#সিঁদুর_রাঙা_মেঘ
#সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
পর্ব_১১,১২,১৩
চিত্রার বুক চিড়ে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো। চোখ দিয়ে দু ফোটা জল গড়িয়েও পড়েছে তার। কত ভালবাসা এই দুটি মানব-মানবীর মাঝে অথচ দুজন দুজনের কাছে ধরাই দিতে চায় না! চিত্রা পাতা উল্টালো,,
সকাল হতেই বাড়িতে হৈ চৈ শুরু হলো। আজ ইউসুফ আর হুরের এঙ্গেজমেন্ট। রাতেই অনুষ্ঠান। ঠিক করা হলো এটাও ঠিক ১৫ দিন পরে ইউসুফ ও হুরের বিয়ে। এখনো কিছু কেনা-কাটার বাকি দেখে মিশু আর কুহুকে পাঠিয়ে দিল শপিং এ। ড্রাইভার অবশ্যি ইউসুফ ছিল। সকাল থেকেই কুহুর মনে কালো মেঘের ন্যায়। কিছুক্ষণ পর পর চোখ জোড়া ভিজে উঠছে। কারণটা তার কাছে পরিষ্কার। আজ ইউসুফের হাতে হবে হুরের নামের আংটি আর হুরের হাতে ইউসুফের। এক অদৃশ্য বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যাবে আংটি বদলের মাঝেই। কুহুর চোখ-মুখ ফুলে গেছে খুব। যার জন্য কুহুকে অন্য রকম লাগচ্ছে। মিশু তা খেয়াল করলো।বলল,
—“কুহু তোর শরীর ভাল তো? এমন দেখাচ্ছে কেন?”
কুহু ফিচাল হাসলো। মিশুর কথায় আড় চোখে গাড়ি সামনের লুকিং গ্লাসে ইউসুফ দেখতে ভুললো না তাকে। কুহু ঠিক তাদের পিছনের সিটে। মিশু ইসুফের সাথে সামনে বসেছে। কুহু বলল,,
–” তেমন কিছু না বড়পু। ঠান্ডা লেগেছে তো তাই!”
কুহুর কন্ঠেও কেমন নাকে নাকেই আসচ্ছে বুঝতে বাকি নেই ইউসুফের কুহু কাল সেই বৃষ্টির মাঝে নিজেকে ভিজিয়েছে।
গাড়ি থামলো বড় একটি শপিং মলের সামনে। গাড়ি থেকে নামতেই কোথা থেকে দৌড়ে এলো হুর।এসেই ঝাঁপটে ধরলো ইউসুফকে। ইউসুফ ধরলো না তাকে। না সড়াতে চাইলো। হুর কিছুক্ষণ পর নিজেই ছেড়ে দিল। হুরকে দেখে মিশুকে খুব একটা খুশি দেখালো না। সেদিনের পর থেকেই হুরকে অসহ্য লাগে মিশুর। মিশু বলল,
—” ভাইয়া আমরা গেলাম তুমি আসো।”
বলে পা বাড়ায় ভিতরে। পিছন একবার কুহু তাকাতেই হুরের ক্রোধান্বিত দৃষ্টিতে চেয়ে হুর। কুহুর বুঝতে পারলো না এমন দৃষ্টির মানে। মনে মনে কেমন একটা ফিল হলো তার। মিশুকে বলল,,
—” উনি আমার দিকে এমন ভাবে চাইলো কেন?”
—“কেমন ভাবে?”
—” কেমন ভাবে যেন। মনে হচ্ছিল তার দৃষ্টি দিয়ে ধ্বংস করে দিবেন আমায়।”
মিশু হাসলো। বলল,,
— ” হবু বরের এক্সকে কোনো বউ সহ্য করে নাকি?”
কুহু অবাক হয়ে বলল,,
—” কি বলছো এসব? উনি এসব জানে?”
মিশু এতক্ষণ ফোন চাপ ছিল। ফোন ব্যাগে ঢুকিয়ে কুহুর দিক ঘুরলো। বলল,,
–” এ সব মেয়েরা তার জিনিসকে অন্যকারো হতে দেয় নারে কুহু! তারা তার বর হোক বা বফ তাদের লাইফের পাস্ট , প্রেজেন্টস সব জানতে আগ্রহী। যখন থেকে যেনেছে ভাইয়া তোকে ভালবাসতো তখন থেকেই শিকারি দৃষ্টি তোর দিকে। এদের থেকে দূরে থাকিস। এবার চল!”
তারা ভিতরে এলো। পিছন পিছন ইউসুফ আর হুরও এলো। হুর ইউসুফের হাত ধরে ঘুরছে। তা দেখে বুক ফেঁটে যাচ্ছে কুহুর। সে অন্যদিকে মন দিতে চাইলো। তাই মিশু আর কুহু ঢুকলো লেহেঙ্গা হাউজে। এখানে বেষ্ট ডিজাইনারের লেহেঙ্গা পাওয়া যায়। কুহু দেখতে লাগলো। মিশুতো একটি চয়েজও করে পড়তে চলে গেছে। কুহু ঘুর ঘুর করছে।তখনি চোখ যায় একটি পেয়াজ কালারের সিম্পল লেহেঙ্গার দিক। কুহু চোখ আঁটকালো সেটাতেই। কুহু তা হতে নিয়ে চেন্জিং রুমে ঢুকলো। পড়নের কাপড় গুলো চেন্জিং রুমের উপরে রেখে লেহেঙ্গাটা পড়ে নিল কুহু। একদম পারফেক্ট ভাবে ফিটিং হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে লেহেঙ্গার ব্লাউজের হাতটি স্লীভলেস পিঠের দিক শুধু দুটি ফিতা দেওয়া। তার উপর কুহু মেদহীন মসৃণ পেট ভাসমান, ওড়নাটাও পাতলা। কুহু অনেক স্মার্ট, আধুনিক যুগের মেয়ে হলেও এসব পড়তে অভ্যস্ত নই।তবুও সুন্দর লেহেঙ্গা ট্রাই করলো শুধু। কুহু নিজেকে আবার আয়নায় দেখলো। নিজেকে এই রূপে বেশ লাগচ্ছে। কিন্তু এইটা নিয়া যাবে না। তাই চেন্জ করার জন্য আগের কাপড় গুলো নিতে চাইল। কিন্তু কাপড় তখন সেই স্থানে ছিল না। কুহু ভয় পেলো খানিকটা। এখন কি করবে? ভেবে পেলো না। তারউপর এ ড্রেস কেনার মতো টাকাও নেই তার হাতে। শুকনো ঢুক গিললো কুহু। এ ড্রেসে বের হওয়াও সম্ভব না। কুহু দরজার হালকা ফাকা করে উঁকি দিল। বাহিরে মিশুকে না দেখতে পেয়ে কান্না চোখ উপচে আসচ্ছে। কুহু সেই পাতলা ফিনফিনে ওড়নাটি দিয়ে শরীর ঢাকার বৃথা চেষ্টা করে বেড় হতেই মুখো মুখি হয় ইউসুফের।
ইউসুফ কুহুকে এই ড্রেসে দেখে প্রথম শক্ড তারপর রেগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলল। কুহু তা দেখেও চোখ ফিরিয়ে নিলো। এমনিতেও প্রান পাখি যায় যায়। সে মিশু কে খুঁজতে লাগলো। কিন্তু পেলো না। এদিকে কুহুর মেদহীন পেটের উপর সুন্দর লাল তিলটা দেখা যাচ্ছে। আর পিছন থেকে কিছু লোক তার লোভনীয় দৃষ্টি মেলে চেয়ে আছে। ইউসুফের রাগ মাথায় চড়ে বসলো। বড় পা ফেলে কুহুর কাছে এসেই তার বাহু চেপে ধরে হিসহিস করে বলল,,
—“এতটা নিচে কবে থেকে নামলি তুই? এখন শরীর দেখাতেও দু বার ভাবছিস না। এতটা উন্নত কবে থেকে হলো তোর?”
ইউসুফের কথাগুলো তীরের মতো চুবলো কুহুর বুকে। সে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে ইউসুফে দিকে। ইউসুফ আবার ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,,
–” কি হলো জবাব দিচ্ছিস না কেন? ”
কুহু কান্না ধরে রাখতে পাড়লো না। বড় বড় দু ফোঁটা চোখে জল টুপ করে পড়ে গেল ইউসুফের হাতের উল্টোপিঠে। সাথে সাথে চোখে জল মুছে ফেলল। তখনি হন্তদন্ত হয়ে মিশু চেঞ্জিং রুম থেকে বেড়িয়ে আসে ইউসুফের চেঁচাচেচি শুনে। বলল,,
—” কি হয়েছে ভাইয়া তুমি এভাবে চেঁচাছিলে কেন?”
ইউসুফ কুহুকে ছেড়ে দিল। কঁপালের রগ দুটি টানটান করে ফুলে আছে ইউসুফের। সে বলল,,
—” জিগ্যেস কর তোর বোনকেই!”
কুহু এতখন নিরবে কাঁদছিল। মিশুকে দেখে সে হেচকি তুলে কেঁদে বলল,,
—” বড়পু আমি কিছু করিনি আমি শুধু এটা ট্রাই করছিলাম। পিছনে দেখি কাপড় নেই আমার। তোমাদের কাউকে পাইনি। তাই..!”
বাকি কথা টুকু বলার আগেই ইউসুফ কথা কেড়ে নিয়ে বলল,,
—” তাই শরীর দেখাতে বের হয়ে গেলি? লজ্জাহীনের মতো?”
কুহু কান্না জড়িত কন্ঠে বলল,,
—” বিশ্বাস করেন ইউসুফ ভাই আমি এমন ভেবে কিছু করিনি!”
ইউসুফ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,,
–” তোকে আর বিশ্বাস! পাগলা কুকুর কামড়েছে নাকি আমায়!”
কুহু চুপ করে গেল। তার আর কিছু বলার ইচ্ছেই জাগলো না। তখনি পাশ থেকে হুর তাদের দিক আসতে আসতে বলল,,
—” সব মিথ্যা বলছে এই মেয়ে ইউসুফ। মিডেলক্লাস মেয়েরা এমনি থার্ডক্লাশ প্ল্যান বানিয়ে দামি কাপড় হাতানো ধান্ধায় থাকে। ”
হুরের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো ইউসুফ।তার পরিহিত জ্যাকেট কুহুকে পড়িয়ে দিল। কুহু আবাক হয়ে তাকালো ইউসুফের দিক।আর যাই হোক ইউসুফ তার কর্তব্য পালন করতে পিছপা হয় না। ইউসুফ তখন ক্রুর কন্ঠে হুরকে বলল,,
—“লাগাম লাগোও মুখে হুর? তাকে তুমি থার্ডক্লাশ বলছো? তুমি চিনো ওকে?ওর বাবার যা আছে তোমার বাবা সারাজীবন চাইলেও ইনকাম করতে পাড়বে না। ”
হুর রেগে কটমট করে বলল,,
–” তুমি আমাকে অপমান করছো? এ থার্ডক্লাশ ক্লাস মেয়ের জন্য?”
ইউসুফ তর্জনী আঙ্গুল উঁচিয়ে শক্ত গলায় বলল,,
—” চুপ। যথেষ্ট বলছে। আর একটি কথা বললে ভুলে যাবো তোমার সাথে আমার বিয়ে হতে যাচ্ছে।”
ইউসুফের এমন কথায় হুর যেন অবাক হতে পড়লো না। কুহুর জন্য মনের কোনে আরো একরাশ ঘৃণা নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে গেল শপিং মল থেকে। মিশু খুশি হলো মনে মনে বলল উচিত শিক্ষা দিয়েছে এরে। আর কুহু! সে মুগ্ধ নয়ন তাকিয়ে তার ইউসুফ ভাইয়ের দিক। লোকটি তাকে ঘৃণা করে মুখে বললেও, এখনো মানতে পারে না কুহুকে কেউ হেয় করে কথা বললে।
সেদিন ঝড় যেন শেষ হওয়ার নামই নিছিলো না। শপিং মল থেকে ফিরেই কুহু সম্মুখীন হতে হয় সুমির। মেয়েকে সকলের সামনে থাপর দিয়ে অকথা-কুকথা বলেই চলেছিলেন তিনি। আর দু চারটা কিল থাপড় দিয়ে চুলের মুঠি টেনে ধরে রুমের মাঝে নিয়ে দরজা আটকে আরো মারতে লাগেন তখন। মিশু আর আয়শা চেয়েও আটকাতে পড়লেন না। মাইশা দু একবার বলার পর চলে গেলেন। এদিকে ঘরের ভিতর কুহুকে সুমি মেরেও যাচ্ছেন আর নিজেও কেঁদে যাচ্ছেন। মিশু কুহুর আর্তনাদ ভিতর থেকে শুনতে পেরেই ইউসুফকে কল করলো। ইউসুফ তাদের নামিয়ে রাস্তার মোড়ে গেছিল তার এক বন্ধু এসেছে এঙ্গেজমেন্ট উপলক্ষে রিসিভ করতে। তখনি মিশুর ফোন দেখে ভ্রু কুচকায় ইউসুফ। ফোন তুলতেই ওপাশ থেকে মিশুর কান্না জড়িত কন্ঠ শুনে ছুটে আসে এক প্রকার বাসায়।তখন জটলা দেখতে পায় কুহুর রুমের পাশে। ইউসুফ সেখানে যেতেই মিশু সবটা বলে। রেগে যায় ইউসুফ। দরজা জোরে জোরে করাঘাত করে বলে উঠে,,
—“ফুপি তুমি বের হবে? নাকি আমি দরজা ভাঙ্গবো?”
ইউসুফের রাগের সাথে পরিবারের সবাই পরিচিত। মাইশার কথায় তখন রেগে গেছিল খুব সুমি। হুর তখন শপিং মলের সব কথা ফোনে কেঁদে কুটে মসলা মিক্স করে জানায়। মাইশা রেগে আগুন হয় দু চারটে বাঁকা কথা শুনিয়ে দেয় সুমিকে। সুমি তখন রাগ দমন করতে না পেরে মেয়েকে মারতে শুরু করে।
সুমি দরজা খুলে দিলে। তাকে ঠেলে ইউসুফ ভিতরে যেতে চাইলে সুমি হাত উঠিয়ে বাঁদা দিল। গম্ভীর কন্ঠে বলল,,
—” তুমি যেতে পাড়বে না ইউসুফ ওর কাছে। ঘরে যাও। আমি চাই না আমার মেয়ের জন্য তোমার লাইফ আর নষ্ট হোক। ”
ইউসুফ সুমির কথা তোয়াক্কা না করে সুমির পিছনে তাকাতেই তার বুক কেঁপে উঠে। তার বাবুইপাখি মাটিতে গুটিশুটি মেরে বসে কাঁদচ্ছে।পরনের সেই লেহেঙ্গা টি ছিঁড়ে গেছে অনেক জায়গায় । কুহুর চুল এলো মেলো,ঠোঁটের কোনে কেঁটে গেছে। কঁপাল ফুলে লাল হয়ে গেছে। কুহুকে এ রূপ বিধ্বস্ত দেখে তার বুকেও চিনচিন ব্যথা অনুভব হচ্ছে। ইউসুফ সুমিকে পাশ কেঁটে যেতে নেয় আবার সুমি একি কথা বলতেই ইউসুফ চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠে,,
—” আমার লাইফ নষ্ট হবে কিন না তা পরের কথা। অন্যের কথায় নিজের মেয়ের যে হাল তুমি করেছ একবার জানার প্রয়োজন বোধ করলেই না কি হয়েছিল? কেমন মা তুমি??”
ইউসুফের কথায় হকচকিয়ে গেল সুমি। বুকের মাঝে ছ্যাঁত করে উঠলো। সত্যি তো আজ পর্যন্ত কখনোই নিজের মেয়েকে বিশ্বাস করেননি সুমি। ইউসুফ সুমিকে পাশ কাটিয়ে ভিতরে চলে এলো। কুহুর সামনে বসে পড়লো। কুহু তখন মাটির দিকে তাকিয়ে। ইউসুফ তার দু আঙ্গুলো কুহুর মুখ উপরে তুললো। কুহু তার লাল চোখ জোড়া নিয়ে ইউসুফের দিক তাকিয়ে আবার নামিয়ে নিল। ইউসুফ তখন মিশুকে চেঁচিয়ে ডেকে বলল ফার্স্ট এইড বক্স আনতে। মিশু সঙ্গে সঙ্গে হাজির। ইউসুফ কুহুর ব্যথার জায়গায় মেডিসিন লাগিয়ে দিতে দিতে বলল,,
—” আল্লাহ মুখ দিয়েছেন সময় মত ইউস করার জন্য। ফুপি যখন মারছিল কিছু বলতে পাড়লি না?”
কুহু বলল না কিছু। মাথা নত করেই রাখলো। ইউসুফ কুহুর ঠোঁটের কোনের জখমে মেডিসিন লাগালো। কুহু কেঁপে উঠলো ব্যথায়। ইউসুফ তা দেখে আবার বলল,,
—“আজ এসব কিছুর জন্য তুই দায়ী। শুধু তুই। ”
বলে উঠে চলে গেল ইউসুফ। বুক ফেঁটে কান্না পাচ্ছে খুব।
পর্ব_১২
ছাদের ধারে দাঁড়িয় ইউসুফ। তাদের বৃষ্টি বিলাস ভবনটির ছাদ থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ দেখা যায়। শুধু তা নয় নদের ওই পারের বসতবাড়ির টিমটিম করে জলা আলো দেখা যায়। যেন এক ছোট তারা। ইউসুফ প্রায়ই অবসর সময় এখানে দাঁড়িয়ে থাকে। এক অজানা কারণেই এ জায়গাটি তার কাছে খুব ভাল লাগে। মনের মাঝে শান্তি লাগে তার। ইউসুফ ছোট শ্বাস টেনে নিলো। মৃদু বাতাসের সাথে তাদের বাগান থেকে ভেসে আসচ্ছে হাসনাহেনা, গন্ধরাজ সহ আরো দেশি-বিদেশী ফুলের গাছের সুঘ্রাণ । এসব অবশ্যি মালির কাজ। তাদের এ বিশাল বাগানের দায়িত্ব তারই। ইউসুফ এবার ছাদের কর্নারে বসলো। দূর থেকে এসে পড়া এক আলোর ঝলক পড়লো তার হাতের মাঝে। সাথে সাথে এক ঝলক দিয়ে উঠলো হাতের ডায়মন্ডের রিংটি।ইউসুফ তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। কিছু ঘন্টা আগেই তার সাথে হুরের এনগেজমেন্ট সম্পন্ন হয়েছে। এটি তার সাক্ষী। এত দামি রিংটির তার কাছে নিতান্তই মূল্যহীন। ইউসুফ তার পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটি রিং বের করলো। হুরের পড়িয়ে দিয়া রিংটা খুলে তা পড়ে নিল। এ রিংটি তার কাছে অনেক দামি। পৃথিবীর সকল দামি হিরার কাছেই এই রূপার রিং মহামূল্যবান। রূপার রিঙটির উপর খুব সুন্দর নীলাভ্র পাথরে আবৃত করা সবটুকু জুড়ে।
ইউসুফ তাকিয়ে মৃদু হাসলো। তার হাসিতে প্রকাশ পেল অভিমান, রাগ, ক্ষোভ। ইউসুফ রিংটি ঠোঁটে কাছে নিয়ে স্পর্শ করলো। ছলছল করছে তার চোখ। এ রিঙটি তার বাবুইপাখি দিয়েছিল তাকে। তাও নিজের টাকায়। কত কষ্টে সে এ টাকা জমিয়েছিল ইউসুফ তা দেখেছে। কিন্তু সে বুঝতেও পারেনি এই রিংটি বানানোর জন্য কুহু এত কিছু করেছিল। ইউসুফের চোখে ভেসে উঠলো সেদিনের কথা।
—” বড় মামা আমি টিউশনি করতে চাই!”
মহসিন তখন পেপার পড়চ্ছিলেন। কুহুর কথায় মাথা তুলে তাকালেন। কুহু হাত কচলাচ্ছে মাথা নত করে। হয়তো ভাবচ্ছে মামা তাকে যেতে দেবেই না। কিন্তু উল্টো চমকে দিলেন মহসিন কুহুকে। হাতে পেপার ভাজ করে কঁহুর দিক তাকালেন। মুচকি হেসে বললেন,
—“যেটা তোর মন সায় দেয় তাই কর। শুধু খারাপ পথে যাসনে। ”
কুহু খুশি মনে প্রাইভেট পড়ানো শুরু করলো। ইউসুফ পড়ানোর কথা শুনলে আগুন হবে ভেবেই সবটা চেপে গেল। কিন্তু ইউসুফের অগোচরে সে সবটা চেপে গেলও এটা বেশীদিন লুকিয়ে থাকবে! সেটা অসম্ভব। বিশেষ করে কুহুর সবকিছুই অবগত ইউসুফের। কুহু সবসময় ট্রাই করতো ইউসুফ বের হয়ে গেলে বা না থাকাকালীন টিউশনি পড়াইতে যেত। শুরু কটাদিন ভালো মত গেলেও একদিন ঠিকি ধরা পরে কুহুর টিউশনি পড়ানোর কথা।সেদিন বাসায় এ নিয়ে তুলকালাম বাজালো ইউসুফ। তার বাবা পারমিশন দিয়ায় তার সাথেও এক দফা রাগা-রাগী করে মাথায় তুলেছিল বাসায়। মহসিন সেদিক ভ্রুক্ষেপ না করে খবর দেখতে ব্যস্ত। ইউসুফ এবার রেগে-মেগে ধুপ ধাপ পায় উপরে চলে গেল। কুহু তখন এক পাশে দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলছিল। মাইশা তখন হতাশ বাপ-ছেলের ঝগড়ায়। তিনি রেগেই বললেন কুহুকে,,
—“ইউসুফ পছন্দ করে না এমন কাজ করতেই কেন হবে তোকে? তোর জন্য আমার ঘরে এখন আশান্তি শুরু হলো।”
কুহু নিশ্চুপ, কেঁদেই গেল। কিছু বলল না। সেদিন ইউসুফ আর নিচে খেতে আসেনি। আয়শা কুহুকে বুঝিয়ে বলল ইউসুফকে বুঝিয়ে নিয়ে আসতে। খাবারের সাথে কিসের রাগ। কুহু তাই করলো। ভয়ে ভয়ে ইউসুফের ঘরে ডাকতে এলো। ইউসুফ তাকে দেখে ক্রর কন্ঠে বলল,,
—” তুই আমার ঘরে কি করছিস? বের হও আমার ঘর থেকে। ”
কুহু গেল না। মনে মনে অনেক অভিমান হলো তার। সে কি কোনো ছেলের সাথে টাংকি মারতে গেছিল যে ইউসুফ এমন করছে? সে তার জন্যই…।
কুহু মিনমিন করে বলল,,
—” রাগ আমার সাথে করছেন। খাবার কি দোষ করেছে? বড় মামনি বসে আছেন, মামা বসে আছেন?”
ইউসুফের যেন তখন পড়ে যাওয়া রাগ ধপ করে মাথায় চরে বসে। এগিয়ে এসে চিল্লিয়ে বলে,,
—” আমার কথা শুনবি না পণ করে বসেছিস?
কুহু ভয় পেয়ে গেল। দু কদম পিছিয়ে গেল সে। সাথে রাগ উঠলো তার। রাগের চোটে বলেই ফেলল,,
—” আপনি এমন কেন ভাব করছেন যেন আমাকে প্রেম করতে দেখে ফেলেছেন? আমার লাইফে কোনো ডিসিশন নিয়ার অধিকার নেই নাকি?”
ইউসুফ রাগে ঘি ঢালার কাজ করলো কুহুর কথাটুকু। দু আঙ্গুল দিয়ে কুহুর মুখ চিপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,
—” অনেক বুলি ফুটেছে তোর মুখে? ভালই তর্ক শিখেছিস? ডিসিশন ডিসিশন নারা লাগিয়েছিস? আমার বালের কথার দাম নাই তোর কাছে? না! যা আমি আজকের পর থেকে কিছু বলবো না তোকে। খুব বড় হয়েছিস না যা নে এবার ডিসিশন। ”
বলেই ঝাড়ি মেরে সরিয়ে দিল কুহুকে। কুহু ইউসুফের কথায় এতটাই বিষময় হলো যে ইউসুফের দিয়া ব্যথার কথা ভুলেই গেল।
সেদিনের পর থেকে ইউসুফ আর কুহুর সাথে কথা বলেনি। অভিমান এত ভর করেছিল যে কুহুর মুখও সে দেখতে চাইতো না। কুহুর তখন মন খারাপ হত খুব। তবু কিছু বলতো না। শুধু সে সময়ের অপেক্ষায়।সেদিন কুহু ইউসুফকে একদম চমকে দিবে এতটা যে ইউসুফ কখনোই ভুলতে পাড়বে না। সত্যি ইউসুুফ চমকে গেছিল। কিছুদিন পর ছিল ইউসুফের জম্মদিন। বার্থডের আগের দিন কুহু ঠিক রাত ১১.৫৫ মিনিটে ইউসুফকে মেসেজ করলো,,
—” ইউসুফ ভাই! আপনাকে একপলক দেখতে চাই। আসবেন কি একটু ছাদে? যাষ্ট ৫ মিনিট?”
কুহু মেসেজ পড়ে মনটা কেমন করে উঠলো ইউসুফের এতদিনের রাগ অভিমান সাইড করে ফেলে পা বাড়ায় ছাদের দিক। ছাদে এসে থমকে যায় ইউসুফ। মুখটা মুহূর্তে হা হয়ে যায়। কুহু তখন মুচকি হেসে এগিয়ে আসে তার কাছে পড়নে আজ তার একটি কালো শাড়ি। যার জন্য শরীরের টকটকে রং আরো টকটক করছে। তারউপর চারিদিকের কৃত্তিম আলোয় চারিপাশ আরো রোমান্টিক করে তুলেছে।
—” হেপি বার্থ ডে ইউসুফ ভাই!”
কুহুর উইশ করাতে ইউসুফের ঘোরলাগা কাটে। ইউসুফ এখনো বিষ্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে। কুহু হেসে এবার ইউসুফের হাত ধরে বলল,,
—“এখনো রেগে থাকবেন? ”
ইউসুফ কি বলবে ভেবে পেল না। শুধু বলল,
—“তোর আমার বার্থডের কথা মনে ছিল?”
কুহু এবার ইউসুফের বাহু জড়িয়ে ধরে। ইউসুফের কাঁধে মাথা রেখে খালি গলায় সুর তুলে বলে,,
—” তুমি মোর জীবনের ভাবনা
হৃদয়ের সুখের দোলা
নিজেকে আমি ভুলতে পারি
তোমাকে যাবে না ভোলা। ”
ইউসুফ মুগ্ধ হয়ে কুহুর দিক তাকালো।দু হাতে কুহুর গাল ধরে, কুহুর কঁপালে নিজের কঁপাল ঠেকিয়ে বলল,,
—” এতো ভালবাসিস? আগে জানতাম না তো?এতে ভালবাসায় পূর্ণ করে আমার মন, ছেড়ে যাবি নাতো কখনো??”
কুহু ইউসুফকে জড়িয়ে ধরে ফেলল। ধরে আসা কন্ঠে বলল,,
—” প্রান থাকতে না ইউসুফ ভাই! আপনি যে আমার সব!”
ইউসুফও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।তখনি কুহুর ফোনে এলার্ম বেজে উঠে। কুহু হন্তদন্ত হয়ে ইউসুফকে টেনে নিয়ে যায় ছোট একটি টেবিলের ধারে। হাতে ছুরি ধরিয়ে বলে,,
—” কেক কাটুন!”
ইউসুফ হেসে ফেলল কুহুর পাগলামিতে। বলল,,
—” তুই আমাকে এখনো ছোট মনে করিস? কেক কেটে বার্থডে করবো?”
কুহু চোখ চোখ ছোট ছোট করে বলল,,
—“ছোটরাই বুঝি কেক কাটে? বড়দের মানা নাকি?”
ইউসুফ আবার হেসে ফেলল। কুহু এমন ছোট ছোট বাচ্চামো গুলো কতই না ভাল লাগে তার। খথচ আজ শাড়িতে বাচ্চামেয়েটিকে একদম পরিপূরণ নারী বলে মনে হচ্ছে ইউসুফের।
অবশেষে কেক কাটা হলো। গাল ভর্তি করে কেক মাখালো ইউসুফ কুহুকে। কুহু কপাট রাগ দেখিয়ে মুছতে লাগলো ইউসুফ খিলখিল করে হেসে যাচ্ছে।তখন কুহু নিচে বসে পড়ে। ইউসুফ অবাক হলো। কুহুর এভাবে নিচে বসে পরায় ভয়ও পেল খানিকটা। তার বাবুইপাখির কিছু হলো না তো? এ মেয়েতো আজ কাল নিজের খেয়াল রাখতেই ভুলে গেছে।
—” কি হয়েছে বাবুইপাখি নিচে বসলি কেন?
কুহু তখন বসে থেকেই তাকায় ইউসুফের দিক। ঠিক এক হাটু গেড়ে বসেছে। ইউসুফকে সে আবাকের শেষ চূড়ায় ফেলে হাতে একটি রিঙের বক্স বের করে হাসি মুখে বলে,,
—“আপনিকি হবেন আমার? ”
আজও চাঁদ উঠেছে বড় থালার রূপালি চাঁদ। চাঁদের আলোয় রিঙে পড়ায় ঝলক দিয়ে উঠছে। ইউসুফের চোখ ছলছল করে উঠে কুহু সামনে বসে বলে,,
—” আমি জীবন, মরণ এমন কি জান্নাতেও তোর থাকবো বাবুইপাখি। আর এসব কেন? তুই জানিস না তোর ইউসুফ ভাই তোকে কত ভালবাসে? এসব পাগলামি কেন?”
কুহু ইউসুফের হাতে রিঙটি পড়িয়ে দিয়ে বলল,,
—” আমি চেয়েছিলাম আপনাকে চমকে দিতে!”
ইউসুফ তাকালো কুহুর দিক। হালকা বাতাসের ঝাঁপটে কুহুর চুল উড়চ্ছে। কালো শাড়ির আচঁলটিও নড়ছে। ইউসুফ কুহুর চুুল গুলো কানের পিছনে দিয়ে বলল,,
—” এ জন্যই টিউশনি করেছিস?”
কুহু চমকালো না একটুও। তার ইউসুফ ভাই অতি বুদ্ধিমান মানুষ। কুহু বলল,,
—” আপনার পছন্দ হয়নি?”
—“অনেক পছন্দ হয়েছে। সব বার্থডে থেকে এটা বেষ্ট ছিল। কিন্তু তুই আমায় সব দিলি আমি কি দেই বলতো?
কুহু তখন ইউসুফের বুকে মাথা রেখে বলল,,
—“আপনার বুকে একটু ঠাই!”
ইউসুফ মুচকি হাসলো। কুহুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,
—” এ পুড়ো বুক জুড়েই তোর বসবাস কুহু! তুই ছাড়া আর কারো ঠাই নেই।”
কুহু কাঁদতে লাগলো ইউসুফের বুক ভাসিয়ে। এত সুখ, এত ভালবাসা সইবে তো??
ইউসুফের ফোন বেঁজে উঠলো। পুরোনো স্মৃতি মনে পড়তেই চোখ ভিজে উঠেছে তার। মাথাও ধরেছে খানিকটা। রাত হয়েছে মনে হচ্ছে খুব। সে উঠে নিজের ঘরে চলে এলো। আর শুয়ে পড়ল। তার এখন ঘুম দরকার গভীর ঘুম।
পর্ব-১৩
সকালে খাবার টেবিলে ইউসুফ ছাড়া সবাই খেতে বসেছে। কাল অনুষ্ঠানের আগেই আসাদ এসেছিলেন। তখন এতটা কথা হয় নি মহসিনের সাথে।এখন টুকটাক কথা বলে। পাশে দাঁড়িয়ে সুমি এটা ওটা দিচ্ছে সবাইকে। কুহুও পাশে দাঁড়ানো। তখন মহসিন বলল,,
–” ভাই কাল ঝামেলার জন্য ঠিক মতো কথাই বলতে পাড়লাম না। কেমন চলছে দিন কাল!”
–” আলহামদুলিল্লাহ তোমাদের দোয়ায় ভালই চলছে। তা তোমার কি খবর? শুনলাম ইউসুফ নাকি তোমার বিজনেসে হাত লাগচ্ছে?”
মহসিন রুটি ছিঁড়ে মুখে নিয়ে মাথা নাড়ালো।
—” হে। এমনকি বিদেশেও ওল রেডি এর একটি শাখা খুলছে। বিয়ের পর সেখানেই নাকি থাকবে বউ নিয়।”
এমন কথা শুনে দুটো ব্যক্তি নাখোশ। একজন মাইশা, তার ছেলে চলে যাবে আবার ভেবেই বুক ফেটে কান্না পাচ্ছে। আরেকজন কুহু তার ভালবাসার মানুষটিকে কাল সে হারিয়েই ফেলেছে। কুহুর ভাবার মাঝেই সুমি বলল,,
—” কুহু রুটি নিয়ে আয় রান্না ঘর থেকে। ”
কুহু রুটি নিয়ে এলো সুমি তখন বলল তার বাবাকে রুটি দিতে। কুহু মাথা নেড়ে রুটি আসাদের প্লেটে দিতেই আসাদ শক্ত গলায় কুহুকে বলে,,
—” আমি খাব না!”
বলে উঠে চলে যায়। কুহু তখন মন খারাপ করে সাইডে দাঁড়িয়ে থাকে।ইউসুফ তখন নিচে নামছিল। আসাদের এমন কাজে ভ্রুকুটি কুচকায়। আসাদ কাল আসচ্ছে পর থেকেই কুহুকে ইগনোর করছে সকলের চোখে ধরা পড়েছে তখন পাশ থেকে মাইশা বলল,,
—“ভাইজান এভাবে উঠে গেলো কেন?”
সুমি ছোট শ্বাস নিয়ে বলে,,
—” মেয়ের সাথে চার বছর কথা বলে না আসাদ। না তার কোনো কাজে কুহুকে চায়!”
ইউসুফ তখন চেয়ার টেনে পাশে বসে খাবার প্লেট টেনে নিতে নিতে বিড়বিড় করে বলল,,
–“এমন বিশ্বাসঘাতক মেয়েকে যে কেউই চাইবে না।”
কথাটি কারো কানে না গেলেও কুহুর কানে গেল। কারণ ঠিক তার পাশেই ইউসুফ বসেছে। কথাটি তাকে শোনাবার জন্য বলছে বুঝতে বাকি নেই তার। সে আর দাঁড়ালো না চলে গেল। তখন সুমি বলল,,
—” আসাদ আজ ফিরে যাবেন ভাবচ্ছি আমরাও চলে যাই বিয়েরতো ১৫ দিন বাকি। ৫ দিন আগে না হয়…!”
মাইশা তখন বাঁধা দিয়ে বলল,,
—” না না কোথাও যাওয়া হবে না। বিয়ে পর্যন্ত তোমাকে থাকতে হবে। আমি এক কত দিক সামলাবো বলো? তুমি চলে গেলে একবারে দিশেহারা! ”
আয়শাও সম্মিত দিল মাইশা কথা। লাষ্ট পর্যন্ত থেকে যেতেই হলো।
তাদের কথার শেষ হতেই ইউসুফ মহসিন আর মাইশাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,
—” আব্বু আম্মু তোমাদের সাথে কিছু কথা আছে?”
মহসিন খাবার মুখে দিয়ে বললেন,,
—” হুম বলো!”
—” আমি পরশুদিন সাজেক যাচ্ছি। দু দিনের টুরে।”
ইউসুফের এমন ভাবলেষ কথায় আকাশ থেকে পড়ল মাইশা। আজ বাদে কাল তার বিয়ে নাকি এখন ঘুরতে যাবে? নিজেকে সামলে মাইশা বলল,,
—” কি যাতা বলছিস তুই?আজ বাদে কাল তোর বিয়ে? বিয়ের পরে যাস। বউকে সাথে নিয়ে?আরো তার উপর বিয়ের বাড়ি কত কাজ পরে।”
ইউসুফ বিরক্তি সুরে বলল,,
–” দেখো আম্মু আমি বিয়ের কিছুদিন পরই ঢাকা ছাড়ছি। আর বিয়ের এখনো অনেক দেড়ি আছে। ৭/৮ দিন আগে শুরু করলেও ঠিক ঠাক হয়ে যাবে! তার উপর ফ্রেন্ডসদের একটা ব্যাচেলর পার্টি দিতে হতোই?আর আমার এখানে কি কাজ বলো?”
মাইশা হতাশ হলেন। ইউসুফের সাথে কথায় তিনি পাড়বেন না। তাই মহসিন তিক তাকালেন। যার অর্থ “বোঝা তোমার ছেলেকে?”
কিন্তু তাতেও হতাশ হোন মহসিন তার ছেলের কথায় সায় দিয়ে বললেন,,
—“যেতে দাও! ঘুরে আসুক। পরে সময় নাও পেতে পারে?”
মাইশা আর কি বলবে দু হাত হওয়ায় উঠিয়ে অভিমানী সুরে বলল,,
—“যা ইচ্ছে করো!”
মিশুও ঠিস সেই সময় এসে হাজির। সাজেকের কথা সেও শুনেছে। তাই এসেই বায়না ধরে বলল,,
—” ভাইয়া আমাকে নিয়ে যাও? প্লীজ, প্লীজ!”
মাইশা সাথে সাথেই বলল,,
—“তোমার আবার যাওয়ার কি দরকার?”
মহসিন বলল,,
–“যেতে চাইছে যাক না। আমরাও তো কোথাও নিয়ে যেতে পারি না!”
মাইশা এবার রাগ করে উঠে গেল। আর বলতে লাগলো,,
—“যা ইচ্ছে করো। আমার কথার দাম নেই কোনো!”
রান্না ঘরের দিক চলে গেল সে। তখন কাঁদো কাঁদো মুখে বলল মিশু,,
—” ভাইয়া! প্লীজ?”
ইউসুফ তখন রুটিতে জেলি লাগতে লাগতে বলল,,
—“ঠিক আছে যাবি। নুশরা, বুশরা আর মিহুকেও নিয়ে নে!”
মিশুতো খুশিতে গদগদ হয়ে ইউসুফকে বসা ভাবেই জড়িয়ে ধরে বলল,,
—” থ্যাংক ইউ ভাইয়া। ”
ইউসুফ হেসে বলল,,
–“যা যা সব গুছিয়ে নে। পাহড়ি এলাকা ঠান্ডা অনেক।”
মিশু সম্মিত জানিয়ে চলে যেতে নিয়ে আবার ফিরে এসে আমতা আমতা করে বলল,,
—” ভাইয়া, কুহুকেও নিয়া যাবে আমাদের সাথে?”
ইউসুফ কিছু বলার আগেই সুমি বলল,,
—” না না! ও যাবে না। মিহু তো যাচ্ছে। তোমরা বরং যাও। ও আজ তার বাবার সাথে ফিরে যাবে!”
—” এ কেমন কথা ফুপি? ও ফিরত কেন যাবে?”
সুমি এঁটো ফেলেট নিতে নিতে বলল,,
—” ওর নাকি ভাল লাগচ্ছে না এখানে! আবার ভার্সিটিতে যেন কি কাজে ঢেকেছে তাদের!”
—“ফুপি তুমি মিথ্যা বলছো! ”
—“আমি কেন বলবো মিথ্যা?ও যেতে চাইলে যাক আমিতো বাঁধা দি নাই! যাওয়ার ডিসিশন ওই নিল!”
মিশুর রাগ লাগলো। সে যানে কুহুকে এখন থেকে মামি পাঠাচ্ছেন। মিশু বলল,,
—” আমি রাজি করাচ্ছি। ও যাবে আমাদের সাথে। ভাইয়া আগে তুমি বলো। তুমি না নিতে চাইলে আমি কিছু বলবো না!”
ইউসুফ ততখনে খাবার শেষ করে উঠে পড়ছে। টিস্যু পেপার হাত মুছতে মুছতে ভাবলেশহীন ভাবেই বলল,,
—“যার ইচ্ছে হবে সে যাবে! আমি বলার কে?”
চলে গেল উপরে ইউসুফ। মিশু মহা খুশি। ইনডাইরেক্টলি কুহুকে নিতেই বলেছেন ভাইয়া এই ভেবেই!”
চলবে,