মিহিদানা পর্ব-০১

0
678

#মিহিদানা

“বহুদিন চেষ্টা করেও যে কথাটা কখনো বলতে পারিনি, সেটা আজকে বলে দিচ্ছি৷ আমি তোমাকে ভালোবাসি। কতটা ভালোবাসি সেটা বললে হয়তো বুঝবে না তুমি। বিশ্বাসও করবে না। তোমার থেকে আমি কিছু আশাও করি না। কথাটা আজ বলা উচিত হলো কি না জানি না, তবে আজ না বললে আর কোনোদিন বলা হতো না। না বলার কষ্ট নিয়ে মরে যেতাম হয়তো। একতরফা ভালোবাসার দুর্দান্ত কষ্টটা আর সহ্য করতে পারছি না। আজ সব বলে দেবার আরেকটা কারণ হলো তুমি চলে যাচ্ছো। তোমার সাথে হয়তো আর দেখা হবে না। হলেও তখন আমরা অনেক দূরের বাসিন্দা। তুমি কষ্ট পেও না। বিদেশে গিয়ে ভালো থেকো। আর জেনো, একজন তোমাকে ভীষণ ভালোবেসে তোমার মঙ্গল কামনা করে।”

সকাল সকাল তুশার মেসেঞ্জার থেকে মেসেজটা পেয়ে ধড়মড় করে উঠে বসল দিহান। তার চোখ ছানাবড়া। তুশা! তুশা তাকে এসব কী লিখেছে!

সে সাথে সাথে কল করতে গিয়ে দেখল তুশার মেসেঞ্জার থেকে তাকে ব্লক করে দেয়া হয়েছে। এ কি যন্ত্রণা! দিহান কললিস্ট থেকে তুশার নাম্বার বের করে কল করে দেখল ব্যস্ত। মানে এখানেও ব্লক! পাগল নাকি মেয়ে?

দিহানের ফ্লাইট আগামীকাল রাতে। এখন এসব বলে মাথা খারাপ করে দেবার কোনো মানে হয়?

তুশা আর দিহানরা পাশাপাশি বাড়িতে থাকত। প্রায় সমবয়সী বলা চলে। দিহান অনার্স শেষ করে মাস্টার্সের জন্য অ্যাপ্লাই করেছিল জার্মানির একটা ইউনিভার্সিটিতে। সেখানে হয়েও গেছে। এদিকে তুশা সেশন জটে পড়ে এখনো থার্ড ইয়ারে গোত্তা খাচ্ছে। কবে মুক্তি পাবে তার ঠিক নেই।

তুশারা আগে ভাড়া থাকত৷ নিজের বাড়ি করার পর চলে গেছে অন্য এলাকায়। ক্লাস টেন পর্যন্ত ওরা বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। দূরে চলে যাওয়ায় আর ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ার কারনে বন্ধুত্বে ভাটা পড়েছে। তবু মাঝেমধ্যে দেখা হয় ওদের। তখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে এক কাপ চা কিংবা ঝাল ফুচকা খেতে খেতে গল্প হয়। মেসেঞ্জারেও কথা হয়। আগে অনার্স শেষ হয়েছে বলে দিহান তাকে টিজ করতে ছাড়ত না, “এখন থেকে আমাকে ভাই বলে ডাকবে।” তুশা ভেঙচি কেটে বলত, “আমার বয়েই গেছে!”

সেই তুশা নাকি তাকে ভালো-টালো বেশে একাকার! এমন কথা তো সে কস্মিনকালেও ভাবেনি। উল্টে তুশাকে কখনো সখনো বলেছে, “তোমার ক্লাসের সুন্দরী মেয়েটেয়ে থাকলে পরিচয় করিয়ে দিও। আর সিঙ্গেল থাকতে ভালো লাগে না।” তুশা তখন খুবই বিরক্ত হয়ে বলত, “ক্যারিয়ারে ফোকাস করো বুঝলে! ওসব মেয়ের পাল্লায় পড়লে ওরা তোমার মগজ আর মানিব্যাগ দুটোই চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে।”

সেই তুশা! দিহানের কিছুতেই বিশ্বাস হতে চায় না। এতই যখন ভালোবাসা সেটা মুখ ফুটে বললে কোন অনর্থ হয়ে যেত? নাকি ভেবেছিল তার ভালোবাসার খবর কোনো মায়াবী জাদুমন্ত্রবলে জেনে যাবে দিহান? তারপর নিজে যাবে তার কাছে?

মা এসে ডাকেন। “কিরে! উঠবি না? খেতে আয়। নাস্তা রেডি।”

দিহান হাতমুখ ধুয়ে টেবিলে খেতে বসে। বাড়িভর্তি আত্মীয়স্বজন এসেছে তাকে বিদায় দিতে। সবার সাথে গল্প করতে করতে খেলেও দিহানের মন ঘুরেফিরে তুশার ঘটনায় চলে যাচ্ছে। আরেকটা ব্যাপার মাথায় খেলা করছে, মা কয়েকদিন আগে গো ধরেছিলেন, “বিয়ে করে যা বাবু। বিদেশ গেলে কেউ সহজে আসে না। পরে বুড়ো হয়ে ফিরবি, তখন মেয়ে পাব কই?”

মা আসলে চান না দিহান বিদেশ গিয়ে সেটেল হয়ে যাক৷ সে নিজেও তেমনটা চায় না৷ তবুও মায়ের চিন্তার অন্ত নেই। বিয়ে করিয়ে দিতে চান যেন বউ রেখে গেলে মায়ের টানে না হোক, অন্তত বউয়ের টানে যেন ফিরি! তার ওপর ছেলে বিদেশী মেয়ে বিয়ে করে নেয় যদি সেই আশঙ্কাও মায়ের মনে ভরপুর!

তবে জল্পনা কল্পনা যাই হোক, মেয়ে পাওয়া যায়নি। আর দিহানের সময়ও স্বল্প বিধায় ব্যাপারটা অল্পের বেশি গড়াতে পারেনি। কিন্তু এখন একরম একটা ব্যাপার সামনে আসবে কে জানত!

দিহানকে অন্যমনষ্ক দেখে মা প্রশ্ন না করে পারলেন না, “তোর কী হয়েছে বল তো! সকাল থেকে দেখছি কী একটা ভাবছিস। চলে যাবি বলে মন খারাপ লাগছে?”

দিহান কী বলবে ভেবে পায় না। বলে দেবে কি?

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে