#মন শহরে তোর আগমন
#লেখনীতে – Kazi Meherin Nesa
#পর্ব – ০৩
রিসিপশনের অনুষ্ঠান আজ ভালোভাবেই সম্পন্ন হলো। একদিনের ও কম সময়ে ভালোই আয়োজন করেছিলো সবাই। জাফরানের বাবা নিজে আমাকে সকল আত্মীয় স্বজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, আমার মা বাবাও এসেছিলেন। সবমিলিয়ে দিনটা ভালোই ছিলো। যাবার সময় মা আমার সাথে আলাদা একটু কথা বললেন
“এই বাড়ির সবাইকেই তো দেখলাম। সবাই অনেক ভালো, বিশেষ করে তোর শ্বশুর ও অনেক ভালো। এখানে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো তোর?”
না সূচক মাথা নাড়লাম আমি, মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
“দেখ সুরভী, যা হবার হয়ে গেছে। চাইলেও তো আর কিছু ঠিক করা যাবে না কিন্তু এখন যা আছে তাকে তুই গুছিয়ে নিতে পারবি। তোর শ্বশুরের কথা তো জানিস, কাল ওনার কিছু হয়ে গেলে ওনার দেওয়া সবথেকে বড় দায়িত্ব কিন্তু তোকে পালন করতে হবে। সেই ভেবে নিজেকে মানসিকভাবে একটু প্রস্তুত রাখিস। জাফরানকে একটু বোঝার চেষ্টা করিস কারণ ওকে কিন্তু তোকেই সামলাতে হবে”
“জানি মা, ওনার বাবা আমাকে সবসময় এটাই বলেন কিন্তু যেভাবে জাফরান আমায় বিয়ের জন্যে রাজি করিয়েছিলো, সেইসব এখনও মাথা থেকে সরাতে পারিনি। আমি মানতে পারছি না এখনও ওনাকে”
“ছেলেটা কেনো এমন করেছে সেটা তো নিজের চোখেই দেখছিস, এরপর তোর কি মনে হয় না ওর ওপর একটু দয়া করে উচিত? ছেলেটার কিন্তু একটা সাপোর্ট দরকার যেটা তুই ওকে দিতে পারবি”
মায়ের কথাগুলো চুপ করে শুনলাম, মা যা বলেছে সব বুঝতে পারলেও আমার মন এখনও জাফরান কে মানতে নারাজ। বারবার একটাই জিনিস মনে হচ্ছে অন্যায় করেছেন উনি আমার সাথে, এতো সহজেই কি সব ভুলতে পারবো আমি? সন্ধ্যার পর আজ প্রথম আমি বাড়ির রান্নাঘরে গেছিলাম, জিনিয়া সব দেখিয়ে দিয়েছে আমায়। তারপর সবার জন্যে চা ও করে দিয়েছি। খেয়ে সবাই বেশ প্রশংসাও করলো, ভালোই লাগলো আমার। নতুন এক অভিজ্ঞতা হলো। শেষে জাফরানের বাবার জন্যে চা নিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন উনিও বাবার ঘরের দিকে আসছিলেন
“আপনি না ওপরে ছিলেন?”
“হুমম! এখন বাবার কাছে যাচ্ছি”
“আচ্ছা, আপনি বরং আগে ড্রইং রুমে যান। ওখানে আপনারও চা রেখেছি খেয়ে নিন, ঠান্ডা হয়ে যাবে”
“আমি চা খাইনা, কফি খাই”
“ওহ, সরি! আমি তো জানতাম না, কেউ বলেনি আর কি। আচ্ছা কফি করে এনে দেবো?”
“নো থ্যাংকস”
জাফরান আমাকে পাশ কাটিয়ে ওর বাবার রুমে চলে গেলো, আমার একটু খারাপই লাগলো বটে। সবার জন্য চা করেছিলাম, উনি খান না তো কি হয়েছে? একদিন খেলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেতো?
_____________________________
জাফরানের বাবা চাচা খাচ্ছেন, আমি ওনার পাশে বসে টুকটাক কথা বলছি আর জাফরান দাড়িয়ে নিরব দর্শকের মতো আমাদের কথা শুনে যাচ্ছে। এইটুকু বুঝেছি যে লোকটা ভীষণ চুপচাপ স্বভাবের।
“জাফরান, আমি খেয়াল করলাম তুই সুরভীকে আপনি করে বলিস। কোনোদিন আমাকে দেখেছিলি তোর মাকে আপনি করে বলতে? এগুলো কি হ্যা? তুমি করে বলবি”
“বাবা সুরভী ও তো আমাকে আপনি করে বলে, তাছাড়া আপনি বলাতেই কমফোর্ট ফিল করি আমি”
“তুমি করে বললেও কমফোর্ট ফিল করবি, চেষ্টা তো করে দেখ আগে। আর রইলো সুরভীর কথা, তুই আগে বলতে শুরু কর তারপর আস্তে আস্তে ওর ও অভ্যাস হয়ে যাবে”
উনি আমার দিকে সরু দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন, আমি তখন ওনার বাবাকে জিজ্ঞাসা করলাম
“কেমন হয়েছে চা টা বললেন না?”
জাফরানের বাবা ছোট্ট হাসি দিয়ে বললেন
“খুব ভালো বানিয়েছো, একদম আমার মনমতো হয়েছে। হ্যা রে জাফরান, তুই টেস্ট করেছিস?”
“বাবা তুমি তো জানো আই ডোন্ট লাইক টি”
ওনার কথা শুনে রাগ হলো আমার, চা এর সাথে কি এমন শত্রুতা ওনার কে জানে। ছেলের কথা শুনে জাফরানের বাবা বলে উঠলেন
“খাস না তো কি? আজ মেয়েটা প্রথম চা বানালো, একবার টেস্ট করলে কি হতো? অন্য ছেলেদের দেখ বৌর হাতের চা খাওয়ার জন্যে মুখিয়ে থাকে আর তুই কিনা ইচ্ছে করে খেলি না?”
“সবাই যা করবে তাই যে আমাকেও করতে হবে এর তো মানে নেই বাবা তাইনা?”
“অবশ্যই মানে আছে, সবাই যেভাবে বিহেভ করে নিজের ওয়াইফের সাথে তোকেও তো তাই করতে হবে”
বাবার কথা শুনে জাফরান কোনো রিয়েক্ট করলো না, আমি তখন গলা খাকানি দিয়ে বললাম
“রান্নাঘরে তো গ্রিন টি আছে দেখলাম, গ্রিন টি যদি খেতে পারেন তাহলে দুধচা কি সমস্যা করলো বুঝলাম না..তাছাড়া কফি হেলদি পানীয় নাকি?”
“দুটোর মধ্যে অনেক তফাৎ আছে সেটা নিশ্চয়ই জানেন?”
“আবার জানেন? জাফরান, আরেকবার এই ভুল করলে খবর আছে তোর”
উনি কিছুটা থতমত খেয়ে উঠলেন, আমি মুখ টিপে হেসে ফেললাম ওনার অবস্থা দেখে। এরপর কিছুক্ষণ টুকটাক গল্প করলাম ওনার বাবার সাথে। জাফরান তখনও ওখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। কথার এক পর্যায়ে জাফরানের বাবা বললো
“জাফরান, আমার আলমারিটা খুলে দেখ কিছু বক্স আছে। ওগুলো বের করে এনে আমার হাতে দে”
“কিসের বক্স বাবা?”
“খুললেই বুঝতে পারবি, দেখ সামনেই আছে। জেনিকে রেখে দিতে বলেছিলাম এখানে”
জাফরান ওর বাবার কথামতো আলমারি খুললেন, তারপর দেখলাম তিনটা লাল রং এর গয়নার বক্স আর একটা ছোটো গোল বক্স বের করে ওনার বাবার হাতে দিলেন। ওনার বাবা আবার আমার হাতে সেগুলো তুলে দিয়ে বললেন
“এখানে আমার মা আর জাফরানের মায়ের কিছু গয়না আছে। বেশিরভাগই অবশ্য জাফরানের মায়ের, তবে তোমার দাদী শ্বাশুড়ির ও আছে কিছু। জেনিকে ওর বিয়ের সময় ওর ভাগের জিনিস দিয়েছি, আজ এগুলো তোমায় দিলাম”
“কিন্তু”
“কোনো কিন্তু না, এগুলো জাফরানের বৌর জন্যে রাখা ছিলো। ওদের মা অনেক আগেই গুছিয়ে রেখেছিলো, সময়মতো আমি যার যেটা দিয়ে দিয়েছি। এগুলো এখন থেকে তোমার”
অনেক ভালোবাসার সহিত জাফরানের বাবা গয়নাগুলো আমার হাতে তুলে দিয়েছেন। এখন একটু একটু করে আমার মন যেনো মানতে শুরু করেছে যে হ্যা আমি এই বাড়ির বউ। সবার ওপরে থাকা ছোট্ট গোল বক্সটা খুলে দেখালেন জাফরানের বাবা। ওতে ছোট্ট ছোট্ট দুটো ব্যাংগেলস, জাফরান ওটা দেখে বলে উঠলেন
“এত্তো ছোটো ব্যাংগেলস? এগুলো সুরভীর হাতে যাবে কিভাবে বাবা?”
“তুই আমার ছেলে হয়ে এতো বুদ্ধু কিভাবে হলি জাফরান? তোর মনে হয় এটা সুরভীর পড়ার জন্যে দিচ্ছি? এগুলো ওর জন্যে না”
“তাহলে? এগুলো তো ছোটো বাচ্চাদের মনে হচ্ছে”
“হ্যা, এগুলো আমার নাতনির জন্যে বছরখানেক আগে বানিয়েছিলাম এগুলো। তোদের মা থাকলে আরো কতো কি করতো, আমি তো অতো করতে পারিনি। তবে হ্যা কিছুটা হলেও মায়ের কাজ আমি করেছি। এখন দায়িত্ব তো সম্পূর্ন পালন করতে হবে নাকি?”
জাফরানের বাবার প্রতিটা কথা শুনে বুকের ভেতর কেপে উঠছে আমার, শুনেছিলাম বাবা নাকি মায়ের মতো হতে পারে না কিন্তু জাফরানের বাবাকে দেখে আমার ধারণা পুরো বদলে গেছে। নিজের ছেলেমেয়ের জন্যে এতো গভীর ভাবনা কজন বাবাই বা করেন?
“জেনির মেয়ে যখন হলো ওকে দিয়েছি, জাফরানের মেয়ে হলে আমি তো আর দেখে যেতে পারবো না। তাই আগেই দিয়ে রাখলাম, যখন এগুলো ব্যবহারের সময় আসবে ব্যবহার করো”
জাফরানের দিকে তাকালাম আমি। এসব কথা শুনে যে ওনার কি মারাত্মক কষ্ট হচ্ছে তা ওনার চোখেমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আমাকে সব বুঝিয়ে দিয়ে জাফরানের বাবা যেনো একদম নিশ্চিন্ত হলেন।
_________________________
লাইট জ্বালিয়ে বসে আছি রুমের মধ্যে, জাফরানের বাবার বলা কথাগুলো এখনও কানে বাজছে। ওনার দেওয়া জিনিসগুলো সেই যে বিছানার ওপর রেখেছি এখনও ওখানেই আছে। ওনার বাবার মতো এমন মানুষ আমি প্রায় দেখিইনি, দুদিনের দেখা মাত্র তাতেই এত্তো খারাপ লাগছে আমার সেখানে জাফরানের কেমন লাগছে সে পরিমাপ আমার পক্ষে করা অসম্ভব। যত্ন করে তুলে রাখলাম সবকিছু আলমারিতে। হঠাৎ আমার জাফরানের কথা মনে পড়লো, উনি তো ডিপ্রেসড হয়ে আছেন। ভাবলাম যাই ওনার জন্যে কিছু একটা করি
“এই নিন”
সোফায় গা এলিয়ে বসেছিলো জাফরান, আমি কফি বানিয়ে এনেছি ওনার জন্যে। জাফরান একটু উচু হয়ে মগটা একবার দেখে আমার দিকে জিজ্ঞাসু নজরে তাকালেন
“আজ আমি প্রথম কিছু বানিয়েছিলাম আপনার বাড়িতে এসে, কিন্তু আপনি বললেন চা খান না তাই ভাবলাম আপনি যা খান তাই খাওয়াই”
“এর দরকার ছিলো না এখন, শুধু শুধু কষ্ট করতে গেলে কেনো?”
“বাহ! বেশ উন্নতি হয়েছে দেখছি আপনার। বাবা একবার বললো তাতেই আপনি আমায় আপনি থেকে সোজা তুমি বলতে শুরু করেছেন? গুড”
জাফরান কোনো উত্তর দিলেন না, আগের অবস্থাতেই বসে আছেন। আমার কথা যেনো কানেই তোলেনি লোকটা
“দেখুন, তখন আপনার জন্যে বানানো চা কিন্তু ঠান্ডা হয়ে গেছিলো এবার এটা ঠান্ডা হয়ে গেলে কিন্তু আমার ডাবল খাটনি ওয়েস্ট হয়ে যাবে।”
“তোমার চা বানানোর আগেই জেনে নেওয়া উচিত ছিলো, তাহলে আর বেকার খাটনি খাটতে হতো না”
“বাড়ির এতগুলো মানুষের মাঝে একজন যে চা খায়না সেটা ধারণা করতে পারিনি। নাহলে করতাম না, যাই হোক এটা নিন তো। আর হ্যা আমি জিজ্ঞাসা করবো না কেমন হয়েছে”,
“বলছি তো খাওয়ার ইচ্ছে নেই। আমার জন্যে আর কফি বানাতে যেও না”
“মাথা চেপে বসেছিলেন একটু আগে, তো এটা খেলে মাথা ব্যাথা তো একটু কমবে নাকি? এতো ভাব দেখাচ্ছেন কেনো? অতো খারাপ ও কিন্তু বানাই না”
“আমি কখন বললাম খারাপ বানাও?”
“আপনি তো সেরকমই করছেন! আসল কথা হলো আপনি বিশ্বাস করতে পারছেন না, ভাবছেন খারাপ হয়েছে এটা তাইতো?”
উনি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ, আমি ওনার মুড একটু ঠিক করার জন্য এরকম করছি উল্টে উনি আমার মুড নষ্ট করে দিলেন পড়ার প্রসঙ্গ তুলে
“তোমার না সামনে এক্সাম? বাবাকে টাইম দেবার পর এখন থেকে এক্সামের প্রস্তুতি নেবে। আমি চাইনা এই বাড়ির কিছুর প্রভাব তোমার স্টাডির ওপর পড়ুক”
“আপনিও শুরু করলেন? ঠেলে ঠেলে এতো দূর এসেছি, দুদিন একটু পড়ালেখা থেকে দূরে সরলাম অমনি আপনি শুরু করে দিলেন? অদ্ভুত!”
“অদ্ভূতের কিছুই নেই, ভবিষ্যতে তুমি যেনো আমাকে দায়ী না করতে পারো তার জন্যে বলছি। স্টাডির শেষ পর্যায়ে আছো তুমি, এখন এক্সাম খারাপ দিলে চলবে না”
“হ্যা হ্যা, ওসব পরে দেখা যাবে। অনেক সময় পড়ে আছে এসবের জন্যে। আপনি এটা নিন তো আগে”
উনি কয়েক সেকেণ্ড আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন, বুঝে গেছেন যে ওখান থেকে সহজে সরবো না আমি তাই বাধ্য হয়েই কফি মগ নিয়ে নিলেন। আমিও আর ওখানে দাড়ালাম না, ভীষণ ঘুম পাচ্ছে তো রুমের দিকে আসতে যাচ্ছিলাম তখন দেখলাম জিনিয়া দাড়িয়ে আছে
“আপু? আপনি এখনও ঘুমাননি?”
“বাবার রুমে এসেছিলাম, তোমাদের কথাবার্তা শুনে দাড়িয়ে গেলাম”
আমি একটু ভয়ে ভয়ে ছিলাম, জিনিয়া আমায় আবার কিছু বলবে না তো?
“জাফরানের প্রতি তোমার কনসার্ন দেখে ভালো লাগলো সুরভী। আমার ভাইটা না একটু চুপচাপ, সহজে কিছু বলতে চায় না। ও চুপ থাকলেও তুমি চুপ থেকো না, একজনের একটু চটপটে হওয়া ভালো”
জিনিয়ার কথা শুনে ভয় কেটে গেলো আমার। ভাবলাম সত্যিই তো, আমার জাফরানের বিষয়ে একটু হলেও জানতে হবে। সে চুপ, আমিও চুপ থাকলে কিভাবে চলবে? পরেরদিন জাফরানের বাবা ছেলেকে সাথে আমার সাথে পাঠালেন কেনাকাটা করানোর জন্যে। আমার অবশ্য যাওয়ার দরকার ছিলো না কারণ মা আমার জামাকাপড় দিয়েই গেছে কিন্তু বাবা বলেছে বলে না এসেও পারছিলাম না। আমি কিছুতেই ঠিক করে উঠতে পারছিলাম না কি কিনবো, বাধ্য হয়ে ওনাকে বললাম
“একটু শুনুন”
“হোয়াট?”
“একটু হেল্প করবেন? আমি ঠিক বুঝতে পারছি না কি নেওয়া উচিত”
“তুমি যা পড়বে তাই নাও, এখানে আবার বোঝার কি আছে? আর হ্যা একটু তাড়াতাড়ি করো প্লিজ। আমার আবার অফিসে যেতে হবে, দেরি হয়ে যাচ্ছে”
“বিয়ের পর আপনাদের বাড়িতে কেমন ড্রেসআপ করার নিয়ম আমি তো জানিনা। শাড়ি না পড়লে প্রব্লেম হবে কোনো?”
“আমাদের বাড়ির কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই, তোমার যা ভালো লাগে নাও। আমার মেয়েদের কেনাকাটা সম্পর্কে আইডিয়া নেই সো আই কান্ট হেল্প ইউ”
মন খারাপ হয়ে গেলো ওনার কথা শুনে, ঈশ! ভাবছি জিনিয়া আপুকে নিয়ে এলেই ভালো হতো। আমায় সাহায্য করতো, যে সাথে এসেছে সে তো সাহায্য করতেই পারবে না। কি আর করবো? বাধ্য হয়ে নিজেই কিছু জামা পছন্দ করে কিনে নিলাম। জাফরান যেনো একটু বেশিই শান্ত, প্রয়োজন ছাড়া বেশি একটা কথা বলে না আর আমি একদম ওর উল্টো, নেহাৎ এই বাড়িতে এসে কদিন একটু শান্ত হয়ে থাকছি। ওনার স্বভাব দেখে চিন্তা হচ্ছে আমার, এমন একজনের সাথে থাকবো কিভাবে আমি?
জাফরানের দুই ফুপু চলে গেছেন, তবে জিনিয়া আছে এখনও। তার মেয়ে বাবার কাছে থাকতে পারে বিধায় সে এখানে থাকছে বলে সমস্যা হচ্ছে না। একটু একটু করে সব নিজে নিজেই করার চেষ্টা করছি, বাড়িতে সেভাবে রান্না করিনি কোনোদিন। আজ ভাবলাম একটু রান্না করি, আস্তে আস্তে সবজি কেটে নিচ্ছিলাম তখন জাফরান রান্নাঘরে এলো, আমি দেখেছি সেটা
“কিছু লাগবে?”
“আমি নিজেই নিয়ে নেবো যা দরকার”
আমি মুখ ফুলিয়ে ফেললাম, আমার সাথে কিভাবে যেনো কথা বলেন উনি। আমার সাথেই এমন করেন নাকি ওনার স্বভাব সেটা এখনও বুঝে উঠতে পারিনি। দেখলাম ফ্রিজ থেকে পানির বোতল বের করলেন
“একি! ঠান্ডা পানি খাচ্ছেন কেনো? এখনও তো শীত পুরোপুরি যায়নি। ঠান্ডা লাগানোর ধান্দা করেছেন নাকি?”
“ঠান্ডা লাগলে আমার লাগবে, আমি নিজেই ম্যানেজ করে নেবো। তোমাকে ভাবতে হবে না”
“আমি ভালোভাবে বললাম, তো আপনিও তো একটু ভালোভাবে উত্তর দিতে পারতেন তাইনা? সবসময় এমনভাবে কথা বললে চলে নাকি?”
উনি উত্তর দিলেন না, আমিও উত্তেজিত না হয়ে শান্ত কণ্ঠেই বললাম
“আপনার বাবা অসুস্থ, এখন যদি আপনিও অসুস্থ হয়ে যান তাহলে কিভাবে হবে? ওনার যত্ন কিভাবে নেবেন তাহলে? একটু ভেবে দেখুন”
উনি কয়েক সেকেণ্ড চুপ থেকে তাকালেন আমার দিকে.. ছোট্ট একটা “সরি” বলে বেরিয়ে এলেন ওখান থেকে। বুঝলাম অতিরিক্ত টেনশনের দরুন উনি এমন আচরণ করছে। ওনার কথায় খারাপ লাগেনি আমার কিন্তু চিন্তাটা একটু কমানোর জন্যে কিছু করতে পারছি না এটা ভেবেই কষ্ট হচ্ছে আমার.. সন্ধ্যার পর জাফরানের বাবার রুমে এসেছিলাম। প্রায়ই স্যালাইন নেওয়ার দরুন ওনার হাতের পিঠে অবশের মতো হয়ে এসেছে বলছিলেন। তো আমি একটু ম্যাসাজ করে দিচ্ছিলাম যাতে উনি আরাম পান, ম্যাসাজ করতে করতে কিছুটা অন্য মনস্ক হয়ে পড়েছিলাম তখন উনি বলে উঠলেন
“কি ব্যাপার সুরভী? মন খারাপ নাকি? জাফরান বলেছে কিছু?”
“না তো”
উনি বুঝতে পেরেছেন হয়তো কিছু, মলিন হেসে তাকালেন আমার দিকে
“একটা কথা বলি মা, আমাকে নিয়ে চিন্তায় ছেলেটার মাথা মাঝে মাঝে কাজ করে না। অনেকসময় তো আমার সামনেই রিয়েক্ট করে বসে। তোমাকে রেগে কোনো কথা বললে কিছু মনে করো না”
আমি নিশ্চুপ! উনি এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন
“মাকে তো হারিয়েছে অনেক আগেই, এখন আমাকে হারানোর ভয় ঝেকে বসেছে ওর মনে। আমি তো আজ না হয় কাল চলেই যাবো কিন্তু ছেলেটার কথা ভেবে চিন্তা হয়”
আমি এখনও নিশ্চুপ, ওনার কথা শুনে খারাপ লাগাটা দ্বিগুণ বেড়ে গেলো! ছেলের জন্যে এতো চিন্তা ওনার?
“আমি জাফরানের বিয়ের জন্যে তারা দিচ্ছিলাম যাতে আমার অনুপস্থিতিতে ও একা না পড়ে যায়। কিন্তু তোমাকে দেখে ভরসা পেয়েছি, তুমি সবসময় ওর পাশেই থেকো মা। ওকে একা ছেড়োনা কখনো”
জাফরানের সাথে কিভাবে এডজাস্ট করবো সেটা ভেবে পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম আমি, কিন্তু ওনার বাবা যখন বললেন ওনাকে একা না ছাড়তে তখন যেনো কেমন অনুভব করলাম। মনে হলো এক গুরুদায়িত্ব দিলেন আমার শ্বশুর, যা আমায় পালন করতে হবে
চলবে….