মন মহুয়া পর্ব-০৭

0
534

#মন মহুয়া

রাইটার -Farhana Rahaman আয়াত

পার্ট -০৭

মহুয়া আর মিনারের সাথে মিলন আর মিমি ও গেলো গ্রামে।মহুয়ার তো খুশির শেষ নেই।মনে হচ্ছে দশ বছর পর বাড়ি যাচ্ছে।মিলন গাড়ি ড্রাইভ করছে আর পাশে মিমি হেডফোনে গান শুনছে।মিনার আর মহুয়া চুপ করে পিছনের সিটে বসে আসছে।মহুয়া জানালার কাচ দিয়ে দেখছে কতদূর বাকি।বাড়ির কাছাকাছি বড় রাস্তায় আসলে মিলন ব্রেক কষলো। মিনার জিজ্ঞেস করে গাড়ি থামালো কেন।মিলন বলে তোমার শালি রাস্তার সামনে।।না থামালে উড়ে যেতো।কি বলো দিব নাকি উড়িয়ে?
মহুয়া তানিয়া কে দেখতে পায়।ও ঠিক জানতো তানিয়া অপেক্ষা করবে ওর।মহুয়া গাড়ির দরজা খোলার আগেই মিনার খোলে দিল।মহুয়া হেসে গাড়ি থেকে নেমে তানিয়ার কাছে দৌড়ে চলে যায়। তানিয়া তো কেদেই দিলো জড়িয়ে ধরে। সবাই দুজনের কান্ড দেখে হাসছে।জমজ মনে হচ্ছে।
মিনার কে দেখে দুজন থামে।তানিয়া কে মিলন বলে এত কান্না করলে রাস্তায় বন্যা বয়ে যাবে।তানিয়া রাগি রাগি চোখ করে দেখে ওর দিকে। তানিয়া মহুয়াকে নিয়ে বাড়ির দিকে চলে আসে।মিনার, মিলন আর মিমি ওদের সাথেই যায়।মহুয়া বাবার দিকে তাকিয়ে চমকে উঠে। দশদিনে শরিরের এই হাল কি করে হলো বুঝতে পারছেনা।চোখমুখ শুকিয়ে গেছে। চুল আর দাড়ি এলোমেলো। মনে হচ্ছে খাওয়াদাওয়া করেই না।মহুয়া কে ওর বাবা ভালো থাকার অভিনয় করছে।ওনার শরীর দিনদিন আরো খারাপ হচ্ছে।মাথার যন্ত্রনায় রাতে ঘুমাতেও পারেনা।মহুয়ার মা কেনো যেন খুব যত্ন করছে সবার।নিজের হাতে রান্না করেছে। পরিবেশন ও করছে।আবার রিনি ও নতুন বউয়ের মত সেজেগুজে হাটছে।মহুয়ার ব্যাপার টা বুঝতে এক্টু সময় লেগেছে।কিন্তু ঠিক বুঝেছে কেনো এমন করছে।
মহুয়ার চিন্তা বেড়ে গেছে।
রাতে খাওয়া দাওয়া করে সবাই নিজের নিজের ঘরে ঘুমাতে গেলো।কিন্তু সমস্যা হলো মিনার আর মহুয়াকে আজ একঘরেই থাকতে হবে নাহলে সবাই সন্দেহ করবে।মিনারদের ঘরে গিয়ে থাকার কথা বলছে মিনার কিন্তু মহুয়ার বাবা মানা করেছে।তাই দুজন মহুয়ার ঘরেই শুয়ে পড়ে। খাট টা বেশি বড় না তাই মহুয়া একপাশে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়ে। মিনার ওর কান্ড দেখে মনে মনে হাসে।ওর কেনো যেন মহুয়ার এসব কান্ড দেখতে ভালই লাগছে।মিনার ওর পায়ছারি দেখে বলে,আমি বাঘ ভাল্লুক না যে খেয়ে ফেলবো। শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়।নাহলে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিব।মহুয়া ভয়ে চোখ বুজে রইলো। ভোরের আলো ফুটে উঠার আগেই মহুয়া উঠে পড়ে।মিনার এখনো ঘুমিয়ে আছে। মহুয়া অযু করে নামায পড়ে নিলো।এর মধ্য মিনারের ঘুম ভেঙে গেলো। কিন্তু উঠলো না।কারন মহুয়া নামায পড়ছিল।ওকে দেখে হয়তো আবার পালাবে নামায না পড়েই।মহুয়া চুপচাপ মাথায় কাপড় টা টেনে বেরিয়ে আসে।মিনার ভাবে ও হয়তো রান্নাঘরে গেছে।মিনার ও উঠে মসজিদে গেলো নামায পড়তে।মসজিদে ইমাম সাহেব আর তিন জন বয়স্ক লোক নামায পড়ছিল।নামায শেষে যখন মিনার চলে আসছিল ইমাম সাহেব ওকে জিজ্ঞেস করে কখন এসেছে।মহুয়া এসেছে কিনা।মিনার বলে ওরা বেড়াতে এসেছে।ইমাম সাহেব বলে তা পাগলিটা আজও কি এসেছে এখানে?মিনার অবাক হয়ে বলে ও কেনো মসজিদে আসবে।ইমাম সাহেব বলে, ওর তো এটা পুরানো অভ্যাস।মন খারাপ হলে বা মনে পরলেই মাকে দেখতে চলে আসে।আচ্ছা বাবা তুমিই বলো কবর দেখলেই কি মা কে দেখা যায়?দেখ হয়তো পুকুর পাড়ের ওইদিকে বসে কান্না করছে আবার।মেয়েটা বড্ডো ভালো গো বাবা।সুখে রেখ।অনেক কস্ট পেয়েছে এইটুকু বয়সে।
ইমাম সাহেব চলে গেলে মিনার আস্তে আস্তে কবরস্থানের দিকে পা বাড়ায়। এক্টু দূরেই হাল্কা কান্নার শব্দ ভেসে আসছে।মিনার আরো একটু এগিয়ে গিয়ে দেখে মহুয়া মাথায় ঘোমটা দিয়ে বসে আছে আর হিচকি তুলে কান্না করছে। মিনারের ইচ্ছে করছে কাছে গিয়ে চোখের জ্বল মুছে দিতে কিন্তু ও সামনে গেলে যদি মহুয়ার অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।তার থেকে দূরে দাড়িয়ে দেখি।মহুয়া অনেক্ষন পর উঠে ঘরে ফিরে যায়।মিনার ও ওর পিছু নিলো। মহুয়া পুকুর থেকে হাত মুখ ধুয়ে রুমে গেলো।মিনার কে দেখতে না পেয়ে এদিক সেদিক দেখতে থাকে।
মিনার পুকুর ঘাটে বসে আছে।সকাল টা খুব সুন্দর আর স্নিগ্ধ লাগছে।কিন্তু মন টা খারাপ লাগছে মিনারের। মহুয়ার কষ্টগুলো যেন ওকেও কস্ট দিচ্ছে।
রাতুল এসে মিনার কে নাস্তা করার জন্য ডেকে গেলো।
সবাই নাস্তা করছিলো তখন তানিয়াও এসে হাজির।মহুয়া তানিয়াকেও নাস্তা করতে বসালো কারণ মহুয়া ভালো করেই জানে না খেয়ে চলে এসেছে।রাতেই মহুয়ার সাথে থাকার জন্য চলে
আসতো কিন্তু মিনার আছে তাই আসেনি।মিলন বারবার তানিয়াকে দেখছে কিন্তু রিনির জ্বালায় শান্তি পাচ্ছে না।মিলন মনে মনে ভাবছে এই মেয়েটার জন্য ঠিকমতো প্রেমটাও করতে পারবো না মনে হচ্ছে।
তানিয়া মিলনের দিকে একবার রাগী চোখে দেখেই মহুয়াকে নিয়ে ওর রুমে চলে গেলো। তানিয়া মহুয়াকে বলে শাপলার বিলে যাবে রেডি হয়ে নিতে।মিমি ও যাবে সাথে।মহুয়া বলে মা কিছু বললে?তানিয়া বলে এখন তো বিয়ে হয়ে গেছে কিছু বলেও লাভ নেই।আর জিজ্ঞেস করলে বলবি সবাই কে দেখে আসার জন্য যাচ্ছিস।মহুয়া মিনারদের বাসায় থাকাকালীন একটা শাড়িও পরতে পারেনি কিন্তু এখানে না পরলে একজন একেকটা কথা বলবে তাই লাল রং এর একটা জামদানি শাড়ি, গয়না পরে রেডি হয়ে নিলো। তানিয়া জোর করে হাল্কা সাজিয়ে দিয়েছে। এখন একদম নতুন বউয়ের মত লাগছে মহুয়াকে। মিনারের একা একা ভালো লাগছিলো না।তাই ফোনেই কথা বলছিলো হেটে হেটে।হঠাৎ চোখ যায় মহুয়ার দিকে।লাল টুকটুকে পুতুলের মতো লাগছে।ওরা তিন জন ওইদিকেই যাচ্ছিলো। হঠাৎ মিনারের সামনে এসে পড়ায় মহুয়াও এক্টু নার্ভাস হয়ে পড়ে।মিমি কে জিজ্ঞেস করে মিনার কই যাচ্ছে।মিমি বলে ওরা ঘুরতে যাচ্ছে।মিনার আর কিছু বললো না।ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। এই মেয়েটার মধ্য এত মায়া কেন সেটাই ভাবছে মিনার।হুট করে মিনার ও ওদের পিছু নিলো। এভাবে মহুয়াদের একা যাওয়াটা নিরাপদ মনে হচ্ছে না ওর।তিন জনই একা। তানিয়া মিনার কে আসতে দেখে মহুয়ার সাথে মজা করছে।মহুয়া বুঝতে পারছেনা মিনার কেনো আসছে।মহুয়া থেমে যায়। মিনার কাছে আসলে বলে আপনি কি আমাদের সাথে যাবেন?
মিনার বলে হ্যা।মিমি বলে, কেন ভাইয়া?
মিনার বলে কারণ আম্মু আব্বু তোদের আমার দায়িত্বে পাঠিয়েছে। একা একা গেলে মা আমাকে কি বলবে।তানিয়া বলে তাই নাকি ভাইয়া নাকি বউ ছাড়া থাকা অসম্ভব?
মিনার উত্তর দিলো না কিন্তু মহুয়ার কাশি উঠে গেলো।এই তানিয়াও যখন তখন যা খুশি বলে।মহুয়া মনে মনে বকছে ওকে।
ওরা শাপলার বিলে যাওয়ার আগেই মিলন হাজির।তানিয়া মেসেজ করে ওকে আগেই বলে দিয়েছিলো।আর রিনির হাত থেকে বাঁচার জন্য আগেই চলে গিয়েছিলো মিলন।
মিমি ছবি তুলছে অনেক, মিলন তানিয়ার সাথে কথা বলছে। মহুয়া একা একা মহুয়া গাছের নিচে গিয়ে বসে আছে।অনেকদিন পর মন টা খুব ভাল লাগছে।মিনার দূর থেকে মহুয়াকে দেখছে।লুকিয়ে বেশ কিছু ছবিও তুলে নিলো ওর।মিনারের ও পরিবেশ টা খুব ভালো লাগছিলো।কিন্তু হঠাৎ করে নাহিদের ফোন পেয়ে মিনার চিন্তিত হয়ে পড়ে।রেহান এর এক্সিডেন্ট হয়েছে।অবস্থা ভালো না।মিনার মিলন কে ডেকে বলে ওকে শহরে ফিরতে হবে।মহুয়া আর মিমি কে নিয়ে যেন ও ফিরে আসে।মহুয়া সবটা শুনে বলে যেতে যখন হবে সবাই এক সাথেই যাবে।মিনার আর কিছু বলেনি।সবাই রেডি ছিলো।বাসায় ফিরে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
মিনার বাসায় না ফিরে সোজা হসপিটালে গেলো।মিলন মহুয়া আর মিমিকে নিয়ে বাসায় ফিরে।
রেহান এর হাত আর পায়ে বেশ লেগেছে।রাগারাগি যাই হোক মিনার নিলাকে ভূলতে পেরেছে মহুয়ার জন্য কিন্তু রেহান কে না।কারন ওর বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো রেহান।রেহানের সাথে সারাদিন ছিল মিনার কিন্তু কথা বার্তা খুব কম হয়েছে।অভিমান টা রয়েই গেছে মিনারের।রাতে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরে মিনার।সবাই ঘুম কিন্তু মহুয়া এখনো জেগে আছে।মিনার রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে আসে।মিনার জানে মহুয়া না খেয়ে বসে আছে।মিনার আগেও দুয়েকবার বলেছিলো ওর অপেক্ষা না করতে।কিন্তু মহুয়া শুনেনা।খেয়ে উঠে মহুয়া চা বানিয়ে মিনার এর কাছে গেলো।মিনার ওর হাতে চা দেখে ভাবছে এই মেয়েটা বুঝে কি করে এতসব।দেখতে পিচ্ছি কিন্তু আচার আচরণ দেখে মনে হয় পাকা একদম।মহুয়া চা দিয়ে উপরে নিজের রুমে চলে যায়। ঘুম আসছে না। দুইটা দিন ভালো করে থাকতেও পারলোনা বাড়ি গিয়ে।ফোন ও নেই যে কথা বলবে কারো সাথে।বাবার জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে।
পরের দিন সবাই যে যার কাজে চলে যায়।মিনার রেহান কে দেখতে যাবে তাই রেডি হচ্ছে।কিন্তু মিমি আজ বাইরে গেলো না।ল্যাপটপ নিয়ে সকাল থেকে বসে আছে। ব্যাপার টা কি বুঝতে পারছে না।হঠাৎ করে মিমি চিৎকার দিয়ে উঠে।মা মা আমি পাশ করে গেছি।মা মা,,,
মহুয়ার মুখটা শুকিয়ে গেলো। ভূলেই গিয়েছিলো রেজাল্ট এর কথা।কি করবে এখন।তানিয়াকে ফোন করতে হবে।কিন্তু মিমি তো ফোনে কথা বলেই যাচ্ছে। ওর ফোন থেকে করতে পারছেনা।মিলন ও বাসায় নেই।কি করবে বুঝতে পারছেনা।অনেক চিন্তা ভাবনা করে মহুয়া মিনারের কাছে গেলো।

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে