মন শহরে তোর আগমন পর্ব -১০

0
1555

#মন শহরে তোর আগমন
#লেখনীতে – Kazi Meherin Nesa
#পর্ব – ১০

সন্ধ্যায় জিনিয়া আপু আর আমি বসে গল্প করছিলাম, জাফরান এখনও ফেরেনি! কথায় কথায় জিনিয়া আপু আমাকে জিজ্ঞাসা করলো

“তুমি যে বাড়ি ফিরেছ সেটা জাফরান জানে? বলেছো ওকে?”

না সূচক মাথা নাড়লাম আমি

“ওমা, কেনো বলোনি? দাড়াও আমি ওকে ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছি। খুশি হয়ে যাবে”

“না আপু, এখন আর বলতে হবেনা। একটু পরে তো উনি বাড়িতেই ফিরবেন তখন তো এমনিতেই জানতে পারবেন”

“হুমম! সেটাও ঠিক! সারপ্রাইজড হয়ে যাবে তোমায় দেখে। জানো জাফরান তোমার ফেরার জন্যে কতো অপেক্ষা করছিলো? আসলে ও না তোমাকে রেখে আসতে চায়নি, কিন্তু এতদিন পর বাড়ি গেছো তাই আর কয়েকটা দিন যাতে নিজের পরিবারের সাথে সময় কাটাতে পারো এই ভেবে রেখে এসেছিল”

“জানি আপু, জাফরান আমার ভালোর কথা চিন্তা করে। উনি চান আমি যেনো কোনো প্রকার কষ্ট না পাই কিন্তু আজ ওনাকে জানাতে ইচ্ছে হলো না যে। ভাবলাম নিজেই চলে আসি”

“আসলে সেদিন আমি ভাবিনি জাফরান ওইসব কথা বলবে নাহলে আমি ঐভাবে তোমাকে..তুমি রেগে আছো ওর ওপর?”

ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেললাম আমি, জাফরানের ওপর অভিমান আছে আমার। হয়তো এই অভিমান কোনোদিন মিটবে না কিন্তু ওনার ও তো কোনো দোষ নেই এসবে

“জাফরানের ওপর কোনো রাগ নেই আমার, উনি সেদিন যা বলেছেন তার একটাও তো ভুল না। উনি তো আমায় ভালোবেসে বিয়ে করেননি, পরিস্থিতির চাপে আমরা দুজনেই বিয়েতে সম্মতি দিয়েছিলাম। উনি আমায় নিজের বন্ধু বলেছেন, এর থেকে সুন্দর সম্পর্ক হতেই পারে না”

জিনিয়া আপু আমার হাতের ওপর হাত রেখে বললো

“তুমি অনেক ভালো একটা মেয়ে সুরভী, দেখবে আমার ভাই তোমাকে ভালো না বেসে থাকতেই পারবেনা। হয়তো একটু সময় লাগবে কিন্তু ভালো বাসতে ও বাধ্য”

“সে আশা আমি করিনা আপু, জোর করে আর যাই হোক ভালোবাসা যায় না। তাছাড়া ওই আশা করাটা ছেড়ে দিয়েছি আমি। বিশ্বাস আছে ওনার ওপর, ভালো না বাসলেও কোনোদিন আমায় ঠকাবেন না উনি। আমি ভালোবাসার মানুষ না হয় নাই হতে পারলাম, স্ত্রী হিসেবে, বন্ধু হিসেবেই থেকে যাবো। তাতে আফসোস নেই আমার”

“এইটুকু সময়েই জাফরানকে খুব ভালোভাবেই চিনে ফেলেছো দেখছি”

“পুরোটা পেরেছি কিনা জানিনা তবে হ্যা জানার কথা যদি বলো তাহলে বলবো কিছু ব্যাপার আছে যাতে তোমার ভাইয়ের থেকেও তাকে বেশি চিনি আমি। উনি আমায় মনে মনে কি ভাবেন জানিনা, কিন্তু আমার কাছে উনি বিশেষ একটা মানুষ। শুরুতে ওনার সম্পর্কে জানার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিলো না, তবে ধীরে ধীরে ইচ্ছেটা তৈরি হয়েছে”

“জাফরান ও তোমাকে জানতে চায় সুরভী, হয়তো প্রকাশ করে না তবে এই কদিনে আমি লক্ষ্য করেছি ও তোমার প্রতি অনেকটা ডিপেন্ডেন্ট হয়ে পড়েছে। সবসময় শুধু তোমার কথাই বলেছে জানো?”

আপু জাফরান সম্পর্কে আরো অনেককিছু বললেন, এই কদিন নাকি উনি আমার কথাই বলে গেছেন। আমি অবাক হয়ে শুনছিলাম সবটা। মনের মধ্যে এক মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছিলো এগুলো শুনে। উনি আমার কথা ভাবছেন এটা ভালো দিক, আর খারাপ দিক হলো উনি তো আমায় স্ত্রী নয় বরং শুধু আমায় বন্ধু ভেবে মিস করছেন। কিছুটা হতাশা কাজ করছিলো তবে ভালো খারাপ মিলেই তো মানতে হবে সব!
___________________________

ক্যাফেটেরিয়ায় বসে আছে টুকটাক কথা বলছে নাতাশা আর জাফরান। নাতাশা ভীষণ খুশি, সবকিছু একটু বেশী সহজ ভেবে নিচ্ছিলো ও। আজ কথা বলে জাফরানের সাথে পুনরায় সম্পর্ক জোড়া লাগাবে এই মিথ্যে আশায় খুশি হচ্ছিলো ও

“তুই কি এখনও সেই আগের মতোই আছিস জাফরান। একটুও বদলাসনি”

“বদলেছি, আগে দায়িত্ব নিতে ভয় পেতাম। আমি কিছুটা অলস টাইপের ছিলাম সেটা তো জানিস। কিন্তু এখন একটা কোম্পানির দায়িত্ব একা হাতে হ্যান্ডেল করছি। চেঞ্জেস তো এসেছে”

নাতাশা হেসে মাথা নাড়লো

“তারপর বল, এখন কি অবস্থা তোর? বিয়ে করছিস কবে? রায়হান আঙ্কেলকে বল ছেলে দেখতে শুরু করতে। নাকি আমি দেখে দেবো?”

নাতাশা মুচকি হেসে জাফরানের হাতের ওপর হাত রেখে বললো

“বিয়ের কথা যদি বলিস তাহলে বলবো তোর থেকে পারফেক্ট ছেলে আমার জন্যে আর হতেই পারে না। মনে আছে জাফরান ক্রিসমাস ডের দিন তুই আমায় বিয়ের জন্যে প্রপোজ করেছিলি?”

নাতাশার এহেন কথা শুনে নড়েচড়ে বসলো জাফরান। এ ধরনের কথা যে একদম পছন্দ হচ্ছে না ওর। হাত সরিয়ে নিলো টেবিলের ওপর থেকে গম্ভীর স্বরে বললো

“দেখ নাতাশা, এগুলো এখন অতীত আর অতীত ধরে বসে থাকলে তো বর্তমানে এগোনো যাবে না। বেটার এটাই হবে ওসব কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল”

“ঝেড়ে ফেলেছিলাম। ভুলেই গেছিলাম সব কিন্তু সেদিন পার্টিতে তোর সাথে দেখা হওয়া, তোর সাথে কথা বলার পর থেকে আবার পুরোনো কথা মনে পড়ে গেছে আমার। এখন আর ভুলতে পারছি না, সত্যি বলতে ভুলতে চাইছিও না আমি”

“কি বলতে চাইছিস তুই?”

“জাফরান, আমরা কি আবার আগের মতো নিজেদের সম্পর্কটা ঠিক করে নিতে পারিনা? সব ভুলে আগের মতো কাপল হয়ে যেতে পারিনা?”

জাফরান ওর কথায় বিশেষ পাত্তা না দিয়ে কফি খেতে খেতে বললো

“এখন আমি মোটেও মজা করার মুডে নেই নাতাশা। জলদি কফি শেষ কর, আমাকে আবার বাড়ি যেতে হবে”

“তোর মনে হয় আমি মজা করছি? আই অ্যাম সিরিয়াস। আমি চাই আমরা আবার আগের মতো একসাথে হয়ে যাই”

“বোকার মতো কথা বলিস না। এটা এখন সম্ভব নয়। ভুলে যাস না আমরা দুজন অনেক ভেবেচিন্তেই ব্রেকআপ করেছিলাম। তুইও তো তখন এসব থেকে বেরোতে চাইছিলি। তাহলে এখন এই কথার মানে কি?”

“মানছি ডিসিশন আমাদের দুজনের ছিলো কিন্তু এখন আমি রীয়ালাইজ করছি যে ভুল করেছিলাম আমি। তখন তোর সাথে ব্রেকআপ করাটা আমার ঠিক হয়নি”

“এখন পুরোনো কথা তোলাটা বোকামি ছাড়া আর কিছুই না নাতাশা। দুজনের সম্মতিতেই আমরা সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। এখন কিছু আর আগের মতো হবেনা”

“কিন্তু আমরা তো একটা সময় একে অপরকে চাইতাম। তুইও তো আমায় এতো ভালোবাসতিস তাইনা?”

“তুই কি আমাকে এইসব ফালতু কথা বলার জন্যে এখানে ডেকেছিলি?”

“এটাকে তোর ফালতু টপিক মনে হচ্ছে?”

“হ্যা এগুলো ফালতু কথাই! আগের আর এখনকার সময়ের মধ্যে অনেক তফাৎ আছে। এখন আমি ম্যারেড, সুরভী আমার ওয়াইফ সেটা নিশ্চয়ই মাথায় আছে তোর”

“কিন্তু তুই তো আর ওকে ভালোবেসে বিয়ে করিসনি, এন্ড আই অ্যাম সিওর সুরভীও তোকে ভালোবাসে না। জোর করে সংসার করছে ও তোর সাথে”

নাতাশার কথায় কিছুটা অবাক হয় জাফরান কারণ একদিন মাত্র নাতাশার সাথে দেখা হয়েছিলো ওর আর এসব কথা তো সেদিন তোলা হয়নি তাহলে ও জানলো কিভাবে? জাফরান ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো

“তোকে কে বললো এসব?”

“আমি সব জানি জাফরান! খোজ নিয়েছি আমি এই ব্যাপারে। কারণ তোকে আমি চিনি, হুট করে একটা অচেনা মেয়েকে বিয়ে করার মতো ছেলে তুই নস”

“আমাদের সম্পর্কের শুরুতে তিক্ততা থাকলেও এখন সব ঠিক আছে। আরেকটা কথা আমি বুঝেছি যে চেনা কারো থেকে অচেনা কাওকে বিয়ে করাটাই বেটার। অন্তত একজন অচেনা মেয়েকে চেনার মধ্যে, জানার মধ্যে অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে”

“তোর কথা আমি সব বুঝতে পারছি কিন্তু তুই তো ওকে ভালবাসিস না। বিয়ে করলেই তো আর ভালোবাসা হয় না। এমনও অনেক সম্পর্ক আছে যেখানে জোর করে বিয়ে দিতে দেওয়া হয় তারপর বাধ্য হয়ে সংসার করতে হয়”

“তোর হঠাৎ এটা কেনো মনে হলো যে আমি জোর করে ওর সাথে সংসার করছি? সেদিন দেখিসনি তুই? আমরা দুজনে একে অপরের সাথে কতোটা ফ্রি?”

“কিন্তু জাফরান”

জাফরান কিছুটা ধমকের স্বরে বলে

“আমার কথা শেষ হয়নি নাতাশা, কথার মাঝে কথা বলবি না”

চুপ করে যায় নাতাশা, ওর কথা শুনে মাথা গরম হয়ে গেছে জাফরানের। নাতাশার এতোদিন পর এসব কথা বলবে সেটা আশা করেনি ও

“সবার ব্যাপারটা একরকম হয় না নাতাশা। আর কি বললি? জোর করে বিয়ে? আমি নিজের ইচ্ছেতে সুরভীকে বিয়ে করেছি। আর ওর সাথে খুব ভালো আছি, জোর করে সংসার করছি না”

“এভাবে রিয়েক্ট করছিস কেনো তুই? আমি অন্যায় কথা বলছি?”

“অবশ্যই অন্যায় কথা বলছিস। তুই সব জেনেও যদি এরকম ইললজিক্যাল কথা বলিস তাহলে আর কিভাবে রিয়্যাক্ট করবো আমি?”

“জাফরান প্লিজ! এভাবে বলিস না। সেদিন তোকে দেখার পর থেকে আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না। বারবার আমাদের পুরোনো দিনগুলোর কথা মনে পড়ছে। আমি পারছি না রে”

“ব্রেকআপ করার সময় আমাদের মধ্যে কিন্তু এমন কোনো কথা হয়নি যে ভবিষ্যতে আমরা আবার এক হবো! আমাদের ব্রেকআপ মানেই কিন্তু সব শেষ হয়ে গেছে। তুই আমার ফ্রেন্ড দ্যটস ইট”

ফ্যাচ ফ্যাচ করে কেঁদে দেয় নাতাশা, জাফরান চমকে উঠে। এখানে কান্নার কি হলো? আশেপাশের টেবিলের মানুষেরা ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। জাফরান শান্ত স্বরে বললো

“হোয়াটস রং উইথ ইউ নাতাশা? কান্না করার মতো কি বললাম আমি? স্টপ ইট”

“মানুষ মাত্রই তো ভুল হয় বল, তেমন আমারও হয়েছে! তাই বলে তুই এমন করবি? প্লিজ তুই সুরভীকে ছেড়ে দে! আমরা আবার আগের মতো খুব ভালো থাকবো দেখিস”

নাতাশার কথাকে হেসে উড়িয়ে দিলো জাফরান। এই মুহূর্তে নাতাশাকে ওর মেন্টালি আনস্টেবল ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে না

“তুই বলবি আর তোর কথায় আমি ওকে ছেড়ে দেবো? সিরিয়াসলি? এটা মনে হয় তোর? এতো বোকার মতো কথা কিভাবে বলছিস তুই?”

“জাফরান, আমি কিন্তু সিরিয়াস। এভাবে তুই আমার ফিলিংস নিয়ে মজা করতে পারিস না”

“মজা তো তুই করছিস নাতাশা। আর কি বললি ফিলিংস? আমার মনে হচ্ছে তোর আমার প্রতি কোনো ফিলিংস নেই এখন। তুই আসলে আমাকে অন্য কারো সাথে দেখে সহ্য করতে পারছিস না। এটাই প্রব্লেম, এর জন্যে তুই বারবার সুরভীকে আমাদের মধ্যে টানছিস”

“সুরভী আমাদের মধ্যে আছে তাই ওকে টানতে হচ্ছে আমায়”

“কি আমাদের আমাদের করছিস তুই? আমাদের দুজনের মধ্যে কিছুই নেই। ইন ফ্যাক্ট তুই আমার আর সুরভীর মাঝে আসতে চাইছিস। সেটা আমি হতে দেবো না। তোর মাথায় কি চলছে আমি জানিনা, কিন্তু যাই চলে থাকুক ওইসব ভাবনা এখানেই স্টপ কর”

জাফরানের এক প্রকার বিরক্তি লাগছে নাতাশার এইসব কথা শুনে। এখানে আর এক মুহুর্ত থাকার ইচ্ছে নেই ওর। উঠে দাড়ালো জাফরান

“জাফরান, প্লিজ যাস না। আমার পুরো কথাটা একটু ঠান্ডা মাথায় শোন”

“তুই এরপর কি বলবি সেটা আমার বোঝা হয়ে গেছে তাই আর কিছু শোনার ইন্টারেস্ট নেই”

“সুরভী তোর জন্যে পারফেক্ট না জাফরান”

“কিভাবে তুই মাত্র কয়েকটা ঘণ্টা দেখেই ওকে সার্টিফিকেট দিয়ে দিলি যে ও আমার জন্যে পারফেক্ট না? তোর কোনো ধারণা আছে ওর সম্পর্কে? কিছু জানিস না তুই। তাছাড়া তোর সাথে সুরভীর ব্যাপারে কথা বলতেও চাইনা”

“তুই আমাদের দুজনকে কম্পেয়ার করে দেখ, আমি ওর থেকেও তোর জন্যে বেশি পারফেক্ট!”

“আমার ওয়াইফের সামনে তুই কিছুই না নাতাশা। সবার মতো তুইও নিজেকে পারফেক্ট ভাবিস, কিন্তু সুরভীর সম্পর্কে আইডিয়া নেই তোর তাই ওর সাথে নিজের তুলনা করছিস! বন্ধ কর এসব পাগলামি”

নাতাশা ছলছল নয়নে জাফরানকে দেখছে। এই জাফরানকে চিনতে পারছে না ও। ভেবেছিলো সবকিছু সহজেই মিটে যাবে কিন্তু সে যে হবার নয় জাফরানের কথা শুনে আর বোঝা বাকি নেই

“জাফরান”

“আর একটা কথা না নাতাশা।তুই যদি চাস আমরা বন্ধু হিসেবে থাকি তাহলে আমাদের ম্যারেড লাইফ বা সুরভীকে নিয়ে কোনো কথা তোর মুখে শুনতে চায়না। তোর এসব কথাবার্তা আমাদের বন্ধুত্ত্ব ও শেষ করে দিতে পারে নাতাশা। মাইন্ড ইট”

ওখানে আর এক মুহুর্ত দাড়ায়নি জাফরান। ওর চলে আসার পর নাতাশা কান্না করে ফেলে, কফির কাপ ও ফেলে দেয় টেবিল থেকে! এভাবে জাফরান ওকে প্রত্যাখ্যান করে দিয়ে যাবে সে যে আশা করেনি ও। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো কথা শোনালো জাফরান কিন্তু রাগ হচ্ছে ওর সুরভীর ওপর।

“সুরভী, তোমার জন্যে আমার জাফরান আমার সাথে আজ এভাবে কথা বললো। তোমার জন্য ও আমায় চায় না, কিন্তু আমি জানি ও তোমায় ভালোবাসে না। এখনও জাফরান আমাকেই ভালোবাসে! তোমার একটা ব্যবস্থা আমি না হয় করে দেবো! আর তারপর জাফরান আমার হয়ে যাবে”

মনে মনে কথাগুলো ভেবে চোখের পানি মুছে শয়তানি হাসি দিলো নাতাশা, আজ সুরভীর সাথে বিয়ে হয়েছে বলে এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে জাফরান এভাবে চলে গেলো। হয়তো সুরভী না থাকলে জাফরান ওর কাছে ফিরতো এমন ভেবে বসেছে নাতাশা। জেদটা দ্বিগুণ বেড়ে গেলো ওর। জাফরানকে এবার চাইই ওর, যেভাবেই হোক!
____________________________

সবে বাড়ি ফিরলো জাফরান, মেজাজ খারাপ হয়ে আছে ওর। নাতাশার থেকে এরকম ইম্যাচুআর কথাবার্তা এক্সপেক করেনি ও। এসব ভাবনা নিয়েই রুমে ঢুকে সুরভীকে দেখে চমকে ওঠে জাফরান

“তুমি!”

আমি ব্যাগ থেকে জামাকাপড় বের করে আলমারিতে তুলে রাখছিলাম। ওনার দিকে একবার তাকিয়ে আমি আবার কাজে মন দিলাম

“ভূত দেখার মতো এতো চমকানোর কি আছে? আমায় এই প্রথম দেখছেন নাকি?”

“না মানে তুমি কখন এলে?”

“দুপুরে এসেছি”

জাফরান অবাক হয়ে বললো

“হোয়াট? দুপুরে এসেছো? কই আমাকে তো জানালে না যে চলে এসেছো!”

“আপনি তো সেই বাড়িতেই আসবেন, এসেই তো দেখবেন আমায়। তাই আর ফোন করিনি”

জাফরান বসে এক গ্লাস পানি খেলো, তারপর টাই খুলতে খুলতে বললো

“ওহ! হঠাৎ চলে এলে যে? আমাকে জানালে না কেনো? গিয়ে নিয়ে আসতাম, একা একা আসতে হতো না”

“আসলে অনেকদিন তো থেকেছি ওখানে, তাছাড়া আপনাকে বিরক্ত করতে চাইনি তাই চলে এসেছি একাই। আমার আসতে সমস্যা হয়নি”

“তাই বলে এসে আমাকে একটা ফোন করাও প্রয়োজন মনে করলে না? আর আমার বোনটাও তো কিছু জানালো না”

“এখানে জানানোর কি আছে? বাপের বাড়ি গেছিলাম কিছুদিনের জন্যে, আজ শ্বশুরবাড়িতে ফিরলাম এতে আপনাকে ইনফর্ম করতে হবে কেনো? নাকি আমি হুট করে এসে কোনো সমস্যায় ফেলে দিলাম আপনাকে?”

ভ্রু কুঁচকে নিলো জাফরান!

“তোমার ফিরেছো এতে আমার কি সমস্যা হবে? ইন ফ্যাক্ট আই অ্যাম হ্যাপি। সত্যি বলতে মিস করছিলাম তোমাকে”

“হুমম, জানি”

“কিভাবে জানলে?”

“আমি অনুভব করেছি যে আপনি মিস করেছেন আমাকে”

জাফরান কিছুক্ষণ আমার দিকে চেয়ে রইলো, তারপর ঠোঁট উল্টে বললো

“জেনি বলেছে তাইনা? এই মেয়েটাকে কিছু বলেও দেখি শান্তি নেই। তুমি আসতে না আসতেই বলে দিয়েছে”

“আপু আমায় কিছু বলেনি, নিজে থেকেই জেনেছি। অনুভব করেছি, অবশ্য ওসব আপনি বুঝবেন না”

উনি আগ্রহ নিয়ে আমায় বললেন

“সত্যিই ফিল করেছো নাকি? কিভাবে করলে?”

“বললাম তো আপনি পারবেন না! সবার দ্বারা সবকিছু হয় না। ফ্রেশ হয়ে আসুন যান!”

জাফরান আর কথা বাড়ালো না, এমনিতেই টায়ার্ড তার ওপর মুড অফ! তাই ভাবলো সুরভীর সাথে না হয় এসব নিয়ে পরে কথা যাবে। রাতে বারান্দায় দাড়িয়ে ছিলো জাফরান, নাতাশার বলা কথাগুলো মাথায় ঘুরছে ওর। হুট করে মেয়েটার মাথায় এই ভুত চাপলো কেনো বুঝতেই পারছেনা

“আপনি কি কিছু ভাবছেন?”

জাফরান ঘুরে তাকালো আমার দিকে

“নাহ! এমনি দাড়িয়ে আছি। কিছু বলবে তুমি?”

“বলবো না তবে আপনাকে কিছু দেওয়ার আছে”

একটা ছোট্ট প্যাকেট এগিয়ে দিলাম ওনার দিকে

“এটা কি?”

“নিজেই দেখুন, আশা করি ভালো লাগবে”

প্যাকেটটা খুলে জাফরান দেখলো একটা সাদা রং এর রুমাল তার নিচে একপাশে সিন্ত করে জাফরানি রঙের সুতো দিয়ে ইংরেজি বর্ণে “ZAFRAN” লিখা! জাফরান হেসে বললো

“ওয়াও! সুন্দর হয়েছে তো। তুমি করেছো?”

হ্যা সূচক মাথা নাড়লাম আমি

“পরশু রাতে বেকার বসে ছিলাম, ভাবলাম কিছু করি। এরকম দুটি বানিয়েছি, একটা সুহানার নামের আরেকটা আপনার নামের”

“তুমি তো দেখছি ভীষণ ট্যালেন্টেড। এতকিছু শিখলে কিভাবে?”

“শিখেছিলাম কলেজের এক বন্ধুর কাছে। ও এইসব টুকটাক কাজ শিখিয়েছিল আমায়। তো আপনার ভালো লেগেছে এটা?”

“ইয়েস! আই লাইক দিস! ইটস সো কিউট”

প্রথমবার আমি জাফরানকে কিছু দিয়েছি আর সেটা ওনার পছন্দ হয়েছে। এটা আমার কাছে অনেক খুশির ব্যাপার!

“ফার্স্ট টাইম তুমি আমায় কিছু দিলে রাইট? তাও এতো সুন্দর একটা জিনিষ! আমি এর বদলে কি দেবো তোমায়?”

“আমি আপনার থেকে রিটার্ন কিছু পাওয়ার আশায় কিন্তু এটা দেইনি জাফরান! কিছু চাইনা আমার”

“হেই আমি কিন্তু সেভাবে বলিনি! তুমি ভুল বুঝোনা আবার আমায়”

“নাহ! আপনাকে ভুল বুঝিনি তবে আপনি চাইলে আমায় ছোট্ট একটা জিনিস দিতে পারেন”

“কি?”

আমি একটু ভেবে বললাম

“কালকে বিকেলে একটু সময় দিতে পারবেন আমায় জাফরান?”

“কালকে কি আছে?”

“তেমন কিছুনা। এমনি একটু সময় কাটাতে চাইছিলাম আপনার সাথে। যদি আপনার ব্যস্ততা থাকে তাহলে সমস্যা নেই”

“ইটস ওকে! আমরা যাবো! বিকেলে রেডি থেকো তুমি আমি বাড়ি এসে তোমায় পিক করে নিবো”

“আমি কিন্তু জোর করছি না আপনাকে, আপনার যদি সময় না থাকে তাহলে যেনো আবার নিজের দরকারি কাজ ছেড়ে আসবেন না”

“ডোন্ট ওরি, সব শেষ করেই আসবো। তুমি শুধু রেডি থেকো”

আমি কিছু বললাম না, কিছুক্ষণ আমাদের মধ্যে নিরবতা বিরাজমান ছিলো! তারপর জাফরান আমাকে অবাক করে বলে উঠলেন

“তোমার রুহান ভাইয়া এসেছিলো নাকি আবার তোমাদের বাড়িতে? থাকলে তো কিছুদিন! তোমায় কোম্পানি দিতে এসেছিল?”

ভ্রু কুঁচকে নিলাম আমি

“তার সম্পর্কে জানার জন্যে আপনি এতো উতলা কেনো হচ্ছেন? সেদিন তো ভালোভাবে কথা অব্দি বললেন না রুহান ভাইয়ার সাথে”

“তোমরা দুজনে একে অপরের ফ্যাভরেট, সেখানে আমিনোর সাথে কথা বলে কি করতাম”

“তাহলে আপনাকে জানতেও হবেনা সে আমাকে এতদিন কোম্পানি দিয়েছে কি দেয়নি বুঝেছেন?”

আমি কিছুটা জোর গলায় বললাম কথাটা, জাফরান চোখ মুখ কুচকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে! এই তাকানোতে হিংসার এক ঝলক দেখলাম আমি, আমার মনে হচ্ছে কোনোভাবে জাফরান রুহান ভাইয়ার প্রতি জেলাস। কথাটা ভেবেই অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে মুচকি হাসলাম আমি। লোকটা সত্যিই অদ্ভুত!
____________________________

আজ আমার জন্মদিন, তাই জাফরানের সাথে আজকের দিনে একটু বিশেষ সময় কাটাতে চেয়েছিলাম! জাফরান তো রাজিও হয়েছে! বিকেলে আমায় নিয়ে যাবে। ওনাকে এখনও জানাইনি যে আজ আমার জন্মদিন, তাহলে আবার যদি কোনো আয়োজন করতে চায়? জিনিয়া আপু জানে তবে তাকেও বলতে মানা করে দিয়েছি! আমি কোনো এলাহী কান্ড চাইনা। কেয়া ফোন করেছিলো, আজ দেখা করতে চাইছিল কিন্তু আমি বলেছি কাল দেখা করবো! আজ যে জাফরানের সাথে সময় কাটানোর ইচ্ছে হচ্ছে আমার! জাফরান আজ লাঞ্চ টাইমেই বাসায় চলে এসেছে। আমি কয়েক আইটেমের খাবার বানিয়েছি। জাফরান খাবার টেবিলে বসে অবাক!

“এত্তো ডিশ কে বানিয়েছে?”

আমি ওনাকে খাবার বেড়ে দিতে দিতে বললাম

“আমি বানিয়েছি!”

“কেনো? আজ হঠাৎ এতো খাবার কেনো বানালে?”

জিনিয়া আপু খেতে খেতে বলে উঠলো

“তুইও না জাফরান, এতো মজার মজার খাবার বানিয়েছে সুরভী! চুপচাপ খা এতো প্রশ্ন করিস কেনো?”

জাফরান আর কথা বাড়ালো না, খেতে শুরু করলো তবে আমার এই কান্ড কারখানার কারণ বুঝতে পারছিলেন না উনি! ওদিকে গত রাতে থেকে সকাল অব্দি কিছু খায়নি নাতাশা, এখন ওর বাবা বাড়ি এসে জোর করে খাইয়ে দিচ্ছে ওকে

“কি শুরু করেছিস তুই নাতাশা? প্রব্লেম কি তোর? এভাবে খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলি কেনো?”

“বাবা জাফরান, গতকাল জাফরান আমাকে রিফিউজ করে দিয়েছে। আমি ওর সাথে এতো সুইটলি কথা বললাম আর ও, ও আমাকে রিফিউজ করে দিয়েছে বাবা”

নাতাশা কান্না করে দেয়, রায়হান সাহেব মেয়ের চোখ মুছিয়ে দিতে বলে

“তুই ওর সাথে এসব নিয়ে কথা কেনো বলতে গেছিস নাতাশা? ও যে রিফিউজ করবে এটা তো জানা কথা একটা ম্যারেড ছেলের পেছনে কেনো ঘুরছিস তুই?”

“সুরভীর অস্তিত্ব আমার কাছে নেই আর আমি ওকে জাফরানের জীবনের অংশ মানিনা। আমার কাছে জাফরান এখনও সিঙ্গেল! তাই বারবার ও যে ম্যারেড এই কথাটা উল্লেখ করো না”

“তোর মানা না মানায় তো কাজ হবেনা নাতাশা, নিজের স্ত্রী ছেড়ে ও কেনো তোর কাছে আসবে? তুই ওর অতীত। তোর ভালোর জন্যে বলছি জাফরানকে ভুলে যা তুই!

“অসম্ভব বাবা! আমি চেষ্টা করেছি কিন্তু ওকে এখন ভোলা আমার পক্ষে সম্ভব না! হয়তো এতদিন চোখের সামনে ছিলো না তাই এক প্রকার ভুলে ছিলাম কিন্তু এখন না। আমি ওকে ভালবাসি বাবা, তুমিই বলো ওকে তো আমারই পাওয়া উচিত তাইনা?”

মেয়ের আচরণ অস্বাভাবিক লাগছে এখন রায়হান সাহেবের কাছে। জাফরানকে ভালোভাবে চেনেন উনি যে ও কেমন ছেলে। নাতাশার কাছে তো সে ফিরবেই না কিন্তু নিজের মেয়ের কথা ভেবে দিনদিন চিন্তা বেড়ে যাচ্ছে ওনার। জাফরানকে পাওয়ার নেশায় নাতাশা আবার কোনো ভুল কাজ করে ফেলবে না তো?

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে