শ্রাবণ মেঘের ভেলা ২৭তম পর্ব

0
1174

#শ্রাবণ_মেঘের_ভেলা
#২৭তম_পর্ব

– বললাম, সারাজীবন কি তুমি থাকবে? আমি আমারটা ঠিক করে নিতে পারবো। তোমাকে শুধু শুধু বিরক্ত করতে চাচ্ছি না। আজ তুমি আমাকে দরদ দেখিয়ে সেবা করবে, আমি আবারো তোমার প্রতি উইক হয়ে যাবো। তারপর আমাকেই সেটা বয়ে বেড়াতে হবে। আমি সত্যি আর পারছি না খুব কষ্ট হয়।
– যদি বলি যেটুকু জীবন বাকি আছে আমি আপনার সাথে কাটাতে চাই
– ………
– যদি আমিও আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি, যদি বলি আপনার জীবনের সাথে আমার জীবনটা মিশাতে চাই। যদি বলি আমার আপনার ভালোবাসাটুকু চাই, তখন ও এই একই কথাটা বলবেন?
– তুমি ভেবে বলছো তো যা বলছো।
– অনেক ভেবেছি এই পনেরোটা দিন। অবশেষে মন এবং মস্তিষ্কের যুদ্ধে মনের কাছে মস্তিষ্ককে যে হারতে হলো। আপনাকে হারানোর ভয় যে মনের মাঝে ঝেকে বসেছিলো। তাই আপনার প্রতি অনুভূতিগুলোকে যে মেনে নিতেই হলো। তবে আপনার যদি কোনো আপত্তি থাকে বলতে পারেন।

মাথা নিচু করে পিউ কথাগুলো বলছিলো। গলা দরে এসেছে তার। নীলাদ্রি যেনো কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। তার এতোদিনের ভালোবাসা তবে কি সত্যি হতে চললো? এসব স্বপ্ন নয় তো। চোখজোড়া তার চিকচিক করছে। মনের ভেতর যেনো অজানা শান্তি বয়ে যাচ্ছে এটা হয়তো ভালোবাসার ফিরে পাবার প্রশান্তি। বা হাতটি বাড়িয়ে পিউকে বলতে লাগলো সে,
– ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি। এ হাতটি ভেবে চিন্তে ধরো, একবার ধরলে কিন্তু ছাড়তে দিবো না। যতো ঝড় আসুক এবার যে একসাথে চলার সময় এসেছে।

নীলাদ্রি কথাটুকু শুনে নিজেকে আর আটকে রাখতে পারে নি সে। ছুটে নীলাদ্রিকে জড়িয়ে ধরলো। নীলাদ্রি বুকে মুখ গুজে নিজের মনের সব জমানো কষ্টগুলো অশ্রুরুপে বয়ে যেতে লাগলো। নীলাদ্রির যদিও গায়ে প্রচুর ব্যথা তবুও এ যেনো অন্যরকম সুখ। নিজের ভালোবাসাকে বুকের মাঝে পাওয়াটা যেনো মাতালকরা আনন্দ। তার ভালোবাসার প্রতীক্ষার আজ জয় হলো। এতোদিনের ধৈর্যের আজ সমাপ্তি হলো। না জানি কতোগুলো রাত নির্ঘুম কেটেছে তার, রাত গুলো ফল পেলো সে। আজ সে আকাশ চুম্বি আনন্দ হচ্ছে নীলাদ্রির। এখনও অনেকটা পথ বাকি আছে তবে, সবচেয়ে কঠিনতম পথটি যেনো আজকেই পার করে ফেলেছে সে____

বিকেল ৫টা,
নীলাদ্রি বিছানায় বসা, ঐন্দ্রিলা এবং আসমা বেগম রান্নাঘরে কাজ করতে ব্যাস্ত। তখন কলিংবেল বেজে উঠে, ঐন্দ্রিলা তাড়াতাড়ি দরজাটা খুললে দেখতে পায় পিউ আবং আহানা দাঁড়িয়ে আছে। পিউ এর আসার কথা ছিলো কিন্তু আহানাকে দেখে খানিকটা চমকে যায় ঐন্দ্রিলা। আহানাকে দেখেই ঐন্দ্রিলা জিজ্ঞেস করে,
– আহানা তুমি?
– নীলাদ্রি ভাইকে দেখতে আসলাম। আসলে এ কয়দিন তো হাসপাতালে তার সাথে দেখা করার সুযোগটুক হয় নি। আজ বাসায় এসেছেন তাই দেখতে আসলাম।
– ওহ

বলেই দরজা ছেড়ে দিলো ঐন্দ্রিলা। আহানা সুন্দর নীলাদ্রির ঘরে ঢুকে পড়লো। আহানার নীলাদ্রির প্রতি উইকনেস আছে তা ঐন্দ্রিলা অনেক আগেই বুঝেছিলো কিন্তু এখন কেনো যেনো ব্যাপারতা চোখে পড়ছে। হাসপাতালে প্রায় প্রতিদিন সে উপস্থিত হতো নীলাদ্রিকে দেখার বায়না নিয়ে। কিন্তু বেশি মানুষ এলাও না বলে সে দেখা করতে পারে নি। আহানা নীলাদ্রির রুমে যেতেই পিউ এর হাত টেনে জিজ্ঞেস করে,
– আহানা ব্যাগপত্র নিয়ে এসেছে যে? ও কি এখানে থাকবে নাকি?
– হ্যা, আজকে থাকবে। মা পাঠিয়েছেন
– ছোট মা?
– হুম, আসলে ভাইয়া তোকে নিতে আসবে। কিছু কাজ আছে বলে এখানে থাকাটা একটু প্যারা হয়ে যাবে ভাইয়ার। তাই তোকে নিতে আসবে। সে তো আবার তোকে ছাড়া থাকতে পারেন না। তাই আমি ভেবেছিলাম এই কয়দিন এ বাড়ি থাকবো। মামী মার একটু হেল্প হতো। তখন আহানাও বায়না অরলো সেও আমার সাথে আসবে।
– ও কি এই কয়দিন থাকবে?
– জানি না, ওর মর্জি।
– তোকে একটা কথা বলি?
– হুম বল। ও বোধহয় দাদাভাইকে পছন্দ করে
– হতে পারে, আসলে মনের ব্যাপারগুলো বোঝা বড় দায়
– তুই এতোটা কুল কিভাবে?
– মানে? কুলের কি দেখলি?
– দেখ আমি জানি তোরা দুজন দুজনকে পছন্দ করিস। বাট আহানা যদি মাঝখানে কোনো ঝামেলা বাধায় তখন?
– তুই জানিস মানে?
– দাদাভাই আমাকে বলেছে তোমাদের কথা। সুস্থ হলে শ্বশুর মশাইয়ের কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবার ও কথা ভাবছে। তাই বলছি
– এই লোকটার পেটে কি কিছু থাকে না নাকি?
– উফফ, ব্যাপারটা দাদাভাইকে নিয়ে না। ব্যাপারটা আহানাকে নিয়েও পিউ। সে হয়তো ভাবছে দাদাভাই এর লাইফে কেউ নেই তাই নিজের ভালোলাগার বহিঃপ্রকাশ করছে। এটা দাদাভাই লুক ওভার করে গেলেও পরে যখন তোদের সম্পর্কে ও জানবে ও হার্ট হবে। তাই বলি কি ঠান্ডা মাথায় ওকে জানিয়ে দে। ব্যাপারগুলো খুব সেন্সিটিভ
– আচ্ছা দেখি
– দেখি নয়, আমি চাইবো তোরা হ্যাপি হ। বাট আহানা কষ্ট পাক আমি সেটাও চাই না।

ঐন্দ্রিলা কথাশুনে পিউ তাকে জড়িয়ে ধরে। হঠাৎ এভাবে জড়িয়ে ধরাতে ঐন্দ্রিলা বেশ অবাক হয়। তখন পিউ বলতে থাকে,
– তোর মতো একটা বান্ধবী থাকতে কেউ কষ্ট পেতে পারে? তুই এতো ভালো কেনো বলতো? সব দিকে তোর নজর
– এখন কি আর করার বল, মানুষটাই এক পিস। সব দিকে খেয়াল তো রাখতেই হবে।

বলেই দুই সখী হাসতে থাকে। এদের মাঝে এই বৈশিষ্ট্যটাই তাদের সবার থেকে আলাদা করে। একজনের মনের কথা অন্যজন নিমিষে বুঝেও যায় যাতে তার সলুশ্যন ও দিয়ে দেয়। দু জন যখন হাসতে ব্যস্ত তখন আসমা বেগমের গগণবিদারী ডাকে তাকে বাধ্য হয়ে ছুটতে হয় রান্নাঘরে।

অপরদিকে,
নীলাদ্রির মুখোমুখি বসে আসে আহানা। বেহায়া মনটাকে কিছুতেই কাবু করতে পারছে না সে। যে মানুষটি তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে তার সামনে নির্লজ্জের মতো এসে বসে রয়েছে সে। এটাই হয়তো ভালোবাসা। ভালোবাসা নামক বিষাক্ত জিনিসটা মানুষের বোধশক্তিটাও নষ্ট হয়ে যায়। যেমনটা আহানার ক্ষেত্রেও হয়েছে।
– কেমন আছো আহানা?
– ……………
– তোমার চোখে আমি হয়তো বড্ডবেশি অপরাধী কিন্তু কি করবো বলো বেহায়া মনের কাছে যে আমি ও পরাজিত। তোমার ফিলিংসটা নিয়ে ছেলেখেলা করার ইচ্ছে হয় নি। তুমি আমাকে দোষী বললে আমি মাথা পেতে নিবো কিন্তু……

আর কিছু বলার আগেই আহানা নীলাদ্রিকে জড়িয়ে ধরে। নীলাদ্রি ই করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছিলো না। ঠিক তখনি…………

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে