শিউলি পাওয়া পর্ব-০৩

0
5

#শিউলি_পাওয়া <তৃতীয় পর্ব>
#ঈপ্সিতা_মিত্র
<৫>
অনিন্দর মনের অবস্থার কথা দীপ বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছিলো | সেইদিন সন্ধ্যেবেলা ওর ওই থমকে যাওয়া মুখ দেখে দীপেরও খারাপ লাগছিলো | হ্যাঁ , মানছে যে ওর বন্ধু একটা সময় ভুল করেছে | কিন্তু ওই ভূমি মেয়েটা কি শুধু ভুলটাই দেখলো ? ভুলের পরে অনিন্দ যে কতভাবে সেটাকে ঠিক করার চেষ্টা করেছে , এলোমেলো সম্পর্কটাকে নতুন করে সাজানোর চেষ্টা করেছে , দিনের পর দিন একটা ফোন কলের অপেক্ষা করেছে , ভূমির অপেক্ষা করেছে , সেইসব কিছুই ওর নজরে এলো না ! আর একটা ভুল দিয়ে একজন মানুষকে বিচার করা কি ঠিক ! এইসব ভাবনাগুলো বার বার এসে ভিড় করছিলো ওর মনে | এর মধ্যে অনিন্দর বাবা দীপকে জোর করে সন্ধ্যেবেলা পাড়ার ফাংশনের রিহার্সালে নিয়ে গেলো | আর রিহার্সালে পৌঁছেই এনাউন্সও করে দিলো যে দীপ এইবার পুজোর ফাংশনে গান গাইবে | যাই হোক , সেইদিন রিহার্সালে এসে ওর বেশ ভালোই লাগছিলো | পাড়ার পুজোর একটা আলাদা ফ্লেভার আছে ! একদিকে পাড়ার কাকুদের নাটকের ডায়লগ প্র্যাকটিস , আর একদিকে সব কাকিমা জেঠিমাদের শ্যামা সংগীত প্র্যাকটিস , আর এদের মাঝখানে পাড়ার সব কচিকাচাগুলোর মম চিত্তে নীতি নৃত্যেতে নাচ , মানে যাকে বলে একেবারে জমজমাট ব্যাপার | এইসব দেখে দীপের মুখে একটা হাসি আপনাআপনিই চলে এলো , তবে সেই হাসিটা যদিও বিশেষ দীর্ঘ্যস্থায়ী হলো না ! কারণ ওই পাড়ার কাকিমা জেঠিমাদের ভিড়ের মাঝখান থেকে হঠাৎ একটা চেনা গলার আওয়াজ কানে এলো ! সেই সকালের লাল সালোয়ার , কথা | সে বেশ হাসি হাসি মুখেই পাড়ার সবাইকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো , ” দীপ শুধু ভালো গানই গান না , উনি দারুণ ফটোগ্রাফারও | প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখলে ফটো না তুলে থাকতেই পারেন না ! তা উনি যদি আমাদের পাড়ার ফাংশনের ফটোগ্রাফার এর দ্বায়িত্বটাও নেন , কেমন হয় ?” …………. কথাটা শুনে দীপের মুখটা রাগে লাল | খুব ভালো করে বুঝলো যে মেয়েটা ওকে বিধিয়ে বিধিয়ে কথাগুলো বলেছে | কিন্তু এর কোনো প্রত্যুত্তর দিলো না ও | কারণ এখন ওর এই মেয়েটাকেই দরকার | আসলে এই পাড়ার ফাংশনের রিহার্সালে আসার আর একটা কারণ হলো এই মেয়েটাই | ও জানতো এখানে এলে এই মেয়েটার সাথে দেখা হবেই হবে | অনিন্দ সকালে বলেছিলো না যে এই মেয়েটাই ভূমির বোন | তো এই বোনকে কাজে লাগিয়েই অনিন্দর ভাঙাচোড়া লাভস্টোরিটা কে জোড়া লাগাতে হবে ! এইসব ভেবেই সেইদিন কিছুক্ষণ পর ও নিজে যেচে পরেই কথার সামনে গেলো | তবে কথার যেন ওকে দেখলেই কথা শোনাতে ইচ্ছে করে , তাই দীপ সামনে আসতেই ও আস্তে আস্তে বলে উঠলো , ” দেখুন , আপনার নাম পাড়ার ফটোগ্রাফার হিসেবে রেকমেন্ড করেছি আমি | আমার নাম ডোবাবেন না কিন্তু | ভালো ফটো তুলতে হবে , ঠিক আছে |” ……..
না , ব্যাস , অনেক হয়েছে | এর বেশি সহ্য শক্তি নেই দীপের | এইসব শোনার পর একটা প্রত্যুত্তর না দিলে ওর আজ রাতে শান্তিতে ঘুম হবে না ! তাই একটু হেসে বললো , ” আসলে সব কিছু তো আর ফোটোগ্রাফারের হাতে থাকে না | মানে যার ফটো তোলা হচ্ছে তার ওপরও ডিপেন্ড করে ব্যাপারটা | মানে ধরো একটা কাককে আমি যত রকম এঙ্গেল থেকে যত রকম এফেক্ট ইউজ করেই ফটো তুলি , সেই ফটো তে তো আর তাকে ময়ূর লাগবে না ! ”
কথাটা শুনে কথার মুখ রাগে লাল | কি হলো ব্যাপারটা ! এই ছেলেটা ইন্ডিরেক্টলি ওকে কাক বললো ! ইশ , কি অপমান | তবে হাজার চেষ্টা করেও এর কোনো উত্তর দিতে পারলো না কথা | আর সত্যি বলতে কি এর বেশি কথা বাড়িয়েও কাজ নেই | এই ছেলেকে ওর নিজের দরকার | দিদি বেকার বেকার অনিন্দদার ওপর রাগ দেখাচ্ছে ! এতদিন হয়ে গেছে ঘটনাটার , কিন্তু দিদি নিজেও তো আজ অব্দি অনিন্দদাকে ভুলতে পারেনি ! তাই তো কতগুলো বছর চাকরির নাম করে শান্তিনিকেতনে কাটিয়ে এলো | আসলে তো ও এই জায়গাটা থেকে , এই স্মৃতিগুলো থেকে পালাতেই চেয়েছিলো | আর এইবার পুজোয় যখন অনিন্দদা দিদিকে মানাতে চায় , ফিরে পেতে চায় , তখন কথারও ওকে হেল্প করা দরকার | তবে এইসব কিছুর জন্য একটা মাধ্যম চাই | এইসব কাজ একা একা হয় না | তাই এই বোম্বে থেকে আসা সিঙ্গার কাম ফোটোগ্রাফেরকেই ওর এখন খুব দরকার | কিছুক্ষণ সময় ধরে এইসব ভেবেই ও দীপকে বললো ,
” আপনার সাথে আমার কিছু দরকারি কথা আছে | একটু সামনের গঙ্গার ধারে চলুন | এখানে অনেক ভিড় | বলা যাবে না |”
দীপ এটা শুনে অবাক ! এ তো মেঘ না চাইতেই জল | এই মেয়েটার সাথে আলাদা কথা বলাটা তো এখন ওরও দরকার |
যাই হোক , এইসব কথার কিছুক্ষনের মধ্যেই দুজনে রিহার্সালের ভিড় পেরিয়ে গঙ্গার ধারের নির্জনতায় হাজির | এরপর কথা-ই কথা বলা শুরু করলো |
” দেখুন , আমি এখানে খুব গুরুত্বপূর্ন একটা কথা বলার জন্য আপনাকে ডেকে এনেছি | আপনার হেল্প চাই আমার | করবেন ?”
দীপ ব্যাপারটা বুঝতে পারলো না | এই ডায়লগ তো দীপ রেডি করে এসেছিলো ! কথা কি করে বলে ফেললো ! যাই হোক , একটু চিন্তান্বিত মুখ করেই জিজ্ঞেস করলো , ” কি হেল্প ? অনিন্দ আর ভূমির ঝামেলা সল্ভ করার ব্যাপারে কি ?”
কথাটা শুনে কথার মুখে চওড়া হাসি | যাক , ছেলের মাথায় বুদ্ধি আছে | বুঝেছে তাহলে ! ——– ” হ্যাঁ , রাইট | ঠিক ধরেছেন | অনিন্দদা আর দিদিকে মেলাতে হবে | যেভাবেই হোক | আসলে আমার মাথায় একটা প্ল্যান আছে | কিন্তু একা একা সেই প্ল্যানটা এক্সিকিউট করা সম্ভব না | তাই তোমার হেল্প চাই | ওহ , সরি , আপনাকে তুমি বলে ফেললাম |” …. কথাটা বলেই কথা জীব কামড়ালো |
অনিন্দ ব্যাপারটা দেখেই বলে উঠলো , ” না না , ইট’স ওকে | আমাকে তুমি বলাই যায় | আমি কোনো সিনিয়র সিটিজেন নোই | আর আমিও তোমার সাথে এই ব্যাপারেই কথা বলতে চাইছিলাম | অনিন্দ সিরিয়াসলি নিজের ভুলটা বুঝেছে | ও ভূমিকে খুব ভালোবাসে | তাই তোমার একটু নিজের দিদিকে বোঝানো দরকার , যাতে অনিন্দকে আবার একসেপ্ট করে নেয় |”
কথাটা শুনে কথা বেশ বিরোক্তভাবেই বললো , ” তুমি কি ভেবেছো ? আমি বোঝায়নি ! আর শুধু অনিন্দদাই না , আমার দিদিও তো খুব ভালোবাসে ওকে | শুধু প্রব্লেম হচ্ছে সেটা মানতে চায় না | আসলে সেইবার দিদির কোথাও একটা সেলফ রেসপেক্ট এ লেগেছিলো | অনিন্দদা ঐভাবে মুখের ওপর ফোনে ব্রেক আপ করে দিলো ! দিদি সেটা একসেপ্ট করতে পারেনি | কিন্তু এইভাবে তো সব শেষ হয়ে যেতে পারে না | তাই সোজা আঙুলে ঘি না বেরোলে তো আঙ্গুলটাকে বেঁকাতেই হবে | যাই হোক, তুমি হেল্প করবে কি না বলো ? আর বোঝাতে পারছি না আমি |”
” আচ্ছা আচ্ছা, ঠিক আছে | করবো হেল্প | কিন্তু প্ল্যানটা কি ?”
দীপের প্রশ্নটা শুনে কথা একটু হেসে বললো, ” তুমি ব্যান্ডেল চার্চ দেখেছো ?”
” কিইই ? ব্যান্ডেল চার্চ ! ” ,. দীপ যেন এবার আকাশ থেকে পড়লো !
” উফ , দেখেছো কি না বলো ? এক কথায় উত্তর প্লিজ |” …
” না , দেখিনি | কেন ? ব্যান্ডেল চার্চ এর সঙ্গে অনিন্দ আর ভূমির কি সম্পর্ক ?”
এটা শুনে কথা বেশ কনফিডেন্সের সঙ্গে একটু হেসে বললো , ” সেটা কাল বুঝবে | তুমি কাল সকাল দশটায় ব্যান্ডেল চার্চ দেখতে অনিন্দদাকে নিয়ে পৌঁছে যেও | ব্যাস তাহলেই হবে | বাকিটা আমার ওপর ছেড়ে দাও |”
দীপ এইসব শুনে একটা জিনিসই ভাবলো , মেয়েটা কি পাগল ! এই কথাটা ও যখন কথাকে প্রথমবার দেখেছিলো , তখনই মনে হয়েছে | তবে পাগলদের সাথে বেশি তর্ক করে লাভ নেই | তাই দীপও আর কথা বাড়ালো না | আর মেয়েটা যা বলছে সেটা একবার করেই দেখা যাক | কি হয় কাল ব্যান্ডেল চার্চে নয় গিয়েই বুঝতে পারবে !
<৬>
আগেরদিনের কথা মতন দীপ অনিন্দকে সঙ্গে নিয়ে ঠিক সকাল দশটার সময় পৌঁছে গেলো ব্যান্ডেল চার্চে | কিন্তু এ কি ! গেটের সামনে তো কেউ নেই ! কি হলো ব্যাপারটা ? কথা নিজেই তো কাল কি সব প্ল্যানের কথা বললো | আর তারপর কি নিজেই বেপাত্তা হয়ে গেলো ! কিছুই বুঝতে পারছিলো না দীপ | ওর এইসব ভাবনার ভিড়েই অনিন্দ বলে উঠলো , ” কি রে ? ভেতরে চল | গেটের সামনে এইভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন ? সকাল থেকে তো আমার মাথা খারাপ করে দিলি , ব্যান্ডেল চার্চ দেখবো বলে | এখন দাঁড়িয়ে আছিস কেন ?”
এর উত্তরে কি বলবে দীপ ! যে পুরোটাই প্ল্যান ছিল রে | না , অতো সত্যি বলা যাবে না , তাই একটু মিথ্যে সাজিয়েই বললো ,
” উফ | এমনি | মানে বাইরে থেকে চার্চটা কে দেখছি | খুবই সুন্দর !”
কথাটা শুনে অনিন্দ একটু ভদ্রতার হাসি হেসে বললো , ” বাহ্ , খুব ভালো কথা | চল আর একটু | তাহলে ভেতর থেকেও দেখতে পাবি |”
এই সময়েই হঠাৎ চার্চের গেটের সামনে একটা অটো এসে থামলো | আর সেই অটো থেকে নামা যাত্রীদের দেখে দীপের মুখে একটা চওড়া হাসি | কিন্তু অনিন্দর মুখটা একদম থমকে গেলো ! ভূমি দাঁড়িয়ে ওর সামনে , সঙ্গে ওর বোন কথা | ওরা এখানে কি করে এলো ! তাহলে কি আজকেও দেখা হওয়ার ছিল ওদের | এইসব এলোমেলো ভাবনার মাঝেই কথা অনিন্দ আর দীপের দিকে হাসি মুখে এগিয়ে এলো , ” আরে ! তোমরা ! এখানে ? ” … ওর ভাবটা এমন যেন কিছুই জানতো না | দীপের ব্যাপারটা দেখে এক সেকেন্ডের জন্য হাসি চলে এসেছিলো ! বাবা, কি এক্টিং জানে মেয়েটা | যাই হোক , ও আর সময় নষ্ট না করে নিজের ভেতর থেকে শাহরুখ খানটাকে বার করে দ্বিগুন এক্টিং দেখিয়ে বললো , ” আরে কথা ! তুমি | হোয়াট এ সারপ্রাইজ .. ” …
এই পুরো দৃশ্যটা দেখে ভূমির মুখটা যদিও ভীষণ কঠিন হয়ে গেছে এখন | এই ভাবে এখানে অনিন্দর সাথে দেখা হবে জানলে কখনোই আসতো না ! ও বেশ বিরক্তির সাথেই তাই কথার কানের কাছে এসে বললো , ” এইসব হচ্ছে টা কি কথা ? তুই কি এইসব দৃশ্য দেখানোর জন্য আমাকে সকাল সকাল জোড় করে চার্চে নিয়ে এলি ? আর ওই ছেলেটা আবার কে ? ওর সাথে তোর অত হেসে হেসে কথা কিসের !”
কথা এইসব প্রশ্নগুলোর জন্যই তৈরী ছিল | তাই রেডি করা উত্তর গুলো মুখস্ত বলে ফেললো , ” উফ , দিদি , আমি কি করে জানবো যে অনিন্দদা ওর বন্ধু দীপ কে নিয়ে আজকে এই সময়েই চার্চে আসবে ! আমি কি জ্যোতিষী না কি | আর ওই ছেলেটা মানে দীপ , ওর সাথে আমার কালকে রাত্রেই আলাপ হয়েছে | আমাদের পাড়ার ফাংশনের রিহার্সালে | দীপও ডাক্তার , অনিন্দদার সাথে একই হসপিটালে প্র্যাকটিস করে | আর ছেলেটার সাথে প্রথম আলাপেই আমার এতো ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছি , যে তোকে কি বলবো ! এবার চার্চে যখন হঠাৎ এইভাবে দেখা হয়েই গেলো আমাদের , তখন আলাদা আলাদা ঘুরলে কি ভালো দেখাবে বল ? দীপ কি ভাববে !”
এইসব যুক্তি শুনে ভূমির চোখ কপালে , ” মানে টা কি ? এখন কি আমি ওই অনিন্দর সাথে চার্চে যাবো ? তুই ভাবলি কি করে ?”
এই প্রশ্নের উত্তরটাও কথা বেশ হাসি মুখে দিলো , ” দিদি অনিন্দদাকে তো তুই একদম ভুলে গেছিস | ও তো তোর কাছে রাস্তার আর পাঁচটা লোকের মতনই | তাহলে ও থাকলো কি গেলো , তাতে তোর তো কোনো এফেক্ট হওয়ার কথা নয় | আর চার্চে তো রোজ কত লোকই আসে বল | ধরে নে অনিন্দদাও তাদের মধ্যেই একজন | যাই হোক, চল এবার |” … কথাটা শেষ করেই কথা ভূমির হাতটা ধরে টেনে চার্চের ভেতরে এগিয়ে গেলো | আর এতে ভূমির না বলার মতনও কিছু ছিল না | সত্যিই তো তাই | অনিন্দ তো ওর কাছে রাস্তার আর পাঁচটা অজানা অচেনা লোকের মতনই | ওর থাকা না থাকতে ভূমির কিছুই যায় আসে না | তবে এই পুরো ব্যাপারটায় অনিন্দর খুব যায় এসেছিলো , কারণ ভূমিকে যে এইভাবে হঠাৎ সামনে দেখতে পাবে , ও একদম এক্সপেক্ট করেনি | তবে আজও কিছু বলার ছিল না ওর | ভূমিকে সামনে দেখলে এখন এমনিই সব কিছু উল্টো পাল্টা হয়ে যায় , কথা হারিয়ে যায়|
এইসব ভাবতে ভাবতেই ওরা চার্চের প্রেয়ার হলে কখন গিয়ে পৌঁছেছে অনিন্দ খেয়ালই করেনি !
প্রেয়ার হলে ঢুকেই সামনে মাদার মেরির মূর্তি | তাঁর চারিদিকে জ্বালানো অনেক মোমবাতির আলো | বড়ো প্রেয়ার রুমের নিঃস্তব্ধতা , আর সেই মোমবাতির আলোয় অনিন্দর আজ একটা কথাই মনে হচ্ছিলো , জীবনে কি একটা দ্বিতীয় সুযোগ পাওয়া যায় না ! একবার কি পুরোনো হারিয়ে যাওয়া সময়টাকে ফিরে পাওয়া যায় না ! যেই সময়টা আজ শেষ | এইসব ভাবনার মাঝেই ও চোখটা বন্ধ করলো মাদার মেরির সামনে | একটা উইশের জন্য | যেই উইশটার নাম , ‘ভূমি’ |
চোখ খুললো ভূমির গলার আওয়াজে , ” কি হলো ব্যাপারটা ! কথা আর দীপ কোথায় গেলো ? আমাদের সঙ্গেই তো প্রেয়ার রুম অব্দি এলো | এই মাত্র তো এখানেই দাঁড়িয়ে ছিল | দু মিনিট প্রার্থনা করার জন্য চোখ বন্ধ করলাম, আর তার মধ্যেই বেপাত্তা !” ,…..
ভূমির কথাগুলো শুনে অনিন্দর ঘোরটা কাটলো। প্রেয়ার রুমের আসে পাশে চোখ ঘুরিয়ে দেখলো , সত্যিই তো ! কথা আর দীপ দুজনেই নেই | কোথায় গেলো আবার ওরা ! প্রেয়ার হলের সামনের বাগানটায় নেই তো ? ভেবেই ভূমি আর অনিন্দ সামনের বাগানটায় গেলো | কিন্তু না | এখানেও কিছু অচেনা লোকের ভিড় | ওই চেনা মুখ দুটোকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না | কি অদ্ভুত | দু মিনিটে এইভাবে ভ্যানিশ কি করে হয়ে গেলো ওরা , এটা ভেবেই ভূমির অবাক লাগছিলো | আচ্ছা , এটা প্রিপ্ল্যান্ড না তো ! কথাটা ভেবেই ভূমি অনিন্দর দিকে এক পলক তাকালো | কিন্তু চোখটা ফেরাতে পারলো না | এ কি ! ও ওই ভাবে দেয়ালটা ধরে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়লো কেন ? দেখে মনে হচ্ছে যেন টলছে | আচ্ছা , অনিন্দর তো লো প্রেশারের প্রবলেম ছিল একটা সময়ে | তাহলে কি ওর শরীর খারাপ লাগছে ! এইসব ভেবেই ভূমি অনিন্দর দিকে এগিয়ে গেলো | না , আর চুপ করে থাকা যায় না এই সময়ে | তাই জিজ্ঞেস করেই ফেললো ,
” কি হয়েছে ? তোমার শরীর ঠিক আছে তো ?”
” না মানে , ওই লো প্রেশারের প্রব্লেমটার জন্য | আর সকালে কিছু ব্রেক ফাস্টও করিনি | তাই একটু উইক লাগছিলো | ইট’স ওকে , আই এম ফাইন ..”
ভূমি কথাটা শুনে বড়ো বড়ো চোখ করে বললো , ” এই তুমি ডাক্তার ! চলো | সামনে একটা রেস্টুরেন্ট আছে , সেখানে কিছু খেয়ে নেবে | আর এখানে দাঁড়িয়ে কাউকে খুঁজে লাভ নেই | ওরা ইচ্ছে করেই বেপাত্তা হয়েছে | ”
” ইচ্ছে করে ? কিন্তু কেন ?”
অনিন্দর এই প্রশ্নের উত্তরে ভূমি এক কথায়ই দিলো , ” সেই ব্যাখ্যা ওদের কাছ থেকেই চেয়ে নিও | এখন চলো |” … কথাটার মধ্যে কেমন যেন একটা অর্ডার ছিল | তাই অনিন্দও আর সাহস করে কথা বাড়ালো না | চুপচাপ ভূমির সঙ্গে এগিয়ে গেলো |

<চলবে>

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে