লুকানো অনুভূতি পর্ব-০৭

0
805

#লুকানো_অনুভূতি
#পর্বঃ৭
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর

নিচে যেয়ে দেখি সবাই উপস্থিত সেখানে। আমি যেয়ে রিহুর পাশে চুপচাপ দাড়ালাম। শুনতে লাগলাম তাদের কথা।

ছেলে মেয়ে দুজনেই রাজি এই জন্য ফাহিম ভাইয়ার আম্মু আপুকে আংটি পরিয়ে দিলো।

ফাহিম ভাইয়ার বাবা বলে উঠলো বেয়াইসাব মেয়ে আমাদের অনেক পছন্দ হয়েছে। আমরা চাচ্ছি মেয়েকে তারা তারি আমাদের ঘরের বউ করতে।

বড়ো আব্বু বললো, বিয়ের অনেক আয়োজন সব গুছগাছ করতে তো সময় লাগবে।

পরে সবার আলোচনায় বিয়ের ডেট ফিক্সড করা হলো এক মাস পরে। খুশিতে সবাই আন্তহারা, সবাই মিষ্টি মুখ করলো। পরে আরো কিছুখন গল্প করে করে ফাহিম ভাইরা চলে গেলো।

তারা যেতেই লাফিয়ে উঠলাম খুশিতে, অবশেষে একটা বিয়ে খাবো।

আমার কান্ড দেখে সবাই হেসে ফেললো।

বড়ো আম্মু বললো মেয়েটা আমার এখনো বাচ্চা রয়ে গেলো।

আমরা ছোটরা উপরে উঠে গেলাম। বড়োরা বিয়ের ব্যাপারে আলোচনা করা শুরু করলো। বাড়ির বড়ো মেয়ের বিয়ে বলে কথা। কতো আয়োজন, কত কি বাকি।

———————–

দেখতে দেখতে ১৫ দিন চলে গেলো। আপুর বিয়ের বাকি আর মাএ কয়টা দিন। আজকে আমরা সবাই শপিং করতে যাবো বিয়ের।

রোয়েন ভাই রিহুকে নিয়ে আসলো আমাদের বাসায়। এখান থেকে সবাই এক সাথে যাবো।

আমরা সবাই রেডি হয়ে নিচে নেমে আসলাম। বড়োরা এক গারিতে গেলো আর আমরা ছোটরা এক গারিতে উঠলাম।

রোয়েন ভাই ড্রাইভ করছে তার পাশে বসা ইয়াদ ভাইয়া। আমি রুহু আর ইমা আপু পিছনে বসেছি।

সবাই গল্প করছিলাম তখন চোখ গেলো সামনের ছোট আয়নায়। রোয়েন ভাই ও তখন আয়নার দিকে তাকালো। চোখা চোখি হলো দুজনের। আমি চোখ নামিয়ে নিলাম সাথে সাথে।

এর ভিতোরেই আমরা শপিং মলে পৌঁছে গেলাম। গিয়ে দেখলাম ফাহিম ভাইয়াও এসেছে।

সবাই এক সাথে শপিংমলে ডুকলাম।

যেয়ে আপুর জন্য কেনাকাটা শুরু করলাম। আমাদের টাও কিন্তে থাকলাম।

আমি আর রিহু হলুদের অনুষ্ঠানের জন্য এক রকম হলুদ আর লাল মিক্সড করা লেহেঙ্গা কিনলাম। মেহেদি অনুষ্ঠানের জন্য আমি মেরুন কালার আর রিহু ব্লু কালার শারি নিলাম। সমস্যা হয়ে গেছে বিয়ের দিনের জন্য লেহেঙ্গা চয়েস করতে পারছিলাম না। রিহু পিঙ্ক আর গোল্ডেন মিক্স করা সুন্দর একটা লেহেঙ্গা নিলো কিন্তু আমার একটাও পছন্দ হচ্ছে না। তাই মন খারাপ করে বসে রইলাম।

তখন রিহুকে রোয়েন ভাই ডাক দিলো, ও চলে গেলো। একটু পরে হাতে একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে ফিরে আসলো। এসে আমার হাতে ব্যাগটা বাড়িয়ে দিলো।

নে ধর।

ধরবো মানে? কি আছে এতে?

বিয়ের দিনে তোর পারার ড্রেস। এই বলে ব্যাগটা আমার হাতে ধরিয়ে দিলো।

তুই এতো তারা তারি আমার জন্য ড্রেস কিনে নিয়ে আসলি? আমি চোখ বড়ো বড়ো করে বললাম।

আমি কখন বললাম আমি কিনে এনেছি?

তাহলে কে কিনেছে?

রোয়েন ভাইয়া। মুখ টিপে হেসে বললো রিহু।

রোয়েন ভাই আমার জন্য ড্রেস কিনে দিলো ভাবতেই অদ্ভুত এক শিহরণ বয়ে গেলো।

কি ভালোবাসা, আজ এমন করে কেউ ভালোবাসলো না। আফছোসের শুরে বললো রিহু।

কি বললি, ইয়াদ ভাইয়া কি তোকে এর থেকে কম ভালোবাসে নাকি।

তার মানে তুই সিকার করলি রোয়েন ভাই তোকে ভালোবাসে।

আমি কখন বললাম এই কথা?

একটু আগেই বললি ইয়াদ ভাইয়া রোয়েন ভাইার থেকে কম ভালোবাসে নাকি।

রিহুর কথার জালে ফেঁসে গিয়ে চুপ করে রইলাম।

কিরে এখন কথা বলছিস না কেনো?

কি বলবো, এটা তোদের ভুল ধারনা। সে আমাকে ভালোবাসলে এখনো ভালোবাসি বললো না কেনো?

আরে পাগলি সব সময় মুখে সব বলা লাগে না, কিছু সময় নিজের বুঝে নিতে হয়।

রিহুর কথা শুনে ভাবনায় পরে গেলাম, আসলেই কি রোয়েন ভাই আমাকে ভালোবাসে? মাঝে মাঝে মনে হয় বাসে, আবার মনে হয় বাসে না। কি একটা দোটানায় পরে গেলাম।

সবার ড্রেসি কেনা হয়ে যাওয়ার পর গেলাম আপুর জন্য জুয়েলারি কিন্তে। জুয়েলারি কেনা হয়ে গেলে যার যা প্রয়োজন তা কিনে নিলাম, তারপর চলে গেলাম আমরা রেষ্টুরেন্টে। এখান থেকে ডিনার করে তারপর সবাই এক সাথে বাসায় যাবো।

রেষ্টুরেন্টে যেয়ে বড়োরা এক টেবিলে বসলো আর আমি, রিহু, ইমা আপু, ইয়াদ ভাইয়া, রোয়েন ভাইয়া, ফাহিম ভাইয়া এই কয়জনে আমরা এক সাথে বসলাম।

যে যার মতো খাবার অর্ডার দিয়ে খেতে লাগলাম। খাওয়ার শেষে সবাই এক সাথে বেরিয়ে আসলাম।

বাসায় যাওয়ার সময় ইমা আপু আর ফাহিম ভাইয়া এক সাথে চলে গেলো। ইমা আপুকে নামিয়ে দিয়ে ফাহিম ভাইয়া চলে যাবে।

বড়োরা এক গাড়িতে চলে গেলো।

এখন আমাদের গাড়িতে উঠতে যাবো তখন দেখি ইয়াদ ভাইয়া ড্রাইভিং সিটে বসে আছে আর তার পাশে রিহু বসা। পিছে রোয়েন ভাই বসা, আমারও পিছে বসা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই তাই পিছে যেয়ে তার পাশে বসে পরলাম।

আমি বসতেই ইয়াদ ভাইয়া গাড়ি স্টার্ট করলো। হালকা ভলিউমে গান চলছে গাড়িতে।

তখন পাশে তাকাতে দেখি রোয়েন ভাই কপালে হাত রেখে চুপচাপ বসে আছে। হয়তো মাথা ব্যথা করছে। মনে মনে ভাবতে লাগলাম জিজ্ঞেস করবো কিনা মাথা ব্যথা করছে কিনা। অবশেষে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম।

আপনার কি মাথা ব্যথা করছে?

হুম। ছোট্ট করে বললেন তিনি।

আমি আর কি বলবো খুঁজে পেলাম না তাই চুপ করে রইলাম।

একটু পরে অনুভব করলাম ভাইয়া মাথাটা আমার কাধে রাখলো। তারপর আমার হাতটা আলতো করে ধরে তার মাথার কাছে নিয়ে বললো টিপে দেও একটু।

ভাইয়ার কাজে জমে আমি বরফ হয়ে গেলাম। একেতো এতো কাছে আসা, স্পর্শ করা তার উপরে তুমি করে বলা। এই প্রথম তুমি করে ডাকলো। অন্য রকম এক শিহরণ বয়ে গেলো আমার ভিতোরে। নিজেকে সাভাবিক করে তারা তারি সামনে তাকালাম রিহুরা আমাদের দেখছে কিনা। না ওদের এই দিকে খেয়াল নেই। ওরা গল্প করায় ব্যস্ত।

ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে আমি আলতো করে তার মাথা টিপে দিচ্ছিলাম আর সে চোখ বুজে রইলো।

এভাবে অনেক সময় গেলো। হটাৎ ইয়াদ ভাইয়া গাড়ি থামালো। বাহিরে তকিয়ে দেখি এসে পরেছি আমরা। রোয়েন ভাই একটু দূরে সরে বসলেন, তার চোখমুখ দেখে মনে হচ্ছে এখনো ব্যথা কমে নি। আসতে ধিরে নেমে সবাই বাসার ভিতরে ডুকলাম।

সবাই অনেক টায়ার্ড তাই যে যার মতো চলে গেলো ফ্রেশ হতে। উপরে এসে রুমে ডুকতে যাবো তখন রোয়েন ভাই ডেকে উঠলো।

শোন…

আমি পিছন ঘুরে তাকালাম।
জি…

একটু কফি বানিয়ে আনতে পারবি? মাথাটা অনেক ধরেছে।

আপনি রুমে যান, আমি বানিয়ে নিয়ে আসছি। এই বলে হাতের শপিং ব্যাগ গুলো রুমে রেখে কিচেনে চলে গেলাম।

কফি বানিয়ে তার রুমে চলে গেলাম। যেয়ে দেখলাম তিনি ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হয়েছেন।

এই নিন কফি।

কফিটা তিনি নিয়ে এক চুমুক দিয়ে আমাকে বললেন ফ্রেশ হয়েছিস তুই?

না।

যা তাহলে ফ্রেশ হয়ে আয়।

আমি চলে আসতে নিলে সে বললো বাহিরে যেতে বলি নি এই রুম থেকে করতে বলেছি।

আমি চুপচাপ বাদ্ধ মেয়ের মতো ওয়াশরুমে ডুকে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে৷ বেরিয়ে দেখলাম তিনি মাথায় হাত দিয়ে শুয়ে আছেন। তার জন্য খারাপ লাগলো আমার, মাথা ব্যথাটা হয়তো একটু বেশি করছে।

আমি আস্তে করে তার পাশে এগিয়ে গেলাম।

মাথা ব্যথা কি বেশি করছে? ঔষধ এনে দিবো?

তিনি কোনো কথা বললো না। ভাবলাম ঘুমিয়ে গেছে তাই চলে আসতে নিলাম তখন পিছন থেকে হাতে টান পরলো। পিছন তাকিয়ে দেখি সে আমার হাত ধরে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।

আমার হাত ধরে টেনে বেডে বসিয়ে দিয়ে আমার কোলে মথা রেখে বললো টিপে দাও।

আচমকা তার কাজে চমকে গেলাম। এ কোন রোয়েনকে দেখছি আমি। তার এরকম আচরণে আমাকে ভাবিয়ে তুলছে সে কি তাহলে আমাকে সত্যি ভালোবাসে?

তার দিকে তাকাতে দেখি আমার দিকে এক ধেনে তাকিয়ে আছে। বুকের ভিতরে ধক করে উঠলো তার এরকম তাকানোতে। তার চোখ স্পষ্টভাবে বলে দিচ্ছে সে আমাকে কতো ভালোবাসে।

কাঁপা কাঁপা হাতে তার মাথায় হাত রাখলাম। চোখ বুঁজে ফেললো তিনি। আমি আলতো করে মাথা টিপে দিতে থাকলাম। একটু পরে তার ভারি নিঃশ্বাস অনুভব করলাম। বুঝে গেলাম ঘুমিয়ে পরেছে, তাই আস্তে করে তাকে বালিশে শুইয়ে দিয়ে গায়ে কাথা দিয়ে দিলাম।

মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিলাম, কি মনে করে যেনো তার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিলাম। নিজের কাজে নিজেই চমকে গেলাম। তারা তারি উঠে রুম থেকে বেরিয়ে এসে আমার রুমে ডুকে দরজা আটকে দিলাম। কি ভয়ানক কাজটাই না করে বসলাম, কান কোন গরম হয়ে গেলো আমার।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে