মন ‍‍‍‍‍‍‍‍মহুয়া পর্ব-০৫

0
554

#মন ‍‍‍‍‍‍‍‍মহুয়া

রাইটার -Farhana Rahaman আয়াত

পার্ট -০৫

মহুয়ার ঘুম ভাঙে খুব ভোরে। উঠতে গেলেই চোখ পড়ে কোমরের দিকে।মিনারের একটা হাত ওর কোমর জড়িয়ে আছে।পুরো শরীর যেন ভারী লাগছে মহুয়ার। মিনার কখন এলো সেটাই ভাবছে।আস্তে করে ওর হাতটা তুলে নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে হাপাতে লাগলো মহুয়া। রুম থেকে বের হয়ে দেখে সবাই এখনও ঘুম তাই ওযু করে নামায পরে নিলো।বাইরে গিয়ে একবার সবদিকে চোখ বুলিয়ে নিলো।ওদের বাসায় হয়তো সবাই ঘুম তাই দরজা জানালা সব বন্ধ।মহুয়া থাকতে ও নামায পড়তে উঠলেই সব খোলে দিতো।নিজেকে বড্ডো পর লাগছে আজ।উঠোন পার হলেই নিজের ঘর তাও যেতে যেন মানা।এই ঘরের বউ।যদিও কেউ নিষেধ করবেনা তাও জিজ্ঞেস না করে আগের মতো যখন তখন কোথাও যাওয়ার উপায় নেই।
পিছন থেকে মিনারের মা মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠে গেছিস?মহুয়া মাথা নেড়ে হুম বলে। মিনারের মা বলে চল নাস্তা করে নে তারপর বাবাকে দেখে আয়।এরপর তো আমরা বের হব।
মহুয়া কোনভাবে চা খেয়ে বাবাকে দেখতে চলে আসে।মহুয়ার মা মাত্র ঘুম থেকে উঠে বসে।মহুয়াকে দেখেই দু চারটে কথা শুনিয়ে বেরিয়ে গেলো বাইরে।মহুয়ার বাবা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে। মহুয়ার বাবা ওকে অনেকগুলো কথা বলে যা মহুয়ার বুকের ভিতর যেন সুচের মত লাগছে।মহুয়ার বাবার কথায় মনে হচ্ছে ওনি মহুয়াকে নিজের থেকে আলাদা করে দিচ্ছেন।মহুয়ার মনে হচ্ছে বাবা কিছু নিয়ে চিন্তায় আছে কিন্তু কারণটা বলছে না।বাবা বারবার একটা কথা বলছে সব উপরওয়ালার ইচ্ছে।যা যা হচ্ছে আর যা যা হবে।ওনার দ্বায়িত্ব শেষ। এবার শান্তিতে মরতে পারবে।

মহুয়াদের যাওয়ার সময় হচ্ছে। একটু পর রওনা হবে।মহুয়াকে মিমি একটা ড্রেস দিয়ে গেলো পরতে।মহুয়া ভাবছে নতুন বউ শাড়ি পরে শ্বশুর বাড়িতে যায় আর ওকে দিলো ড্রেস।মহুয়া ড্রেস টা পরে রেডি হয়ে নিলো।
মিলন বাইরে পায়চারি করছে কখন তানিয়া আসবে।কিন্তু তানিয়া আসলো না বরং রিনি এসে ওর মাথা খাচ্ছে বকবক করে।বলতে গেলে গায়েই পড়ছে।
মিলন এর অসহ্য লাগছে। মিলন আর অপেক্ষা না করে তানিয়াদের বাড়ির দিকে গেল।অনেক উঁকিঝুঁকি মারছে কিন্তু তানিয়াকে দেখতে পায় না।মিলন ভাবছে কি হল ওর। নাম্বার টা ও নেওয়া হলো না।
মিলন ঘরে এসে মুখ কালো করে বসে আছে।মহুয়ার কাছ থেকে নিতে সংকোচ হচ্ছে ওর। ছোট হলেও সম্পর্কে ভাবি।কি ভাববে।
মিনার ঘুম থেকে উঠে মহুয়াকে দেখতে পেলো না।ফ্রেস হয়ে বাইরে বেরিয়ে দেখে মহুয়া ওর মায়ের সাথে কথা বলছে।মহুয়া কে ড্রেসে দেখে মিনার ভাবে কোন পিচ্ছি কে বিয়ে করে নিলো।মিমির থেকেও ছোট লাগছে মহুয়াকে।শাড়িতে তাও বউ বউ লাগছিল।এখন পিচ্ছি লাগছে একদম পুতুলের মতো।

মহুয়ার বিদায়ের সময় তানিয়া আসেনি।ভোরে উঠে শাপলার বিলে গিয়ে মহুয়া গাছটার নিচে বসে বসে কান্না করছে।
মহুয়ার বাবা নিজেকে শান্ত রেখে মহুয়াকে গাড়িতে তুলে দিয়েছে।মহুয়ার মা ভদ্রতার খাতিরে বাইরে এসে দাড়ায়।লোকে খারাপ না বলে সে ভেবে।
মহুয়ার ভিতরে কস্ট পাচ্ছে কিন্তু চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে না।চুপচাপ বসে আছে।তানিয়ার না আসার কারন জানে।কই আছে তাও জানে।কিন্তু একবার দেখতে ইচ্ছে করছে। গাড়ি যত এগিয়ে যাচ্ছে মহুয়ার বুকের ভিতর যেন তত ছটফট করছে।মিনার ওর দিকে তাকিয়ে দেখছে মাঝে মাঝে। মহুয়ার এমন মৌণ অবস্থা দেখে অবাক হচ্ছে মিনার।বিদায়ের সময় মেয়েরা কান্নায় বুক ভাসায় আর এই মেয়ের কোনো হেলদুল নেই।কিন্তু ওর মুখটা দেখে বুঝা যাচ্ছে সহ্য করছে।নাকের ডগা, গাল লাল হয়ে আছে। চোখগুলো একদম পুতুলের মতো স্থির হয়ে আছে বাইরের দিকে।
মিনার আর চোখ সরাতে পারছে না।আবার মোহে পড়ে যাচ্ছে। হঠাৎ মহুয়া জোরে বলে উঠে গাড়ি থামান, গাড়ি থামান। ড্রাইভার গাড়ি থামায়।মহুয়া দরজা টা খোলার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।মিনার খোলে দিল।মহুয়া নেমেই বিল দিয়ে নেমে দৌড়ে যেতে থাকে।মিলন ও ওদের সাথে ছিল।মিলন আর মিনার হা করে মহুয়ার কান্ড দেখছে।মহুয়া একটা গাছের কাছাকাছি গিয়ে থামে।শাপলার বিলের পাশের বড় রাস্তায় মহুয়া গাড়ি থামায়।মিলন আর মিনার দেখছে মহুয়া তানিয়াকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে।মিলনের মুখে হাসি ফোটে তানিয়াকে দেখে। মিলন ভাবছে মেয়েটা ছটফটে স্বভাবের কিন্তু মন টা এত নরম।মিনার ভাবছে মহুয়া এতক্ষন যেন তানিয়ার জন্যই কান্না চেপে রেখেছিল।কান্না থামছেই না দুটোর।মনে হচ্ছে রিনি না তানিয়াই ওর বোন।দুজনের বন্ডিং টা সত্যি অন্য রকম।
মহুয়া কান্না থামিয়ে নিজেকে সামলে নিল আবার।তানিয়া ও মিলন আর মিনার কে আসতে দেখে কান্না থামিয়ে নেয়।মিলন বলে ভাবি মনে হয় ফ্রেন্ডকে ছাড়া যাবেনা ভাইয়া।মিনার শুধু বলে আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।তানিয়া মহুয়াকে নিয়ে গাড়িয়ে বসিয়ে দেয়।মিলন তানিয়ার হাতে একটা কার্ড গুজে দিয়ে গাড়িতে উঠে বসে।মিলন সকাল থেকে কার্ডটায় নিজের নাম্বার লিখে ঘুরছিলো তানিয়াকে দেওয়ার জন্য।তানিয়া ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। মহুয়াও যতদূর আড়াল না হয় তাকিয়ে ছিল।
তানিয়া কার্ডটা দেখে মুচকি হাসে।কার্ডে লিখা ছিলো “আমি আপনার সারাজীবনের দায়িত্ব নিতে চাই”
আর মিলন এর ফোন নাম্বার টা।

ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই ওরা বাসায় পৌঁছে যায়।
মহুয়া বাড়িটা একনজরে দেখে নিয়ে মিনারের পিছু পিছু উপরে উঠতে লাগলো। মহুয়া একটা বিষয় খেয়াল করে যে মিনার একবার ও ওর সাথে কথা বলেনি।মহুয়া ঘরে ঢুকতেই মীরা এসে ওকে জড়িয়ে ধরে। গাল দুটো টেনে দিয়ে আদর করে। আসলে মীরা মহুয়াকে ছোট থেকেই খুব ভালোবাসতো।কিন্তু পড়াশোনা আর ব্যস্ততার জন্য তেমন গ্রামে যাওয়াই হয়নি আর মহুয়ার সাথে দেখাও হয়নি।মীরা মহুয়াকে নিজের রুমে নিয়ে গেলো।
মহুয়া চুপচাপ বসে আছে। সবাই চেনা তাও কেমন যেন লাগছে ওর।বাড়ির কথা খুব মনে পড়ছে।
মিনার আসার পর একটা কল পেয়ে তারাতাড়ি বাইরে বেরিয়ে পড়ে।
কফি শপে রেহান বসে আছে।মিনার কে জয় কল করেছিলো।রেহান এর কল রিসিভ করছিলো না তাই জয়কে কে দিয়েই কল করে আনে।রেহান এর সাথে জয়ও ছিলো। জয় মিনার এর হাত ধরে বলে একটি বার কথা বলে নে আমার জন্য প্লিজ। মিনার বসে। রেহান মিনারের কাছে ক্ষমা চায়।বলে আমি নিলা কে ভালোবাসিনা মিনার।কারণ আমি জানি তুই ওকে ভালোবাসিস।আমি রাগ আর জেদের বসে ওকে নিজের প্রেমের ফাদে ফেলেছিলাম। আমি নিলাকে সবটা বলেছি।আমি আর তোদের মাঝখানে আসবো না।আমি কালই সিলেট চলে যাচ্ছি।
মিনারের কাছে এসব কথার আর কোনো উত্তর নেই।
মিনারের চুপ থাকা দেখে রেহান আবার ওকে বলে একবার ক্ষমা করে দে দোস্ত।
মিনার রেহান এর দিকে তাকিয়ে বলে,দিলাম।
রেহান এসে মিনার কে জড়িয়ে ধরে। মিনার বলে আমি তোকে ক্ষমা করে দিলাম কিন্তু আমি আর কোনো ভুল করতে চায়না।আর কোনো আবদার রাখতে পারবো না।রেহান বলে, মানে?
মিনার একটু হেসে বলে,গতকালের আমি আর আজকের আমি এক না।সময় এর সাথে আমার ও বদল ঘটেছে আর আমার জীবনের ও।আর আমি সবটা মেনে নিয়েছি।এবার তুই ও মেনে নে।
রেহান মিনারের কোনো কথা বুঝতে পারছে না। মিনার বলে, তুই নিলাকে হয়তো ভালবাসিস নি কিন্তু নিলা তুকে খুব ভালোবাসে রেহান।তা না হলে তুই যা বলেছিস তা তা ও করতো না।আর নিলা খুব ভালো মেয়ে তোকে খুব ভালোবাসে। রিদির মতো তোকে কস্ট দিবে না।তাই নিলার ভালবাসাকে আর অপমান করিস না।তোরা ভালো থাক।
রেহান বলে,না মিনার এসব কি বলছিস।
মিনার বলে ঠিক বলছি।যা হবার তা হয়েছে আমি সব ভূলতে চাই,তুই ও ভূলে যা।আমি আসি তুই ভালো থাক।এর বেশি আর বলতে পারবো না।রেহান বুঝতে পারছে না মিনার এর কি এমন হয়েছে। আর মিনার মনে মনে বলছে এটাই হওয়ার ছিলো। ওরা ভালো থাকুক। আর এখন মহুয়াই ওর স্ত্রী। এক দিনেই সবটা বদলে গেছে।জীবন টা আর জটিল করতে চাইনা।

মিনার বাসায় ফিরে রুমে ঢুকতেই দেখে মিরা, মিমি আর মহুয়া বসে গল্প করছে। ঘরটা ফুল আর মোমবাতি দিয়ে সাজানো। মহুয়াকেও শাড়ি গয়না পরিয়ে সাজিয়ে বসিয়ে রেখেছে।মিনারের বুঝা হয়ে গেছে এসব কেন করেছে।মিরা এগিয়ে এসে বলে কই ছিলি সারাদিন? দুপুরেও খেতে আসিস নি। এত রাতে বাসায় ফিরলি।নতুন বউ রেখে বাসায় নিজে উধাও?
মিনার মিরাকে কিছু না বলে মা বলে জোরে চিৎকার করে। মহুয়া চমকে উঠে সাথে মিরা আর মিমি ও।
মিনারের মা আর ফুফু ওদের রুমে আসে।
মিনার বলে মা এসব কি? আগেই তো সব কথা বার্তা হয়েছিলো। ও এখানে কেনো।আর এসব কি?ঘর সাজিয়েছে কেনো?
মিনারের মা ছেলে কে চুপ করতে বলে।মহুয়া কিছুই বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে।মিনারের মা মিনার কে রুমের বাইরে নিয়ে যায়।
মিনারের মা মিনার কে বলে, কি করছিস মিনার?মহুয়া এই ঘরে না থেকে কই থাকবে?ও তো তোর বউ।
মিনার বলে,হ্যা আমার বউ কিন্তু সেটা কেউ জানেনা এখানে।বাইরের কেউ যদি ওকে আমার ঘরে দেখে কি বলবে?
মা বলে, কে কি বলবে?কে আসবে আর। আসলে দেখা যাবে।কালও তো ছিলি এক সাথে।তাহলে আজ না কেনো?
মিনার বলে দেখ মা এমন কথা ছিলো না।মেঝ চাচী যখন তখন আসে।কিছুদিন পর বিয়ে আপুর।যে কেউ আসবে যাবে।কয়জনকে বলে বেড়াবে।আর কাল বাধ্য হয়ে থেকেছি।থাকার ব্যবস্থা ছিলো না তাই।
মা বলে,তাহলে আজও থেকে নে বাবা।দেখ মিরা আর মিমি এক ঘরে,আর তোর ফুফুকে তো চিনিস কতো খুতখুতে স্বভাবের একটা ঘর ও খালি নেই।
মিনার বলে মা আমি পারবো না।আমি আজ ড্রইংরুমে থাকছি কাল ওকে চিলেকোঠার ঘরটা খালি করে দিও।
মা বলে বাচ্ছা একটা মেয়ে ছাদের চিলেকোঠার ঘরে একা কি করে থাকবে?
ঠিক আছে আমিই থাকবো হয়েছে?কাল পরিস্কার করে দিও।
মিনারের মা আর বুঝাতে না পেরে কি করবে ভাবছে।মহুয়াকেও বলতে হবে।মেয়েটা কিছুই জানেনা।
মিনারের মা মহুয়ার কাছে গেলো।আর মিনার ছাদে গেলো স্মোক করতে।মেজাজ টা খারাপ লাগছে ওর।রেহান এর সাথে কথা বলার পর থেকেই মন টা খারাপ হয়ে ছিলো। এসব দেখে নিজেকে সামলাতে পারে নি। তাই রেগে গিয়েছিল।

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে