#স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায়
#সুচনা পর্ব
#লেখিকা-সাদিয়া জান্নাত সর্মি
মাত্র কয়েক ফুট দুরত্বের ব্যবধানে দাঁড়িয়ে আছে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড নেহা আর আর আমার বয়ফ্রেন্ড আয়াশ যে কিনা বর্তমানে নেহার স্বামী। জন্মদিনে নিজের বয়ফ্রেন্ড কে অন্য একজনের হাজব্যান্ড হিসেবে দেখতে পাবো এটা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি।স্তম্ভিত হয়ে দেখছি ওদের দুইজন কে, মুখে কোন কথা নেই আমার। আমাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নেহা বললো,, স্নিগ্ধা ও আমার হাজব্যান্ড আয়াশ। বলেছিলাম না আমি তোকে তোর জন্মদিনে অনেক বড় একটা সারপ্রাইজ দিবো এটাই সেই সারপ্রাইজ। খুশি হয়েছিস তো তুই?
আমি নেহার কথা শুনে অনেক কষ্টে একটু হাসলাম, বুকের ভেতর ঝড় উঠেছে আমার নেহার কথাগুলো শুনে কিন্তু বাইরে তা বুঝতে দিলাম না। হাসি মুখে বললাম,
হ্যা রে আমি খুব খুশি হয়েছি এমন সারপ্রাইজ পেয়ে, সত্যিই খুব খুশি হয়েছি আমি,আরো বেশি খুশি হয়েছি যে তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে আমার ভালবাসার মানুষ টি কে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিলি এটা দেখে আমি খুব খুশি হয়েছি রে।আর আয়াশ তুমি তো আমাকে ভালবাসতে তাহলে তুমি আমাকে ছেড়ে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কে বিয়ে করলে কি করে? লজ্জা করছে না তোমার, আমাকে ছেড়ে আমারই বেস্ট ফ্রেন্ড কে বিয়ে করতে।
আয়াশ আমাকে কিছু বলতে যাবে তখনি নেহা ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
আয়াশ তোকে ভালোবাসে না স্নিগ্ধা,ও আমাকে ভালোবাসে। আসলে আমাদের দুজনের সম্পর্ক টা অনেক দিনের কিন্তু তুই সেটা জানতি না। আমাদের পরিবার যখন জানতে পারলো আমাদের সম্পর্কের কথা তখন ওরা মেনে নেয়নি।তাই আমরা পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেই কিন্তু তার জন্য টাকার দরকার ছিল।আর আমাদের কাছে টাকা ছিল না তখন আমিই আয়াশ কে বলি তোর সাথে সম্পর্কে জড়াতে যাতে তোর থেকে আমাদের টাকার ফায়দা হয়। আসলে আয়াশ টাকার জন্য তোর সাথে রিলেশন করে ছিল তোকে ভালোবেসে নয়।
নেহার কথাশুনে রাগে শরীর জলে গেল আমার,ঠাস করে একটা থা*প্প*র বসিয়ে দিলাম নেহার গালে। নেহা আমার এমন আকস্মিক থা*প্প*রে*র জন্য প্রস্তুত ছিল না তাই অনেক টা অবাক হয়ে গেল। গালে হাত দিয়ে আমার দিকে তাকালো, আমার রাগ ক্রমশ বাড়ছে তাই আরেক টা থা*প্প*ড় মারলাম ওকে।আয়াশ আমাকে আটকাতে আসলে ওর গালেও দু’টো থা*প্প*ড় বসিয়ে দিয়ে বললাম, লজ্জা করা উচিত তোদের দুজনের। ছিঃ এতো টা নিচ মানসিকতা তোদের আমি ভাবতে পারছিনা। নেহা তুই তো আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ ছিলি তাহলে তুই কেন আমার পিছন থেকে ছুরি মারলি? আমার সরল বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে এতো বড় একটা নাটক করলি,আরে তোদের টাকার দরকার ছিল তা বলতে পারতি আমাকে। কত টাকা লাগতো আমি দিতাম তোদের,তা না করে আমার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেললি কেন রে?আর আয়াশ তুই, তোকে আমি নিজের থেকেও বেশি ভালোবেসেছি খুব বিশ্বাস করেছি তোকে, তার এই দাম দিলি তুই?আর আমিও কি বোকা, তোদের দুজনের চালাকি আমি একটুও ধরতে পারিনি। তোর মতো একটা ছেলে কে আমি ভালোবাসি এটা ভাবতেই লজ্জা লাগছে আমার। আমার সরল বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে তোরা যা করেছিস তার জন্য আমি তোদের কখনো ক্ষমা করবো না, তবে এটা ভাবিস না যে আমি তোদের অভিশাপ দেবো, আমি তোদের কোনোদিন অভিশাপ দেবো না বরং এটা চাইবো যেন আল্লাহ তোদের খুব সুখে রাখে, কেউ যেন কখনো তোদের কোন কষ্ট না দেয়, আমার মতো এইভাবে যেন তোদের কোনোদিন ঠকতে না হয়। ভালো থাকিস তোরা, পরবর্তী জীবন টা খুব আনন্দের সাথে কাটাস।এই কথা গুলো বলে আমি চোখের কোণা বেয়ে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়েছিল সেটা মুছে নিয়ে পার্ক থেকে বেরিয়ে এলাম।পার্কের বাইরে ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে, আমি তাড়াতাড়ি করে এসে গাড়িতে উঠে বসে ড্রাইভার কে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বাসার দিকে যেতে বললাম। গাড়ি চলতে শুরু করলে আমি গাড়ির গ্লাস নামিয়ে দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলাম,যাদের আপন ভাবতাম তাদের কাছ থেকে এতো বড় আঘাত পেয়ে বেহায়া চোখ গুলো বাধা মানছে না আর,আপনা আপনি চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। খুব ভালো বাসতাম আয়াশ কে এক কথায় নিজের থেকেও বেশি। বাবা এটা জানতে পেরে আমাকে অনেক বার বলেছিল যে আয়াশের সাথে যেন আমি সম্পর্কে না জড়াই,আয়াশ ভালো ছেলে নয়, একটা খারাপ ছেলে ও।আমি বাবার কথা না শুনে বাবাকে বলেছিলাম যে আমি একদিন প্রমান করে দিবো আয়াশ খারাপ ছেলে না,ও বাবার মেয়ের যোগ্য একটা ছেলে। কিন্তু আয়াশ আমার সব ভুল ধারণা ভেঙ্গে দিয়ে আজ এটা প্রমাণ করেই দিলো যে ও সত্যিই একটা খারাপ ছেলে, আমার যোগ্য ও হয়ে উঠতে পারে নি। কেন যে তখন আমি বাবার কথা শুনিনি, তখন বাবার কথা শুনলে আজ হয়তো আমাকে এইভাবে ঠকতে হতো না।চোখ মুছে নিয়ে চুপচাপ বসে রইলাম, কিছুক্ষণ পর গাড়ি বাসার সামনে এসে দাড়ালো। আমি গাড়ি থেকে নেমে বাসায় ঢুকলাম, বাসায় ঢুকেই অনেকটা অবাক হয়ে গেলাম,পুরো বাসা অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। আমি কিছু বুঝতে না পেরে ছোট চাচ্চুর মেয়ে আফিয়া কে জিজ্ঞেস করলাম, এই আফিয়া আজ বাসা টা এইভাবে সাজিয়েছে কেন রে?
আফিয়া মুখ ভেংচে উত্তর দিলো, তোমাকে বলতে মানা আছে তাই বলতে পারবো না।
একটা চকলেট আফিয়ার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললাম, এবার তো বল?
আফিয়া আমার কান এগিয়ে দিতে বললো, আমি এগিয়ে দিলে ও কানের কাছে ফিসফিস করে বলল আপু আজ তো তোমার জন্মদিন, সেজন্যই বাসা এইভাবে সাজানো হয়েছে। তুমি এখন তোমার রুমে চলে যাও আর আমি যে তোমাকে বলে দিয়েছি সবকিছু এটা আবার কাউকে বলো না যেন।
আমি আফিয়ার কথা শুনে একবার ওর দিকে তাকালাম আরেক বার নিজের চারদিকে তাকালাম। তার পর নিজের রুমের দিকে চলে গেলাম আমি। রুমে এসে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে হাতটার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম, এই হাত দিয়ে একটা ছুঁ*চো কে ছুয়েছি আমি ছিঃ। এক্ষুনি ধুয়ে ফেলতে হবে হাত টা, নাহলে গন্ধ করবে। ওয়াশরুমে গিয়ে পুরো আধঘন্টা সময় লাগিয়ে হাত ধুয়ে বাইরে এলাম। অনেক ঘসাঘষির কারনে হাতের ফর্সা চামড়ার উপর লাল দাগ পড়ে গেছে,একটা জোরে নিঃশ্বাস ফেলে বেডে বসে পড়লাম।
চলবে…………… ইনশাআল্লাহ