সে আমারই পর্ব-৩৮+৩৯+৪০

0
310

#সে_আমারই
#মোহনা_মিম
#পর্বঃ৩৮

রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে আবরার পরিবার ইততেয়াজ ম্যানসন থেকে বিদায় নিল। তার চেয়েছিল দুই মেয়েকে সাথে নিতে কিন্তু তারা কেউই দেয়নি। অন্য কোনো দিন যাবে বলে তাদের বিদায় দিয়েছে। তূরাগ এতক্ষণের আটকে রাখা শ্বাস ছাড়ল। ফারনাজকে তারা সাথে নিয়ে গেলে তার সমস্যা হতো খুব। বোকা বউয়ের রাগ ভাঙানো যে এখনো বাকি। সকলে একে একে ঘুমাতে চলে গেল। কেবল বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইল সে। ফারনাজ এখনো গেস্ট রুমের দরজা বন্ধ করে বসে আছে। এক ফাঁকে দৃষ্টি তাকে খায়িয়ে এসেছিল কিন্তু পরেই আবার দরজা এঁটেছে সে। তূরাগ কি একবার ডাকবে? যদি না খোলে? সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে দেখল দৃষ্টি সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলো। তূরাগ একটু হাসার চেষ্টা করে বলল,

“ঘুমাওনি?”

“হ্যাঁ ঘুমাব। আপনাকে এটা দিতে এলাম।”

বলেই তার দিকে একটা চাবি এগিয়ে দিল। তূরাগ হাত বাড়িয়ে তা নিয়ে বলল,

“এটা কীসের চাবি?”

“আপনার গন্তব্যের।”

সে মুচকি হেসে পুনরায় সিঁড়ি বেয়ে চলে গেল। তূরাগ একটু লজ্জা পেল। কিন্তু মনে মনে দৃষ্টির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল। সূক্ষ্ম শ্বাস ফেলে গেস্ট রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। চাবি ঘুরিয়ে খট শব্দে দরজা খুলে ফেলল। ভেতরে প্রবেশ করে আবার দরজা বন্ধ করে দিল। আজ দৃষ্টি না থাকলে যে কি হতো? এই ডুপলিকেট চাবিরই তো দরকার ছিল। বিছানার দিকে চোখ পড়তেই দেখল তার কাঙ্ক্ষিত রমনী ঘুমিয়ে আছে। যে তার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী। সে মৃদু হেসে এগিয়ে যায়। আলতো আলোয় তার মুখশ্রী ভীষণ আকর্ষণীয় লাগছে। তূরাগ সংকোচ বিহীন তার পাশে গিয়ে আধশোয়া হয়। হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দেয় নরম গাল। ফারনাজ নড়ে ওঠে। ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলে,

“কে?”

তূরাগ ফিসফিসিয়ে বলে,

“তোমার স্বামী।”

সে আশা করেছিল ফারনাজ রিয়্যাক্ট করবে। হয় চিৎকার করবে নয়তো হতভম্ব হয়ে উঠে বসবে। কিন্তু এসবের কিছুই হলো না। ফারনাজ নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল,

“ওহ! আপনি? ঘুমিয়ে পড়ুন।”

তূরাগ নিজেই হতভম্ব হয়ে গেল। টেনে তাকে তুলে বলল,

“ঘুমিয়ে পড়ুন মানে কি? তুমি অবাক হওনি? আমার উপর রাগ নেই? মনে কোনো প্রশ্ন নেই?”

“উফ্! দিলেন তো আমার ঘুমটা ভাঙিয়ে?”

“আমি যা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দাও, ফারনাজ।”

ফারনাজ চোখ মেলে তার চোখে চোখ রাখে। বলে,

“আমার চশমা কই?”

তূরাগ হতাশ হয়। পাশের ছোট টেবিল থেকে তার চশমা হাতে নিয়ে চোখে ঠেলে দেয়। ফারনাজ ভালো করে তাকে দেখে নিয়ে বলে,

“কোনো কিডন্যাপারের সাথে আমি কথা বলতে ইচ্ছুক নই।”

তূরাগ বিস্ময়ে চোখ বড় করে তাকায়। অস্ফুট স্বরে বলে,

“কি বললে!”

“হ্যাঁ ঠিকই তো বললাম। আপনি একটা কিডন্যাপার আর আমাকে দশ দশবার কিডন্যাপ করেছেন। আবার ছেড়েও দিয়েছেন।”

তূরাগ দিশেহারা হয়ে বলে,

“তুমি! মানে তুমি কীভাবে জানলে?”

“মাথা মোটা মেয়ে একমাত্র কিডন্যাপারই আমাকে বার বার বলত। আর আপনার পারফিউমও একদম তার মতো। তারপর আজই প্রমাণ হয়ে গেল আপনি আমাকে ভালোবাসেন। অতএব আপনি সেই কিডন্যাপার।”

তূরাগ বোকা বনে গেল। বলল,

“প্রমাণ হলো মানে কি! তুমি আগে থেকেই টের পেয়েছিলে!”

“হ্যাঁ। কিডন্যাপারের কথায় কাজে আমি একটা অপ্রকাশিত ভালোবাসা খুঁজে পেতাম। আর আপনিই যেহেতু কিডন্যাপার সেহেতু..”

“ওয়েট, আজ বিকেলে রেস্টুরেন্টের ওসব কি ছিল?”

ফারনাজ দাঁত কেলিয়ে ফিসফিস করে বলল,

“নাটক।”

“কিহ! আমাকে বোকা বানালে!”

সে হাই তুলে কাত হয়ে শুয়ে পড়ল আবার। বলল,

“বোকা না বানালে আপনার পেটের কথা মুখে আসত না। কিন্তু এটা ভাবিনি পাগল হয়ে আমাকে বিয়ে করে নেবেন। পাগল একটা!”

সব বুঝতে পেরে তূরাগ হাসে। সে নিজেই বোকা মেয়েটার কাছে বোকা হয়ে গেল। পেছন থেকে জাপ্টে ধরে ঘাড়ে মুখ গুঁজল। মৃদু কণ্ঠে বলল,

“আগেও তো তোমার রুমে যেতাম। সেটা ধরতে পারলে না কেন?”

“কিহ! আপনি আমার রুমে যেতেন! কেন?”

“তোমার ঘুমন্ত মুখ দ্যাখার লোভ সামলাতে পারতাম না, তাই।”

বলতে বলতে তার শুষ্ক অধর তার কাঁধ ছুঁয়ে যায়। সে পুনরায় বলে,

“বিয়েতে রাজি হয়েছ কেন? মানা করে দিলে তো কেউ জোর করত না।”

ফারনাজের শরীর শিরশির করে ওঠে। ভারী নিঃশ্বাস ফেলে বলে,

“আপনার মতো বোকা বুঝবে না।”

তূরাগ ফের হাসে। বোকা মেয়ে তাকেই বোকা বলছে! থেমে থেমে বলে,

“ভালোবাসো?”

ফারনাজ লাজুক হাসে। তা তূরাগের দৃষ্টিগোচর হয় না। সে বলে,

“না তো, ভালোবাসি না।”

তূরাগ আরও শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরে বলে,

“আমি তো বাসি। তাতেই হবে।”

সে ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে লম্বা শ্বাস নেয়। ফিসফিসিয়ে ডাকে,

“ফারনাজ?”

চোখ বন্ধ করে জবাব দেয় সে,

“হু?”

“তুমি জানতে চায়তে না, যে আমি না দেখেও কীভাবে তোমার উপস্থিতি টের পাই? তার উত্তর হলো, তোমার গায়ের এই মেয়েলী সুবাস আমার বড্ড চেনা, বড্ড প্রিয়। তাই তো আমি সহজেই ধরে ফেলি।”

ফারনাজ হাসে। তবে মুখ ফুটে বলে না যে তার শরীরের ঘ্রাণ তারও প্রিয়। তূরাগ তাকে পেঁচিয়ে ধরে চোখ বোজে। এখন থেকে সে আরাম করে ঘুমাবে। রাত জেগে ফারনাজের কথা ভাবা লাগবে না। কারণ পুরো ফারনাজটাই এখন তার, একান্ত তার। তার তো চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে, “সে আমার হয়েছে। আজ থেকে সে পুরোপুরি আমারই। শুধু আমার।”

অন্য রকম একটা সকাল। সব কিছু নতুন অনুভূত হয়। পাশে থাকা মানুষটা পুরোনো ঠিকই তবে সম্পর্ক টা নতুন। এই অনুভূতি নতুন, এই সকাল নতুন। তার বাহুডোরে নিজেকে আবিষ্কার করা নতুন। তার ঘুমন্ত মুখশ্রীর পানে চেয়ে মুগ্ধ হওয়া নতুন। হৃদয়ে এক অদ্ভুত প্রশান্তি লাভ করা নতুন। এই লাজুক হাসিটাও নতুন। ভাবতে ভাবতে ফারনাজ হেসে ফ্যালে। হাত বাড়িয়ে সংকোচ বিহীন ছুঁয়ে দেয় তার চোখের পাতা, নাকের ডগা। এলোমেলো করে দেয় চুল। সে নড়ে ওঠে। ফারনাজ আলগোছে উঠে পড়ে। লোকটা যে এতো জোরে চেপে ধরে ঘুমিয়ে ছিল! তার শরীরের হাড্ডি বোধহয় নড়ে গিয়েছে।

ফ্রেশ হয়ে রুম ছেড়ে বের হলো। তূরাগকে ডাকল না। রান্না ঘরে দুই জা মিলে নাস্তা তৈরি করছেন। তাদের সাথে হাত লাগাচ্ছে দৃষ্টি। সে কাজের ফাঁকে ফারনাজকে দেখে নিল। মুখটা গম্ভীর করে বলল,

“শশুর বাড়িতে এতক্ষণ ঘুমিয়ে থাকলে চলবে না, ছোট বউ। কাজে হাত লাগাও। এখন থেকে আমি যা বলব তাই করতে হবে। মনে রেখো আমি কিন্তু আমি এ বাড়ির বড় বউ এবং তোমার বড় জা।”

মিসেস সাইমা এবং মিসেস অনা হেসে ফেললেন। ফারনাজ হা করে তাকায়। মিসেস সাইমা দৃষ্টির কান টেনে দিয়ে বললেন,

“দুষ্টুমি করিস বড় বোনের সাথে? এসব কেমন কথা?”

দৃষ্টি মুখ কুঁচকে বলে,

“আমি তো আপুর বড় তাই না? বয়সে না হলেও সম্পর্কে বড়। তাই ওর উচিত আমাকে সম্মান করে চলা।”

ফারনাজ তার বাহুতে মৃদু চাপড় মে’রে বলে,

“সম্মান নেন বড় জা।”

হাসাহাসির মধ্যে নাস্তা তৈরি হয়ে গেল। হঠাৎ তূরাগের কণ্ঠে ফারনাজ চমকে উঠল। সে নির্লজ্জের মতো চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে তাকে ডাকছে। দৃষ্টি মিটিমিটি হাসে। ধাক্কা দিয়ে বলে,

“যাও ছোট জা, দ্যাখো আমার দেবরের কি লাগে?”

ফারনাজ তার দিকে চোখ ছোট ছোট করে চেয়ে চলে গেল। খালামনি দের সামনে লজ্জায় পড়ে গেল এক প্রকার। সোজা তূরাগের রুমে গেল। সে এখান থেকেই ডাকছে। ফারনাজ রুমে প্রবেশ করে ভ্রু কুঁচকে বলল,

“কি হয়েছে? এভাবে চেঁচাচ্ছেন কেন? কি ভাবল সবাই?”

“আশ্চর্য! সবাই কি ভাবল কি ভাবল না তোমার সে খেয়াল আছে। অথচ আমি বেচারার কথা মনে নেই? ঘুমের মধ্যে ফেলে রেখে চলে গেলে! জানো এর জন্য আমি কি শাস্তি দিতে পারি?”

বলতে বলতে সে দরজা আঁটে। ফারনাজ ভড়কায়। তূরাগ এগোয়। সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীর পানে চেয়ে রয় এক দৃষ্টিতে। লজ্জায় আড়ষ্ট হয় সে। এ কেমন অদ্ভুত দৃষ্টি! তূরাগ ঘনিষ্ঠ হয়। কোমল কোমর পেঁচিয়ে কাছে টানে। কানের কাছে উষ্ণ শ্বাস ছেড়ে ফিসফিসিয়ে বলে,

“আজ একটা কনসার্ট আছে আমার। সেখান থেকে ফিরে আমার স্ত্রীকে সম্পূর্ণ ভাবে আমার রুমে দেখতে চাই। রুমে প্রবেশ করতেই যেন আমার প্রিয় মেয়েলী ঘ্রাণটা আমি পাই। সে যেন গেস্ট রুম ছেড়ে স্বামীর রুমে চলে আসে। মনে থাকবে?”

সে ভারী শ্বাস ফেলে মাথা দোলায়, খুব মনে থাকবে। তূরাগ ফের বলে,

“তাকাও আমার দিকে?”

ফারনাজ দৃষ্টি ওঠায় না। তূরাগ তার চিবুক স্পর্শ করে মুখ উঁচু করে। দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলতেই অকস্মাৎ অধরে অধর মিলে যায়। ফারনাজ কেঁপে ওঠে। আঁকড়ে ধরে তার কাঁধের অংশ। মুদে আসে তার চক্ষুদ্বয়। নিজের তৃষ্ণা মিটিয়ে তূরাগ ছাড়ে। ঘন শ্বাস ফ্যালে ফারনাজ। লজ্জায় মিইয়ে যায়। তূরাগ কপালে কপাল ঠেকিয়ে মৃদু কণ্ঠে বলে,

“আমার বউ আমার সব। আমি যখন তখন যেখানে খুশি যেভাবে খুশি তাকে ছোঁবো, চুমু খাব। সে যেন মানা না করে।”

চলবে,

#সে_আমারই
#মোহনা_মিম
#পর্বঃ৩৯

বেশ ক’দিন যাবত ফারদিনের সঙ্গে কোনো বাক্য বিনিময় করে না পায়েল। অতি সূক্ষ্ম ভাবে এড়িয়ে চলে তাকে। এর একটা কারণ অবশ্য আছে। সে চায়, ফারদিন নিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখা অনুভূতি প্রকাশ করুক। তাকে জানিয়ে দিক নিজের মনের কথা। পায়েল যদিও বোঝে, কিন্তু সে শুনতে চায়।

ফারদিন আজ দ্রুত ফিরেছে। সবার সাথে বসে রাতের আহার সমাপ্ত করেছে। অতঃপর রুমে দাঁড়িয়ে বসে থেকেও যখন পায়েলের দ্যাখা পেল না, তখন সে বাইরে এসে নিচে তাকায়। দ্যাখে, টিভির সামনে বসে আছে তারা। বর্ষণ আর বন্যা টিভি দেখছে তাদের সঙ্গ দিচ্ছে সে। ফারদিন ছোট্ট শ্বাস ফ্যালে। রুমে না এসে বাচ্চাদের সাথে কার্টুন দ্যাখার কোনো মানে হয়? সে ডাকে,

“পায়েল! রুমে এসো।”

অন্য সময় হলে পায়েল লজ্জায় মিইয়ে তৎক্ষণাৎ ছুটে যেত। কিন্তু এখন সে যাবে না।‌ সে না শোনার ভান ধরে পড়ে রইল। ফারদিন এবার গটগটিয়ে নেমে আসে। ছোট ভাইকে দেয় এক ধমক,

“এখনো বসে টিভি দেখছিস! কাল স্কুলে যেতে হবে না? যা, এখনই গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।”

ভাইয়ের বকা খেয়ে বর্ষণ সুড়সুড় করে চলে গেল। কথার অমান্য করলে হয়তো কয়েক ঘা খেতে হতো। ফারদিন এবার বন্যার দিকে তাকায়। সে ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে আছে। ছোট্ট করে বলে,

“ভাইয়া, আমি আরেকটু মোটু পাতলু দেখি?”

ফারদিন আদুরে কণ্ঠে বলল,

“রুমে যাও, বোনু। অনেক রাত হয়েছে না? এখন ঘুমানোর সময়। যদি তুমি ঠিক সময়ে না ঘুমাও তাহলে তুমি ঠিক সময়ে উঠতে পারবে না। আর সবাই তোমাকে পঁচা মেয়ে বলবে। যাও ঘুমাও।”

বন্যা ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেল। সত্যিই তো সকাল সকাল ঘুম থেকে না উঠলে তো সবাই পঁচা বলবে। সে তো বইয়ে পড়েছে “আরলি টু স্লিপ অ্যান্ড আরলি টু রাইজ।” সে ভদ্র মেয়ের মতো উঠে চলে গেল। এবার বাকি রইল পায়েল। ফারদিন শীতল কণ্ঠে বলল,

“তোমাকে কি আলাদা ভাবে বলতে হবে রুমে যাবার জন্য? চলো, রুমে চলো।”

পায়েল ধপ করে উঠল ধপ ধপ পা ফেলে চলে গেল। ফারদিন টিভি অফ করে রুমের দিকে পা বাড়ায়। যেতে যেতে ভাবে, পায়েলের সাহসটা বেড়েছে অনেক। এভাবে দিনের দিন তাকে ইগনোর করার কৈফিয়ত আজ নেবে সে। রুমে ঢুকে শব্দ করে দরজা আটল। রুম শূন্য। সে এগিয়ে ব্যালকনিতে যায়। পায়েল দাঁড়িয়ে সেখানে। দৃষ্টি কৃষ্ণ বর্ণ গগনে নিবদ্ধ। ফারদিন আলগোছে তার পেছনে দাঁড়ায়। বলিষ্ঠ হাত দুটো দ্বারা পেঁচিয়ে ধরে কোমর ভেদ করে উদর। অনুভব করে তার কাঁপুনি। মৃদু হাসে সে। নাক ডুবিয়ে দেয় চুলের ভাঁজে। অস্পষ্ট কণ্ঠে বলে,

“সমস্যা কি তোমার? কি চাও?”

পায়েল ফাঁকা ঢোক গেলে। ফারদিন এমন কাছে থাকাকালীন তার কণ্ঠ রোধ হয়ে আসে। তবুও সে গলায় আওয়াজ এনে বলে,

“আপনার মনের কথা জানতে চাই।”

ফারদিন আবার হাসে। রহস্য করে বলে,

“আমার মনের কথা শুনলে কিন্তু শাস্তি পেতে হবে। আমার মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখা কথা শোনার অপরাধে শাস্তি।”

পায়েল দমে না, বলে,

“মেনে নেব সকল শাস্তি। তবুও আমি জানতে চাই।”

সে হাতের বাঁধন আরও শক্ত করে। ফিসফিসিয়ে বলে,

“শুনতে চাও? তবে শোনো, আমি তোমাকে ভালোবাসি।”

পায়েলের শীর দাড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেল। প্রশান্তিতে চোখ বুজে এলো। সে মৃদু কণ্ঠে বলল,

“কবে থেকে?”

“যখন থেকে তুমি ভালোবাসো।”

“আমি তো বলিনি।”

“তবে আজ বলো।”

পায়েল তার বুকে শরীর এলিয়ে দেয়। বলে,

“বলার প্রয়োজন কি? বুঝে নিলেই তো হয়।”

“আমাকে কেন বলতে হলো তাহলে? তুমি কি বোঝো না?”

সে ঘুরে দাঁড়িয়ে বুকে মুখ গোঁজে। জড়ানো কণ্ঠে বলে,

“ভালোবাসি তো।”

ফারদিন চওড়া হাসে। কপালে দীর্ঘ চুমু এঁকে বলে,

“এবার তাহলে শাস্তি গ্রহণ করো, প্রস্তুত?”

“প্রস্তুত।”

ফারদিন তাকে শূন্যে উঠিয়ে রুমে পা বাড়ায়। তাদের রাতের শুরু হলো মধুর আলিঙ্গনে। পায়েল শিহরণে বারংবার আঁকড়ে ধরে তার প্রাণপ্রিয় স্বামীকে। তাদের ভালোবাসা দেখে কি চাঁদ মুখ ঢাকবে? কিন্তু চাঁদই তো নেই, আজ তো অমাবস্যা। তাদের ভালোবাসায় নজর দেওয়ার মতো কেউ নেই। আঁধারে পায়েলের লজ্জা মাখা মুখ ঢাকতে কষ্ট হয় না।

পরবর্তী দিন গুলো বেশ দ্রুত যায়। দৃষ্টি এবং পায়েলের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা সমাপ্ত হয়েছে ইতোমধ্যেই। তারা আবারও ব্যস্ত হয়ে পড়েছে নিত্য দিনের ক্লাসে। ফারদিন পুরোপুরি বাবার ব্যবসায় যোগ দিয়েছে। তবে মাঝে মধ্যে সে শশুর বাড়ির জামাই আদর খেয়ে আসতে ভোলে না। শশুর বাড়িতে যাবার জন্য তার বউয়েরও দরকার পড়ে না। ইচ্ছে হলেই চলে যায়। কয়েক বেলা ভালো মন্দ খেয়ে তাদের ইচ্ছে মতো জ্বালিয়ে আসে। হাসি ঠাট্টার ছলে সোহেলকে কয়েকটা চ’ড় ঘু’ষি দিয়েও আসে। সোহেল যখন ভ্যাবাচ্যকা খেয়ে রেগে তাকায়। তখন সে হাসতে হাসতে বলে,

“আরে শালা বাবু, মনে নিও না। হাসি মজার মাঝে কত হাত চলে!”

তূরাগ ব্যস্ত তার কনসার্ট নিয়ে। মাঝে মধ্যে বাবার সাথে অফিস থেকে ঘুরে আসে। দুটো কাজই তাকে সামলাতে হবে। কেননা আফরান বাবার ব্যবসার দিকে ফিরেও তাকাবে না। বিজনেস করার ইচ্ছে থাকলে সে কষ্ট করে ডাক্তারি পড়ত না।
বাকি রইল ফারনাজ, পাক্কা গিন্নির মতো সংসার করার চেষ্টা করছে সে। তূরাগ তাকে জিজ্ঞেস করেছিল যে সে কিছু করতে চায় কিনা? কিন্তু সে মানা করে দিয়েছে। আপাতত সংসার করাই তার মূল উদ্দেশ্য। তূরাগ আপত্তি করে না। বাড়ি ফিরে যখন স্ত্রীকে ছুটে এসে ঠাণ্ডা পানির গ্লাস এগিয়ে দিতে দ্যাখে! যখন সে তার আঁচল টেনে তার কপালের ঘাম মুছে দেয়! তখন তার হৃদয়ে সুখেরা হানা দেয়। আদর মিশিয়ে কপালে অধর ছুঁইয়ে দেয় তার।

দৃষ্টির দিন কাটে কলেজ যাওয়া আসা আর খালামনির হাতে হাতে টুকটাক কাজ করে দিয়ে। মাঝে মধ্যে তাকে রান্না করতেও হয় কারণ আমিনুল ইততেয়াজ পরোক্ষভাবে বুঝিয়ে দেন তিনি বউমার রান্না খেতে চান। কিন্তু সরাসরি কখনো বলেন না। এতে তার ইগোতে লাগে। দৃষ্টি অগোচরে হাসে। তার শশুর মশাই যেন গলেও গলে না। শুধু এই মানুষটা ছাড়া আর সবার চোখের মণি হয়েছে সে।

আজ রাতে কোনো রকম খেয়ে সে রুমে গেল। আফরানের এই রুমটাকে এখন পর মনে হয় না। কখনো মনেই হয় না যে এটা তার রুম নয়। মনে হবেই বা কীভাবে? ওয়ারড্রবে তার জামাকাপড়, ড্রেসিং টেবিলে তার জিনিস পত্র, ওয়াশ রুমে তার শ্যাম্পু, তার ফেইস ওয়াশ, তারই বডি ওয়াশ। ব্যালকনিতে তার ফুলের গাছ, তার দোলনা। আফরানের টুকটাক জিনিস পত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এদিক ওদিক। দৃষ্টি মাঝে মধ্যে তা নাড়াচাড়া করে। সে ব্যালকনিতে তার সব চেয়ে পছন্দের দোলনায় গিয়ে বসে, যেটা তার শশুর মশাই তাকে দিয়েছেন। এখানে বসে থাকা তার পছন্দের কাজের মধ্যে একটা। শীতল হাওয়া এসে ছুঁয়ে দেয় তাকে। মন প্রাণ জুড়িয়ে যায়। মন মস্তিষ্কে আফরানের চলাফেরাও হয়তো বন্ধ হয় কিছু মুহূর্তের জন্য। সে নিজেই নিজেকে অনুভব করে। দুলতে দুলতে এক সময় সে দোলনায় মাথা ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। রুমে গিয়ে ঘুমানোর কথা দিব্যি ভুলে যায়।

ঘুমের মধ্যে ঠাণ্ডা অনুভূত হয়। ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে ওঠে সে। এসির পাওয়ার টা এতো কমে গেল কীভাবে? গায়ে কমফর্টার থাকা সত্ত্বেও শীত লাগছে! দৃষ্টি নড়ে চড়ে উঠে গুটিয়ে যায়। কাছে উষ্ণতা অনুভব হওয়ায় আরেকটু এগিয়ে যায় উষ্ণতার উৎসের নিকট। হঠাৎই টনক নড়ে তার। চমকে ওঠে। সে দোলনায় ঘুমিয়ে পড়েছিল, স্পষ্ট মনে আছে তার। তাহলে বিছানায় কি করে এলো? আর তাকে কীসে পেঁচিয়ে রেখেছে? আতঙ্কে জমে গেল সে। গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেল মুহুর্তেই। সে ভুতে বিশ্বাস করে না। কিন্তু এখন তার সাথে যে ঘটনা ঘটছে তা কি অপ্রাকৃতিক? নাকি প্রাকৃতিক? ভারী ঘন শ্বাস গলায় আছড়ে পড়ে তার। দম বন্ধ করে সে কাঁপা কণ্ঠে আওড়ায়,

“ককে!”

জবাব আসে না। সে এবার চিৎকার দেওয়ার প্রস্তুতি নেয়। গলা ফাটিয়ে চিৎকার দেওয়ার পূর্বেই তার কোমল ঠোঁট বলিষ্ঠ হাতের নিচে চাপা পড়ে। কানে আসে ঘুম জড়ানো কণ্ঠস্বর,

“চেঁচাবি না খবরদার। আমি কি চেঁচানোর মতো কিছু করেছি? কিছুই তো করতে পারলাম না। ভীষণ ক্লান্ত আমি। চেঁচালে সবাই ভাববে অন্য কিছু। বুঝেছিস কি ভাববে? আমি ভালো, ভোলাভালা ছেলে লজ্জায় পড়ে যাব। চুপ!”

দৃষ্টির শরীর হিম হয়ে আসে। কার কণ্ঠস্বর শুনল সে? এটা কি আদৌ সত্যি নাকি স্বপ্ন। সে হাতের নিচে চাপা থাকা ঠোঁট নাড়িয়ে বলার চেষ্টা করে,

“কে!”

হাতটা সরে যায়। তা গিয়ে পেঁচিয়ে যায় তার উদরের উপর দিয়ে। কানে উষ্ণ নিঃশ্বাসের সাথে আসে শীতল ফিসফিসানো আওয়াজ,

“তোর বাচ্চার বাপ।”

চলবে,

#সে_আমারই
#মোহনা_মিম
#পর্বঃ৪০

“দৃষ! তুই এতো সকালে রান্না ঘরে কেন? নাস্তা বানানোর এখনো তো অনেক সময় আছে।”

এখন দৃষ্টি কীভাবে বলবে যে তার ছেলেকে দেখতে দেখতেই রাত পার হয়েছে তার। চোখের পাতা এক করতে পারেনি সারা রাত। লোকটাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছে। হয়তো তার চাপ দাঁড়ির প্রতিটা চুলও গুনে ফেলেছে। সে হাতের কাজ করতে করতে মৃদু হেসে বলে,

“ঘুম তাড়াতাড়ি ভেঙে গিয়েছে, খালামনি। তাই ভাবলাম শুধু বসে না থেকে নাস্তা বানাই। এই তো হয়ে এসেছে প্রায়।”

মিসেস সাইমা তার হাত থেকে চামচ কেড়ে নিলেন। বললেন,

“বাকিটা আমি করে নেব। তুই আফরানের জন্য কফি করে নিয়ে যা। সকালে উঠেই ওর আগে কফি চায়।”

দৃষ্টির ইচ্ছে হয় না ওই রুমে যেতে। কাল রাতে সে এতো ভয় পেয়েছিল! মেজাজ গরম হয়ে আছে ওই লোকটার উপর। এভাবে কেউ ভয় দ্যাখায়? সে নির্ঘাত মূর্ছা যেত। এখন আবার ওই লোকটার জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে যেতে হবে! সে মুখ ফুটে বলতে পারে না যে, সে যেতে চায় না। খালামনির নির্দেশ অনুযায়ী কফি তৈরি করতে উদ্যত হয়। মিহি কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,

“উনি কখন এসেছেন, খালামনি?”

“কে? আফরান? ও তো কাল রাতেই ফিরল। তুই জলদি ঘুমাতে গিয়েছিলি বলে তোকে ডাকেনি কেউ।”

দৃষ্টি ভাবে ডাকলেই ভালো হতো। অনন্ত তাকে এমন চমকে যেতে হতো না। আর না তার সাথে এক ঘরে বাহুবন্দী হয়ে দম বন্ধ করে পড়ে থাকতে হতো। দৃষ্টি কফি তৈরি করে রুমের দিকে অগ্রসর হয়। দরজা ঠেলে প্রবেশ করে ঘুমন্ত আফরানকে আবিষ্কার করে। কেমন শান্তির ঘুম দিচ্ছে দ্যাখো! ইচ্ছে তো করেই এই কফি ওনার মাথায় ঢেলে দেই। সে লম্বা শ্বাস নিয়ে নিজের রাগকে সংবরণ করে। এগিয়ে বিছানার পাশের টেবিলে ঠাস করে কাপ রাখে। আফরানের শান্তির ঘুম তার পছন্দ হয় না একটুও। জগ থেকে পানি ঢেলে দেয় তার মুখে। সে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে। দৃষ্টির সরু চোখের দিকে চেয়ে থম মে’রে বসে থাকে কিছুক্ষণ। চুল ঝেড়ে বলে,

“এভাবে আমাকে ওয়ালকাম করলি! আরো অনেক পদ্ধতি ছিল তো। একটু জড়িয়ে ধরতে পারতি, একটা চু..”

“থামুন।”

সে চোখ রাঙিয়ে হাতে কফি ধরিয়ে দেয়। ফের বলে,

“বেশি কথা বন্ধ করে কফি গিলুন। আজ বানিয়েছি আর পারব না। নিজে বানিয়ে খেতে পারলে খাবেন, নয়তো কি করবেন জানি না।”

আফরান হা করে তাকায়। দুঃখি দুঃখি ভাব করে বলে,

“এতো দিন পর দেশে ফিরে এই ছিল আমার কপালে? তার চেয়ে বরং থেকে যেতাম ওখানে। কত সুন্দরী নার্স রেখে এলাম। আসার সময় আমাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিল, কিছুতেই আসতে দেবে না। সে কি আদর যত্ন! আমি তো ওসব ফেলে জোর করে এলাম। তার উপর তুই একটু জড়িয়ে ধরা না, একটু ভালো করে কথা না, আর না একটা চুমু।”

দৃষ্টি তার কথাকে পাত্তা দেয় না। সকাল সকাল শুরু হয়ে গেছে লোকটা অসভ্য কথা বার্তা। মুখ বাঁকিয়ে চলে যায়। যেতে যেতে বলে গেল,

“আমি বলেছিলাম আসতে? যান না, আপনার সেই সুন্দরীদের কাছেই যান। তাদের কোলে উঠে বসে থাকুন। আমি বলার কেউ নই।”

আফরান হতাশ শ্বাস ফ্যালে। এই দিন দ্যাখার জন্য সে ফিরল? বউয়ের ঝাড়ি খাওয়ার জন্য? কোথায় স্বামী কতদিন পর ফিরেছে সেবা টেবা করবে, তা না; ঘুমের মধ্যে পানি ঢেলে দিয়ে চলে গেল। সে কফি শেষ করে ওয়াশ রুমে গেল। আজ আবার হাসপাতালে যেতে হবে।

নাস্তা টেবিলে সাজানো শেষ। এক একজন করে এসে নিজের আসন গ্রহণ করে। আমিনুল ইততেয়াজ, তিয়াস ইততেয়াজ সর্বশেষ তুরাগ ইততেয়াজ। মিসেস সাইমা নাস্তা পরিবেশন শুরু করতে নিলে আমিনুল ইততেয়াজ বাঁধা দেন। বলেন,

“আফরান আসুক, তারপর একসাথে খাওয়া যাবে।”

মিসেস সাইমা দ্বিরুক্তি করেন না। সকলে অপেক্ষা করে। তাদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আফরান নেমে আসে কিছুক্ষণ পরই। মিসেস সাইমা বললেন,

“আফরান বোস। নাস্তা করে নে। আজ হাসপা..”

ছেলের দিকে চেয়ে কথা বন্ধ হয়ে গেল তার। তাকে বিস্ময়ে চেয়ে থাকতে দেখে সকলে আফরানের দিকে দৃষ্টিপাত করল। দৃষ্টি মুখে হাত চেপে দৌড়ে রান্না ঘরে চলে গেল। লুচু ডাক্তার এবার বুঝুক মজা। সকলে হা করে চেয়ে রইল। আফরান হকচকায়। জিজ্ঞেস করে,

“এভাবে তাকিয়ে আছ কেন সবাই? আমার মাথায় কি শিং গজিয়েছে?”

পরক্ষণেই হাসিতে ফেটে পড়ে ফারনাজ। হাসতে হাসতে তুরাগের গায়ে হেলে পড়ে। তূরাগ ঠোঁট চেপে মৃদু হাসে। সকলে মুখ চেপে হাসে। হতভম্ব আফরান বলে,

“কি হয়েছে? এভাবে হাসছিস কেন?”

মিসেস অনা নিজেকে সামলে বললেন,

“পেছনে ঘোর তো, আফরান। দেখি একটু।”

আফরান বোকার মতো পেছনে ফেরে। ফারনাজের এবার হাসতে হাসতে দম বন্ধ হবার জোগাড়। মিসেস সাইমা এবং মিসেস অনাও হেসে ফেললেন। আমিনুল ইততেয়াজ ভ্রু কুঁচকে রেখেছেন। হাসি যে তার আসছে না এমন নয়। কিন্তু এখন হাসা ঠিক হবে না। আফরান অতিষ্ট হয়ে বলে,

“কি হয়েছে আমাকে বলবে? এভাবে হেসে যাচ্ছ তো হেসেই যাচ্ছ! আশ্চর্য, হাসপাতালে যেতে হবে আমাকে।”

“এভাবেই হাসপাতালে যাবি?”

মায়ের কথায় আফরান পুনরায় জিজ্ঞেস করে,

“কেন কি হয়েছে?”

ফারনাজ হাসি থামিয়ে বলে,

“ভাই, শার্টটা দেখে পরোনি বোধহয়।”

“কেন? শার্টে কি সমস্যা? শার্ট তো শার্টই। সাদা শার্ট।”

মিসেস সাইমা মুখ লুকিয়ে হেসে বললেন,

“যা, বাবা চেঞ্জ করে আয়। যা।”

আফরান মাথা মুন্ডু কিছুই না বুঝে বিরক্ত হয়ে রুমে চলে এলো। গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াল। তৎক্ষণাৎ তার চোখ কপালে উঠল। ঘুরে ফিরে দেখে কথা হারিয়ে ফেলল। তার সাদা শার্টের সামনে লেখা লুচু ডাক্তার, অ’স’ভ্য ডাক্তার, বদমাশ ডাক্তার। আর পেছনে বড় বড় করে লেখা ‘আমি একজন গরুর ডাক্তার।’ বিস্ময়ে সে হতবাক হয়। বাড়ির সবার সামনে তার মান সম্মান ধুয়ে গেল। ভাগ্য ভালো এই শার্ট পরে সে হাসপাতালে যায়নি। শাওয়ার নিয়ে তাড়াহুড়ো করে কি গায়ে দিয়েছে খেয়লই করেনি। সে বিরস বদনে শার্ট পাল্টে বের হলো। ষড়’যন্ত্র! ঘোর ষড়’যন্ত্র! নিশ্চয়ই তার পাজি বউয়ের কারসাজি এসব। হাতের কাছেই পাচ্ছে না তাকে। একবার শুধু হাতে পাক। তারপর বোঝাপড়া হবে।

আফরান নিচে এসে বসতে না বসতেই হাওয়ার গতিতে কেউ এসে তার পাশে বসে পড়ল। প্রায় আফরানের গায়ে পড়ে বলল,

“গুড মর্নিং আফরান, গুড মর্নিং অল।”

আফরান কোনো প্রতিক্রিয়া দ্যাখায় না। মৃদু কণ্ঠে বলে,

“গুড মর্নিং, রূপসী। মা নাস্তা দাও এবার, দেরি হচ্ছে।”

মিসেস সাইমা এবং অনা সবাইকে নাস্তা দেন। দৃষ্টি এখনো রান্না ঘরে ঘাপটি মে’রে আছে। আফরান খাওয়ার মাঝে বেশ কয়েক বার রান্না ঘর থেকে চোখ ঘুরিয়ে নেয়। রূপসী খাওয়ার মধ্যে কত বকবক করে তা শোনে না। দৃষ্টি এক সময় রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। স্বামীর পাশে অপরিচিত মেয়ে দেখে তার ভ্রু খানিকটা কুঁচকে গেল। তবে বলল না কিছু। স্বামীর গায়ে পড়ে ভাব জমাতে চাওয়া মেয়েটাকে দেখে গা জ্বলে গেলেও প্রকাশ করে না। মিসেস সাইমা তাকে দেখে বললেন,

“নাস্তা করে নে। কলেজ যাবি না?”

দৃষ্টি আফরানের দিকে চায়। লোকটা কি সুন্দর হি হি করে মেয়েটার সাথে কথা বলছে! কে এই মেয়ে? সে জবাব দেয়,

“এখন আর খাব না। কলেজ গিয়ে খেয়ে নেব কিছু।”

সে গটগটিয়ে হেঁটে রুমে চলে গেল। পিছু ডাকা হলেও শুনল না। ওয়াশ রুম থেকে চেঞ্জ করে বের হলো। রাগে দুঃখে ছোড়াছুড়ি শুরু করল। এক দিকে তোয়ালে ছুঁড়ল, এক দিকে ছুঁড়ল ওড়না। চুলে চিরুনি চালিয়ে বেঁধে নিল। বই খাতা এভাবে ব্যাগের মধ্যে ভরল যেন সে বই খাতা নয় ওই মেয়েটাকে আছাড় দিচ্ছে। দরজা খোলার শব্দ পেয়ে দেখল আফরান ঢুকেছে। সে শান্ত হয়ে গেল। তাকে বুঝতে দেওয়া যাবে না কিছু। সে বলতে নিল,

“আপনি নক না করে..”

পরক্ষণেই মনে হলো এটা তো তারই রুম সে ইচ্ছে মতো আসা যাওয়া করতে পারে। পুনরায় বলল,

“আমি কলেজ থেকে ফিরে আপনার রুম খালি করে দেব। আপনার আর সমস্যা হবে না।”

আফরান শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে। আগাগোড়া পর্যবেক্ষণ করে এগিয়ে আসে। দৃষ্টি ভড়কে এক পা পেছায়। আর পেছাতে পারে না, সে তাকে ধরে ফ্যালে। কাছে টেনে কানের কাছে মুখ রাখে। ফিসফিসিয়ে বল,

“আমি কি হই তোর?”

দৃষ্টি থেমে থেমে শ্বাস ফ্যালে। দম বন্ধ করে বলে,

“জজানি না।”

“জানিস না? বুঝে যাবি খুব শীঘ্রই।”

কানে আলতো অধর ছুঁইয়ে সে সরে আসে। চিরপরিচিত চঞ্চল রূপ ধারণ করে বলে,

“আমি ভালো ছেলেটা তোর জন্য খারাপ হয়ে যাব মনে হচ্ছে। এভাবে আমার সামনে থাকলে আমি উল্টা পাল্টা কিছু করে ফেলব। তখন বলিস নির্লজ্জ। কিন্তু আমার কোনো দোষই নেই। আমি শুধু ওয়ালেট নিতে এসেছিলাম।”

দৃষ্টি তার কথা বোঝার চেষ্টা করে। পরপরই ওড়না নেই খেয়াল করে ভীষণ লজ্জায় পড়ে যায়। রাগের বশে ওড়না ছুঁড়ে ফেলেছিল। সে দ্রুত তা উঠিয়ে গায়ে জড়ায়। আফরান বখাটের মতো একটু হেসে বের হয়ে গেল। দৃষ্টি সেদিকে চেয়ে কটমটিয়ে বলল,

“অসভ্য, লুচু ডাক্তার!”

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে