শুধু তুই পর্ব-১৯+২০+২১

0
2714

#শুধু তুই
#পর্বঃ১৯
#Tanisha Sultana (Writer)

“ও তুলি

তুলি জিসানের দিকে না তাকিয়ে জুজুর সাথে খেলায় মন দেয়। জিসান তুলির পাশে বসে।

” কথা বলোস না কেন?

“হুম বল

” ওই মেয়ে সম্পর্কে খোঁজ নিছোস?

“লুডু খেলবি?

” আমি কি বলতেছি তোরে

“কি যেনো বললি

জিসান রেগে তুলির চুল ধরে টান দেয়। তুলিও জিসানের চুল ধরে টানে।

” তোমরা ঝগড়া করছো কেনো?

জুজু দুজনকে থামায়

“বলতে চাইছিলাম কিন্তু এখন বলবো না

তুলি মুখ ফুলিয়ে বলে। জিসান কান ধরে

” বেবি ভুল হয়ে গেছে প্লিজ

তুলি হেসে ফেলে।

“মেয়েটার নাম তন্নি। আমার কাজিন। অনার্স ফাস্ট ইয়ারে স্টাডি করে।

” ফোন নাম্বার আছে

“হুম আছে

” দে না

“শক কতো

” প্লিজ

“আগে তোর ভাইয়ের সাথে আমার প্রেমটা হোক তারপর নাম্বার পাবি

” তাহলে আর এ জীবনে প্রেম করা হলো না

জিসান বিরবির করে বলে

“কি বললি

” কিছু না

“পাপা মামনিকে পেয়েছো?

জুজু দৌড়ে দরজার কাছে যায়। তুলি আর জিসান দরজার দিকে তাকায়। সায়ান জুজুকে কোলে নেয়

” তোমার মামনি হারিয়ে যায় নি চলে গেছে আমাদের ছেড়ে। আর আসবে না আমাদের কাছে। আজ থেকে তোমার নতুন মা তোমার মামনি।

জুজু কি বুঝলো কে জানে তুলির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। সায়ান ওয়াশরুমে চলে যায়।

“তুলি তুই কিছু বুঝলি?

” না রে। কি বললো

“ভাবছি

জিসান ভাবতে ভাবতে চলে যায়।

আজ তুলির পায়ের ব্যান্ডেস খুলে দেওয়া হয়েছে। পায়ে হালকা ব্যাথা আছে কিন্তু তবুও ভালোই হাঁটতে পারছে।

তুলি বাড়ির সবাইকে এক জায়গায় এনেছে কিছু কথা বলবে বলে। সবাই অধিক আগ্রহে বসে আছে তুলির কথা শোনার জন্য

” কি বলবেন তাড়াতাড়ি বলুন। আমার লেট হয়ে যাচ্ছে
সায়ান বিরক্তি নিয়ে বলে।

“আংকেল আপনি আমাকে সায়ানের সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন কারণ আপনার ছেলে একটা বিবাহিত মেয়ের পেছনে ঘুরতো তাই। আপনার মনে হয়েছে আমার সাথে বিয়ে হলে সায়ান সব ভুলে আমার আচল ধরবে ঠিক বলেছি

সায়ানের বাবা মাথা নিচু করে বলে

” হ্যাঁ

“গুড৷ এবার আপনার ছেলের মাথা থেকে জুঁইয়ের ভুত নেমে গেছে। তো এবার আমার ছুটি

সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে

” তুলি ছুটি মানে কি? জিসান বলে

“আমার পক্ষে এই গোমড়ামুখো নিরামিষ লোকটার সাথে থাকা পসিবল না তাই আমি চলে যাচ্ছি। আলরেডি আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। তবে হ্যাঁ আমি কিন্তু জবটা ছাড়বো না। কয়েকদিন পরেই নেইমারের মতো একটা ছেলেকে বিয়ে করবো আপনাদের সবাইকে দাওয়াত দিবো যাবেন কিন্তু।

তুলির শাশুড়ী তুলির কাছে যায়। কিছু বলবে তার আগেই তুলি বলে

” ঠিক আছে আপনি অনেক ভুল করছেন। আমাকে করলার জুস খাইয়েছেন ইটস ওকে। আমি কিছু মনে করি নি

তুলি কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রুমে চলে আসে।

রুমে এসে গুনগুন করে গান গাইছে আর লাগেজ গোছাচ্ছে।

“কোনো জিনিস যেনো পরে না থাকে

সায়ান রুমে এসে বলে। তুলি মুচকি হেসে বলে

” না না কিচ্ছু পরে থাকবে না। আপনার নতুন বউ এসে কোনো সন্দেহ করবে না

“ভাবছি

” কি

“এখন থেকে আপনি কাকে ইডিয়েট স্টুপিট সাট আপ এগুলো বলবেন

” আপনার ভাবতে হবে না

“হুমম। আমার বিয়েতে কিন্তু যাবেন

” কবে বিয়ে

“এখনো ঠিক হয়নি তবে হবে তাড়াতাড়ি

সায়ান কিছু না বলে চলে যায়। তুলিও ব্যাগ গুছিয়ে চলে যায়। সবাই অনেক থাকতে বলে কিন্তু তুলি থাকবে না।

অফিসে বসে আছে সায়ান। মালয়েশিয়ার সেই বিজনেস পার্টনার আসে। বড় বড় চুল আর দাঁড়ি। লোকটা সায়ানের সামনে বসে অনেক কথা বলছে। আর সায়ান তুলির কথা ভাবছে। উগান্ডার প্রেসিডেন্ট, মহিলা এসব কথা মনে পড়ে সায়ান শব্দ করে হেসে ওঠে। সবাই মোটামুটি বড়সড় একটা শক খায়। এই প্রথম সায়ানকে হাসতে দেখছে সবাই।

সায়ান হাসি থামিয়ে সবার দিকে একবার তাকায়। তারপর কাশি দিয়ে কাজ শুরু করে।

তুলি শিবা কার্টুন দেখছে আর চিপস খাচ্ছে। শুধু বারবার সায়ানের কথা মনে পরছে

” ধুর ভাল্লাগে না সব সময় খালি ওই গোমড়ামুখোর কথা মনে পড়ে। মনডারে এতো করে বোঝায় ওই গোমড়ামুখো একটা জলহস্তী ওর মনে মায়া দায়া কিচ্ছু নাই। কতো বাজে বিহেব করেছে আমার সাথে। আমি ওই জিসানের কথা শুনে চলে এলাম। একবারও আমারে বললো না তুলি থেকে যাও না। আরও বলে কি আমার কোনো জিনিস যেনো না পড়ে থাকে।করলা একটা। আমার নিশ্পাপ মনে কষ্ট দিছোস তো জীবনেও বউ পাবি না। চিরকুমার থাকতে হবে তোকে বলে দিলাম

জিসান তুলিকে বুদ্ধি দিয়েছে চলে আসার। জিসানের ধারনা তুলি দুরে থাকলে সায়ান তুলির শূন্যতা বুঝতে পারবে।

“তুলি

তুলি তাকিয়ে দেখে তন্নি। তন্নি তুলির পাশে বসে

“তুলি জানোস আমি তোকে এতোটা ভালোবাসি

” কস কি আগে তো বলোস নাই

“তুই তো শুনোস নাই।

“ভালোবাসা

” হুম রে ভালোবাসা।

“ভালোবাসা

তৃতীয় কারো কন্ঠ শুনে তুলি আর তন্নি দরজার দিকে তাকায়। দেখে জিসান। জিসান তুলির পাশে বসে।

” জিসান তুই এখানে

“তোরে দেখতে আসলাম

” শুধু আমারে

“হুমমম

” তন্নি তুই যেতে পারিস

“ও যাবে কেনো?

” তুই তো শুধু আমাকে দেখতে এসেছিস তো তন্নি এখানে থাকবে কেনো?

জিসান মাথা চুলকায়। তন্নি মাথা মাথা নিচু করে হাসে

“আমি তোদের জন্য খাবার নিয়ে আসি

” হুম তারাতাড়ি যা

জিসান চট করে বলে ফেলে। তুলি জিসানের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকায় জিসান আমতা আমতা করে বলে

“খুব খিদে পেয়েছে তো তাই

তুলি মুচকি হেসে চলে যায়। জিসান আর তন্নি প্রেম আলাপ করতে থাকে।

আজ সায়ান একটু তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বাড়ি আসে। রুমে ঢুকে মনটা খারাপ হয়ে যায়। ড্রেস চেঞ্জ না করেই বেলকনিতে চলে যায়।

” আগেও তো এই রুমটাতে আমি একা থেকেছি কখনো তো ফাঁকা ফাঁকা লাগে নি। তবে আজ কেনো তুলিকে ছাড়া এতো আসহায় লাগছে। মেয়েটা থাকলে এতোখনে কথা বলে মথা পাগল করে দিতো।

জুজু দৌড়ে আসে সায়ানের কাছে।

“পাপা তুমি নতুন মাকে নিয়ে আসোনি কেনো?

সায়ান জুজুকে কোলে নেয়

” ও আসবে না

“কেনো আসবে না। তুমি বললেি চলে আসবে। চলো না পাপা আমি আর তুমি গিয়ে নতুন মাকে নিয়ে আসি

সায়ান চুপ করে আছে।

” কি হলো পাপা কিছু বলো

“আমি একটু রেস্ট নেবো সোনা

জুজু সায়ানের কোল থেকে নেমে মন খারাপ করে চলে যায়।

” আচ্ছা তুলিরও কি খারাপ লাগছে? আমার কথা মনে পড়ছে? তুলি কি এখন কাঁদছে?

সায়ান বিরবির করে এসব বলতে বলতে ওয়াশরুমে চলে যায়।

রাত দশটা সায়ান বেলকানিতে বসে আছে। জুজু সায়ানের পাশে বসে ফোনে গেমস খেলছে।

“পাপা তুমি নতুন মাকে মিছ করছো?

সায়ান ঠিক বুঝতে পারছে না কি উওর দেবো।

জিসান আজ তুলিদের বাড়িতেই থাকবে। তুলি জিসান তন্নি তিনজন গল্প করছে। তখন কলিং বেল বাজে

” এতো রাতে আবার কে এলো? (জিসান)

“আমি দেখছি

তুলি যায় দরজা খুলতে। দরজা খুলে তুলি তো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

” আমি কি ঠিক দেখছি?

চলবে

#শুধু তুই
#পর্বঃ২০
#Tanisha Sultana (Writer)

“আমাকে একটা চিমটি কাটেন তো

সায়ান ভ্রু কুচকে বলে

” কেনো?

“না মানে আপনি এখানে এসেছেন এটা আমি বিশ্বাস করতে পারছি না

” না বিশ্বাস করার কি আছে?

“আমি তো আমার সব জিনিস নিয়ে এসেছি ভুলেও কিছু ফেলে আসি নি। তাহলে আপনি কেনো আমাকে বকতে এসেছেন?

” ইডিয়েট

“কে এসেছে রে তুলি

তুলির মা এগিয়ে আসতে আসতে বলে

” সায়ান বাবা যে দাঁড়িয়ে আছো কেনো ভেতরে আসো

সায়ান তুলিকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে আসে। জুজু সায়ানের কোলে ঘুমিয়ে আছে। তুলির মা সায়ানকে নিয়ে তুলির রুমে যায়। তন্নি আর জিসান কাপল ডান্স করছিলো সায়ানকে দেখে থামে। জিসান তন্নির থেকে দুরে গিয়ে দাঁড়ায়।

সায়ান জুজুকে বেডে শুয়িয়ে দেয়। তারপর হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে পড়ে জিসানের সামনে। জিসান বেশ বুঝতে পারছে তন্নিকে নিয়ে কিছু বলবে তাই জিসান ফট করে বলে ফেলে

“ব্রো তুমি এখানে? তুলিকে মিছ করছিলে বুঝি। আহা কতো ভালোবাসা

” সেরকম কিছু না জুজু কান্না করছিলো তাই এসেছি

তুলির মা খাবার আনতে চলে যায়।

“তাহলে এখন আসতে পারিস

সায়ান অবাক হয়ে জিসানের দিকে তাকায়

” হোয়াট

“জুজুকে পৌঁছে দিলেই এবার আসতে পারো। ওই দিকে দরজা

সায়ান অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে

” জিসান থাক না

তুলি জিসানকে বলে। জিসান রেগে বলে

“কি থাকবে বল আমায়

” আরে রাগ করছিস কেনো? তুই কি ভুলে গেলি না উনি আমার বস। বসকে ইমপ্রেস করতে পারলে তো আমারই লাভ। আজকে রাতটা বস আমাদের বাড়িতে থাকুক। আমরা বসকে খাতির যত্ন করি। সকালে চলে যাবে

“তুই যখন বলছিস থাক।

জিসানও তুলির সাথে তাল মিলায়। সায়ানের প্রচুর রাগ হচ্ছে

” জিসান আমার ঘুম পাচ্ছে একটু শান্তিতে ঘুমাতে দে
দাঁতে দাঁত চেপে বলে সায়ান।

“ওই তোরা চল আমার বস ঘুমাবে

তুলি জিসান তন্নি চলে যায়।

” ইডিয়েট। সব থেকে বড় ইডিয়েট হলো আমার ভাই। আমাকে বেরিয়ে যেতে বলে সাহস কতো। সময় আমারও আসবে। সব ইডিয়েট আমার কপালেই জুটে। সোনায় বাঁধানো কপাল আমার।

সায়ান গাল ফুলিয়ে বেডে বসে পড়ে।

তুলির মা তুলিকে সায়ানের খাবার দিয়ে বলেছে। তুলির হাতে খাবারের প্লেট ধরিয়ে দিয়েছে।

তুলি খাবার নিয়ে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। মনে মনে সাহস সঞ্চার করছে ভেতরে যাওয়ার জন্য

“আরে তুলি ভয় পাচ্ছিস কেনো? সায়ান যদি বাঘ হয় তাহলে তুই সিংহ। ভয় পাবো না আমি

অবুক ফুলিয়ে তুলি রুমে ঢুকে। সায়ান চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে তুলি সায়ানের পাশে দাঁড়ায়।
একটু কাশি দিয়ে বলে

” আপনার খাবার। খেয়ে আমাকে উদ্ধার করুন

তুলি খাবার রেখে চলে যেতে নেয়। কয়েক পা বাড়ানোর পরে ঠাস করে পড়ে যায়। তুলির পরে যাওয়া দেখে সায়ান এগিয়ে আসে

“প্রতিবন্ধী না কি আপনি? ঠিক করে চলতে পারেন না

” মুখ সামলে কথা বলুন। তুলি সব সময় তুলির স্পিডে চলে। এখন যদি সামনে কিছু চলে আসে তো আমি কি করবো

“হুম তাই তো। আসেপাশের সব কিছু দোষ আপনার দোষ নেই

তুলি সায়ানের গাল টেনে বলে

” আমার টুনুমুনু উম্মা

“ছি ছি ছি এসব কি

” চুমু কিছ পাপ্পি

“এসব ভালো না।

” নিরামিষ

তুলি উঠে দাঁড়ায়। সায়ানও দাঁড়ায়। তুলি চলে যেতে নেয় সায়ান হাত টেনে ধরে

“কিহহ। প্রেম টেম করবেন না কি?

” একা খেতে ভালো লাগে না

তুলি বসে আছে সায়ান খাচ্ছে। তুলি সায়ানের সামনে মুখ নিয়ে হা করে

“কি

” খাইয়ে দেন খিদে পেয়েছে

তুলির ইনোসেন্ট মুখটা দেখে সায়ানের মনে লাড্ডু ফুটে। হা করে তাকিয়ে আছে

“কি হলো দেন

সায়ান তুলির মুখে ভাত দেয়। তুলি বাচ্চাদের মতো করে খায়।
খাওয়া শেষে সায়ান তুলির মুখটা মুছিয়ে দেয়।

তুলি প্লেট নিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়

” তুলি

তুলি পেছনে তাকায়। এই প্রথম সায়ান তুলিকে নাম ধরে ডাকলো। তুলি প্লেটটা টেবিলে রেখে সায়ানের হাত ধরে টেনে বেলকনিতে নিয়ে যায়।

“খুব ভালো লাগছে আমার

” কেনো?

“আপনি আমার নাম ধরে ডাকলেন তাই

” ওহহ

“হুম। বসুন না

তুলি সায়ানকে বসিয়ে দেয়।

” এক মিনিট

তুলি দৌড়ে চলে যায়। একটু পড়ে হাতে একটা গিটার নিয়ে ফিরে আসে।

“এটা কেনো?

” আপনি গান গাইবেন

তুলি সায়ানের পাশে বসে পড়ে

“আমি গান গাইবো না

” হুম তা গাইবেন কেনো? আমি তো কেউ না

“হুমম

” কেউ না আমি

“জানি না

” বলতে হবে কে আমি?

“আমার

” আপনার

“আমার

” আমার শুনছি তারপর

“পিএ

তুলি এবার ফিক করে হেসে ফেলে।

” আপনার পিএ আমি।

সায়ান কিছু না বলে গিটার বাজানো শুরু করে। তুলি সায়ানের কাঁধে মাথা রাখে। সায়ান একটু মুচকি হেসে শুরু করে

#শুধু তুই শুধু তুই আর চাইছি না কিছু

গান শেষে তুলি সায়ানের পায়ের কাছে বসে।

“ওখানে বসলেন কেনো?

” বসের পাশে বসাটা উচিৎ না

“আপনি সত্যি ইডিয়েট।

” হয়তো

“তুলি আমরা ফ্রেন্ড হতে পারি

” নিরামিষ একটা। বলবে তুলি আই লাভ ইউ তা না। বলদ একটা। তবে আমি যদি তোমার মুখ থেকে লাভ ইউ না বের করতে পারি তাহলে আমার নামও তুলি না।
তুলি মনে মনে বলে

“কি ভাবছেন?

তুলি হালকা হেসে বলে

” কিছু না

“ফ্রেন্ড হবেন?

” হতে পারি বাট একটা শর্তে

“কিহহ

” আমাকে তুমি করে বলতে হবে

সায়ান হালকা হেসে বলে

“ঠিক আছে।

দুজনই চুপ।

” তুলি

“হুম

” সরি

“কেনো

” তোমার সাথে অনেক বাজে বিহেব করেছি। তোমাকে হার্ট করছি। মা বাজে বিহেব করছে। সব কিছু মিলিয়ে সরি

“ইটস ওকে। আমি কিছু মনে করি নি।

” খুব সহজে কি করে সবটা মেনে নাও তুমি

“খুব সহজে সবটা মেনে নেই বলেই তো এতো হ্যাপি থাকতে পারি। ভালো থাকতে পারি। তা না হলে তো দম বন্ধ হয়ে মরে যেতাম।

চলবে

#শুধু তুই
#পর্বঃ২১
#Tanisha Sultana (Writer)

“আমি যাই ঘুমোবো

” আগে তো আমি আর তুমি এক রুমেই থাকতাম

“হুমম

” থাকো না এখানে

তুলি কিছু না বলে জুজুর পাশে শুয়ে পরে। সায়ান সোফায় শুতে যায়

“আমার খাটটা ভালোই বড়। তিনজনের জায়গা হবে

সায়ান জুজুর আপর পাশে শয়। তুলির এখন জুজুকে কাবাব মে হাড্ডি মনে হচ্ছে।

” এতোদিন কোলবালিশ এখন জুজু। ধুর ভাল্লাগে না

তখন দরজায় টোকা পরে।

“আমি দেখছি

সায়ান উঠে দরজা খুলে দেখে জিসান দাঁত কেলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

” তুই এখানে

“হাড্ডিকে নিতে এলাম।

” হাড্ডি কে?

জিসান রুমে ঢুকে জুজুকে কোলে নেয়

“ও কে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস

” জুজু আমার কাছে ঘুমোবে

জিসান তুলিকে চোখ মেরে চলে যায়। সায়ান দরজা বন্ধ করে এসে মাঝখানে কোলবালিশ দিয়ে শুয়ে পড়ে।

“সোনায় বাঁধানো কপাল আমার। নিরামিষের বাচ্চা নিরামিষ

” তুলি তুলি কোন ইয়ারে স্টাডি করো

সায়ানের এই প্রশ্নে তুলি অবাকের দশম পর্যায়ে উঠে যায়। তিন মাস এক সাথে থেকেও স্বামী জানে না স্ত্রী কোন ক্লাসে পড়ে। ভাবা যায়

“কিছু জিজ্ঞেস করছি

“পড়ি না

” মিথ্যা বলো কেন

“তো কি বলমু

” আজব একটা সহজ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারো না ইডিয়েট

“তিন মাস এক সাথে থেকেও আপনি জানেন না আমি কোন ক্লাসে পড়ি। এরপর আর কিছু বলার থাকে না

সায়ান আর কিছু বলে না। তুলি অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে চোখ বন্ধ করে।

সকালবেলা মুখের কারো স্পর্শ পেয়ে তুলির ঘুম ভেঙে যায়। তুলি ৯৯% শিওর সায়ান। তাই একটু রোমান্টিক মুড নিয়ে চোখটা খুলে। চোখ খুলেই দেখে জুজু। তুলির মুখটা কালো হয়ে যায়

” গুড মর্নিং নতুন মা

তুলি জুজুর গাল টেনে বলে

“গুড মর্নিং টু সোনা

” তুমি জানো কতোগুলা মিছ করছিলাম তোমায়

“আমার সোনাটা আমায় মিছ করেছে।

” হুম

তুলি জুজুকে একটা পাপ্পি দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে সায়ান ল্যাপটপে কাজ করছে।

“গুড মর্নিং জামাই

সায়ান তুলির দিকে একনজর তাকিয়ে বলে

” জামাই কি শব্দ

“জানেন না তাহলে আপনাকে ডিটেইলস বলি

তুলি আগ্রহ হয়ে সায়ানের পাশে বসে

” আমি শুনবো না

“তা শুনবেন কি করে। গোমড়ামুখো কোথাকার

” হুম

“আপনি কি জানেন আপনি পৃথিবীর সব থেকে বড় অনরোমান্টিক পারসন।

” সায়ান ল্যাপটপ বন্ধ করে তুলির দিকে তাকিয়ে বলে

“আমি অনরোমান্টিক

” হুম। নিরামিষ

“রিয়েলি

” হুম

সায়ান তুলির দিকে মুখটা একটু এগিয়ে দেয়। ভাবে তুলি হয়ত ভয় পাবে পিছিয়ে যাবে। কিন্তু তুলি সায়ানকে অবাক করে দিয়ে আরও একটু এগিয়ে আসে।

সায়ান পিছিয়ে যায়

“কি হলো

” কিছু না পানি খাবো

তুলি বিরক্তি নিয়ে উঠে যায়। সায়ান বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়

“আল্লাহ এটা মেয়ে না কি? একটু হলেই যাচ্ছিলাম। আল্লাহ বাঁচাইছো

তুলি সায়ানের সামনে ঠাস করে পানির বোতল নামায়

” খেয়ে নিন

“একটু মিষ্টি করে বলো

তুলি সায়ানের কলার ধরে বলে

” দুই দিন সময় দিলাম

কলার ছেড়ে দিয়ে হন হনিয়ে চলে যায়

“কিসের জন্য দুইদিন সময় দিলো। কিছুই তো বুঝলাম না

খাবার টেবিলে সায়ান জিসান তুলি আর তুলির বাবা খাচ্ছে। জুজু আগেই খেয়ে নিয়েছে।

সায়ান নিচের দিকে তাকিয়ে খেয়েই যাচ্ছে। তুলি একটু খাচ্ছে আর সায়ানের দিকে তাকাচ্ছে।

” খাচ্ছে দেখো মনে হয় জীবনেও খায় নাই। হনুমান একটা। জীবনটাই বেদনার

“তুলি ঠিক করে খা

তুলির মা তুলির প্লেটে রুটি দিয়ে বলে

” খাচ্ছি তো

খাওয়া শেষে যে যার রুমে চলে যায়। সায়ান অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছে। তুলি সায়ানের সামনে দাঁড়ায়

“কিহহ

” আপনার সাথে অফিসে যাবো

“যাও রেডি হয়ে এসো

তুলি খুশি হয়ে চলে যায়।

সায়ান গাড়ি ডাইভ করছে। আর তুলি সাজুগুজু করছে

” আমরা কোনো প্রোগ্রামে যাচ্ছি না

“আই নো

” তাহলে এরকম সং সাজার মানে কি?

“ছেলে পটানোর ধান্দা

” মানে

“মানে সাজুগুজু করলে আমার খুব হট লাগে। তো ছেলেরা আমার প্রতি ইমপ্রেস হবে আর প্রপোজ করবে

” যাতা চিন্তা ভাবনা

“গুড চিন্তা ভাবনা

” ছেলে পটাবে কেনো?

“ও মা বিয়ে করবো তাই।

” বিয়ে তো করেছোই

“আপনার মতো নিরামিষের সাথে থাকা যায় না কি

” আমিষ হওয়ার জন্য কি করতে হবে

“কিছ

সায়ান গাড়িটা থামিয়ে টুক করে তুলির গালে একটা চুমু দেয়। তুলি গালে হাত দিয়ে সায়ানের দিকে তাকায়

” এটা কি ছিলো

“কিছ

” এটাকে কিছ বলে

“হুমম

” ধুর। জুজুও তো এর থেকে ভালো কিছ করতে পারে।

“আমি এর থেকে ভালো পারি না

” পারেন কি?

“সব

” কথা বাদ দেন তো।

সায়ান গাড়ি চালানো শুরু করে

“জীবনে সব কিছুরই প্রয়োজন আছে। এই যে আমি নিরামিষ এটাও কিন্তু প্রয়োজন আছে। আমাকে একটু সময় দাও আমি সব ঠিক করে দেবো। আসলে আমার না মানিয়ে নিতে সময় লাগে। তোমার মতো এতো সহজে সব মেনে নিতে পারি না। আমি মানুষের মন পড়তে পারি না। কারো মন বোঝার চেষ্টাও করি না। কারো সাথে মিশতে পারি না। আর মেশার চেষ্টাও করি না। আমি যাদেরি আপন ভাবি তারাই আমাকে ঠকায়। বিপদে ফেলে। তাই আমি আমার মতো থাকি।

তুলি সায়ানের কথা গুলো মন দিয়ে শুনছে।

” জুঁই আমি আর নিরব মানে জুজুর বাবা এক ভার্সিটিতে পড়তাম। খুব ভালো বন্ধু ছিলাম আমরা। নিরবই আমার মনে কথা জুঁইকে বলতে হেল্প করেছিলো। পরে আবার ওই আমাদের মাঝে দেয়াল তৈরি করে দিলো। জুঁইকে আমি ভালোবাসতাম ঠিকই তবে নিরব যদি একবার বলতো জুঁইকে ও বিয়ে করবে আমি ওদের মধ্যে থেকে দুরে চলে যেতাম। কিন্তু

সায়ান চুপ হয়ে যায়

“তারপর

তুলি জিজ্ঞেস করে

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে