শ্রদ্ধেয় সৈয়দ সাহেব – ইনায়াত হাসান ইনায়া

0
377

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
চিঠি নং: সাত

শ্রদ্ধেয় সৈয়দ সাহেব,

প্রথমেই এই সম্বোধন দেখে আপনি অবাক হতে পারেন। কারণ এই সম্বোধনটা সচরাচর বেশি বয়সের ব্যক্তিবর্গের জন্য ব্যবহৃত হয়। যেমন: দাদাভাই, বাবা, মা, মামা… এসব ক্ষেত্রে। তাই আপনাকে শ্রদ্ধেয় বলছি বলে হয়তো আমাদের মাঝখানের সম্পর্ক টা বুঝতে আপনার কষ্ট হতে পারে। কিন্তু কি করবো বলুন আপনার সাথে আমার সম্পর্কটাই যে শ্রদ্ধার। ভালোলাগা টা তো খুবই পরের ব্যাপার। আসলে শ্রদ্ধা দিয়েই তো এই সম্পর্কের শুরু।
জানেন, আপনার আর আমার মাঝখানের সম্পর্কটা কে আমি 3M কানেকশন বলি। এটার পেছনেও একটা কারণ আছে। সেই কারণটা হলো…
“আপনার সঙ্গে আমার মোট তিনবার দেখা হয়েছে। প্রথম দেখা মতিঝিলে, দ্বিতীয় দেখা মৌচাকে আর তৃতীয় দেখা মোহাম্মদপুরে।”
তাই জন্যেই আমার এই নামকরণ।

আপনার এতো এতো স্টুডেন্টের ভীরে আমার চেহারা হয়তো আপনার মনেই নেই। মনে না থাকাটাই স্বাভাবিক। কারণ আপনি রোজ রোজ আমার মতো এমন শত শত স্টুডেন্টের চেহরা দেখেন। কিন্তু আমি তো আপনার মতো টিচার খুব কমই দেখেছি আমার এই জীবনে। তাই আপনি আমার কাছে স্মরণীয়।

আপনার প্রতি এতো সম্মান আর এতো মুগ্ধতা সৃষ্টির কারণটা ছিল আপনার আচরণ। কি সুন্দর করে কথা বলেন আপনি। তবে সবচেয়ে বেশি মারাত্মক আপনার হাসিটা! কতো কঠিন কঠিন কথাও আপনি এই মারাত্মক হাসিটার সাথে খুব সহজেই বলে ফেলেন।

আমার এই ক্ষুদ্র জীবনে
আমি কোন ছেলের উপর ঘায়েল হইনি। আমি কারো প্রতি এতো বেশি মুগ্ধতা খুঁজে পাইনি! কখনো মনে হয়নি যে এই ছেলেটাকে আমার চাই…
আপনিই শুধু এমন একজন সৌভাগ্যবান। বারবার মনে হয় আপনিই হয়তো আমার সেই বহু কাঙ্ক্ষিত একজন।
লাভ এট ফার্স্ট সাইট কি আমি সেটা জানি না। আর প্রথম দেখাতে আপনাকে আমার কাছে ভালোবাসার মতো ভালোও লাগেনি।

আমি আসলে আপনার একটা ফিজিক্স ক্লাসই ভাগে পেয়েছিলাম। আর সেই ক্লাসের পর থেকেই কোচিং এর সব মেয়েদের মনে আপনি জায়গা করে নিয়েছিলেন। সবার মুখেই আপনার প্রশংসা। আপনি সব মেয়েদের ক্রাশ। জানতে পারলাম খুব বেশি ভালো পড়ান বলে আপনি এক নামেই পরিচিত সবার কাছে। সেই নামটা হলো ‘জোশ ভাইয়া’। বিশ্বাস করুন এগুলো শুনেও আমার মনে তেমন কোনো ফিলিংস জন্ম নেয়নি আপনার জন্য।

“এডমিশন টেস্টের আগে একদিন আপনার লাইভ ক্লাস ছিল। ব্যাস! কি যেন হয়ে গেল লাইভ ক্লাস করার পর। আমি সেদিন ই আটকে গেলাম আপনার মায়াজালে। কেন বাঁধা পড়লাম সেটা তখন অজানাই ছিল। তারপর সেখান থেকেই আপনার ফেসবুক আইডি টা পেলাম। আপনার টাইমলাইন ঘুরে তারপর আরও বেশি করে আপনার মায়ায় জড়িয়ে গেলাম।”
এই হলো আপনার মায়ায় জড়ানোর কাহিনী!

সৈয়দ সাহেব, আপনার জন্য এতো রেসপেক্টের পেছনের কাহিনীটাও তাহলে বলি এইবার…
“আমাকে প্রতিদিনই ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের ভিন্ন ভিন্ন টিচারের ক্লাস করতে হতো। আমাদের কোচিং রোজার মধ্যে শুরু হয়েছিল। তো টিচার বলতে সব বুয়েট, ঢাবি, ডিএমসির ছাত্ররা…
মানে সবাই নিজেরাও স্টুডেন্টই ছিল। যেখানে ক্লাস নিতে হয় বলে অন্য টিচার তথা স্টুডেন্টদের অনেকে রোজাই রাখতো না সেখানে আপনি রোজা রেখে সারাদিন ক্লাস করিয়ে আমাদের লাস্ট বেইচের ক্লাসটা শেষ করেই দৌড়ে গিয়েছিলেন মসজিদে। নামাজ পড়ার জন্য। তারপর নামাজ আদায় করে এসে আমাদের পরীক্ষা টা নিয়েছিলেন। শুধুমাত্র এই ঘটনাটার জন্যেই আপনি আমার কাছে স্মরণীয় একজন ব্যক্তি হয়ে থাকবেন সারাজীবন।”

আপনি যেহেতু আমাকে চিনেন ই না সেহেতু আপনাকে আমার জীবনে পাওয়ার সম্ভাবনা শূন্য বলেই ধরা যায়। আমাদের সম্পর্কটা তো ঢাকা শহরের ব্যস্ত রাস্তায় হুটহাট দেখা হওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আমি ফেসবুকে আপনার সব পোস্ট মন দিয়ে পড়ি, আপনার ছবিগুলো দেখি ঠিকই তবে সে কথা আপনি জানেনও না। থাক, নাই বা জানলেন! কিছু কথা নাহয় অজানাই রয়ে গেল।

‘আপনাকে আমি ভালোবাসি’ একথাটা আমি বলবনা। কারণ আমার অনুভূতি টা আসলে ভালোবাসা না।
তবে, হ্যাঁ! আপনি আমার ভালোলাগা। ভাগ্যে থাকলে হয়তো আপনাকে পেয়েও যেতে পারি। “জানেন তো,
আমি বরাবরই ভাগ্যে বিশ্বাসী!”
ঐ মোহময় শুদ্ধতম হাসি যেন সবসময় আপনার ঠোঁটের কোনায় লেগে থাকে…

ইতি আপনার অপরিচিতা
ইনায়াত হাসান ইনায়া

বিঃদ্রঃ একজন সৈয়দ সাহেব কিন্তু সত্যিই আছে। সম্পূর্ণ ঘটনাই সত্যি…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে