#শুধু তুই
#পর্বঃ১৫
#Tanisha Sultana (Writer)
রাস্তায় অনমনে হাঁটছে তুলি। সায়ানের কথা ভাবছে।
“সত্যি কি সায়ান জুঁইকে বিয়ে করবে? যদিও করে তাহলে আমি কি আটকাতে পারবো? আর আমি কেনো এতো অস্থির হচ্ছি। আমি তো ওনাকে ভালোবাসি না তাহলে ওনার পাশে অন্য কাউকে কেনো সয্য করতে পারছি না। কি হচ্ছে আমার সাথে? কি করবো আমি
একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা খায় তুলি। পড়ে যায় তুলি। গাড়ি থেকে জিসান নেমে আসে। তুলি পায়ে প্রচুর ব্যাথা পায়৷ তুলির চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
” তুই ঠিক আছিস
জিসান তুলিকে ধরে
“পায়ে খুব ব্যাথা করছে
তুলি কান্না করতে করতে বলে। সায়ান এদিকেই আসছিলো তাই ওদের দেখে ওদের দিকে আসে। তুলির পা থেকে রক্ত ঝড়ছে। জিসান তুলিকে কোলে তুলে নেয়। সায়ানের বুকের বা পাশে চিন চিন করছে৷
” ব্রো প্লিজ তুই ডাইভ কর তুলিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
সায়ান ডাইভিং সিটে বসে। জিসান তুলিকে নিয়ে পেছনের ছিটে বসে।
তুলির পা ভেঙে গেছে আর কেটে গেছে। পাঁচটা সিলি দেওয়া হয়েছে। বেডে শুয়ে আছে তুলি। হাঁটার মতো অবস্থায় নেই।
“তুলি এবার আমরা বাড়ি যাবো
তুলি এবার জিসানের দিকে তাকায়। সায়ান একটু দুরে দাঁড়িয়ে আছে।
” ব্রো তুলি হাঁটতে পারবে না। তুই ওকে কোলে করে নিয়ে আয়
“তখন তো তুই আনলি এখনও তুই নে
” তুলি কোথাও পোরা পোরা গন্ধ পাচ্ছি তুইও কি পাচ্ছিস
“হুম কারো মন পুরছে
” আপনি না অসুস্থ
“তো
” কথা বলছেন কি করে
“চোখে কি কম দেখেন না কি? আমার পা ভাঙছে মুখ না
” মুখ ভাঙলে ঠিক হতো
বিরবির করে বলে সায়ান
“কি বললেন
” কিছু না
জিসান
পাশে তাকিয়ে দেখে জিসান হাওয়া
জিসান কই গেলো
“চলে গেছে
” আপনাকে
“আপনি কোলে নিবেন
” অকালে প্রানটা হারাবো
“কি বললেন? তুলি রেগে বলে
” আসুন
“কানা না কি
” 😡😡
“আমি যদি আসতে পারতাম তাহলে তো হাঁটতেও পারতাম
” ইডিয়েট
তুলি হাত বাড়িয়ে বলে
“কোলে নেন
সায়ান তবে কোলে তুলে নেয়
” আপনার ওয়েট কতো
“42
” মিথ্যুক
“সত্যি
” ৮০ কেজি কে বলছে ৪২ কেজি
সায়ান বিরবির করে বলছে
“কি বিরবির করছেন?
” কিছু না
সায়ান হাঁটা শুরু করে। তুলি সায়ানের গলা জড়িয়ে ধরে। সায়ানের কেনো জানি মুহুর্তটাকে খুব ভালো লাগছে। সময়টা যদি এখানেই থেমে যেতো। কিন্তু সেটা তো সম্ভব না।
কলিং বেল বাজায় জিসান। সায়ানের মা দরজা খুলে দেয়। সায়ানের কোলে তুলিকে দেখে ভ্রুকুচকে তাকায়
“ও কোলে কেনো?
তুলি সায়ানের গলা জড়িয়ে বলে
” শাশুমা আপনার ছেলেটা রোমান্টিক হওয়ার চেষ্টা করছে। তাই কোলে নিয়েছে। এতো দিন তো নিরামিষ ছিলো
“এখন বুঝি আমিষ
জিসান বলে
” আর আমিষ। কপাল খারাপ। এতোদিন হলো বিয়ের এপর্যন্ত একটা কিছ ও করে নাই। সম্মান দিয়ে কথা বলে আমার সাথে। মনে হয় আমি ওনার শাশুড়ী
সায়ানের মা কাশি দেয়
“কোথায় কি বলতে হয় সেটাও জানে না
সায়ানের মা চলে যায়। সায়ান হন হন করে তুলিকে রুমে নিয়ে যায়। বিছানায় শুয়িয়ে দেয়।
” মানুষ হবেন না তাই না
“আপনি মানুষ হবেন না
” আমি কি করছি
“আমি কি করছি
” ওসব কেনো বললেন
“মিথ্যা বলছি কি? আপনি তো নিরামিষ ই
” ওহহহ আচ্ছা
“হুমম। শুনুন না
” বলুন
“আমার একটা হবু বফ আছে তার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো আপনাকে।
” হবু বফ মানে কি
“ওয়েটিং এ আছে। ডিভোর্সের পরে এক্সেপ্ট করবো। তাই আপাতত হবু বফ
” পাগল একটা
“পাগল না পাগলি
” বসুন খাবার নিয়ে আসছি
“বিশ টিশ মিশায় দিয়েন না আবার
” চল্লিশ মিশিয়ে দেবো
সায়ান চলে যায়
“চল্লিশ আবার কি? পাগল হইলো না কি?
সায়ান তুলির জন্য খাবার নিয়ে আসে। তুলিকে ধরে বসিয়ে খাইয়ে দেয়। খাওয়া শেষে সায়ান প্লেট গোছাতে থাকে
” আমরা কি এক সাথে থাকতে পারি না
সায়ান থমকে তুলির দিকে তাকায়
“মানে
” মানে ফ্রেন্ড হয়ে। ডিভোর্সের পরে আমরা ফ্রেন্ড হয়ে থাকবো। যদি আপনি চান
“ভালো থাকতে কি লাগে?
সায়ান তুলির পাশে বসে পড়ে।
” ভালো একজন বন্ধু
“ভুল বললেন
” তাহলে
“বোঝার মতো ভালোবাসার মতো একজন মানুষ। যেটা আমার নেই। কেউ বোঝে না আমাকে। ছোট বেলা থেকেই সব সময় একা একা থাকতাম। কারণ কারো সাথে মিশতে ভালো লাগতো না। যখন নতুন কলেজে গেলাম জুঁইয়ের সাথে পরিচয় হলো। রিলেশন হলো।
” তারপর
“হাসতে শিখলাম। যে মানুষটা আমাকে হাসতে শেখালো আবার সেই হাসি কেড়ে নিলো। মজার বেপার কি জানেন আবার সেই মানুষটাই আমার জীবনে ফিরে আসতে চাইছে
” ভালো তো। আবার ভালোবাসার মানুষটাকে পাবেন
সায়ান একটু হাসে।
“শুয়ে পড়ুন
” জুজু কেমন আছে
“আমি ছাড়া সবাই ভালো আছে
সায়ান বেলকনিতে চলে যায়। সিগারেট ধরায়।
” তুলির জন্য মনের মধ্যে আলাদা একটা অনুভূতি হয়। ওর কাছাকাছি থাকতে ভালো লাগে। ওর পাগলামি ভালো। দোটানায় পড়ে গেছি আমি। কি করবো আমি? আমার জীবনটা কেনো এমন? যখন ভাবি হয়ত এখন একটু ভালো থাকবো তখনই ভালো থাকার জিনিসটা দুরে সরে যায়। বেঁচে থাকতে হয়ত আমি ভালো থাকতে পারবো না।
সায়ানের ফোনে ফোন আসে। জুজু কল করেছে
“পাপা কি করো
” বসে আছি সোনা। তুমি?
“মামনি বলছে তোমার সাথে কথা না বলতে। কিন্তু আমি তো তোমাকে এতোটা ভালোবাসি তোমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারবো না। প্লিজ পাপা ডু সামথিং
“মামনি কি করে?
” রান্না করছে। নতুন মা কেমন আছে
“পা ভেঙে গেছে
“আমি নতুন মাকে দেখবো
” ঠিক আছে আমি কাল তোমাকে নিয়ে আসো
“প্রমিজ
” হুম প্রমিজ
“লাভ ইউ পাপা
” লাভ ইউ টু
চলবে
#শুধু তুই
#পর্বঃ১৬
#Tanisha Sultana (Writer)
রাত আটটা বাজে। তুলি সায়ানের অপেক্ষা করছে। সেই দুপুর বেলা বেরিয়েছে জুজুকে আনতে এখনো আসার নাম নেই।
“কি রে
জিসান আসে। তুলির পাশে বসে। তুলি একমনে সায়ানের কথা ভাবছে। জিসান যে ওর পাশে বসেছে সেদিকে তুলির খেয়াল নেই। সায়ান এবার তুলিকে একটু ধাক্কা দেয়
” কি রে কি ভাবছিস
“জিসান আমি তোর ভাইয়ের সাথে থাকতে চায়। সংসার করতে চায়।
জিসান তুলির দিকে তাকিয়ে আছে। তুলি জিসানের হাত ধরে কেঁদে বলে
” খুব ভালোবাসে ফেলেছি তোর ভাইকে। আমি ওকে ছাড়তে চায় না।
“কিন্তু ভাই তোকে ভালোবাসে না
তুলি জিসানের হাত ছেড়ে দেয়। চোখের পানি মুছে
” কি বলতে এসেছিলি
“তুই তো কিছু খাস নি
” পরে খেয়ে নেবো
“তুলি
” সান্ত্বনা দিতে হবে না। আমি এমনিতেই স্টং
“সান্ত্বনা দেবো না। শুধু এটাই বলবো নিজের অধিকার ছাড়বি না
জিসান চলে যায়। তুলি চোখ বন্ধ করে ভাবছে
” আমি আমার অধিকার ছাড়বো না। কিন্তু জোর করে কি কারো মন জয় করা যায়? সায়ানের মনের কোথাও তো আমি নেই তাহলে কি করে অধিকার ধরে রাখবো?
এসব ভাবতে ভাবতে তুলি ঘুমিয়ে পরে। রাত দুটোই দরজা খোলার শব্দে তুলির ঘুম ভাঙে।
সায়ানের দিকে তাকিয়ে তুলি চমকে ওঠে। চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। চুল গুলো এলোমেলো। শার্ট ময়লা হয়ে গেছে। মুখটা শুকিয়ে গেছে।
“কোথায় ছিলেন আপনি?
সায়ান এক নজর তুলির দিকে তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। কিছুখন পরে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হয়।
” আমি জিজ্ঞেস করছি আপনি কোথায় ছিলেন?
তুলি একটু জোরে বলে
সায়ান তুলির সামনে এসে ডিভোর্স পেপার এগিয়ে দেয়
“আমি সাইন করে দিয়েছি আপনি সাইন করে কাল সকালেই বিদেয় হবেন প্লিজ
” আপনি এভাবে বলছেন কেনো?
তুলির চোখ দিয়ে আপনাআপনি পানি পড়তে।
সায়ান তুলিকে পেছন ঘুরে দাঁড়ায়।
“মুক্তি দিলাম আপনাকে
” আমি মুক্তি চায় না
তুলি চিৎকার করে বলে
“আমি চায়। আমি থাকতে চায় না আপনার সাথে। দম বন্ধ হয়ে আসে। যবে থেকে আমার লাইফে এসেছেন তবে থেকে বিরক্ত করে যাচ্ছেন। এবার একটু শান্তি দিন প্লিজ।
তুলির দিকে তাকিয়ে হাত জোর করে বলে
দয়া করে আপনার মুখটা যেনো আমাকে আর দেখতে না হয়।
সায়ান বেলকনিতে চলে যায়। তুলি হাউমাউ করে কাঁদছে। পায়ে অতিরিক্ত ব্যাথা নিয়েও দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। জিসান বলে চিৎকার করে। সায়ান আর জিসান দুজনই ছুটে আসে। সায়ান ধরার আগেই জিসান তুলিকে ধরে ফেলে। তুলির কাটা জায়গা থেকে রক্ত পড়ছে
” তুলি কি হয়েছে?
“জিসান আমি বাড়ি যাবো
তুলি কেঁদে বলে
” এতো রাতে
“হেল্প না করলে আমি একাই যাবো
” আমি নিয়ে যাচ্ছি
জিসান তুলিকে কোলে করে নিয়ে যায়।
বাড়ি গিয়ে কলিং বেল বাজায় জিসান। তুলিকে কোলে করে৷ তুলির মা দরজা খুলে দেয়। ওদের দেখে অবাক হয়
“তোরা এতো রাতে
জিসান কিছু না বলে তুলিকে তুলির রুমে নিয়ে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে চলে যায়। তুলির বাবা মা তুলির পাশে বসে আছে। তুলি চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে
” মামনি কি হয়েছে?
“ঘুমাবো
” কিন্তু
“বলছি না ঘুমাবো বিরক্ত করছো কেনো?
তুলি চিৎকার করে বলে। তুলির বাবা মা চলে যায়।
জিসান নিজের রুমে ঢুকে দেখে সায়ান বসে আছে
” ব্রো তুই এখানে?
“তুলিকে ভালোবাসিস?
” হুম। তুলি আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড বোনও বলতে পারিস। পাঁচ বছর নিনি ওকে।
“বিয়ে করে নিলেই তো পারিস
” এক মিনিট তুমি কি তুলি আর আমাকে নিয়ে জেলাস
“মাই ফুট
জিসান সায়ানের পাশে বসে
“আমি খুব খুশি যে তোর মতো একটা খুনির হাত থেকে তুলি বেঁচে গেছে। তুই তুলির মতো ভালো কাউকে ডিজার্ভ করিস না। আমি যদি কখনো তুলিকে ভালোবাসতাম তাহলে নিজেকে ধন্য মনে করতাম। এবার তুই যেতে পারিস
সায়ান জিসানের দিকে তাকিয়ে আছে।
” যেতে বলছি
সায়ান বের হয়। জিসান দরজা বন্ধ করে দেয়।
প্রচন্ড জ্বর হয়েছে তুলির। হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে তুলিকে। তুলি কঠোর করে বলে দিয়েছে শশুড় বাড়ির কাউকে না জানাতে। জানালে তুলি চলে যাবে অনেক দুরে।
সকালে খাবার টেবিলে সবাই খাচ্ছে। সায়ানের মা বলে
“বেয়াদব মেয়েটার এখনো ওঠার নাম নেই। বাবা মা শেখায় নাই
জিসান খাওয়া ছেড়ে উঠে
” তুলি চলে গেছে। আমি আর তুলির নাম তোমার মুখে শুনতে চায় না
জিসান হনহন করে চলে যায়। সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। তুলি কোথায় গেছে? কখন গেছে।
“তুলি চলে গেছে?
সায়ানও না খেয়ে চলে যায়।
অফিসে বসে আছে সায়ান। ভীষণ রাগ হচ্ছে নিজের ওপর। কেনো রাগ হচ্ছে জানে না সায়ান। রাগে মাথার চুল টানছে তুলি।
” মে আই কাম ইন
“তুলি আপনি কেনো এসেছেন? আপনাকে না চলে যেতে বলছি
” স্যার আমি মায়া
সায়ান দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে মায়া।
“বলুন কি চায়?
মায়া ভেতরে ঢুকে
” স্যার তুলি কেমন আছে
“জানি না
” ওহহ। একটা কথা বলি
“হুমম
” আপনি তুলিকে
সায়ান গর্জে ওঠে
“তুলি তুলি তুলি। এই নামটাকে ভুলতে চায়। আই হেট তুলি
মায়া ভয়ে কেঁপে ওঠে।
” সরি স্যার
মায়া তাড়াহুড়ো করে চলে যায়।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে তুলি।
“মায়া নিশ্চয় সায়ানকে বলেছে আমি অসুস্থ। সায়ান কি আসবে একবার আমাকে দেখতে। ভালো না বাসলো মানবতার খাতিরে তো দেখতে আসতে পারে। আসবে তো সায়ান?
জিসান আসে। তুলির পাশে মোরা টেনে বসে
” কেমন আছে আমার জানুটা
“ভালো।
” পায়ের ব্যাথা কমেছে
“মোটামুটি
” খেয়েছিস
“হুম মা খাইয়ে দিয়েছে। তুই
” নারে
“ওখানে খাবার আছে খেয়ে নে
” লাভ ইউ বেবি
“ইয়াম্মি ইয়াম্মি খাবার দিলে নেইমার ও লাভ ইউ বলবো
” তাই না কি? নেইমার তোরে লাভ ইউ কইবো
“কথার কথা
” তাই বল। আমি তো প্রায় হার্টএ্যাটাক করছিলাম
তুলির মন ভালো নেই তাই আর কিছু বলে না।
চলবে