শ্রাবণ মেঘের ভেলা ১০ম পর্ব

0
1310

#শ্রাবণ_মেঘের_ভেলা
#১০ম_পর্ব

এবার গাড়িটা থামিয়ে আচমকা ঐন্দ্রিলার চুল মুঠো করে নিজের কাছে টেনে নিজের ঠোঁট জোড়া দিয়ে চেপে ধরে। ঘটনার আকর্ষিকতায় ঐন্দ্রিলা হতবাক হয়ে যায়, চোখ অটোমেটিক বিস্ফোরিত রুপ নেয়। একটা সময় দু হাত দিয়ে অভ্রকে ইচ্ছে মতো ধাক্কা, কিল-ঘুষি মারতে থাকে, কিন্তু ইটের শরীরটা সরাতেই পারছে না। অভ্র যেনো অনেক বেশি শক্তি দিয়ে তাকে নিজের আবেশে আটকে রেখেছে। একটা সময় ঐন্দ্রিলা হাল ছেড়ে দেয়। রাগে ব্যাথায় ঐন্দ্রিলার চোখ থেকে নোনাজলের সারিটা গাল বেয়ে পড়তে থাকে। ঐন্দিলার গাল ভেজা অনুভূত হতেই অভ্র তাকে ছেড়ে দেয়। চোখ থেকে যেনো আগুন বের হচ্ছে অভ্রের। কঠিন গলায় তাকে বলে,
– তোমাকে আমি ওয়ার্নিং দিয়েছিলাম। বোধ হয় সেবার ডোজটা খুব কম হয়ে গিয়েছিলো। কি ভেবেছো আমি টের পাবো না?
-………..
– কি হলো চুপ করে আছো কেনো? তোমার জন্য আমার নামে একজন জিডি অবধি করেছে। আমাকে থানায় হাজিরা অবধি দিতে যাওয়া লেগেছে কেনো আমি কিনা বিবাহিত মেয়েদের প্রেমের ফাদে ফেলি, আমি কিনা তাদের ডিসটার্ব করি। কি হলো উত্তর দিচ্ছো না কেনো?
– ………….
– আমি মেয়েদের দেখলে লোভ সামলাতে পারি না? আমি লুইচ্চা? আমি কত মেয়ের জীবন নষ্ট করেছি তার কোনো হিসেব নেই?? তোমাকে বলেছিলাম, আমার সাথে পাঙ্গা নিতে আসলে পরিণতি এমনই হবে। তুমি শুনো নি এবার তোমাকে দেখাবো জীবন নষ্ট হলে কেমন লাগে।
– মানে কি? কি করবেন আপনি? আমার সাথে অসভ্যতা করে আপনার মন ভরে নি?

ভাঙ্গা কন্ঠে প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করলেও অভ্র কোনো কথা না বলে গাড়ি চালাতে লাগলো। ঐন্দ্রিলা বারবার গাড়ি থামাতে বললেও যেনো কোনো কথা তার কানে যাচ্ছে না। ঐন্দ্রিলার মাথায় আপাতত কিছুই আসছে না। মনটা কেনো যেনো খারাপ কিছুর আভাস পাচ্ছে। অভ্রের মাথায় এখন কি চলছে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না ঐন্দ্রিলা। কেনো এই লোকটার পিছনে লাগতে গেলো সে। নিজের উপর রগ লাগছে!

দিশার বিয়ের দিন,
ঐন্দ্রিলার মাথায় চট করেই একটা দুষ্টু বুদ্ধি খেলে যায়। পিউ চলে গেলে দৌড়ে গিয়ে অভ্রের পেছনে গিয়ে ধীর গলায় বলে,
– একটু শুনবেন?

হুট করে তাকে ডাকায় অভ্র খানিকটা তব্দা খেয়ে যায়। ঐন্দ্রিলা এতো মিষ্টি করে কথা বলছে এটা যেনো কল্পনাতেই সম্ভব হতে পারে। চোখ কুচকে তীক্ষ্ণ কন্ঠে তাকে জিজ্ঞেস করে,
– আমাকে বলছো?
– জ্বী, আসলে কিছু কথা বলার ছিলো।
– হুম, বলো।
– সরি
– হ্যা?
– জ্বী, আসলে আমি আপনাকে চিনতাম না। আপনি পিউ এর বাসুর জানলে আমি কখোনোই আপনার পেছনে লাগতাম না। আমরা তো কাইন্ড অফ রিলেটিভের মধ্যেই পড়ি বলুন। আগে যা করেছি বা হয়েছে আমি ও ভুলে যাচ্ছি আপনিও ভুলে যান প্লিজ। দরকার কি বলুন, খামোখা শত্রুতা রাখার।

ঐন্দ্রিলার কথা শুনে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলো না অভ্র। হা করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চাপা স্বরে বলে,
– তুমি কি মাথায় কোথাও ব্যাথা পাইছো?
– জ্বী?
– না এতো বুদ্ধিমানের মতো কথা বলতেছো? আর ইউ ওকে?
– হ্যা, আমি তো ঠিক আছি। আমার কি হবে?
– অহহ, ভালো সুবুদ্ধি হয়েছে তাহলে।
– আরেকটা হেল্প লাগতো, প্লিজ আপনার মোবাইলটা দিবেন? আমার মোবাইলটা খুজে পাচ্ছি না। একটু ইমার্জেন্সি ছিলো।
– আচ্ছা ঠিক আছে এই নাও। আমি নিচে আছি, কাজ হয়ে গেলে দিয়ে যেও।
– জ্বী শিওর।

অভ্র লক খুলে মোবাইলটা ঐন্দ্রিলার হাতে দিয়ে চলে গেলো। যে ভাবা সেই কাজ, মোবাইলটা হাতে পেতেই প্রথমে নিজের মোবাইলে ফোন করলো ঐন্দ্রিলা। নিজের কিছু বিবাহিত কাজিনের মোবাইলে ম্যাজেস পাঠালো। আরো সুবিধা হলো যখন দেখলো ফেসবুকে লগ ইন করা। সুন্দর মতো লগ আউট করে আবার লগ ইন করতে গেলেই অপশন আসলো “ফরগট পাসওয়ার্ডের”। ব্যাস নিখুত ভাবেই অভ্রের আইডি পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে দিলো সে। ইমেইল আইডিটাও নিজের মোবাইলে টুকে নিলো। এতোটা ইজি হবে এটা কল্পনার বাহিরে ছিলো ঐন্দ্রিলার। নিজের পিঠে নিজেই চাপড় দিয়ে বললো,
– ভাহ শের, তোর দ্বারাই সম্ভব।

তারপর আর কি সব হিস্টোরি রিমুভ করে সুন্দর মতো ভদ্র মেয়ের মতো অভ্রকে মোবাইল ফেরত দিয়ে দিলো। তারপর কিছু টিস্যুতে সুন্দর করে অভ্রের নাম্বারটা দিয়ে বিয়েতে উপস্থির সব আপু, ভাবিদের বিলি করে বেড়াচ্ছিলো আর বলছিলো,
– ওই যে কালো সুট, প্যান্ট পড়া, জেল দিয়ে চুল স্টাইল করে রাখা লোকটি পাঠিয়েছেন। আমি তো নিতেই চাই নি। তারপর আর কি জোর করে দিলো। আপু দুলাভাইকে দিয়ে আচ্ছামতো শাসিয়ে দিও তো।

এরপর অভ্রের আইডিতে লগইন করে নিজের কাজিনদের নানা ভাবে বিরক্ত করতে লাগে ঐন্দ্রিলা। ভেবেছিলো তার ভাই কিংবা দুলাভাইরা অভ্রকে ফোন করে শাসাবে, কিন্তু ঐন্দ্রিলা ভুলে গিয়েছিলো তার এক বোনের হাসবেন্ড ও.সি। উনি ই মূলত থানাতে জি.ডি লিখিয়েছেন।

হঠাৎ ব্রেক পড়ায় ঐন্দ্রিলা তার ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়। অভ্রকে মজা দেখাতে যেয়ে হয়তো মাত্রা ছাড়িয়ে ফেলেছিলো সে। সেটার পরিণতি ই এখন তাকে ভুগতে হচ্ছে। গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরে তাকাতেই দেখলো গাড়িটা একটা কাজী অফিসের সামনে দাঁড়ানো। অভ্র কঠোর কন্ঠে বললো,
– নামো গাড়ি থেকে
– আমরা কাজী অফিসে কি করছি?

খানিক ভীত গলায় জিজ্ঞেস করে ঐন্দ্রিলা। তার প্রতি উত্তরে অভ্র বলে,
– কাজী অফিসে মানুষ কি করে? নিশ্চয় এখানে মুখ দেখাতে আসে না। ওখন এই মূহুর্তে তুমি আমাকে বিয়ে করবে।
– মানে কি? ফাজলামি পেয়েছেন? বিয়ে কি মুখের কথা নাকি যে সকালে মনে হলো আজ আমার কোনো কাজ নেই, চলো বিয়ে করা যাক। আমি আপনার মতো একটা লোককে কখনোই বিয়ে করবো না

বেশ ক্ষিপ্ত কন্ঠেই ঐন্দ্রিলা কথাগুলো বলে। ঐন্দ্রিলার কথা শুনে মুচকি হেসে অভ্র উত্তর দেয়,
– বিয়ে তো তোমাকে করতেই হবে, তুমি যেমন আমার সম্মানের বারোটা বাজিয়েছো ঠিক সেভাবে তোমার বাবা আর ভাইয়ের সম্মানের বারোটা বাজাতে আমার দু মিনিট ও লাগবে না।
– আমি আপনাকে বিয়ে করবো না ব্যাস।
– বেশ

বলেই কাউকে ফোন করে বলতে লাগে,
– হ্যালো, মোনমোহন কলেজের শিক্ষক শরীফুল আহমেদ উনার নামে প্রিন্সিপলের কাছে কমপ্লেইন জানাও উনি ছাত্রদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের পাশ করানোর অঙ্গিকার দেন। নকল এলিবাই ড়েডি করো। উনাকে যেনো কালকের মধ্যেই সাসপেন্ড করা হয়। কুইক।

ঐন্দ্রিলার যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। তার বাবা যিনি কিনা জীবনের এতোগুলো বছর শিক্ষকতা নামক পেশাকে দিয়েছেন, ছাত্রদের কাছ থেকে টাকা তো দূরে থাক উনি টিউশনি অবধি করান নি শুধু কলেজ কতৃপক্ষের কাছে সৎ থাকার জন্য। তিনি তার পেশায় সব সময় সৎ থাকার চেষ্টা করেছেন আজ কিনা রিটায়ার্ড করার ছয় মাস আগে তাকে এতোটা বাজে অপবাদ পেতে হবে? অভ্রের প্রতি ঘৃণাটা যেনো আরো গাঢ় হচ্ছে। ভেবেছিলো তার কাছে ক্ষমা চেয়ে সব মিটমাট করবে কিন্তু এখন ক্ষমা চাইতেও তার বিবেকে বাধছে। অভ্র ফোন কেটে ঐন্দ্রিলার দিকে তাকিয়ে বললো,
– আমি খুব খারাপ একটা মানুষ, এবার কি বিয়েটা করবে?
– আপনাকে আমি ঘৃণা করি, প্রচুর ঘৃণা করি।
– ঘৃণা করার জন্য সারাজীবন পাবে, এখন তাড়াতাড়ি ডিসিশন দাও।
– আমি বিয়ে করতে রাজী
– তাহলে চলো, দেরী করলে তোমার লস।

বলেই গাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লো অভ্র। ঐন্দ্রিলাকে টেনে গাড়ি থেকে বের করলো। ঐন্দ্রিলার কাছে তার এন.আই.ডি ছিলো আর অভ্র আগের থেকেই সব ব্যাবস্থা করে রেখেছিলো। যার কারণে আধা ঘন্টার মধ্যেই ঐন্দ্রিলা আহমেদ থেকে ঐন্দ্রিলা চৌধুরী হয়ে গেলো ঐন্দ্রিলা। মনের মাঝে হাজারো প্রশ্নেরা উকিঝুকি মারছে, সব থেকে সেটা ভাবাচ্ছে তা হলো বাসায় যেয়ে কি উত্তর দিবে দিবে! বাবাকে কি বলবে! দাদাভাইকে কি বলবে!

১২.
মেজাজ খুব খারাপ হয়ে রয়েছে পিউ এর। কারণ? কারণ হলো নীলাদ্রি নামক লোকটি। বৃষ্টি বিধায় এন.জি.ও থেকে ছুটি নিয়েছিলো সে। ভেবেছিলো একটা লম্বা ঘুম ঘুমাবে বিকেলে, কিন্তু হলো কোথায়। উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো নীলাদ্রি বিকেল বিকেল এসে বসে আছে বাড়িতে। উদ্দেশ্য পিউকে নিয়ে তার বন্ধুর কাছে যাবে। পিউ এর মানা করার পরও মামু তাকে জোর করে লোকটার সাথে পাঠিয়েছে। একে মনের বিরুদ্ধে নীলাদ্রির সাথে বেরিয়েছে উপরে প্রগতি সরণীর জ্যামে আটকেছে। মেজাজ কার না খারাপ হবে! জ্যাম যেনো ছাড়ার নাম নেই, এদিকে নীলাদ্রি গাড়ি রেখে কই যে গেছে তারও হদিস নেই। জ্যাম ছাড়তে লাগলে খেয়াল করলো, নীলাদ্রি দৌড়াতে দৌড়াতে এসে গাড়িতে উঠলো। পুরো কাক ভিজা যাকে বলে। এমনেই ভীষণ মেজাজ খারাপ উপরে নীলাদ্রির অদ্ভুত কাজে বেশ বিরক্তি স্বরে জিজ্ঞেস করলো পিউ,
– কোন মহাভারত অশুদ্ধ হয়েছিলো যে আমাকে গাড়িতে একা রেখে ছুট লাগিয়েছিলেন?

তখনই নীলাদ্রি………

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে