মন মহুয়া পর্ব-৯+১০

0
800

#মন মহুয়া

রাইটার – Farhana Rahaman আয়াত

পার্ট -০৯

আজ মহুয়ার কলেজের প্রথম ক্লাস।
মিনার অফিসে যাওয়ার আগে মহুয়া আর মিমিকে কলেজে পৌঁছে দিতে যায়।
সবকিছু নতুন লাগছে মহুয়ার।বেশ খুশি লাগছে।বিয়ের পরও যে পড়াশোনা করতে পারবে বুঝতেই পারেনি।সবকিছুর মধ্য তানিয়াকে বেশ মিস করছে।ও যদি একই কলেজে পড়তে ভর্তি হতে পারতো তাহলে দুজন আগের মত একসাথে সময় কাটাতে পারতো।এখন সবাই অজানা।মহুয়া আছে নিজের চিন্তা ভাবনার জগতে। এদিক সেদিক চোখ বুলিয়ে দেখছে।আর মিনার দেখছে মহুয়াকে।নিজে নিজেই ভাবছে,কে বলবে এই পিচ্ছি টা আমার বউ।সাদা একটা লং ড্রেস, পিংক কালারের সুতির ভারী একটা ওরনা,হাতে কাচের চুড়ি।এত সিম্পল সাজেও এত অপূর্ব সুন্দর লাগছে মহুয়াকে।ছোট পুতুলের মতো।
আজ প্রথম দিন তাই মিনার কিছুক্ষন থাকে কলেজে। তারপর অফিসে চলে যায়।
মহুয়া ক্লাসে প্রবেশ করতেই কেউ একজন ওকে এসে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে। মহুয়া খানিকটা ঘাবড়ে যায়।তাকিয়ে দেখে তানিয়া।মহুয়ার তো বিশ্বাসই হচ্ছিলো না।তানিয়া বলে কি রে ভুত দেখার মতো কি দেখছিস?
মহুয়া হাসবে নাকি কাদবে বুঝতে পারছেনা। বলে,তুই এখানে? কি করে?বলিস নি কেনো?
তানিয়া বলে সব বলবো আগে ক্লাস শেষ করে নি।ওই দেখ স্যার আসছে।মিমি সহ গিয়ে এক বেঞ্চে বসে পড়ে। প্রথম দিন তাই মাত্র দুটো ক্লাস হলো।ক্লাস শেষে মিমি ওদের নিয়ে ক্যান্টিনে যায়।মিমি ওর কিছু পরিচিত ফ্রেন্ডের সাথে বসে আড্ডায় মেতে উঠে।মহুয়া আর তানিয়ার সেখানে ভালো লাগছিলো না তাই ওরা বাইরে এসে ক্যাম্পাসটা ঘুরে দেখে কিছুক্ষন তারপর কলেজ গেইটের সামনে একটা বড় মহুয়া গাছ দেখতে পায় ওরা।মহুয়া তো খুশিতে দৌড়ে গেলো গাছটার নিচে।এখানে যে মহুয়া গাছ দেখতে পাবে মহুয়া ভাবতে পারেনি। আসার সময় দেখলো না কেনো তাই ভাবছে মহুয়া।মহুয়া ঘুরে ঘুরে গাছটা দেখতে লাগলো। গাছটা বেশ পুরোনো দিনের মনে হচ্ছে।অনেক মোটা ডালপালা গুলো।এখনো ফুল ফুটেনি।তাও একটা মিস্টি গন্ধ নাকে এসে লাগছে মহুয়ার।
তানিয়া মহুয়ার কান্ড দেখে বলে,বাহ মনে হচ্ছে আমার না আসলেও হতো।তুই তো তোর আসল বন্ধুকে পেয়ে গেছিস।
মহুয়া হেসে তানিয়ার হাত ধরে গাছটার নিচে বসে।বলে আমার কি ভাগ্য না চাইতেও আমার সব স্বপ্ন আর ইচ্ছেগুলো বাস্তবে পরিণত হচ্ছে।তুই জানিস সকাল থেকে কত মিস করেছি তোকে।এবার বল এখানে কি করে?
তানিয়া হেসে বলে,সে অনেক কথা।এরপর তানিয়া বলা শুরু করলো।
তুই ছাড়া থাকা অসম্ভব মনে হচ্ছিলো রে তাই চলে আসলাম।মহুয়া হেসে বলে,আমি নাকি আমার দেবর কে ছাড়া?
তানিয়া বলে,আরে দূর।তোর দেবর তো আমার কাছে টিকিট। তোর কাছে যাওয়ার জন্য।
মহুয়া বলে,তাই নাকি?তুই সত্যি মিলন ভাইকে পছন্দ করিস না?
তানিয়া বলে, ছেলে মন্দ না।
দুজনেই হেসে দিলো। তানিয়া বলে এখানে ভর্তির সব তোর দেবর টা করে দিলো। আমি তোকে জানাতে মানা করেছিলাম। মহুয়া বলে, বাসায় কি বলে রাজি করলি?আর এখানে কই আছিস?
তানিয়া বলে, ওর ছোট খালার বাসায় থাকছে হোস্টেল এ সিট না পাওয়া পর্যন্ত।আর বাসায় সবাই কে রাজি করিয়েছে অনেক কস্টে।ভালোভাবে পড়াশোনা করবে বলে। মহুয়া তানিয়াকে জড়িয়ে ধরে। দুজন কথা বলতে বলতে অনেকটা সময় পার হয়ে যায়।মিনার মহুয়াকে দুবার কল দিয়েছে এর মধ্য কিন্তু মহুয়ার ফোন সাইলেন্ট ছিলো তাই রিসিভ করতে পারে নি। অন্যদিকে মিমি এসে বলে, ভাবী ভাইয়া বাইরে নিতে এসেছে।তোমাকে যেতে বলেছে। ভাইয়া অপেক্ষা করছে।আমার কিছু কাজ আছে।আমি পরে আসবো। বাই বলে মিমি চলে গেছে। মহুয়া তানিয়াকে বাই বলে বেরিয়ে আসে। মিনার মহুয়া কে দেখে হর্ণ দিল দুবার।মহুয়া দেখতে পায় মিনার কে।গিয়ে চুপচাপ মিনার এর পাশে বসে পড়েছে।মিনার চুপচাপ ড্রাইভ করছে। মুখ দেখে বুঝাই যাচ্ছে রেগে আছে।মহুয়া আড়চোখে মিনার কে দেখছে।মিনার বাসায় ফিরে আশেপাশে কেউ আছে কিনা দেখে মহুয়াকে টেনে নিজের রুমে নিয়ে গেলো।
মহুয়া মিনারের মুখ দেখেই বুঝে গেছে খুব রেগে আছে। মিনার বলে কি দেখছো রসোগোল্লার মতো চোখ করে?ফোন কই তোমার?কতবার বলেছি একবার এ কল রিসিভ করতে?কি হলো?
মহুয়া নিচের দিকে তাকিয়ে বলে, আসলে ফোন সাইলেন্ট ছিলো বুঝতে পারিনি।
মিনার বলে, সাইলেন্ট ছিলো তো চেক করা যায় না কল এসেছে কিনা?মিসড কল দেখে কল ব্যাক করা যায় না?
মহুয়া এবার চুপ করে চেয়ে আছে মিনারের দিকে।মিনার কে একদম বুঝতে পারে না।একদিকে বলে ভয় না পেতে অন্যদিকে নিজেই রাগ দেখায়।চোখগুলো দেখলেই ভয় লাগে।
মিনার বলে আবার চুপ করে আছে।যাও গিয়ে ফ্রেস হয়ে আসো।আমি আসার আগেই যেন খাবার টেবিলে দেখি ।মহুয়া দৌড়ে বেরিয়ে চলে আসে।মিনার হাসছে এবার।মহুয়াকে ভয় দেখাতে বেশ লাগে ওর।প্রথম দিন থেকেই। মুখটায় মায়ায় ভরে যায় ভয় পেলে।
মহুয়া কোনভাবে ফ্রেস হয়ে জামা পাল্টে নিচে এসে খাবার টেবিলে এসে অপেক্ষা করছে মিনারের।মিনার এসে দেখে মহুয়া বসে আছে।একটু হেসে বসে পড়ে খেতে।মহুয়া অল্প খেয়ে উঠতে গেলেই মিনার ধমক দিয়ে বলে,যাচ্ছো কই?এগুলো খাওয়া বলে?মিনার মহুয়ার প্লেটে কিছু সব্জি আর সালাদ দিলো।এগুলো চুপচাপ খেয়ে নাও।আর আমি না উঠা পর্যন্ত কখনো উঠবেনা জায়গা থেকে।মহুয়া পরেছে মহা মুশকিলে।কি করবে ভাবছে। একে তো অবেলায় খেতে বসেছে। তার উপর এখন মিনারের খাবার নিয়ে এত জোর করা। কি করে এসব খাবে এখন।শুধু সব্জি কি খাওয়া যায়।ভাত নিলে তো পেট ফেটে যাবে।মুখে গাজর একটা মুখে পুরে চিবাতে লাগলো। মিনার আড়চোখে ওকে দেখছে আর মনে মনে হাসছে।মহুয়া কে আরো হেলদি করার জন্য মিনার এমন করছে।মহুয়াকে এক্টু যত্ন করার দরকার।ওজন ৪০ থেকে বেশি হবে না মনে হচ্ছে মিনারের।এই কয়দিনে যেন আরো পাটকাঠির মতো হয়ে গেছে। এর মধ্য অসুস্থ ছিলো কয়দিন।ডাক্তার বলে দিয়েছে ওর আরও হেলদি হওয়া দরকার। মিনার নিজেও অনেক স্বাস্থ্য সচেতন।তাই এসব দিকে নজর বেশি।
মহুয়া চুপচাপ খেয়ে নেয় উপায় না পেয়ে।মিনার নিজের রুমে চলে গেলো। মহুয়া সবকিছু গুছিয়ে নিজের রুমে গিয়ে কিছুক্ষন শুয়ে থাকে।এপাশ ওপাশ করছে কিন্তু শান্তি হচ্ছে না।উঠে ছাদে গিয়ে কিছুক্ষন হাটাহাটি করে দোলনায় বসে বসে মহুয়ার তানিয়াকে ফোন করে। কথা বলতে বলতে খেয়ালই করেনি মিনার পিছনে দাড়িয়ে আছে।হুট করে মিনার কে দেখে বেশ ভয় পেয়ে যায়।মিনার চুপচাপ ওর ফোন টিপছে কিন্তু মহুয়া ভয়ে নিজ থেকেই বলে,আমি তানিয়ার সাথে কথা বলছিলাম।আসলে তানিয়াও একি কলেজে ভর্তি হয়েছে।আজ এজন্য এক্টু দেরী হয়ে গেছে।
মিনার কে কিছু বলতে না দেখে মহুয়া চুপ হয়ে গেছে।মিনার এবার বলে উঠে, দুকাপ চা নিয়ে আসো।
মহুয়া আর কিছু না বলে নিচে চলে আসে চা বানানোর জন্য। মিনার মনে মনে বলে আসলেই পিচ্ছি বউ।কি করে যে সংসার করবে।
মহুয়া চা বানিয়ে ভাবছে দুকাপ কেনো নিতে বলছে মিনার।মহুয়া চা বানিয়ে ছাদে এসে মিনার কে দিলো।মিনার ওকে বসতে বলে।মহুয়া বসলে ওকে এক কাপ এগিয়ে দিয়ে খেতে বলে। মহুয়া কাপটা হাতে নিলো।মিনার চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলে কলেজে আজ কেমন লাগলো?
মহুয়া বলে, ভালো।
মিনার বলে,কেউ জ্বালাতন করেছে কিনা?মহুয়া না বলে।মিনার বলে,ফোনে কথা বলো আর যাই করো আমার কল দেখা মাত্র সব বাদ দিতে হবে আর পরীক্ষায় ভালো করতে হবে।মাথায় থাকবে?
মহুয়া মাথা ঝাকায়।মিনার বলে,আর হ্যা যা খুশি করতে পারো আমাকে হিসাব দিতে বলছি না কিন্তু এমন কিছু করবে না যাতে সবাই কস্ট পায়।আর মাথায় রাখবে তুমি আমার,,,বলে থেমে যায়।
মিনার আবার বলে,নিজে ভুল না করলে কখনো ভয় পাবেনা।বিশ্বাস রাখলেই হবে।আর হ্যা কখনো কিছু লুকাবেনা।শেয়ার করবে।কিছু দরকার হলে বা কিছু কোনো সমস্যা হলে না লুকিয়ে বলবে।মহুয়া চুপচাপ ওর কথাগুলো শুনতে লাগলো। মিনার আবার বলে,আজ এতো সব কথা বলছি কারন এখন তুমি আমার দ্বায়িত্ব। আমাদের পরিবারের একজন।বাইরে যাবে নতুন নতুন অনেক কিছু ঘটবে,অনেক কিছু জানবে আর দেখবে তাই এসব বলছি।আপনজন সবসময় পাশে থাকবে।কিন্তু লুকালে বিপদ ছাড়া কিছুই বাড়বেনা।
মিনার উঠে চলে আসার সময় আবার পিছু ফিরে বলে,আর হ্যা রোজ সন্ধায় এমন চা চাই।বলে মিনার চলে আসে।
মিনার নিজেও জানেনা এসব কথা কেনো বলছে মহুয়াকে।ফুফু ঠিকই বলে, কালেমা পড়ে বিয়ে হলে সম্পর্কে টান টা চলেই আসে।মায়া বাড়ে।এই অল্পদিনেই বেশ টান পড়ে গেছে মহুয়ার উপর।সম্পর্কটাকে আস্তে আস্তে মানিয়ে নেওয়ার চেস্টা করছে।

মহুয়া চুপচাপ বসে বসে মিনারের কথাগুলো ভাবছে।মিনার কে রাগী মনে হলেও বেশ যত্নশীল আর দায়িত্ববান মনে হচ্ছে।বেশ স্পষ্টবাদী মিনার।কথাগুলোতে কোনো জটিলতা নেই।সহজভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছে।মহুয়ার একটি কথায় বারবার মনে পড়ছে। মিনার এর বলতে গিয়েও থেমে যাওয়া কথাটি।মহুয়া ওর,,,বউ?মহুয়া একটু হাসে।

মিনার অফিসের কাজে বেশ মনোযোগ দিয়েছে। সাথে সাথে নিজের পড়াশোনা আর মহুয়ার প্রতিও।রোজ মহুয়াকে কলেজে পৌঁছে দিয়ে অফিসে যায়।দুজন অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে। দিনগুলো বেশ কাটছে।
অন্যদিকে তানিয়া আর মিলনও চুটিয়ে প্রেম করছে।কলেজ শেষে ঘুরাফেরা, রাতে কথা বলা সবটা আগের থেকেও বেশি হচ্ছে।মিলন তো প্রথম দিন থেকেই তানিয়াকে ভালোবেসে ফেলেছিলো।আর এখন তানিয়াও ওকে ভালোবেসে ফেলেছে।

শুক্রবার ছুটির দিনে সবাই ঘুমাচ্ছে বেলা করে।মহুয়া তো ভোরেই উঠে গিয়েছিলো।ছাদ থেকে নিচে তাকাতেই এক্টা ভ্যান গাড়ি দেখতে পায় মহুয়া।অনেকগুলো ফুলের চারা ভ্যানে।নার্সারি থেকে নিয়ে বিক্রি করে চারাগুলো। মহুয়া আগেও অবশ্য দেখেছিলো।কিন্তু নিতে পারেনি। আজ নিবে বলেই তারাতাড়ি করে নিচে নামতে থাকে। হঠাৎ নিচের তলায় সিড়ি দিয়ে নামতে গেলেই কারো সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে গেলো মহুয়া।

চলবে,,

#মন মহুয়া

রাইটার – Farhana Rahaman আয়াত

পার্ট – ১০

মহুয়া উঠতে উঠতে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে।লম্বা চওড়া একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে।চোখ দুটি লাল হয়ে আছে দেখেই ভয় হচ্ছে।শরীর থেকে খুব বাজে একটা গন্ধ আসছে।নেশা করেছে হয়তো।এমন ভাবে দেখছে যেনো মনে হচ্ছে মহুয়াকে চোখ দিয়েই এক্স রে করছে পা থেকে মাথা পর্যন্ত। এক নজরে দেখছে মহুয়াকে।মহুয়া কিছু বলতে গিয়েও বললো না আর।সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখে ভ্যানটা চলে গেছে। মহুয়া মন খারাপ করে উপরে উঠতে গেলেই ছেলেটা আবার এসে ওর হাত ধরে নেয়।মহুয়া হাত টা ছাড়িয়ে নেয়।ছেলে টা বলে,তুমি কে?এখানেই থাকো?আগে তো দেখিনি।
মহুয়া কিছু না বলেই দৌড়ে চলে আসে উপরে।উপরে এসে মহুয়া চা বানাচ্ছিলো।হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠে। মহুয়া দরজা খুলে ছেলেটা কে আবার দেখতে পায়। মহুয়া ভয় পেয়ে পিছনে চলে আসে।মহুয়া ভাবছে ছেলেটা ওকে কেনো ফলো করছে।
ছেলেটা আবার বলে, ওহ তুমি এখানেই থাকো?
মহুয়া বলে,আপনি কে?এখানে কি চায়?
ছেলেটা হেসে বলে, আমাদের বাড়িতে থেকে আমাকেই বলছো আমি কে?তুমি কে সেটা বলো?
মহুয়া ভাবছে এতদিন এখানে আছে এই ছেলেটা কে আগে তো দেখেনি।মহুয়া কিছু বলার আগেই ছেলেটা ভিতরে ঢুকে পড়ে। মহুয়া আরেকটু পিছিয়ে যায়।
মহুয়া কিছু বলার আগেই মিনার পিছন থেকে বলে, আরে ফাহাদ তুই?কখন এলি?
ফাহাদ হেসে বলে, আমিতো কাল রাতেই এসেছি।
মিনার মহুয়াকে বলে রুমে যেতে।মহুয়া তাড়াতাড়ি করে নিজের রুমে চলে গেলো। ফাহাদ ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। মিনার বলে, তারপর বল কি খবর?এত সকালে তো উঠিস না।আজ এত ভোরে?
ফাহাদ বলে,বাজে অভ্যাস আছে জানিস না?রাত জাগা টা খারাপ অভ্যাস হয়ে গেছে আর দিনের বেলা ঘুমানো টা।ঘুম আসছিলো না তাই ভাবলাম একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি।আচ্ছা মেয়েটা কে রে?আগে তো দেখিনি।
মিনার হুট করে বলে ও আমার ব…….থেমে যায়।বলে বাড়ির রাশেদ আংকেল আছে না? ওনার মেয়ে।
ফাহাদ বলে, এখানেই থাকে?
মিনার হ্যা বলে।ফাহাদ বলে ওহ আচ্ছা ভালো। আচ্ছা আসি বলেই ফাহাদ চলে যায়। মিনার এর মাথায় অনেক কিছু ঘুরপাক খাচ্ছিলো হুট করে। ফাহাদ ওর মেঝ চাচার ছেলে।বিদেশ থেকে এসেছে।ওর বদ অভ্যাসগুলো বদলাইনি একটাও।মহুয়ার কথা বারবার কেনো জিজ্ঞেস করলো ফাহাদ?খুব খারাপ চোখেই দেখছিলো যেটা মিনারের একদম পছন্দ হয়নি।

মহুয়া উকি দিয়ে দেখে ফাহাদ চলে গেছে। রান্নাঘরে গিয়ে চা বানিয়ে মিনার আর ফুফুকে দিয়ে আসে।
মহুয়ার মনটা ভালো লাগছিলো না। বাবার কথা খুব মনে পড়ছে। গতকাল থেকে ফোন করেই যাচ্ছে কলব্যাক করছেনা।মা কে করলে একগাদা কথা শুনিয়ে দিবে।তাও ভয়ে ভয়ে ফোন দিলো।কল রিসিভ করলো না দুবার করার পরও।রাতুল এর ফোন ও বন্ধ। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না। মহুয়ার কাছে তো তানিয়ার মায়ের নাম্বারও নেই।মহুয়া তানিয়াকে কল করে এবার।তানিয়া বাড়িতে ফোন করে খবর নেয়।মহুয়ার বাবা কে হাসপাতালে ভর্তি করেছে গতকাল।কি হয়েছে সেটা জানেনা।মহুয়া তো কান্না করতে করতে চোখমুখ লাল করে ফেলেছে।কি করবে ভাবছে। যেভাবেই হোক যেতে হবে। মাকে বলতে হবে।
মহুয়া ছুটে নিচে নামছিলো। মিনারের সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যেতে মিনার ওকে আগলে ধরে।মিনার মহুয়াকেই ডাকার জন্য যাচ্ছিলো কলেজে যাওয়ার জন্য আসছেনা দেখে।মহুয়ার চোখমুখ দেখে মিনার অবাক হয়ে গেছে। মহুয়াকে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে কিন্তু মহুয়া কান্নার জন্য কিছু বলতে পারছেনা।লুকানো কান্নাটা মিনারকে দেখে যেন বেরিয়ে আসছে।মিনারকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মহুয়া।
আব্বু হাসপাতালে।আমাকে নিয়ে চলুন প্লিজ।মিনার এর আর বুঝতে বাকি রইলো না।মিনার মহুয়াকে বসিয়ে কল করে ওর বাবাকে।ওনি আগেই অফিসের জন্য বেরিয়েছেন আজ।মিনার মাকে জানিয়ে মহুয়াকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।সারাটি পথ মহুয়া নিঃশব্দে কাঁদতে কাঁদতে গেছে।মনের মধ্যে ভয়টা নিয়ে।মায়ের মতো বাবাকেও না হারিয়ে ফেলে।হঠাৎ কেনইবা এতটা শরীর খারাপ তাও বুঝতে পারছেনা মহুয়া।
মহুয়া আর মিনার যখন পৌছে যায় মহুয়ার বাবার অবস্থা তখনও খারাপ। একটা বেডে শুইয়ে রেখেছে।
মিনার ডাক্তার এর সাথে কথা বলে। ওনারা বলেন ওনাদের আর কিছু করার নেই।অপারেশন করা যেতে পারে কিন্তু তারা ঝুঁকি নিতে চান না।আর মহুয়ার মহুয়ার মা তো মানা করেছে অপারেশন করাতে।কারন অনেক টাকার ব্যাপার আর তাছাড়া অপারেশন করলে সম্ভাবনা খুব কম তাই ঝুঁকি নিতে চান না।মিনার ওর বাবার সাথে যোগাযোগ করে মহুয়ার বাবাকে শহরে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে।সেখানে মিনার এর বাবার পরিচিত এশিয়ান হস্পিটালে সবটা ব্যবস্থা করে রাতের মধ্য এম্বুলেন্সে করে ওনাকে নিয়ে আসা হয়।নতুন করে সব রিপোর্ট করেও ডাক্তাররা একই কথা বলছে। অপারেশন করলে বাঁচার সম্ভাবনা খুব কম কিন্তু না করলেও তিনি বাচঁবেন না। মিনার মহুয়াকে বলে সবটা।মহুয়া অনেক ভেবে চিন্তে মিনারকে অপারেশন করতে বলে।মহুয়ার মা রাগে গজগজ করতে করতে ওকে অনেক কথা শুনায়।কিন্তু মহুয়া কানে তুললো না।মহুয়া শুধু একটা কথা বলে,আমার বাবা হয় বাঁচবে নাহলে কস্ট থেকে মুক্তি পাবে।কিন্তু মায়ের মতো তিলে তিলে মরবেনা।আর হ্যা টাকার জন্য ভাবতে হবে না।ভাবার টাকায় বাবার চিকিৎসা হবে।বাবা যে জমিটা আমার নামে কিনেছে সেটা বিক্রি করলেও টাকা চলে আসবে।আর কোনো কথা আমি বলতে চাইনা।
মিনার বেশ অবাক হয়ে মহুয়ার কথাগুলো শুনছে।এই মেয়েকে পিচ্ছি বলাটা ভূল মনে হচ্ছে মিনারের। সব থেকে বড় সিদ্ধান্তটা আজ এই পিচ্ছিটাই নিয়েছে আর সেটা একদম সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সারাটা রাত মহুয়া ওর বাবার পাশে বসেছিলো।মিনার বাইরে থেকে বারবার ওকে দেখছিলো।এখন মহুয়ার চোখে আর জল নেই।কেমন একটা মূর্তির মতো হয়ে আছে।মেয়েটা সবার সামনে কান্না করে না।কিন্তু মিনার এর সামনে করে দেয় কেনো তাই ভাবছে মিনার।

অপারেশন টা পরের দিন সকালেই হয়।অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে কিন্তু জ্ঞান ফিরছে না সেটাই চিন্তার বিষয়।

তানিয়াও সকালেই চলে এসেছিলো। মহুয়ার পাশেই বসে আছে সারাক্ষন।দুপুর পার হয়ে যায়।মহুয়াকে অনেক বলেও কিছু খাওয়াতে পারলোনা কেউ।মিনার উপায় না পেয়ে পাশে বসে নিজে জোর করে মহুয়াকে এক টুকরো কেক খাইয়ে কফি টা খাইয়ে দিলো।মহুয়াও মিনার এর ধমক শুনে আর কিছু না বলে অল্প খেলো।সন্ধ্যায় মহুয়ার বাবার জ্ঞান ফিরে।আইসিউ থেকে রাতে কেবিনে দেওয়া হলো তাকে।মহুয়া বাবার পাশেই বসে আছে। মিনার গেছে ওষুধ আনার জন্য।মহুয়ার বাবা মহুয়ার দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলছে।মহুয়া চোখ মুছে দিতে দিতে বলে,কি ভেবেছিলে? মায়ের মতো চলে যাবে?তা আর হবে না।
আর শুনো একদম কথা বলবেনা আমার সাথে।একটা কথাও শুনবো না তোমার।এখন অসুস্থ তাই ঝগড়া করবো না আর।ডাক্তার বলেছে একদম কথা না বলতে
তাই আজ ছাড় দিলাম।

মহুয়ার বাবাকে আজ বাসায় নিয়ে যাবে। হসপিটালের সব ফরমালিটি মিনার শেষ করেছে।মহুয়ার মা কে গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছিলো আগেই।কিন্তু মহুয়ার বাবাকে মিনারদের বাসায় নিয়ে যাবে।ওনার যত্ন আর চিকিৎসার জন্য।চেকআপ করতে হবে রেগুলার। তাই যতদিন সুস্থ না হচ্ছেন এখানেই থাকবেন।সবটা মিনার করছে।মহুয়ার বাবা রাজিই হচ্ছিলো না। কিন্তু মিনার রাজি করিয়েছে।
বাড়িতে ফিরেই মহুয়া ওর বাবাকে ওর রুমে নিবে ভাবছিলো কিন্তু মিনার মহুয়া কিছু বলার আগেই ওর বাবাকে নিয়ে মিলনের ঘরে চলে যায়। মহুয়া দেখে বুঝার চেষ্টা করছে মিনার কি করতে চাইছে।মহুয়ার বাবা ঘুমিয়ে পড়লে মহুয়া নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায় তখন মিনার ওর হাত ধরে নিজের রুমে নিয়ে গেলো।
মিনার বলে, আজ থেকে এই ঘরে থাকবে তুমি।সব জিনিসপত্র এখানেই আছে।মিমি আর মা এনে দিয়েছে।গিয়ে ফ্রেস হয়ে নাও।
আমি এখানে কেনো থাকবো?আমি উপরের ঘরেই থাকবো মহুয়া বলে।মিনার ধমক দিয়ে বলে কথা একবারে বুঝো না?তুমি এখানেই থাকবে তাও আমার সাথেই।
মহুয়া নিচু হয়ে বলে, কিন্তু কেনো?
মিনার বলে, আংকেল এখানেই থাকবে। ওনি যদি আলাদা থাকতে দেখেন আমাদের কস্ট পাবেন।উপরের ঘরে মিলন থাকবে।
মহুয়া বলে, কিন্তু আপনি তো বলেছেন কেও জানলে সমস্যা হবে।
বেশি পাকা হয়ে যাচ্ছো তাইনা।যা বলছি করো।আর শুনো এমন পিচ্ছি বউয়ের সাথে একসাথে থাকার ইচ্ছে আমার নেই।শুধু মাত্র আংকেল এর জন্য বলছি। আর কেও জানবে না।আপুর বিয়ে পিছিয়ে গেছে দুমাস।
যাও আর পাকামি না করে। মহুয়া ফ্রেস হতে চলে যায়।

মিনার ফাহাদ আসার পরই ভেবে নিয়েছিলো মহুয়াকে চিলেকোঠার ঘরটায় একা থাকতে দিবেনা।পাজিটা কখন কি ঘটনা ঘটায়।
মহুয়া ফ্রেস হয়ে এসে দেখে এখনো মিনার এক জায়গায় বসে কি যেনো ভাবছে।মহুয়া কাছে গিয়ে বলে চা করবো খাবেন?
মিনার বলে হুম।
মহুয়া যাওয়ার সময় মিনার বলে,শুনো।মহুয়া ফিরে তাকালে বলে,আজ থেকে ছাদে যাবেনা যখন তখন। একা তো একদমই না।মহুয়ার মুখটা শুকিয়ে গেছে। হুট করে কি হলো মিনারের তাই ভাবছে।নিজের ঘরে রাখছে আবার ছাদে যেতে মানা করছে।জিজ্ঞেস করতে গেলে আবার বকা খেতে হবে।তাই মহুয়া কিছু না বলে চলে আসে।

রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে মহুয়া ওর বাবার রুম থেকে আসছে না।ভাবছে কি করবে।আগেও মিনারের সাথে একরুমে থেকেছে কিন্তু ভয় হয়নি কিন্তু এবার মিনারের হাবভাবে ভালো লাগছে না মহুয়ার।অন্যদিকে মিনার অনেক্ষন পায়ছারি করছে ঘরে। মহুয়া আসছে না দেখে কেমন যেন রাগ হচ্ছে।মিনার ফোন টা হাতে নিয়ে মহুয়াকে কল দেয়।মহুয়া কল দেখেই ভয় পেয়ে যায়।বাবার সামনে কি করে রিসিভ করবে।তারাতাড়ি ফোন টা নিয়ে একদৌড়ে নিজের রুমে চলে আসে।মিনারের সামনে দাড়াতেই ফোন কেটে যায়।মিনার বলে এতক্ষন লাগে কেনো?কয়টা বাজে?
মহুয়া বলে বাবার ওষুধ দেওয়ার ছিলো।
ঠিক আছে। সব কাজ শেষ নাকি বাকি আছে?মিনার বলে।মহুয়া বলে না।তাহলে দাড়িয়ে আছো কেনো? যাও ঘুমাতে।
মিনার এর কথা শুনে মহুয়া চুপচাপ শুয়ে পড়ে।
মহুয়া ভয়ে পাশ ফিরে দেখছেও না।কিন্তু মিনার পাশে শুয়ে মহুয়ার খোলা চুলগুলো দেখছে।পিচ্ছি বউয়ের লম্বা চুল।দিন দিন কি মায়ায় জড়িয়ে পড়ছে তাই ভাবছে মিনার।ওর ইচ্ছে করছে চুলগুলোর মধ্য বিলি কেটে দিতে।কানের পাশের চুলগুলো সরিয়ে আলতো করে ছুয়ে দিতে।কিন্তু মিনার নিজেকে সংযত করে চোখ বুজে ঘুমিয়ে পড়ে।

মহুয়া আজকাল বাসায় থাকছে বাবার দেখাশুনা করার জন্য। তানিয়া ওর জন্য সব নোটস করে মিলন কে দিয়ে পাঠিয়ে দেয়। নিজেও মাঝে মাঝে এসে দেখা করে যায়।
মিনার অফিসের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেছে। কিন্তু সবদিকে নজর রাখে।মহুয়ার বাবাকে চেকআপ করাতে নিয়ে যায় নিজে।অনেকটা সুস্থ এখন।বাড়ি যাওয়ার জন্য বারবার বলছে।তাই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েছে মিনার। ওনি এখন সুস্থ।ওষুধ নিয়মিত খেতে হবে আর একমাস পর আবার নিয়ে যেতে বলেছে। মিলন নিজে গাড়ি করে মহুয়ার বাবাকে পৌঁছে দিয়ে আসে।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে