লুকানো অনুভূতি পর্ব-০৬

0
560

#লুকানো_অনুভূতি
#পর্বঃ৬
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর

কেটে গেলো অনেক গুলো মাস, পড়ালেখায় বিজি হয়ে গেলাম। ইয়াদ ভাইয়া আর রোয়েন ভাইয়াও পরিক্ষা শেষ হয়েছে। তারা দু’জনেই এখন বিজনেসে জয়েন হয়েছে।

আজকে কলেজে জাই নাই কারণ আজকে ইমা আপুকে দেখতে আসবে ফাহিম ভাইয়ার পরিবার। ইমা আপুর খুশি দেখে কে। অবশেষে প্রিয় মানুষ টাকে সারা জীবনের জন্য পেয়ে যাবে।

রিহুকে সকাল সকাল এসে পরতে বলেছিলাম। ও আসার পর আমাদের দুজনের খুনসুটি শুরু হয়ে গেলো। তখন বড়ো আম্মু এসে বললো যাতো মা তোরা যেয়ে ইমাকে রেডি কর ওই বারির লোক এসে পরবে। আমরা আচ্ছা বলে দুজনে চলে গেলাম ইমা আপুর রুমে।

ইমা আপুর রুমে যেয়ে দেখি আপু এসএমএস করছে আর লজ্জামাখা হাসি দিচ্ছে, হয়তো ফাহিম ভাইয়া লজ্জা দিচ্ছে।

আমরা গলা খাকানি দিতেই আপু লাফ দিয়ে উঠে বসলো, আর লজ্জায় লাল নিল হতে লাগলো।

হয়েছে আর লাল নিল হওয়া লাগবে। ফাহিম ভাইয়ারা এসে পড়লো, চলো তোমাকে রেডি করে দেই।

আপুকে আমি আর তুর মিলে সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে দিলাম। তারপর হালকা করে সাজিয়ে দিলাম।

ওয়াও আপু তোমাকে এতো সুন্দর লাগছে, ভাইয়া আজকে চোখ এই ফিরাতে পারবে না।

হুর তুই কিন্তু মাইর খাবি, আমাকে সেই কখন থেকে লজ্জা দিচ্ছিস ফাজিল। এমনি আমার নার্ভাস লাগছে কোথায় একটু সাহস দিবি তানা করে দুইটায় মজা নিচ্ছিস।

নার্ভাস লাগার কি হলো? ভাইয়ার সাথে তো তোমার আগে থেকেই পরিচয়।

তার সাথে পরিচয় থাকলেও তার পরিবারের সাথে তো নেই। আমার জায়গায় যখন নিজেরা থাকবি তখন বুঝবি কেমন লাগে।

হয়েছে তোমার মতো এতো ভিতু না আমরা, চল রিহু আমাদের রেডি হতে হবে। এই বলে আপুকে রুমে রেখে আমরা আমার রুমে চলে গেলাম।

আমি আর হুর ম্যাচিং করে হোয়াইট কালারের থ্রিপিস পরেছি। দুজনকেই সুন্দর লাগছে। রেডি হয়ে আমরা আবার গেলাম ইমা আপুর রুমে।

আপুর রুমে যেয়ে আমরা গল্প করছিলাম তখন নিচে গাড়ির শব্দ পেলাম, ফাহিম ভাইয়ারা এসে গেছে।

একটু পর আম্মু এসে আপুকে নিয়ে যেতে বললো। আপুকে নিয়ে আমি আর রিহু ড্রইংরুমে গেলাম, সবাই ছোফায় বসে গল্প করছে। বড়ো আব্বুর পাসে নিয়ে আপুকে বসিয়ে দিলাম।

ফাহিম ভাইয়ার আম্মু বললো মা শা আল্লাহ মেয়ে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। একদম পরির মতো দেখতে।

এইদিকে আপু লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছে।

তখনি ইয়াদ ভাইয়া আর রোয়েন ভাই এক সাথে ড্রয়িংরুমের প্রবেশ করলো সাথে ফাহিম ভাইয়া ও ছিলো। হয়তো তারা ফাহিম ভাইকেই আনতে গিয়েছিলো। ফাহিম ভাইয়া এসে সবাইকে সালাম দিলো পরে ইমা আপুর পাশে যেয়ে বসে পরলো।

সবার সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দিলো আব্বুরা।

এইদিকে রোয়েন ভাইকে দেখে আমার বুকের ভিতর ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেলো। এ কেমন অনুভূতি হচ্ছে আমার। আমি কি ভাইয়াকে ভালোবেসে ফেলেছি নাকি? দুর কি ভাবছি আমি, তার মতো খাটাসকে আমি কেনো ভালোবাসতে যাবো। আমার ভাবনার মাঝে ইমা আপু আর ফাহিম ভাইয়াকে আলাদা কথা বলতে ছাদে যেতে বলা হলো। তারা চলে গেলো।

রোয়েন ভাইয়ের সামনে থাকতে কেমন অসস্তি লাগছিলো তাই আমি রিহুর হাত টেনে উপরে নিয়ে গেলাম।

কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস আমাকে?

কোথায় আবার ছাদে চল আপুদের একটু ডিস্টার্ব না করলে হয় নাকি।

তোর মাথায় সারাখন দুষ্ট বুদ্ধি থাকেই এতো বুদ্ধি নিয়ে চলিস কিভাবে তুই বইন।

দেখতে হবে না আমি কে, একটু ভাব নিয়ে বললাম।

ইস আসছে রে। ভালো বুদ্ধি নিয়েতো ঘুরতে পারিস না, আজাইরা বুদ্ধি নিয়ে ঘুরে আবার আসছে ভাব নিতে।

কি বললি তুই, আমি আজাইরা বুদ্ধি নিয়ে ঘুরি।

তা নয়তো কি, মুখ ভেঙচিয়ে বললো রিহু।

ওদের ঝগরার মাঝে ছাদে পৌঁছে গেলো, তোকে পরে দেখে নিবো। আগে এদের একটু জ্বালিয়ে নেই। এই বলে ছাদে প্রবেশ করেই দেখে ফাহিম ভাই আর ইমা আপু একে অপরকে জরিয়ে ধরে আছে। তাদের কন্ড দেখে চোখ আমার কপালে।

গলা খাকানি দিয়ে বল্লাম আরে দুলাভাই বউকে সারা জীবন জরিয়ে ধরে রাখতে পারবেন। আমাদের শালিকাদের তো একটু দেখেন।

আপু তো লজ্জায় মরি মরি অবস্থা। আপুর কাজ দেখে উচ্চ সরে হেসে ফেললাম আমরা। এতে আপু আরো লজ্জা পেয়ে গেলো।

তখন ফাহিম ভাইয়া দুষ্ট হাসি দিয়ে বললো তাহলে কি এখন শালিকেদের ও জরিয়ে ধরা লাগবে নাকি।

ফাহিম ভাইয়া এতো চালাক তার সাথে কথায় পারা যায় না। কিন্তু হেরে গেলে চলবে না তাকে কথার জালে
ফা/শাতে হবেই।

আমরা সেটা কখন বললাম। আমাদের শালিকাদের সাথে আড্ডা না দিয়ে বউয়ের সাথে রোমান্স করছেন এটা কি ঠিক দুলাভাই।

শালিকারা রোমান্স টা করতে দিলে কোথার তার আগেইতো কাবাবের হাড্ডি হয়ে গেলো।

ভাইয়ার কথা শুনে আপু ভাইয়ার পেটে গতো মারলো। কি বলছো এ সব ওদের সামনে।

ভাইয়ার কথা আর আপু কাজ দেখে রিহুর আর আমার পেট ব্যথা হয়ে গিয়েছে হাসতে হাসতে।

এভাবে এক একটা কথা বলে আমরা হাসা হাসি করছিলাম তখন রিহুর ফোনে একটা এসএমএস আসলো, ও একটু আসছি বলে নিচে গেলো। আর কেউ না বুঝলেও আমি বুঝে গেছি ইয়াদ ভাইয়া নিচে ডাকছে তাই চলে গেছে। আমরা তিনজন মিলে আড্ডা দিতে লাগলাম।

রিহু নিচে যেয়ে ড্রইংরুমে উকি মেরে দেখলো ইয়াদ আছে কিনা। না নেই তাই ইয়াদের রুমে চলে গেলো। যেয়ে দেখে ইয়াদ বসে বসে ফোন টিপছে।

কি হলো ডাকলে কেনো, কি সুন্দর আড্ডা দিচ্ছিলাম।

রিহুর কথা শুনে ইয়াদ রিহুর একদম কাছে যেয়ে দারালো।

তুমি সবার সাথে আড্ডা দিতে পারো, আমার দিকে তো তোমার কোনো খয়ালেই নেই।

ইয়াদ এতো কাছে আসায় রিহু কথা বলতে ভুলে গেলো।

ইয়াদ আসতে করে পিছ থেকে রিহুকে জরিয়ে ধরে বললো কি হলো কথা বলছো না কেনো।

ক..কি ক…করছেন কেউ দেখে ফে..ফেলবে।

তোতলাচ্ছ কেনো? কেউ দেখবে না, সবাই গল্প করতে ব্যস্ত। এই দিকে কারো খেয়াল নেই বুঝেছো?

ভাইয়া কোথায়? ভাইয়া দেখলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।

তোমার এতো চিন্তা করা লাগবে না, রোয়েনের ব্যবস্থা করেই তোমাকে ডেকেছি।

ভাইয়ার কি ব্যবস্থা করেছো তুমি?

এতো কিছু তোমার জানা লাগবে না। কবে থেকে তোমাকে কাছে পাইনা এই বলে রিহুকে সামনে ঘুরিয়ে কপালে গভির ভাবে চুমু খেলো। রিহু আবেসে চোখ বন্ধ করে ফেললো।

ইয়াদ রিহুর হাত ধরে বললো চলো বেলকনিতে যাই। এই বলে ওকে নিয়ে বেলকনিতে যেয়ে বসে দুজনে কথা কথা বলতে থাকলো।
—————–
রোয়েন ছাদে উঠে ইমাদের কাছে যেয়ে বললো নিচে ডাকছে তাদের।

ইমা আপু আর ফাহিম ভাইয়া চলে গেলো।

আমিও যেতে নিলে হাতে টান পরলো। পিছে তাকিয়ে দেখি রোয়েন ভাই আমার হাত ধরে আছে। বুকের ভিতোর হাতুরি পেটানো শুরু করলো আমার তার স্পর্শ পেয়ে।

টান দিয়ে রেলিং এর সাথে আমাকে লাগিয়ে দার করিয়ে আমার দুপাশে হাত রেখে হালকা ঝুকলো।

ওদের যেতে বলেছি, তোকে কি যেতে বলেছি? হালকা রাগ দেখিয়ে বললেন তিনি।

ভয়ে আর জরোতায় আমার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হলো না। মাথা নারিয়ে বললাম না।

তাহলে যাচ্ছিলি কেনো?

ও…ওই আসলে আ.. পুরা চ..চলে যাচ্ছিলো ত..তাই।

তুই ওদের মাঝখানে কি করছিলি? ওদের আলাদা কথা বলতে পাঠানো হয়েছিলো, তোকে সাথে পাঠানো হা নাই।

এখন আমার নিজের মাথায় বারি দিতে মন চাচ্ছে, কেনো যে এখানে আসতে গেলাম। এখন ভাইয়াকে কি জবাব দিবো আমি? সত্যি কথা বললে থাপ্পড় দিয়ে আমার দাত ফেলে দিবে। না বাবা সত্যি বলা যাবে না। উফ কি করবো এখন আমি, কেনো যে তখন রিহুর সাথে চলে গেলাম না ধুর।

কিছু জিজ্ঞেস করেছি আমি, ভাবনায় পরতে বলি নি। ধমোক দিয়ে বললেন তিনি।

কেঁপে উঠলাম আমি ভয়ে। ওই আসলে আ.. আমি…..

আসলে নকলে না করে যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দে।

আ..আসলে গল্প করতে এসেছিলাম মিনমিন করে বললাম।

তোর কি কোনো কমনসেন্সে নেই হুর? এতো বোকা বোকা কেনো তুই? ওদের আলাদা কথা বলতে পাঠানো হয়েছে আর তুই এসেছিস গল্প করতে।

আমি অভিমানে গাল ফুলালাম, একটু এসেছি তাই বলে এমন বকা লাগে। সবাই বলে এ নাকি আবার আমাকে ভালোবাসে হুহ।

খবরদার আমার সামনে আর গাল ফুলাবি না তাহলে তোর খবর আছে।

তার কথা শুনে হা করে তাকিয়ে রইলাম, এখন কি গালও ফুলাতে পারবো না।

নিচে যাবো আমি।

তো যা, না করছে কে?

হাত না সরালে আমি যাবো কিভাবে?

নিজ থেকে সরিয়ে যা, আরেকু আমার কাছে ঘেসে উনি বললো।

আমি কতোখন ট্রাই করলাম ছুটার জন্য কিন্তু এক তিল পরিমানও সরাতে পারলাম না। তার মতো হাতিকে সরাবোই বা কি করে। ব্যর্থ হয়ে গাল ফুলিয়ে তাকালাম তার দিকে।

আচমকা আমার গালে কামড় বসিয়ে দিলো তিনি। থ হয়ে গেলাম আমি, এটা কি করলো তিনি চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালাম তার দিকে।

বলেছিম না গাল ফুলাবি না আমার সামনে, আবার কেনো ফুলালি তার শাস্তি এটা। এই বলে তিনি হাত সরিয়ে হাটা ধরলো নিচে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।

আমি স্টাচু হয়ে দারিয়ে রইলাম, কি করলো তিনি এটা? কেমন শাস্তি এটা? হাত চলে গেলো আমার গালে, বুকের ভিতর ধুকপুক ধুকপুক করছে।

এই ছোট মাথায় এতো কিছু না ভেবে নিচে আয়। আর নাহলে দেখা যাবে ভাবতে ভাবতে আজকে সারা দিনরাত এখানেই পার করে দিয়েছিস।

তার কথা শুনে ভানার জগৎ থেকে বেরিয়ে এলাম। পরে আসতে ধিরে নিচে নেমে আসলাম।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে