মন গহীনে তুমি পর্ব-০১

0
1985

#মন গহীনে তুমি
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ১

বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে গিয়ে আদ্রিশ বললো, ” আপনি ভা*র্জি*ন কিনা আমি এটা পরিক্ষা করাতে চাই। তারপরই কেবল বিয়েটা হবে “।

” এমন কিছু শুনার জন্য কায়রা একদমই প্রস্তুত ছিলোনা। বর্তমান সময়েও কোন শিক্ষিত ছেলে এমন কথা বলতে পারে তা কায়রার জানা ছিলোনা। অবশ্য আজকাল বাহ্যিক দিক থেকে কাউকে ভদ্র মনে হলেও তার ভিতরে এরকম মন- মানসিকতা থাকে।

রাগে কায়রার চোখ লাল হয়ে গেছে৷ প্রচন্ড রেখে থাকলে কায়রার এমন হয়। ছেলের সাথে কায়রাকে আলাদা রুমে কথা বলতে পাঠানো হয়েছে৷ কায়রা যতটা সম্ভব চুপ থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কায়রা বাসায় কোন ঝামেলা চাচ্ছেনা৷

কায়রা অনেক কষ্টে নিজেকে শান্ত রেখে রাগী গলায় বললো, ” আপনার পরিক্ষা করানোর দরকার নেই৷ আমি ভা*র্জি*ন না। আর কিছু জানতে চান আপনি?

” মেয়েটার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো আদ্রিশ। কি বলে মেয়েটা? ভা*র্জি*ন না কত সহজ ভাবে বলে দিলো। মনে হয় এটা তার কাছে কোন ব্যাপারই না।

আদ্রিশের পরিবার ওকে বলেছিলো মেয়েটা একটু আধুনিক হলেও খুবই ভালো৷ পরিবারের জন্য আর আদ্রিশের জন্য একদম পারফেক্ট।

আদ্রিশও পরিবারের কথায় মেয়ে দেখতে চলে আসলো৷ আদ্রিশ কোন কিছু নিয়ে কনফিউশন পছন্দ করেনা৷ তাই আগে থেকেই সবকিছু ক্লিয়ার হয়ে নেয়। তাইতো ভা*র্জি*ন কিনা এটা পরিক্ষা করাতে চেয়েছিলো। যাতে এটা নিয়ে বিয়ের পর কোন ঝামেলা না হয়।

এখন মেয়েটার কথা শুনে ও আরও কনফিউজড হয়ে গেলো। আদ্রিশ ঠিক করে নিয়েছে বিয়েটা ও করবেনা। ১/২ দিন পরিবারের কথা শোনার থেকে সারাজীবন খুশি থাকাই ওর কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

কায়রা বললো ” আপনার আর কিছু জিজ্ঞেস করার নেই?

– আপনি এরকম উচ্চস্বরে কেন কথা বলেন? মেয়েদের নরম কন্ঠে কথা বলতে হয়৷

– আমার ইচ্ছে আমি যেভাবে কথা বলবো তাতে আপনার কি? আমার বাক – স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার আপনি কে?

” আদ্রিশ বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারলো এই মেয়েকে বিয়ে করলে ওর জিবন তেজপাতা হয়ে যাবে৷ ওর বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত আরও জোরালো হলো।

কায়রা বললো, ” আপনার যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন৷ আমার শাড়ি পরে থাকার অভ্যাস নেই। গরম লাগছে অনেক।

– আর কিছু বলার নেই

আদ্রিশ আর কায়রার দিকে দুই পরিবারের সবাই উচ্ছাস হয়ে তাকিয়ে আছে। দুই পরিবার এই বিয়েতে রাজি এখন শুধু ছেলে আর মেয়ে একে- অপরকে পছন্দ করলেই তারা বিয়ের তারিখ ঠিক করবে৷

আদ্রিশ আর কায়রা দুজনেই সামাজিকতা রক্ষার জন্য একটু হাসার চেষ্টা করলো৷ ওদেরকে হাসতে দেখে দুই পরিবার ভেবেছে ওদের হয়তো একে-অপরকে পছন্দ হয়েছে। তারা বিয়ের তারিখ ঠিক করতে লাগলো৷

এটা দেখে আদ্রিশ, কায়রা দুজনেই অবাক হয়ে গেছে। ওরা সবার সামনে সরাসরি কিছু বলতেও পারছেনা।

আদ্রিশ ওর আপুকে ডাক দিয়ে বললো, ” আপু স্যার কল দিয়েছিলো। খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। অফিসে যেতে হবে। আমার ছুটিও ক্যান্সেল করে দিয়েছে। আমি অফিসে যাই তারপর দেখি স্যার কবে ছুটি দেয় তারপর না হয় বিয়ের তারিখ ঠিক করবো।

কায়রার পরিবারও এতে অমত করলো না৷ সমস্যা থাকতেই পারে৷ আদ্রিশের গুরুত্বপূর্ণ কাজ শেষ হলেই বিয়ের তারিখ ঠিক করা হবে৷

কায়রা কিছুটা স্বস্তি পেলো৷ কিন্তু গলা থেকে কাঁটাতে এখনও পুরোপুরি দূর হয়নি৷ বিয়েটা কিভাবে আটকাবে সেটাই ভেবে পাচ্ছেনা৷ ও নিজে থেকে ওর পরিবারকে কিছু বলতেও পারবেনা৷

শুধুমাত্র ছেলেটা ওকে রিজেক্ট করলে তবেই হবে৷ তাহলে ওর অমতে আর ওর বাবা- মা বিয়ে ঠিক করতে পারবেনা৷ ওর ইচ্ছে মত হবে। এমনটাই চুক্তি হয়েছে ওর বাবার সাথে।

কিন্তু সামান্য একটু হাসি সবকিছু শেষ করে দিলো। আমি না হয় ভদ্রতার জন্য একটু হাসার চেষ্টা করেছি কিন্তু এই বর্বর ছেলেটাকে কেন হাসতে হবে৷ কথা তো ঠিকভাবে বলতে পারেনা৷ এখন দেখছি কখন, কোথায় হাসতে হবে তাও জানেনা। তবে ছেলেটার উপস্থিত বুদ্ধি আছে তা মানতে হবে। এটার জন্যই একটু স্বস্তি পেলাম।

” দুই পরিবারের সবাই খুব খুশি৷ তাদের উভয়েরই ছেলে, মেয়েকে পছন্দ হয়েছে। তারা সবকিছুই ঠিক করে রাখছে শুধু বিয়ের তারিখটা বাদ দিয়ে৷ আদ্রিশ আর কায়রা এসব দেখে হতাশ হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে “।

কায়রা রাগীভাবে আদ্রিশের দিকে তাকিয়ে আছে৷ আর মনে মনে বলতেছে, বর্বর, উজবুক একটা৷ বলে দিলেই তো পারে বিয়েটা করবেনা৷ তা না ঢং করে আবার হাসতে গিয়েছে৷ মন চাচ্ছে ঘুষি মেরে নাকটা ফাঁ*টি*য়ে দেই৷

আদ্রিশ ওর আপুকে বললো, আপু এখন তাহলে যাওয়া যাক। আমারও অফিসে যেতে হবে।

কায়রার বাবা- মা বললো, আপনাদের আর বসিয়ে না রাখি৷ আদ্রিশ বাবাজির তো আবার কাজ পরে গেছে৷ খেয়ে তারপর যাবেন আপনারা৷

কায়রা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওর বাবার দিকে৷ ” আদ্রিশ বাবাজি ” বিয়ে হবেনা আর এমন টাইটেল৷ বাবা যখন জানতে পারবে বিয়েটা হবেনা তখন কি হবে সেটা ভেবেই আমার হাসি পাচ্ছে। চুক্তিটা আমি জিতে যাবো৷

আর এই অভদ্র ছেলেটা এখনও যাচ্ছেনা কেন। এখন আবার খাবে৷ বলে দিলেই তো পারে যে খাওয়ার ইচ্ছে নেই।

আদ্রিশ বললো, ” আমার তো কাজ পরে গেছে আমাকে যেতে হবে “।

কায়রার বাবা- মা বললো, ” অল্প খেয়ে যাও। আর তোমার স্যার তো জানেই তুমি এখানে। একটু লেইট হলেও সমস্যা হবেনা”।

আদ্রিশের অনিচ্ছা সত্যেও খাওয়ার জন্য বসতে হলো। কায়রার বাবা- মা কায়রাকে বললো, আদ্রিশকে খাবার দিতে। কায়রা বাধ্য হয়ে আদ্রিশকে খাবার দিতে গেলো।

কায়রা সবকিছু বেশি বেশি দিচ্ছে। আদ্রিশ না করছে তারপরও দিচ্ছে। তখন সবাই বললো, বিয়ের আগেই হাসবেন্ডের এত কেয়ার৷ বিয়ের পর তো আমাদের সবাইকে ভুলে যাবে।

কায়রা হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না। ও যা করছে সবকিছুই এরা পজিটিভ ভাবে নিচ্ছে। নেগেটিভ ভাবে নিলেই কিন্তু সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়৷

সবার কথা শুনে আদ্রিশের গলায় খাবার আটকে গেলো। কায়রা পানি এগিয়ে দিলো। দেওয়ার পর সবার দিকে তাকিয়ে দেখলো তারা ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে৷ কায়রা সেখান থেকে চলে গেলো৷ সবাই ভাবলো লজ্জা পেয়েছে তাই চলে গেছে।

আদ্রিশ কারও দিকে তাকাতে পারছে না লজ্জায়। চুপচাপ খাওয়া শেষ করলো৷

কায়রার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। সবাই শুধু উল্টো ভাবছে। সব হয়েছে ওই অভদ্র ছেলেটার জন্য।

সবাই চলে গেলে কায়রার বাবা- মা ওকে বললো, আমি তোকে বলেছিলাম না ছেলেটাকে তোরও অনেক পছন্দ হবে। এখন আমার কথা হলো তো।

কায়রা ওর বাবাকে কিছু বলতেও পারছেনা। এখন যা করার তা ওই অভদ্র ছেলেটাকে করতে হবে৷

কায়রার বাবা- মা ওকে ছেলেটার নাম্বার দিয়ে গেলো৷ আর বললো কথা বলতে।

কায়রা অনেকখন ভাবার পর কল দিলো। অপর পাশ থেকে সালাম দিয়ে বললো, কে আপনি?

কায়রা চুপ করে আছে। একটু পর বললো, আজকে যার বাসা থেকে খেয়ে আসছেন সেখান থেকে কল দিয়েছি৷ এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন?

– তো এখন কি আপনি খাওয়ার টাকা নিতে কল দিয়েছেন?

কায়রা রাগ কন্ট্রোল করে বললো, আপনার সাথে দেখা করতে চাই। কাল বিকালে বেলস পার্ক চলে আসবেন। গুরুত্বপূর্ন কিছু বলবো৷
চলবে—

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে