#গল্পঃমেঘবতী
#পর্বঃ০৪
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
প্রিসাঃআপনারা?(অবাক হয়ে)
(প্রিসা দরজা খুলে দেখে লম্বা চওড়া দুটো ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।একজন নীল টি-শার্ট এবং আরেকজন লাল টি-শার্ট পরিহিত।দুজনের কাঁধেই বড় একটা ব্যাগ এবং হাতে একটা লাগেজ।এদের কাউকেই প্রিসা চেনেনা তাই হঠাৎ দেখাই অবাক হয়ে গিয়েছে।)
—- হেই ইউ,এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?(লাল টি-শার্ট ওয়ালা)
—- ইয়াপ,এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছো কেন এন্ড হু আর ইউ?তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না।(নীল টি-শার্ট ওয়ালা)
—- দেখো মনে হচ্ছে কাজ করে এই বাড়িতে কাজ করে।(লাল টি-শার্ট ওয়ালা।)
প্রিসাঃ(কি!কাজের মেয়ে?রিয়েলি?-মনে মনে)দেখুন,আমি……….
—- তাই নাকি।তাহলে এই নাও(প্রিসার দিকে নিজের ব্যাগটা বাড়িয়ে)এটা নিয়ে ভিতরে এসো।(নীল টি-শার্ট ওয়ালা)
বলে ভিতরে যেতে নেবে তখন প্রিসা তাদের পথ আটকে দাঁড়ায়।
প্রিসাঃকোথায় যাচ্ছেন হ্যাঁ?আর কে আপনারা?কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ করেই কোথা থেকে উড়ে এসে ঘরে ভেতরে চলে যাচ্ছেন।
লাল টি-শার্ট ওয়ালাঃএই পিচ্চি মেয়ে তোমার সাহস তো কম না তুমি আমাদের পথ আটকাচ্ছো।(হালকা রেগে)
প্রিসাঃতো আটকাবো নাতো কি বাড়ির ভেতরে ঢোকার জন্য নিমন্ত্রণ করবো?দেখুন আমার মনে হচ্ছে আপনারা ভুল ঠিকানায় চলে এসেছেন।
নীল টি-শার্ট ওয়ালাঃএটা ডাঃআকাশ এবং ডাঃমিতা চৌধুরীর বাড়ি তো?
প্রিসাঃহ্যাঁ কিন্তু……
নীল টি-শার্ট ওয়ালাঃতাহলে ঠিক আছে।ব্রো চলে আয়।
বলে প্রিসাকে ওভারটেক করে নীল টি-শার্ট ওয়ালাটা ভিতরে চলে যায়।
প্রিসাঃআরে ওই নীল টি-শার্ট…….
লাল টি-শার্ট ওয়ালাঃএইযে শুনো আমার আর ভাইয়ের ব্যাগগুলো নিয়ে ভেতরে চলে আসে।
বলে লাল টি-শার্ট ওয়ালাও ভিতরে চলে যায় আর এদিকে প্রিসা হাবার মতো দাঁড়িয়ে আছে।
প্রিসাঃএটা কি হলো?আমার বাড়িতে এসে আমাকেই কাজের লোক বানিয়ে দিলো আবার নিজেদের ব্যাগগুলোও রেখে চলে গেলো।এই নবাবজাদারা কে?কোথা থেকে উদয় হয়েছে এরা?ভিতরে যাই নয়তো কেমনে জানবো।আরে ধুর আবার এই নবাবজাদাদের ব্যাগগুলোও নিতে হবে।নাহলে না জানি আবার কি করে।
প্রিসা ব্যাগগুলো অনেক কষ্টে ড্রয়িং রুম পর্যন্ত নিয়ে আসে কিন্তু ড্রয়িং রুম এসে প্রিসা যেটা দেখে তাকে তার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম।কারণ প্রিসার মা আর ছেলে দুটো খুব হেসে হেসে কথা বলছো।
প্রিসার মাঃআরে প্রিসা মা এ তুই কি করছিস?
নীল টি-শার্ট ওয়ালাঃফুপি এই মেয়েটা কে?
প্রিসাঃফুপি?(অস্ফুট স্বরে)
প্রিসার মাঃআরে ওতো প্রিসা,আমার মেয়ে।
ছেলে দু’টোঃমেয়ে!(অবাক হয়ে)
প্রিসাঃমা তুমি ওনাদের চেনো?
প্রিসার মাঃআরে চিনবো না কেন,ওরা তো আমার ভাইয়ের ছেলে।তোর মামাতো ভাই অয়ন আর সায়ন।
প্রিসাঃশান্ত মামার ছেলে?
প্রিসার মাঃহুম।
(অয়ন আহমেদ এবং সায়ন আহমেদ দুই ভাই তারা।এতোদিন পুরো পরিবারসহ আমেরিকায় ছিল।কিছুদিন আগেই বিজনেস স্টাডি শেষ করেছে।অয়ন,সায়ন দুজনেই দেখতে অনেক সুন্দর। লম্বা,ফর্সা দুজনের চোহারা,গায়ের সব উচ্চতা প্রায় সবই অনেকটা মিল।শুধু তাদের চোখের মণির রঙের পার্থক্য আছে।অয়নের চোখের মণিগুলো হালকা নীল রঙের আর সায়নেরগুলো ব্রাউনিস টাইপের।)
অয়ন(নীল টি-শার্ট ওয়ালা)ঃফুপি ও তোমার মেয়ে?মানে এ বাড়ির মেয়ে ও?
প্রিসার মাঃহ্যাঁরে বাবা।
সায়ন(লাল টি-শার্ট ওয়ালা)ঃআমরা তো আরো ভেবেছিলাম যে…..।
প্রিসার মাঃকি বলেছিলিস তোরা?
প্রিসাঃকি হলো বলুন কি ভেবেছিলেন?(দাঁতে দাতঁ চেপে)আচ্ছা আমি বলছি,মা ওনারা ভেবেছিলেন যে……
অয়নঃকিছু না ফুপি।আব… ফুপি কিছু খেতে দাও প্লিজ,প্রচুর খিদে পেয়েছে।
প্রিসার মাঃআরে আগে বলবি না,তোরা ফ্রেশ হয়ে আয় ততক্ষণে আমি খাবার নিয়ে আসছি।
প্রিসার মা ওখান থেকে উঠে রান্নাঘরে চলে গেলো।
সায়নঃহাই।(জোরপূর্বক হেসে)
প্রিসাঃ(আমাকে কাজের মেয়ে বলে এখন আমার হাই বলা হচ্ছে।-মনে মনে)
নিজের মনে মনে কথাগুলো বিরবির করে অয়ন আর সায়নের ব্যাগগুলো তুলে তাদের গায়ে ছুড়ে মারে।
অয়নঃআউচ… এই পিচ্চি তুমি পাগল হয়ে গিয়েছো নাকি?এভাবে কেউ ব্যাগ ছুড়ে মারে?
প্রিসাঃকেউ মারে কিনা জানি না কিন্তু আমি মেরেছি আর বেশ করেছি মেরে।আমাকে কাজের মেয়ে বলা না,একদম বেশ হয়েছে।
সায়নঃতো এই কারণে পিচ্চি রেগে বোম হয়ে গিয়েছে।(দুষ্টুমি করে)
প্রিসাঃএই যে শুনুন নবাবজাদারা আমি পিচ্চি নয় কারণ আমার বয়স ১৮+।সো ডোন্ট কল মি পিচ্চি,ওকে।
অয়নঃওকে,বুড়ি।
প্রিসাঃওই বুড়ি কেন বললেন?
অয়নঃকারণ তুমি বললে না তোমার বয়স ১৮+ তুমি পিচ্চি না তার মানে তো তুমি বুড়ি।কি ঠিক বলছি না ব্রো?
সায়নঃএকদম ঠিক ভাই।
প্রিসাঃআহ…… এই আপনারা আমার চোখের সামনে থেকে যানতো।ধুর আপনাদের যেতে হবেনা আমিই চলে যাচ্ছি।
বলে প্রিসা রেগে নিজের রুমে চলে গেলো।
কিছুক্ষণ পর,
প্রিসার মাঃপ্রিসা শুন না মা তুই এই দুটো গ্লাস অয়ন আর সায়নকে দিয়ে আয় না,আসলে আমার একটা ইম্পর্টেন্ট কল এসেছে।
প্রিসাঃহু… ঠিক আছে মা।
প্রিসার মা জুসের গ্লাস দুটো প্রিসাকে দিয়ে কথা বলতে বলতে নিজের রুমে চলে গেলেন।প্রিসা কিছু একটা ভেবে শয়তানি হাসি দিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলো।
প্রিসাঃঠক…ঠক…. ভেতরে আসবো?
সায়নঃএসো।
প্রিসা দরজা ঠেলে ভিতরে ডুকলো।ভিতরে ডুকে দেখলো সায়ন বিছানায় বসে মোবাইল টিপছে কিন্তু অয়ন কোথাই নেই।
প্রিসাঃ নীল টি-শার্ট…. না মানে অয়ন ভাইয়া কোথাই?
সায়নঃভাই তো……..
সায়ন এর আগে কিছু বলবে তার আগেই কট করে ওয়াশরুমের দরজা খুলে গেলো।প্রিসা ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকালো আর সাথে সাথে দিলো একটা চিৎকার।
প্রিসাঃআ…………….।(চোখ বন্ধ করে)
অয়নও হঠাৎ প্রিসাকে দেখে চিৎকার দিয়ে উঠলো।এখন প্রিসা আর অয়ন চিৎকার করছে তাহলে সায়ন কেন বাদ যাবে।সেও চিৎকার দিয়ে উঠলো।
অয়নঃআ………….।ওই তুই চিৎকার করছিস কেন?
সায়নঃকেন করছি?আব… তোরা করছিস তাই আমি করছি।
অয়নঃডাফার একটা আর তুই বলিসনি কেন রুমে কেউ এসেছে।(হালকা রেগে)
সায়নঃওতো এখন এলো তো তোমাকে বলবো কখন?
প্রিসা অনেক আগেই চিৎকার বন্ধ করে দিয়ে চোখ বন্ধ করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
প্রিসাঃআমি কি চোখ খুলবো?
অয়নঃআবার আমাকে টাওয়াল পরা অবস্থায় দেখার ইচ্ছে আছে বুঝি?
প্রিসাঃএই না না।
অয়নঃতাহলে চুপচাপ চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকো,যতক্ষণ না আমি খুলতে বলছি।
অয়ন তাড়াতাড়ি ওয়াশরুম গিয়ে কাপড় পরে আসে তারপর প্রিসাকে চোখ খুলতে বলে।
প্রিসাঃওই আসলে মা আপনাদের জন্য জুস পাঠিয়ে ছিল।আমি এখানে রেখে দিচ্ছি।(পাশেই একটা টেবিলে ট্রে টা রেখে দেয়)আমি এবার আসছি।
আর ওখানে দাঁড়িয়ে না থেকে তাড়াতাড়ি করে ওদের রুম থেকে বেরিয়ে আসে।বাইরে এসে জোরে জোরে কয়েকটা নিশ্বাস নিয়ে তারপর দরজায় কান পাতে।কিছুক্ষণ পর ভেতরের থেকে কিছু আওয়াজ আসে।
অয়নঃওয়াক… থু থু,ছিঃ এটা কি?(মুখ কুচকে)
সায়নঃএটা কোন জুস?আমার তো মনে হচ্ছে এটা লবণের ফ্যাক্টরি।
প্রিসা আর ওখানে দাঁড়িয়ে না থেকে নিজের রুমে চলে আসে।তারপর দরজা বন্ধ করে হাসতে শুরু করে,পুরোই বিছানায় গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা।
প্রিসাঃহাহাহাহা…… কেমন লেগেছে নবাবজাদারা হুম?আমাকে কাজের মেয়ে বলা না তারপর আবার নিজেদের ব্যাগ আমাকে দিয়ে আনানো।একদম ঠিক হয়েছে।আসলেই ওটা জুস ছিল না লবণের ফ্যাক্টরিই ছিল।প্রথমে ভেবেছিলাম মরিচের গুঁড়ো মিশাবো কিন্তু পরে ভাবলাম এটা খুবই পুরোনো আইডিয়া তাই লবণ মিশিয়ে দিলাম।তাও দুজনের গ্লাসে তিন চামচ করে মোট ছয় চামচ,হিহিহিহি।
এসব কিছু বিরবির করতে করতে প্রিসা ঘুমিয়ে পরে,দুপুরের খাবার না খেয়ে।
চলবে………