শুধু তুই Part-10

0
1899

#শুধু তুই #
#Part_10
Writer_ Raidah Islam Nova

রিনি স্ট্যার্চু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।হাতে একটা লাল গোলাপ।রিনি এখনো নিজের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা মনে করে হা করে অবিশ্বাসী চোখে তাকিয়ে আছে।কি ঘটলো ওর সাথে। তাই মনে করছে।

কিছু সময় আগে……

রিনিঃ আ আ আ প প নিনি( কাঁপা কাঁপা কন্ঠে)
মেহেদীঃ কেনো অন্য কাউকে আশা করেছিলে নাকি?(ভ্র নাঁচিয়ে)
রিনিঃ আপনি এখানে কি করছেন? আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছেন?(ভয়ে ভয়ে)
মেহেদীঃ প্রেম করবো তাই।
রিনিঃ মানে??
মেহেদীঃ মানে আমি আমার হবু বউয়ের সাথে প্রেম করতে এসেছি। ( চোখ মেরে)
রিনিঃ তা করুন না আপনি আপনার হবু বউয়ের সাথে প্রেম।আমাকে এখানে এনেছেন কেন? আমি কি করবো?
মেহেদীঃ তুমি না থাকলে প্রেম করবো কার সাথে। দেখ রিনি আমি আবার সোজা- সাপ্টা কথা বলতে পছন্দ করি।ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলতে আমার ভালো লাগে না।তাই আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই।
রিনিঃ বববলুন।(ভয়ে ভয়ে)

মেহেদী পকেট থেকে একটা লাল গোলাপ বের করে হাঁটু গেড়ে বসলো।গোলাপটা রিনির দিকে বারিয়ে দিয়ে বললো।

মেহেদীঃখুব বেশি, ভালবাসি। আমি সত্যি তোমায় ভালবেসে ফেলেছি। তুমি কি আমার রাজ্যের রাণী হবে। তুমি চাও না চাও তোমায় আমারই হতে হবে।অন্য কারো হতে দিবো না।

রিনির হাতে গোলাপটা গুজে দিলো।তারপর হঠাৎ করে মেহেদী রিনি কপালে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো।রিনি ৪২০ ভোল্টে ঝাটকা খেলো।মেহেদী আবারও পরপর দুই চোখ মারলো।তারপর শিস বাজাতে বাজাতে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।রিনি হা করে মেহেদীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।

মেহেদী দেয়ালের আড়ালে গিয়ে উঁকি মেরে রিনিকে দেখলো।রিনি এখনো আগের মতো দাঁড়িয়ে আছে। ও নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। মেহেদী মুচকি হেসে পেছনের চুল ঝারতে ঝারতে সেখান থেকে চলে গেল। রিনি চারিদিকে তাকিয়ে দেখলো সন্ধ্যা হয়ে গেছে।বেশি কিছু না ভেবে বাড়ির রাস্তায় হাঁটতে লাগলো।

মেহেদী গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে মাথা চুলকালো।মনে মনে ভাবতে লাগলো।
মেহেদীঃ আমি তাহলে সত্যি ওকে ভালবেসে ফেলেছি। এই চারদিন কথাগুলো বলার জন্য আমি কতটা ছটফট করছি সেটা একমাত্র আমি জানি।সেদিন মাফ চাইতে গিয়ে আমি সত্যি তোমার প্রেমে পরে গিয়েছি।তোমার চোখের বড় বড় পাপরি,ভয় পাওয়া ফেস,ভিতু চাহনি।সবকিছু তে আমি পাগল হয়ে গেছি। এসব আমাকে চারদিন ঘুমাতে দেয়নি।এতবছর পর কাউকে মনের আসনে বসাতে পারলাম।আমাকে এতদিন পুড়িয়েছো।এবার তোমাকেও পুরতে হবে।

???

আইভি বাসায় গিয়ে দেখলো এশা মন খারাপ করে বসে আছে।কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই আইভিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো।পুরো ঘটনা শুনে আইভি চুপটি মেরে বসে রইলো। কি করবে? কিছুই বুঝতে পারছে না।আপতত দুজন ৫ মিনিট নিরবতা পালন করছে।

ফারিশ খুশি মনে বাসায় ঢুকলো।আজ ওর টুনটুনি পাখির সাথে সময় কাটাতে ভালো লেগেছে।কতক্ষণে জনকে সবকিছু বলবে।জন ও ফারিশ একটা এক রোমের ছোট্ট বাসায় থাকে।বাসার ভেতর ঢুকে দেখে রুম অন্ধকার।দরজাটা ও আবজানো।ভেতরে ঢুকে লাইট অন করলো।জন খাটের কোণায় বসে একটার পর একটা সিগারেট টানছে।ইতিমধ্যে ১৩-১৪ টা সিগারেট টানা হয়ে গেছে। সিগারেট নিচের অংশ ফ্লোরে ছরিয়ে ছিটিয়ে আছে।জনের চোখ দুটো টকটকে লাল হয়ে আছে।মনে হচ্ছে চোখের কোণা থেকে এখনি রক্তের ফোঁটা গড়িয়ে পরবে।ফারিশ জনের এই অবস্থা দেখে প্রশ্নবোধক চিহ্ন ওর দিকে তাকিয়ে আছে। বিকেলেও তো এশার সাথে দেখা করতে যাওয়ার সময় কত খুশি ছিলো।ঐখানে কি কোনো কিছু হয়েছে? ফারিশ চারিদিকে চোখ বুলাতে বুলাতে জনের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

জন ফারিশকে দেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সশব্দে কেঁদে উঠলো।ফারিশ হতভম্ব হয়ে দুই হাত দিয়ে জনকে ধরলো।জন কখনও সহজে কাঁদার ছেলে নয়।সবসময় ফারিশকে শান্তনা দেয়।শেষ কবে জন কেঁদেছে তা ফারিশের মনে নেই।একটা ছেলে কখনো খুব সহজে কাঁদে না।সেটা আমরা সবাই জানি।যখন নিজের কষ্টগুলো সহ্য করার মতো মনে সাহস ও শক্তি না পায় তখন কাঁদে। যখন পুরো পৃথিবীর সাথে হেরে যায় তখন তার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরে।

ফারিশঃ কি হয়েছে তোর?
জনঃ ( চুপ)
ফারিশঃ বিকেলে তো সব ঠিক ছিলো।কি হলো তোর?
জনঃ ( চুপ)
ফারিশঃ কথা বল।এশা তোকে ফিরিয়ে দিয়েছে।
জনঃ হুম। ( কাঁদো কাঁদো কন্ঠে)
ফারিশঃ এই ব্যাপার।আমি ভাবলাম কি না কি?
ফারিশ এমনভাবে বললো যে কিছুই হয়নি। জন ওকে ছেরে ওর দিকে অবাক হয়ে তাকালো।
ফারিশঃ এমন করে তাকিয়ে থাকিস না।না মানলে তুলে এনে বিয়ে করে নিবো।এভাবেই ঐ দুটো সোজা কথার মেয়ে নয়।

কথাগুলো বলে ফারিশ একটা রহস্যময়ী হাসি দিলো।যেটার মানে জন বুঝলো না।তবে এতুটুকু বুঝেছে ওর মনে শয়তানি কিছু ঘুরছে।

???

পরের দিন……

আইভি চারিদিকে চোখ বুলাতে বুলাতে ভার্সিটিতে ঢুকলো।কাউকে না দেখে বুকে থু থু দিলো।আজ ওর কপালে বিপদ আছে। সেটা মনে মনে জানান দিচ্ছে।

কখন থেকে একা একা বকবক করেছি।রিনি ও এশা দুজন চুপ মেরে আছে।ওদের দুজনকে এভাবে দেখে আমার ভালো লাগছে না।দুজনি কি রকম গম্ভীর হয়ে আছে।

এশাঃ আইয়ু তুই কি ক্যান্টিনের দিকটায় যাবি।
আমিঃ তোরা যা আমার যেতে ইচ্ছে করছে না।
রিনিঃ আমাদের ক্ষুধা লাগছে।চলতো এশু।
আমিঃ তোরা যা আমি ক্লাসে গেলাম।
এশাঃ আচ্ছা।
আমিঃ তারাতাড়ি ফিরিস।

এশা ও রিনি ক্যান্টিনের দিকে চলে গেল।আমি আনমনে ক্লাসের দিকে হাঁটছি। হঠাৎ ফারিশ হেচকা টানে দেয়ালের আড়ালে নিয়ে গেলো। আমাকে দেয়ালের সাথে চাপিয়ে তার দুই হাত আমার দুই বাহুর পাশ দিয়ে দেয়ালে রাখলো।বর্তমানে আমি তার বন্দী পাখি হয়ে আছি। আমার দিকে নিজের মুখটা সামান্য ঝুঁকিয়ে আমার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছু্ঁয়ে ডেভিল হাসি দিলো।আমার তো ভয়ে কলিজায় পানি নেই।

ফারিশঃ টুনটুনি পাখি, কাল আমায় কি বলেছিলে?
আমিঃ কই কি বলেছি?(শুকনো হাসি দিয়ে)
ফারিশঃ ধলাচান মিয়া,লম্বু আরেকটা কি বলেছিলে? মনে আসছে না কেন?
আমিঃ আমি আর কিছু বলি নি তো।
(শুকনো ঢোক গিলে)
ফারিশঃ মনে পরেছে।তালগাছ, তালগাছ বলেছিলে আমাকে।তাই না টুনটুনি পাখি।
আমিঃ আপনি কে? আপনাকে তো আমি চিনি না।কালকে আপনার সাথে আমার দেখা হয়েছিল। কই আমার তো মনে নেই। আমি এখানে কেন? আমার সৃতি শক্তি হারিয়ে গেছে।আমি সবকিছু ভুলে গেছি।(ভাব নিয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে)
ফারিশঃ কিছু মনে নেই।তোমার সৃতি শক্তি চলে গেছে টুনটুনি পাখি। ( শয়তানি হাসি দিয়ে)
আমিঃ হুম।আমার কিছু মনে নেই ।

ফারিশঃ তাহলে কালকে যা করেছিলাম তাই করি।কি বলো টুনটুনি পাখি। তোমাকে কোলে নিতে আমার কোনো সমস্যা নেই। ( ভ্রু নাচিয়ে)
আমিঃ না না কোনো দরকার নেই। আমার সব মনে পরে গেছে।আই এম সরি।কালকে ওসব কথা বলা আমার ঠিক হয়নি। ?( ইনসেন্ট ফেস করে)
ফারিশঃ মনে পরলে ভালো।সরি বলে কাজ হবে না।তোমাকে শাস্তি পেতে হবে টুনটুনি।
আমিঃ কি শাস্তি??
ফারিশঃ তুমি নিজে থেকে আমার গালে কিস করবে।
আমিঃ কি ই ই ই ই ই ই? ( চিৎকার করে)
ফারিশঃ যদি রাজী থাকো তাহলে বলো।নয়তো তোমাকে কোলে নিয়ে আমি সারা ক্যাম্পাস ঘুরবো।

আমি তার কাছে থেকে পালানোর জন্য রাস্তা খুঁজছি।যেহেতু দেয়ালে হাত হেলান দিয়ে রেখেছে। আমাকে দুই হাতের মাঝখানে বন্দি করে রেখেছে।হাতের নিচ দিয়ে পালাতে নিলে আমাকে খপ করে ধরে ফেললো।

আমিঃ এবারের মতো ছেরে দিন না।আর কখনও আপনাকে লম্বু,ধলাচান মিয়া,তালগাছ বলবো না।কি এমন করেছি একটু তালগাছেই তো বলেছি।আপনি তো দেখতে ধলাচান মিয়ার মতো।আর কত লম্বু আপনি।আমিতো আপনার কোমরে পরে থাকি।

( ডাহা মিথ্যা কথা। আমি তার কোমরে পরবো কেন? আমি সোজা হয়ে দাড়ালে তার হৃৎপিণ্ডের ধুপবুকনি শুনতে পাবো।এমনটা আমার মনে হয়।সঠিক জানি না। তার সাথে হাইট মাপার সুযোগ পাইনি।নইলে সত্যি মেপে নিতাম।)

ফারিশঃ ?
আমিঃ এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? আমি কিছু ভুল বলি নি।
ফারিশঃ তুমি কি কিস করবে?
আমিঃ না।ওগুলো পচা কাজ।এসব করা ভালো না।
( বাচ্চাদের মতো করে বললাম)

ফারিশ রেগে আইভির দিকে তাকিয়ে আছে। আস্তে আস্তে করে ওর চেহারার রং পাল্টে যাচ্ছে।কিন্তু মনে মনে আইভিকে দেখে বেশ মজা পাচ্ছে।ও জানে আইভি কখনও এই কাজ করবে না। তাই ভয় দেখানোর জন্য ওর সাথে এমন করছে।যাতে পরবর্তীতে ওকে ঐসব আজব আজব নামে না ডাকে।তাছারা আইভির ভয় পাওয়া ফেসটা ওর খুব ভালো লাগে দেখতে।

হঠাৎ করে আমার মাথায় দুষ্টুমী বুদ্ধি খেলে গেলো।আমি মনে মনে শয়তানি হাসি দিলাম।আমি জোরে চিৎকার করে বললাম–

আমিঃ আরে মি. নাহান আপনি?

আমার কথা শুনে ফারিশ পেছনের দিকে তাকালো।আমিও সুযোগটা কাজে লাগিয়ে তাকে জোরে ধাক্কা মারলাম।টাল সামলাতে না পেরে কিছুটা দূরে ছিটকে পরলো।ফিরে আসার সময় পায়ে থাকা উঁচু গোড়ালির জুতো দিয়ে পায়ে জোরে পারা দিয়ে উল্টো দিকে দৌড় দিলাম।ফারিশ আহ্ করে চিৎকার করে পা ধরে বসে পরলো।একবার পেছনে তাকিয়ে ফারিশকে ভেংচি কাটলাম।

আমিঃ আবার কখনও এরকম বাজে কোনো কিছু আবদার করলে এর থেকে খারাপ অবস্থা করবো।আজকে শুধু ট্রেইলার দেখালাম।পরেরবার পিকচার দেখিয়ে দিবো।?

ফারিশ রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। পায়ে পারাটা বেশ জোরেই লেগেছে।যার কারণে এখনো পা ধরে ফারিশ বসে আছে।আর আমি সেখান থেকে পালালাম।ধরতে পারলে তালগাছটা আমাকে মাথায় তুলে আছাড় মারবে।যা রেগে আছে।ভাগ আইভি ভাগ। নিজের জীবন বাঁচা।

(চলবে)

#

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে