মেঘের আড়ালে চন্দ্রলোকিত পর্ব-০১

0
1700

#মেঘের_আড়ালে_চন্দ্রলোকিত💖
#পর্ব-০১
#লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা

বিয়ের দিন ই ডিভোর্স পেপারে সাইন করতে হলে সেই বিয়ের মেয়াদ কতোদিন তা সত্যি জানা নেই।
–আমি এই বিয়ে করবো দয়া করে আমায় রেহায় দিন আমি চাই না বিয়ে করতে।
মেঘ কান্না করতে করতে নিজের হাত দুটো জোড়া দিয়ে আমানের সামনে হাটু মুড়ে বসে পরে,
আমানের বিষয়টা ভিশন বিরক্তিকর লাগে, মেঘের বাহু জোড়া শক্ত করে ধরে দাঁড় করায় নিজের সামনে,
এতে যে মেয়েটা ব্যাথা পাচ্ছে তার দিকে কোন খেয়াল নেই তার,
–আমার যা বলার আমার বলা শেষ বিয়ে করাটা তোমার হাতে৷ তুমি রাজি না হলে মুহুর্তে সব কিছু উলোটপালোট হয়ে যাবে এটা তুমিও জানো আমিও জানি।
–কেন এমন করছেন?
–সময়ের সাথে সাথে উত্তর পেয়ে যাবা।
এখন এগুলো পরে নেও রেডি হয়ে থাকো আমার সময়ের অপচয় পছন্দ না।
আমান কথাটা বলে মেঘের বাহু জোড়া ছেড়ে বেরিয়ে যায়,
হাতের লাল বেনারসি টার দিকে তাকাতে চোখের বাঁধ ভাঙা অশ্রু গুলো টুপ টুপ পানির আকারে নীচে পরতে থাকে,
এতোটা কষ্ট কখনো ফিল হয় নি।
বিয়ে নিয়ে সবার মনে হাজার স্বপ্ন থাকে কিন্তু এটা এই বিয়েটা কোন বিয়ে নয় এটা শুধুমাত্র একটা জোরজবরদস্তি।
মেঘের সামনে রাস্তা দুইটা হয় করো নয় মরো,
এই মুহুর্তে নিজের সাথে বোনের জীবন টা জড়িয়ে আছে পারবে না সে বোনকে ঠকাতে,
তাই বেনারসি পরে নেয়,
বিয়ের সাজে নিজেকে সাজিয়ে তুলে,
মেঘ আর তার বোন সারাকে আমান আর তার ভাই আরফান এর পাশে বসানো হয়,
কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করে,
কিছুক্ষণ আগে কি ঘটেছিল,
বিয়েটা যে জোর করে হচ্ছে তা কিন্তু না। বিয়েতে মেঘের মত ছিল আগে থেকে
তাই আজকের দিন পর্যন্ত তাকে খুশি দেখা গেছিল।
কিন্তু মাত্র কিছুক্ষণ আগেই যখন বরের গাড়ি আসার শব্দে সবাই হৈ-হুল্লোড় এ মেতে উঠেছিল তখন মেঘের রুমে একটা এগ্রিমেন্ট পেপার নিয়ে আসে আমান,
যেখানে স্পষ্ট লেখা আমান চাইলে যে কোন সময় মেঘকে বিনা দ্বিধায় ডিভোর্স দিতে পারে কিন্তু আমানের অনুমতি না নিয়ে মেঘ আমানকে কখনো ডিভোর্স দিতে পারবে না।
এর মানে স্পষ্ট আমান বিয়েটা করার আগেই তা ভেঙে দিতে চাইছে,
মেঘ এটা দেখার পর আমান কে সোজাই বলে সে বিয়েটা করবে না কিন্তু তার পরে যা ঘটে তার জন্য মেঘ প্রস্তুত ছিল না,
–তুমি ভুলে যাচ্ছো আজ সারার ও বিয়ে হচ্ছে আমারি ছোট ভাই আরফান এর সাথে,
তোমার বোনের সুখের সংসার ভেঙে যাবে যদি তুমি এখন না করে দেও
মেঘ কান্নায় জড়িত লাল অশ্রুসিক্ত নয়নে আমানের দিকে তাকিয়ে আছে
ছেলেটা এতো নিচ৷
কিভাবে
কেনই বা করছে সে এগুলো
–কি চান আপনি?
–আমি কি চাই তা সময় বলে দিবে৷
এখন সাইন করে রেডি হয়ে নেও,
আমার স্ত্রী এর উপর দিয়ে কি যাচ্ছে তা আমি জানি অন্য কেউকে জানতে না দি।
শত হোক স্বামী স্ত্রী এর ব্যাপার বাইরের কেউ না জানলেই ভালো তাই না মেঘ
আমানের এমন কথায় মেঘের ইচ্ছে হচ্ছে কষিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিতে
কিন্তু আপাতত সে জানে না এই লোকটা ঠিক আরও কি কি করতে পারে৷
নিজের সাথে বোনকেও ভুক্তভোগী করাতে চায় না মেঘ,
তাই ত এতো বড়ো সমস্যা জেনেও বোনের দিকে তাকিয়ে নির্দ্বিধায় বিয়েটা করে নিলো মেঘ,
অশ্রু গুলো বাঁধা মানছে না বেহায়ার মতো বইতে আছে গাল জুড়ে,
আমান খেয়াল করছে মেঘ অনবরত কেঁদে চলেছে,
–বিয়েটা হয়ে গেছে এর মনে তুমি আমার স্ত্রী আমার স্ত্রী এর গালে প্রথম আমার স্পর্শ করার কথা কিন্তু এখানে দেখি কিছু ঠুনকো অশ্রু আমার অধিকার নিয়ে টানাটানি করছে,
কান্না থামাও নাহলে ফল ভালো হবে না। কান্নার জন্য আরও অনেক সময় আছে মনে করো সারাটা জীবন তোমায় এই অশ্রু গুলোই সঙ্গ দিবে। বাঁচিয়ে রাখো এগুলোকে।।
শেষের কথা গুলো আমান দাঁতে দাত চেপে বলে৷।
মেঘ বড়ো বড়ো নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে,
আমান মেঘের হাত ধরে বসে শক্ত করে,
–শান্ত হও মিসেস. খান সময় এখনো অনেক দুরে যাবে, ( দাঁতে দাত চেপে সবার সামনে মিথ্যা হাসি টেনে ফিসফিস করে বলল আমান)
উপস্থিত সবার কাছে সে ভিশন যত্নশীল স্বামী স্ত্রী এর কান্নায় নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করছে কিন্তু মেঘ ত জানে লোকটা আসলে কি করছে তার সাথে।
দেখতে দেখতে বেঁচে থাকা সময় টুকু কেটে গেল,
বিদায় নিয়ে দুই বোন ই চলে এলো নিজের বাড়ি থেকে,
মেঘের হৃদয়ের উপর কেউ পাথর রেখে দিয়েছে,
ভিশন ভার ভার মনে হচ্ছে সব কিছু
এ বাড়িতে আসতে আমানের মা পরম যত্নে দুই ছেলের বউকে ঘরে তুললেন।
পুরো বাড়ি জুড়ে মানুষ সবাই নতুন বউদের ভিশন আদর করছে,
সময় পেরিয়ে কিছুরা রাত গভীর হলে মেঘকে একটা ফুলসজ্জায় সজ্জিত খাটে বসিয়ে ঘোমটা টা একটু টেনে দিয়ে আসা হলো,
মেঘ মাথা নিচু করে আছে,
সকালের কথা যে কিছুই ভুলতে পারে নি এই মানুষ টাকে কিভাবে সে মেনে নিবে কিছুই বুঝতে পারছে না সে,
(পরিচয়,
জান্নাতুল মেঘ ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।
সে একাই তার আপন কোন বোন নেই
সারা তার এক মাত্র চাচার মেয়ে,
সারাও মেঘের সাথেই পড়ে।
ওরা জয়েন্ট পরিবারে বাস করে৷।
দু’জন দু’জন কে ভিশন ভালোবাসে দুজন ই দু’জনের জন্য জান কেটে দিয়ে দিতে পারে,
সারা আর আরিফের রিলেশন ছিল কিন্তু আমান ছিল মেঘের কাছে এক দম অচেনা ।
আরিফ বাবার কম্পানির সিইও কিন্তু আমান তার পড়ালেখা শেষ করে বাংলাদেশের উচ্চতম পদ বিসিএস টাও শেষ করে চাকরি করে। আমানের বাবা আরিফের জায়গায় আমান কে দেখতে চেয়েছিলো কিন্তু আমান একটু বেশি জেদি তার এটা পছন্দ ছিল তাই এটাই করবে,
খান পরিবার প্রভাবশালি হলেও মেঘের পরিবার নিতান্তই মধ্যবিত্ত,
মেঘের বাবা একজন শিক্ষক তাও রিটাইয়ারমেন্ট এর শিক্ষক এবং সারার বাবা ছোট খাটো বিজনেস করেন।
অভাব থাকলেও ভালোবাসার কোন কমতি ছিলনা এ পরিবারে।
মেয়ের পর্যাপ্ত বয়স হলেও মেয়েকে সময় দিবেন বলে ভেবেছিলেন আজিজ রহমান (মেঘের বাবা) আর রায়হান শেখ (সারার বাবা) কিন্তু আর্ক খান (আমান আরিফের বাবা) তাদের মেয়ে দু’টো কে নিজের ঘরের বউ করতে এতোই ইচ্ছুক ছিলেন যে মেয়ে খুশি হবে তাই বিয়েটা দিতে রাজি হন।
এতে সবাই খুশি ছিল মেঘ বেশি খুশও না থাকলেও সারা ছিল ভিশন খুশি কারন আরিফ আর তার একটা সম্পর্ক নাম পেতে চলেছে,
সব দিক দিয়ে ঠিক ছিল কিন্তু শেষের গল্পটা সত্যি বেমানান হয়ে গেল
হটাৎ পাশে কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে মেঘ বাস্তবে ফিরে,
পাশেই সেই ৫ ফুট ১১ ইঞ্চির মাত্রাতিরিক্ত ফর্সা ছেলেটা দাঁড়িয়ে মেঘের হৃৎস্পন্দনের গতী হটাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় নিজেকে কেমন মনে হচ্ছে,
আমান নিজের কোর্ট টা খুলে পাশে রাখে মেঘ চুপচাপ করে আছে,
আমান পাশে ফিরে মেঘের হাত ধরে খাট থেে নামায়,
মেঘ ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে নেয়,
–এখানে কেন তুমি বেরিয়ে যাও এই রুম থেকে,
মেঘ চোখ খিচে বন্ধ করে ছিল কিন্তু আমনের এমন কথায় চোখ মেলে তাকায়,
আমান মেঘকে দেখে একট বাঁকা হাসি দেয়,
–কি ভেবেছিলে আমি এমন বলব।
উহুম এটা ত আমি বলব না যখন তুমি কোন মানুষ কে ঘৃণা করো তখন তার কাছে আসা তার নিশ্বাস এর শব্দ সব কিছু তোমায় বিরক্ত করে,
তার প্রতিটা কাজ চোখের সামনে হওয়াটা বিরক্তিকর লাগে,
আমিও তোমার সেই বিরক্তি হতে চাই মেঘ,
আমান কথা গুলো বলে মেঘকে ছেড়ে দিলে,
মেঘের হাত হোড়া লাল বর্ণ ধারন করেছে তার দিকে তাকিয়ে কিছু পানি গড়িয়ে পরলো গাল দিয়ে,
–হয়ত বলবে কি ক্ষতি করেছি আপনার৷
সেই প্রশ্নের উত্তর তুমি ধিরে ধিরে পাবে কিন্তু আপাতত তোমায় আমার যাবতীয় সমস্ত কিছুর খেয়াল রাখতে হবে, আমি কি খাই আমি কখন কি পরি এগুলো সব তেমার দায়িত্ব সকালে উঠে সবার আগে তোমার মুখটা দেখতে চাই সাথে তোমার হাতের কফি,
নিজেকে আমার মন মতো গড়বার চেষ্টা করো হয়ত কিছুটা সোজা হবে টিকে থাকা,
কথা গুলো বলে আমান ওয়াসরুমে চলে গেল
মেঘ সেখানে ঠায় হয়ে দাঁড়িয়ে রয়,

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে