#মন শহরে তোর আগমন
#লেখনীতে – Kazi Meherin Nesa
#পর্ব – ০৬
গত আঠারো মিনিট যাবত চামচ দিয়ে খাবার নাড়াচাড়া করছি, কিন্তু মুখে দিতে ইচ্ছে করছে না। নাতাশা মেয়েটার সাথে নাকি প্রায় দু বছরের রিলেশন ছিলো জাফরানের, কানাডাতে দুজনে একসাথে পড়ালেখা করেছে। কিন্তু ব্রেকআপ হয়েছে দুজনের অনেক আগেই, তবুও আমি মানতে পারছি না। সেই থেকে খাওয়ার ইচ্ছেও গায়েব হয়ে গেছে আমার। আচ্ছা এই জন্যেই কি জাফরান আমার সাথে এমন করে? আমার সাথে এইভাবে কথা বলে? আমায় পাত্তা না দেওয়ার কারণ ও কি ওই মেয়েটাই? আজ দুজনে যেভাবে একে অপরের সাথে কথা বলছে, বন্ধুত্বপূর্ন আচরণ করছে তাতে তো মনে হচ্ছে সব যেনো স্বাভাবিক হয়ে গেছে দুজনের মাঝে। এখনও জাফরানের মনে নাতাশা নেই তো? এইসব চিন্তা মাথায় শোনার পর ওখান থেকে সরে এসেছি। জাফরানকে না জানিয়েই খেতে বসে গেছি আমি, কিছুই ভালো লাগছে না।
“এখানে কি করছো”
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম জাফরান পকেটে হাত গুজে আমার পেছনে দাড়িয়ে আছে, আমি হুড়মুড় করে এক চামচ খাবার মুখে দিলাম
“খাচ্ছি! দেখতে পাচ্ছেন না?”
উনি আমার সামনের চেয়ারে এসে বসলেন, আমি ওনার দিকে একবারও তাকাইনি। গোগ্রাসে খেয়ে যাচ্ছি
“একাই খেয়ে নিচ্ছো? আমার জন্যে একটু ওয়েট করতে করলে না? নাহলে আমার ডেকে নিতে পারতে”
“আসলে আমার খুব খিদে পাচ্ছিলো, কিন্তু আপনি তো বন্ধুদের সাথে তো ব্যস্ত আছেন সেখানে আপনাকে ডিস্টার্ব করাটা ঠিক হবে না ভেবেই আর ডাকিনি”
“কোথায় বিজি ছিলাম? উল্টে আমি তোমাকে খুঁজছিলাম। আর তুমি কিনা এখানে বসে খেতে স্টার্ট করে দিলে? নট ফেয়ার সুরভী”
“এখানে ফেয়ার আনফেয়ারের কি আছে? আপনার খিদে পেলে খান, আমি তো আর আপনাকে হাতে ধরে খাইয়ে দেবো না যে আপনার আমার দরকার পড়বে তাইনা?”
“তোমার কি হয়েছে আজকে বলোতো? সেই দুপুর থেকে দেখছি তোমার আচরণ অন্যরকম লাগছে। কিভাবে যেনো কথা বলছো!”
“আমি আর কিছুই বলতে চাইনা, আমি কিছু বলবো ও না তাহলে আপনারও কিছু মনে হবেনা না”
জাফরান ভ্রু কুঁচকে ফেললো। আমি মুখ ফুলিয়ে বসে আছি, অনেক রাগ করতে ইচ্ছে করছে ওনার ওপর। কিন্তু পারছি না, তার ওপর এতো সফটলি জিজ্ঞাসা করছেন যে আমি রাগ দেখিয়ে দুটো কথাও বলতে পারছি না। তখনই দেখলাম দুলতে দুলতে চলে ওই নাতাশা জাফরানের পাশের চেয়ারে বসলো। জাফরানের হাতটা ধরে আহ্লাদী স্বরে বলে উঠলো
“সবাই এত্তো এনজয় করছে আর তোমরা দুজনে এখানে বসে আছো কেনো? সুরভী, হোয়াট ইজ দিস? লেটস হ্যাভ ফান গাইজ”
আমি প্লেটের দিকে চোখ নামিয়ে আবার খাবার মুখে দিয়ে বললাম
“আমি এখানেই ঠিক আছি, আপনার বরং আপনার বন্ধুকে নিয়ে যান। উনি শুধু শুধু এখানে বসে আছেন”
“শুধু শুধু কোথায় বসে আছি? খিদে পেয়েছে আমার, তুমি খাচ্ছো আমি খাবো না? নাতাশা তুইও ডিনার করে ফেল”
কথাটা বলেই জাফরান নাতাশার থেকে হাত ছাড়িয়ে উঠে আমার পাশের চেয়ারে এসে বসলো। কিযে আনন্দ হচ্ছিলো আমার কি বলবো, নাতাশার স্যাড ফেসটা দেখার মতো ছিলো
“কীরে জাফরান, তুই এখান থেকে উঠে গেলি কেনো? আমার পাশে বসতে প্রব্লেম কি আছে?”
“এখানে দেখ যারা ম্যারেড তারা সবাই তাদের ওয়াইফের সাথে বসেছে, এখন আমি তোর সাথে বসলে ভালো দেখায় না তাই ওর পাশে বসলাম। থিঙ্ক ইট প্রাক্টিক্যালি”
নাতাশা কোনো উত্তর দিলো না, আমি এদিকে মনের আনন্দে খাচ্ছিলাম তখন উনি আমার হাত থেকে প্লেট চামচ কেড়ে নিয়ে খাওয়া শুরু করে দিলেন, তাজ্জব বনে গেলাম আমি
“আরে, আমার প্লেট নিয়ে খাচ্ছেন কেনো? ওয়েটারকে বলুন না আপনার খাবার দিয়ে যেতে”
” তুমি কি খাচ্ছো সেটা একটু টেস্ট করে দেখলে দোষ হয়ে যাবে নাকি?”
তখনই নাতাশা বলে উঠলো
“জাফরান, আমি এনে দিচ্ছি। তুই ওর প্লেট ওকে দিয়ে দে”
“নাতাশা তোকে আনতে হবে না। বস তুই, আমি ওয়েটারকে বলে দিয়েছি”
“তাহলে একটু ওয়েট কর। ও বেচারীর খাবার খাচ্ছিস কেনো? ও কি খাবে?”
আমার দিকে তাকিয়ে ছোট্ট একটা হাসি দিলেন উনি, আমি ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে দেখছিলাম ওনার দিকে
“এভাবে দেখতে হবেনা। আমার খাবার থেকে তোমার ভাগ দিয়ে দেবো”
“চাইনা আমার কোনো ভাগ। কিন্তু আজকাল আপনার দেখছি আমার খাবার টানাটানি করার বদ অভ্যাস হয়ে গেছে। দুপুরে আমার চা খেয়ে ফেললেন এখন আবার খাবার টানাটানি করছেন?”
উনি কোনো উত্তর না দিয়ে আমার খাওয়া খেতে শুরু করে দিলেন, আমি কি একটা ভেবে ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম। হুট করে আমার নজর পড়লো নাতাশার দিকে, মেয়েটা কেমন অদ্ভুত নজরে জাফরানের দিকে চেয়ে আছে। মেয়েটার এই চাহনির মানেটা আমার বোধগম্য হলো না
___________________________
বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত দশটা বেজে গেছিলো। খুব টায়ার্ড লাগছে তাই শুয়ে পড়েছি আগেই। কিন্তু মাথার মধ্যে যে নাতাশার ব্যাপারটা এটে গেছে, বেরই করতে পারছি না। জাফরানের একটা কল এসেছিল, ও কথা শেষ করে বারান্দা থেকে রুমে এসেছে টের পেয়ে উঠে বসলাম আমি। উনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছিলেন
“একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো?”
“বলতে থাকো”
“আপনার পার্সোনাল ব্যাপারে প্রশ্ন করলে কিছু মনে করবেন না তো?”
“আমার পার্সোনাল লাইফে তুমি ছাড়া আছেই বা কে যে আমাকে প্রশ্ন করবে? আর আমিই বা কেনো মাইন্ড করবো?”
যুক্তিসঙ্গত কথা বলেছেন উনি, এখন তো ওনার নিজের কেউ বলতে গেলে শুধু আমিই আছি। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম
“আপনার নাতাশার সাথে রিলেশন ছিলো, কথাটা আমায় কোনোদিন বলেননি কেনো?”
“কারণ আমার বিষয়টা জানানোর মতো অতো ইম্পর্ট্যান্ট মনে হয়নি। সি ওয়াজ মাই পাস্ট। একটা সময় সম্পর্ক ছিলো, সেটা শেষ হয়েছে অনেক আগেই। এই নিয়ে নতুন করে আলোচনা করার কোনো মানে নেই তাই বলিনি”
“ওহ, কিন্তু আপনাদের আজ দেখে তো মনেই হলো না যে এমনকিছু হয়েছিলো আগে”
“কারণ আমরা দুজনেই আমাদের সম্পর্কের কথাটা ভুলে গেছি, নাও উই আর জাস্ট ফ্রেন্ডস”
“আচ্ছা, তারমানে আপনারা দুজনে শুধুই বন্ধু আর কিছু না”
আমি কিছুটা নিশ্চিন্ত হলাম, যাক। মেয়েটাকে নিয়ে জাফরানের মনে কোনো ফিলিংস নেই তারমানে তাহলে চিন্তার কিছু নেই।
“বাই দ্যা ওয়ে, তোমার এতকিছু জানতে চাওয়ার কারণ কি সুরভী? জেলাস ফিল করছো নাকি?”
“জেলাস? কার জন্যে হবো?
জাফরান ভাব দেখিয়ে নিজের দিকে ইশারা করলো, আমি তার কান্ড দেখে মুখ টিপে হেসে আবার শুয়ে পড়লাম
“আপনার জন্যে? আমার আর কাজ নেই নাকি? আজ হুট করে জানলাম বিষয়গুলো তাই একটু অবাক হয়েছি, কৌতূহল বশত জানতে চাইছি এই আর কি। আর কিছুই না”
“রিয়েলী? আর কোনো কারণ নেই?”
“কেনো? আপনি চান নাকি আমি আপনার জন্যে জেলাস হই? শুনুন যদি এইটা আপনি আশা করে থাকেন তাহলে আশা ছেড়ে দিন। ওইসব আমার দ্বারা হবেনা”
আমার কথা শুনে যেনো কিছুটা হতাশ হলেন জাফরান। উনি হয়তো অন্য কিছু শোনার আশায় ছিলেন। চুপচাপ একটা বই নিয়ে এসে বিছানায় বসে পড়তে শুরু করলেন। তখনই ফোন বেজে উঠলো আমার। মায়ের ফোন দেখে কিছুটা ঘাবড়ে উঠেছিলাম আমি, এতো রাতে তো মা কখনো ফোন করে না। হুড়মুড় করে উঠে বসলাম
“কি হয়েছে মা, সব ঠিক আছে তো?”
“হ্যা সব ঠিক আছে। আসলে তোদের বিয়ের পর জাফরান আর তোকে তো এই বাড়িতে আসতে বলার সুযোগই পেলাম না। তাই ভাবছিলাম তোকে আর জাফরানকে আসতে বলবো”
“ওহ, তাই বলো। আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম এতো রাতে তোমার ফোন দেখে”
“চিন্তার কারণ নেই, আমরা ভালোই আছি। তুই কাল জাফরান কে নিয়ে চলে আয় এই বাড়িতে, শুক্র শনি দুদিন থেকে না হয় চলে যাস!”
“আগেই তো বলতে পারছি না মা, কথা বলে দেখি তারপর তোমাকে জানাবো। আগেই কোনো আয়োজন করে বসো না তুমি আবার”
“তুই জাফরানের সাথে কথা বলে এখুনি জানা আমাকে, আমি তাহলে কালকের জন্যে কিছু প্রস্তুতি নেবো। প্রথমবার জামাই এলে তো একটা প্রস্তুতির ব্যাপার আছে”
মায়ের সাথে কথা শেষে জাফরানের দিকে তাকালাম, আমি তো নিশ্চিত হয়ে বসে আছি সে না করে দেবে। জাফরান বই পড়ছিলো
“তোমার মা ফোন করেছিলো? কি বললো?”
“মা বললো আপনাকে নিয়ে আমার বাড়ি যেতে, বিয়ের পর তো যাওয়া হয়নি ওই বাড়িতে তাই। দাওয়াত দিয়েছে আপনাকে”
“তোমার বাড়িতে? ইনভাইট করেছে?”
“হুমম! শুধু ইনভাইট না, আপনার হ্যা না শোনার অপেক্ষায় আছে সবাই। আপনি হ্যা বললেই তারা আপনার জন্যে স্পেশাল ট্রিটমেন্ট এর ব্যবস্থা করবে”
“দ্যাটস গ্রেট। কাল তো অফ ডে তাইনা? অল রাইট, আমরা যাবো। তোমার মাকে ফোন করে জানিয়ে দিয়ে ব্যাগ প্যাক করে ফেলো”
“আচ্ছা”
প্রথমে জাফরানের কথা খেয়াল করিনি আমি, যখন খেয়াল করলাম তখন অবাক হলাম
“কিহ! সত্যিই যাবেন আমার বাড়িতে? আমি তো ভেবেছিলাম আপনি না করে দেবেন”
“না কেনো করতে যাবো আর এতো অবাক হচ্ছো কেনো? তোমার বাড়িতে একবারও যাওয়া হয়নি আমার, অ্যান্টি নিজে ফোন করে বললো যেতে। তুমি হ্যা বলে দাও, আমরা যাবো কালকে”
আমি বিশ্বাস করে উঠতে পারছিলাম না, এতো সহজে রাজি হয়ে যাবে ভাবিনি। আমার সাথে জড়িত সব বিষয় একটু একটু করে মেনে নিচ্ছে জাফরান, তার মানে কি আমাকেও নিজের মনে জায়গা দিচ্ছেন উনি? আমি এখন অব্দি এই নিয়ে কখনো ভেবেই দেখিনি, আশা তো ছেড়েই দিয়েছিলাম কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমিও যে একটু লোভী হয়ে যাচ্ছি। ওনার মনে নিজের জন্যে একটু জায়গা পাওয়ার লোভ জেগেছে আমার মনে। কতো সময় যে ওনার দিকে তাকিয়েছিলাম কে জানে, আমার নিষ্প্রভ চাহনি দেখে উনি বই রেখে আমার ফোন নিজেই নিয়ে মাকে ফোন করে দিলেন, আমি কিছু বলার সুযোগই পেলাম না। তবে ওনার এই অধিকার খাটানোর ব্যাপারটা খুব একটা মন্দ লাগছে না, বিশেষ করে আজ নাতাশার সামনেও উনি যেভাবে বিহেভ করলেন সেটাও বেশ ইমপ্রেসিভ ছিলো, অবশ্য লোকটা যে শুরু থেকেই আমায় ইমপ্রেস করেছে বসে আছে সে কথা অস্বীকার করার সাধ্য আমার নেই!
_______________________________
ড্রইং রুমে বসে কফি খাচ্ছিলো নাতাশা, মাথাটা ধরেছে ওর। গতকাল জাফরানের সাথে দেখা হবার পর থেকেই ওর মাথার মধ্যে অনেককিছু ঘুরছে। হুট করেই পুরনো প্রেমিককে ফিরে কেমন এক তীব্র আকাঙ্খা জেগেছে ওর মনে। নাতাশার বাবা মিস্টার রায়হান খান জাফরানের বাবার বিজনেস পার্টনার, সেই হিসেবে নাতাশা আর জাফরানের সম্পর্ক পুরনো বলা যায়। তবে প্রেম নামক সম্পর্কটা গড়ে উঠেছিলো মাত্র কয়েক বছর আগে
“বাবা, আজ জাফরানকে দেখে মনে হলো ও নিজে ম্যারেড লাইফে অনেক হ্যাপি আছে। আমি তো ভাবতেই পারিনি যে এতো দ্রুত জাফরান সব ভুলে যাবে, টুডে হি ওয়াজ বিহেভিং উইথ মি লাইক জাস্ট এ ক্যাজুয়াল ফ্রেন্ড”
পেপার থেকে মুখ তুলে মেয়ের দিকে তাকালেন মিস্টার রায়হান। হুট করে জাফরানের কথা মেয়ের মুখে শুনে উনি কিছুটা অবাক হয়েছেন বটে
“তোর আর জাফরানের ব্রেকআপ হয়ে গেছে নাতাশা। জাফরান বিয়ে করেছে, সেখানে ও নিজের ওয়াইফ নিয়ে হ্যাপি থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক তাইনা?”
“হ্যা আমাদের ব্রেকআপ হয়েছে কিন্তু তার ও তো বেশি সময় হয়নি। মাত্র এক বছর হয়েছে আমাদের ব্রেকআপের। জাফরান দেশে ফেরার আগেই তো ব্রেকআপ হলো আমাদের। চাইলেই আবার সব আগের মতো হতে পারে আমাদের মধ্যে”
হঠাৎ মেয়ের এমন আকাঙ্খা জাগার কারণ বোধগম্য হলো না মিস্টার রায়হানের!
“কি বলছিস তুই এসব? জাফরান ম্যারেড, এখন তোর সাথে ওর ঠিক হবার মতো কোনো সম্পর্ক বেচে নেই”
“দরকার পড়লে সম্পর্ক আবার পুনর্জীবিত করবো বাবা, এতোদিন দেশের বাইরে ছিলাম। জাফরানের থেকে দূরে ছিলাম, নিজেকে মানিয়ে নিতে পেরেছি কিন্তু গতকাল ওকে সুরভীর সাথে দেখার পর থেকেই আমি মানতে পারছি না। আমার জাফরানকে আবার আমার ফেরত চাই! যেভাবেই হোক!
মেয়ের জেদ সম্পর্কে ভালোভাবেই অবগত মিস্টার রায়হান, জেদ করেই তো এতগুলো বছর বিদেশে থেকে এলো। যা চাই সেটাই যে নাতাশার চাই। এখন মেয়ের এরূপ কথা শুনে কিছুটা চিন্তায় পড়ে যান রায়হান সাহেব
______________________________
আমার বাড়ির সবার জন্য জাফরান শপিং করেছে, কতো করে বারণ করলাম কিন্তু একটা কথা শুনলেন না উনি। দুপুরের কিছু সময় আগেই পৌঁছে গেলাম আমাদের বাসায়। প্রথমবার আমাদের বাড়িতে এলেন উনি, আমার মা বাবার সাথেও সেভাবে কখনো কথা বলেননি উনি কিন্তু আজ যেভাবে তাদের কুশল বিনিময় করলেন, যেনো কতদিন পর নিজের আপনজনদের সঙ্গে কথা বলছেন। আমার মা বাবাও যে অবাক হয়েছেন ওনার এতো স্বাভাবিক আচরণ দেখে সেটা বেশ বুঝেছি। এরপর সবাইকে তাদের গিফট দিয়ে জাফরানকে নিয়ে চললাম নিজের রুমে। আমার ছোটবোন ও রুমে এসে হাজির!
“দেখ দেখ আপু, তোর রুম কতো সুন্দর করে গুছিয়ে দিয়েছি আমি। একদম চকচকে করে দিয়েছি সব”
“তুই এতোদিন আমার রুমে থেকেছিস। নির্ঘাত বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিলি, তাই আজ সব গুছিয়ে আমার সামনে ভালো সাজা হচ্ছে হুমম?”
“তাতে কি? আবার তো এটাকে তোর রুম বানিয়ে দিয়েছি এবার। থ্যাংকস বল আমাকে”
“আরে ধুর! তোর জন্যে করেছি নাকি? আমি তো আমার সুইট ভাইয়ার জন্যে করেছি। জাফরান ভাইয়া, আপনার রুম ডেকোরেশন পছন্দ হয়েছে তো?”
“ইয়েস, আই লাইক ইট। থ্যাংকস সুহানা”
“আচ্ছা আচ্ছা, তোমরা একটু রেস্ট করো এখন। আর ভাইয়া তোমার সাথে বোঝাপড়া আমি পরে করবো কেমন?”
আমার বোনের হাবভাব দেখে বুঝলাম একদম তৈরি হয়ে আছে ও, জাফরানকে এবার সহজে ছাড় দেবে না। আমি ব্যাগ থেকে আমার আর ওনার ড্রেস বের করে নিলাম
“বোঝাপড়ার কথা বললো তোমার বোন?”
“আপনার মানিব্যাগ খালি করার লিস্ট ধরাবে, ওই বোঝাপড়ার কথাই বললো। তবে আপনি ওর কথা একদম শুনবেন না, তোল্লায় তুলবেন না আগেই বলে দিলাম”
“সেটা আমার আর তোমার বোনের ব্যাপার! তোমাকে ভাবতে হবে না ওসব!”
“আপনি সেদিন কেয়ার বেলায়ও এমন করলেন, আজ আবার সুহাকেও মাথায় তুলবেন তাইনা? সত্যি, আপনার নিজের অর্থের ওপর কোনো মায়া নেই”
মুচকি হাসলেন উনি, আমি ওনার ড্রেস আর টাওয়েল ধরিয়ে দিলাম। উনি রুমের চারদিক পর্যবেক্ষণ করছেন, আমি মিনমিন করে বললাম
“এতো দেখার কিছু নেই। আপনার রুমের তুলনায় আমার রুম অনেক ছোটো, আপনার থাকাটা একটু অ্যাডজাস্ট করে নিতে হবে। তাছাড়া বাকিসব মানে আপনার খাবারের দিকটা আমি অ্যারেঞ্জ করে দেবো”
লোকটা যেনো আমার কথায় পাত্তাই দেননি, রুম পর্যবেক্ষণের কাজে ব্যস্ত উনি। গভীর পর্যবেক্ষণ শেষে মুচকি হেসে বললেন
“রুমটা ছোটো, বাট ইটস কিউট”
ভ্রু কুঁচকে নিলাম, কি বলেন উনি? যতদূর জানি কিউটনেস ব্যাপারটা মানুষের ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় আর উনি ইট সিমেন্টের তৈরি রুমের জন্যে এই শব্দ ব্যবহার করছেন?
“রুমের মধ্যে আপনি কিউটনেস খুঁজে বেড়াচ্ছেন? মাথা ঠিক আছে আপনার?”
উনি আমার দিকে একটু একটু করে এগোতে শুরু করলেন, আমি ওনাকে এগোতে দেখেও সরিনি। ঠায় দাড়িয়ে ছিলাম নিজের জায়গায়, হুট করে উনি একেবারে আবার কাছে এসে গেলেন। থতমত খেয়ে গেলাম আমি, পেছাতে যাচ্ছিলাম তখনই নিজের বলিষ্ঠ হাতে কোমর জড়িয়ে ধরলো জাফরান। হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইলাম ওনার দিকে, কোনোদিন ভুলেও আমার এতো কাছে আসেননি উনি। তাহলে আজ কেনো আসছেন? উনি যখন আমার দিকে নিজের মুখটা এগোতে শুরু করলেন তৎক্ষণাৎ ঠোঁট জোড়া ভাজ করে নিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। যদি কিছু উল্টোপাল্টা করে বসেন উনি!
“এত্তো অ্যাডভান্স চিন্তাভাবনা তোমার? এতো দূর অব্দি ভেবে ফেললে এখনি?”
অবাক হলাম কথাগুলো শুনে। চোখ দুটো খুলে দেখলাম উনি হাসছেন আমায় দেখে। সত্যিই তো কি না কি ভেবে ফেলেছিলাম আমি, মাথার মধ্যে কিসব ঘুরছে আমার। ছি ছি! কি লজ্জার ব্যাপার!
“আ, আপনি ফ্রেশ হতে যান তো। জুমার নামাজের সময় হয়ে আসছে। আমি বরং আপনার জন্যে গরম পানির ব্যবস্থা করি”
এখনও আকড়ে আমার কোমর ধরে রেখেছেন উনি, ছাড়াতে পারলে তো যাবো! আমি যতো নড়ার চেষ্টা করছি ততো উনি শক্ত করে ধরছেন, পারলে যেনো নিজের সাথে মিশিয়ে নিতেন। এতেই নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছিলো আমার। উনি আমার কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো আলতো করে কানের পিঠে গুজে দিয়ে বললেন
“রুমের মালকিন যদি এতো কিউট হয়, এতো কিউট কিউট কান্ড কারখানা করে তাহলে তো রুমটাও কিউটই হবে তাইনা?”
কথাগুলো শুনে ড্যাব ড্যাব করে তাকালাম। আগেও অনেকেই বলেছে যে আমি নাকি কিউট। কই কারো বলাতে তো আমার এতো খুশি খুশি লাগেনি যতটা আজ জাফরানের বলায় লাগছে। “কিউট”, ছোট্ট একটা শব্দমাত্র তাই আমার হৃদয় এতোটা পুলকিত করে দিলো? তারমানে কি উনি সেই যে আমার কাছে সবার তুলনায় একটু বেশি স্পেশাল?
চলবে….