মায়াবন্দী পর্ব-০২

0
1111

#মায়াবন্দী
#লেখিকাঃ তাসনিম তামান্না
#পর্ব-২

☆☆☆

সকালে দরজা ধাক্কানোর শব্দে সিয়ার ঘুম ভেঙে গেলো। একটু আগেই ও ঘুমিয়েছে। সারারাত কান্না করার ফলে মাথা ভার ভার লাগছেও চোখটাও ব্যাথা করছে। উঠে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ৭:২০ বাজে ঢুলুঢুলু পায়ে দরজা খুলে দেখলো সাইমা মাঝায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সিয়া ভ্রু কুচকে বলল

-কি হইছে (সিয়া)

-কি হইছে মানে কি তোমার পাতা পাওয়া যাচ্ছে না কেনো রাতে ঘুমিয়ে গেলে আর এখনো ঘুমিয়ে আছো এতো ঘুম কই থেকে আসে তোমার (সাইমা)

-চোখ থেকে (সিয়া)

-হইছে এখন ঘুম রেখে বাইরে আসো রং খেলবো সবাই মিলে (সাইমা)

-না আমি এসবের মধ্যে নাই তোরা খেল আমার মাথা ব্যাথা করছে (সিয়া)

সাইমা সিয়ার দিকে তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল

-আপু তোমার চোখ গুলো লাল আর ফোলা ফোলা লাগছে কেনো তুমি কি ঘুমাও নি বাট আমি এসে দেখে গেছিলাম তুমি ঘুমাছো (সাইমা)

-আব আরে রাত ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য উঠে ছিলাম তখন চোখে কি যেনো পড়ছিলো চোখ জালাও করছিলো পানি দিছি অনেক এসব করতে করতে আর রাতে ভালো করে ঘুমাইতে পারি নাই একটু আগেই ঘুমাইছি আর তুই এসে ডাকল (সিয়া)

-বেশি কষ্ট হচ্ছে আপু (সাইমা)

-আরে না যা তোরা মজা কর (সিয়া)

-আচ্ছা আপু তুমি একটু ঘুমিয়ে নাও আবার বরযাত্রী যেতে হবে তো (সাইমা)

সিয়া কিছু বললো না শুধু মুচকি হাসলো। সাইমা চলে যেতেই। সিয়া ফ্রেশ হয়ে নিলো এখন আর ঘুম হবে না ওর একবার ঘুম ভেঙে গেলে সহজে ঘুম আসে না ওর। ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে গেলো ও বাইরে সবাই হইহুলোর করছে সেদিকে পাতা না দিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলো। দেখলো ওর মা চাচীরা রান্না করছে আরো গ্রামের ৩জন মেয়ে আছে।

-আইছেন ঘুমকুমারী (মেজচাচী সাদমানের মা নীলা)

-ইয়েস সেনাপতি (সিয়া)

-সেনাপতি? (নীলা)

-হ্যাঁ আমি যদি ঘুমকুমারী হই তাহলে তুমি সেনাপতি (সিয়া)

-ফাজিল মেয়ে (নীলা)

-এটুকুতেই ফাজিল বলছো যতক্ষণ ও বাড়িতে থাকে ততক্ষণ আমাকে জালিয়ে মারে (সাদিয়া)

-সিয়া তুই তো আমার কাছে একটু যেয়ে বেড়িয়ে আসতে পারিস নাকি ভুলে যাস আমার কথা, ভুলে তো যাবিই আমি কে হই তোর (নীলা)

-ওফ সেনাপতি এমন ছেঁকা মারা কথা বলো না তো তোমার সাথে তো আমার দেখাও হয় কথাও হয় তাহলে (সিয়া)

-হ্যাঁ সে তো আমি তোদের বাসায় গেলে তারপর দেখা হয় তাছাড়া ফোনে এইটুকুতে হয় নাকি (নীলা)

-আমার কথা তো ভুলেই গেছে সবাই (রুবীনা আয়মানের মা বড়চাচী)

সিয়া রুবীনাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল

-ওরে বাবা গো বুড়ির তো দেখি রাগ হইছে (সিয়া)

-এই একদম বুড়ি বলবি না আমাকে জানিস এখনো আমার পিছনে কত ছেলে পড়ে আছে (রুবীনা)

-হ বুঝছি (সিয়া)

-সিয়া তোর চোখ মুখ ওমন লাগছে কেনো (নীলা)

-আসলে মেজম্মু জায়গা চেঞ্জ হওয়ার জন্য ভালো করে ঘুম হইনি তাই হইতো (সিয়া)

তখনই সাদমান ফোন টিপতে টিপতে এসে বলল

-আম্মু আমাকে কিছু খেতে দাও তো খুদা লাগছে (সাদমান)

-টেবিলে গিয়ে বস দিচ্ছি সিয়া তুই ও যা রাতে তো খাসনি (নীলা)

-মেজম্মু তোমাদের সাথে পরে খাবো এখন খেতে ইচ্ছে করছে না (সিয়া)

-একটা মাইর দিবো যা গিয়ে বস শরীরে অবস্থা দেখ আর কদিন পর তো হাড় ছাড়া কিছুই পাওয়া যাবে না (রুবীনা)

সাদিয়া রাগী চোখে তাকালো সিয়ার দিকে একপ্রকার ধমক দিয়ে সিয়াকে খাবার টেবিলে বসিয়ে দিলো। সিয়া একদম সাদমানের সামনা-সামনি চেয়ারে বসেছে। সিয়া একবার সাদমানের দিকে তাকালো সাদমান সবুজ কালারের গেন্জি পরা হলুদ ফর্সা গায়ে সবুজ রংটা বেশ মানিয়েছে, সাদমানের চুলগুলা এলোমেলো, হাতে কালো ঘড়ি একমনে ফোন টিপছে ওর এসব দিকে খেয়াল নাই। সিয়া একবার তাকিয়ে মাথা নিচু করে খাওয়ায় মন দিলো ভুলেও আর সাদমানের দিকে তাকালো না। নিজের মনেই বলল

-বেশি তাকাস না মায়ায় পড়ে যাবি তখন মায়া কাটানো বড় দায় হয়ে যাবে। শত চেষ্টা করেও নিজেকে আর দমাতে পারবি না (মনে মনে বলল সিয়া)

-সিয়া তোর ওয়েট কত রে? (নীলা)

-কেনো মেজম্মু? (সিয়া)

-দরকার আছে বল (নীলা)

-৪৫ কেনো (সিয়া)

-কিহ! অনার্সে পড়িস তুই তোকে দেখে কেউ বলবে তুই অনার্সে পড়িস? সাদিয়া সিয়াকে তুই খেতে দিস না নাকি? (নীলা)

নীলার কথা শুনে সাদমান সিয়াকে একবার স্কেন করে নিয়ে খাওয়ায় মন দিলো আর সিয়া ড্যাবড্যাব করে ওর মা চাচীর দিকে তাকিয়ে আছে।

-ওতো বড় মেয়েকে এখনো মেরে ধরে খাওয়াতে হয় সকালে দুই একদিন খাই আর রাতে এসে খাই দুপুরের খবর জানি না (সাদিয়া)

-কি এই মেয়ে শুনো এর পরের বার যদি ৭০কেজি না হোস তোকে আমার সাথে করে নিয়ে যাবো (রুবীনা)

-কিহ! কি বলো তোমরা আমাকে এমনিতেই মুটকি বলে ডাকে আর মোটা হলে আটার বস্তা বলে ডাকবে দরকার নাই (সিয়া)

সাদমান ভ্রু কুচকে সিয়ার দিকে তাকালো।

-কে বলছে? যে বলছে সে মজা করে বলছে তুই অন্যর কথা শুনে খাবি না (নীলা)

-ওকে বলে লাভ নাই ভাবি কোনো কথা শুনবে না (সাদিয়া)

-আরে থামো তো তোমরা না খেলে মানুষ মরে না খেলে মরে যায় তাড়াতাড়ি সো চিল (সিয়া)

সাদমান চেয়ার ঠেলে উঠে গেলো। সিয়া সেদিকে একবার তাকালো দেখলো সাদমানের খাওয়া শেষ।

-কিসব বলছিস তুই (রুবীনা)

-ওসব বাদ দাও আমার কথা আছে তোমাদের সাথে (সিয়া)

-কি কথা (নীলা)

-আসলে আমি না ওখানে মানে বরযাত্রী যেতে চাইছি না (সিয়া)

-মানে (রুবীনা)

-বড়ম্মু প্লিজ প্লিজ প্লিজ আমাকে জোর করো না ওতো ভীর আমার ভালো লাগে না জানোই তো তোমারা প্লিজ (সিয়া)

-তাই বলে তুই যাবি না (রুবীনা)

-প্লিজ রাগ করো না এমনি তেও রাতে ঘুম হইনি তোমরা চলে গেলে একটা ঘুম দিবো (সিয়া)

-তুই বাসায় একা থাকবি নাকি না না (সাদিয়া)

-আরে ও একা কোথায় সাদমানও তো যাবে না আর সিয়া যখন যেতে চাইছে না তখন থাক (নীলা)

-সাদমান যাবে না কেনো (রুবীনা)

-ও বললো ঘর সাজাবে (নীলা)

-তাহলে আমিও জাবো না আমি ছেলের মা। মাকে যেতে নেই (রুবীনা)

-এটা কিন্তু ঠিক বলে না তুমি, তুমি আজ কালর দিনের মানুষ ছেলে বিয়েতে যাবে না মানে যেতেই হবে আর এটা নিয়ে তো তোমার কত ইচ্ছে (সিয়া)

-হ্যাঁ ভাবি ও ঠিকি বলছে তোমাকে যেতেই হবে (নীলা)

-আচ্ছা যাবো (রুবীনা)

সিয়া খেয়ে রুমে আসলো। সিয়ার মাথায় একটা কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে সাদমান কেনো যাবে না? কাল তো ধমক দিলো যেনো আমি অনুষ্ঠানে না যায় তাহলে?

#ফ্ল্যাসব্যাক

কাল রাতে যখন সিয়া ঘুমাছিলো তখন ওর মুখে উষ্ণ নিশ্বাস পড়তেই ওর ঘুম ভেঙে সাদমানের রক্ত চক্ষু দেখে ওর ঘুম ভব চলে যায়। সাদমান সিয়ার একদম মুখের কাছে থাকায় ওর থরথর করে কাঁপতে থাকে। সাদমান সিয়ার মুখ চেপে ধরে বলল

-দরজা খুলে রেখেছিলি কোন নাগরের জন্য (সাদমান)

সাদমান সিয়ার মুখ এতো জোরে ধরেছে যে সিয়া ব্যাথায় চোখ দিয়ে পানি চলে আসলো।সিয়া সাদমানকে ধাক্কা দিয়ে সরাতে চাইলো কিন্তু পারলো না। সাদমান বলল

-কাল যেনো তোকে বরযাত্রীতে না দেখি আর যদি দেখি তোর অবস্থা যে কি করবো তুই নিজেও জানিস না (সাদমান)

বলে সিয়াকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো সিয়া উঠে বসে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো মুখে ব্যাথায় শব্দ করে কেঁদে দিলো। সাদমান আর একবারও সিয়ার দিকে না তাকিয়ে দরজার সামনে গিয়ে বলল

-যা বললাম তা যেনো মাথায় থাকে আর দরজা লাগিয়ে রাখ এসব রং লিলা অন্য জায়গায় গিয়ে করিস এখানে রংলিলা করলে তোর বাপেরই মান সম্মান যাবে।

আর কিছু না বলে সাদমান চলে গেলো। সিয়া দরজা লাগিয়ে কান্না করতে লাগলো

-আবারও আপনি আমাকে কষ্ট দিলেন আমাকে কষ্ট দিয়ে আপনি কি পান আমি বুঝি না কেনো এমন করেন আমার সাথে আমিও তো একটা মানুষ (সিয়া)

এমন হাজারো বুলি আওড়াতে আওরাতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো।

#বর্তমান

ধেন ভাঙ্গলো সিয়ার ফোনে কল আসলো।’মিস্টার হেন্সাম’ লেখা জ্বলজ্বল করে ভাসছে ফোনের স্কিনে।সেটা দেখে সিয়ার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটলো।

#চলবে
#Tasnim_Tamanna
[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠন মূলক কমেন্ট করবেন]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে