শেষ বিকেলের প্রণয় পর্ব-০৫

0
491

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#লেখিকা_আলো_ইসলাম
‘৫’

–” ছুটি তার বাবা-মাকে জানায় যে, এই বিয়েতে সে রাজী! তাশরিফ কে বিয়ে করতে তার এখন আর আপত্তি নেই৷ কথাটা শুনে প্রথমে সবাই অবাক হলেও পরে অনেক খুশি হয়। আরমান তালুকদার আর দেরি না করে খুশির সংবাদ টা রানীমাকে দেয়। মমতা খানের বিশ্বাস ছিলো ছুটি এমন কিছু করবে। ছুটি অনেক বুদ্ধিমান আর বুঝদার একজন মেয়ে। সব-দিক বিবেচনা করে যে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে এতে সন্দেহ ছিলো না তার।

— তুই কি শিওর এই বিয়েটা করবি আপাই? ছায়ার যেনো এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। তাই নিজেকে ভুল প্রমাণিত করতে আরও শিওর হতে চাই ছুটির থেকে।

— ছুটি মুচকি হেসে বলে আমার মন তো সেটাই বলছে ছায়া! ছুটির হেয়ালি জবাব হলেও ছায়ার খুশির অন্ত নেই। লাফিয়ে বোনকে জড়িয়ে ধরে।

– আমার বিয়েতে তোর এত খুশি হওয়ার কারণ কি বুঝলাম না? ছুটি বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করে ছায়াকে।
আমি যে কেন এত খুশি তোকে যদি বোঝাতে পারতাম আপাই, তাহলে হয়তো সার্থক অনুভব হতো আমার।

— তোর চোখের পানি আমি দেখেছি আপাই। ভালোবাসা না পাওয়ার যে কি যন্ত্রণা আমি তোর থেকেই অনুভব করতে শিখেছি। তাই আজ যখন সেই ভালোবাসা তোর দোরগোড়ায় তখন আমি খুশি না হয়ে পারি।
– সিদ্ধান্ত একপাক্ষিক গিয়েছে শুধু। এখনো ওই তরফ হতে বাকি। দেখ কি হয়! বিয়েটা না হতেও পারে। তাই আগে এত খুশি হোসনা।
– তাশরিফ ভাইয়া তোকে বিয়ে করবে, এবং করতে বাধ্য দেখে নিস। আমি যাই বিয়ের প্রস্তুতি নিই। আমার আপাই-এর বিয়ে বলে কথা।
– ছায়ার কথায় ছুটি মুচকি হাসে। ছায়া বেরিয়ে যায় গুণগুণ করে গান গাইতে গাইতে। ছুটি একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। মনে হচ্ছে সামনে তার নতুন জীবন নয়। একটা মহাযুদ্ধ শুরু করতে যাচ্ছে। আর এই যুদ্ধে সে জয়ী হবে নাকি পরাজিত সেটা অনিশ্চিত।

— বিয়ের জন্য প্রস্তুত হও তাশরিফ! মমতা খানের কথায় তাশরিফ ভ্রু কুচকে বলে মানে? রাতে তাশরিফ বাড়ি ফিরলে মমতা খান তাকে জানান।
— মানে, সামনে তোমার বিয়ে। তাই মানসিক এবং সব রকম প্রস্তুতি তুমি রাখো। যাতে পরে তোমার মানতে বা বিয়ে করতে সমস্যা না হয়।

— আমার বিয়ে? কার সাথে আর কে করবে বিয়ে আমায়? মেয়ে কি বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেছে? বিস্ময়কর চাহনি রেখে বলে তাশরিফ।

– হ্যাঁ রাজি হয়েছে! তাতে তোমার আপত্তি? মায়ের কথায় তাশরিফ কাঠ গলায় বলে মেয়ে রাজি হতেই পারে, সেটা তার ব্যাপার কিন্তু আমি রাজি না। আমি বিয়ে করতে চাইনা এটা তুমিও খুব ভালো করে জানো আম্মা।

– তুমি বলেছিলে মেয়ে রাজি থাকলে তোমার বিয়েতে আপত্তি নেই৷ তাহলে এখন কেনো কথার খিলাফ করছো? তাশরিফ চুপ হয়ে যায়৷ কি বলবে বুঝতে পারেনা৷ সত্যি তো সে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো। কিন্তু আবির যে বলেছিলো মেয়ে রাজি না। তবে হঠাৎ কোন মেয়ে আবার উড়ে আসলো।

— আবির তাশরিফের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। মা ছেলের কথা শ্রবণ করছে সে।

— কিন্তু আম্মা! তাশরিফকে থামিয়ে দিয়ে মমতা খান বলে কোনো কিন্তু নেই তাশরিফ। আমি চাই তুমি এই বিয়েটা করো আর তুমি করতে বাধ্য। তাছাড়া তোমার মতামত নিয়ে আমি সব কিছু এরেঞ্জ করেছি৷ এখন তুমি না করতে পারবে না।

– তাশরিফ যেনো নিজের কথার জালে আটকা পড়ে গেছে। মেয়ে রাজি ছিলো না ভেবেই সে কথাটা বলেছিলো সেদিন। তাছাড়া এর আগেও অনেক মেয়ে দেখা হয়েছিলো তাশরিফের জন্য৷ কিন্তু অনেকে বিয়ে করতে রাজি হয়নি। কেউ বা রাজি হয়েছে তাশরিফের ধন-সম্পদের লোভে। কিন্তু তাশরিফের অনিশ্চিত জীবনের সাথে কেউ জুড়তে চাইনি।

— মেয়েটা কে জানতে পারি? তাশরিফ গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে।
– অবশ্যই জানবে। বিয়ে যখন তোমার তখন মেয়ের সম্পর্কে জানার একমাত্র অধিকার তোমার আছে। তবে আমি চাইবো তুমি সব শুনে এইভাবে নিরব থাকবে। উল্টো কোনো খেলা খেলতে যাবে না আমার সাথে। মমতা খানের কথায় তাশরিফ ছোট ছোট চোখ করে তাকায়।

— মা ছুটির সঙ্গে বিয়ে ঠিক করেছে তোর। আবিরের মুখে ছুটির কথা শুনে অবাক চোখে তাকায় তাশরিফ।

– ছুটি? অস্ফুটস্বরে বলে উঠে তাশরিফ।
– হ্যাঁ ছুটি! আমি চাই ছুটি এই পরিবারের বউ হয়ে আসুক। অনেক আগে থেকে ওকে আমার পছন্দ। তাছাড়া ছুটি অনেক ভালো মেয়ে এটা তুমিও জানো।

– একটা ভালো মেয়ের জীবন তুমি জেনেশুনে কেনো নষ্ট করতে চাচ্ছো আম্মা? তাশরিফের পালটা প্রশ্নে হকচকিয়ে উঠেন তিনি।
– ছুটিকে আমি কষ্ট দিতে চাইনা আর না চাই ওর সাথে খারাপ বিহেভ করতে। প্লিজ ওকে এইসবের মধ্যে আনবে না তুমি। আমি ওকে যথেষ্ট সম্মান করি। সে সম্মান ক্ষুন্ন হোক আমি চাইনা। বিয়ে নামক এই উপহাস বন্ধ করো আম্মা প্লিজ। তাশরিফ ঘরে চলে যায় রেগে।

– এই বিয়ে তোমাকে করতে হবে তাশরিফ আর এটাই শেষ কথা আমার। পেছন থেকে উচ্চস্বরে বলেন মমতা খান।

–ছুটির জীবন টা পরে নষ্ট হবে না তো মা? আমরা কি ঠিক কাজ করছি? তাশরিফ কিন্তু এত সহজে সব কিছু মানতে পারবে না,ছুটিকেও না।আবির বলে চিন্তিত হয়ে।

– সব কিছুর জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আবির। এত সহজে সব কিছুর হওয়ার নয়। তাই সব রকম জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করার ক্ষমতা আপনাদের থাকতে হবে। বিশেষ করে ছুটির।

– তাশরিফ আর ছুটির বিয়ের দিন ঠিক করা হয়৷ তবে ছুটি চাই তাদের বিয়েটা একদম ঘরোয়া ভাবে হোক। কোনো রকম অনুষ্ঠান বা হট্টগোলের মধ্যে যেতে চাইনা এখন। দুই পরিবারের উপস্থিতিতে বিয়েটা সম্পন্ন হবে। ছুটির মতামতের বাইরে কিছু হবে না। তাই মমতা খান আর দ্বিমত করেনি এই বিষয়ে। ছুটি যা করছে বা করবে বুঝেশুনে করবে এটাই বিশ্বাস করেন তিনি। তাশরিফ বিয়েতে দ্বিমত করেও লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত তাকে হ্যাঁ বলতে হয়।

— বিয়ের আর দুদিন বাকি। যদিও কোনো আয়োজন নেই৷ তবে ছায়া তার কাজিনরা মিলে একটু আনন্দ মজলিস করতে চাই। এতে আর ছুটি বাধা দেয়না। বিশেষ করে ছায়ার কথা ভেবে৷ বিয়ে নিয়ে ছায়া অনেক খুশি, সে খুশি সহজে হারিয়ে যেতে দেবে না।

— ছুটি তার ঘরে ছিলো। ছায়া তার কাজিনদের নিয়ে ড্রয়িংরুমে বসে আছে। ছাবিনা তালুকদার ব্যস্ত আছেন রান্নার কাজে। আর আরমান তালুকদার মেয়ের বিয়ে বলে কথা৷ টুকটাক যা ব্যবস্থা করার দরকার তারই তোরজোর করছেন।

— এরই মধ্যে তাশরিফ এসে উপস্থিত হয় সেখানে৷ তাশরিফকে দেখে ছায়া মুখে হাসি এনে বলে ভাইয়া আপনি? ভেতরে আসুন। আম্মু দেখো কে এসেছে, ছায়া উত্তেজিত হয়ে তার মাকে ডাকে।

– কাউকে ডাকার দরকার নেই ছায়া৷ আমি ছুটির সাথে কথা বলতে এসেছি। ওর সাথে কথা বলে চলে যাবো৷ তুমি ওকে ডেকে দেবে প্লিজ। এরই মধ্যে ছাবিনা তালুকদার এসে হাজির হয়।

– তাশরিফ বাবা তুমি? দাঁড়িয়ে কেনো বসো না। ছায়া যা একটু নাস্তার ব্যবস্থা কর শেষ কথাটা চাপা স্বরেই বলেন তিনি।

– আন্টি কোনো কিছু করতে হবে না৷ আপনি ব্যস্ত হবেন না প্লিজ। আমি একটু দরকারে এসেছি এখানে৷ এখুনি আবার চলে যাবো। ছুটিকে যদি ডেকে দিতেন।

– ওহ! তুমি ছুটির সাথে দেখা করতে এসেছো। ছুটি তো ঘরেই আছে। তুমি যাও না সেখানে। এখানে সবাই আছে তার থেকে ভালো তোমরা ঘরে কথা বলো। ছায়া তাশরিফকে ছুটির কাছে নিয়ে যা। মায়ের কথায় ছায়া মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বলে তাশরিফকে আসতে বলে। তবে ছুটির মধ্যে ভাবনা হচ্ছে তাশরিফ কে আসতে দেখে। হঠাৎ তাশরিফ কেনো এসেছে তাও বিয়ের দুদিন আগে। আপুকে কি কথা শোনাবে নাকি অন্য কিছু?

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে