#লাভ_টর্চার❤
#Part-7
#Nusrat_Jahan_Abida
.
.
তাসিন নামটা শুনেই চোখ বড় করে তাকালাম। এদিকে শুভ্র ভাইয়া রাগী চোখে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। ছেলেও আর কোন নাম পেল না যে তাসিন নামটাই নিতে হলো। যে নামটা রেখেছে তা জানতে পারলে বেশ হতো! কিন্তু এখন কি করি!
.
.
কিছুক্ষণ আগে আম্মু বলেছে একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছে, ছেলে খুব ভালো, নাম তাসিন! তা শোনার পর থেকেই আমার অবস্থা কাহিল। কি থেকে কি হয়ে গেলো কিছুই বুঝতে পারছি না।
.
.
ঘরে এদিক থেকে ওদিক পায়চারী করছি এমন সময় শুভ্র ভাইয়া এসে হাতের বাহু ধরে নিজের দিকে ঘুরালো। ব্যথায় কুঁকড়ে আহহ শব্দ করে উঠলাম। এতোই শক্ত করে ধরেছে যে মনে হচ্ছে হাত ভেঙে পড়বে। শুভ্র ভাইয়া রাগী কন্ঠে বলল,
– তাহলে উনিই তোর সেই তাসিন ভাইয়া!
.
.
ব্যথায় ঠোঁট চেপে বললাম,
– ভাইয়া, লাগছে।
.
.
শুভ্র ভাইয়া আরো জোরে চেপে ধরে বলল,
– লাগুক, আরো লাগুক। কি মনে করিস নিজেকে! যা মন চায় তাই করে বেড়াবি আর কেউ কিছু বলবে না!
.
.
কিছু না জেনে কিভাবে এরকম একটা অপবাদ দিতে পারে শুভ্র ভাইয়া! হ্যাঁ, আমি বলেছিলাম তাসিন ভাইয়ার কথা! কিন্তু এর মানে এই তো হয় যে আমি খারাপ কিছু করে বেড়াচ্ছি! তার কথায় রাগ মাথায় উঠে নাচছে। রেগে বললাম,
– যাই করে বেড়াই না কেন, হবু জামাইয়ের সাথে করেছি। আপনার কি!
.
.
শুভ্র ভাইয়া রাগে কিটমিট করে বললো,
– হবু জামাই!
.
.
এতক্ষণে হাতের বাঁধন হালকা হয়েছে। হাত ছাড়িয়ে বললাম,
– জি! হবু জামাই! শুনেন নি, আম্মুর ছেলে পছন্দ!
.
.
আমার কথা শুনে শুভ্র ভাইয়া যে রেগে যাচ্ছে তা তার চোখগুলো দেখেই বুঝতে পারছি। লাল টকটকে চোখগুলো থেকে যেন এই মুহুর্তেই রক্ত ঝরবে। চোখ দিয়েই যেন আমাকে জ্বালিয়ে ছারখার করছে। কিন্তু আমার কি দোষ! শুভ্র ভাইয়া না জেনেই এমন একটা অপবাদ কিভাবে দিলো! কিভাবে!
.
.
কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে শুভ্র ভাইয়া সেখান থেকে প্রস্থান করলো। শুভ্র ভাইয়া যেতেই শান্ত ভাইয়া হাজির। নিশ্চয়ই মেজাজের বারোটা বাজানোর জন্য তার আসা! কঠিন গলায় বললাম,
– কিছু লাগবে!
.
.
শান্ত ভাইয়া মুখ ফুলিয়ে বলল,
– শুনেছিলাম বিয়ের পর বোনেরা পর হয়! এখন তো দেখছি বিয়ের আগেই পর হয়ে গেছিস!
.
.
রাগী গলায় বললাম,
– হয়েছি, বেশ করেছি! এখন ফুটো!
.
.
শান্ত ভাইয়ার আচরণে যাওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পেলো না। উল্টো তিনি বেশ আরামসে খাটে বসে বলল,
– হয়েছি, বেশ করেছির জায়গায় যদি প্রেম করেছি, বেশ করেছি বলতি তাহলে আরো বেশি সুন্দর হতো!
.
.
রাগটা এখন আকাশ ছুঁই ছুঁই। যেনো সময় এই শান্ত শিষ্ট লেজ বিশিষ্ট প্রাণীটা আমার হাতে ঝাঁটার বাড়ি খেতে পারে তা বেশ বুঝতে পারছি। রেগে বললাম,
– তোমার সুন্দরের খেতাপুরি! ঝাঁটার বাড়ি থেকে না চাইলে নিজের পথ দেখো!
.
.
এবারও আমার কথা তার বোধগম্য হলো না। দাঁত কেলিয়ে বলল,
– সত্যি করে বল তো, প্রেম ট্রেম করিস নাকি! এতো প্রেম প্রেম গন্ধ পাই কোথা থেকে!
.
.
দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
– নিজের শরীর থেকে!
.
.
শান্ত ভাইয়া অবাক হওয়ার ভান করে বলল,
– মানুষের শরীর থেকে ঘামে গন্ধ আসে শুনতাম, প্রেমের গন্ধও আসে তা প্রথম শুনলাম!
.
.
রাগ দমিয়ে বললাম,
– সব কথা কখনো না কখনো প্রথম শুনতে হয়। এই কথার সূচনা আজ হলো। এখন বাইরে গিয়ে মিঠাই বিলাও! প্লিজ, যাও!
.
.
আমার করুণ কন্ঠ তার কানে গেলো না। নির্দয় হলে যা হয় আর কি!
.
.
শান্ত ভাইয়া জ্ঞানী ভাব নিয়ে বলল,
– আমার মনে হয়, প্রেম প্রেম গন্ধটা মন থেকে আসে। আর আমার সিক্স সেন্স বলছে, এই গন্ধটা তোর মন থেকে আসছে।
.
.
এবার আর নিজের রাগকে দমাতে পারলাম না। রেগে আগুন হয়ে বললাম,
– আসছে, ভালো হচ্ছে! খুশি?
.
.
শান্ত ভাইয়া দাঁত কেলিয়ে বলল,
– তুই না বললেও তা আমি জানি। এখন শোন, কাল দুপুরে ছেলের সাথে তোর ডেট ঠিক করা হয়েছে! আই মিন, পাত্র দেখা টেখা আর কি! মামিমা তোকে কাল সকাল থেকেই রেডি থাকতে বলেছে। তুই তো আবার লেট লতিফ থুক্কু লেট লতিফা! তাই আগে ভাগে রেডি হয়ে থাকিস! বুঝলি?
.
.
আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই তিনি তার পথ ধরলো। যখন যেতে বলি তখন যাওয়ার নাম নেয় না, আর এখন আমার উত্তরটা পর্যন্ত শুনলো না! এর জন্যই একে আমি দেখতে পারি না। এখন কথা হলো, করবোটা কি! মাথাও কাজ করছে না! তবে কিছু একটা তো করতেই হবে!
.
.
সকালের ঘুম ভাঙল মেধার ডাকে। আমাকে সাজানোর জন্য তিনি নিজের ঘুম বির্সজন দিয়ে হাজির হয়েছে। মেধাকে দেখে করুণ কন্ঠে বললাম,
– তুই সত্যি আমাকে সাজাবি!
.
.
মেধা খুশিতে গদগদ হওয়া কন্ঠে বলল,
– সাজাবো মানে! আমি তো পারলে এখনই তোর বিয়ে করিয়ে দিই!
.
.
ছোট মুখটা আরো ছোট করে বললাম,
– তুই এটা বলতে পারলি!
.
.
মেধা মুখে দীর্ঘ হাসি টেনে বললো,
– মুখ তো আছেই বলার জন্য, তাই না? এখন তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আস! সাজাতে হবে তো!
.
.
মেধা কথাটা সুন্দর করে বললেও আমার মনে হচ্ছে একটা কসাই ছাগলকে বলছে ফ্রেশ হয়ে আসতে, যেনো তাকে বলি দেওয়া যায়। আমিও হার মানার পাত্রী নই! এই পাত্রকে আমি দেখে ছাড়বো,হুহ!
.
.
Continue……………..