স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায় পর্ব-০৩

0
1465

#স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায়
#পর্ব ৩
#লেখিকা- সাদিয়া জান্নাত সর্মি

আমি সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি বাবা মা ভাইয়া সহ আরো অনেকে আমাকে উইশ করেছে। আমি ওদের দিকে এগিয়ে গেলাম, বাবা আমার মাথায় হাত রেখে বললেন,আজ আমার মামনির বার্থডে তাই আপনাদের সবাইকে আমাদের বাসায় ইনভাইট করা হয়েছে এই আনন্দে যোগদান করার জন্য। তখন পিছন থেকে কে যেন বললো, ভুল বললে আঙ্কেল, আমাকে ইনভাইট করো নি তুমি। আমি বিনা ইনভাইটে চলে এসেছি ওয়েল কাম জানাও আমাকে। আমি ঘুরে তাকিয়ে দেখি বড় মামার ছেলে হৃদান ভাই দরজার ওখানে দাঁড়িয়ে আছে। ওকে দেখে আমি মুখ ভেংচে বললাম তোমাকে কি ইনভাইট করতে হয় না কি তুমি তো এমনিতেই চলে আসতে জানো, বিনা দাওয়াতের মেহমান তুমি। হৃদান ভাই আমাকে কিছু বলতে যাবে তখন বাবা বললেন,সব কথা বাদ পরে ওসব নিয়ে কথা বলা যাবে, এখন মামনি কেক কাটবে সবাই এখানে চলে এসো। আমি বাবার সাথে কেক টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম, আমার এক পাশে বাবা আরেক পাশে মা।আর বাকি সবাই পাশেই দাঁড়ালো, আমি আস্তে করে ফু দিয়ে মোমবাতি গুলো নিভিয়ে হাতে ছুরি নিয়ে কেক কাটলাম।সবাই হ্যাপি বার্থডে গান গাইছে কেক কাটার সময়, আমি কেক কেটে নিয়ে প্রথমে বাবা কে খাইয়ে দিলাম তার পর মাকে। ওনারও আমাকে কেক খাইয়ে দিলেন, এটা দেখে ভাইয়া মুখ কালো করে বলল,বাহ কি সুন্দর দৃশ্য, আচ্ছা স্নিগ্ধা তোর ভাই টা কি মরে গেছে ওকেও তো একটু কেক খাওয়াতে পারিস। আমি একটু কেক হাতে নিয়ে ভাইয়া কে খাইয়ে দিলাম, তার পর হৃদান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম তুমিও কি কেক খাবে আমার হাতে? আমার কথা শুনে তো হৃদান ভাই খুব খুশি হয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো, আমি এগিয়ে গিয়ে কেক খাইয়ে দিতে গিয়ে পুরো মুখে কেক মাখিয়ে দিলাম।হৃদান ভাই রেগে গিয়ে বলল এটা কি করলি তুই? খাওয়াতে বলেছিলাম মুখে মাখাতে নয়। আমি একটু জিভ ভেংচে নিয়ে চলে এলাম ওর সামনে থেকে।হৃদান ভাই শুধু রাগে ফুঁসতে লাগলো কিছু বললো না আর।

__________________________________

ছাদের এক কোণে আমি বসে আছি আর আরেক কোণে হৃদান ভাই। একটু আগেই সব মেহমান বিদেয় হয়েছে, আমি আপাতত এখানে বসে আছি শাস্তি হিসেবে। তখন মুখে কেক মাখিয়ে দিয়েছিলাম তার শাস্তি দিয়েছে হৃদান ভাই পুরো দুই ঘণ্টা ধরে ছাঁদে বসে থাকতে হবে। শাস্তি দিয়ে মনে হয় হৃদান ভাই শান্তি পায়নি তাই নিজেও এখন ছাদে এসে বসে আছে। আমি গালে হাত দিয়ে বসে বসে মনে মনে হৃদান ভাইয়ের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করছি,খাটাশের বাচ্চা আর কোনো কাজ পায়নি ছাদে বসিয়ে রেখেছে আমাকে।হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি আরো আধঘন্টা বসে থাকতে হবে এই মশার আড্ডায়। হাত পা মশা আদর করে ফুলিয়ে দিয়েছে, একটু ধীরে ধীরে হৃদান ভাই কে বললাম,, এবার যাই হৃদান ভাই? মশা কামড়াচ্ছে খুব হাত পা ফুলে গেছে আমার।
হৃদান ভাই ওখান থেকে উঠে এসে আমার পাশে বসে বললো, কেন তখন তো আমার মুখে খুব কেক মাখিয়ে দিয়েছিলি, তখন মনে ছিল না মশার কামড়ের কথা?
আমি একটু কাঁদো কাঁদো হয়ে বললাম,সরি আমি তো এমনি তোমার সাথে মজা করছিলাম। সত্যি বলছি আর কখনো এমন করবো না, যাই আমি?
হৃদান ভাই সামনের দিকে তাকিয়ে বললেন, ঠিক আছে যা। গিয়ে ঘুমিয়ে পড়, রাত জাগিস না আর।
হৃদান ভাইয়ের কথা শুনে এতোক্ষণ মনে মনে যাও বলছিলাম এখন মুখ ফসকে বলেই ফেললাম,, এতোই যখন দরদ আমার প্রতি তাহলে এতোক্ষণ ধরে মশার কিস খাওয়াইলা কেন?
হৃদান ভাই আমার কথা শুনে কি রিয়েকশন করলেন তা অন্ধকার থাকার জন্য বুঝতে পারলাম না, তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে রুমে চলে আসলাম। রুমে এসে মাথায় হাত দিয়ে মেঝেতে বসে পড়লাম, পুরো বিছানা জুরে গিফট ছড়ানো। ভাইয়া একটা কাজ ও ঠিক মতো করতে পারে না, বলেছিলাম গিফট গুলো আমার রুমে এনে রাখতে আর ও বিছানায় এনে রেখেছে। চোখে আর কোনো জায়গা দেখতে পেল না, জায়গা না পেলে আমার মাথাতেই রাখতো অসহ্য। গিফট গুলো সব বিছানা থেকে সরিয়ে টেবিলের উপর রেখে দিয়ে শুয়ে পড়লাম। খুব ঘুম পাচ্ছে এখন না ঘুমালে চোখ জ্বালা করবে পরে, একটু পরেই ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকাল নয়টার দিকে চোখে মুখে পানির ঝাপটায় ঘুম ভাঙল আমার।আড়মোড়া ভেঙে উঠে দেখি হৃদান ভাই হাতে পানির গ্লাস নিয়ে দাড়িয়ে দাত কেলিয়ে হাসছেন। বুঝতে পারলাম না আমি ঘুমাচ্ছি এতে সমস্যা টা কি ওনার, একটু রাগি ভাব নিয়ে বললাম,, এটা কি হৃদান ভাই? এই সাত সকালে আমার ঘুম টা না ভাঙ্গালে চলছিল না তোমার।
হৃদান ভাই আরো বেশি দাঁত গুলো বের করে দিয়ে বললো,নাহ চলছিল না।কি জানিস তুই কালকে আমাকে সবার সামনে সঙ বানিয়ে দিয়েছিলি তাই আজ আমি তোর ঘুম ভাঙিয়ে দিলাম।
কথা গুলো বলে হৃদান ভাই শীষ দিতে দিতে আমার রুম থেকে বেরিয়ে গেল, আমি ওনার যাওয়ার দিকে কটমট করে তাকিয়ে বললাম,দাড়াও কাল তোমাকে সঙ বানিয়েছি আর আজ তোমাকে কি যে করবো নিজেও বুঝতে পারছি না।
বিছানা থেকে নেমে সোজা ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলাম। গিফট গুলো রাতে দেখা হয় নি তাই ওগুলো নিয়ে দেখতে বসলাম। অনেক গিফট পেয়েছি কালকে, সবগুলোই অনেক অনেক সুন্দর।কতো মানুষের ভালোবাসা পেলাম কালকে, গিফট গুলো দেখতে দেখতে একটা নীল রঙের গিফট বক্সের উপর নজর আটকে গেল আমার। কৌতুহলী হয়ে গিফট বক্স টা খুলে ফেললাম,কপাল টা মনে হয় সত্যিই ফাটা আমার এই কারণে ভিতরে একটা খাম ছাড়া আর কিছুই ছিল না। ভেবে পেলাম না কোন হারকিপটা এই টা দিয়েছে, গিফট দিতে পারবে না ভালো কথা কেউ তো চায়নি। তাহলে এই খাম দিয়ে মজা করার কি দরকার ছিল, একটু আস্তে আস্তে খাম টি খুললাম দেখি ভিতরে একটা নোজ পিন রাখা।নোজ পিন দেখে হাসি পেল আমার,কি কিপটা মানুষ, শেষে কি না খামের ভেতর নোজ পিন রেখে এতো বড় একটা গিফট বক্স দিলো।নোজ পিন টা হাতে নিলাম, দেখে মনে হচ্ছে বেশি দাম নয় এটার তবে জিনিস টা সুন্দর খুব। গিফট বক্সে নাম খুঁজলাম কিন্তু কোনো নাম খুঁজে পেলাম না,যাক কে দেয় দিক আমার তো জিনিস টা পছন্দ হয়েছে।ড্রেসিন টেবিলের সামনে গিয়ে নোজ পিন টা পড়লাম, একটু বউ বউ ফিলিংস হচ্ছে।

চলবে………….. ইনশাআল্লাহ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে