সুখ একটি প্রজাপতি পর্ব-১৫+১৬+১৭

0
2102

#সুখ_একটি_প্রজাপতি (১৫)

রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজে। ঠিক সে সময় মৌনতার ফোনে কলটা এলো। মেয়েটির সবে তন্দ্রা ভাব এসেছে। রিং পেয়ে হুরমুরিয়ে উঠে। কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ঝিলের কণ্ঠ,
“ডিস্টার্ব করলাম মৌন?”

“আরে ধ্যাত। কি যে বলিস তুই। আমি তো তোর কলের অপেক্ষাতেই ছিলাম। কেমন আছিস তুই?”

“ভালো। তোর কি খবর?”

“ঠিক ঠাক।”

তারপরই নীরবতা এসে জেঁকে ধরে। কে কি দিয়ে শুরু করবে বুঝতে পারছে না। ঝিল কিছু বলতে চাইছিল ওমন সময় মৌনতা বলল, “জানিস ঝিলি, অভিনব ভাইয়া পাগল হয়ে গেছে। চোখ মুখ শুকিয়ে এসেছে। একদমই ভালো নেই মানুষটা।”

কথাটা ঝিলের হৃদয়ে জ্বালা ধরিয়ে দিল। হু হু করে উঠল মন। মানুষটার চোখ মুখ যেন ভেসে উঠেছে।
“বিকেলে কল করেছিলাম। তখন ভাইয়া পাশে ছিল। উত্তেজনায় পাগল হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু কথা হলো না।”

ঝিল কথা বলতে পারছে না। মৌনতা ফের বলল, “জানিস ভাইয়া তোর মামা বাড়িতেও গিয়েছিল। ভেতরে ও ঢুকে পড়েছিল। কিন্তু তোর রুম কোনটা সেটা বুঝতে পারে নি। ফিরে এসেছে খালি হাতে। একবার নয় পরপর দুবার গিয়ে ফিরে এসেছে।”

মেয়েটির চোখ থেকে টুপ টুপ করে পানি পড়ছে এবার। শরীর বেয়ে নেমে যাচ্ছে শীতল ঘামের স্রোত। মনে হয় সব এলোমেলো। অস্বস্তিতে হৃদপিন্ড ধক ধক করেছে। মৌনতা সাড়াশব্দ না পেয়ে বলল, “ঠিক আছিস ঝিলি?”

অনেক কষ্টে মেয়েটি উত্তর দিল, “হু।”

মৌনতার দীর্ঘশ্বাসে ভরে উঠেছে চারপাশ। এদিকে ঝিলের চোখ দুটি বাঁধন হারিয়েছে।
“ওনার নাম্বার আছে মৌন?”

“নাম্বার,ইস ভাইয়ার নাম্বার টা তো নেই।”

ঝিলের মনে হচ্ছে এবার দম বন্ধ হয়ে মা রা যাবে। আয়ুষ ফোন ঠিক করে এনে দিয়েছে। তবে সীম কার্ড লোড করার পর সমস্যা দেখা দিয়েছে। সীম কার্ডটা কাজ করছে না। আর না আছে কোনো নাম্বার। হাতের ফোনটা রজনীর। আয়ুষের ফোন থেকে কথা বলতে হলে কাল অবধি অপেক্ষা করতে হবে। ঝিলের তড় সইছে না। খানিক বাদে মৌনতা বলল, “ওয়েট আমি তরুণ ভাইয়ার নাম্বার দিচ্ছি। ওনার থেকে চেয়ে নে।”

আশার আলো পেয়ে ঝিল কথা হারালো। মৌনতা নাম্বারটা ম্যাসেজ করে পাঠায়। এখন প্রায় মধ্য রাত্রি। এ সময় কাউকে ফোন করা একদমই উচিত নয়। তবু ঝিল কল করল। কিন্তু কল রিসিভ হলো না। কয়েকবার চেষ্টা করে মেয়েটি আশাহত হলো। কান্নায় ভেঙে পড়ল। মৌনতা পুনরায় কল করেছে।
“তরুণ ভাইয়া কল রিসিভ করছে না।”

“দাঁড়া আমি চেষ্টা করি। হয়ত অচেনা নাম্বার দেখে রিসিভ করে নি।”

মৌনতা কল করল। কিন্তু ফলাফল শূন্য। এবার ঝিল ফোনের এপ্রান্ত থেকেই ডুকরে উঠল। মৌনতার ইচ্ছে করছে তরুণের সব গুলো চুল ছিঁড়ে ফেলতে। মেয়েটির কান্না ওর সহ্য হচ্ছে না। কয়েক সেকেন্ড থমকে থেকেই মনে পড়ল ওর ফোনে ব্যালেন্স শেষ হয়েছিল বিধায় অভিনবর ফোন থেকে রুদ্রমকে কল করেছিল। এখন প্রায় সাড়ে বারোটা বাজে। কে জানে রুদ্রম জেগে আছে কি না। তবু চেষ্টা করল মৌনতা। কল রিসিভ হলো।
“এত রাতে কল করেছিস ক্যান?”

“শোন রুদ্রম এখন কথা বলার সময় নেই। চটপট বিকেলে যে নাম্বার থেকে কল করেছিলাম সেটা ম্যাসেজ কর।”

“কি বললি?”

“ধুর, বিকেলে যে নাম্বার থেকে আমি কল করলাম সেটা দে।”

“কেন, কি হয়েছে? এমন উন্মাদের মতো করছিস কেন?”

“কু ত্তা, হা রা মি যা বলি তাই কর।”

রুদ্রম আর কিছু বলল না। যা বুঝলো, মৌনতার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কল রেখে নাম্বারটা ম্যাসেজ করে দিল। মৌনতা সীন করেই চলে গেছে। রুদ্রম অবাকই হয়েছে। এত রাতে ফোন করে নাম্বার নিল কিন্তু থ্যাংকস অবধি বলল না!

ঝিল কান্না করছিল। ফের কল আসতেই রিসিভ করল। নাক টানা কণ্ঠে বলল, “হু।”

“দোস্ত ভাইয়ার নাম্বার পেয়েছি।”

ঝিলের ঠোঁটে হাসি এলো। চোখ দুটো মুছে বলল,
“দ্রুত ম্যাসেজ কর মৌন। আমার হাত পা অবশ হয়ে যাচ্ছে।”

“হু দোস্ত একটু ওয়েট কর। এখনি দিচ্ছি।”

ঝিলের কল রাখতে না রাখতেই তরুণের কলটা এলো। মৌনতা রেগেমেগে আগুন।
“এত বার কল করার পর ও কল রিসিভ করেন না কেন হ্যাঁ?”

“ঘুমিয়ে ছিলাম। কি হয়েছে, এত রাতে কল দিলে যে?”

“ঝিল, কল করেছিল।”

“বাহ, অভিনবর সাথে কথা হয়েছে?”

“হবে কি করে? ওনার নাম্বারই তো নেই। আর এদিকে আপনি ঘুমাচ্ছেন। কত বার কল করেছি আমরা।”

“ইস। খুব খুব স্যরি।”

“আচ্ছা রাখুন এখন।”

তরুণ কল রেখে তখুনি অভিনবকে কল করে বিষয়টা জানালো। অভিনবর হাত পা যেন শক্তি হারিয়েছে। ছেলেটার আর সহ্য হচ্ছিল না। ঝিলের কাজিনের নাম্বারে কল করল। কিন্তু ওপাশ থেকে জানালো ব্যস্ত আছে। অন্যদিকে ঝিল ও কল করছে অভিনবকে। একই ভাবে ব্যস্ততার সুর শুনতে পেল। রাগে দুঃখে মেয়েটির চুল ছিড়তে ইচ্ছে হলো। কল কেটে মৌনতাকে বিষয়টা জানালো। মৌনতার ভ্রু কুঁচকে গেছে। এত রাতে অভিনব কার সাথে কথা বলতে পারে? ঝিলের কল রেখে তরুণকে কল করল মৌনতা। তরুণ জানায় অভিনব তাকে কল করে জানিয়েছে ঝিলের কাজিনের নাম্বার নাকি ব্যস্ত শোনায়। মৌনতা আর তরুণ দুজনেই ভ্যবলার মতো থেমে রইল কিছু সময়। অন্য দিকে ঝিল আর অভিনব দুজনেই একে অপর কে কল করে যাচ্ছে। তাই নাম্বার ব্যস্ত শোনাচ্ছে। মৌনতা আর তরুণ দুজনেই বুঝতে পারল বিষয়টা। কল রেখে মৌনতা বলল অভিনব ওকে কল করে যাচ্ছে তাই নাম্বার ব্যস্ত দেখায়। ও যেন এখন কল না করে। একইভাবে তরুণ ও অভিনবকে বলল ঝিল ওকে কল করছে। এরপর দুজনেই কল দেওয়া বন্ধ কলে দিল। ফোনের দিকে চাতক পাখির মতো চেয়ে আছে দুটি মানব। কিন্তু কোনো কল আসছে না। ঝিল আর অভিনব দুজনেই ভীষণ বিরক্ত। কি হচ্ছে কি এসব? ঝিল মৌনতাকে কল করে জানালো অভিনব তো কল করছে না। মৌনতা এবার রেগে আগুন। তরুণ তো ওকে বলল অভিনব কল করছে। মৌনতা আবার তরুণকে কল করল। এবার ওদের দুজনের ঝগড়া লেগে গেল। দুজনেই গাঁধার মতো কাজ করেছে। অভিনবর প্রহর যেন কাঁটে না। সে ঝিলের ফোনের অপেক্ষা না করে কল টা করেই ফেলল। এবার কল গেল। ঝিল বসে ছিল সিলিং এর দিকে তাকিয়ে। রিং হতেই বুকের ভেতর নাড়া দিল। অভিনবর নাম্বারটা স্ক্রিনে ঝলমল করছে। চোখ দুটো ঝাপসা হতে শুরু করেছে,হাত কাঁপছে রীতিমতো। প্রথম বার কল রিসিভ করতে ব্যর্থ হলো। কিন্তু দ্বিতীয় বার রিং হতেই রিসিভ করে ফেলল। কিন্তু কি বলবে সেটা বুঝতে পারছে না। দুজনেই চুপ। নিশ্বাসের ভারী শব্দ গুলো কেবল শুনে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কত জনম পর এই নিশ্বাস শুনতে পেল। অভিনবই শুরু করল, “শুনছেন প্রজাপতি।”

ঝিলের ইচ্ছে করল ম রে যেতে। এভাবে কেউ ডাকে? মন প্রাণ কেমন উতলা হয়ে উঠল। উত্তেজনায় মেয়েটি কথা বলতে পারছে না। অভিনব মিটিমিটি হাসছে। যেন স্পষ্ট সবটা বুঝতে পারছে মেয়েটির অবস্থা। ঘড়ির কাঁটায় এখন রাত তিনটে বাজে। চারপাশ শুনশান। ঝিলের মনের ভেতর কেমন যেন অনুভূতি হচ্ছে।
“কথা বলবেন না প্রজাপতি?”

“জী।”

অভিনবর হৃদয় যেন জুড়িয়ে এলো। এই সামান্য শব্দটি যেন ওকে পাগল করে দিল। ঝিল কিছুটা স্বাভাবিক হলো। একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বলল, “কেমন আছেন আপনি?”

“আপনাকে ছাড়া যতটা ভালো থাকা যায় ঠিক ততটাই ভালো আছি প্রজাপতি।”

ছেলেটা এভাবে কেন বলছে? ঝিলের যে ভীষণ কান্না পাচ্ছে ইচ্ছে করছে সব রেখে ছুটে পালিয়ে যেতে। মানুষটার বুকে মাথা রেখে বলতে আপনাকে ছাড়া আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। কিন্তু সেসব যে মুখ দিয়ে আসে না। এই অনুভূতি কেবল নৈঃশব্দে আলোড়ন ফেলে। ওভাবেই অনেক সময় চলে গেছে। দুজনের খুব বেশি শব্দের কথা হয় নি। তবে ঘন্টার পর ঘন্টা পেরিয়ে গেছে। ফজরের আজান পড়তেই দুজনেই মনে হলো বুকের ভেতর শান্তি নেমে এসেছে। দুজন দুজনের অনুভূতি গুলো বুঝতে পারছিল ঠিকই তবে সেভাবে প্রকাশ করতে পারে নি। একে অপর কে বিদায় জানিয়ে স্থির হয়ে বসে রইল। এই মুহূর্তটা যে কতখানি মধুমাখা তা ভাষায় ব্যক্ত করা অসম্ভব।

নামাজ পড়ার জন্য অজু করতে যাবে ঝিল। ওমন সময় রাতের শেষ আঁধারে দেখতে পেল এক জোড়া কপোত কপোতি। ওরা কথা বলছে। একে অপরের হাত ধরে রাখা। কিন্তু আঁধারের কারণে দেখা যাচ্ছে না মুখগুলো। পাখির কলতান আর হাল্কা আলো ফোঁটার পূর্বেই কপোত কপোতি আলাদা হয়ে গেল। ঝিল নামাজ শেষ করে আর ঘুমাতে পারল না। আজকে আর ঘুম হবে না। সমস্ত ঘুম, ক্লান্তি হারিয়ে হৃদয়ে কেবল ভালোবাসার অনুভূতি ডানা মেলেছে।

চলবে….

#সুখ_একটি_প্রজাপতি (১৬)

কিছু সমস্যার কারণেই রজনীর বিয়েটা এক সপ্তাহ পিছিয়েছিল। আজ সকাল থেকেই চলছে নানান আয়োজন। দুপুরে মেহেদীর অনুষ্ঠান আর রাতে হলুদ। পুরো গ্রামের সব লোককে দাওয়াত করা হয়েছে। চৌধুরী পরিবারের সুনাম সব খানেই। বরাবরই লোক মুখের শীর্ষে তাদের নাম। সৃষ্টিকর্তার রহমতে ধন সম্পদ ক্ষমতা কোনো কিছুরই কমতি নেই। ভাতিজির বিয়ে উপলক্ষ্যে ফিরেছেন রকিবুল চৌধুরীও। তিনি প্রবাসী। লন্ডন শহরে ওনার একটি ফ্যাক্টরি ও রয়েছে। দুই মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে বরাবরই চিন্তায় থাকেন। অথচ একজন মানুষের বেঁচে থাকার জন্য এত অর্থ লাগে না। কিন্তু ঐ যে কথায় আছে যে যত পায় সে আরও বেশি চায়। ওনার ক্ষেত্রে বাক্যটি শতভাগ সত্য। ভদ্রলোকের সাথে এর আগে একবারই দেখা হয়েছে ঝিলের। মায়ের মুখের সাথে অনেকটা মিল। পিঠোপিঠি কী না।
“ভালো আছ মামুনি?”

“জী মামা। আপনি কেমন আছেন?”

“আল্লাহ রেখেছেন ভালো। তোমার সাথে তো সেভাবে কথাই হয় নি। অথচ এমন সময় দেখা হলো যখন কথা বলার সময় ই নেই। আচ্ছা আসো তো আমার সাথে।”

ঝিলের ছোট মামার দুই মেয়ে সুমা আর রানি ছুটে এসেছে। বাবাকে জড়িয়ে ধরে কুশলাদি করল।
“আমার পিন্সেসদের জন্য অনেক অনেক চকলেট এনেছি।”

“থ্যাংক ইউ পাপা।”

“এই নাও তোমার জুস।”

“এখন এসব করতে গেলে কেন? আমি তো পালিয়ে যাচ্ছি না।”

“কত দিন পর এসেছ খেয়াল আছে?”

স্ত্রীর কথাতে ভদ্রলোক হাসলেন। ঝিল আড়চোখে এসব দেখছিল। হঠাৎ ই ওর মন খারাপ হলো। ওর মা কিংবা চাচি রা বেঁচে থাকলে ওদের পরিবারেও এমন সব সুন্দর মুহূর্ত আসত। পাপা রা যখন এক বুক ক্লান্তি নিয়ে ফিরে আসেন তখন নিশ্চয়ই তাদের জন্যও এমন এক ক্লাস শরবত বরাদ্দ হতো। কিন্তু সেসব কেবল কল্পনা। যারা অনেক দূরে চলে যায় তারা আর কখনো ফিরে আসে না। বা হাতের তালুতে চোখ মুছে মেয়েটি। রকিবুল চৌধুরী সবার সাথে কথা শেষ করে ঝিলকে নিয়ে বসলেন।
“তোমার মায়ের সাথে আমার খুব ভাব ছিল। আমাদের বয়সের ফারাক মাত্র দু বছর। সব সময় ভালোবাসা কাজ করত। আমি দু বছরের বড় হওয়া সত্বেও এক ক্লাসেই পড়াশোনা করেছি। সে দিক থেকে বন্ধুই বলা চলে। অথচ জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় গুলোতে আমরা সবাই সবার থেকে দূরে সরে এসেছিলাম।”

কথাটা বলে থামলেন ভদ্রলোক। ঝিল বুঝতে পারছে না হঠাৎ করেই মামা কেন এসব বলে চলেছেন।
“মামুনি অলোয়েজ মনে রাখবে পরিবারের লোকজন খারাপ চায় না। তারা সর্বদা ভালো চায়। হয়ত ভাগ্যের দোষে কখনো কখনো খারাপ হয়ে যায়। আমাদের পৃথিবীটা বেশ বৈচিত্র্যময়। তাই কোনো কিছুকে ফিক্সড করে নেওয়া যায় না। বুঝলে?”

ঝিল মাথা ঝাঁকায়। ভদ্রলোকের ঝিলের হাতে একটা ছোট বক্স ধরিয়ে চলে যান। মেয়েটি অনেকটা সময় সোফাতে বসে থাকে। ওর চোখ জ্বালা করছে। মনে হচ্ছে কোথাও একটা যন্ত্রণা। কিন্তু সে যন্ত্রণার কারণ পাওয়া যাচ্ছে না। স্বীয় কক্ষে এসে বক্সটা খুলে ঝিল। একটা গোল্ডের লকেট। যার ভেতরে লেখা
‘বাটারফ্লাই।’

অনেকটা অগোচরেই একটা সীম কার্ড এনে দিয়েছে আয়ুষ। সেটা লোড করে প্রথমেই অভিনবকে কল করল ঝিল। অভিনবর ঘুম ভাঙে নি তখনো। ঘুমু ঘুমু কণ্ঠেই জবাব দিল।
“কি ব্যপার প্রজাপতি। আপনি নিজ থেকে কল করলেন যে। সূর্য আজ কোন দিকে?”

“নিজেই দেখে নিন না সূর্য কোন দিকে।”

“তা তো দেখবই। বাট আই এম লিটল সারপ্রাইজড!”

“কল দিয়ে বুঝি ভুল করেছি। তবে রেখে দিচ্ছি।”

“রাখবেন না প্রজাপতি। বুকে যন্ত্রণা হয়।”

“এসব বাজে কথা ছাড়া আপনি কি কিছু বলতে পারেন না?”

“কেন পারব না। আমি তো অনেক কিছু বলতে পারি। এই ধরেন আপনার গভীর চোখ, সরু নাক, উষ্ণ ঠোঁট।”

কেঁপে উঠে ঝিল। অভিনব মিটিমিটি হাসে।
“শুনেন প্রজাপতি আমি আপনার প্রতিটা অংশের বর্ননা দিতে পারব। কিন্তু দেখা যাবে আপনার দম বন্ধ হয়ে আসছে।”

মেয়েটি কি বলবে বুঝতে পারছে না। অনেকটা চুপ করে রইল। অভিনবই বলল,
“পৃথিবীর কোনো প্রেমিক পুরুষ নেই যারা প্রেমিকার প্রতি আকর্ষণ পায় না। আপনি আমার ঠোঁটের অগ্রভাগে।”

“এসব ছাড়ুন। আমার বুকের ভেতর ভয় হয়।”

“ভয় কেন হয়?”

“হারিয়ে ফেলব মনে হয়।”

“হারিয়ে ফেললে আবার খুঁজে নিবেন না হয়।”

“যদি না পাই?”

“তবে অভিনব এসে নিজ থেকেই ধরা দিবে।”

“সত্যি?”

“হারিয়ে দেখাব নাকি?”

“একদমই নয়।”

চমৎকার করে হাসল অভিনব। এতক্ষণে ওর ঘুম চলে গেছে। মেয়েটির একটু একটু আকুলতা ওকে আনন্দ দিচ্ছে।
.

ঘামে ভেজা শার্টটা খুলে রাখতেই আয়ুষের যুবক দেহের প্রতি আর্কষণ পেল একদল তরুণী। তারা সবাই এসেছে রজনীর বিয়ে উপলক্ষে। বান্ধবীর এই ভাইটির প্রতি এর আগেও আর্কষণ পেয়েছে ওরা। তবে আজ যেন একটু বেশিই আর্কষণীয়। সুমা আর রানি দুজনেই স্কুল পড়ুয়া বাচ্চা মেয়ে। ওদের আগে চারজন ভাই বোন মা রা গিয়েছে। বাচ্চা গুলোকে কিছুতেই ধরে রাখা যাচ্ছিল না। প্রতিবার মৃ’ত সন্তান জন্ম দিয়ে একটা সময় ভেঙে পড়েছিলেন সুমতি বেগম। ভেবেছিলেন স্বামীর সাথে সংসারের পাঠ বুঝি এই চুকলো। তবে তেমনটা ঘটে নি। রকিবুল সাহেব সর্বদা স্ত্রীর প্রতি বিনয়ী ছিলেন। অবশেষে তাদের ঘর আলো করে এসেছে সুমা আর রানি। দুজনের বয়স কাছাকাছি। দেড় বছরের পার্থক্য। ঝিলের সাথে এতদিনে ওদের কথা হয় নি বলা চলে। মূলত মেয়েটিকে ওরা ভয় পেত। আজ সকালে আয়ুষ এসে কথা বলিয়ে দিয়েছে। সেই থেকে বাচ্চা দুটো ঝিল কে ছাড়ছেই না।
“আপু, তুমি কি কার্টুন দেখ?”

“দেখি তো।”

“ডোরেমন দেখ?”

“হুম। খুব দেখি।”

“নবিতাকে তোমার কেমন লাগে?”

“খুব ভালো। কেন তোমাদের ভালো লাগে না?”

“ভালো লাগে। কিন্তু ও খুব বোকা আর ভীতু।”

ঝিল হাসল। তারপরই বলল, “জানো ও বোকা হলেও কিন্তু ভালোবাসতে জানে।”

“কেমন?”

“বলছি, নবিতা একটু ভীতু প্রকৃতির ছেলে। কিন্তু ওর বন্ধুরা কেউ বিপদে পড়লে সমস্ত ভয় ছাপিয়ে ঠিকই ঝাপিয়ে পড়ে। যা সবাই পারে না।”

সুমা আর রানি তাকিয়ে আছে। ঝিল খুব সুন্দর করে বুঝালো ওদের। লয়েল ব্যক্তি যদি দূর্বল ও হয় তবু তারা আমাদের জন্য প্রশান্তি নিয়ে আছে। আয়ুষের ঘাড়ে অনেক কাজ। সে সকাল থেকে ব্যস্ত। এখন প্রায় দুপুর হতে চলেছে। ফুল গুলো লাগাতে বলে এদিকেই এসেছে।
“কি রে পিচ্চিদের দল, এদিকে কি?”

“আমরা তো ঘুরতে এসেছি।”

“এখনো তো কমপ্লিট হয় নি। এখন আর কি দেখবি।”

“তুমি যা দেখছ।”

“আমি তো কাজ করছি। তোরা ও কি করবি?”

হেসে জবাব দিল ঝিল, “করতে তো সমস্যা নেই।”

কিন্তু সুমা আর রানি দাঁত কেলিয়ে পালিয়ে গেল। পেছন থেকে ঝিল বলল, “আরে আরে এটা কেমন হলো। কথা বলব না আর।”

“থাক বাচ্চা ওরা যেতে দে। এদিকে আয়।”

আয়ুষের সাথে গেল ঝিল। বাড়িটা বিশাল হলেও সেভাবে ঘোরা হয় নি। চারপাশে এত এত ফুল যে ঝিলের চোখ শুধু ফুলই দেখতে পাচ্ছে।
“শুনলাম সকালে নাস্তা করিস নি।”

“ভালো লাগছিল না।”

“এভাবে তো শরীর খারাপ করবে।”

“কিছুই হবে না।”

“এত হেলায় থাকিস না, কেমন?”

ওমন সময় একদল লোক এলো। ওরা গানের লোক। হাতে নানান ধরনের মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট।
“আপনারা এসে গেছেন। বাহ, আসুন আপনাদের গেস্ট রুমে নিয়ে যাচ্ছি।”

লোক গুলো কে নিয়ে গেল আয়ুষ। এরা মূলত একটি বিদেশী ব্যান্ড।

চলবে…

#সুখ_একটি_প্রজাপতি (১৭)

ঝিলের মেহেদী রাঙা হাতের মাঝে লাভ সেইপটা ফাঁকা। আর্টিস্ট মেয়েটি হাসি মুখে বলল, “ভালোবাসার মানুষের নাম কি আপু?”
ইষৎ চমকে উঠল ঝিল। ভালোবাসার মানুষ তো একজনই। তবে সে নামটি বলবে কি? এত দ্বিধা নিয়ে নামটি আর বলা হলো না। মেয়েটি উঠে এলো। কয়েকটা ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছে। নেট খারাপ বিধায় ছবিটা আপ হচ্ছে না। ভেতরের দিকে আসার পথেই একটি ছেলের সাথে ধাক্কা লাগে।
“স্যরি,স্যরি। আমি আসলে দেখতে পাই নি মিস”

“ইটস ওকে।”

ছেলেটি খুব দ্রুত সরে গেল। সম্ভবত মিউজিকের লোক। তবে বাংলাদেশী। আয়ুষ বলেছিল বিদেশী ব্যান্ডটা এসেছে বাংলাদেশের এক মিউজিক ব্যান্ডের আমন্ত্রণে। তাদেরই কেউ হবে। ঝিল বেশি সময় নিল না। দ্রুত ঘরে চলে এলো। এবার ছবি আপ হয়েছে। সীম কার্ডটা কাজ করছিল না বিধায় বড্ড মন খারাপ হয়েছিল। আয়ুষের দেওয়া সীম কার্ডটায় আবার নেট প্রবলেম। যন্ত্রণা যখন আসে তখন চার পাশ থেকেই আসে। মেহেদী শুকানো অবধি নিজ ঘরেই অবস্থান করল মেয়েটি। গায়ে সাধারণ এক কুর্তি। বিকেলে আবার হলুদের জন্য সাজতে হবে। এই সময়ে অভিনবর কথা ভীষণ মনে পড়ছে। ছেলেটা যদি দেখতে পেত। ওর ভাবনায় ছেদ ধরিয়ে অভিনবর কলটা এলো।
“প্রজাপতি, আপনি কোথায়?”

“ঘরে বসে আছি।”

“আহা, ঘরে কেন বসে আছেন। নিচে নেমে আসুন দ্রুত।”

“নিচে আসব কেন?”

“আরে আসুন না। এত কথা কেন বলেন।”

মেয়েটি অবুঝের মতো তাকিয়ে রইল। খানিক বাদে নেমে এলো। অভিনব নিচে কেন আসতে বলল? সে কি এসেছে? তবে কোথায় আছে! কেউ দেখে নি তো? যদি দেখে তাহলে ভীষণ সমস্যায় পড়তে হবে। চারপাশে চোখ বুলিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। ঝিল এবার আশাহত হলো। চার পাশে এত এত মানুষ!

“কাম উইথ মি।”

একটা লম্বা করে বিদেশী ছেলে। ঝিল বুঝতে পারছে না কিছুই। ছেলেটা জানালো অভিনব এসেছে। গেস্ট হাউজের দিকে। মেয়েটি এক সেকেন্ড সময় নিল না। ছুটে গেল প্রায়। ছেলেটা এবার বলল, “বি নর্মাল।”

থামল মেয়েটি। ছেলেটির সাথে ধীরে স্বস্তে হেঁটে এলো। অভিনবর পিঠের দিকটা দেখতে পেয়ে ঝিলের হৃদয়ের বিট গুলো থেমে এলো। অভিনব হাসছে। লুক কিছুটা চেঞ্জ করেছে। মাথায় ক্যাপ চোখে সানগ্লাস মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। খুব কাছ থেকে না দেখলে চেনা মুশকিল।
“প্রজাপতি, দূরত্ব বজায় রাখবেন প্লিজ।”

শুরুতে কথাটা বুঝতে পারল না ঝিল। তবে অভিনব বাঁধা দেওয়াতে থেমে গেল। আর কাছে এলো না।
“চারপাশে এত সিকিউরিটি যে আমি চাইলেই আপনাকে কাছে নিতে পারছি না। কি ভাগ্য বলুন তো!”

“ওসব রাখেন। আপনি এত কষ্ট করে আসতে গেলেন কেন? কেউ দেখে নিলে সর্বনাশ হবে। আমি চাই না আপনি ঝামেলায় পড়েন।”

“এভাবে কেন বলছেন ঝিল? আমার সব সুখ দুঃখ তো আপনার জন্য। আপনি ছাড়া আমি কিছু ভাবতে পারি না। কবে এতটা কাছাকাছি হলাম বলেন তো।”

“ছেলে মানুষি করবেন না প্লিজ।”

“সব অনুভূতি কি ছেলে মানুষি?”

“আমার জানা নেই। তবে সব সম্পর্ক গুলো নেহাতি বোকামির। আগা গোড়া জুড়ে দিয়ে সম্পর্ক গড়া যায় তবে সেটা পূর্ণতা পায় না।”

নীরবতায় যেন হু হু করে উঠে। ঝিলের চোখের কোণে জল। অভিনব কিছুটা কাছিয়ে এলো। আদুরে হাতের স্পর্শ করে বলল, “সব অভিযোগ আমি মাথা পেতে নিব। শুধু সময় দিন। আপনার ডায়েরির শেষ অংশটা আমি পড়েছি।”

ওদের আর কথা হলো না। দমকা হাওয়ার মতো দুজনকেই সরে যেতে হলো। ঝিল শেষ বারের মতো তাকালো। জীবনে এই ছোট ছোট বিচ্ছেদ গুলো সত্যিই ভয়ানক হয়।

হলুদের শাড়ি গুলো চোখ ধাধানো সুন্দর। এত বাহারি কালেকশন যে কোনটা রেখে কোনটা নিবে বুঝে আসছে না। রজনী এসে সাহায্য করল। সব থেকে সুন্দর শাড়িটা দিয়ে দিল ওকে। ঝিল অবাক হয়ে বলল, “এটা তো সবাই তোমার জন্য চুজ করেছিল।”

“তো কি হয়েছে?”

“আমি এটা নিব না। অন্যটা চুজ করে দাও।”

“বোকার মতো কথা বলছো কেন? শাড়ি দিয়ে কি হবে? দোয়া করো যাতে আমি সুখী হতে পারি।”

রজনী চলে যাবার পর ঘরে প্রবেশ করল আয়ুষ। ছেলেটা ভীষণ ব্যস্ত। ছোট বোনের বিয়ে বলে কথা।
“পার্লার যাবি?”

“না ভাইয়া।”

“আচ্ছা তাহলে আমি ওদের কেই নিয়ে যেতে বলি।”

আয়ুষ চলে যেতেই অভিনব কল করলো। বলল পার্লারে যাওয়ার কথা। বাড়ির ভেতরে থেকে সরাসরি কথা বলা যাচ্ছে না। ঝিল তখুনি ছুটে গেল। হাঁপিয়ে উঠেছে।
“আয়ুষ ভাইয়া আমিও যাব।”

“তখন না করলি কেন?”

“না মানে পরে ভেবে দেখলাম রজনী আপু ও তো যাবে। বোর হতে হবে না।”

“ঠিক আছে। আমি বলে দিচ্ছি। তৈরি হয়ে নে।”

বিকেল হয়েছে সবে। কয়েক কিলোমিটার দূরে নামকরা পার্লার রয়েছে। অভিনব অনেক আগেই পৌছে গেছে। কিছু সময় পর ঝিলদের গাড়ি থামল। সবাই ভেতরে চলে এসেছে। গাড়িতে ব্যাগ ফেলে আসার ছুঁতোতে রয়ে গেল ঝিল। অভিনব এবার কাছে এলো।
“আধ ঘন্টা সময় হবে না?”

“হ্যাঁ।”

“তাহলে আসুন।”

ওরা একটু দূরে চলে এলো। নদীর পাড় ঘেঁষে রয়েছে সারি সারি গাছ। কিছু দূর পর পর আবার বেঞ্চ করা। সেখানেই বসেছে। দুজনের নিশ্বাস গুলো চারপাশের সৌন্দর্য্যের সাথে মিশে গেছে। সময়টা সুন্দর।
“একটা সত্যি কথা বলবেন ঝিল?”

“হু।”

“আমাকে আপনার সত্যিই মনে নেই?”

“হঠাৎ এ প্রশ্ন!”

“জানা জরুরি। আপনার ডায়েরি অন্য কথা বলে।”

মেয়েটি নিশ্বাস ফেলল। অভিনবর হাতটা খুব নিকটে। হাল্কা স্পর্শ করে বলল, “মনে আছে। সব মনে আছে আমার।”

“তাহলে, চুপ কেন ছিলেন প্রজাপতি?”

“চুপ না থেকে কোনো উপায় ছিল কি? একটা কথা বলেন তো অভিনব, বারো তেরো বছর বয়সী এক কিশোরীকে যখন ব্যবহার করা হয় শুধু মাত্র পারিবারিক রোষ মুক্ত করার জন্য তখন তার মনের অবস্থা কেমন হয়।”

“আপনি শুধু নিজের বিষয়টাই দেখলেন? আর আমি, আমি কি সেক্রিফাইজ করি নি।”

ঝিল কথা বলল না। অভিনব এগিয়ে এসে মেয়েটির গালে স্পর্শ করল, “শুরুতেই কি আমাকে চিনেন নি আপনি?”

“এটা সত্য যে আমি আপনাকে শুরুতেই চিনতে পারি নি। কিন্তু মুখের আদলের পরিবর্তন হলেও মানুষটা তো একই রয়েছে। পুরনো ছবিটা দেখে চিনেছিলাম।”

“তাহলে দূরে কেন যেতে চাইতেন?”

“গত ছয় বছর পরিবার ছাড়া আমার পাশে কেউ ছিল না। এখন প্লিজ এটা বলবেন না আমার মায়েদের মৃ ত্যু র খবর আপনারা জানতেন না।”

ঝিলের চোখে পানি এসে গেছে। আঙুলের অগ্রভাগে মুছে নিয়ে বলল, “চেয়েছিলাম দূরে সরে যেতে। কিন্তু চাইলেই তো দূরে যাওয়া যায় না। আপনি যে আমার ভাগ্য।”

পুনরায় কথা বলার মতো শক্তি পেল না অভিনব। ঝিল আর ওর মাঝে এখন তৈরি হয়েছে লম্বা এক অভিমানের পথ। ছেলেটার শরীর কাঁপছে। ছয় বছর পূর্বের ঘটনা গুলো কেবল চোখে ভাসছে।

নিউইয়র্ক শহরে বেড়ে উঠা অভিনব এখন বাইশ বছরের যুবক। এই বয়সের ছেলেরা সাধারণত প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে থাকে। অথচ অভিনব প্রেম নামক শব্দটি এড়িয়ে চলে। দেশ বিদেশ ভ্রমণ করা ওর বিশেষ শখ। প্রতিবছর দেশের বাহিরে ট্যুর থাকে। এবার ও আছে। পেরুতে অবস্থিত বিখ্যাত জঙ্গল আমাজনে। প্রস্তুতি প্রায় শেষ। ওমন সময় অভিনবর মা ইহরিমা সরকার জানালেন বাংলাদেশে যাওয়ার কথা। দেশটি সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা আছে ওর। মায়ের দেশ বলে কথা। অবশ্য ওর পূর্ব পুরুষরাও বাংলাদেশী। অনেকটা উত্তেজিত হয়েই ট্যুর ক্যানসেল করে ছেলেটা। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আসে। ততদিনে মা বাবার সাথে মামাদের অভিমানের পার্ট চুকে গেছে। বেশ সাদরে গ্রহণ করা হয় ওদের। সপ্তাহ খানেক পরই বদলে যায় চিত্র। মা বাবা হঠাৎ করেই বললেন বিয়ে করার কথা। তা ও নিজের চেয়ে দশ বছরের ছোট এক মেয়েকে। অভিনব বুঝতে পারছিল মামাদের সাথে মা বাবার স্নায়ু যুদ্ধের কথা। মির্জাদের সাথে ঝগড়ার সম্পর্কটা শেষ করার জন্য এই পদক্ষেপ। অভিনবর প্রতি বিশেষ স্নেহ রয়েছে ওর মামাদের। তার বউ যদি হয়‍ মির্জা বংশের মেয়ে তবে এই রোষানলের সম্পর্কটা ফুলের মতো সুন্দর হয়ে উঠবে। এই ধারণা থেকেই সেদিন অভিনব আর ঝিলের বিয়ের আয়োজন হয়। এসবে মত ছিল না মির্জা বাড়ির ছেলেদের। আর না মত ছিল অভিনবর মামাদের। দু পক্ষের কথা ছিল এমন, সবাই মিলে বিয়ের পস্তাব নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু কেউ আগে যেতে চাইলো না। একটা অহংকার বোধ সম্পর্কটা হতে দিল না। এর মাঝে অনড় ছিলেন অভিনবর বাবা মা আর ঝিলের মা চাচিরা। ওনারা চাইছিলেন সব ঠিক ঠাক হোক। বাবা মায়ের মন রক্ষার্থে অভিনব সেদিন গিয়েছিল একটা বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করার জন্য। অচেনা সেই বাচ্চা মেয়েটি সেদিন কেন এসেছিল তা জানে না অভিনব। প্রশ্নটা করতেই মৃদু হাসল ঝিল। বসা থেকে উঠে এসেছে সে।
“আপনার কি মনে হয় বারো তেরো বছর বয়সী একটি মেয়ে বিয়ের জন্য নাচতে নাচতে চলে আসবে?”

“সত্যিই আমার জানা নেই। আপনার কাছে অপশন ছিল ঝিল। কিন্তু আমি নিরুপায় ছিলাম। আমার বাবা মা দুজনেই চেয়েছিলেন বিয়েটা হোক। কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে তো তেমনটা নয়। তাহলে কেন এসেছিলেন?”

“বাধ্য ছিলাম। দিনকে দিন চোখের সামনে পরিবারের অশান্তি দেখতে কার ভালো লাগে বলতে পারেন? দুটো পরিবারের মাঝে সর্বদা ঝামেলা লেগেই থাকে। পাপারা রাতে বাড়ি ফিরে না। ভাইয়েরা ও তাই। প্রায়শই র ক্তা ক্ত হতে দেখেছি। মা বলেছিল এটাই নাকি পথ।”

বাক্যটি শেষ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল ঝিল। অভিনবর মাথা নিচু করা। ঝিল হেসে বলল, “কিন্তু একটা সত্য কি জানেন আমার ভাগ্য মেনে নিয়েছিলাম আমি। আর এর থেকেও সুন্দর বিষয় ছিলেন আপনি। এক পলক দেখেছিলাম আপনাকে। মনে হয়েছিল সময়টা ভুল হলেও আমি ঠকি নি। বয়সটা তখন ভালো লাগার। আপনাকে সত্যিই আমার চোখে লেগেছিল।”

চলবে…
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে