শেষ বিকেলের প্রণয় পর্ব-০৩

0
488

#শেষ_বিকেলের_প্রণয় (পরিবর্তিত নাম)
#লেখিকা_আলো_ইসলাম

“” রাতের আঁধারে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় ছুটি। ছায়া তাকে সাহায্য করে পালাতে। ছায়ার কাছে জমানো কিছু টাকা ছিলো, সেগুলোও ছুটিকে দিয়ে দেয় সে। বোনকে ভীষণ ভালোবাসে ছায়া, ছুটিও ঠিক তাই। ছুটির একটা ফ্রেন্ড ছায়াকে নিয়ে যায়৷ একা মেয়ে হঠাৎ সব বন্দোবস্ত করা সম্ভব নয়। যার জন্য ছুটি আশিকের সাহায্য নেয়। আশিক ছুটির বন্ধু। খুব ভালো বন্ধু তারা।
— পরের দিন সকালে ছায়া সবাইকে জানায় তার বোনকে পাওয়া যাচ্ছে না। ছায়া এমন একটা ভাব ধরে যে, সে কিছুই জানে না। ছুটি বাড়িতে নেই শুনে অস্থির হয়ে উঠেন আরমান তালুকদার আর ছাবিনা তালুকদার। ছুটি খুব শান্ত স্বভাবের মেয়ে। তার এমন সিদ্ধান্ত কাম্য ছিলো না কারো।

– ছাবিনা তালুকদার কিছু একটা আন্দাজ করতে পেরে ছায়াকে বারবার জিজ্ঞেস করে ইনিয়েবিনিয়ে। তাকে অনেক কদর-সমাদরের সহিত জিজ্ঞেস করে। কিন্তু ছায়া একদম মুখ খুলবে না। সে বরাবরের মতোই কিছু না জানার ভান ধরে সবার মতো চিন্তিত হয়ে আছে।

— আপাইকে বিয়েতে জোর করা তোমাদের ঠিক হয়নি আব্বু! যদি তোমরা আপাইকে চাপ না দিতে বিয়ের জন্য তাহলে আপাই এমন সিদ্ধান্ত কখনো নিতো না। আপাই আমাকেও কিছু বলেনি এই বিষয়ে। ন্যাকা কান্না জুড়ে বলে ছায়া।

— আরমান তালুকদার কপালে হাত রেখে বসে আছে। সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেছে। এখনো ছুটির খোঁজ পাওয়া যাইনি। ছায়ার একবার কথা হয়েছে ছুটির সাথে। সে ভালো আর সেভ আছে এটা বোনকে জানাতে ভুলে না। ছুটি একটা হোটেলে উঠেছে তাদের শহর থেকে একটু দূরে। ছুটি রিস্ক নিতে চাইনি। কারণ তার ধারণা ছিলো, তাকে আশেপাশের হোটেল, বন্ধুবান্ধবদের বাড়ি সব জায়গায় খোঁজা হবে। আর হয়েছেও তাই৷ আরমান তালুকদার সব জায়গায় মেয়ের খোঁজ করে নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরেন।

— ছুটিটা এমন না করলেও পারতো। আমরা বিয়ের জন্য ওকে চাপ দিয়েছি ঠিকই কিন্তু ওর ইচ্ছের বিরুদ্ধে কখনোই বিয়েটা দিতাম না। আমি তো মাঝ দরিয়ায় ডুবে আছি। না পারছি এদিক হতে আর না পারছি ওদিক হতে। রানীমাকে কথা দিয়েও আমি রাখতে পারছি না। এদিকে ছুটির মতামতের বাইরেও কিছু করতে পারবো না। তার মধ্যে মেয়েটা এমন কান্ড বাঁধিয়ে বসলো। একবারও ভাবলো না তার বাবার কথা। কত চিন্তা করবো আমি একবারও ভাবলো না ছুটি। আমি আমার মেয়েদের কতটা ভালোবাসি বোঝাতে পারলাম না ওদের। কান্নায় ভেঙে পড়ে আরমান তালুকদার। ছায়ার খুব খারাপ লাগে বাবার কান্না দেখে৷ ইচ্ছে করছে ছুটির খবর এখুনি বলে দিক। কিন্তু না, এমন করলে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে। একটু কষ্ট হয়তো পাবে সবাই৷ কিন্তু পরে আবার সব ঠিক হয়ে যাবে৷ কিন্তু আপাই এর ইচ্ছের বিরুদ্ধে যেটা হবে, সেটা কখনোই ঠিক হবে না। এরই মধ্যে আরমান তালুকদারের ফোন বেজে ওঠে! স্ক্রিনে রানীমা লেখাটা জ্বলজ্বল করছে। আরমান তালুকদার স্থীর চাহনিতে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। ফোন ধরে কি বলবে, কি জবাব দেবে সে বুঝতে পারছে না। তার মেয়ে বিয়ে করবে না বলে বাড়ি থেকে পালিয়েছে এটা বলবে! কিন্তু কিভাবে? কোন মুখে?.

— ফোন টা বেশ কয়েকবার বেজে কেটে যায়। ছাবিনা তালুকদার আর ছায়া ভ্রু কুচকে উৎসুক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকে।
– কিছুক্ষণ পর আবারও ফোন টা বেজে উঠে।
– কে ফোন করেছে আব্বু? তুমি ফোন টা ধরছো না কেনো? ছায়ার কথায় আরমান তালুকদার অসহায় চোখে তাকিয়ে বলে ফোন ধরে কথা বলার মতো দুঃসাহস আমার নেই।

– ছায়ার বুঝতে বাকি নেই কে ফোন দিয়েছে।ছায়া উঠে গিয়ে বাবার ফোন টা হাতে নেয়।
– কি করছিস ছায়া? ফোন কেনো নিচ্ছিস? ঘাবড়ে গিয়ে বলে আরমান তালুকদার।

– আব্বু তুমি চিন্তা করো না। যা বলার আমি বলছি রানীমাকে। তার সব সত্য জানার দরকার। তাছাড়া আপাই বিয়ে করবে কি করবে না, তার ব্যক্তিগত মতামত। এখানে তোমার বা আমাদের কিছু করার নেই। তাই শুধু শুধু অনুতপ্ত হইও না।

— আরমান তালুকদারের কিছুই বলার নেই। বাবাকে চুপ থাকতে দেখে ছায়া ফোন রিসিভ করার সাহস পাই।
ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে গম্ভীর কণ্ঠস্বর ভেসে আসে।
– ফোন তুলতে এতখন সময় লাগে আরমান তোমার? আজ অফিসে আসোনি কেনো? তোমাকে না বলেছিলাম গতকাল, ইমপোর্টেন্স মিটিং আছে আজ আমাদের। আর ছুটির বিষয়ে কিছু জানালে না যে? একদমে কথাগুলো বলে থামেন উনি।

– রানীমা আমি ছায়া বলছি! ছায়ার কন্ঠস্বর পেয়ে উনার কন্ঠস্বর নুয়ে আসে।-
– ছায়া’মা তুমি? তোমার বাবা কোথায়? তুমি ফোন ধরলে যে, কোনো সমস্যা? তোমার বাবা ঠিক আছে তো? বেশ চিন্তিত দেখায় তাকে।

– সবাই ঠিক আছে রানীমা চিন্তার কিছু নেই৷ আসলে রানীমা একটা ঘটনা ঘটে গেছে। নুয়ে পড়া বাক্য ছায়ার।

— ঘটনা? কি হয়েছে মা, খুলে বলো আমায়? রানীমার কথায় ছায়া সবটা খুলে বলে। সব শোনার পর তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আরমান তালুকদারকে ফোন দিতে বলে।
– ছায়া বাবার দিকে ফোন বাড়িয়ে দিলে ইতস্ততবোধ নিয়ে ফোন টা কানে ধরেন আরমান তালুকদার।

– আমাকে সবটা জানানো দরকার ছিলো তোমার আরমান। এখানে সংকোচ বা ইতস্ততবোধের কিছু নেই। ছুটি বড় হয়েছে আর নিজস্ব মতামত থাকতেই পারে। তোমার ওকে জোর করা ঠিক হয়নি। যাই হোক আজ তোমার অফিসে আসার দরকার নেই। ছুটির খোঁজ করো, ওকে বাড়ি ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করো। এরপর নাহয় বাকিটা দেখা যাবে।

– অনেক জায়গায় খুঁজেছি আমি মেয়েটাকে, কিন্তু কোথাও পাইনি। জানি না কোথায় গেছে মেয়েটা অভিমান করে। আরমান তালুকদারের চিন্তিত কথা।

– আমি দেখছি চেষ্টা করে তুমি টেনশন করো না। কথাটা বলে মমতা খান ফোন রেখে দেয়। ছায়া তো মনে মনে খুব খুশি৷ রানীমা পর্যন্ত কথাটা দিতে পেরে হাল্কা অনুভব হচ্ছে তার।

— বিকেলের দিকে আবির এসে উপস্থিত হয় ছুটিদের বাড়িতে। ছায়া তখন ঘরে ছিলো। আরমান তালুকদার আর ছাবিনা তালুকদার ড্রয়িংরুমে বসে৷ সকাল থেকে কিছু মুখে দেননি তারা। ছায়াও না খাওয়া তাদের জন্য। ছায়া জোর করেও বাবা-মাকে খাওয়াতে পারেনি। তবে ছায়া বোনকে সব আপডেট দিতে থাকে। ছুটি বাড়ি ফিরে আসবে তবে আরও একদিন পর।

— আবিরকে দেখে আরমান তালুকদার উঠে দাঁড়ায় হকচকিয়ে।
* আবির বাবা তুমি? কোনো সমস্যা? খবর পেলে আমার ছুটির, ও ঠিক আছে তো? আবিরের মুখটা মলিন হয়ে আসে। তিনি তো ছায়াকে নেওয়ার জন্য এসেছে এখানে। রানীমা তাকে পাঠিয়েছে ছায়াকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
– আঙ্কেল আমি ছায়াকে নিতে এসেছি। রানীমা পাঠিয়েছে আমাকে ওকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
– হঠাৎ ছায়াকে কেনো যেতে বলবে ভেবে বিস্ময় নিয়ে তাকায় দুজনেই।
– কেনো যেতে বলেছে ছায়াকে? ছাবিনা তালুকদার জিজ্ঞেস করে কৌতুহলী হয়ে।
– যে তো আমি জানি না আন্টি৷ মা বললেন ছায়াকে যেনো নিয়ে যাই আমি উনার কাছে। হয়তো দরকার আছে উনার ছায়ার সাথে।
– ছায়াকে ডেকে দিবেন একটু? আবিরের কথায় ছাবিনা তালুকদার বলে তুমি বসো আমি ওকে ডেকে নিয়ে আসছি।

– মিনিট দুই যেতে ছায়া হাজির হয় সেখানে।
– আবির ভাইয়া আপনি? ছায়াকে দেখে আবির উঠে দাঁড়ায়।
– মা তোকে যেতে বলেছে আমার সাথে। এইভাবে যাবি নাকি সাজগোজ লাগবে তোর?আবির বলে ব্যঙ্গ করে। কিন্তু ছায়া ঘাবড়ে যায় একটু রানীমা ডেকেছে শুনে।

– মশকরা করবেন না তো সব সময়। আমরা এখন মশকরা করার সময়ে নেই। ছায়া গম্ভীর ভাব এনে বলে। আবির কিছু একটা বলতে গিয়েও সবার দিকে তাকিয়ে থেমে যায়।

– চল আমার সাথে! আবির হাঁটা দেবে তখন ছায়া জিজ্ঞেস করে, আবির ভাইয়া, রানীমা কেনো যেতে বলেছে আমায় জানেন কিছু?

— না জানি না। আর জানলেও তোকে বলতাম না। এবার চল। ছায়া কিছু একটা সন্দেহ করে মনে মনে। যার জন্য তার ভয় করছে আবিরের সাথে যেতে। কিন্তু কিছু করারও নেই। তাকে তো যেতেই হবে।

— একটু দাঁড়াও, আমার চশমাটা নিয়ে আসি।

– ওহ আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম, তুই তো আবার চশমা ছাড়া দেখতে পাসনা। কানি একটা, কথাটা আস্তেই বলে আবির৷ কিন্তু ছায়া ঠিকই বুঝতে পারে। আবিরের দিকে কটমটে চোখে তাকিয়ে আবিরের গুস্টি উদ্ধার করতে করতে রুমে যায়। ছায়ার চোখে সমস্যা আছে একটু। যার জন্য সব সময় তাকে চশমা ব্যবহার করতে হয়। ছায়ার একটুও ভালো লাগে না চশমা চোখে দিয়ে ঘুরতে৷ কিন্তু চশমা পড়লে ছায়াকে অনেক কিউট দেখায়। এটা ছুটিও বলে মাঝে মাঝে ছায়ার গাল টেনে।

গাড়ির মধ্যে চুপচাপ বসে আছে দুজন। ছায়ার মধ্যে ক্রমশ চিন্তা ভয় বাড়ছে। রানীমা তাকে এমনি এমনি ডেকে পাঠাইনি সে জানে। কিন্তু এরপর কি করবে সেটাই গুলিয়ে ফেলে ছায়া এত টেনশনের মধ্যে।

– আবির ছায়ার দিকে লক্ষ্য করে আর ড্রাইভ করতে থাকে।
– এসির মধ্যে থেকেও ঘামছিস তুই? কি ননির শরীর রে তোর!
– সব সময় খোচা দিয়ে কথা বলবেন না তো! আমি ম’র’ছি আমার জ্বালায় উনি আসছেন!

– ম’রার মতো কাজ করতে গিয়েছিস কেন? হঠাৎ আবিরের এমন কথায় ভয়ার্ত চোখে তাকায় ছায়া।

– মা-মা মানে? তোতলানো স্বরে বলে ছায়া।
– মানে খুবই সিম্পল। তুই যা বললি সেটাই রিপিট করলাম আমি। আচ্ছা তুই এত ভয় পাচ্ছিস কেনো বলতো? ব্যাপার কি হ্যাঁ? একটা ভ্রু উঁচিয়ে বলে আবির।

– ব্যাপার আপনার মাথা! ছায়া মুখ ঘুরিয়ে বসে।

-তাশরিফ সকাল থেকে আজ বাড়িতেই ছিলো। অন্য দিন তার টিকিটিও দেখা যায়না৷ কখন কোথায় থাকে সে নিজেও জানে না। কিন্তু আজ সকাল থেকে সে বাড়িতে আছে।
– আবির, ছায়াকে নিয়ে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করতেই তাশরিফের মুখোমুখি হয়ে যায় দুজন। তাশরিফ বেরুচ্ছিল তখনই আসে ওরা।

– ছায়া তুমি এই সময় এখানে? তাশরিফের কথায় ছায়া আমতাআমতা করে বলে আসলে ভাইয়া ওই…
আমি ডেকেছি ছায়াকে এখানে! মমতা খান কথাটা বলতে বলতে সিঁড়ি বেয়ে নামেন।
– তাশরিফ ভ্রু কুচকে বলে হঠাৎ ওকে ওই সময় ডেকে পাঠিয়েছো। কোনো কারণ?

– সেটা তোমার না জানলেও চলবে তাশরিফ। তাছাড়া তুমি তো কোনো দিকে ঘুরেও তাকাও না, কোনো কিছুতে তোমার এসে-যায়ও না। তাহলে হঠাৎ এই বিষয় নিয়ে পড়লে কেনো? মমতা খানের কথায় তাশরিফ মুচকি একটা হাসি রেখে হনহনিয়ে বেরিয়ে যায়। আবির তাশরিফ কে পিছু ডাকতে ডাকতে চলে যায়।

— বসো! গম্ভীর কণ্ঠে বলে মমতা খান।
– রানীমা আমাকে কেনো! তার আগে মমতা খান হাত উঠিয়ে ছায়াকে থামিয়ে দেয়। ইশারা করে বসতে বলে।। ছায়ার ভয়টা দ্বিগুণ রুপ নিয়েছে।

– এরই মধ্যে একজন এসে ছায়াকে ফলের জুস দিয়ে যায়। ছায়া ছোট ছোট চোখে তাকায় মমতা খানের দিকে।
-খেয়ে নাও মা! হঠাৎই নরম কন্ঠস্বর। ছায়া তো গোলক-ধাধায় পড়ে গেছে।

– আমি ঠিক আছি রানীমা। সংকোচ নিয়ে বলে ছায়া।
– এত ভয় পাচ্ছো কেনো ছায়া’মা। এতটা পথ এসেছো নিশ্চয় পিপাসা পেয়েছে তোমার। খেয়ে নাও। ছায়া আর কথা বাড়ায় না। এক চুমুকে সব জুস সাবাড় করে দেয়।

— ছুটি বিকেলের নাস্তা করে রেডি হয়ে বাইরে গিয়েছিলো। যেহেতু হোটেলে আছে সে, আশেপাশটা ঘুরে দেখতে যায়! এমনকি হোটেলটাও তার ঘুরে দেখা হয়েছিলো না। সেটাও পরিদর্শন করে আসলো । এখানে রেস্টুরেন্ট খুব একটা নেই। আর যেগুলো আছে সেগুলো তে থাকার ব্যবস্থা নেই। যার জন্য ছুটিকে হোটেলে উঠতে হয়। ছুটি বাইরে থেকে এসে চোখ মুখে পানি দিয়ে সবে মাত্র ফোন নিয়ে বসে৷ এমন সময় দরজায় ঠকঠক শব্দে হকচকিয়ে উঠে সে। এই সময় কে আসলো ভেবে ছুটি কিছুক্ষণ বসে থাকে৷ পুনরায় দরজায় কড়া নাড়তে থাকে।
– কে? হাক ছেড়ে বলে ছুটি।
– ম্যাম আমি হোটেলের স্টাফ, রাতে কি খাবেন মেনু নিতে এসেছি! ছুটি উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই থমকে যায় ওপর-পাশের মানুষ কে দেখে। চোখ তার কোঠর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম…

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে