#মন গহীনে তুমি
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ৪
সবাই যেভাবে শপিং করে যাচ্ছে তাতে আমি হৃদয়ে ব্যাথা অনুভব করতে পারছি। তারা তো আর জানেনা বিয়েটা হবেনা। শুধু শুধু আমি এত খরচ করছি।
আমি আপুকে বললাম, একদিনেই সব কিনে ফেলবা নাকি। কিছুদিন পর আপডেট কিছু নিয়ে আসবে তারা তখন আবার কিনতে পারবা৷ এখন মোটামুটি যা হইছে ওইগুলাই রাখো৷
আপু বললো, তুই চুপ করতো। বিয়ের তো আর বেশিদিন নাই৷ কত কাজ পরে আছে। রোজ রোজ শপিং করতে আসবো নাকি৷ আজকে একদিনেই শপিং শেষ করতে হবে৷
আপুর কথা শুনে আসবো না কাঁদবো কিছুই বুঝতে পারছিনা৷ যেখানে আমি বিয়েটাই করতে চাইনা সেখানে তারা বলে বিয়ের আর বেশিদিন নাই৷ আজকে বাসায় গিয়েই সব সত্যিটা বলতে হবে। যত দেঁড়ি করবো আমার খরচ তত বাড়বে৷ ওই মেয়েটাকে এত কিছু গিফট দেওয়ার কোন ইচ্ছাই আমার নাই৷
আপু আমাকে বললো, তুই এখানে কি করছিস? কায়রা কোথায়? তোদের শপিং করা শেষ?
” মেয়েটার নাম তাহলে কায়রা ” আপু না বললে জানতামই না৷ মেয়ে দেখতে গিয়ে যে সিচুয়েশনে পরলাম তাতে মেয়েটার নাম জিজ্ঞেস করার আর ইচ্ছে হয়নি।
আপুকে বললাম, শুরু ই তো করতে পারলাম না এখনও। সে ফোনে কথা বলতে গেছে।
হঠাৎ কায়রার বাবা আমাকে বললো, জামাই বাবাজি একটু এদিকে আসো তো। দেখো তো এটা তোমার পছন্দ হয় কিনা।
” আমি আগে মূল্যটা দেখে নিলাম৷ অনেক বেশিই আছে। তারপরও মেয়েকে যা দিবো তার সামনে কিছুই না৷ আমি দোকানদারকে বললাম, আচ্ছা এই সেইম ডিজাইনের অন্য কালারের ৭/৮ টা হবে।
কায়রার বাবা আমাকে বললো, তা দিয়ে কি করবা জামাই বাবাজি?
– আসলে আমার বন্ধুদের দিতে হবে। আগে থেকেই ওরা প্লান করে রেখেছে। আপনি আমার জন্য কিনেন আমি ওদের জন্য কিনবো৷
– সে কি করে হয় জামাই বাবাজি। তোমার কিছু কিনতে হবেনা৷ আমি তোমার বন্ধুদের জন্য কিনে দিচ্ছি।
– না থাক আংকেল। এত গুলো কিনার দরকার নেই৷ তাছাড়া আরও তো কত কি আছে৷ আমি যা কিনবো সেইম ডিজাইনের অন্য কালারের গুলা ওদের জন্য ও কিনে দিতে হবে৷ তাই যেই দোকানে সব পাওয়া যাবে ওই দোকান থেকেই কিনতে হবে৷ আপনি আমার জন্য কিনবেন আর আমি ওদের জন্য।
– আরে কি বলো জামাই বাবাজি তুমি কেন কিনবে৷ আমিই সব কিনে দিবো।
এর ভিতরে কায়রা চলে আসলো। কায়রা আমার দিকে রাগীভাবে তাকিয়ে আছে। কায়রার বাবা ওকে বললো, কায়রা তুই একটু জামাই বাবাজিকে বুঝা তো।
কায়রা আমাকে বললো, বাবা যখন এত করে বলছে তখন আপনার শুনা উচিত। বড়দের কথার অবাধ্য তো হওয়া উচিত না।
– আচ্ছা আপনারা যখন এত করে বলছেন তাহলে কি আর করার৷ আপনাদের কথামতই সব হউক।
” আমি মনে মনে বললাম, এটাই তো চেয়েছিলাম৷ আমি এতগুলো টাকা খরচ করবো তার উসুল তো করতে হবে।
আপু বললো, তুই এখনও দাঁড়িয়ে আছিস কেন? কায়রা তো এসেছে ওকে নিয়ে যা তোদের পছন্দ মত তোরা কিনে নে
———-
শুধু হাঁটছি কিন্তু কোনো দোকানে যাচ্ছি না। আমরা তো জানি বিয়েটা হবেনা তাহলে এসব কেনাকাটা কেন করবো৷ কায়রা আমার দিকে রাগীভাবে ভাবে তাকিয়ে আছে৷ আমি মনে মনে হাসতেছি৷ নিজের বাবার টাকা কেও খরচ করতে চায় না৷ অন্যজনের হলে ঠিক আছে। বাবার সামনে কত ভালো সাজলো৷ আর মাঝখান থেকে আমি সবার সামনে খারাপ হয়ে যাবো৷
কায়রা আমাকে বললো, আপনি ইচ্ছে করে আমার বাবার থেকে শুধু এসব নিচ্ছেন কেন? আমি তো আর ইচ্ছে করে বা চেয়ে নিচ্ছি না৷ আপনার পরিবার আমাকে দিচ্ছে।
– টাকাটা তো আমার পকেট থেকেই যাচ্ছে। তাই তার উসুল করার বিন্দুমাত্র প্রয়াস৷ চিন্তা করবেন না আমরা আপনাকে যা দিবো তা যদি ঠিকঠাক ফেরত পাই তাহলে আপনারা যা দিবেন তাও ঠিকঠাক ফেরত পাবেন৷
– আপনার মত ছোট মনের মানুষ আমি আজ পর্যন্ত দেখিনি৷
– ফ্রিতে না দেওয়াতে ছোট মনের মানুষ হয়ে গেলাম৷ কপাল আমার। আপনারা তো বড় মনের মানুষ তাহলে আপনারা যা দিবেন তা ফেরত না নিলেই পারেন৷ আমি তো ছোট মনের মানুষ তাই আমি সব ফেরত নিবো৷
– যদি আমার কাছে টাকা থাকতো তাহলে আপনার সব টাকা এখনই দিয়ে দিতাম।
– আপনার কাছে টাকা নাই তো কি হইছে একটা ব্যাংক তো আছে চাইলে সেখান থেকে নিয়ে দিতে পারেন৷
– মানে? কিসের ব্যাংকের কথা বলছেন?
– আপনার বয়ফ্রেন্ড সে টাকার ব্যাংক৷ তাকে বলুন আমার যা খরচ হবে তা দিয়ে দিতে৷ সে তো আপনাকে ভালোবাসে কিন্তু আপনার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আর সে কিছুই করছে না৷ এটা কেন জানি আমার হজম হচ্ছে না৷ ভালোবাসার মানুষের অন্য কারও সাথে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আর সে চুপ করে আছে৷ এটা কেমন ধরনের ভালোবাসা তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।
– আচ্ছা খারাপ মানুষ তো আপনি৷ এখন কি আপনি আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝামেলা বাঁধাতে চান৷ যদি সেরকম কিছু চিন্তা – ভাবনা করে থাকেন তাহলে ভুলে যান৷ কারন আমি আমার বয়ফ্রেন্ডকে অনেক ভালোবাসি সেই সাথে বিশ্বাসও আছে ওর প্রতি৷
– তাহলে সে চুপ করে আছে কেন? আপনার বাবার সাথে কথা বলুক৷ মানুষ ভালোবাসার জন্য কত রিস্ক নেয় আর আপনার বয়ফ্রেন্ড সামান্য এটা করতে পারবেনা। আপনার বয়ফ্রেন্ড চাইলেই তো বিয়েটা ভেঙে দিতে পারে৷ বিয়েটা ঠিক হওয়ার আগে কেন আপনার বাবার সাথে কথা বললো না ?
– বলেনি কারন আছে৷ আপনার আমাকে নিয়ে ভাবতে হবেনা৷ আপনি এখন নিজেকে নিয়ে ভাবেন৷ আর যত দ্রুত সম্ভব বিয়েটা ভাঙেন।
– সবকিছু আমি একা কেন করবো? বিয়েটা তো আর আমার একার হচ্ছেনা৷ যা করবো দুজনে সমান সমান। তাই আপনি আপনার পরিবারকে বলবেন আমি আমার পরিবারকে৷
– যদি তা বলতে পারতাম। তাহলে আপনার মত অভদ্র মানুষের সাথে জিবনে আমার হয়তো কখনও কথাও হত না৷
– আচ্ছা মানলাম আমি অভদ্র। তা আপনি আর আপনার বয়ফ্রেন্ড তো খুবি ভদ্র। তাহলে আপনারা দুজনে মিলে বিয়েটা ভাঙুন।
– যা করার আপনি করবেন৷ তা না হলে আপনার পরিবারকে বলবো আপনি আমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছেন৷
– কি মেয়েরে বাবা৷ এত বড় মিথ্যা কথা বলবেন৷ আপনি না ভদ্র মানুষ।
– মিথ্যা কেন বলতে যাবো৷ সত্যিই তো আপনি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছেন৷ পুলিশের কাছে বলিনি আপনার কপাল ভালো৷
” হঠাৎ আপু আসলো৷ আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম৷ কোন কিছু না জেনে মাঝখান থেকে এটা শুনে নিলে তো ঝামেলা হয়ে যাবে”।
আপু বললো,
চলবে—–