মন মহুয়া পর্ব-০৮

0
514

#মন মহুয়া

রাইটার – Farhana Rahaman আয়াত

পার্ট – ০৮

মিনার অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলো।দরজায় ঠোকা দিয়ে মহুয়া ভিতরে প্রবেশ করে। মিনার একটু অবাক হয় ওকে দেখে।কারণ মহুয়া এই ঘরে আসে না। আজ হঠাৎ করে কেনো আসলো।মিনার জিজ্ঞেস করে কিছু বলবে কিনা।মহুয়া কি করে বলবে বুঝতে পারছেনা।বলে আপনি চা খাবেন?নিয়ে আসবো?
মিনার বলে,চা নাস্তা তো মাত্র করলাম।এটা জিজ্ঞেস করার জন্য এসেছো?
মহুয়া মিনমিন করে বলে, না মানে আপনার ফোন টা একটু দিবেন? বাড়িতে একটা কল করবো।মিনার মহুয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, এটা বলতে এত ভয় পাওয়ার কি আছে?
মিনার ওর ফোনটা দিয়ে বলে কথা বলে নাও আমি মায়ের সাথে কথা বলে আসি।মিনার বাইরে চলে আসে। ও জানে মহুয়া ওর সামনে কথা বলতে সংকোচ করবে তাই বাইরে এসে সোফায় বসে বসে টিভিতে নিউজ দেখছে।মিমি এসে ওর ভাইকে বলে ওর রেজাল্ট ভালো হয়েছে আর সাথে ওর গিফট ও চাই।মিনার এর তখন মনে পড়ে মহুয়াও তো পরীক্ষা দিয়েছে।ওর রেজাল্ট কেমন হলো?এই জন্য মহুয়া এত চিন্তায় ছিলো।
মহুয়া তানিয়াকে ফোন করে বারবার।কিন্তু ওর ফোন ও বিজি আসছে বারবার।মহুয়া মনে মনে বকতে থাকে।বলে নিশ্চয়ই মিলন ভাইয়ার সাথে কথা বলছে।মহুয়া তাড়াতাড়ি বাইরে এসে মিনার কে ফোন দিয়ে দিলো।ওর অফিসের দেরী হচ্ছে তাই।
মহুয়ার মুখ দেখে মনে হচ্ছে ফেল করেছে।চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে। মিনার বেরিয়ে পড়ে। সারাপথ ভাবতে ভাবতে এলো যে মহুয়ার রেজাল্ট কেমন হলো। মহুয়া মুখের যে অবস্থা বানিয়েছে তাই জিজ্ঞেস ও করেনি।হঠাৎ মিনারের নাম্বারে একটা কল আসে।ফোন রিসিভ করতে বুঝতে পারে তানিয়া করেছে।মিনার বলে ওকে যে মহুয়া ফোন করেছিলো। তানিয়া বলে আসলে আমি ব্যস্ত ছিলাম তো তাই রিসিভ করতে পারিনি।আমি নিজেই ওকে কল দিতাম কিন্তু ওর তো ফোন নেই।মিনার এবার তানিয়াকেই জিজ্ঞেস করে ওদের রেজাল্ট কেমন হলো সেটা। তানিয়া বলে ওরা দুজনেই পাশ করেছে।মহুয়া এ পেয়েছে।অল্পের জন্য এ প্লাস পায়নি। মিনার ফোন টা রেখে বাড়িতে ফোন করে। মাকে জিজ্ঞেস করে মহুয়া কোথায়।মা বলে মনমরা হয়ে ছাদে বসে আছে।মিনার মাকে বলে ওকে গিয়ে নিজের ফোন টা দিতে বাড়িতে কথা বলার জন্য।মাও গিয়ে তাই করলো।ছাদে গিয়ে মহুয়াকে ফোন দিয়ে বলে বাড়িতে কথা বলে নিতে।মহুয়া তো খুশি হয়ে আবার তানিয়াকে ফোন করে। তানিয়া এবার ফোন রিসিভ করে। মহুয়া আগে ইচ্ছেমতো ওকে বকাঝকা করে।তারপর রেজাল্ট এর কথা জিজ্ঞেস করে।তানিয়া বলে একটু আগেই রেজাল্ট এর খবর মিনার কে জানিয়েছে।মহুয়ার বুক কেপে উঠে।তানিয়া বলে এত ভাবিস না। ভালই তো নাম্বার পেয়েছিস।কিন্তু আমি তো আরও কম পেয়েছি।মহুয়া বলে মিমি এ প্লাস পেয়েছে।তানিয়া বলে তাতে কি?ওসব নিয়ে না ভাবতে।
মহুয়া ফোন রেখে বেশ চিন্তায় পড়লো।মিনার কি ভাববে সেই নিয়ে।তবে পাস করেছে এর জন্য খুব ভালো লাগছে মহুয়ার।
আজ মহুয়া সব কাজ গুছিয়ে মিনার আসার আগেই নিজের রুমে গিয়ে বসে আছে যাতে মিনারের সামনে না পড়ে।কিন্তু মিনার বাসায় ফিরে এদিক ওদিক তাকায় মহুয়া কই।মা বলে ওর ঘরে আছে।মিনার ফ্রেস হয়ে খেয়ে নিলো। কিন্তু ওর ভালো লাগছিলো না। কারণ মহুয়া রোজ বসে থাকে ওর জন্য আজ নেই।খাওয়ার ঢেকে রেখেই চলে গেছে।মিনারের।অভ্যাস হয়ে গেছে ওর সাথে খাওয়ার।মিনার খাচ্ছে কিনা দেখতে মহুয়া সিড়ির পাসে আড়াল করে দেখছিলো।মিনার কে ঘরের দিকে আসতে দেখে মহুয়া তারাহুরো করে সিড়ি বেয়ে উঠতে গিয়েই পড়ে যায়।পায়ে লেগেছেও খুব।মিনার দেখে জলদি ছুটে আসে।মিনার ব্যাথা দেখবে নাকি মহুয়ার চোখের পানি।টুপ টুপ করে জল পরছে চোখ দিয়ে। সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে তাই কাউকে না জানিয়ে মিনার মহুয়া কে কুলে তুলে নিজের ঘরেই নিয়ে গিয়ে বেডে শুইয়ে দিল। ড্রয়ার থেকে মুভ স্প্রে টা বের করে পায়ে স্প্রে করে দিলো। মহুয়া যন্ত্রনা সহ্য করছে।মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না।মিনার ওর মুখ দেখে বেশ বুঝতে পারছে ওর সামনে তাই আবার সহ্য করছে।মিনার বলে চুপচাপ এখানে ঘুমিয়ে পড়। এত পাকামো করতে কে বলেছিলো?আমি বাঘ নাকি ভাল্লুক যে পালিয়ে পালিয়ে থাকো?অকারণে বকি তোমায়?তাড়াহূরা করতে কে বলেছে।মিনারের এতগুলো বকা শুনে মহুয়া এবার জোরেই কান্না করে দিলো। মিনার চুপ বলে থামিয়ে দিলো।মিনার বেডের অন্যপাশে গিয়ে চুপ করে শুয়ে পড়লো।মহুয়া ওর দিকে তাকিয়ে আছে। এমন আজব মানুষ কেনো তাই ভাবছে।কেয়ার করছে সাথে বকাঝকা ফ্রি।মহুয়াও ঘুমিয়ে পড়েছে। রাতে মিনার উঠে চেক করে মহুয়ার পা।অনেকটা ফুলে গেছে।সকালেই ডাক্তার এর কাছে নিতে হবে।মুখটা দেখেই মায়া হচ্ছে। এত বকাঝকা করা ঠিক হয়নি ভাবছে মিনার।
মিনারের খুব ভোরে ঘুম ভেঙে যায়। উঠে পাশ ফিরে দেখে মহুয়া এখনো ঘুমিয়ে আছে।কি মায়াবী লাগছে মুখটা।মিনার মহুয়া কে ডাকেনি আর।অনেক্ষন হয়েছে কিন্তু মহুয়া উঠছেনা।মিনার ভাবছে মহুয়া তো খুব ভোরেই উঠে নামায পড়তে আজ উঠছেনা কেনো।মিনার মহুয়ার হাত টা ধরতেই বুঝতে পারে বেশ জ্বর ওর।ব্যাথার জন্য হয়তো হয়েছে।মিনার কি করবে বুঝতে পারছে না। এতো ভোরে ডাক্তার ও পাবে না।মিনার বাইরে গিয়ে দেখে ওর মা ঘুম থেকে উঠেছে।মাকে গিয়ে সবটা বলে।মা তারাতাড়ি এসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।জ্বর কমছেনা দেখে মিনারের মা অস্থির হয়ে গেছে। মিনার আর ওর মা মহুয়াকে নিয়ে হস্পিটালে নিয়ে যায়।ডাক্তার বলেন মহুয়ার পায়ে তেমন কিছু হয়নি।ওষুধ খেলে ব্যাথা সেরে যাবে।আর জ্বর চিন্তার কিছু নেই।মিনার বাসায় ফিরে মহুয়াকে আবার নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিলো।মহুয়া বকার ভয়ে কিছু বলছে না।মিনার মাকে বলে পা ঠিক না হওয়া পর্যন্ত ও যেন সিড়ি বেয়ে উপরে না উঠে।উঠলে পা আরো ভেঙে দিবে।মহুয়াকে শুনিয়ে শুনিয়েই বলছে ও।মিনারের মা আর ফুফু হাসে ওর কথা শুনে।মিনার যাওয়ার পর ওর ফুফু বলে যাক পা ভাঙায় ভালোই হলো।বউয়ের উপর মিনারের যত্ন করতে দেখা গেলো।
কিছুদিন পর,
মহুয়া অনেকটা সুস্থ। হাটাচলা করছে ভালোভাবে।মিনার এই কয়দিন মহুয়াকে বিছানা ছেড়ে নামতেই দেয়নি।
মিনার মহুয়া কে পরীক্ষায় পাশ করার জন্য একটা মোবাইল ফোন গিফট করে।গিফট টা রেজাল্ট যেদিন দিয়েছিলো সেদিনই কিনেছিলো মহুয়ার জন্য কিন্তু দেওয়া হয়নি।আজ সকালে মিনার ফোন টা ওর বেডের উপর রেখে অফিসে চলে যায়।অফিসে গিয়ে অনেক্ষন অপেক্ষা করে মিনার কিন্তু মহুয়া ফোন নিলো কিনা বুঝতে পারছেনা আর পছন্দ হলো কিনা সেটাও।মিনার একটা মেসেজ করবে ভাবছে কিন্তু মেসেজ না করে কল দিলো।মহুয়া তখন রান্নাঘরেই ছিলো। মিনার আবার করে এবার মহুয়া রুমে আসে ওর জামাকাপড় নিতে।চিলেকোঠার ঘরে যাবে বলে।ফোন বাজার শব্দে ফোনটা নিয়ে দেখে একটা অপরিচিত নাম্বার। কিন্তু ফোন টা কার? এখানে কেনো ।এবার রিসিভ করার সাথে সাথে মিনার এর ধমক শুনতে পায়। ভয়ে ফোন টা হাত থেকে পরেই যেত।মহুয়া আবার কানে ধরলো ফোন টা। মিনার বলে, এতক্ষন লাগে ফোন রিসিভ করতে? কই ছিলে?নিশ্চই আমি বের হওয়ার সাথে সাথে দৌড়াতে শুরু করেছো?আজ আসলে পা আবার ভাঙবো।মহুয়া চুপচাপ শুনেই যাচ্ছে।মিনার আবার বলে,কি হলো?কথা কানে গেছে?
মহুয়া হুম বলে।মিনার বলে ফোন একবারে রিসিভ করবে।মনে থাকে যেনো।বাই।
মহুয়া পুরাই থ হয়ে গেছে।তারমানে ফোন টা ওর আর সেটা মিনার দিয়েছে।হাসবে না কাদবে বুঝতে পারছে না।
মহুয়ার বেশ পছন্দ হলো ফোন টা।সবার সাথে কথা বলতে পারবে আর কারো ফোন চাইতে হবেনা ভেবেই খুশি লাগছে । কিন্তু দামি তাই নিতেও ভয় করেছে ওর।কিন্তু না নিলে মিনারের রাগ সহ্য করতে হবে তাই মহুয়া ফোন টা নিলো।

মিমি আর মহুয়া দুজনকেই এক কলেজে ভর্তি করাবে ভাবছে মিনার।তাই নিজের কলেজেই ভর্তির জন্য সব ব্যবস্থা করেছে মিনার।সবকিছু জানাশুনা।সমস্যা হবেনা ভাবছে মিনার।মিনার নিজেও এখনো কলেজে আছে।পরিক্ষার অনেক সময় আছে।

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে