#লাভ_টর্চার❤
#Part-4
#Nusrat_Jahan_Abida
.
.
খাওয়া দাওয়া শেষ করে আবার জমছে খেলা শুরু হলো! টানটান উত্তেজনায় মধ্যেও আগের বারের মতো এবারো শান্ত ভাইয়ার হারার পথে! শেষমেশ হেরেই তিনি শান্ত হলেন। খাওয়ার সময় কথা হয়েছিল যে, যে হারবে সে ট্রিট দিবে! এখন কথানুযায়ী শান্ত ভাইয়াকে আমাদের সবাইকে ট্রিট দিতে হবে! তবে এখন রাত হতে চলেছে বলে কালকে তা দেওয়া হবে বলে সবাই যার রুমে চলে গেল। তবে নিধিপি আমার রুমেই থাকবে, তাই সারারাত দু বোন আড্ডা দিয়েই কাটিয়ে দিলাম।
.
.
সকাল সকাল হতেই ঘুমের বারোটা বাজানো শুরু! আমিও উঠেই পড়লাম। আমি আবার তাওহিদ আফ্রিদির মতোই ফ্রি খাবার মিস করতে চাই না। রেডি হয়ে বাসার বাইরে চারজন মিলে দাঁড়ালাম। চিন্তার বিষয় কি খাওয়া যায়! শান্ত ভাইয়া কথাটা জিজ্ঞেস করতেই ফটাফট বলে উঠলাম,
– ফুচকা!
.
.
কথাটা বলতেই একটা ঢোক গিললাম। শুভ্র ভাইয়া আমার দিকে রক্তচক্ষুতে তাকিয়ে আছে যেন আমি ফুচকা না, বরং তার মাথা খেতে চেয়েছি! হায়রে আমার ফুচকা! তোকে আর খাওয়া হলো না! মনের মধ্যে কথাটা ভেবেই আফসুস করছি!
.
.
রেস্টুরেন্টে বসে খাবারের ওয়েট করছি এমন সময় হঠাৎ একটা মেয়ে এসে শুভ্র ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরল। তাদের মিলন মেলা দেখা আমার গা জ্বলে যাচ্ছে। মন তো চাচ্ছে সামনের গ্লাসের পুরোটা পানি মাথায় ঢেলে দিই! চিন্তা নাই, একদিন সুযোগ পেলে ঠিকই ঢেলে দিবো! হুহ! আর মাইয়া তো মাইয়াই! আমার কাজিন হয়ে কোনদিন জরিয়ে ধরলাম না, আর এই মাইয়া কিভাবে চিপকে আছে! শাকচুন্নী কোথাকার! শুধু শাকচুন্নী কেন! মাছচুন্নী, মাংসচুন্নী, ডিমচুন্নী, সবচুন্নী! আটা-ময়দার বস্তা! বিলেতী ইন্দুর কোথাকার! দেখো, এখনো ছাড়ছে না! শেষে সহ্য করতে না পেরে বললাম,
– উহুম! উহুম! এটা পাব্লিক প্লেস, কারো বেডরুম না!
.
.
মেয়েটা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে কড়া কন্ঠে বলল,
– আমার জানকে আমি ধরেছি! কার কি আসে যায়!
.
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
জান! কার জান! কিসের জান! তাহলে কি এই ধলা বিলাইয়ের জন্যই সাদা বিলাই আমাকে ইগনোর করতো! আম্মুউউউউ! এ খেলা খেলবো নট! মন চাচ্ছে জোরে জোরে চিৎকার করে কান্না করি! কিন্তু আমার কান্না দেখার কে আছে! সব তো ঐ বিলেতী ইন্দুরে!
.
.
শুভ্র ভাইয়া এবার মুখ খুললো! হাসি মুখে বলল,
– আসলে কাছের বন্ধু তো, তাই জান প্রাণ ডাকে! আসলে তেমন কিছুই নেই!
.
.
কতো কাছের তা তো দেখতেই পারছি! আর কি ডাকে! জান! প্রাণ! ঝাড়ু-জুতা ডাক! না, আরোহী! তুই হার মানবি না। এই ঝাড়ু আর জুতাকে তুই উচিত শিক্ষা দিবি! অবশ্যই দিবি! মুখে হাসি এঁকে বললাম,
– আহা! কি বন্ধুত্ব! দেখে প্রেম প্রেম ফিল আছে!
.
.
শুভ্র ভাইয়া আমার কথাকে পাত্তা না দিয়ে ঐ মেয়েটির সাথে ব্যস্ত হয়ে গেল। এভাবে হাসছে যেনো না হাসলে দুনিয়া শেষ হয়ে যাবে। মনে হচ্ছে, তার মাথায় কেউ বন্দুক দিয়ে বলছে, হাস! না হইলে গুলি করুম!
.
.
রেস্টুরেন্ট থেকে ফিরে বাসায় ঢুকতেই ভ্রু কুচকে তাকালাম। আমার বেস্টু সোফায় বসে মোবাইল টিপছে। নিজের বাসায় নিজের দাম নাই, আর বেস্টু বসে বসে ফোন টিপে। কি এক কপাল! যাই হোক, দেখা উচিত কি করছেন তিনি!
– ঐ! কি করিস এখানে!
.
.
আমার কথা শুনে বেস্টু মোবাইলের থেকে মুখ তুলে তাকালো। ভ্রু কুচকে বললো,
– তোর বাসায় কেউ বেড়াতে আসলে এমন বিহেভ করিস!
.
.
বেস্টুরা কোনদিন সোজা কথা বুজে না। রেগে বললাম,
– বলবি কি করছিস নাকি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করবো!
.
.
– বাসায় আসা মেহমানের সাথে কেউ এভাবে কথা বলে!
.
.
আম্মুর কন্ঠে পিছনে তাকালাম। খাবারের ট্রে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আম্মুর কথা শুনে ভ্রু কুচকে বললাম,
– মেহমান! আর এই!
.
.
বেস্টুর কাছে গিয়ে ওকে দাঁড় করলাম। ডানে বামে সামনে পিছনে ভালো করে দেখে বললাম,
– কোন এঙ্গেল দিয়ে একে মেহমান মনে হয়!
.
.
আম্মু টেবিলে খাবারের ট্রে রেখে রাগী মুখে বললো,
– খুব বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস! এখন তোকে বিয়ে দিয়েই শান্তি হবো!
.
.
বিয়ে দিয়ে দিবে তা আমার আম্মুর রোজকার ডায়লগ। তাই সেটাকে গ্রাহ্য না করে বেস্টুকে বললাম,
– এখানে বসে কি বড়দের পেঁচাল শুনবি নাকি! চল আমার রুমে।
.
.
কথাটা বলে বেস্টুর হাত ধরে টেনে নিজের রুমে নিয়ে গেলাম। ওকে আমি বেস্টু বললেও মেধা আমার বোনের চেয়ে কম না, বরং বেশিই! মুখে যাই বলি না কেন, প্রতিটা কিছুতে ওকে আমার চাই-ই চাই। আর আমাদের চৌদ্দ গোষ্ঠী আমাদের ব্যাপারে বেশ ভালো করে জানে, বিধায় একে অপরের বাসায় পড়ে থাকলেও কেউ কিছু বলে না।
.
.
রুমে এসে দরজা লক করে খাটে বসে পড়লাম। বড় একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করলাম। তারপর মেধার দিকে তাকিয়ে বললাম, সত্যি করে বল তো কেন এসেছিস! আমি তোকে বেশ ভালো করেই চিনি, বুঝেছিস! আমি না থাকলে যে তুই ভুলেও এ বাড়িতে পারা দিবি না তাও জানি। তো তোতাপাখির মতো ফটাফট সত্যিটা বলে ফেল যে, কি করতে এসেছিস!
.
.
মেধা ঠোঁট উল্টিয়ে বলল, তোর কি আসলেই মনে হয় যে তুই মরলে আমি আংকেল, আন্টির খোঁজ নিতে আসবো না! এভাবে বলতে পারলি তুই! বহুত কষ্ট পেয়েছি, বহুত!
.
.
বেস্টু সম্প্রদায় মানেই এটা! ভদ্র ভাষায় কিছু বুঝে না। মাঝে মাঝে গালি দিতে মন চায়। কিন্তু কি আর করার! আমি তো গালি দিই না। সো, এই চিন্তাটা ড্রেনে ফেলে দিয়ে নিজেকে শান্ত করে বললাম,
– দেখ, বইন। আমি স্লেং ইউজ করি না তাই তুই বেঁচে গেলি। এখন যদি সোজাসুজি না বলিস তাহলে আমাকে বাধ্য হয়ে গুগল থেকে খুঁজে গালির রেকর্ড ডাউনলোড করতে হবে! তুই তো জানিস, গুগলকে খাটাতে আমার বেশ ভালো লাগে!
.
.
– এভাবে বলতে পারলি তুই! (ঠোঁট উল্টিয়ে)
.
.
এভাবেই রেগে আছি, তার উপর এর ঢং দেখে মেজাজ আরো বিগড়ে যাচ্ছে। রেগে বললাম,
– বলবি তুই!
.
.
মেধা কাঁচুমাচু করে বলল,
– জিজ্ঞেস করছিলো যে, তুই কাউকে ভালবাসিস নাকি!
.
.
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
– তুই কি বললি!
.
.
মেধা মুখে দীর্ঘ হাসি এঁকে বলল,
– আমার আর খেয়েদেয়ে কাজ নেই যে শুভ্র ভাইয়ার কথা বলবো! বললাম, ওর মতো দুনিয়াতে মেয়ে হয় না! আসলেই হয় না। আর এতো ভালো যে বলতেই পারবো না! আসলেই বলতে পারবো না।
.
.
আমি ভ্রু কুচকানোকে গাঢ় করে বললাম,
– তুই তো বেশ বুদ্ধিমান প্রাণী হয়ে গিয়েছিস!
.
.
মেধা আবেগাপ্লুত হয়ে বলল,
– দোস্ত, তোর মুখে নিজের তারিফ শুনে এখন আমার কান্না চলে আসছে। আয়, দোস্ত! বুকে আয়!
– যা, সর! কথায় কথায় জড়াজড়ি শুরু করে!
.
.
আমার কথায় মেধা মুখ ফুলালো! কিন্তু আমার চিন্তা অন্যদিকে। আম্মু আমার পছন্দের কথা জিজ্ঞেস করলো কেন? কি চলছে আম্মুর মাথায়! না, আমাকে জানতেই হবে যে আম্মুর মাথায় কি খিচুড়ি পাকাচ্ছে!
.
.
মেধার সাথে কথা বলে বসার রুমে আসতেই রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে! মাইয়াটার সাথে এভাবে চিপসে বসে আছে যেনো অমূল্য রত্ন, সরে গেলেই তা চুরি হয়ে যাবে! মেয়েটার দিকে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললাম,
– তো ঝাড়ু!
.
.
সবাই আমার দিকে তাকাতেই একটা ঢোক গিললাম। কি থেকে কি বলে ফেলি তার তালই পাই না! মুখে হাসিটা বজায় রেখে বললাম,
– রুমটা কতো ময়লা হয়ে গেছে! ঝাড়ু দেওয়া দরকার!
.
.
আম্মু ভ্রু কুচকে বলল,
– ভূতের মুখে রাম রাম কিভাবে! আর কোথায় ময়লা দেখছিস!
.
.
ময়লা! ময়লা তো শুভ্র ভাইয়ার মনে আছে! এভাবে চিপকাতে হয় নাকি! আম্মু আমার দিকে এখনো ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে দেখে ঢোক গিলে বললাম,
– না মানে ঝাড়ু দিতে মন চাইলো……
.
.
কথা শেষ হওয়ার আগেই শান্ত ভাইয়া বলল,
– ঝাড়ু দিতেও মন চায় জীবনে প্রথম শুনলাম! ঝাড়ুদার হওয়ার শখ ঝাড়লো নাকি!
.
.
আমি জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বলল,
– মন এখন পাল্টে গিয়েছে। এখন ঝাড়ু দিতে না, ঝাড়ু দিয়ে পিটাতে মন চাইছে!
.
.
শান্ত ভাইয়া কিছু বলবে তার আগেই নিধিপি বলল,
– বর্তমানে ঝাড়ুদাররাও অনেক কিউট হয়! হায় ম্যা মারজাবা!
.
.
নিধিপির কথায় ভ্রু কুচকালাম! এই মাইয়া যার তার উপর ক্রাশ খায়! না জানি রায়হান ভাইয়া একে কিভাবে সামলায়! আমাদের চাহনী দেখে নিধিপি বিষম খেলো। নিজেকে সামলে জোরপূর্বক হেসে বলল,
– না মানে বিদেশী একটা মুভিতে দেখেছিলাম নায়ক ঝাড়ুদার সাজে! তাই বলছিলাম আরকি!
.
.
কথাটা বলেই হাত মুচরাতে লাগলো। সবাই কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিধিপিকে দেখলেও পরক্ষণেই ভূবন কাপানো হাসতে মেতে উঠলো। নিধিপি প্রথমে না বুঝলেও পরে বুঝতে পেরে নিজেও সে হাসিতে যোগ দিলো।
.
.
বিকেল গড়িয়ে আসতেই রিয়া বাসায় পৌঁছানোর জন্য তাড়া দিলো। রিয়া হলো সেই ঝাড়ু থুক্কু শুভ্র ভাইয়ার অতি কাছের বন্ধুর নাম। এদিকে শুভ্র ভাইয়া জোর করলো তিনি নাকি তাকে বাসায় পৌঁছে দিবে, তাও আবার বাইকে। এখন ভেবেন না যে আমি জ্বলছি! আসলে এই করোনার যুগে বাইকে ঘেঁষাঘেঁষি করে বসা মোটেও নিরাপদ না। তাই আর কি করা, বাইকের টায়ার পানচার করার কাজে লেগে পড়লাম। হিজাবের পিন দিয়ে টায়ার পানচার করছি এমন সময় পিছন থেকে কেউ খোঁচা দিলো। বিরক্ত হয়ে বললাম,
– দেখছো না, টায়ার পানচার করছি!
.
.
কিন্তু সেই ব্যক্তি দমে যাওয়ার পাত্র নয়, তাই আবার খোঁচা দিলো। রেগে পিছনে তাকাতেই দেখি শুভ্র ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললাম,
– কি অবস্থা, ভাইয়া?
.
.
শুভ্র ভাইয়া কুঁচকানো ভ্রু আরো কুঁচকে বলল,
– আমার অবস্থা তো ভালোই! কিন্তু তোর অবস্থা মনে হচ্ছে না ভালো! কি করছিলি?
.
.
আনমনেই বলে উঠলাম,
– টায়ার পানচার!
.
.
শুভ্র ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে বলল,
– কি!
.
.
এবার আমার হুস আসলো। নিজেকে সামলে বললাম,
– একটা মানুষ টায়ার পানচার করছিলো!
– আর সেই মানুষটা নিশ্চয়ই তুই! (শুভ্র)
.
.
মুখে দীর্ঘ হেসে এঁকে বললাম,
– জি।
.
.
– ও এম জি! টায়ার পানচার হলো কিভাবে?
.
.
পিছন থেকে এগিয়ে এসে রিয়া কথাটা বললো। শুভ্র ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
– জ্বলতে জ্বলতে শেষে না পেরে বাঁধ ভেঙ্গে ফেলেছে!
.
.
শুভ্র ভাইয়ার কথার কিছুই বোধগম্য হলো না। তবে আমি খুশি যে, এই করোনার যুগে কেউ আর ঘেঁষাঘেঁষি করবে না।
.
.
Continue…………………