#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#সিজন_2
#পর্ব_১৩
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
নির্জন আর ওর পেছনে দাঁড়িয়ে আছে ছোঁয়া।
নিরুপমা দরজা খুলে নির্জন কে দেখে রেগে গেলো। ওর উত্তর হাত তুলতে গিয়েও থেমে গেল।
নির্জনঃ থামলে কেন!.? মারো! প্লিজ ফুপি মেরে সব রাগ শেষ করে ফেলো, আমি ত তোমার ছেলেই।সেই ছোট থেকে ছেলের মতো বড় করলে আজ কেন এতো দূরত্ব! প্লিজ ফুপি মারো,বকা দাও তাও আগের মতো হয়ে যাও।
নিরুপমাঃ সামনে থেকে সরো! তুমি আজ যা করলে আমার সম্মান কোথায় নিয়ে দাঁড় করালে.? কই আমার মেয়ে ত তোমার বিয়েতে গিয়ে কোনো সিনক্রিয়েট করেনি! তাহলে তুুমি কেন আজ সমাজের সামনে ওকে ছোট করলে.?
নির্জনঃ আমি ওকে ভালোবাসি ওর অসম্মান হোক কখনো চাইনি ফুপি,আজকের পর ওর দিকে ভয়েও কেউ আঙ্গুল তুলতে পারবে না, আজ থেকে ও নির্জন চৌধুরীর বউ।
নিরুপমাঃ বিয়েটা কি হয়ে গেছে!.?
নির্জন মাথা নাড়তেই নিরুপমা দুই পা পিছিয়ে গেল।
ছোঁয়া গিয়ে ঝাপটে ধরলো ওর আম্মুকে।
নিরুপমা মেয়ের মাথায় হাত রাখলো। ছোঁয়া কাঁদতে শুরু করলো।
রাফি রাগে চোখ মুখ শক্ত করে এসে নিরুপমার সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো, ‘ এই বিয়ে কিছুতেই হয়নি, এখানে ছোঁয়ার কোনো সম্মতি ছিল না, আজ আমাদের বিয়ে ছোঁয়া।
নির্জন বিরক্ত হয়ে রাফির দিকে তাকালো। মানে একটা ছেলে কতোটা বলদ হলে এমন কথা বলতে পারে!
ছোঁয়া লেপ্টে আছে নিরুপমার বুকে।
মহুয়া নির্জনের কাছে এসে বললো,’ ভেতরে এসো।’
নির্জনঃ ভেতরে যাব না ভাবি ছোঁয়া কে নিয়ে একদম বাড়িতে যাব। আপনারাও চলুন।
ছোঁয়া কিছুতেই নির্জনের সাথে যাবে না, নিরুপমা ও মেয়েকে ওই বাড়িতে দিবে না।
নির্জন ওর আম্মুকে আগেই কল দিয়ে ছিল।
হালিমা বেগম গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির সামনে এসে বললো,’ আমি বাড়ির গাড়ি নিয়ে এসেছি নিরু মেয়েকে বিদায় দিয়ে দাও এখন ছোঁয়া আমার বাড়ির বউ আর তোমার বাড়ির মেহমান।
নিরুপমাঃ কিন্তু এই বিয়ে…
হালিমা বেগমঃ যতো রাগ সব না হয় পরে হিসাব করে ফিরিয়ে দিও, এক সময় না হয় আমরা রাগ,অভিমান, ভুল বুঝাবুঝির হিসাব করে নিব আজ মেয়েকে বিদায় দাও।
মহুয়া ও বুঝালো।
রাফি শুধু চুপচাপ রক্ত বর্ন চোখে তাকিয়ে দেখলো সব। উপরে যতোটা শান্ত ভেতরে ঠিক তার থেকে গভীরে পুড়ছে, যার গন্ধ বের হচ্ছে না, শব্দ হচ্ছে না, কিন্তু কারো জীবন থমকে গেছে। রাফি বুকে হাত দিয়ে লম্বা কয়েকটা শ্বাস ফেলে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল।
যাওয়ার সময় মিমের সামনে পড়তেই মিম মাথা নিচু করে বললো,’ সরি!!’
রাফি হাসলো! এই যে ভেতরে আগুন জ্বলছে সেটা কি এই সাধারণ সরি তে ঠান্ডা হবে!.? মিম কি বুঝতে পারছে সে কি করেছে..?
রাফি ত ছোঁয়া আর নির্জনের সবটা জানতো। একবার বিয়েটা হয়ে গেলে হয়তো রাফি সবটা ঠিক করে নিত,ছোঁয়ার মন জিতার জন্য সাত সমুদ্র পারি দিত, একটা মেয়ের মন জয় করা অতোটাও কঠিন নয়, না হয় ছোঁয়া সারাজীবন মনে অন্য কেউকে রাখলেও ভাগ্যে রাফির হয়ে থেকে যেত। রাফি ত লাভ,ক্ষতি হিসাব করে ছোঁয়া কে ভালোবাসেনি। সেই ছোট থেকে ভালোবেসে আসছে কতো অপমান, অবহেলা, মাইরও খেয়েছে। কলেজের সবার সামনে ছোঁয়া অপমান করেছে তাও গায়ে মাখেনি। এতোগুলো বছর পর এভাবে দেখা ভেবেছিল ভাগ্য হয়তো অন্য কিছু চাচ্ছে না হয় দেখা কেন হলো.! ওই দিনের চিঠি ছোঁয়া ডাস্টবিনে ফেলে দিলেও তা কুড়িয়ে নিজের কাছে রেখে দিয়ে ছিলো রাফি। ভালোবাসা এতো অদ্ভুত কেন! এতো কষ্ট কেন.? লোকে বলে পুরুষ মানুষের কষ্ট পেলেও কাঁদতে নেই অথচ আজ রাফির না চাইতেও রক্তবর্ন চোখ দিয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে।
মিমের ভীষণ কষ্ট লাগলো রাফির শেষ তাকানোটা দেখে। ছেলেটা কি একটু বেশিই কষ্ট পেল!.?
রাফি বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লো আজ চোখ যেদিকে যায় সে সেই দিকেই যাবে, অথচ রাস্তা আশপাশ সবকিছু ঝাপসা, রাফি চোখ বার বার মুছছে।
কলেজের সবচেয়ে হ্যান্ডসাম ছেলে ছিল রাফি সব মেয়ে ওর পিছে ঘুরতো আর রাফি ঘুরতো ছোঁয়ার পিছু… শেষটা সুন্দর হতে পারতো।পুরনো ঘায়ে লবন দেওয়ার কি খুব বেশি প্রয়োজন ছিল!.?
_____________
বউ নিয়ে বাড়িতে এসে অবাক হলো। পুরো বাড়ি ফুল দিয়ে সাজানো, ছোঁয়া বাড়ির ভেতরে পা ফেলার আগেই নিজেকে হাওয়াই ভাসতে দেখে ভয়ে নির্জনের গলা জড়িয়ে ধরলো।
নির্জনঃ আমার মহারাণীর প্রথম প্রবেশ আমার কোলেই হোক।
ছোঁয়া কিছু না বলে নির্জনের গলা ছেড়ে দিল। সে সব কিছুর বদলা খুব কঠিন ভাবে নিবে, এক এক করে সব ফিরিয়ে দিবে।
মহুয়া খুব খুশি আলভিকে কোলে নিয়ে আছে। আহনাফ এসে বললো,’ আমিও ত প্রথম দিন তোমাকে কোলে নিয়ে এসে ছিলাম।
মহুয়াঃ আপনার আর নির্জনের মধ্যে পার্থক্য ত নেই। দুইজনি হাত ছেড়ে দিতে সময় নেন না! আপনাদের ভালোবাসা বাতাসের চেয়েও হাল্কা।
আহনাফঃ মহুয়া…
মহুয়া আলভিকে জড়িয়ে ধরে উপরে চলে যায়।
আহনাফ মহুয়ার পেছন পেছন গেল।
মহুয়া বিরক্ত হয়ে বললো,’ কি সমস্যা!.? ‘
আহনাফঃ একটা জিনিস এনে ছিলাম।
মহুয়াঃ আমার কিছুর প্রয়োজন নেই।
আহনাফ পকেট থেকে বেলীফুলের মালা বের করে মহুয়ার চুলে পেঁচিয়ে দেয়।
মহুয়ার কোলে আলভি বলে মহুয়া কিছুই করতে পারলো না।
আহনাফ তাকিয়ে বললো,’ এবার সুন্দর লাগছে,ফুলের খোঁপায় ফুল।’
মহুয়া আলভিকে নামিয়ে খোঁপা থেকে ফুলটা এনে আহনাফের সামনে নিচে ফেলে দিল।
আহনাফ ভাবতেও পারেনি মহুয়া এমনটা করবে, তাহলে কি ঘৃণার পাল্লা এতো ভারি হয়ে গেছে.?
মহুয়াঃ আমার থেকে দূরে থাকুন!
আহনাফঃ ফুলটার ত দোষ ছিল না!
মহুয়াঃ কিন্তু এর মালিক যে আপনি! আগে ফুলের মতো পবিত্র নিজের মন করুন তারপর না হয় পবিত্র ফুলে হাত দেওয়ার মতো সাহস করবেন।
আহনাফ নিচ থেকে ফুলটা হাতে নিয়ে বললো,’ এতো জেদ ভালো না মহুয়া। আমি শিকার করছি আমার ভুল হয়েছে একন কি ক্ষমা করে সব ঠিক করা যায় না.?
মহুয়াঃ কোনো কিছু ঠিক করার নেই! যখন জীবনের সবচেয়ে বাজে সময়টায় ছিলাম তখন আপনি কোথায় ছিলেন.? যাকে আমি আমার খারাপ সময় পাশে পাইনি ভালো সময়ে তার ছায়াটার ও প্রয়োজন নেই।
আহনাফঃ আমাদের বাচ্চার কথা অন্তত ভাব।
মহুয়াঃ আমাদের বাচ্চা!..? আলভি শুধু মাত্র আমার বাচ্চা, আমার ছেলে। সে যখন বড় হয়ে শুনবে তার জন্মের কথা শুনে তার বাবা কি রিয়েক্ট করে ছিল তখন সে সহ্য করতে পারবে.? প্লিজ আমার সন্তান কে নিজের সন্তান বললে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।
আহনাফ কিছু বলার আগেই মহুয়া ঠাসস করে মুখের উপর রুমের দরজা লাগিয়ে দেয়।
আহনাফ শুধু চুপচাপ তাকিয়ে থাকে দরজার দিকে, কিভাবে সব ঠিক করবে ও..?!
____________
শ্রাবণ বাসায় এসে বুঝতে পারলো সবাই চলে এসেছে। বাসায় মেহমান সাথে রান্না বান্না নিয়ে সবাই ব্যস্ত।
শ্রাবণ আলভির জন্য চকলেট নিয়ে প্রথমে উপরে গেল। আলভির হাতে সব চকলেট দিয়ে গেল নিজের রুমে।
মেঘলা মাত্র ছোঁয়ার কাছ থেকে এসে বসেছে বারান্দায়।
শ্রাবণ পেছন থেকে গিয়ে একটা ফুল গুঁজে দিল মেঘলার কানে।
মেঘলা ফুলে হাত দিয়ে মুচকি হাসলো।
শ্রাবণ বুকে হাত দিয়ে বললো,’ ইসসসস তোমার এই হাসি আমি বড্ড বেশি ভালোবাসি বউ, এতো মায়াবী কেন তুমি.?
মেঘলাঃ আমি মায়াবী নই তোমার চোখ মায়াবী শ্রাবণ।
শ্রাবণ আরেকটা ফুল এনে মেঘলার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বললো,’ বউ! ভালোবাসি।’
মেঘলাঃ উঠো ঢং করতে হবে না! সব ফুল নির্জনের রুম থেকে নিয়ে এসেছো বেচারা দেবর নিজের বউয়ের জন্য এনে রেখেছে।
শ্রাবণঃ বউ আমাকে কি তোমার এতোটাই কিপটে মনে হয়! ফুল অনেক দামী জিনিস তার থেকেও বেশি দামী আমার বউফুল আমি কিভাবে দুই দামী জিনিস অন্য কারো থেকে আনতে পারি! এই ফুলগুলো আমি একটা পিচ্চি থেকে এনেছি শুধুই তোমার জন্য।
মেঘলা ফুলগুলো হাতে নিয়ে ঘ্রাণ নেওয়ার চেষ্টা করলো।
শ্রাবণ পেছন থেকে মেঘলাকে জড়িয়ে ধরে বললো,’ আমাকে আজকাল এতো ইগ্নোর কেন করো বউ! আমার যে কষ্ট হয় বুঝ.? কেন এতো মন খারাপ তোমার.? কিসের এতো টেনশন! আমি আছি ত।
মেঘলাঃ আমার মন ছটফট করে শ্রাবণ, আমার মনে হয় আমি দিন দিন তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছি, আমার মনে হচ্ছে সময় আমার খুব নিকটে, আমি তোমাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো শ্রাবণ.? আমার ত তোমার বুক ছাড়া ঘুম আসনা,আমি কিভাবে ঘুমাবো?
শ্রাবণঃ চুপ! একদম চুপ, কিছু হবে না তোমার। তোমাকে ছাড়া জীবনটা আমার জীবন নয়,আমি বেঁচে থেকে মৃত, আমাকে বাঁচানোর জন্য না হয় থেকে যেও।
মেঘলা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমার ভয় হয়! নিজেকে তোমার থেকে হারানোর ভয়!!… ‘
চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।