মেঘের আড়ালে রোদ ২ পর্ব-০৬

0
98

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#সিজন_2
#পর্ব_৬
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

ছোঁয়া হসপিটাল থেকে বের হলো। মহুয়া কে অনেক বার বলেছে মিম কে সাথে দিয়ে দিতে। মেয়েটার একটু রেস্ট প্রয়োজন কিন্তু মিম কিছুতেই মহুয়া কে হসপিটালে একা রেখে কোথাও যাবে না।

মিমের মহুয়ার প্রতি ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ হলো ছোঁয়া। সব বিষাদের পরেও মনে একটু শান্তি পেলো কেউ ত আছে আমাদের ভালোবাসে তাদের জন্য আমাদের ভালো থাকতে হবে, বেঁচে থাকতে হবে।

হসপিটাল থেকে বের হয়ে দেখলো সকাল পাঁচটা বাজে হাঁটা শুরু করলো বাসা বেশি দূরে নয়। একটু সামনে যেতে একটা বাইক আসতে দেখলো, বাইকটা বাতাসের চেয়েও দ্রুত এসে থামলো ছোঁয়ার সামনে।

ছোঁয়া ভ্রু কুঁচকে নিলো। বাইকের ছেলেটাকে চিনতে ভুল হলো না। কিন্তু এই লোক এখন এখানে কেনো.? আবার কি কাহিনী করতে চাচ্ছে.?

নির্জন বাইক থেকে নেমে চুল গুলো পেছনে টেনে নিলো। ছোঁয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই ছোঁয়া চোখ মুখ শক্ত করে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইলো।

নির্জন ছোঁয়ার সামনে হাত দিয়ে রাস্তা আঁটকে দাঁড়ালো।
ছোঁয়া নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে এক হাত দিয়ে অন্য হাত খামচে ধরল।

নির্জনঃ কিছু কথা ছিল।
ছোঁয়াঃ আমার আপনার সাথে কোনো কথা নেই।
নির্জনঃ ছোঁয়া জেদ না করে বাইকে বস।
ছোঁয়া নির্জনের হাত এক ঝটকায় সরিয়ে সামনের দিকে হাঁটতে লাগলো।

নির্জন ছোঁয়ার পিছু পিছু হাঁটতে শুরু করলো।

নির্জনঃ ছোঁয়া তোর সাথে আমার ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে পাঁচ মিনিট সময় দে।
ছোঁয়া কাধের ব্যাগটা ঠিক করে নির্জনের দিকে ফিরে বলে উঠলো, ‘ ঘরে নতুন বউ রেখে রাস্তায় মেয়েদের পিছু পিছু ছুটতে লজ্জা করছে না! কাকে কি বলি! আপনাদের মতো ছেলেদের লজ্জা আছে নাকি।’

নির্জন হেঁসে বললো,’ এখনো লজ্জাহীন কিছু করিনি তাও লজ্জা নেই বলছিস! আচ্ছা কিছু করেই না হয় লজ্জাহীন হই।’

ছোঁয়া রাগে ফুঁসে ওঠলো।
ছোঁয়াঃ ছিঃ আমার চোখের সামনে থেকে একশো হাত দূরে থাকুন।

নির্জন দুই পা সামনে এসে ছোঁয়ার একদম কাছে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো, ‘ আজ থেকে ঠিক এতোটাই কাছে থাকবো যতোটা কাছে থাকলে একজনের নিশ্বাসের শব্দ অন্য জন অনুভব করে।

ছোঁয়াঃ নিশ্চয়ই উল্টা পাল্টা কিছু খেয়ে এসেছেন! কি সব বলছেন!.?
নির্জনঃ ছোঁয়া সব ভুলে…..
ছোঁয়াঃ চুপপপপপ!!! বাসায় আপনার বউ অপেক্ষা করছে।
নির্জনঃ বউ!! বউ ত আমার সামনে। আমার হবু বউ.. প্রেমিকা।
ছোঁয়াঃ আপনার লজ্জা হওয়া উচিত। এতোটা নিচ মনমানসিকতা কিভাবে হয় একজন মানুষের! এতো কিছুর পর এইসব বলছেন!.? কেনো আসেন বার বার! আমি ত ভালো আছি, আমাকে আর কিভাবে শেষ করবেন!.? কি করলে আপনার মন শান্ত হবে.?

নির্জনঃ তুই আমার হয়ে যা আমি শান্ত।
ছোঁয়া হাসতে হাসতে বলে উঠলো, ‘ আজ দেখি আপনার ভালোবাসা আকাশ থেকে টপকে পড়ছে! কই ছিলেন সেই দিন.? কোথায় ছিল সেই দিন আপনার ভালোবাসা.? যখন আমার আপনাকে ভীষণ পাশে প্রয়োজন ছিল তখন আপনি পালিয়ে গেলেন আমার জীবন থেকে। আমাকে অস্বীকার করে নতুন কিছুতে জড়িয়ে গেলেন। আমার চোখের সামনে থেকে বহু দূরে থাকুন। ঘৃণা করি আমি আপনাকে আর আপনার বিষাক্ত প্রেম কে। ঘরে বউ বাহিরে প্রেমিকা ঘৃণা করি আপনাদের মতো পুরুষদের, আপনারা সাপের চেয়েও বিষাক্ত। আমাকে আপনার রাস্তার মেয়ে মনে হয়!

নির্জন কিছু বলতে চাইলে ছোঁয়া ওকে চুপ করি দিলো। তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,’ আমিও দেখিয়ে দিব ছোঁয়া ভালো থাকতে পারে, নির্জন ছাড়াও ছোঁয়া ভালো থাকতে পারে।খুব জলদি খুশির খবর যাবে’

ছোঁয়া কাঁধের ব্যাগ ঠিক করে হাঁটতে লাগলো। পেছন থেকে তাকিয়ে রইলো নির্জন আজ তার মুখে কোনো কথা নেই। ছোঁয়া ত ভুল কিছু বলেনি। কোথায় ছিল সে.? কেনো মা কে থামায়নি! কেনো ছোঁয়ার পাশে আশ্রয় হয়ে দাঁড়ায়নি.! কেনো সবার সামনে ছোঁয়ার ভালোবাসা তুচ্ছ করে নতুন কাউকে জড়িয়ে ছিল! আজ এইদিনের জন্য দায়ী কে!..??? ওর বাবার খুনে ত ছোঁয়ার হাত ছিল না! নিরুপমা নিজ হাতে ভাইয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য স্বামী কে খু’ন করে ছিল। তাও আজ তাদের কেনো শাস্তি পেতে হচ্ছে।

________________

সকালে ঘুম থেকে চোখ খুলে তাকালো আলভি। মহুয়া ছেলেকে বুকে জড়িয়ে খাবার খাওয়ালো, মেডিসিন খাইয়ে বসতেই একজন নার্স এসে বললো স্যার আপনাকে উনার ক্যাবিনে ডাকছে।

মহুয়ার ভয়ে ভেতর কেমন করে উঠলো। মিম বোনের ভয়ে চুপসে যাওয়া মুখটার দিকে তাকিয়ে হাসলো।

মহুয়া ঘোমটা টেনে ধীর পায়ে আহনাফের ক্যাবিনের ভেতর গেলো।
ভেতরে পা দিতেই থমকে গেলো৷ নাকে এসে ঠেকল তরতাজা বেলীফুলের ঘ্রাণ।

আহনাফ একবার মহুয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। কি আজব মুখ ডেকে নিলে কি নিজেকে আড়াল করা যায়!.?

মহুয়া কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।

আহনাফঃ বসুন।
মহুয়া বসলো।

আহনাফ ল্যাপটপে কাজ করছে, পাক্কা আধাঘন্টা মহুয়া বসে রইলো।
আহনাফ না ওকে কিছু বলছে আর না যেতে বলছে।

আধা ঘণ্টা পর আহনাফ কাজ রেখে মহুয়ার দিকে কিছু কাগজ এগিয়ে দিল।

মহুয়া মনে মনে বিরক্ত হলো, এইসব কাগজ নার্স দিয়েও পাঠিয়ে দেওয়া যেত। এতোক্ষণ শুধু শুধু বসিয়ে রাখলো। সব পেসেন্টের সাথেই কি এমন করে..?

মহুয়া উঠে যেতে নিলে আহনাফ বলে উঠলো, ‘ দাঁড়ান ‘
মহুয়া দাঁড়িয়ে রইলো।
আহনাফঃ আপনার স্বামী কে বলবেন দেখা করতে, এখানে কোথাও আপনার ছেলের বাবার নাম লেখা নেই।
মহুয়া কঠিন কন্ঠে বলে উঠলো , ‘ ওর বাবার এখানে কি কাজ!.? যতটুকু প্রয়োজন আমি মা হয়ে কি সামলাতে পারছি না.?’
আহনাফ কিছু বলতে চাইলে মহুয়া বলে উঠলো, ‘আমার এখন আসতে হবে আমার ছেলে হয়তো আমাকে খুঁজছে।’

আহনাফ কিছু বললো না।

মহুয়া বের হতে গিয়ে দরজার সাথে ধাক্কা খেলো। কপালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো, ব্যাথাটা একটু বেশিই পেয়েছে।
আহনাফের মহুয়ার আগের কথা মনে পরে গেলো। হসপিটাল আসলেই মহুয়া আহনাফের সামনে পরে যেতো,ধাক্কা খেত।

মহুয়া কপালে হাত দিয়ে বেরিয়ে গেলো।

আহনাফ অন্য দিকে ফিরে হাসলো। নিজের হাসির উপর নিজেই বিরক্ত হলো। ওকে দেখার পর এতো বছর ধামাচাপা দেওয়া অনুভূতি গুলো আবার জেগে উঠছে এমনটা আহনাফ কখনো চায় না। নিশ্চয়ই বিয়ে করে নতুন সংসার সাজিয়ে নিয়েছে, বাচ্চাও আছে। আচ্ছা ওই বাচ্চাটা কি রেখে ছিল.? নাকি… আর কিছু ভাবতে চায় না আহনাফ। ওই বাচ্চা ত ওর নয় যা ইচ্ছে করুক। তাহলে কি বাচ্চা মাহিনের ছিল.? মাহিন ত তাই বলে ছিল। আমি জানিনা আমার মধ্যে কিসের কমতি ছিল, আমার এতো ভালোবাসার পরও তোমার অন্য কারো সান্নিধ্য লাগলো।

মহুয়া ছেলের পাশে বসে মাথায় হাত রাখলো। ছেলেটা হয়েছে একদম আহনাফের মতো। একে দেখেও কি আহনাফের কিছু ফিল হয়নি! ছেলের এতো কাছে এসেও কি ছেলের প্রতি টান অনুভব করেনি! একবার ও মনে হয়নি আমার খুব কাছের কেউ, রক্তের টান অনুভব করেনি!…??

ছেলেটা ছোট হলেও সে জেনো মা কে খুব ভালো বুঝে, এই যে মহুয়া কাঁদছে ছোট ছোট হাত দিয়ে মহুয়ার চোখ মুছে দিচ্ছে।

” আপনার ব্যাগ”

আহনাফের কন্ঠ পেতেই মহুয়া দ্রুত ঘোমটা টেনে নিলো।

আহনাফ ভেতরে এসে আলভির গালে হাত রাখলো।

আহনাফঃ কেমন আছো গুড বয়..?
আলভিঃ ভালো, ভালো আঙ্কেল।
আহনাফঃ ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করো ত.?
আলভি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝালো।
আহনাফ আলভির চুল গুলো ঠিক করে দিয়ে বললো” গুড বয়”

মহুয়া অবাক হলো ওদের কথা শুনে। ভালো আঙ্কেল! এরা কি আগে থেকে একজন অন্য জনকে চিনে.?

আহনাফ আরও কিছু কথা বললো আলভির সাথে। যাওয়ার কথা বলতেই আলভি আহনাফের আঙ্গুল শক্ত করে ধরে রাখলো।

বাচ্চা ছেলে সে ত কিছুই বুঝে না, যার কাছে ভালোবাসা, আদর পায় তাকেই আপন মনে করে। আলভির কাছে এখন আহনাফ ডাক্তার নয়, সে ত ডাক্তার কি বুঝে না সে মনে করছে আহনাফ ওর বন্ধু, ভালো আঙ্কেল।

মহুয়া ছেলেকে বললো আহনাফের আঙ্গুল ছেড়ে দিতে। কিন্তু আলভি কিছুতেই আহনাফ কে ছাড়বে না।

আহনাফ টোল টেনে আলভির পাশে বসলো।

মিম বাহির থেকে এসে আহনাফ কে দেখে আর ভেতরে আসলো না। মিম কে দেখলেই চিনে ফেলবে সেটা ভেবে মিম চলে গেলো।

আহনাফ আলভির সাথে গল্প করছে মহুয়া দাঁড়িয়ে তা দেখছে, হঠাৎ করে ভীষণ রাগ হচ্ছে মহুয়ার। নিজের ছেলের পাশে আহনাফ কে দেখে রাগ হচ্ছে, একদম সহ্য হচ্ছে না , যেই লোক নিজের সন্তান কে অস্বীকার করেছে সেই লোক কেনো আজ আমার সন্তানের পাশে!?

মহুয়া রেগে বললো,’ আমার ছেলে এখন ঘুমাবে! ‘
আহনাফ আলভির দিকে তাকিয়ে বললো,’ ঘুমাবে..?’
আলভিঃ না.. আম্মু আত্তু পর।
আহনাফ মনে মনে হাসলো, মহুয়া বিরক্ত হচ্ছে! রেগে যাচ্ছে এটা জেনো ওকে ভীষণ মজা দিচ্ছে।
আহনাফ মহুয়ার দিকে ফিরে বললো,’ নিজেকে আড়াল করতে চাইলে পুরোপুরি ভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়,… মহুয়ার সামনে এসে গলার চেইনটা এক টানে নিজের হাতে নিয়ে নিল।’

মহুয়া সাথে সাথে পাথর হয়ে গেল। কখন গলার চেইনটা দেখা গেলো!.?

আহনাফ চেইনটা নিয়ে সাথে সাথে বের হয়ে গেল। পেছনে পাথর বানিয়ে রেখে গেলো মহুয়াকে। সে জেনো নরতে ভুলে গেলো। এভাবে ধরা পড়বে হয়তো ভাবতে পারেনি।

তিনদিন পর বাড়িতে চলে যাবে, আহনাফের মুখোমুখি আর কখনো হবে না। যেই মানুষ নিজের সন্তান কে অস্বীকার করে, ভালোবাসার মানুষ কে অবিশ্বাস করে আর যাই হোক তার মুখোমুখি হতে চায় না মহুয়া।

______________

শ্রাবণ ঘরে প্রবেশ করে দেখলো মেঘলা কারো সাথে কথা বলছে, শ্রাবণ কে দেখে কল কেটে দিল।

শ্রাবণ মুচকি হেঁসে বললো, ‘ মামির সাথে কথা বললে!.?’
মেঘলাঃ হুম।
শ্রাবণঃ ওরা কেমন আছে..?
মেঘলাঃ ভালো না মহুয়া হসপিটালে এসেছে। আলভির এক্সিডেন্ট হয়েছে।

শ্রাবণ শার্ট খুলতে গিয়ে থমকে গেলো। দ্রুত শার্টের বোতাম লাগিয়ে বললো,’ কোন হসপিটালে.? বেশি কিছু হয়নি ত.? ও ঠিক আছে ত.?’
মেঘলাঃ শান্ত হও।
শ্রাবণঃ এমন খবর শুনে আমি শান্ত কিভাবে থাকি মেঘলা। হসপিটালের নাম বলো।
মেঘলা হসপিটালের নাম বললো। শ্রাবণ কোনো দিকে না তাকিয়ে বের হয়ে গেলো হসপিটালের উদ্দেশ্যে।

মেঘলা পেছন থেকে তাকিয়ে দেখলো শ্রাবণ ভয়ে ছটফট করা মুখটা। শ্রাবণ আর মেঘলা সব সময় দূর থেকে খেয়াল রেখেছে মহুয়া আর আলভির। মামির সাথে যোগাযোগ থাকলেও মহুয়া কে বুঝতে দেয়নি। আলভিকে কতোটা ভালোবাসে শ্রাবণ মেঘলা জানে। মানুষ নিজের সন্তান কেও এতোটা ভালোবাসে না শ্রাবণ আলভিকে যতোটা ভালোবাসে। মহুয়া কি রিয়াকশন দিবে এতো বছর পর শ্রাবণ কে দেখে!..?

মেঘলা নিজেও রেডি হয়ে রুম থেকে বের হলো। আমেনা বেগম মেঘলাকে জিজ্ঞেস করলো এমন অবস্থায় একা একা কোথায় যাচ্ছে.? আমেনা বেগম নিজে ওর সাথে যেতে চাইলো কিন্তু মেঘলা কিভাবে হসপিটালে নিয়ে যাবে! মেঘলা খারাপ লাগছে বলে আবার নিজের রুমে চলে গেলো। আমেনা বেগম চিন্তিত হয়ে মেঘলার পিছু পিছু মেঘলার রুমে গেলো। মেয়েটার আজকাল শরীর একটু বেশিই খারাপ থাকে।

_______________

নির্জন দুই ঘন্টা ছোঁয়ার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে চিৎকার চেচামেচি করলো।

নিরুপমা রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে।

ছোঁয়া বারান্দা দিয়ে তাকালো নিচে। রাস্তার মাঝে বসে আছে নির্জন।

ছোঁয়া বাসায় এসে শুনেছিল নির্জনের বিয়ে হয়নি মেয়ে বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালিয়ে গেছে। তাতে ওর কি! নারী যেমন অসম্ভব ভালোবাসতে জানে ঠিক কষ্ট পেলে তার দ্বিগুন ঘৃণাও করতে পারে, এক বার দুই বার তিন বারের সময় তারা আর ফিরে তাকায় না।

ছোঁয়া দরজা খুলে নিচে নেমে আসলো। নির্জনের সামনে গিয়ে বলে উঠলো, ‘ আপনি কি চাচ্ছেন আমি লোকজন ডাকি.!? আপনার এমন আচরণে আমরা সহ আশেপাশের লোকজন বিরক্ত হচ্ছে! একজন পালিয়ে গেছে আরেকজন খুঁজে নেন এখানে কি!.? আপনার জন্য মনে হচ্ছে আমাদের বাসা ছেড়ে দিতে হবে।ভদ্র ভাবে কথা বলছি দ্বিতীয় বার আপনাকে এই এলাকায় দেখলে আপনার এমন অবস্থা হবে নিজেকে নিজে চিনবেন না। নিজের মায়ের আঁচলের নিচে বসে থাকুন।

নির্জন প্রচুর ড্রিংক করেছে মাতাল অবস্থায় কিছুই বুঝলো না ছোঁয়ার কথার। সে ছোঁয়ার হাত ধরতে চাইলে ছোঁয়া এক ঝটকায় দূরে সরে গেলো। নির্জনের থেকে খুব বাজে গন্ধ আসছে।

নির্জন বিরবির করে কিছু বলছে ছোঁয়া তা শুনার একটুও আগ্রহ দেখালো না। একটা টেক্সি ডেকে বাড়ির ঠিকানা বলে জোর করে নির্জনকে গাড়িতে তুলে দিল।

নির্জন বাসায় হেলতে দুলতে ঢুকলো।
আমেনা বেগম ওকে ধরতে চাইলে এক ঝটকায় ছাড়িয়ে বলে উঠলো, ‘ কাছে আসবে না কেউ’

নিজের রুম থেকে দৌড়ে বের হয়ে আসলো হালিমা বেগম। ছেলের এই কি অবস্থা! কখনো সিগারেট না স্পর্শ করা ছেলে আজ মাতাল হয়ে বাড়ি ফিরেছে!

নির্জন হেলতে দুলতে নিজের রুমে গেলো।

আমেনা বেগম হালিমা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,,’ এখন তুই খুশি!.? খুশি হয়েছিস ছেলের এমন অবস্থা দেখে!.? এটাই ত চেয়ে ছিলি।
হালিমা বেগমঃ ভাবি…
আমেনা বেগমঃ চুপপপপ!!

নির্জন রুমে এসে বাচ্চাদের মতো কাঁদতে শুরু করলো । প্রথমে যদি আজকের মতো বুঝত তাহলে আজ ছোঁয়া ওর থেকে দূরে যেত না। কেনো সেই দিন ও ছোঁয়ার হাত ধরেনি! কেনো ছোঁয়ার পাশে থাকেনি! কেনো সেই সময় ছোঁয়ার হাত ছেড়ে দিয়ে ছিলো! কেনো মা কে বুঝায় নি! এতে ত নিরুপমা বা ছোঁয়ার কোনো হাত ছিল না। এই আপসোস সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে।

রাত গভীর বারান্দায় গিটার নিয়ে বসে আছে নির্জন, আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলো আজকের আকাশে চাঁদ নেই অন্ধকার রাত। চাঁদেরও বুঝি আজ মন ভালো নেই!? চাঁদ ও কি আজ দুঃখ লুকাতে আড়ালে আছে! ??

গিটারে টুংটাং শব্দ তুলল..

” সেই তুমি, কেন এতো অচেনা হলে,
সেই আমি, কেন তোমাকে দুঃখ দিলেম..?
কেমন করে এত অচেনা হলে তুমি.?
কিভাবে এত বদলে গেছি এই আমি.?
ও বুকেরই সব কষ্ট দু’হাতে সরিয়ে,
চল বদলে যাই..
তুমি কেন বুঝোনা..?
তোমাকে ছাড়া আমি অসহায়
আমার সবটুকু ভালোবাসা তোমায় ঘিরে,
আমার অপরাধ ছিল যতটুকু তোমার কাছে..
তুমি ক্ষমা করে দিও আমায়…

চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে