#মন শহরে তোর আগমন
#লেখনীতে – Kazi Meherin Nesa
#সূচনা_পর্ব
“আমার বাবা আপনাদের বাড়িতে গেছিলো বিয়ের তারিখ পাকা করতে আর আপনি নাকি উল্টে না করে দিয়েছেন? কেনো জানতে পারি?”
আমাকে প্রদক্ষিণ করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন মিস্টার জাফরান সাঈদ, যার বাবার পাঠানো বিয়ের প্রস্তাব গত মাসেই নাকচ করেছিলাম আমি, ছবিতে দেখেছিলাম ওনাকে তাই সামনাসামনি দেখে চিনতে সমস্যা হয়নি..ভাবিনি যে এক মাস বাদে আবার সেই ওনার সামনেই এভাবে হাতমুখ বাধা অবস্থায় এসে পড়তে হবে আমায়..মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে, হাত দুটোও চেয়ারের হাতলে বাধা, তার ওপর ওনার এরূপ কথা শুনে চমকে উঠলাম.. উনি আমার সামনেই একটা উচু টেবিলের ওপর উঠে বসলেন
“আপনাকে রিজেক্ট করার জন্যে বহু কারণ ছিলো আমার কাছে, চাইলে আমিই আপনাকে রিজেক্ট করতাম কিন্তু সেটা করতে পারিনি বিকজ মাই ফাদার চুজড ইউ ফর মি..ডোন্ট নো হুয়াই বাট হি থিঙ্ক ইউ আর বেস্ট ফর মি..আমিও তাই কোনো দ্বিমত করিনি..কিন্তু আপনার কাছে আমাকে রিজেক্ট করার কি কারণ আছে?”
কপাল কুচকে চোখ গরম করে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে, একটা রুমাল দিয়ে টাইট করে মুখ বেধে রেখেছে আবার প্রশ্নের উত্তর দিতে বলছে? বুদ্ধি হাঁটুতে নাকি চোখে দেখেন না সেটাই বুঝতে পারছি না..অবশ্য চশমা তো ওনার চোখে আছে! তারমানে চোখে নির্ঘাত ব্যামো আছে!
“দেখুন, আমি এক কথা বারবার বলতে পছন্দ করি না..একটা সিম্পল প্রশ্ন করেছি, তার সিম্পল আর ফাস্ট উত্তর দিয়ে দিন”
আমি মুখ দিয়ে আওয়াজ করলাম, ইশারা করলাম মুখের পট্টির দিকে..এতক্ষণে হুস হলো ওনার, মুখ থেকে রুমাল সরতেই আমি জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে নিতে রেগে বললাম
“মেয়েদের সাথে কিভাবে ব্যবহার করতে হয় শিখেননি নাকি হ্যা? অসভ্য কোথাকার! আল্লাহ বাঁচিয়েছে আমায় যে সেদিনই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিলাম, নাহলে আজ পস্তাতে হতো আমায়”
“সরি টু সে বাট, আপনি বাঁচতে পারবেন না.. বিয়ে করতে হবে আমায় আপনাকে, আজ..এখুনি!”
চমকে উঠলাম আমি..বিয়ের প্রস্তাব তো অহরহ আসে, পছন্দ ও হতে পারে কিন্তু কই কাওকে তো কোনোদিন শুনিনি তুলে নিয়ে বিয়ে করার জন্যে থ্রেট করে তাহলে উনি এমন কেনো করছেন? রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে আমার!
“মানে? মগের মুল্লুক পেয়েছেন নাকি? আপনি বললেই বিয়ে হয়ে যাবে? এতোই সহজ? আমি মরে গেলেও আপনাকে বিয়ে করবো না..অসম্ভব!”
“আপনি চাইলেই সম্ভব, দেখুন আমি আপনাকে জোর করতে চাইছি না..শুধু এইটুকু জেনে রাখুন আমাকে বিয়ে করলে সবদিক থেকেই লাভবান হবেন আপনি”
“এভাবে আমাকে এনে এখানে বেধেছেন, একপ্রকার হুমকিও দিচ্ছেন তারপরও কোন মুখে বলেন জোর করতে চান না হ্যা? আপনার নামে পুলিশে কমপ্লেইন করবো আমি, আপনার ক্যারিয়ারের বারোটা বাজিয়ে ছাড়বো”
আমার কথায় যেনো বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করলেন না উনি, ঘাড় হাল্কা কাত করে আমার দিকে তাকিয়েই আছেন..আমি চেয়ারের হাতল থেকে হাত ছোটানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি! দড়ির দাগ বসে গেছে হাতে
“শুধু শুধু কেনো নিজেকে হার্ট করছেন? আপনি বিয়ের জন্যে রাজি হয়ে যান, আমিই এটা খুলে দেবো”
চিৎকার করে উঠলাম আমি
“জাস্ট শাট আপ! একটা উল্টোপাল্টা কথা শুনতে চাইনা আপনার! হাত খুলে দিন এখুনি, আর হ্যা এসব বলে লাভ নেই কারণ আমি করবো না আপনাকে বিয়ে!”
“আপনি এত ছট ফট কেনো করছেন? আপনার ধারণা আছে কতো মেয়ে আমায় বিয়ে করার স্বপ্ন দেখে? সেখানে আমি নিজে আপনাকে বিয়ে করতে চাইছি!”
” হতে পারে মেয়েরা আপনার সৌন্দর্য, টাকা দেখে পাগল হয়েছে, আপনার এই রূপটা তো আর তারা দেখেনি..তাছাড়া আমি সেই পাগল মেয়েদের কাতারে পড়ি না”
আবারো সেই ব্যর্থ চেষ্টা করতে লাগলাম, এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে গেলাম আমি কিন্তু হাত ছাড়াতে পারলাম না..উনি এখনো সটানে দাড়িয়ে আছেন চুপচাপ, যেনো আজ ঠিক করেই এসেছেন রাজি করিয়ে ছাড়বেন আমায়..আমি ক্লান্ত স্বরে বলে উঠলাম
“আমার হাত খুলে দিন,বাড়ি যেতে হবে আমায়..আপনার এই পাগলামির জন্যে আমার বাবা মার কি অবস্থা হতে পারে সেই ধারণা আছে আপনার? না জানি কতো চিন্তায় আছে”
“তারমানে আমি ধরে নেবো আপনি রাজি? বিয়ে করবেন আমায়!”
“নাহ! নাহ! এক কথা আর কতবার বলবো? আপনার মতো এরকম লোককে বিয়ে করা অসম্ভব আমার পক্ষে!”
“কেনো অসম্ভব? ভেবে নাও, আমায় বিয়ে করলে আপনার টাকার অভাব হবেনা”
“টাকার লোভ আমাকে একদম দেখাবেন না, লোভী নই আমি যে টাকার লোভে পড়ে বিয়েতে রাজি হয়ে যাবো”
“ওকে! তাহলে কেনো বিয়ে করবেন না? কি কমতি আছে আমার মধ্যে?”
কান্না পাচ্ছে আমার, এই লোকটা আমাকে নিয়ে এখানে কুইজ খেলতে বসেছে নাকি? একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে? একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলাম
“আমার কিছু দায়িত্ব আছে যা বিয়ের আগে আমি পালন করতে চাই, বিয়ে করতে চাইনা এখন! আমাদের অনেক টাকা..”
পুরো কথা শেষ করার আগেই আমাকে চমকে দিয়ে উনি আমার না বলা কথাগুলো গড়গড় করে বলে ফেললেন
“আপনাদের ৬-৭ লাখ টাকার মতো ব্যাংক লোন আছে রাইট? সেটার চেক অলরেডি আপনার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে..আপনার এমবিএর ফাইনাল এক্সাম এর টাকা জমা দেওয়া পেন্ডিং ছিলো রাইট? সেটাও ক্লিয়ার করা হয়েছে..আপনার মাথা থেকে টাকার চিন্তা নামিয়ে দেয়া হয়েছে, আর কিছু জানতে চান? আর কোনো প্রব্লেম আছে?”
অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি লোকটার দিকে, উনি কিভাবে জানলেন আমার ব্যাপারে এতকিছু?
“আ..আপনি কিভাবে এতকিছু..”
“কিভাবে জানলাম সেটা ম্যাটার না, সম্পর্ক শুরুর আগেই আপনার সমস্যা সমাধান করে দিয়েছি সেটা ম্যাটার করে.. আই হোপ আপনি কৃতজ্ঞ আমার প্রতি?”
“হ্যা তো? কৃতজ্ঞতার স্বরূপ বিয়ে করে নেবো নাকি? আমি কি টাকা চেয়েছিলাম আপনার কাছে? আর দিয়েছেন যখন ঠিক আছে, সব ফেরত পাঠিয়ে দেবো..যেতে দিন এবার আমাকে”
“আপনাকে একটা টাকা ফেরত দিতে হবে না, শুধু বিয়েতে রাজি হয়ে যান..আর কিছু চাইনা”
বুঝলাম এর কাটা ওই একখানেই আটকে আছে, এর সাথে কথা বলে লাভ নেই.. বাঁচার জন্যে গলা ফাটিয়ে দিলাম এক চিৎকার, সঙ্গে সঙ্গে উনি কাছে এসে আমার দিকে ঝুঁকলেন আর মুখ চেপে ধরে বললেন
“চিৎকার করে নিজের এনার্জি ওয়েস্ট করে লাভ নেই! এখানে কেউ আপনার চিৎকার শুনতে আসবে না..আর শুনলেও এই গ্যারেজের আশপাশে আসার সাহস করবে না..আমার লোকেরা আছে চারদিকে”
কিছুটা ভরকে গেলাম আমি, গ্যারেজে আটকে রেখেছেন উনি আমায়? আবার লোকবল ও সাথে আছে? আচ্ছা আমি রাজি না হলে উনি কি এখানেই আমাকে মেরে বন্ধ করে রেখে যাবেন? হায় আল্লাহ! এসব ভাবতেই আমার ছোট্ট প্রাণ পাখিটা উড়ে যাওয়ার অবস্থা হচ্ছে! চুপ করে গেলাম আমি, উনি সোজা হয়ে দাড়িয়ে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেললেন, হাত দিয়ে চশমা ঠিক করে বললেন
“আপনি বিয়ে করতে চাননি তাতে আমার প্রব্লেম ছিলো না কিন্তু আপনার রিজেকশনের জন্যে আমার বাবা হার্ট হয়েছে, বাবা আমার বিয়ে করাতে চান আপনার সাথে.. আপনার অসম্মতি আমার বাবাকে কষ্ট দিয়েছে আর সেটা তো আমি মানতে পারবো না”
আমি নাক টানতে টানতে বলে উঠলাম
“পৃথিবীতে আমিই তো একমাত্র মেয়ে নই তাইনা? এতোই যদি আপনাকে বিয়ে করানোর ইচ্ছা তাহলে আপনার বাবাকে অন্য কোনো মেয়ে দেখতে বলুন”
“আপনার আগে পনেরোজন মেয়ে দেখেছে আমার বাবা, ষোলো নাম্বার ছিলেন আপনি আর আপনাকেই পছন্দ হয়েছে বাবার পছন্দ হয়েছে..সো আমার তো আপনাকেই বিয়ে করতে হবে”
বোকার মতো তাকিয়ে রইলাম, আমার মধ্যে কি খাস ব্যাপার আছে যার জন্যে ওনার বাবা আমাকেই পছন্দ করলেন বুঝতে পারছি না আর না উনি কিছু পরিষ্কার করে বলছেন!
“আপনি বারবার একি কথা বললেও আমি মানবো না, তাই বারবার এসব বলা বন্ধ করুন! ছেড়ে দিন আমাকে”
কি যেনো হলো ওনার, মিনিট দুয়েক আমার দিকে তাকিয়ে থেকে নিজেই হাত খুলে দিলেন..লোকটার মাথায় কি চলছে কে জানে, অবশ্য আমি জানতেও আগ্রহী নই, এই মুহূর্তে যে বাড়ি যাওয়ার জন্যে মনটা আসফাস করছে আমার! হাত খুলে দিতেই আমি সামনে ছুটে দরজার দিকে যাচ্ছিলাম তখনই…
“এখন ভোর তিনটা বাজে, সারা সন্ধ্যা, সারা রাত আপনি বাড়ি ফেরেননি, তার ওপর আপনার ফোন ও বন্ধ! সেটা নিশ্চয়ই জানাজানি হয়ে গেছে আপনার এলাকায় ইতিমধ্যে? কি মনে হয় এখন যদি আপনি বাড়ি ফেরেন তাহলে কেমন পরিস্থিতি ফেস করতে হতে পারে আপনাকে? ইউ নো হোয়াট আই মিন?”
পা থেমে গেলো আমার, হঠাৎ মনে পড়লো আমাদের পাড়ায় পর পর দুটো বিয়েতে আমন্ত্রিত ছিলাম আমি! আজ প্রথমে যে বিয়ে হবার কথা ছিলো সেখানে অ্যাটেন্ড করার জন্যে দুপুর থেকেই বাড়ির বাইরে ছিলাম আমি, কিন্তু সন্ধ্যার পর কি হয়েছে সেটা মনে নেই আমার..তখনই উনি আমায় এখানে নিয়ে এসেছেন? অসহায় দৃষ্টিতে তাকালাম ওনার দিকে, উনি বাঁকা একটা হাসি দিলেন!
“ইউ ডোন্ট হ্যাভ আদার অপশন নাও”
ওনার মধ্যে কোনো অনুশোচনা বোধ নজরে পড়ছে না, ঘৃনা হচ্ছে এই লোকটার কথা শুনে! এত্তো খারাপ কেনো উনি?
“আপনার মুখে বাঁধছে না এগুলো বলতে?”
“নাহ!”
রাগ – ক্ষোভ নিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি, গাল বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে আমার.. সমাজটা কেমন সেটা তো অজানা নয় আমার কাছে, আর ওনার কথাও ভুল নয়! ছোটো একটা বোন ও আছে আমার, আজ যদি আমার কোনো বদনাম রটে যায় তাহলে তো আমার বোনের জীবনেও তার প্রভাব পড়বে, আমার মা বাবাকে লোকের কাছে কথা শুনতে হবে..কি করবো আমি এখন?
“আপনার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না? এখনও আয়ত্ত করতে পারছেন না নিশ্চয়ই আপনার ওখানকার অবস্থা রাইট? প্রব্লেম নেই, এখনি সব জেনে যাবেন”
উনি ফোন বের করলেন, কাকে যেনো একটা ফোন করে স্পিকারে রাখলেন আমাকে শোনানোর জন্য
“সিচুয়েশন কি ওখানকার?”
ওপাশ থেকে গম্ভীর স্বরে কেউ এখন বলে উঠলো
“থানা – পুলিশ অব্দি ব্যাপার গড়িয়ে গেছে বস! ম্যাডামের বাবা পুলিশের কাছে গেছিলেন কিন্তু চব্বিশ ঘণ্টা হয়নি বলে পুলিশ কেসটা নেয়নি! তাছাড়া এলাকায় ও এতোক্ষণ এইসব নিয়েই আলোচনায় মেতে ছিলো, রাত বাড়ায় এখন সবাই ঘুমিয়ে গেছে”
উনি আমায় যে ভয় দেখিয়েছেন সেটাই সত্যি হচ্ছে দেখছি, আজ আলোচনা হয়েছে..কাল বদনাম রটতে তো সময় লাগবে না! নিমিষেই যেনো চোখের সামনেই সব শেষ হয়ে যেতে দেখছি!
“ওই বাড়ির সবার অবস্থা কি?”
“ম্যাডামের বাবা চিন্তিত হয়ে একটু অসুস্থ হয়ে গেছিলেন রাতের দিকে..”
কথাটা শোনা মাত্রই ওনার হাত থেকে ফোন টেনে নিলাম আমি, কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানতে চাইলাম
“আমার বাবার কি হয়েছে? উনি ঠিক আছেন তো? প্লিজ বলুন কিছু”
ওপাশ থেকে কোনো উত্তর এলো না, ফোন কেটে দেওয়া হয়েছে! আমি কান্না করতে করতে বসে পড়লাম নিচে! হাত থেকে ফোন ও নিচে পড়ে গেছে! উনি নিচু হয়ে বসলেন আমার সামনে, ফোনটা তুলে পকেটে রাখলেন
“উপস! আমি তো ভেবেছিলাম অন্তত পরেরদিন আলোচনা শুরু হবে, কিন্তু আপনার ওখানে তো আজ থেকেই আলোচনা শুরু হয়ে গেছে.. ভেরি স্যাড!”
ওনার কথাবার্তা শুনে রাগে যেনো কান দিয়ে ধোয়া বের হয়ে যাচ্ছে আমার! ক্ষিপ্র গতিতে ওনার কলার চেপে ধরলাম আমি!
“কি শান্তি পেলেন আপনি আমার সাথে এমন করে? কেনো আমায় বিনা অপরাধেই অপরাধী বানিয়ে দিলেন? আমার মতো সাধারণ মেয়ের সাথে কিসের শত্রুতা আপনার! কেনো করলেন এমন! কেনো?”
ওনার কলার ধরা অবস্থাতেই কান্না করতে করতে কখন যে ওনার বুকে মাথা ঠেকিয়ে ফেলেছিলাম বুঝিনি, মিনিট পাঁচেক ঐভাবেই ছিলাম বোধহয়..উনি তখন শীতল কণ্ঠে বলে উঠলেন
“আপনার সাথে কোনো শত্রুতা নেই আমার, কিন্তু আপনি যে সহজে মানবেন না আগেই ধারণা করেছিলাম, আগেই তো আমাকে বিয়ে করবেন না বলে দিয়েছিলেন, তাইতো এসব করতে হলো!”
কথাটা কানে যেতেই ধাক্কা দিয়ে ওনাকে সরিয়ে উঠে দাড়ালাম, উনি ব্যালেন্স হারিয়ে পড়ে গেছিলেন! একটু বাদে শার্ট ঝেড়ে দিয়ে উঠে দাড়ালেন
“শুরু থেকেই সবটা প্ল্যান করে রেখেছিলেন? বাহ! সুন্দর গেম খেলছেন দেখছি আপনি! আমাকে দিয়েই আমার পরিবারের মান সম্মান ধুলোয় মেশাতে চাইছেন, এদিক – ওদিক দুদিকেই আমাকে দোষী বানাতে পারলেই শান্তি পাবেন?”
উনি দু হাত পকেটে গুজে মিহি হেসে বললেন
“সবে তো কথা ছড়িয়েছে, আপনার চিন্তায় আপনার বাবা একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছে..মেয়ে বাড়ির বাইরে থাকলে চিন্তা হওয়াটা তো স্বাভাবিক..তাতেই আপনার এই অবস্থা তাহলে চিন্তা করুন তো আপনি এই মাঝ রাতে বাড়ি ফিরলে কাল সকালে কি অবস্থা হতে পারে ওখানে?”
রাগে আঁসফাস করতে লাগলাম, ঠোঁট কামড়ে নিজেকে সংযত করার চেষ্টায় আছি! সামনে দাড়িয়ে থাকা লোকটার প্রতি এতো ঘৃনা হচ্ছে যা প্রকাশের ভাষা নেই, এরকম ঘৃনা হয়তো কাওকে কোনোদিন করিনি আমি! আমার দিক থেকে চোখ সরিয়ে ঘুরে দাড়ালেন উনি!
“এখনও গুরুতর কিছু হয়নি মিস.সুরভী!..একবার বিয়েটা হয়ে গেলেই এসব কথার প্রভাব আপনার পরিবারের ওপর কোনো পড়বে না, আর না তো আমি পড়তে দেবো!”
আমি উত্তর দিলাম না, ইচ্ছে করছে এই লোকটাকে এখনি শেষ করে দিতে, অপরাধ করে অপরাধী হলে তো সমস্যা নেই! কিন্তু সেটাও যে পারবো না
“এখন সবটা আপনার ওপর! এতকিছুর পরও যদি আপনি যেতে চান তাহলে..”
“আমি আপনাকে বিয়ে করবো”
থমথমে গলায় কথাটা বলে দিলাম, উনি ঘুরে তাকালেন আমার দিকে..চোখেমুখে বিস্ময়ের বিন্দুমাত্র লেশ নেই, যেনো উনি জেনেই বসেছিলেন আমি রাজি হয়ে যাবো! অবশ্য যা পরিস্থিতি দেখছি তারপর তো রাজি না হয়ে উপায় ও নেই আমার কাছে!
“আপনার থেকে এই উত্তরটাই আশা করেছিলাম”
চোখ মুছলাম আমি, পণ করে নিয়েছি মনে মনে যে এই লোকের জীবনের বারোটা বাজিয়ে ছাড়বো আমি!
“এরপরও যদি আমার পরিবারের ওপর কোনো কথা ওঠে তাহলে কিন্তু এক মুহুর্ত আমি অপেক্ষা করবো না আপনার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে”
“তেমন কিছুই হবেনা!”
“আপনার ওপর বিশ্বাস করতেও বাঁধছে আমার! আজ নিরুপায় বলে আপনার.. যাই হোক এখন তো গভীর রাত! বিয়েটা নিশ্চয়ই আজ সম্ভব না!”
“নাহ! আজ হবে, এখুনি হবে..দেরি করতে চাইনা!”
কিছুটা অবাক হলাম আমি, এতো রাতেই বিয়ের জন্যে তৈরী উনি? কিভাবে? উনি ফোন করলেন কাকে যেনো, একটু বাদেই দেখলাম দুটো লোক এলো, সাথে একজন মওলানা গোছের লোক! বুঝলাম উনি কাজী, এই লোকটা কাজী ও ঠিক করে রেখে দিয়েছেন!
“এসো!”
উনি আমার হাত ধরতেই ঝাড়ি মেরে হাত সরিয়ে নিলাম
“খবরদার আমার হাত ধরবেন না, আর একদম আমার ক্লোজ হবার চেষ্টা করবেন না..আপনাকে বিয়েটা বাধ্য হয়ে করছি যাতে আমার পরিবারের ওপর কোনো কথা না ওঠে..এছাড়া আর কিছুই না”
উনি কিছু বললেন না, আমি ফুপিয়ে এখনও কান্না করে যাচ্ছি, নিজেকে আবারো সামলানোর চেষ্টা করলাম! নিজেকে যে সামলাতে হবে আমায় এখন! অনিচ্ছা সত্বেও মাথায় ওড়না তুলে নিয়ে তাকালাম ওনার দিকে
“একটা কথা জেনে রাখবেন, বিয়েটা করছি! কিন্তু আপনাকে শান্তিতে থাকতে দেবো না আমি, খুব শখ না আমাকে বিয়ে করার? বিয়ের সব ইচ্ছে ঘুচিয়ে ছাড়বে এই সুরভী, মনে রাখবেন কথাটা!”
ভাবলেশহীন নজরে দেখলেন উনি আমায়, যেনো আমার রাগ ঘৃণায় কিছুই যায় আসেনা ওনার! বিয়েটা যেনো ওনার কাছে একটা টাস্ক, সেটাই চুপচাপ পূরণ করছেন উনি, ব্যাস এছাড়া আর কিছুই না!
__________________________
জাফরানের আলিশান বাড়ির ড্রইং রুমে দাড়িয়ে আছি আমি, হ্যা বিয়েটা করেই নিয়েছি ওনাকে! কি অদ্ভুত তাইনা? আজই তো সবে ঘৃনা করতে শুরু করলাম লোকটাকে আর আজই ওনার স্ত্রী হয়ে গেলাম!
“আজ থেকে আপনি..”
“আমি আপনার স্ত্রী এই কথাটা শুনতে চাইনা”
উনি স্মিত হাসলেন! আমি আড়চোখে ওনার হাসি দেখলাম..গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে লোকটাকে দেখে!
“ভাববেন না, আমি বলবো না আপনি আমার স্ত্রী! তবে হ্যা আজ থেকে এই বাড়ির বউমা আপনি, আমার বাবার বৌমা!”
চলবে….