#শোভা
#পর্ব_১৪
বারবার কলিংবেলের শব্দে কণা বিরক্ত হয়ে গেলো।
– উহ! সকালবেলা কে আবার? আর বুয়া কই তুমি? মরছো নাকি? এত্ত বার কলিং বেল বাজছে আর দরজা খোলার খোজ নাই। আর মা, তুমিও তো খুলতে পারো। সারাদিন তো শুয়ে বসেই থাকো। মাঝেমধ্যে একটু হাত পা নাড়াও। ভাবলাম আজ ছুটির দিন, একটু বারোটা পর্যন্ত ঘুমাবো। তা আর হলোনা! আর আমার মাথায় আসেনা মানুষ কি পাগল হয়ে যায়? দরজায় এসে দুই মিনিট ওয়েট করতে পারেনা?
খুব বিরক্তিকর মুড নিয়ে কণা দরজা খুললো। দরজা খুলেই সে বিরক্তির সাথে বললো, কি ভাই! কাকে চাই? আর, মানুষের দরজায় এসে কি ভদ্রতা ভুলে যান নাকি? সকাল সকাল এসে এত্ত বার মানুষ বেল বাজায় নাকি? ননসেন্স! এখন বলেন কি চাই?
– আরে! দাড়াও, দাড়াও! এখন তো এগারোটা বাজে। এখন কি সকাল নাকি? আর বাহ! তুমি তো দারুণ হয়েছো! এত বছরে সৌন্দর্য্য তো একটুও কমেনি। মাশাআল্লাহ্! আর স্মার্টনেসও তো বেশ বেড়েছে। গেঞ্জি আর লেগিংসে, বাহ! আর ফিগারটাও তো বেশ ধরে রেখেছো। যাক তোমার বড় বোনের মতো গোলগাল তো হওনি! যাই হোক সব কথা কি দরজায়ই বলবো নাকি? চলো ভিতরে চলো।
– আপনার সাহস তো কমনা! আপনি কি সব আজেবাজে কথা বলছেন? কে আপনি? কোথা থেকে এসেছেন? আর এসব উল্টাপাল্টা কথা কেনো বলছেন? আপনি আমার আপাকে নিয়ে বা কেনো কথা বলছেন? আপনার সাহস তো কম না!
– আহা! সুন্দরী বয়স বাড়ার সাথে সাথে কি চোখের পাওয়ার কমে গেছে নাকি? ভালো করে দেখো! আমি তোমার দুলাভাই, বড় দুলাভাই! মাথার চুলটা একটু হয়তো কমে গেছে কিন্তু চেহারা তো আর চেঞ্জ হয়ে যায় নাই। একটু আপন দৃষ্টিতে তাকাও তাকালেই চিনতে পারবা! আমি তোমার জামিল দুলাভাই। আরে রাখো তো! আলাপ-সালাপ কি দরজায় বসেই করবো নাকি এই গরমের মধ্যে? বলেই কণাকে একরকম ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে জামিল ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলো।
জামিলের কথা শুনে কনা হতভম্ব হয়ে গেল সে ভালো করে জামিলকে দেখেই চিনতে পেরেছে।
আরে, ইনিতো মুহিবের বাবা! এত বছর পরে সে কোথা থেকে এলো? আর আমাদের ঠিকানা বা পেলো কোথায়? কি করে এলো? আর এতো বছর পর হঠাৎ করে এলো ই বা কি করতে? হাজারটা প্রশ্ন কণার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
– হাই, শাশুড়ি আম্মা কেমন আছেন? ওয়াও খুব বেশি তো পরিবর্তন হন নি। যেমন দেখে গেছিলাম তেমনি আছেন! খালি মনে হয় আমার বউ টাই একটু পরিবর্তন হয়েছে। আগে যতটুক গোলগাল ছিলো, এখন মনে হয় তার থেকেও তিন ডবল গোল হয়েছে, নাকি?
– এই কে, তুমি? কে তুমি? কি উল্টাপাল্টা কথা বলছো বাসার মধ্যে ঢুকে?
– প্লিজ, শাশুড়ি-আম্মা এইসব কথা বলবেন না তো! কণাসোনাও একটু আগে আমাকে চিনতে পারেনি। এখন আবার আপনিও আমাকে চিনতে পারছেন না। আরে, মাথায় চুল নাই তাই বলে কি আপনারা আমার চেহারাটাও ভুলে গেছেন? আমি আপনাদের আদরের বড় জামাই, জামিল! ভাল করে দেখেন, আপনার রিনার স্বামী!
– কনা, এইটা এখানে আসলো কোন জায়গা দিয়া? হ্যাঁ ঠিকই তো! এতো জামিল! চেহারার বা কি শ্রী, অবস্থা আর কথাবার্তাও তো বিশ্রী! এই এতবছর পরে কই দিয়া আসছো? আর এই খানে কি চাও?
– আরে শাশুমা! এত বছর পরে আসছি আপনাদের বাসায়, কোথায় জামাই আদর করবেন! তা না জিজ্ঞেস করছেন কি চাও! কি চাই মানে কি? এটা আমার শ্বশুর বাড়ি! শ্বশুর বাড়িতে আর দশটা জামাই যা চায় আমিও তাই চাই! আমি আমার বউ বাচ্চা চাই! সোজা হিসেব টা যা কেনো বোঝেন না।
– কিসের বউ? কিসের বাচ্চা ? তোমার বউ পোলা কেউ এখানে থাকেনা।
– ও মা! শাশুড়ি মায় কয় কি? বউ পোলা থাকে না মানে? তারা তাহলে কই থাকে?
– আগে তুমি কও এত বছর তুমি কই ছিলা? এত বছরে তো একবারও বউ পোলার খোঁজ নিতে আসো নাই। হঠাৎ কইরা আজকে বউবাচ্চার খোঁজ নিতে আসছো, ব্যাপার কি? মতলব তো সুবিধা ঠেকতেছে না।
– আম্মা! মতলব আবার কি? মতলব নাই কোনো। শুধুমাত্র বউ আর বাচ্চারে নিতে আসছি, এটাই। আর কোন কিছু আপনাদের কাছে চাইনা!
– মানে কি? কিসের বউ, কিসের পোলা? তোমার সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নাই। বের হও বাসা থেকে।
কোন সাহসে বাসাতে ঢুকছো? তোমার সাহস তো কম না! এখনই আমি পুলিশে ফোন দিচ্ছি!
– হ্যালো! এই যে জামিল সাহেব না কি যেন? দুই মিনিটের মধ্যে এখান থেকে ফুটেন! নইলে আমি এখনই কিন্তু পুলিশে ফোন দিব! এখানে আপনার বউ -ছেলে কেউই থাকেনা।
– আহা কণা সোনা! সুন্দরীদের মুখ দিয়ে সুন্দর সুন্দর কথা বের হবে। সুন্দরীদের মুখ দিয়ে এরকম অসুন্দর কথা কেনো বের হচ্ছে, সোনা? এত মেজাজ দেখাইওনা! ঐ সমস্ত পুলিশ-টুলিশ আমাকে দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। একসময় বহুৎ ভয় পেতাম আর বহুত দৌড়েছিলাম। এখন আর পুলিশ ভয় পাই না। পুলিশের ভয়ে দৌড়াইও না! তুমি যেসমস্ত পুলিশের কাছে ফোন দিবা ওরকম ডজনখানেক পুলিশ আমার পকেটের মধ্যে থাকে! তোমরা কি মনে করছ তোমরা ভয় দেখাবা আগের মত আর আমি ভয় পেয়ে দৌড় দিব! সেই দিন আর এখন নেই। দিন পাল্টাচ্ছে ! দাও কাকে কাকে ফোন দিবা দাও! এত বছর পরে আসছি কই ছিলাম, কি খেলাম, না খেলাম বেঁচে আছি না মরে গেছিলাম ওই খোঁজখবর নিবে আদর যত্ন করবে জামাইরে তা না শাশুড়ি দুজন মিলে জেরা করা শুরু করছে মনে হয় আমি কোন আসামি! যত্তসব!
– জামিল, কনার সাথে তুমি উল্টাপাল্টা কথা বলবা না। আসল কথা হলো রিনারে আমরা বিয়ে দিয়ে দিছি। এতো বছর ধরে তোমার কোন খোঁজ খবর পাই নাই, তাই রিনারে কতদিন আর ঘরে রাখবো? বিয়ে দিয়ে দিছে অন্য জায়গায়। আর তোমার ছেলে বোর্ডিং স্কুলে থেকে পড়াশোনা করে। সে বাসায় থাকে না।
– শ্বাশুড়ি আম্মা, আজ বাদে কাল দুই দিন পরে কবরে যাবেন। এক পা কবরে নামানো আর একটা কবরের কুলে। এখন এত মিথ্যা কথা বলেন কেনো? ছেলেটা মরে গেছে তাও আপনার ভয় হয় না পরানে? কোন সময় ডাক আসে সেই অপেক্ষায় থাকেন! আল্লাহকে একটু ভয় পান। নামাজ কালাম পড়েন, আর সত্যি কথা বলা শিখেন! আর কতকাল মিথ্যা কথা বলবেন? কতকাল বানিয়ে বানিয়ে কথা বলবেন? আমি কোন খোঁজ খবর না নিয়ে এখানে এসেছি মনে করছেন? আমি সব পাকাপোক্ত খবর নিয়েই এখানে আসছি। আমার ছেলে কোন স্কুলে পড়ে আমি তাও জানি। ওর বারোটার দিকে ছুটি হবে এখানে আসতে আসতে সাড়ে বারোটা বাজবে।তাও আমি জানি। আর ওই রঙের চেহারার মেয়ে কে বিয়ে করবে? আমার মতো বোকা কি আর একটাও পাবেন নাকি? ওরা আসা পর্যন্ত আপনারা একটু আমাকে জামাই আদর করেন। নাস্তা পানি কিছু খাওয়ান। গলা শুকিয়ে গেছে আপনাদের প্রশের উত্তর দিতে দিতে।
– এসব কি শুরু করছো? এরকম বেয়াদবি করতেছো কেনো তুমি? তোমার কথাবার্তার ধরন এরকম কেন? তুমি তো বেয়াদব ছিলানা। এত বড় বেয়াদব কবে হইছো।
– এইতো লাইনে আসছেন এতক্ষণে! যাক, আপনি আমাকে ঠিকমতন চিনতে পারছেন। আমি এক কালে বেয়াদব ছিলাম না, কিন্তু এখন বেয়াদব! তাই না, শাশুড়ি আম্মা? এক কালে ভদ্র জামাই ছিলাম! সে সময় আপনাদের আমাকে পছন্দ ছিল না। অনেক পরে বুঝতে পেরেছি যে ভদ্রদের সাথে ভদ্রতা করতে হয়, অভদ্রদের সাথে থাকতে গেলে অভদ্র ভাবেই চলতে হয়। তাই এত বছর ধরে অভদ্রতা শেখা যায় যেখানে সেখানে ট্রেনিং দিছিলাম। এখন আর আপনাদের সাথে থাকতে আমার অসুবিধা হবেনা। একসময়ে তো আমাকে ঘরজামাই হিসেবে দেখার জন্য আপনারা কত পাঁয়তারা করছেন। কোনো সমস্যা নাই, শাশুড়ি আম্মা। আমি এইবার ঘর জামাই থাকার জন্য পুরো দস্তুর রেডি হয়ে আসছি। এখন থেকে আমি সবসময় ঘরে থাকবো। ঘর থেকে কখনো বাইরেই যাব না।
– আপনার তো সাহস কম না। আপনি সেই কখন থেকে একটার পর একটা, একটার পর একটা বেয়াদবি করে যাচ্ছেন মায়ের সাথে। আপনি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের হওয়ার আগে এখনো সময় আছে বের হন। আপনার বউ বাচ্চা আসলে তখন তাদের সাথে আলাপ করবেন, তবে গ্যারেজে বসে। বাসায় আসবেন না।
– কণা, ডার্লিং! তুমি এত রাগ দেখাচ্ছো কেনো? শালী মানে হচ্ছে আধি ঘরওয়ালি! তোমার আপার সাথে সাথে তো আমি তোমারও কিছু হই নাকি? আমার নিজের বউয়ের এখানে ঘর থাকতে আমি কেন গ্যারেজে বসে কথা বলবো? কি সব কথা বলছো? আর বের বা হবো কেনো? আমি তো এবার পার্মানেন্ট থাকার জন্যই এখানে এসেছি । এত বছর ধরে জেল এর হাওয়া আর খাবার খেতে খেতে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছি তাই ওই শ্বশুরবাড়ি থেকে ছাড়া পেয়ে এই শ্বশুর বাড়িতে চলে এসেছি! তবে তোমাদের খুঁজে পেতে আমার অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে, জানো! যাক অবশেষে পেয়েছি তো! এখন এখানে বসে হাওয়া খাবো আর শাশুড়ি আর বৌয়ের হাতের রান্না করা মজার মজার খাবার খাবো ।
– কি আপনি এত বছর জেলে ছিলেন? আপনি এত টি বছর জেল খাটছেন? কি করছিলেন? জেলে গেলেন কেনো? নাকি চুরি টুরি করেছিলেন? আগে তো বহুৎ ন্যায়-অন্যায় শিখাতেন সবাই কে!এখন নিজে কোন অন্যায় করে জেল খাটছেন এত বছর ধরে? এত বছর তো মানুষ খুন না করলে জেল খাটে না! কার খুন করছিলেন?
– আরে ডার্লিং, এত টেনশন নিওনা। অসুস্থ হয়ে যাবে তো। আহ! হা! আমার জন্য কত চিন্তা!
– চিন্তা? মাই ফুট! তাও আবার আপনার মতো সো কলড দুলাভাই য়ের জন্য?
– যাক, দুলাভাই তো ডেকেছো। ধন্য হলাম। ডার্লিং, কিছু তো একটা করেছি। কিছু না করলে তো আর ওখানে যায় নি। খুনই করছিলাম। খুন করেছি দেখেই তো এতো বছর জেল খেটেছি। বোঝনা কেন, তুমি? তোমরা তো আর আমার কোনো খোঁজখবর নিবা না! কোথায় আছি, কেমন আছি, বেঁচে আছি না মরে গেছি? তোমরা তো কোনো খোজ নিলেই না।
– আপনার খোঁজ নিয়ে আমরা কি করবো? যখন নেয়ার তখন ঠিকই নিয়েছি। খোঁজ নিয়ে তো দেখলাম জমিজমা সব বেচেঁ কোথায় উধাও হয়ে গেছেন। এখন আপনি যে এরকম জেলের হাওয়া খাচ্ছেন তা তো আমরা জানি না। এত টাকা দিয়ে কি করলেন? এতো টাকার জমি বিক্রি করে জেলে যাওয়া লাগলো কেনো আবার?
– আহা, ডার্লিং! সে এক বিশাল ঘটনা! বলতে চাই নাই যেহেতু শুনতে চাইছো তাই বলছি। টাকা পয়সা সব নিয়ে একটা ব্যবসা শুরু করছিলাম। সাথে একজন পার্টনার ছিলো। শালা বড় বেঈমান বুঝলা। পার্টনার আমার সাথে বেইমানি করছে। টাকা-পয়সা মেরে দিয়ে বহুত ঘাপলা করছে। পরে রাগ সামলাতে না পেরে দিছি শালারে শেষ করে। এজন্যই তো এতো বছর আরেক শশুরবাড়ির হাওয়া বাতাস খেয়ে আসলাম।
ওইখানে এতদিন থেকে এসে এখন আবার আরেক শ্বশুর বাড়ি চলে আসলাম। তা শাশুড়ি-আম্মা ওইখানে এতদিনের বিস্বাদ খাবার খেতে খেতে মুখটা নষ্ট হয়ে গেছে। একটু ভাল মন্দ কিছু রান্না করেন তো, প্লিজ। আপনার হাতের গরুর গোশের কালাভুনা কিন্তু সেই টেস্ট হয়! একটু বেশি করে রান্না করবেন। কবজি ডুবিয়ে খেতে মন চাচ্ছে।
ও হ্যাঁ রিনার রুমটা কোন দিকে? আমি এখন একটু রুমে যেয়ে আরাম করবো। কেউ আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না। রিনা আসলে ডাক দিতে বলবেন । কতো দিন দেখিনা! তবে, একবার দুইবার টুকা দেয়ার পরে আমি না উঠলে আমাকে ডিস্টার্ব করতে নিষেধ করবেন।
আমি ঘুম থেকে ওঠার পরেই দরজা খুলবো এর আগে দরজা খুলবো না। আমাকে আবার কেউ ঘুমের মধ্যে ডিস্টার্ব করলে আমার খুব বিরক্ত লাগে।
ও কনা ডার্লিং, তুমি এখনো বিয়ে করোনি? তোমার ফিটনেস দেখে তো মনে হচ্ছে না বিয়ে শাদী কিছু করেছো ! যাক! বিয়ে না করেছো ভালই হয়েছে। একটা শালী তো আছে! শালী না থাকলে শ্বশুরবাড়ি তো আর মজা থাকে না। তাছাড়া তোমার বোন তো আজকাল মনে হয় বুড়িয়ে গেছে। সেই যখন গেছিলাম তখনই তো একটা বুড়ি বুড়ি ভাব ছিলো। এখন তো মনে হয় পুরোপুরিই বুড়ি হয়ে গেছে। তাইনা কণা ?
ওহ! শাশুড়ি-আম্মা রিনার রুমে এসি আছে তো? এসি ছাড়া আমার আবার থাকতে ভালো লাগে না! ওখানে এতদিন গরমে খুব খারাপ অবস্থা গিয়েছিলো। কিন্তু, এখন এসি ছাড়া আমি একদমই থাকতে পারিনা। আর যদি না থাকে তো সমস্যা নেই। আজকালের মধ্যে আনিয়ে নেবেন। আপনাদের একমাত্র ঘর জামাইয়ের আবদার! এটা তো আর ফেলে দিতে পারেন না।
– খবরদার! কোনো রুমের মধ্যে আপনি ঢুকবেন না। আপনি এই মুহূর্তে বেরিয়ে যান। আপনাকে কিন্তু অনেকবার বলা হয়েছে। আমরা ভদ্রতা দেখাচ্ছি। আমাদের ভদ্রতা দেখে আমাদের দুর্বলতা মনে করবেন না।
– আহা! কণা, তুমি আবার উত্তেজিত হচ্ছো কেনো? আমিতো তোমাদের সাথে কোনো অভদ্রতা করিনি। আমি আমার ওয়াইফের রুমটা কোথায় জিজ্ঞেস করেছি মাত্র। আমি এখন একটু ঘুমাবো। একটু ঘুম পেয়েছে আমার। আচ্ছা, বুঝেছি! তোমার কষ্ট হচ্ছে বলতে। তোমাকে বলতে হবেনা। নিজেই খুঁজে নিবো। এই বুয়া, বলতো রিনার রুমটা কোনদিকে? তোমার বড় আপার রুম আমাকে একটু দেখিয়ে দাও! আমি তার হাজব্যান্ড হই। ভয় পেওনা, প্লিজ!
জামিল কণার কথার কোনো ভ্রুক্ষেপ না করেই রিনার রুমে যেয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।
হঠাৎ করে এত বছর পরে জামিলের আগমন তার উপর জামিলের এ ধরনের ব্যবহার দেখে কণা এবং কণার মা দুজনেই হতবাক হয়ে গেল। তারা কি করবে কি না করবে বুঝতে পারছে না।
ঘন্টাখানেক পরে রিনা মুহিবকে নিয়ে স্কুল থেকে ফিরল। মা ও বোনের কাছে সবকিছু শুনে রিনার মাথা নষ্ট হয়ে গেলো। সে পাগলের মতো যেয়ে তার রুমের দরজা ধাক্কাতে লাগলো।
কয়েকবার দরজা ধাক্কা দেওয়ার পরে জামিল দরজা খুলে বাইরে বের হলো জামিলকে দেখে রিনা অবাক হয়ে গেল।
– তুমি? তুমি এত বছর পরে কোথা থেকে এলে? আর তুমি আমার রুমে কি করছো?
– আহা! রিনা, কেমন আছো তুমি? এত বছর পরে তুমি আমাকে দেখছো, কোথায় তুমি একটু ভালো রিয়েক্ট করবে তা না কি উল্টাপাল্টা কথা বলছো তুমি?
কেমন আছো ডার্লিং? কত বছর তোমাকে দেখি না! সত্যি তুমি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছো! কত স্বপ্ন দেখেছি তোমাকে নিয়ে আমি একা একা জেলখানায় বসে। আর আজকে তুমি সত্যি সত্যি আমার সামনে। আমার তো বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে।
– কষ্ট হচ্ছে, নাহ ? ফাতরামো শুরু করেছো না? ফাতরামো মারার জায়গা পাওনা? এত বছর পরে কোথা থেকে এসে নাক গজিয়েছো? এখন এই সব ঢংয়ের ভালোবাসা দেখাচ্ছো? কোথায় ছিলে এত বছর? কোন খোঁজ খবর নাওনি কোনোদিন? এত বছর পর কেনো এসেছ? তুমি আমার মা বোনকে বিরক্ত করছো! তুমি এখন আবার আমার সাথে উল্টাপাল্টা কথা বলছো। ননসেন্স!
– ডার্লিং, রিনা! তোমাকে আগেও বলেছি তোমাকে রাগলে একদম ভালো লাগেনা। খুবই বাজে লাগে। না রাগলে অবশ্য অনেক সুন্দর লাগে। একদম মনে হয় সুইট সুইট পরী। কিন্তু তুমি যখন রাগ করো না তোমাকে একদম ডাইনীর মত লাগে। প্লিজ, তোমার চেহারাটা অনেক মিষ্টি। তাই মিষ্টি মিষ্টি করে কথা বললে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগে। আচ্ছা, যাই হোক বুঝতে পেরেছি! তোমার মুড অনেক খারাপ। তুমি মুডটাকে ঠিক করো। ততক্ষণ পর্যন্ত আমি মুহিবের সাথে কথা বলে আসি।
– খবরদার! আমার ছেলের কাছে একদম যাবেনা! আমার ছেলে তোমাকে চিনেও না। আর তোমার মত একটা খুনি আসামির ছায়া আমি আমার ছেলের উপরে পড়তে দিতে চাইনা। মনের ভুলেও আমার ছেলের সামনে যাবে না। ওকে কোনো ভাবেই তোমার পরিচয় দেবে না যে তুমি ওর বাবা। ও জানে তুমি মারা গেছো। তুমি ওর সামনে একদম যাবেনা।
– কি বলছো রিনা? আমি মুহিবের বাবা! আমি মুহিব এর কাছে যাব না?
– এতগুলি বছর ধরে কোথায় ছিল তোমার বাবাগিরি? হঠাৎ করে এখন এসে বাবাগিরি ফলাচ্ছো!
– আহা! এত বছর কোথায় ছিলাম তোমাকে নিশ্চয়ই শাশুড়ি-আম্মা এতক্ষণে বলে ফেলেছে! তাহলে আবার কেনো জিজ্ঞেস করো? তোমার কি সেটা শুনতে ভালো লাগে?
জামিলের ব্যবহারে কণা এবং তার মার মত রিনাও রীতিমত অবাক হয়ে গেলো। এ যেন এক অন্য মানুষ। এতটা বছর পরে পুরোপুরি চেঞ্জ হয়ে এক অন্য মানুষের পরিণত হয়েছে জামিল।
জামিলকে দেখে মুহিব হাসিমুখে এগিয়ে এলো যেন সে জামিলকে অনেক আগে থেকেই চেনে। দুজনে হেসে হেসে গল্প করছে। জামিল কে সে বাবা বলেই ডাকছে। মুহিবের এ ধরনের ব্যবহার দেখে তার মা, খালা, নানী সবাই অবাক হয়ে গেল।
– মুহিব, তুমি কি ওনাকে চিনো?
– হ্যাঁ মা! চিনবো না কেন? ইনি তো আমার বাবা!
– কি করে বুঝলে যে উনি তোমার বাবা? আমরা তো কেউ তোমাকে বলিনি তাছাড়া তুমি তো উনাকে দেখনি! উনি তোমাকে তোমার খুব ছোটবেলায় ছেড়ে গিয়েছে। এর পরে আর কোনদিন তোমার খোঁজখবর নেয় নি। হঠাৎ করে সে কোথা থেকে এলো? তুমি তাকে চিনলে কি করে সেটা আমাকে একটু বলো!
– মা-বাবার সাথে আমার পরিচয় হয়েছে। আরো তিন মাস আগে থেকে। বাবা আমার সাথে স্কুলে এসেই দেখা করতেন। বাবা প্রথম যেদিন এসেছিলেন আমি বাবার কথা বিশ্বাস করিনি । বাবা তার কথা তোমাকে বলতে নিষেধ করেছিলো। তাই আমি তোমাকে কিছুই বলিনি। আমি বাসায় এসে পুরানো অ্যালবামে বাবার ছবি দেখে বুঝতে পেরেছি যে আসলেই উনি আমার বাবা। তুমি তো বলেছিলে আমার বাবা বেঁচে নেই।। কিন্তু মিথ্যে কেন বলেছিলে মা?
– কেনো মিথ্যে বলেছিস সেটা তোমার না জানলেও চলবে। তোমার এত বড় সাহস তুমি তিন মাস ধরে একটা অপরিচিত লোকের সাথে তোমার স্কুলে দেখা করছো। কিন্তু আমাকে সেটা বলার প্রয়োজন মনে করোনি। তুমি দিনদিন আসলে একটা বেয়াদবে পরিণত হচ্ছো । তা এতদিন পরে তোমার বাবা তোমার খোঁজখবর কেনো নিতে এসেছে, তুমি কি জিজ্ঞেস করেছো? এতদিন সে কোথায় ছিলো? এতো বছর পর সে কেনো এসেছে তোমার কাছে? কি উদ্দেশ্যে? সেটা কি জানতে চেয়েছ? কোন কিছু জানতে না চেয়ে অমনি বাবার সাথে ভাব জমিয়ে ফেলেছো।
– মা, তুমি নিজেকে খুব স্মার্ট মনে করো। আমি বুঝি কিছুই বুঝিনা, না। আমি বাবার কাছে সবই জানতে চেয়েছিলাম। এবং আমি জানি কেনো বাবা এতো বছর আমাদের সাথে দেখা করতে পারেনি। এখানে বাবার কোন দোষ নেই। বাবা এতো বছর বিদেশে ছিলেন। ওখানে যেয়ে বাবার কাগজপত্রে সমস্যা হয়েছিলো তাই সে দেশে আসতে এত দেরি হয়েছে। এবং দেশে আসার পরে সে আমাদেরকে অনেক খোঁজ করেছে কিন্তু আমাদেরকে পায়নি। অনেক কষ্ট করে সে আমাদেরকে খুঁজে পেয়েছে আর বাবার আমাদেরকে খুঁজে না পাওয়ার কারণটা কি জানো? কারণটা হচ্ছো তুমি। তুমি বাবার সাথে কোনদিনই ভালো ব্যবহার করোনি। এবং তুমি বাবার সাথে যোগাযোগ রাখতে চাও নি। যে কারণে বাবার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু এখন আমি আমার বাবাকে পেয়েছি বাবাকে আমি আর আআমাদেরকে ছেড়ে যেতে দিবোনা।
বাবা এখন থেকে আমাদের সাথেই থাকবে। বাবা কোথাও যাবে না।
– ও এজন্যই কিছুদিন ধরে তোমার কাছে অনেক দামী দামী গিফট দেখছি। টাকা-পয়সার আমদানি দেখছি। এখান থেকে সাপ্লাই হচ্ছে। এজন্যই বাবার জন্য দরদ উথলে উঠছে।
চলবে……..