মনের গহীনে শুধুই তুমি পর্ব-০১

0
2768

#মনের_গহীনে_শুধুই_তুমি
#পর্ব_1
#Mst_Meghla_Akter_Mim

“কবুল কেনো বললে তুমি? তোমার জন্য বিয়েটা করতে হলো আমার। কি দরকার ছিল এইখানেই আসার তোমার হ্যাঁ? এই মেয়েটা তো আমার জীবন শেষ করে দিলো। প্রথম দেখা থেকে আমাকে বিপদে ফেলা আর এখন তো আমার পুরো জীবন বিপদময় করে দিলে।” -রোদ্দুর চৌধুরী (রোদ) রেগে মেঘের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললো।

মেঘ ভয়ে কাঁপছে। দু পা পিছিয়ে গিয়ে বলল,-” আ.. আমি কি ইচ্ছা করে কবুল বলেছি নাকি! কবুল না বললে গ্রামের লোক আমাকে কি করত কে জানে সে ভয়েই তো বলেছি। কিন্তু আপনি তো খুব সাহসী আপনি কেনো কবুল বললেন?”

মেঘের কথায় রোদ্দুর চৌধুরী আরো রেগে কাছে আসলেন। রাস্তায় থাকা উনার কারের সাথে মেঘের পিঠ ঠেকে গেলো। উনি মেঘের একদম মুখের সামনে এসে রেগে বললেন,

–” তুমি আগে কবুল না বললে কিছু হতো না। তুমি কবুল বলেছ তো আমার আর কি করার ছিল! আর আমার সাহস নিয়ে তোমার সন্দেহ?”

মেঘ দাঁত বের করে হাসি দিয়ে বলল, “সে তো দেখলাম কিছুক্ষণ আগে কেমন সাহস আপনার।”

রোদ মেঘের হাত শক্ত করে ধরে বলল, “আমার মতো এতো সুন্দর ছেলেকে দেখে আর লোভ সামলাতে পারো নি তাইনা? আমার এতো টাকা পয়সার লোভে আমাকে ফাঁসিতে বিয়ে করলে আমি নিশ্চিত।”

রোদের এই সমস্ত কথায় মেঘ আর নিজেকে সামলাতে পারল না। ঝাড়ি মেরে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে রোদের সামনে তুরী মেরে বলল,

–“হে ইউ নিজেকে কি ভাবেন হ্যাঁ? আপ্নার মতো এমন ছেলেকে বিয়ে করার বিন্দু মাত্র ইচ্ছা আমার ছিল না। আর রইলো টাকা পয়সা? আপনার ওই টাকা পয়সা আমার কোনো দরকার নেই। আর আপনি কে, আপনার কি আছে না আছে আমি কিছুই জানিনা।”

রোদ একটু হেসে ভাব নিয়ে বললো, “এই শহরের কে না আমায় চিনে? আমার জন্য কত মেয়ে পাগল আর এই মেয়ে বলে এর নাকি কিছুই চাই না।”

এইসব বলে রোদ পাশে তাকিয়ে দেখলো মেঘ নেই। মেঘ কে না দেখে রোদ নিজে নিজে বললো,

” হাওয়া হয়ে গেলো নাকি? যাক বাবা বাচলাম! বাড়িতে গিয়ে লম্বা একটা ঘুম দিতে হবে।”

রোদ গাড়িতে উঠতে নিবে তখনই আদিল চৌধুরী ফোন করলেন। রোদ ফোন ধরেই বললো,” বাবা আমার একটা বন্ধুর খুব বিপদ হয়েছিলো তাই ওর বাড়িতেই আজ রাতে থাকতে হয়েছে। সরি বাবা।”

আদিল চৌধুরী ধমক দিয়ে বললো,” চুপ বেয়াদব!আওয়ারা তো ছিলই এখন মিথ্যা বলা শিখে গেছিস।”

রোদ ঢোক গিলে বললো, “আমি কখনো তোমাকে মিথ্যা বলেছি বল? তোমাকে কখনো আমি মিথ্যা বলতেই পারিনা।”

আদিল চৌধুরী আরো রেগে বললো,” সব বুঝেছি। মেয়েটা কোথায় তা বল!”

রোদ আকাশের দিকে তারপর ওর আগে পেছনে তাকিয়ে বললো,-” মেয়ে? কোন মেয়ে? কোথাকার মেয়ে? আমার সাথে কোনো মেয়ে নেই।”

–“তোর সাথে নেই মানে? বিয়ে করে সেই মেয়েকে তুই রাস্তার মাঝে কোথায় রেখে বাড়িতে আসতে চাইছিস হ্যাঁ? যেভাবেই হোক বিয়ে মানে বিয়ে! ও এখন তোর বউ, মেয়েটা কে নিজ দায়িত্বে বাড়িতে নিয়ে তারপর বাড়িতে ঢুকবি।”

রোদ কাঁদো কাঁদো হওয়ার ভান করে বললো,” তোমাকে এইসব কে জানিয়ে দিলো? ওই মেয়েটা কে আমার সহ্য হয় না।”

–” কেমন করে জেনেছি তোর জানতে হবে না। আর তোর সহ্য হয় কি হয় না তা আমি জানতে চাই না। ওকে সাথে আনলে বাড়িতে ফিরবি আর না আনলে তোর জন্য এই বাড়ির দরজা বন্ধ।”

বলেই আদিল চৌধুরী ফোন রেখে দিলো। রোদ মাথায় হাত দিয়ে নিজে নিজে বলছে,” কি বিপদে পড়লাম। কোথায় মেয়েটা গেছে কিছুই জানি না। আরে রোদ তুই কেন মেয়ে টা কে এত রাগ দেখাতে গেলি? এখন নিজে মর।”

রোদ গাড়িতে উঠে ওকে খুঁজতে শুরু করলো।
_____
কিছুই বুঝতে পারছেন না? আসুন আসল ঘটনা খুলে বলি,

ওই যে ছেলেটা উনি রোদ চৌধুরী। পুরো আওয়ারা টাইপ এর ছেলে, বড় লোকের ছেলে হলে যা হয় আর কি। তবে বেশ দেখতে ভালো তাই মেয়েদের লাইন লেগে যায় ওর পেছনে। আর মেয়েটা হল মেঘলা আকতার মিম, যাকে সবাই মেঘ বলে ডাকে। মেঘ অনেক স্মার্ট, দেখতে সুন্দর কিন্তু একদম ছেলেদের পছন্দ করে না।

মেঘ এসেছিল কলেজ থেকে পিকনিক এ। যদিও মেঘের বাড়ি থেকে permission পাওয়া খুব কঠিন ছিল। অনেক কষ্টে রাজি বাবা – মা কে রাজি করিয়ে এসেছিল। কিন্তু সেখান থেকে ফেরার পথে গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। প্রায় সন্ধে নেমে এসেছিল কিন্তু মেঘের গাড়ির ভিতরে দম বন্ধ হওয়া হওয়া অবস্থা তাই গাড়ি থেকে নেমে চার পাশ দেখছিল। কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পর পথ হারিয়ে ফেলে আর শুরু হয় মুষুলধারে বৃষ্টি। কোনো উপায় না পেয়ে সামনে থাকা এক ভাঙা ঘরের এক কোণে উঠে পড়ে মেঘ।

এদিকে রোদ ওর বন্ধুদের সাথে লং ড্রাইভ এ এসেছিল। বন্ধুরা সবাই চলে যাওয়ার পর ও একা একা ঘুরেছিল। আর হঠাৎ ওর গাড়ির পেট্রোল শেষ হয়ে যায়। মোবাইল নেটওয়ার্ক ও লাগছিল না তাই ও আশ্রয় নেয় সেই ভাঙা ঘরে। এক ঘরে থাকলেও কেউ কাউকে দেখতে পায়নি কারণ মেঘ ঘরের এক কোণে ছিল আর রোদ আরেক কোণে। মেঘের বৃষ্টিতে ভিজলে মাথা ধরে যায় আর ও খুব ক্লান্ত ছিল কখন ঘুমিয়ে যায় ওর খেয়ালই নেই। রোদ পুরো রাত জেগে আছে হঠাৎ রাত তিন টায় ঘরের কোণে মেঘ কে দেখে বলে উঠে,

-“তুমি এইখানে? এই মেয়ে উঠো?”

মেঘ ঘুম ঘুম চোখে বললো,-” পাপ্পা আর একটু ঘুমাতে দাও প্লিজ।”

রোদ চোখ বড় বড় করে বললো, “আমি এখন তোর বাপ হয়! আরে তুই আমার জীবন শেষ করে দিলি।”

ফ্লাসব্যাক–
রোদ নদীর ধারে ছবি তুলছিল। মেঘ জায়গা টা ঘুরে ঘুরে দেখছিল। রোদ কে দেখে সাপা (মেঘের বন্ধু) শয়তানী হাসি দিয়ে মেঘ কে বললো,

-“দোস্ত একটা বাজি ধরি? তুই তো কোনো বাজি তে হারতে চাস না এইবার নিশ্চয় তুই হারবি।”

মেঘ ভ্রু কুঁচকে বললো,” কি এমন বাজি শুনি? বল কি বাজি ধরবি?”

রোদ এর দিকে দেখিয়ে সাপা বললো,” এই দেখ ছেলেটা কে, ওকে ওই যে একটা আঙ্কেল কে দেখেছিস তার থেকে বকা খাইয়ে নিতে হবে।”

মেঘ একটু ভেবে বললো,” ডান! দাঁড়া আমি আসছি।”

মেঘ ওই লোক টার কাছে গিয়ে কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো,”আঙ্কেল প্লিজ আমায় হেল্প করুন।”

লোক টা বললো,” তোমার কি হয়েছে মা কাঁদছ কেনো?”

–” আঙ্কেল ওই যে ছেলে টা কে দেখছেন ও আমার ছবি তুলেছে। আপনি ই বলেন আঙ্কেল অচেনা কোনো মেয়ের ছবি তোলা কি ঠিক? আমি ডিলিট করতে বলেছি কিন্তু ডিলিট করেনি। আঙ্কেল আমার না খুব ভয় করে, ছবি দিয়ে কি না কি করবে কে জানে! আঙ্কেল আমায় রক্ষা করুন আপনি।”

আঙ্কেল টা থমথমে গলায় বলল,” চলো আমি দেখছি ছবি ডিলিট করবে না মানে? উচিত শিক্ষা দিয়ে দিবো ছেলেটা কে।”

–” না আঙ্কেল আপনি একা যান। আমার ভয় করছে।”

আঙ্কেল টা একা গেলো। গিয়েই রোদ এর হাত থেকে ক্যামেরা নিয়ে নিলো। রোদ হতবম্ব হয়ে বললো,” আরে আঙ্কেল ছবি তুলছি তো আপনি ক্যামেরা কেনো নিলেন? আপনি কি ছবি তুলবেন? দিন আমি তুলে দিচ্ছি।”

আঙ্কেল রেগে বললো,” ছবির নিকুচি করি! মেয়েদের ছবি তুলে তুলে ঘুরছ ছি!”

বলেই আঙ্কেল টা ক্যামেরা নদীর জলে ফেলে দিলো। আর বললো, “এইবার আর ছবিই তুলতে পারবে না। এই সমস্ত ছেলের জন্য আমাদের সমাজের এই অবস্থা।”-বলে আঙ্কেল টা চলে গেলো।

রোদ কিছুই বুঝলো না। হা করে তাকিয়ে সবকিছু শুনল আর ক্যামেরা ফেলে দেয়া দেখে কাঁদো কাঁদো অবস্থা। কারন ক্যামেরা টা রোদ এর নয়। ওর ঘুরতে আসার কথা ছিল না হুট করে বন্ধুদের জন্য আসতে হয়েছে। ক্যামেরা টা রাহুলের। রোদ ভাবছে রাহুল যদি শুনে কানে কান্না শুরু করে দিবে। পরে কিনে দিতে চাইলেও থামবে না এখন কি করবে?
ওর ভাবার শেষ না হতেই রাহুল এসে সবকিছু শুনে কি কান্না শুরু। কাঁদছে আর বলছে,

-“আমার গার্ল ফ্রেন্ড এর gift ছিল ওইটা জানিস তুই? এখন আমি কি করব!”

রোদ ওর কান্না থামানোর চেষ্টা করছে। এর মধ্যেই কারো হাসির আওয়াজ পেয়ে সামনে তাকিয়ে দেখল মেঘ আর আরো কয়েকটা মেয়ে হাসছে। একজন মেঘ কে বলছে,’দোস্ত দারুণ দিয়েছিস।’

কিন্তু মেঘ ওদের ওই অবস্থা দেখে মন খারাপ করে চলে গেলো। রোদের আর বুঝতে বাকি রইলো না কাজ টা কার। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

–“তুমি যেই হও তোমাকে আমি দেখে নিবো।”
.
রোদ বৃষ্টির পানি মেঘের চোখে দিয়ে বললো, “এই উঠো!”

মেঘ লাফ দিয়ে উঠে চোখ ঘোষে তাকিয়ে রোদ কে দেখে তুতলিয়ে বললো,” আ.. আপনি!”

রোদ শয়তানী হাসি দিয়ে বললো,” তখন তোমার জন্য ই আমার বিপদ টা হয়েছে। এখন তোমাকে আমি ছাড়ব না।”

–” এই শুনুন আমি ইচ্ছা করে করিনি। বাজি ছিল, সরি।”

রোদ বললো, “আমি এত সব শুনতে চাই না তোমার শাস্তি পেতেই হবে। আর তোমার শাস্তি হল সারারাত পানি তে ভিজতে হবে তোমার।”

মেঘ কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,” এই না! আমি বৃষ্টি তে ভিজলে আমার আর রক্ষা নেই। আপনি পরে শাস্তি দিয়েন।”

রোদ মেঘ কে ঘর থেকে বাহিরে বের করার জন্য ঘরের দরজার কাছে গিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করল কিন্তু দরজা তো বাহিরে থেকে বন্ধ। দুজন ই এইটা দেখে অনেক অবাক হয়ে যায়। দরজা খোলার চেষ্টা করছে দুজনেই, দেখতে দেখতে ভোর হয়ে গেছে। এর মধ্যেই বাহিরে অনেক মানুষের গলার আওয়াজ শুনতে পেলো। ওরা দরজা খুলে দিয়ে দুজন কে হিরহির করে বাহিরে এনে বললো,

–“নোংরামী হচ্ছিল হ্যাঁ? এখন কার ছেলেমেয়েরা একেবারে খারাপ হয়ে গেছে।”

রোদ আর মেঘ বললো, “আপনারা ভুল বুঝছেন।”
সবকিছু বললো কিন্তু কেউ বিশ্বাস করলো না।

গ্রামের লোক জন বললো, “ওদের বিয়ে দিয়ে দাও।”

ওরা বারবার বললো, “ওরা কেউ কাউকে চিনে না পর্যন্ত।
কিন্তু কেউ ওদের কথা না শুনে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয়।”
________

মেঘ রাস্তা দিয়ে হাঁটছে আর বলছে,” কেনো আমি জেদ করে পিকনিক এ আসলাম? না আসলে এতকিছু হতো না। পাপ্পা, মা কে কি জবাব দিবো আমি? মা জানলে তো আমায় মেরে ই ফেলবে।”

কিছুদূর যাওয়ার পর দেখলো সাপা আর অর্চি ওকে খুঁজতে খুঁজতে এদিকে আসছে। মেঘ কে দেখে ওরা দৌড়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে। মেঘ কেঁদে উঠে সবকিছু বলে ওদের। ওরা কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছিল না। অর্চি বললো,

–” দোস্ত তুই আগে চল তারপর ভাবা যাবে সবকিছু। এখনও তো কেউ কিছু জানে না।”

মেঘ যেতে নিতেই পেছন থেকে রোদ বলে উঠলো,”ভাবাভাবি পরে এখন কোথাও যাওয়া না!”

.

চলবে….?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে