সুখের খোঁজে পর্ব-০৩

0
639

#সুখের খোঁজে……(পর্ব -৩)
#মৌমিতা হোসেন

নিতুর বাবা মারা যাওয়ার পর চাচা চার /পাঁচ মাস টাকা দেয়।এরপর থেকে বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে এড়িয়ে যায়। নিতুর কাছে চাচাকে আজকাল খুব স্বার্থপর মনে হয়।ফুপিদের ও বিরক্ত লাগে।ফুপিরা ফোন দিলেই ওর মাকে শুধু নিতুর বিয়ের কথা বলে।আর এটাই নিতুর বিরক্তির কারন।

কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে উঠলে হঠাৎ একদিন বড় ফুপু তার ছোট ছেলেকে নিয়ে বেড়াতে আসে।ছোট ছেলের নাম আতিক। মাস্টার্স পরীক্ষা দেবে সামনে।বড় ফুপুর দুই ছেলে এক মেয়ে।বড় ছেলের বিয়ে হয়ে গেছে।মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। ছেলে বিদেশে থাকে। দুই মাস পর দেশে আসলেই বিয়ে হবে।এসব কথা জানাতে আর ভাইয়ের ছেলে মেয়েদের দেখতেই মুলত বড় ফুপু নিতু দের বাসায় আসে। সালেহা বেগম দেখে খুশি হলেও খরচের কথা মাথায় আসলে চিন্তায় পরে যান। সেতু, সাজিদ ফুপি আর ভাইকে দেখে বেশ খুশী হয়।

আতিক বাসায় এসেই নিতুর খবর নেয়।সেতু দৌড়ে গিয়ে বলে,’আপু তাড়াতাড়ি চলো ফুপি এসেছে। তোমাকে ডাকছে।আতিক ভাইও এসেছে সেও তোমাকে খুঁজছে।’

নিতু যেইনা শোনে আতিক ভাইও আসছে তখনই কপাল কুঁচকে বসে পড়ে।কারন নিতুর আতিক ভাইকে মোটেও পছন্দ নয়।দশম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় একবার এসেছিলো উনি। তখন ভাইয়ার কথা বলার ধরন নিতুর পছন্দ হয়নি।কথায় একটু বাজে ইঙ্গিত দিয়েছিলো আতিক ভাই।আর বিভিন্ন অজুহাতে নিতু কে ছুঁয়ে দিতে চাইতো এসব নিতুর ভালো লাগেনি।ভাইয়ের উদ্দেশ্য যে মোটেও ভালো ছিলোনা সেটা নিতু খুব ভালো ভাবেই বুঝেছিলো।তারপর যেকদিন ছিলো একটু এড়িয়ে চলেছিলো নিতু।আজ আবার এসেছে শুনে বেশ বিরক্ত হয়। তবুও ভাবে এতো দিনে হয়তো তার কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে।এই ভেবে ফুপির ডাকে মাথায় ওড়না পেঁচিয়ে দৌড়ে যায়।বলে,
‘আসসালামুওয়ালাইকুম ফুপি।’

ফুপি নিতু কে দেখে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।বলে,’ওয়ালাইকুমুস সালাম।কেমন আছিস মা?’

‘ভালো। তুমি ভালো আছো?’

‘হুম আছি আলহামদুলিল্লাহ।তোর পড়ালেখা কেমন চলছে!’

‘জ্বী ভালো।’

কথার মাঝেই নিতু খেয়াল করে আতিক তাকিয়ে আছে ওর দিকে। কিছুটা বিরক্ত হয়ে সালাম দেয়।

আতিক একটু বাঁকা হেসে উত্তর দিয়ে বলে,’কেমন আছো নিতু?এই কদিনে বেশ বড় হয়ে গিয়েছো দেখছি।’

অন্যরা কেউ না বুঝলেও নিতু বুঝতে পারে আতিক ভাই আসলে কি বলতে চেয়েছে।তাই আর কথা না বাড়িয়ে ফুপিকে নিয়ে ভেতরে চলে যায়।

সত্যি আতিকের চরিত্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি।আতিক আড়চোখে নিতুর ওপর একবার চোখ বোলায়। মনে মনে আওড়ায়,’এবার আমি আমার ইচ্ছে পূরণ না করে বাড়ি ফিরবো না নিতু রানি।’

সারাক্ষন গল্প , খাওয়া সব নিয়ে সবাই ব্যস্ত থাকে। ফোনে ফুপি নিতুর বিয়ের কথা বললেও এখানে এসে আর এই ব্যাপারে কিছু বলেনা তাই নিতু মনে মনে বেশ খুশি হয়।ফুপি আর সালেহা বেগম বারবার নিতুর বাবার কথা মনে করে আর কান্না করে।সন্ধ্যায় সবাই পড়তে বসে। হঠাৎ কারেন্ট চলে গেলে সেতু লাইট আনতে যায়।ওর সাথে সাথে সাজিদ ও যায়। সেতু যেতো লাইট আনতে কিন্তু ঐ রুমে আতিক ভাই সহ সবাই গল্প করছিলো তাই আর যায়নি‌।নিতু আসলে এবার আর কোন খারাপ পরিস্থিতিতে পরতে চায়না।এর মাঝে কোথা থেকে যেনো হুট করে আতিক নিতু দের রুমে এসে নিতুর পাশে বসে পরে। শরীরের সাথে ঘেসে বসতেই নিতুর অস্থিরতা বেড়ে যায়।বেশ বিরক্ত হয়েই ফিসফিস করে বলে,’এসব কি আতিক ভাই সরে বসুন।এসব আমার পছন্দ না।’

আতিক অন্ধকারে সুযোগ পেয়ে পেছনে হাত নিয়ে কোমর চেপে ধরে।আর বলে ,’কেনোরে নিতু আমি একটু ছুঁতে চাইলেই তোর সমস্যা হয়? স্কুলে যাওয়া আসার পথে নাকি তোর জন্য এক প্রেমিক অপেক্ষা করে। ওকে বুঝি খুব ভালো লাগে?তো সে কেমন দেখতে? আমার চেয়েও ভালো?’

আতিক এর স্পর্শে আর কথা শুনে নিতু রাগে,ঘৃনায় এক ধাক্কায় আতিক ভাইকে সরিয়ে দেয়। কিছু বলবে তার আগেই সেতু লাইট নিয়ে এসে ভাইকে দেখে বসতে বলে। কিন্তু সেতুকে দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পরে আতিক।আর তখনি নিতুর দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে চলে যায় পাশের রুমে।

নিতুর খুব খারাপ লাগে।আতিক ভাইকে খুব নোংরা মনে হয়। কিন্তু এসব কথা কাকে বলবে তাই চুপ থাকে। পরবর্তী দুই দিন বিভিন্ন ভাবে সুযোগ পেলেই আতিক নিতুর সাথে বাজে ব্যবহার করে, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছুঁয়ে দেয়। খুব খারাপ লাগে নিতুর। আর এতে নিতু কি করবে বুঝতে পারছিলো না।

আতিক কে পেয়ে সালেহা ও পরদিন বলে যে,’যে কদিন তুই আছিস ওদের স্কুল, কলেজে তুই একটু নিয়ে যাস। আমি এদিকটা সামলাই।’

আতিক যেনো মনে মনে এটাই চাচ্ছিলো। খুব খুশি মনে রাজী হয়ে যায়। কিন্তু নিতু এসব শুনে খুব বিরক্ত হয়।আর মনে মনে ঠিক করে যে, যেই কদিন আতিক ভাই থাকবে সেই কদিন একটু সতর্ক হয়ে চলতে হবে।আর সেভাবেই চলে নিতু। কলেজে যাওয়া আসার পথে যাতে কোন অসভ্যতা না করতে পারে সেজন্য সেতুর আগে ছুটি হলেও ওকে বসিয়ে রেখেছে।নিতুর ছুটি হলে তারপর বের হয়েছে।ওরা দুজন একই স্কুল কলেজে পড়তো।আলাদা বিল্ডিং হলেও গেইট একটাই তাই একসাথেই বের হয় এই দুই দিন। আতিক কোনভাবেই নিতু কে এই দুই দিন একা পায়নি তাই কিছু বলতেও পারেনি।

আসলে আতিক যখন শেষের বার নিতু দের বাড়ি বেড়াতে আসে তখনই ওর নিতু কে পছন্দ হয়। এটাকে আসলে ঠিক পছন্দ বলা যায়না নিতুর বাড়ন্ত শরীরের ওপর নজর পরে আতিকের। স্বার্থ হাসিলের জন্য নিতু কে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু নিতু আতিক কে সব সময় বড় ভাইয়ের মতোই সম্মান করে এসেছে।আর আত্মীয়ের মধ্যে এসব নিতুর পছন্দ না।তাই নিতু না করে দেয়।তখন একদিন সুযোগ বুঝে নিতু কে বাজে ইঙ্গিত দিলে কিশোরী নিতু বেশ ঘাবড়ে যায়।আর এক পর্যায়ে আতিক কে চড় দিয়ে অপমান করে।সেই থেকেই নিতুর ওপর আতিকের অনেক ক্ষোভ।আর তাই এবার সেই অপমান এর প্রতিশোধ যেভাবেই হোক নেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে আতিক।

রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে মাঝরাতে সাজিদ উঠে পানি খেতে চায়। সাজিদ ওর মায়ের সাথে ঘুমালেও ফুপি থাকায় আজ আপুদের সাথেই ঘুমিয়েছে। নিতু ঘুমঘুম চোখে উঠে দেখে রুমে পানি আনতে ভুলে গেছে।মাঝের রুমে টেবিলের পাশে একটা ছোট খাট সেখানেই আতিক ভাইকে ঘুমাতে দেয়া হয়েছে।তাই পানি আনতে যেতে খুব অস্বস্তি হচ্ছিলো।কিন্তু উপায় না পেয়ে পানি আনতে গেলেই আতিক উঠে এসে নিতুর হাত ধরে।নিতু ভয় পেয়ে যায়।

নিতু বলে,’আতিক ভাই কি করছেন?হাত ছাড়ুন।’

আতিক আরো জোরে হাত চেপে ধরে বলে,’কেনো না ছাড়লে কি করবি? খুব পালিয়ে বেড়াচ্ছিস এবার।ভয় পাস বুঝি?’

নিতু কাঁপা কন্ঠে উত্তর দেয়,’ভভ…ভয় পাবো কেনো? আপনি আমার হাত ছাড়ুন। সাজিদ পানি খাবে তাই পানি নিতে এসেছি।’
হাত ছাড়াতে নিলে আতিক আরো শক্ত করে ধরে পাশেই দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।পানির গ্লাসটা কাত হয়ে পরে যায়।

‘প্লিজ ভাইয়া আমার সাথে এমনটা করবেন না। আমি আপনার বোন হই। আমাকে যেতে দিন ।আম্মু চলে আসলে খুব খারাপ হবে।’নিতু কথাগুলো বলে কাঁদতে থাকে।

কিন্তু আতিক আজ বেসামাল।ওর উদ্দেশ্য শুধু নিতুর শরীর। আতিক নিতুর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় স্পর্শ করতে থাকে। নিতু আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে সেখান থেকে চলে আসার জন্য।এক পর্যায়ে আতিক রেগে বলে,’এতো ছটফট করিস না। আমাকে আমার কাজ করতে দে। নাহলে মা,চাচি কেউ চলে আসলে তোকেই সবাই খারাপ বলবে। আমাকে না।কারন এতো রাতে তুই এখানে এসেছিস আমি কিন্তু যাইনি।’

আতিক একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে নিতু কে জড়িয়ে ধরে কামিজের চেন খুলতে থাকে।

নিতু বুঝতে পারছেনা এখন ও কি করবে।চোখ থেকে পানি ঝরতে থাকে।আরো খারাপ কিছু হবে তার আগেই নিতু আতিক কে এক ধাক্কায় সরিয়ে যেতে নিলে আতিক আবার নিতু কে ধরে এক ধাক্কায় বিছানায় ফেলে। নিতুর ওপরে উঠে চেপে ধরলে আর কোন উপায় না পেয়ে নিতু চিৎকার দেয় আর তখনই নিতুর ফুপি আর মা দৌড়ে ঐ রুমে এসে লাইট জ্বালায়। আতিক সাথে সাথে সরে যায় আর নিতু দৌড়ে এসে ওর মাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। নিতুর মা আর ফুপি অবাক হয়ে আতিকের দিকে তাকিয়ে থাকে।ফুপি বলে,’এসব কি দেখছি আমি?আতিক তুই কি করছিলি নিতুর সাথে?’

‘বিশ্বাস করো আমি কিছু করিনি মা।নিতুই এসেছে আমার কাছে। এসে বলছে ও নাকি আমাকে ভালোবাসে।আরো বাজে প্রস্তাব দিয়েছে।ও পানি নেয়ার নাম করে এখানে এসে আমাকে ডেকে আরো অনেক উল্টাপাল্টা কথা বলছিলো।’

এসব শুনে নিতুর মা বলল,’কি বলছিস এসব আতিক? নিতু এমনটা কখনো বলতে পারেনা। আমি চিনি আমার মেয়েকে।তুই এমন কথা……’

ফুপি হাত উঁচু করে ইশারায় সালেহাকে চুপ করিয়ে দেয়।বলে,’আর কতো নিজের মেয়ের কুকীর্তি ঢেকে রাখবে সালেহা? তোমাকে বারবার বলেছি মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দাও।কথা শুনছো না।এ কেমন বেহায়া মেয়ে বানিয়েছো।ফুফাতো ভাইয়ের দিকে কেউ এমন নজরে তাকায়?লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে।এসব করে বুঝি আমার ছেলেকে ফাঁসানোর প্ল্যান ছিলো তোমাদের?’

‘চুপ করেন আপা এসব কি কথা বলছেন আপনি?চিন্তা করে বলুন কি বলছেন। আপনি কি নিতু কে চেনেন না? আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?যা মুখে আসছে তাই বলছেন।এমন সব কথা আর বলবেন না প্লিজ।’

‘সালেহা তোমার কথায় তো মনে হচ্ছে তুমিও এই প্ল্যান এর অংশিদার। সত্যি আমারই বোকামি হয়েছে।তোমাদের এখানে আসাটাই আমার উচিত হয়নি। আমার ভাইটাকে শেষ করেছো।এখন আবার আমার ছেলের দিকে তোমাদের নজর পড়েছে।ছিঃ….’

আতিক প্রথমে একটু ভয় পেলেও মায়ের সাপোর্ট পেয়ে মনে মনে বেশ খুশি হয়।আর মায়ের সামনে আরো করুণ চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মনে হচ্ছিলো সত্যি সব দোষ নিতুর।আর আতিক পুরোপুরি নির্দোষ।

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে