মেঘের আড়ালে রোদ ২ পর্ব-০৭

0
362

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#সিজন_2
#পর্ব_৭
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

মহুয়া শ্রাবণকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
শ্রাবণ এসেই প্রথমে আলভির কথা জিজ্ঞেস করলো।
মহুয়া আঙ্গুল দিয়ে আলভিকে দেখিয়ে দিল। সাথে অবাক হচ্ছে শ্রাবণ আলভিকে চিনে!.? দেখে ভীষণ চিন্তিত মনে হচ্ছে!

শ্রাবণ গিয়ে আলভিকে জড়িয়ে ধরলো। আলভিও বড় আব্বু বলে জড়িয়ে ধরলো।

মহুয়া থমথমে মুখে তাকিয়ে রইলো, সব কিছু ওর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে, আলভি কিভাবে শ্রাবণ কে চিনে!.?

শ্রাবণ আলভির মাথার উপর হাত রেখে বললো,’ বেশি ব্যাথা পেয়েছো বাবা!.??’
আলভি মাথা উপর নিচ করলো।সে বেশি ব্যাথা পেয়েছে।
শ্রাবণ আলভিকে আদর করে উঠে দাঁড়ালো।
মহুয়া এখনো অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
শ্রাবণ মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ কেমন আছো.?’
মহুয়াঃ আলহামদুলিল্লাহ।
মহুয়ার মনে অনেক প্রশ্ন সে প্রথম কোনটা করবে বুঝতে পারছে না।
শ্রাবণ নিজ থেকেই বলতে শুরু করলো, ‘ অবাক হচ্ছ.!? ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়ে ছিলাম। ওর এই অবস্থা কিভাবে হলো.?
মহুয়া এতো বছর পর শ্রাবণ কে দেখে সব কথা গুলিয়ে ফেললো।
শ্রাবণঃ আচ্ছা এই বিষয় না হয় পরে জানা যাবে।
মহুয়াঃ আপনি এখানে.?
শ্রাবণঃ মেঘলা বললো।
মহুয়াঃ মেঘলা কিভাবে জানে.?
শ্রাবণঃ তুমি বাড়ি থেকে চলে আসার পর আজ পাঁচ বছর মেঘলা তোমার সব খবর রাখে, তুমি কোথায় যাচ্ছ! কি করছো! সব.. আর বাবুন আমাকে চিনে কারণ আমি প্রায় গিয়ে বাবুনের সাথে দেখা করি, ঘুরতে নিয়ে যেতাম মামি সবটাই প্রথম থেকে জানে নিষেধ করে ছিলাম তোমাকে বলতে। তুমি অফিসে থাকলে আমি গিয়ে ওর সাথে গল্প করে আসতাম।

মহুয়াঃ কিন্তু কেনো.?
শ্রাবণ কিছু না বলে আলভির দিকে তাকালো।

শ্রাবণঃ আলভি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের বাড়িতে থাকবে।
মহুয়াঃ সরি ভাইয়া আমি…
শ্রাবণঃ আমার কথাই শেষ কথা।
মহুয়াঃ কিন্তু…
শ্রাবণঃ আমি তোমার কথা শুনছি না। আলভির শরীরে আমাদের রক্ত বইছে আমি কি ওর উপর একটুও অধিকার রাখি না!
মহুয়া চুপ করে রইলো।
শ্রাবণ বের হয়ে গেলো ডাক্তারের সাথে কথা বলতে।
মহুয়া ক্লান্ত শরীর নিয়ে আলভির পাশে বসলো। কি হচ্ছে! কেনো হচ্ছে! জানা নেই। শুধু এই শহর থেকে পালাতে হবে।

______________

নির্জনের পাগলামি বাড়ছে। রাত দিন ছোঁয়া কে কল দেওয়া এটাই এখন ওর কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছোঁয়া রেগে মোবাইল বন্ধ করে রেখেছে, একটা ব্লক করলে আরেকটা দিয়ে কল বিরক্ত হয়ে গেছে ছোঁয়া।

নির্জন ছোঁয়ার নাম্বার বন্ধ দেখে গায়ে শার্ট দিয়ে বেরিয়ে গেলো পেছন থেকে তাকিয়ে রইলো হালিমা বেগম। ছেলে কাজে যায় না, কারো সাথে কথা বলে না, ঠিক মতো খাবার খায় না। দুই দিনে কেমন হয়ে গেছে। ছেলের এই অবস্থার জন্য কি সত্যি আজ নিজে দায়ী!.? মেঘলা এসে হালিমা বেগমের হাতের উপর হাত রাখলো, উনি চমকে তাকালেন।
মেঘলা হেঁসে বললো,’ মাঝে মাঝে আমরা সব কিছু চোখের সামনে দেখেও ভুল করে বসি। ‘
হালিমা বেগম তাকিয়ে রইলেন মেঘলার দিকে।

_______________

ছোঁয়া নির্জনের দেওয়া শেষ চিঠিটাও পুড়াইয়া ফেলতেসে, বইয়ের মধ্যে থেকে শেষ ফুলটাও ফেলে দিতেসে, আর নির্জন তা দেখে বলে উঠলো ,’ ফুলটা ফেলে দেওয়ার সময় তো অন্তত আমার কথা মনে পড়সে? কী ভয়ঙ্কর হাহাকার হয়েছে বুকে.?!!

নির্জনঃ তোমার আমার এই ভালোবাসা দরকার ছিলো, প্রেম দরকার ছিলো, পাওয়া দরকার ছিলো, আবার এই হারাইয়া ফেলাটাও আসলে দরকার ছিলো। চোখের মধ্যে নদী না হইলে এতো যে ভালোবাসি, সেটাই বা আমরা বুঝতাম কেমনে, বলো?

ছোঁয়াঃ আমার আজ না ফিরে পাওয়ার আকুতি , জাস্ট মনে রাখার আকুতি। আমার হৃদয় যে ছিন্নভিন্ন হয়ে ছিল তা মনে রাখার আকুতি। আমি চাই তুমিও আমারে ভুলে যাও।আমাদের যে এতো এতো অপ্রয়োজনীয় কথা, সেই কথাগুলোও ভুলে যাও।
নির্জনাঃ তুমি তো আমারে বলসিলা, আমার নাম ধরে তুমি প্রার্থনা করো। এখনও কি করো? নাকি এখন আমার নামরে ভয় পাও?

ছোঁয়াঃ আমার সেই এক চেহারাই আছে।
তোমারও সেই আগের চেহারাই আছে।
খালি মাঝখান থেকে আমরা দুজনেই কোথায় যেন হারাইয়া গেলাম, হারাইয়া ফেললাম নিজেদের!!

ভালোবাসা আমাদের জন্য যেমন জরুরি ছিলো, তেমনি জরুরি ছিলো আমাদের এই বিচ্ছেদও!!

নির্জনঃ শেষ বার কি একটা চান্স দেওয়া যায় না! একবার সুযোগ দেওয়া যায় না.?
ছোঁয়াঃ ফিরে যাওও।
নির্জনঃ তোমাকে ছাড়া আমি এক পা ও নড়ছি না।।
ছোঁয়াঃ সারাজীবন অপেক্ষা করলেও আমি ফিরছি না।

___________

বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামতে ভেতর থেকে বেরিয়ে আসলো মহুয়া, মিম, শ্রাবণ, আলভি শ্রাবণের কোলে।

মহুয়া অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে রইলো বাড়িটার দিকে আজ কতোগুলো বছর পর বাড়ির আঙ্গিনায় দাঁড়িয়ে রইলো। বাড়িটা সেই আগের মতোই আছে।

গেইটের দারোয়ান পাল্টেছে।
শ্রাবণ আগে আগে আলভিকে নিয়ে ভেতরে গেলো৷

আহনাফ সিঁড়ি দিয়ে নামছিল শ্রাবণের কোলে আলভিকে দেখে থেমে গেলো।

আমেনা বেগম ছেলের কোলে বাচ্চা দেখে জিজ্ঞেস করলেন কে সে.?
শ্রাবণ আলভিকে নিয়ে মেয়ের কোলে তুলে দিল।

শ্রাবণঃ ভালো করে তাকিয়ে দেখুন ত!
আমেনা বেগম আলভির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ এ-যে আমার ছোট আহনাফ। ‘

তখনি মেইন দরজা দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলো মহুয়া।

হালিমা বেগম রান্না ঘর থেকে বের হয়ে মহুয়াকে দেখে অবাক হয়ে গেলেন।

আমেনা বেগম তখনো আলভিকে দেখতে ব্যাস্ত। আলভি আমেনা বেগমের কাঁধে মাথা রেখে চুপচাপ জড়িয়ে ধরে আছে।

আমেনা বেগম মনে হলো উনি ছোট আহনাফ কে কোলে নিয়ে রেখেছেন, কি শান্তি বাচ্চাটার জড়িয়ে ধরায়, অশান্ত মন শান্ত করার ক্ষমতা রাখে।

” মহুয়া”

মহুয়া নামটা শুনতে সবাই দরজায় তাকায়।

হালিমা বেগম দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন মহুয়াকে। মহুয়া নিজেও জড়িয়ে ধরলো।

আহনাফ মহুয়াকে দেখেই নিজের রুমে চলে গেলো।

মহুয়া এসেছে শুনে মেঘলা আস্তে ধীরে নেমে আসলো।

মেঘলা কে দেখে এই প্রথম মহুয়া আপু বলে জড়িয়ে ধরলো । মেঘলা অবাক হলো মহুয়ার মুখে আপু ডাক শুনে।

আমেনা বেগম একবার আলভির আরেক বার মহুয়ার দিকে তাকালো। বুঝতে বাকি নেই আলভি মহুয়ার ছেলে উনার নাতি।খুশিতে আমেনা বেগম আলভিকে বুকে জড়িয়ে ধরলো।

মহুয়া এসে শাশুড়ী কে সালাম জানালো, আমেনা বেগম মহুয়াকে এক হাতে জড়িয়ে ধরলো।

আজ বাড়িতে খুশির ঢেউ খেলছে, বাড়ির প্রাণ গুলো বাড়িতে ফিরে এসেছে।

আমেনা বেগম আশেপাশে আহনাফ কে খুঁজলো। খুঁজে না পেয়ে আলভিকে নিয়ে যেতে শুরু করলো আহনাফের রুমের দিকে।

চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে