃথিবী পরিমাণ কষ্ট দিয়ে সে হয়তো ভাবছে খুব সুখে থাকতে পারবে। কিন্তু পারবে না,এক জন কে কষ্ট দিয়ে অন্য কাউকে নিয়ে সুখী হওয়া যায় না জীবনে। আমি এখন কি করবো বুঝতে পারছি না। বিয়েতে রাজি হবো কি হবো না মাথা কাজ করছে না আর,আজ যদি আমি বিয়েতে রাজি হয়ে যাই তাহলে হৃদান ভাই আমার হাজব্যান্ড হয়ে যাবে যেটা আমি কখনো ভাবিনি আর যদি বিয়ে তে রাজী না হই তাহলে বাবা মামনি কষ্ট পাবে।নাহ আমি এই বিয়ে টা করবো, আয়াশ কি ভেবেছে ও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে বলে আমি ভাঙ্গা মন নিয়ে ঘুরে বেরাবো তা আর হবে না। রিয়েল খুশি না হলেও বাইরে থেকে খুশি থেকে দেখিয়ে দিবো ওকে যে ও আমাকে ছেড়ে গেছে বলে আমি ভেঙে পরি নি। আমি আমার লাইফ গুছিয়ে নিয়েছি, আমাকে খুশি থাকতে দেখে ওরা হজম করতে পারবে না ব্যাপার টা।
তোর সাথে একটু কথা ছিল স্নিগ্ধা।
এই কথা শুনে আমি দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি হৃদান ভাই দাঁড়িয়ে আছে। আমি উঠে বসে হৃদান ভাই কে ভিতরে আসতে বললাম,হৃদান ভাই ভিতরে এসে বিছানার এক পাশে বসে বললো,
ফুপি কি তোকে কিছু বলেছে?
আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললাম, আমার উত্তর শুনে হৃদান ভাই কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
দেখ স্নিগ্ধা আমি যা বলছি তোকে সবকিছু সরাসরি বলছি। আমি তোকে ভালবাসি স্নিগ্ধা,হ্যা আমি জানি তুই আমাকে ভালোবাসিস না সেজন্য এই বিয়ে তে রাজী নাই হতে পারিস কিন্তু আমি তোকে বলছি তুই যদি আমাকে বিয়ে করিস তাহলে সারাজীবন তোকে এই বুকে আমি আগলে রাখবো। কখনো ছেড়ে যাবো না তোকে আর তোকে ছেড়ে যাওয়ার কোনো কারণ যে নেই আমার কাছে।তোর ওই স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায় আমি এমন ভাবে জড়িয়ে গেছি যেটা থেকে বের হওয়ার আর কোনো উপায় নেই আমার কাছে।
পরক্ষনেই হৃদান ভাই আমার হাত দুটো ধরে বললো, স্নিগ্ধা তুই বিয়ে করবি তো আমাকে? তখন শপিং মলে আয়াশ নামের ছেলে টা বললো ও না কি তোর এক্স বয়ফ্রেন্ড, বিশ্বাস কর ওই কথাটা শুনে আমার খুব রাগ হয়েছিল তোর উপর তাই ওমন আচরণ করেছিলাম তোর সাথে।তুইই বল তুই যাকে ভালোবাসিস সে যদি তোকে ভালো না বেসে অন্য কাউকে ভালোবাসে তাহলে তোর রাগ হবে কি না?প্লিজ স্নিগ্ধা তুই এই বিয়ে তে রাজী হয়ে যা, তুই আমাকে ভালো না বাসলেও ক্ষতি নেই আমি কখনো জোর করবো না তোকে।
আমি অবাক চোখে হৃদান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি, এই মানুষ টা কে বুঝতে কষ্ট হচ্ছে আমার।হৃদান ভাই আমাকে ভালোবাসে এটা কখনো উনার বিহেবিয়ার এ প্রকাশ পায় নি, সবসময় ঝগড়া করেছে আমার সাথে। একটু দোষ করলেই শাস্তি দিয়েছে আর সেই হৃদান ভাই বলছে কিনা সে আমাকে ভালোবাসে।আর এমন ভাবে বলছে যেন কোনো কিছু চাইছে আমার থেকে, আমাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে হৃদান ভাই একটু শুকনো ঢোক গিলে বললো,
কি হলো স্নিগ্ধা,বল তুই আমাকে বিয়ে করবি না?
আমি একটু চুপ থেকে বললাম,,দেখো হৃদান ভাই আমি যদি তোমাকে বিয়ে করতে নাও চাই তারপরও তোমাকে বিয়ে করতে হবে।কারন আমার বাবা মা নাহলে কষ্ট পাবে, কখনো ওদের কোনো কথা শুনিনি।আর আজও যদি ওদের কথা না মানি তাহলে ওরা খুব কষ্ট পাবে সেজন্য আমি এই বিয়ে টা করবো কিন্তু,,
কিন্তু কি স্নিগ্ধা?
আমি বিয়ে করবো তোমাকে কিন্তু এখন নয় আরো কয়েকমাস পরে। আমি এখন বিয়ের জন্য কোনো ভাবেই মানসিক ভাবে প্রস্তুত নই, আমি তো কখনো তোমাকে ভাই ছাড়া অন্য কোন নজরে দেখি নি সেই কারণেই তোমাকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে মেনে নিতে কিছুদিন সময় লাগবে। সেই সময় টা বিয়ের পরে নয় বিয়ের আগেই চাইছি আমি, এখন বাকি টা তোমার ইচ্ছে।
হৃদান ভাই খুব খুশি আমার কথা শুনে। অতিরিক্ত খুশি হলে গলার স্বর আবেগে আপ্লুত হয়ে উঠেছে তার। হাসি মুখে বললো,, তোর যতদিন সময় লাগে তুই নে আমার এতে কোনো সমস্যা নেই। তুই আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিস এটাই আমার কাছে অনেক। আমি গিয়ে আঙ্কেল ফুপি কে বলছি আমাদের বিয়ে এখন নয় আরো কিছুদিন পরে হবে।
হৃদান ভাই আমার রুম থেকে বেরিয়ে গেল, আমি ওনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।কি অদ্ভুত এই মানুষ টা, শুধু বিয়ে করতে রাজি হয়েছি বলেই এতো খুশি তাহলে যদি বলতাম ভালোবাসি তাহলে কি অবস্থা হতো কে জানে।
দুই দিন পরে আমি আমার ছোট্ট বাগানের বেঞ্চে বসে আছি। ওইদিনই হৃদান ভাই বিকেলে চলে গিয়েছিলেন, বাবা মামনি হৃদান ভাইয়ের কথায় সম্মত হয়েছে কিছুদিন পরে আমাদের বিয়ে দিতে। এই সময়ে ভাইয়া আমার পাশে বসে মাথায় একটা ধাক্কা দিয়ে বললো,,
কার ধ্যানে বসেছিস তুই?
আমি ভাইয়ার দিকে বোকার মত তাকিয়ে থেকে বললাম,,
কার ধ্যানে বসবো আবার?
তাহলে আমি যে এসেছি সেটা কি বুঝতে পেরেছিস তুই? আমার তো মনে হচ্ছে তুই হৃদানের ধ্যানে বসেছিস।
ভাইয়া, উল্টো পাল্টা কি বকছো এইসব। আমি আমার হবু ভাবীর ধ্যানে বসেছি, এতো বড় একটা ভাই আমার এখনো বিয়ে টা করতে পারলো না। বাবার কোনো আন্দাজ নেই না কি, এতো বড় একটা ছেলে ঘরে থাকতে আগে মাছুম বাচ্চা মেয়ে টাকে বিয়ে দিতে চাইছে।
আমার কথা শুনা মাত্রই ভাইয়া আমার মাথায় ঝড় বৃষ্টি শুরু করে দিলো। এই একটা বাজে অভ্যাস ভাইয়ার, কোনো কথা নেই বার্তা নেই ধুমধাম মাথায় মা’রতে শুরু করে। আমি ভাইয়ার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করে বললাম,,
আমি ঠিক বলেছি না ভাইয়া?
ভাইয়া আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বললো,, আমার কি এখনো বিয়ের বয়স হয়েছে না কি?
তো আমার বুঝি খুব বিয়ের বয়স হয়ে গেছে?
হয়েছেই তো। মেয়েদের বেশি দিন ঘরে রাখতে নেই নাহলে শেয়াল কুকুরে টেনে নিয়ে যেতে পারে।তাই তো আমি বাবাকে বলে তোর বিয়ের ব্যবস্থা করেছি।
আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম।আমি বুঝে গেছি শেয়াল কুকুর বলতে ভাইয়া কাকে বুঝিয়েছে,তাই আর কিছু বললাম না ভাইয়া কে।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে ভাইয়া বললো,, তোর জন্য একটা ভাবী পছন্দ করেছি আমি,দেখবি তাকে।
আমি ভাইয়ার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লাম, একটু আগেই বিয়ের কথা বললাম দেখে মারলো আমাকে আর এখন বলছে আমার জন্য ভাবী পছন্দ করেছে।
আমি বললাম,কই দেখাও আমার ভাবীকে।
ভাইয়া তার বুক পকেট থেকে একটা ছবি বের করে আমার হাতে দিলো। ছবির মেয়েটার দিকে আমি বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইলাম, মেয়ে টা আর কেউ নয় আমার বেস্ট ফ্রেন্ড নামের বেস্ট শত্রু নেহা। ভাইয়া শেষ পর্যন্ত কি না এই বেইমান টাকে পছন্দ করেছে নিজের বউ হিসেবে যার তিন দিন আগেই বিয়ে হয়ে গেছে। আমাকে ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো,, কেমন মেয়েটা পছন্দ হয়েছে তোর। অবশ্য তোর পছন্দ হবে এটা আমি আগে থেকেই জানতাম কারন মেয়ে টা তোর বেস্ট ফ্রেন্ড। তার পর ভাইয়া লাজুক স্বরে বলল,,
আর আমরা এক বছর হলো রিলেশনশিপ এ আছি।
আমি ভাইয়ার কথা শুনে নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারলাম না, এটা কি বলছে ভাইয়া।সে নেহার সাথে এক বছর ধরে রিলেশনে ছিল এই কথা টা ঠিক মানতে পারছি না আমি। থেমে থেমে ভাইয়া কে বললাম,, ভাইয়া তুমি এতো বড় একটা ভুল কি করে করতে পারলে? নিজের জীবনসঙ্গী নির্বাচন করতে তুমি এতো বড় ভুল করলে কেন?
ভাইয়া আমার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝল না তাই জিজ্ঞাসা করল,,কি বলছিস এসব তুই? আমি ভুল করেছি মানে।আরে বোকা নেহা আমাকে ভালোবাসে আর আমি নেহা কে ভালোবাসি।এতে ভুলের কি আছে?
আমি ভাইয়ার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম,, তার পর বললাম,, এবার আমি যা বলবো তার জন্য তুমি মানসিক ভাবে প্রস্তুত তো ভাইয়া? বিশ্বাস করতে পারবে তো আমার কথা?
হ্যা, তুই কি বলবি বল। আমি আমার বোন কে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করি।
আমি একটু চুপ করে রইলাম, তার পর বললাম,,,
ভাইয়া নেহার বিয়ে হয়ে গেছে তিন দিন আগে।তাও আবার কার সাথে জানো ওই ঠকবাজ আয়াশের সাথে।আর সবচেয়ে বড় কথা হলো আয়াশ আর নেহা অনেক দিন ধরে রিলেশনশিপ এ আছে। ওরা দুজনে প্ল্যান করে আমার কাছ থেকে টাকা আদায় করার জন্য আয়াশ আমার সাথে রিলেশন করেছিল। তোমার বোনের চোখের পানি তোমার পছন্দের মানুষ নেহা ঝরিয়েছে।
ভাইয়া আমার কথা শুনে আমার দিকে তাকিয়ে মুর্তির মতো বসে রইলো। একটু পরে বললো,, তুই কি বলছিস স্নিগ্ধা আমি ওকে ভালবাসি আর ওউ আমাকে ভালোবাসে।ও এটা কখনো করতে পারে না,ও আমাকে কথা দিয়েছে যে ও আমাকে বিয়ে করবে তাহলে ও আয়াশ কে কি করে বিয়ে করতে পারে। একটু আগেও তো ওর সাথে আমার কথা হয়েছে কই আমি তো ওইরকম কিছু বুঝিনি ওর কথায়।
চলবে………….. ইনশাআল্লাহ