মন মহুয়া পর্ব-১১

0
517

#মন মহুয়া

রাইটার – Farhana Rahaman (আয়াত)

পার্ট -১১

মিনার অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে নেয়।কিন্তু আজ মহুয়া একবার ও রুমে আসছে না।শেষে মিনার বাইরে গিয়ে দেখে মহুয়া কোথাও নেই।পরে ছাদে গিয়ে দেখে মহুয়া দোলনায় একা একা বসে আছে।মিনার পাশে বসে। মহুয়া মিনারের দিকে তাকিয়ে উঠে যায়।বলে,আরে আপনি কখন আসলেন?বসুন আমি চা নিয়ে আসি।
মিনার ওর হাত ধরে বসায়।বলে থাক লাগবেনা।এখানে বসে আছো কেনো?রাত কয়টা বাজে হিসেব আছে?বলেছিলাম না ছাদে একা একা না আসতে?
মহুয়া বলে,এখন থেকে তো আবার এখানেই থাকতে হবে।বাবা তো চলে গেছে।
মিনার কিছুক্ষন মহুয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর বলে,ছাদের ঘরে এসেই দেখো না।পা ভেঙে নিচের ঘরে বসিয়ে রাখবো।
মহুয়া চুপচাপ শুনছে আর ভাবছে কি হলো লোকটার।
মিনার এসেছিলো মহুয়ার সাথে কথা বলতে আর ওর কথায় রাগ করে নিচে চলে গেলো।যাওয়ার সময় বলে গেছে যেনো দশ মিনিটে যেন রুমে চলে যায়।

মহুয়া ভয়ে ভয়ে চা নিয়ে রুমে গেলো। মিনার ফোনে কার সাথে যেনো কথা বলছিলো। মহুয়া চা রেখে বের হতে গেলেই এসে হাত ধরে নেয় মিনার।মহুয়া অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে আর মিনার ফোনে কথা বলেই যাচ্ছে।লাইন কেটে বলে,পালাচ্ছিলে কোথায়? আমার চা খাওয়া শেষ হওয়ার আগেই বুরকা আর হিজাব পরে রেডি হয়ে নাও।
মহুয়া বলে, এই সময় কই যাবেন?
মিনার চোখ রাঙিয়ে দেখলে তারাতাড়ি গিয়ে ব্লু কালারের বোরকা আর হিজাবটা বের করে পরে নিলো।মিনার এর সামনে এসে বলে হয়ে গেছে। মিনার বলে হয়নি, মাস্ক কই?
মহুয়া জলদি গিয়ে মাস্ক পরে আসে।
মিনার দেখে বলে ঠিক আছে চলো।মহুয়া মিনারের পিছু পিছু যায়।মিনার মহুয়াকে নিয়ে প্রথমেই রিক্সায় চড়ে। মহুয়া গুটিসুটি মেরে বসে আছে। মনে হচ্ছে নিশ্বাস যেন আটকে আছে। হার্টবিট টা খুব বেড়ে গেছে। লোকটা কি করছে কিছুই বুঝতে পারছে না। একটা বাড়ির সামনে এসে রিক্সা থামায় মিনার।
দুতলায় উঠে কলিংবেল বাজাতেই একটা ছেলে এসে দরজা খুলে দেয়।আর মিনার কে এসে জড়িয়ে ধরে।
মিনার মহুয়াকে নিয়ে ভিতরে যায়।বাসাটা পুরো ফাকা মনে হচ্ছে। কিন্তু একটু পর একজন মহিলা এসে মহুয়াকে জড়িয়ে ধরে। মিনারের উদ্দেশ্যে বলে কিরে মিনার তুই এভাবে নতুন বউ কে নিয়ে আসলি কেনো?একটু বলে আসবি না?তোর মা বারণ করেছিলো তাই আর যায়নি দেখতে। তাই বলে এভাবে নিয়ে আসবি বউকে?
মিনার হেসে বলে আরে খালামনি তুমি এতো ব্যস্ত হচ্ছো কেনো?আসলে এদিকেই যাচ্ছিলাম তাই ভাবলাম দেখা করে যায়।
মিনারের খালা মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বলে খুব ভালো করেছিস।কি মিস্টি দেখতে আমাদের বউমা টা।তোরা বস আমি আসছি একটু।
মিনার বলে, আরে কই যাচ্ছো?আমরা বসবো না।রাত হয়েছে বাসায় ফিরতে হবে। বলে আসিনি আম্মুকে।
খালা বলে তোর আম্মুকে আমি বলে দিচ্ছি তোরা আজ এখানেই থাকবি।আর কোনো কথা না।একে নতুন বউকে এভাবে আনলি আবার যাওয়ার জন্য বলছিস?
আমি ওসব শুনবো না।
মহুয়া নিরবে সবটা দেখছিলো এতক্ষন। এবার খালা মহুয়ার হাত ধরে বলে তোর যাওয়ার ইচ্ছে হলে তুই যা। বউমা এখানেই থাকবে। মিনারের খালা মহুয়াকে একটা রুমে নিয়ে যায়।মহুয়াকে বুরকা খুলে রাখতে বলে। কিন্তু মহুয়ার কেমন যেন লাগছে। এরকম জানলে শাড়ি পরে আসতো।এখন বাসায় পড়া ড্রেস গায়ে দিয়ে চলে এসেছে। মহুয়া কি আর করবে বুরকা খুলে ফ্রেস হয়ে নিলো। একা বসতে ভালো লাগছেনা তাই রান্নাঘরেই গেলো।খালা রান্না করছে।মহুয়াকে দেখে বলে, আরে মা তুমি এখানে এসেছো কেনো। বাইরে বসো।
মহুয়া বলে, আমি থাকি না খালামনি।আমি হেল্প করি।
মিনারের খালা হেসে বলে,বড়আপা ঠিক বলে তুমি বেশ লক্ষীমন্তো মেয়ে।কিছু করতে হবে না মা।আচ্ছা তুমি এমনি দাড়াও।
মহুয়া চুপচাপ দেখছে আর খালার সাথে কথা বলে যাচ্ছে।খালা বলে হয়েছে রান্না শেষ। জানো মা বিরিয়ানি মিনারের খুব প্রিয়। তারাহুরো তে কেমন হলো কি জানি।
তুমি যাও আমি সালাদ টা বানিয়ে আসছি।মহুয়া খালার হাত ধরে বলে আপনি গিয়ে ফ্রেস হয়ে আসুন আমি সালাদ টা করি।একসাথেই খাব।
খালা আর কিছু না বলে মাথায় হাত বুলিয়ে চলে আসে। মহুয়া সালাদ বানিয়ে প্লেটে সাজিয়ে রাখে।
খালা এসে দেখে ডাইনিং টেবিলের উপর সবকিছু সাজিয়ে দিয়েছে মহুয়া।খালা হেসে বলে বাহ সব তো রেডি দেখছি।
খাওয়াদাওয়া করে সবাই ঘুমাতে চলে যায়।কিন্তু মহুয়া বসে বসে খালার সাথে গল্প করছে ওনার রুমে।খালা তার পরিবার আর বাকি সবার কথা বলছে মহুয়াকে।মিনারের খালু ব্যবসার কাজে প্রায় বাইরে থাকে।দুই ছেলে কোনো মেয়ে নেই।ছেলে একটা ইন্টার এ পড়ে আরেকটা ক্লাস সেভেনে।গল্প করতে করতে অনেকটা সময় পার হয়ে যায়। মিনার একবার এসে আড়ালে দেখে যায়।আর ডাকেনি।মিনার হেসে বলে যাক মন টা ভালো হলো শেষ পর্যন্ত।
মিনারের খালাকে কতো আপন মনে হচ্ছে মহুয়ার।
শেষ পর্যন্ত খালা মহুয়াকে জোর করে রুমে পাঠায়।
মহুয়া এসে দেখে মিনার ঘুমাচ্ছে আরাম করে।মহুয়া আলো নিভিয়ে পাশে গিয়ে আস্তে করে শুয়ে পড়লো।
মিনার তখন বলে উঠে, আসার সময় হলো?
মহুয়া ভয়ে উঠে বসে। মিনার ফোনের আলো টা জ্বালায়। বলে কি হলো? কি সমস্যা?
মহুয়া বলে,আপনার কি সমস্যা?পুরো ভয় পেয়ে গেলাম।
মিনার বলে ভয় তাও তোমার?রাতে ছাদে একা থাকতে ভয় করেনা এখন কেনো করছে?
মহুয়া বলে সেখানে অন্ধকারে কেউ এভাবে কথা বলে ভয় দেখায় না তাই।
মহুয়া চুপচাপ শুয়ে পড়ে আবার।ঘুম আসছে না নতুন জায়গায়। এপাশ ওপাশ করে কাটিয়ে দিলো রাতটা।
পরের দিন সকালে নাস্তা করে ওরা বাসায় ফিরে।মহুয়া আজ আর কলেজে গেলো না।মিনার রেডি হয়ে অফিসে চলে যায়।
মহুয়া মিমির সাথে বসে গল্প করছিলো। কথায় কথায় মিনার এর জন্মদিন এর তারিখটা জেনে নিলো।
মিনারের জন্মদিন সেপ্টেম্বরে সে অনেক দেরী আছে।তাই মহুয়া আর ভাবছেনা।ভেবেছিলো খালার কথামতো ওর পছন্দের রান্নাগুলো করবে কিন্তু তা আর হলো না।
হঠাৎ মাথায় এলো স্পেশাল কিছু করার জন্য স্পেশাল দিনের কি দরকার।বরং স্পেশাল কিছু করেও তো দিনটা স্পেশাল করা যায়।মিনার কে ধন্যবাদ জানানো হয়নি।বাবার জন্য এতকিছু করেছে ধন্যবাদ জানানো উচিত। যে ভাবা সেই কাজ। মহুয়া গিয়ে ফ্রিজে মাংস আছে কিনা দেখতে গেলো। কিন্তু কপাল খারাপ ফ্রিজে মাংস নেই।মাছ আছে শুধু।
মহুয়া কি আর করবে মন খারাপ করে উপরে ছাদে চলে গেলো।কিছুক্ষন তানিয়ার সাথে কথা বলে সেদিনের মতো আবার ও ফুলচারার একটা ভ্যান গাড়ি দেখতে পায়। আজ আর নিচে গেলো না আগে।ছাদ থেকেই ভ্যানওয়ালাকে ডাক দেয় মহুয়া।
চাচা, ও চাচা থামেন আমি চারা নিবো।ভ্যানওয়ালা মহুয়ার দিকে তাকিয়ে আছে বলে ইশারা করলো।
মহুয়া জলদি করে রুমে গিয়ে ব্যাগ থেকে টাকা নিয়ে নিচে গেলো।মিনার কলেজের যাওয়ার জন্য হাত খরচ দিয়ে দেয়।সেখান থেকেই অল্প কিছু জমিয়ে রেখেছিলো মহুয়া।
মহুয়া নিচে গিয়ে দেখে আবারও ভ্যানওয়ালা উধাও। মন একদম খারাপ লাগছে ওর।কিন্তু ফেরার সময় ফাহাদ আবার মহুয়ার পথ আগলে দাড়ায়।বলে কি বার্বি ডল মন খারাপ?
মহুয়ার মেজাজ গেলো আরো খারাপ হয়ে।বলে আমার নাম মহুয়া।আমার মন ভালো না খারাপ আমার বুঝার বিষয় আপনার না।পথ ছাড়ুন।মহুয়া পাশ কেটে চলে আসতে গেলে বলে,আচ্ছা সরি মহুয়া।শুনো,এই দেখো আমি তোমার জন্য চারাগুলো নিয়ে রেখেছি।মহুয়া দেখে ফাহাদ অনেকগুলো চারা একটা ঝুড়ির মধ্য নিয়ে রেখেছে।মহুয়া চোখ তুলে বলে আমি কি আপনাকে বলেছি আমার জন্য চারা নিতে?
ফাহাদ হেসে বলে,তা কেনো হবে আমি নিচ থেকে শুনলাম তুমি চারা নিবে বলছিলে তাই,,
মহুয়া রেগে বলে তাই কি?আপনাকে বলেছি?আপনি ভ্যানওয়ালা?
ফাহাদ বলে দরকার হলে তোমার জন্য না হয় তাই হলাম।
মহুয়া বুঝতে পারছে ওনার মতলব কি। তাই কথা না বাড়িয়ে বলে ঠিক আছে কাজ কর্ম নাই যখন ভ্যান করে চারাই বিক্রি করেন।এসব আমি নিব না।
মহুয়া দৌড়ে চলে আসে।
ফাহাদ মিটমিট করে হাসছে।বলে,মনে যখন ধরেছে যেভাবেই হোক আদায় করে নিব।

মহুয়া ঘরে ফিরে রান্নাটা সেরে নিলো।আজ কলেজে যায়নি মনে হচ্ছে সময় কাটছেনা।তানিয়াও ঘুরতে গেছে মিলন এর সাথে তাই আর বিরক্ত করলো না।

খাওয়া দাওয়া সেরে বেশ কিছুক্ষণ ঘুমালো মহুয়া।আসরের আজান এর সুর কানে লাগতেই মহুয়া উঠে পড়ে।নামায সেরে রান্নাঘরে গেলো সবার জন্য বিকালের নাস্তা করতে।সবাই ঘুম আর মিনার ও ফিরবে মাগরিবের এর পর তাই মহুয়া পাকোড়া বানানোর জন্য ব্যাটার রেডি করে রাখলো যেন গরম-গরম সেগুলো ভেজে দিতে পারে।
মিনার আর বাবা ফিরলে মহুয়া তারাতাড়ি পাকোড়া বানিয়ে আর চা বানিয়ে সবাইকে দিয়ে আসে।
মিনার চা খেতে খেতে বলে , পিকনিকে যাবে?
মহুয়া বলে কোথায়? আর হঠাৎ?
কলেজ থেকে যাচ্ছে আমাকে আজ ফোন করেছিলো।তুমি যাওনি তাই জানোনা।
মহুয়া বলে, অহ।
মিনার বলে, কি যাবে?
মহুয়া বলে, আপনি যাবেন?
মিনার বলে, না কাজ আছে।তুমি আর মিমি যাও। আর কাল ফিস জমা দিয়ে দিব আমি।
মহুয়া মুখ কালো করে বলে, না আমিও যাব না।
মিনার কপাল কুচকে বলে,কেনো?আমি যাচ্ছিনা বলে?
মহুয়া বলে নাহ।আমি লং জার্নি করতে পারিনা তাই।
মিনার বলে, তাই?মিনার আর কিছু বললো না।
মহুয়া চুপচাপ বাইরে এসে বসে আছে।ছাদেও যেতে পারছেনা। মিনার দেখলে বকা দিবে।

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে